সবুজ রঙের গাড়ি – মৃত্যুঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়
গোয়েন্দা দপ্তরের ইন্সপেক্টর বিরূপাক্ষ চৌধুরীর আজ সাত রাত্তির চোখে ঘুম নেই !
সাতদিন আগে কলকাতা শহরের বড় জুয়েলার্স আর· সি· ধরের দোকান থেকে পঁচিশ হাজার টাকার অলঙ্কার উধাও হয়ে গেছে। উধাও হয়েছে দোকানের সেলস্ম্যানদের চোখের সামনে থেকে। তাও সন্ধ্যের পর নয়, দিন-দুপুরে। আততায়ী হাতের রিভলবার নাচাতে নাচাতে, হাসতে হাসতে অলঙ্কারগুলো তার অ্যাটাচিতে ভরে ফেলে। তারপর আগের মত হাসতে হাসতেই দোকান থেকে বেরিয়ে যায়।
আততায়ীর চেহারার বর্ণনা আর কাচের শো-কেসের ওপর আঙুলের ছাপ থেকে স্পষ্টই বোঝা গেছে যে এ-কাজ সুনীল দে ওরফে ওসমান আলি ওরফে যোশেফ ওরফে রাজু সিং ছাড়া আর কারো নয়।
কিন্তু শ্রীকৃষ্ণের মত প্রায় শতনাম-ধারী এই অবতারটির কোন পাত্তা নেই। সারা শহরটাকে পুলিশ যেন চিরুণী দিয়ে আঁচড়ে দেখেছে, গোয়েন্দা দপ্তরের ঘুঘু স্পাইরা শহরের যত বদ জায়গাগুলোতে তারকেশ্বরে মানৎ করার মত হত্তে দিয়ে পড়ে আছে আজ সাতদিন। তবু রাজু সিং-এর টিকিটি দেখা যায়নি!
নাঃ, জ্বালিয়ে মেরেছে ওই ডাকাতটা ! ওরই জন্যে শহরবাসীদের জীবনে একদণ্ড সোয়াস্তি নেই ; পুলিশের প্রাণে শান্তি নেই। এই সাতদিনেই বিরূপাক্ষের ভূঁড়ির বেল্ট দেড় ইঞ্চি ঢিলে হয়ে গেছে।
তাই দপ্তরে বসে বসে বিরূপাক্ষ চৌধুরী আকাশ-পাতাল ভাবছে।
এমন সময় ঝনঝন করে বেজে উঠল টেলিফোন। অত্যন্ত বিরক্ত মুখে বিরূপাক্ষ রিসিভারটা কানে তুলল। কিন্তু একটু পরেই তার মুখের ভাব মোলায়েম এবং চোখ দুটো চকচকে হয়ে উঠল।
ফোন করছে সবচেয়ে চালাক আর চটপটে স্পাই চটপটি ! চটপটি জানাচ্ছে : একটু আগে হাওড়ার সিরাজ হোটেলের সামনে একটা সবুজ রঙের মোটর গাড়ি থেকে রাজু সিংকে নামতে এবং হোটেলের মধ্যে ঢুকতে দেখা গেছে।
ঝনাৎ করে রিসিভারটা রেখে তিড়িং করে লাফিয়ে উঠল বিরূপাক্ষ। পট করে প্যান্টের একটা বোতাম অবশ্য ছিঁড়ে গেল, তা যাকগে। আর এক সেকেন্ডও নয়। যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে—এমন ভাবে বিরূপাক্ষ ছুটল ডাকাত ধরতে।
জি-পি-ও’র ঘড়িতে বেলা সাড়ে পাঁচটা।
সাঁ করে পুলিশের জীপ এসে থামল সিরাজ হোটেলের সামনে। সাদা কালো ছাই রঙের হরেক রকমের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সবুজ গাড়ি কই ?
সঙ্গের সার্জেন্ট দুটোকে দরজা আগলাতে বলে বিরূপাক্ষ ভেতরে ঢুকে গেল। ম্যানেজারের কাউন্টারে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলে, লম্বা চওড়া জোয়ান আর মিশকালো কোন কাস্টমার একটু আগে এসেছিল ?
