1 of 2

সব ঠাঁই মোর ঘর আছে

সব ঠাঁই মোর ঘর আছে,আমি
সেই ঘর মরি খুঁজিয়া।
দেশে দেশে মোর দেশ আছে,আমি
সেই দেশ লব যুঝিয়া।
পরবাসী আমি যে দুয়ারে চাই–
তারি মাঝে মোর আছে যেন ঠাঁই,
কোথা দিয়া সেথা প্রবেশিতে পাই
সন্ধান লব বুঝিয়া।
ঘরে ঘরে আছে পরমাত্মীয়,
তারে আমি ফিরি খুঁজিয়া।

রহিয়া রহিয়া নব বসন্তে
ফুলসুগন্ধ গগনে
কেঁদে ফেরে হিয়া মিলনবিহীন
মিলনের শুভ লগনে।
আপনার যারা আছে চারি ভিতে
পারি নি তাদের আপন করিতে,
তারা নিশিদিশি জাগাইছে চিতে
বিরহবেদনা সঘনে।
পাশে আছে যারা তাদেরই হারায়ে
ফিরে প্রাণ সারা গগনে।

তৃণে পুলকিত যে মাটির ধরা
লুটায় আমার সামনে–
সে আমায় ডাকে এমন করিয়া
কেন যে,কব তা কেমনে।
মনে হয় যেন সে ধূলির তলে
যুগে যুগে আমি ছিনু তৃণে জলে,
সে দুয়ার খুলি কবে কোন্‌ ছলে
বাহির হয়েছি ভ্রমণে।
সেই মূক মাটি মোর মুখ চেয়ে
লুটায় আমার সামনে।

নিশার আকাশ কেমন করিয়া
তাকায় আমার পানে সে।
লক্ষযোজন দূরের তারকা
মোর নাম যেন জানে সে।
যে ভাষায় তারা করে কানাকানি
সাধ্য কী আর মনে তাহা আনি;
চিরদিবসের ভুলে-যাওয়া বাণী
কোন্‌ কথা মনে আনে সে।
অনাদি উষায় বন্ধু আমার
তাকায় আমার পানে সে।

এ সাত-মহলা ভবনে আমার
চির-জনমের ভিটাতে
স্থলে জলে আমি হাজার বাঁধনে
বাঁধা যে গিঁঠাতে গিঁঠাতে।
তবু হায় ভুলে যাই বারে বারে,
দূরে এসে ঘর চাই বাঁধিবারে,
আপনার বাঁধা ঘরেতে কি পারে
ঘরের বাসনা মিটাতে।
প্রবাসীর বেশে কেন ফিরি হায়
চির-জনমের ভিটাতে।

যদি চিনি,যদি জানিবারে পাই,
ধুলারেও মানি আপনা।
ছেটো বড়ো হীন সবার মাঝারে
করি চিত্তের স্থাপনা।
হই যদি মাটি,হই যদি জল,
হই যদি তৃণ,হই ফুলফল,
জীব-সাথে যদি ফিরি ধরাতল
কিছুতেই নাই ভাবনা।
যেথা যাব সেথা অসীম বাঁধনে
অন্তবিহীন আপনা।

বিশাল বিশ্বে চারি দিক হতে
প্রতি কণা মোরে টানিছে।
আমার দুয়ারে নিখিল জগৎ
শত কোটি কর হানিছে।
ওরে মাটি, তুই আমারে কি চাস।
মোর তরে জল দু হাত বাড়াস?
নিশ্বাসে বুকে পশিয়া বাতাস
চির-আহ্বান আনিছে।
পর ভাবি যারে তারা বারে বারে
সবাই আমারে টানিছে।

আছে আছে প্রেম ধুলায় ধুলায়,
আনন্দ আছে নিখিলে।
মিথ্যায় ঘেরে,ছোটো কণাটিরে
তুচ্ছ করিয়া দেখিলে।
জগতের যত অণু রেণু সব
আপনার মাঝে অচল নীরব
বহিছে একটি চিরগৌরব–
এ কথা না যদি শিখিলে
জীবনে মরণে ভয়ে ভয়ে তবে
প্রবাসী ফিরিবে নিখিলে।

ধুলা-সাথে আমি ধুলা হয়ে রব
সে গৌরবের চরণে।
ফুলমাঝে আমি হব ফুলদল
তাঁর পূজারতি-বরণে।
যেথা যাই আর যেথায় চাহি রে
তিল ঠাঁই নাই তাঁহার বাহিরে,
প্রবাস কোথাও নাহি রে নাহি রে
জনমে জনমে মরণে।
যাহা হই আমি তাই হয়ে রব
সে গৌরবের চরণে।

ধন্য রে আমি অনন্ত কাল,
ধন্য আমার ধরণী।
ধন্য এ মাটি,ধন্য সুদূর
তারকা হিরণ-বরনী।
যেথা আছি আমি আছি তাঁরি দ্বারে,
নাহি জানি ত্রাণ কেন বল কারে।
আছে তাঁরি পারে তাঁরি পারাবারে
বিপুল ভুবনতরণী।
যা হয়েছি আমি ধন্য হয়েছি,
ধন্য এ মোর ধরণী।

৩ ফাল্গুন, ১৩০৭

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *