প্রথম অংশ : ছন্দপতন
দ্বিতীয় অংশ : মৃত্যুহরণ

সপ্তরিপু – অধ্যায় ৪১

অধ্যায় একল্লিশ – সময় : ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দ

বৃহত্তর মধুপুর এলাকা, ময়মনসিংহ

একদিকে ম্যাকফি আক্রমণের শিকার হয়েছে অন্যদিকে ম্যাকফির মতোই অস্থির হয়ে উঠেছে আরেকজন মানুষ, সে হলো হেনরি স্লিম্যান।

লাল পাগড়িদের দলনেতার পাশে বসে থাকতে থাকতে অস্থির লাগছে তার। পরিকল্পনাটা যখন করে এটার বেশিরভাগ অংশই সে নিজে সাজিয়েছে, কিন্তু কেন জানি সময় যত গড়িয়ে চলেছে নিজের পরিকল্পনার ওপর থেকে নিজেরই আস্থা দূর হয়ে যাচ্ছে। মাঠের দিক থেকে আওয়াজ ভেসে আসছে আর সে হয়ে উঠছে অস্থির।

হঠাৎ বসা থেকেই সে উঠে দাঁড়াল। এভাবে বসে থাকলে পাগল হয়ে যাবে। লাল পাগড়ির দলনেতাকে ডেকে সে দুজন পাহারাদার নিয়ে রওনা দিল ম্যাকফির সঙ্গে কথা বলার জন্যে। মাঝপথে মহাবীর সিং আর শংকরের দলটার সঙ্গেও কথা বলতে হবে।

আধ মাইলের মতো হেঁটে সে চলে এলো মহাবীর সিংয়ের নেতৃত্বে পাহারারত দলটার কাছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে অবাক হয়ে আবিস্কার করল লাল পাগড়িদের সঙ্গে মহাবীর সিং কিংবা শংকর-দুজনার কেউই নেই। ওরা কোথায় জানতে চাইলে লাল পাগড়ি দলের নেতা জবাব দিল ওরা নাকি তার সঙ্গেই দেখা করতে গেছে। একটু আগেই নাকি একজন এসে খবর দিয়ে গেছে হেনরি নাকি ওদেরকে ডেকে পাঠিয়েছে জরুরি কথা বলার জন্যে। কথাটা শোনা মাত্রই হেনরির গায়ের রোম দাঁড়িয়ে গেল।

অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে। সে ওদেরকে ডেকে, পাঠায়নি তারমানে কেউ একজন ইচ্ছে করেই ওদেরকে ভুয়া খবর দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সে রওনা দিল জঙ্গলের ভেতরের দিকে। এখুনি ম্যাকফি আর তার দলকে জানাতে হবে ব্যাপারটা। সেই সঙ্গে সতর্ক করে দিতে হবে ওদের সবাইকে।

মনের ভেতরে একইসঙ্গে যুগপৎ আতঙ্ক আর দোটানা মনোভাব নিয়ে জঙ্গলের পথ ধরে রীতিমতো দৌড়াতে লাগল হেনরি। কিন্তু বেশিদূর দৌড়াতে হলো না। আরেকটু এগোতেই দেখতে পেল কারা যেন ছুটে আসছে ওদের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে তার পাহারাদার দুজন সতর্ক হয়ে গেল। হেনরি নিজেও বের করে আনলো পিস্তল। দুজন মানুষ হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে আসছে ওদের দিকে। হেনরি পিস্তল তুলেও নামিয়ে নিলো কারণ লোক দুজনকে চিনতে পেরেছে ও।

মহাবীর সিং আর শংকর। দেখতে দেখতেই ওরা একেবারে কাছে চলে এলো। ব্যাপার কী থামছে না কেন ওরা। কারণটা বুঝতে পেরে শিউরে উঠল হেনরি। একদল লোক পিছু নিয়েছে ওদের। ওকে দেখতে পেয়ে চিৎকার করতে করতে এসে থেমে গেল সামনে। ‘হুজুর, হুজুর, ঠগী।’