ম্যানেজার বলল, কত আসছে-যাচ্ছে—ঠিক বলতে পারি না ।
বিরূপাক্ষ পকেট থেকে একখানা ফটো বার করল। সেখানা ম্যানেজারের সামনে ধরে বললে, এই লোকটি এসেছিল ?
ফটোখানা দেখেই ম্যানেজার বলে উঠল, হ্যাঁ, হ্যাঁ, এসেছিল বৈকি ! ওর সঙ্গের লোকটা যাচ্ছেতাই কাণ্ড করে গেল হোটেলে।
বিরূপাক্ষ বললে, সঙ্গে আর কেউ ছিল নাকি ?
ছিল।
দেখতে কেমন ?
ম্যানেজার বললে, বেঁটে রোগা আর টকটকে ফর্সা । পরনে সাধুবাবার মত গেরুয়া লুঙ্গি।
ডাকাতের সঙ্গে গেরুয়া-পরা সাধুবাবা। তাজ্জব কাণ্ড ! অত্যন্ত অবাক হয়ে বিরূপাক্ষ প্রশ্ন করলে, যাচ্ছে-তাই কাণ্ডটা কী করেছে ?
ম্যানেজার বললে, এক বোতল বীয়ার নিয়েছিল ওরা। গেরুয়া পরা বেঁটে লোকটা এক চুমুক খেয়েই বমি করে, গেলাস ভেঙে যাচ্ছে-তাই সিন করে বসল ! লম্বা লোকটা তার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল—বিলটা অবশ্য পেমেন্ট করে দিয়ে গেছে।
বিরূপাক্ষ বললে, কতক্ষণ আগে গেছে ?
এইমাত্র, বড় জোর মিনিট দশেক আগে।
বিরূপাক্ষ আর সেখানে দাঁড়াল না। জীপে উঠে ড্রাইভারকে বললে, চালাও !
রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক কনস্টেবলের কাছে এসে জীপখানা থামল। বিরূপাক্ষ প্রশ্ন করলে, সবুজ রঙের কোন গাড়ি যেতে দেখেছ ?
টি. পি. বললে, জী, দেখেছি। গাড়ির মধ্যে একটা বেঁটে আদমী কাশতে কাশতে একটা জ্বলন্ত সিগারেট আমার গায়ে ছুঁড়ে ফেলেছিল, তাই মনে আছে।
বিরূপাক্ষ উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলে, কোনদিকে গেছে ?
বিরূপাক্ষ উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলে, কোনদিকে গেছে ?
কনস্টেবল জবাব দিলে, সালকে চৌরাস্তার দিকে।
জীপ ছুটল সেই দিকে। বিরূপাক্ষ বললে, জোরে।
কিন্তু চৌরাস্তার মোড়ে আসতেই এক বিভ্রাট। রাস্তা জুড়ে একঝুড়ি কমলালেবু গড়াগড়ি যাচ্ছে। আর এক খোট্টা বুড়ো রাষ্ট্রভাষায় কোন ব্যক্তির চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করতে করতে লেবুগুলো কুড়োচ্ছে।
বাধ্য হয়ে জীপ থামাতে হল। আরো কিছু গাড়িও দাঁড়িয়ে। অত্যন্ত চটে বিরুপাক্ষ বললে, এই, রাস্তা বন্দ্ কিয়া হ্যায় কিউ ? জানে দো জলদি—
বুড়ো হাউমাউ করে যা বললে, তার মর্ম হচ্ছে, এক বেয়াড়া সাধুবাবা মোটরগাড়ি থামিয়ে তার লেবু কিনতে এসেছিল। বুড়ো যা দর চেয়েছিল, তাতে রাজী হয়ে সে দু’জোড়া লেবু কিনলে। কিন্তু একটা লেবু ছাড়িয়ে মুখে দিতেই তার মেজাজ গেল বিগড়ে। লেবু টক বলে গালাগালি দিতে লাগল, তাতেও খুশি না হয়ে লেবুর ঝুড়িটা রাস্তার মাঝখানে উল্টিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেছে ! কিন্তু রামজী কসম, তার লেবু মধুর মত মিষ্টি।
বিরূপাক্ষ জিজ্ঞেস করলে, সাধুবাবা কি বেঁটে, ফর্সা ?