না বললেও চলত। কারণ ইতিমধ্যেই লোকগুলো ঘিরে ধরেছে ওদেরকে। হেনরি গুনে দেখল প্রায় ছজন। ওরা পাঁচজন আর লোকগুলো ছয়জন। ওরা গোল হয়ে ঘুরছে আর লোকগুলোর প্রত্যেকের হাতে বেরিয়ে এসেছে ছুরি আর একটুকরো রুমালের মতো কাপড়। মুহূর্তের জন্যে সব যেন থমকে গেল।

হেনরিই প্রথমে গুলি করল একজনকে উদ্দেশ্য করে। লোকটা অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতার সঙ্গে শরীর বাঁকিয়ে এড়িয়ে গেল তার গুলি। বাতাসের বেগে এগিয়ে এলো তার দিকে। গুলি ব্যর্থ হলেও পিস্তল ব্যর্থ হলো না হেনরির। লোকটা কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরতেই পিস্তলের ভারী বাঁটটা বসিয়ে দিল ব্যাটার কপালে। ঢলে পড়ল সে।

একজন ঠগী শংকরকে মাটিতে ফেলে তার গলায় ফাঁস পরিয়ে দিয়েছিল হেনরির লাথিতে উলটে পড়ল লোকটা। মহাবীর সিং একাই বীরবিক্রমে দুজনকে শূন্যে তুলে মাটিতে আঁছড়ে ফেলল। অবস্থা খারাপ দেখে কী জানি বিচিত্র ভাষায় কিচির-মিচির করে উঠল লোকগুলো। প্রায় যন্ত্রের মতোই যেমন হঠাৎ আক্রমণ করেছিল ঠিক তেমনি হঠাৎই সবাইকে ছেড়ে দিয়ে অন্ধকারের দিকে দৌড়ে পালাল চারজন। পেছনে পড়ে রইল তাদের দুই সঙ্গীর অজ্ঞান দেহ।

সেই সঙ্গে লাল পাগড়িদের একজনের লাশ। এক ঠগীর ছুরি আমূল গেঁথে আছে তার বুকে। ওদের পিছু নিবে কি না ভাবছে এমন সময় কাছেই পাতার বাঁশির শব্দ শুনে চমকে উঠল ওরা। হেনরি আর মহাবীর সিং একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে উঠল খুব কাছেই বিপদে পড়েছে ওদের কেউ।

***

গাছ থেকে লাফিয়ে পড়া ঠগী আর ম্যাকফির লড়াই ততোক্ষণে তুঙ্গে উঠেছে। ফাঁস পরানোতে ঠগীর দক্ষতা প্রশ্নাতীত, কিন্তু মারামারি আর যুদ্ধের ময়দানে ম্যাকফির অভিজ্ঞতাও অতুলনীয়। হঠাৎ গাছের ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে ম্যাকফির গলায় ফাঁস পরিয়ে পেছন দিকে টান দেয় লোকটা যাতে এক ঝটকায় গলার হাড় ভেঙে দিতে পারে। ম্যাকফি যদি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করত কিংবা ছাড়ানোর চেষ্টা করত তবে সত্যিই তাই হতো। কিন্তু ম্যাকফি সেরকম কিছু না করে বরং লোকটার টানের সঙ্গে সেদিকেই গড়িয়ে দেয় শরীরটাকে। ফলে লোকটা ওর সঙ্গে সঙ্গে উলটে পড়ে। ফলে ম্যাকফির গলা থেকে আলগা হয়ে যায় ফাঁস। তবে ফাঁস আলগা করতে গিয়ে পিস্তলটাও পড়ে যায় মাটিতে।