জী হাঁ ।
তার পাশে লম্বা-চওড়া একটা কালো লোক বসেছিল ?
জী।
বিরূপাক্ষর চোখ দুটো আবার চকচক করে উঠল। বললে, গাড়ির রঙ কি ছিল বল তো ?
সবুজ।
কতক্ষণ গেছে তারা ?
এই তো গেল ।
কোন্ দিকে ?
বুড়ো জি-টি রোড দেখিয়ে দিলে ।
বিরূপাক্ষ জীপ থেকে নেমে পড়ে নিজেই কতকগুলো কমলালেবু ঝুড়িতে তুলে দিলে। তারপর আবার জীপে উঠে বললে, আরো জোরে।
শীতের বেলা দেখতে দেখতে পড়ে আসে। তবু এখনও ঝিকমিক আলো আছে। জীপ ছুটে চলেছে হু-হু করে।
রাজু সিং-এর গাড়িটা আর কত জোরে ছুটবে ? ধরে ফেলতে আর কতক্ষণ ? সামনের দিকে সজাগ দুই চোখের সার্চলাইট ফেলে বসে আছে বিরূপাক্ষ ।
কিন্তু গেরো আছে বিরূপাক্ষের কপালে। কে জানত, আবার একটা ফ্যাসাদ বাঁধবে ! রাস্তার ওপর কিছু লোকের একটা ভিড়, হাত তুলে গাড়ি থামাতে অনুরোধ করছে।
থামাতেই হল জীপ। পাশেই একটা ডাক্তারখানা—ধন্বন্তরি ফার্মেসি। লোকগুলো জীপখানা ঘিরে দাঁড়িয়ে বললে, ঠিক সময়েই এনে পড়েছেন স্যার ! এই মাত্র একটা অদ্ভুত ছিনতাই হয়ে গেল । পুলিশের গাড়ি দেখে তাই থামালাম।
বিরূপাক্ষ ভ্রূ কুঁচকে বললে, অদ্ভুত ছেনতাই, কোথায় ?
ওই যে—ধন্বন্তরি ফার্মেসিতে। একটু আগে মোটরে করে দুজন লোক এসে ডাক্তারখানায় ঢুকল। একজনের নাকি ভীষণ পেট কামড়াচ্ছিল। ফার্মেসির ডাক্তারবাবু তাকে পরীক্ষা করে দুটো ট্যাবলেট খাইয়ে দেয়। ট্যাবলেট খেয়েই স্যার লোকটা কেমন ক্ষেপে গেল ! ডাক্তারবাবুকে বললে, তুই অতি পাপী, ঘোর পাপী। খালি ফাঁকি দিয়ে পয়সা নিস, পাপ কাটাতে চাস তো মায়ের পুজোপ্রণামী দে! বলেই ফস করে ডাক্তারবাবুর পকেট থেকে মানিব্যাগটা তুলে নিল। নিয়েই মোটরে উঠে হাওয়া !
সেই একই প্রশ্ন করলে বিরূপাক্ষ, লোকটার চেহারা কেমন ?
সেই একই উত্তর শোনা গেল, বেঁটে, ফর্সা—গেরুয়া-পরা। সঙ্গে লম্বা-চওড়া—
ব্যস—ব্যস—গাড়িটা কি রঙের ?
টিয়াপাখি রঙের।
কোন দিকে গেল ?
যেদিকে আপনি যাচ্ছিলেন। একটু জোরে গেলেই ধরতে পারবেন স্যার।
জীপ আবার ছুটল।
জোরে—জোরে—আরো জোরে ! কত স্পীড়ে আর যেতে পারে সবুজ গাড়ি ? তাকে ওভারটেক করাতে পুলিশ-জীপের আর কতক্ষণ !
কিন্তু বিরূপাক্ষের হায় কপাল। জুট-মিল এরিয়া আসতেই আবার গোলমাল। রাস্তার মাঝখানে মিল-মজদুরদের বেশ বড় মত একটা ভিড়। পাশ দিয়ে যাবে তারও উপায় নেই, দুপাশে সারি সারি লরী। বিরূপাক্ষের ইচ্ছা হল, বোমা মেরে হয় লরীগুলোকে নয় মানুষগুলোকে উড়িয়ে রাস্তা সাফ করে দেয়। কিন্তু মনের ইচ্ছে মনেই চেপে, জীপ থেকে নেমে খোঁজ নেওয়া ছাড়া উপায় নেই। আজকের দিনে পুলিশকে কে আর মানে বল?