ম্যাকফি মাটিতে পড়েছে, লোকটা পড়ে আছে ওর নিচে; আবারো ফাঁসটাকে গলায় আটকাবার চেষ্টা করছে ঠগী। মাথার পেছন দিয়ে ঠুকে লোকটার নাক সমান করে দেয় ও। তবে অন্য দুজনের একজন ওকে টেনে সরিয়ে ফেলে লোকটার ওপর থেকে। অপরজন পা তুলে লাথি মারার জন্যে। একপাশে গড়িয়ে পড়ে ম্যাকফি। তিনজনই ওর মুখোমুখি এখন। একজনের নাক মুখ ভেসে যাচ্ছে রক্তে, অপরজন কোমরের পাশ থেকে ফাঁস বের করে এনেছে, অন্যজনের হাতে ছুরি। ম্যাকফি পকেট থেকে পাতার বাঁশিটা বের করে একবার ফুঁ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ছুরি ওয়ালা তেড়ে আসে ওর দিকে। লোকটার ছুরি ধরা হাতটা ধরে একপাশে ঠেলে দেয় ম্যাকফি। সেই সঙ্গে কুস্তির কায়দায় মাটিতে আছড়ে ফেলে তাকে। তবে অন্য লোকটা এসে আধবসা অবস্থায় ফাঁস পরিয়ে টেনে ধরে ওকে।

এবার আর কোনো জারিজুরিতেই কাজ হয় না। এক হ্যাঁচকা টানে ওকে মাটিতে ফেলে এক প্যাঁচ দিয়ে ফাঁস টেনে ধরেছে লোকটা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ছুরি ওয়ালা ছুরি ফেলে লাফিয়ে এসে পা জাপটে ধরে ম্যাকফির। ঠগীর ফাঁস কী জিনিস, হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারে ম্যাকফি।

গলায় মনে হচ্ছে আগুন ধরে গেছে। ঝাঁঝাঁ করছে দুই কান, আর না চাইতেই ইতিমধ্যেই জিভের বেশ খানিকটা বেরিয়ে এসেছে মুখের ভেতর থেকে। ওর মনে হচ্ছে যেকোনো সময়ে কোঠর থেকে টুপ করে খসে পড়বে চোখজোড়া। হঠাৎই আগুনের ঝলকানি আর সঙ্গে সঙ্গেই গলার ফাঁস আলগা হয়ে গেল ওর। পায়ের বাঁধনও খুলে গেছে। প্রথম কয়েক মুহূর্ত কিছুই বুঝতে পারল না ম্যাকফি। কাশতে কাশতে মনে হলো মাথার খুলি ভেঙে যাবে। কেউ একজন ওকে এসে ধরার চেষ্টা করতেই দূরে সরে গেল ও। শত্রু-মিত্র জানা নেই। একটু স্বাভাবিক হতেই বুঝল এরা নিজের লোক।

হেনরিকেও চিনতে পারল। ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘আরেকটু হলেই তো গেছিলে,’ বলে ওর দিকে পিস্তলটা বাড়িয়ে দিল হেনরি। ম্যাকফি দেখল এখনো হালকা ধোঁয়া উড়ছে ওটা থেকে। কাশতে কাশতে ও দেখল ওকে ফাঁস পরানো ঠগ মাথার একপাশ হারিয়ে পড়ে আছে। ওপর এক ঠগীর খুলি ভর্তা করে দিয়েছে মহাবীর সিং তার লাঠির এক বাড়িতে। অপরটা পালিয়েছে।

‘বাপার কী? হচ্ছেটা কী আসলে? হেনরি চিন্তিত মুখে জানতে চাইল।

‘বুঝতে পারছ না?’ ফ্যাসফ্যাস গলায় জবাব দিল ম্যাকফি। ‘ওরা…ওরা,’ এখনো ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না ও। ‘ওরা আমাদের পরিকল্পনা আগে থেকেই জানত। ব্যাটা ফিরিঙ্গিয়া ঠিকই বুঝতে পেরেছিল আমরা একটা ফাঁদ পাততে যাচ্ছি তাই ওরা আগে থেকেই নজর রেখেছে। ওরা শুধু মাঝখানে অক্ৰমণ না করে ছড়িয়ে পড়ে টুকরো টুকরোভাবে আমাদের দলগুলোর প্রধানের ওপরে আক্রমণ করেছে। কিন্তু…কিন্তু,’ বলে ম্যাকফি একটু থেমে গেল।

‘কী ব্যাপার?’ হেনরি নিজের পিস্তলে গুলি ভরতে ভরতে থেমে গেল।

‘কিন্তু আমি এক ঠগীকে মাঠের মাঝখানেও দেখেছি, তারমানে…’