ভিড়ের পেছনের একজন লোককে বিরূপাক্ষ জিজ্ঞেস করলে, কি হয়েছে এখানে? এত ভিড কেন?
লোকটা এসে বললে, আজব তামাসা! একজন দয়ালু সাধুবাবু সবাইকে ফুচকা খাওয়াচ্ছে।
সাধুবাবা!—বিরূপাক্ষের গলায় অধীর ঔৎসুক্য।
হ্যাঁ, হুজুর। দস্তুরমত গেরুয়া-পরা সাধুবাবা। সবুজ রঙের মোটর গাড়ি চেপে এসে নিজেও ফুচকা খেলো, আর দশ টাকার একটা নোট দিয়ে ফুচকাওয়ালাকে বললে, সব মজুর ভাইয়াদের খাওয়াও। তাই ভিড় লেগে গেছে।
বিরূপাক্ষ বুটের আগায় ভর করে মাথা তুলে ভিড়ের ভেতর নজর করলে। তারপর বললে, কোথায় সাধুবাবা? দেখছি না তো?
লোকটা বললে, এই মাত্তর তার একজন জোয়ান-পাট্টা দোস্ত তাকে টেনে নিয়ে চলে গেল। এই দু’মিনিট আগে!
বিরূপাক্ষ ঠোঁট কামড়ে ভাবলে, ইস, রাজু সিং হাতে এসেও ফসকে গেল? কিন্তু আশ্চর্য ওই সাধুবাবা! তেমনি অদ্ভুত তার কাণ্ডকারখানা। রাস্তায় যেতে যেতে একটার পর একটা এমন উদ্ভট বিভ্রাট বাধিয়ে বসছে কেন? পাগল নাকি?
সার্জেন্ট দুটো এসে ভিড় সরিয়ে দিল। জীপ আবার ছুটল। দু’পাশে ঘর-বাড়ি, দোকান-দানি হু-হু করে পেছনে চলে যাচ্ছে। স্পীডো মিটারের কাঁটা সরছে, আরো সরছে।
তেল ফুরিয়ে আসা পিদিমের মত শেষবেলাকার আলো মিটমিট করছে। সেই আলোতে সর্তক দৃষ্টি মেলে বিরূপাক্ষ দেখলে, আশেপাশে সামনে সবুজ রঙের গাড়ির কোন চিহ্নই নেই। তবে কি মোটরকার সমেত রাজু সিং উবে গেল? সাধুবাবার অলৌকিক খেল নাকি?
লিলুয়া চলে গেল—
বেলুড়—বালী—উত্তরপাড়া—কোন্নগর—
জীপ ছুটেছে। রিষড়ার কাছাকাছি আসতেই বিরূপাক্ষ চেঁচিয়ে উঠল, ব্যস, রোখো!
ওই তো পাশের গলির মধ্যে সবুজ রঙের গাড়ি। ঝানু গোয়েন্দা ইন্সপেক্টারের শিকারী দৃষ্টি ঠিকই চিনেছে। আর ওই তো স্টিয়ারিংয়ের সামনে লম্বা-চওড়া মিশমিশে একটি মূর্তি সিগারেট মুখে বসে আছে। রাজু সিং।
পা টিপে টিপে এগিয়ে গেল বিরূপাক্ষ। সার্জেন্ট দুজনকে নিয়ে রিভলবার উঁচিয়ে তিনধার থেকে ঘিরে ফেলল। পকেটে হাত দেবার সময়ই পেল না সুনীল দে ওরফে ওসমান আলি ওরফে যোশেফ ওরফে রাজু সিং।
কড়া গলায় বিরূপাক্ষ প্রশ্ন করল, মালগুলো কোথায়? সেই গয়নাগুলো?