ম্যাকফির কথাটা শেষ করল হেনরি, ‘তারমানে ওরা আমাদের ছোটো দলগুলোর দলপ্রধানদের শেষ করে মাঝখানে আক্রমণ করবে,’ পিস্তলে গুলি ভরা হতেই ওটাকে কক করল হেনরি।

‘তাহলে এখুনি জোহরা আর দলকে সাবধান করে দিতে হবে,’ ম্যাকফি বলে উঠল।

‘রাজা আর ডোংরু মহারাজকেও সাবধান করে দিতে হবে। যেকোনো সময়ে ওদের ওপরে…’ হেনরি কথা শেষ করার আগেই জঙ্গলের এক প্রান্তে যেখানে জোহরা আর লাল পাগড়ি বাহিনীর থাকার কথা সেখান থেকে ভেসে এলো পাতার বাঁশির শব্দ। ম্যাকফি নিজের পিস্তলে গুলি ভরছিল, থেমে গেল ও, ‘জোহরা…’ ও কথা শেষ করার আগেই মাঠের মাঝখান থেকে ভেসে এলো একাধিক পাতার বাঁশির শব্দ। বাজতেই থাকলো বাজতেই থাকলো।

‘সর্বনাশ! এখুনি, বলে ওরা দৌড়ে চলে এলো মাঠের কিনারায়। লাল পাগড়িদের তিনজনকে মরে পড়ে থাকতে দেখল ওখানে। জোহরা কিংবা বাকিদের কোনো হদিশ নেই। ‘সময় নেই, সময় নেই, ম্যাকফি।’

মহাবীর সিং একটা মশালে আগুন ধরিয়ে ওটা এগিয়ে দিল হেনরির দিকে। হেনরি ওটা ধরে একটা বিশেষ কায়দায় নাড়তে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে মাঠের চারপাশ থেকে একযোগে বেজে উঠল পাতার বাঁশি। মশালের সিগন্যালটা ছিল সবাইকে সতর্ক করার ইশারা। আর বাঁশির শব্দটা ছিল ওদের জবাব। ওরাও মাঠের কেন্দ্রের দিকে দৌড় দিল। কাছে গিয়ে দেখতে পেল ক্যাম্পের ভেতরে ভোজের আয়োজন করতে থাকা তীর্থ যাত্রীরা এবার খুনে মেতে উঠেছে। তবে রাজার প্রহরী আর তীর্থা যাত্রীদের সমানে সমানে মোকাবেলা চলছে তাদের। মাঝেমাঝে দুয়েকটা ঠগী ছিটকে পড়ছে গুলি খেয়ে। ম্যাকফি বুঝল এটা জোনাথনের বন্দুকের কাজ।

ম্যাকফিরা গিয়ে পৌঁছানোর প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ক্যাম্পের কাছাকাছি পৌঁছে গেল লাল পাগড়িদের দল। ওদের দুটো দল আর ম্যাকফিরা মিলে একেবারে সামরিক কায়দায় ঘিরে ফেলল ক্যাম্পটাকে। তিনবাহিনীর সামনে খণ্ডযুদ্ধে টিকতেই পারল না ঠগীদের দলটা। পিস্তল আর তলোয়ারের সামনে ফাঁস হাতে ঠগীদের দলটা স্রেফ কচুকাটা হয়ে গেল। জীবিত দুয়েকজন সহ বাকিদেরকে হাজির করা হলো ডোংরু মহারাজ আর সূর্যকান্ত জমিদারের সামনে। জীবিতদের ভেতরে সূর্যকান্তের বড়ো ভাই রমাকান্তও রয়েছে। তবে তার অবস্থা খুবই খারাপ। বুকের একপাশে গুলি খেয়েছে। সূর্যকান্তের সামনে নিতেই সে ঝুঁকে এলো ভাইয়ের ওপরে। বিড়বিড় করে কিছুক্ষণ কথা বলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করল সে।