রাজু সিং কিছু বলার আগেই মিহি গলার জবাব শোনা গেল, এই যে স্যার, এনেছি।
বিরূপাক্ষ তাকিয়ে দেখলে, পাশের একতলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে বেঁটে ফর্সা গেরুয়া লুঙ্গিপরা সাধুবাবা। হাতে একটা অ্যাটাচি কেস। স্মিত হেসে সাধুবাবা বললে, আপনি আসবেন আমি জানতুম স্যার। এই নিন মাল।
অ্যাটাচি কেসটা বিরূপাক্ষের হাতে তুলে দিলে সাধুবাবা।
বিরূপাক্ষ গম্ভীর মুখে বললে, আপনাকেও অ্যারেস্ট করা হল।
হেসে সাধুবাবা বললে, বেশ তো, করুন না। জেলে গিয়ে আমার বরং ভালই হবে। নিরিবিলিতে বসে ঠাকুরের নাম করা যাবে।
বিরূপাক্ষ একটু থতিয়ে গেল। তারপর গম্ভীর গলায় বললে, সাফাই গাইবার চেষ্টা করবেন না। গেরুয়া পরে সাধু সেজে আপনি ডাকাতের সঙ্গে ভিড়েছেন কেন?
এবার শব্দ করে হাসতে হাসতে সাধু বললে, আমরা দুজনেই ডাকাত যে! সুনীল গয়নার দোকানে ডাকাতি করে আর আমি ধর্মের ঘরে।
বিরূপাক্ষ ধমকে উঠল, সত্যি করে বলুন, এই চোরাই মাল আপনার কাছে এল কি করে?
সাধু এবার হাসি থামিয়ে বললে, তাহলে শুনুন: সুনীল আর আমি ছোটবেলা থেকে বন্ধু। বড় হয়ে ও ধরল রিভলবার আর আমি ধরলাম গেরুয়া। তবু মাঝে মাঝে দেখা হত। গয়নাগুলো লুট করে সুনীল আমার আশ্রমে রাখতে এসেছিল। আমার জিম্মায় রাখলে কেউ সন্দেহ করবে না, অতএব নিরাপদ। আমি কিন্তু টের পেয়েছিলাম, ওটার মধ্যে চোরাই মাল আছে। তাই ভয় পেয়ে অ্যাটাচি কেস্টা রিষড়ায় আমার আত্মীয়ের বাড়ি পাঠিয়ে দিই। সাতদিন পরে সুনীল এসে বললে, মাল দাও। বললাম, রিষড়ায় চল, দিচ্ছি। গাড়িতে চেপে ও সিরাজ হোটেলে মদ খেতে ঢুকল। ঢোকবার আগে কাকে যেন দেখে বলে উঠল, এখানেও শালা টিকটিকি! আমি বুঝতে পারলাম, টিকটিকি যখন দেখে ফেলেছে, তখন পুলিশের কর্তারা খবর পাবে নিশ্চয়। কিন্তু তারা আসার আগেই রাজু তো হোটেল থেকে সরে পড়বে নির্ঘাৎ। কি করা যায় তখন? তখন ভেবে ঠিক করলাম, পুলিশের জন্যে রাস্তার মাঝে মাঝে আমাদের কিছু নিশানা রেখে যাব—যাতে পুলিশ জানতে পারে আমরা কোন্ পথে যাচ্ছি। সেই উদ্দেশ্যেই আমি হোটেলের বীয়ার খেয়ে বমি করেছি, রাস্তায় পুলিশের গায়ে সিগারেট ছুঁড়ে মেরেছি, কমলালেবুর ঝুড়ি উল্টিয়ে দিয়েছি, ডাক্তারের পকেট মেরেছি আর মিলের মজুরদের ফুচকার ভোজ দিয়েছি। আমি জানতাম যেখানে যেখানে গোলমাল করেছি, সেখানকার লোকদের কাছে আপনি আমাদের হদিশ পাবেন এবং পিছু নেবেন। এখন বলুন, কাজটা কি অন্যায় করেছি?
বিরূপাক্ষ গদগদ হয়ে বললে, আপনাকে হাজার ধন্যবাদ সাধুবাবা। গেরুয়া পরলে এত বুদ্ধি হয়। জানতাম না।
সাধুবাবা বললে, এই নিন, ফেরার পথে ডাক্তারবাবুকে মানিব্যাগটা ফিরিয়ে দেবেন।