‘কী বলল সে?’ হেনরি নিজের পিস্তলে গুলি ভরতে ভরতে জানতে চাইল।

সূর্যকান্ত একটু বোকা-বোকা চেহারায় তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। অনেক কথাই বলল কিন্তু শেষ কথাটা ছিল : ‘তোমরা শেষ।’

‘এর মানে কী?’ হেনরি প্রশ্ন করল। ওর চোখ এখনো ফিরিঙ্গিয়াকে খুঁজছে। জীবিত বা মৃতদের ভেতরে এখনো সে তাকে দেখেনি। যুদ্ধে জিতলাম আমরা আর শেষ হবো কিনা…’ তার কথা শেষ হবার আগেই উলু ধ্বনির মতো শব্দ উঠল চারপাশ থেকে সেই সঙ্গে অন্ধকারের ভেতর থেকে ভেসে এলো একটা ফিসফিসে শব্দ :

‘রামসি, রামসি, রামসি…’

‘রামসি, রামসি, রামসি…’ একবার বাম থেকে ডানে আরেকবার ডান থেকে বাঁয়ে বাতাসের মতো ভেসে যেতে লাগল শব্দটা।

‘হচ্ছেটা কী…’ ক্যাম্পের ভেতরে প্রতিটা লোকের গায়ের রোম দাঁড়িয়ে গেছে ভয়ংকর শব্দটা শুনে!

‘অনেক মানুষ, হেরা হেরা ঘিইরা লাইছে আমগোরে…’ লাল পাগড়িদের এক দলনেতা কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠল। না বললেও চলত কারণ ছায়া মূর্তিগুলো অন্ধকারের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। প্রত্যেকের পরনে কালো ধুতি, খালি গা, মাথায় কালো পাগড়ি, কপালে লাল তিলক আর মুখ কালো কাপড় দিয়ে বাঁধা। প্রত্যেকের কোমরে বাঁধা এক টুকরো সাদা কাপড়

ওদেরকে দেখতে পাওয়া মাত্র ক্যাম্পের ভেতরে থাকা প্রত্যেকেই যার যার অস্ত্র বের করে আনলো। হেনরি আর ম্যাকফির একহাতে তলোয়ার অন্য হাতে পিস্তল। লাল পাগড়িদের সবার হাতে চকচকে লাঠি ক্যাম্পের লোকজনকে ভেতরের দিকে ঠেলে দিয়ে লাল পাগড়িরা বেড় দিয়ে দাঁড়াল সবাইকে। তাদের অগ্রভাগে ম্যাকফি, হেনরি আর মহাবীর সিং। স্বল্পভাষী মহাবীর সিং তার বড়ো লাঠিটা মাথার ওপরে দুই পাক দিয়ে বলে উঠল, ‘এলোগ রুমাল লেকে হামারা কেয়া করেগা?’

তার কথার জবাবেই মনে হয় প্রত্যেক ঠগী কোমরের পেছন থেকে টান দিয়ে বের করে আনলো একটা বিরাট আকারের লম্বা সরু বাঁকা ছুরি, স্থানীয় ভাষায় একে বলে কুকরি। মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল, চুপ হয়ে গেলমহাবীর সিং।

ম্যাকফি আন্দাজ করল ওরা ক্যাম্পের ভেতরে আছে সর্বসাকুল্যে বিশ থেকে পঁচিশ জন। আর যে দলটা ওদেরকে ঘিরে ধরেছে ওরা কম করে হলেও পঞ্চাশজনের কম হবে না। ওদেরকে ঘিরে থাকা দলটা কৌণিক আকৃতিতে ভাগ হয়ে গেল। একেবারে কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে সুঠামদেহী এক যুবক। খানিকটা এগিয়ে এসে সে কোমরের পেছন থেকে কুকরি বের করে আনলো একহাতে। অন্যহাতে মুখের অবরণটা সরিয়ে সাদাদাঁত বের করে হেসে উঠল ফিরিঙ্গিয়া হেনরির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘হুজুর, তাম্বাকু খায়েগা কিয়া?’

সঙ্গে সঙ্গে ঠগীদের দলটা ঝাঁপিয়ে পড়ল ওদের ওপর।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *