প্রথম অংশ : ছন্দপতন
দ্বিতীয় অংশ : মৃত্যুহরণ

সপ্তরিপু – অধ্যায় ১৮

অধ্যায় আঠারো – সময় : ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দ

খাগডহর বাজার, ময়মনসিংহ

ম্যাকফি ওদেরকে দলে ভাগ করে দেওয়ার পর থেকেই শংকর আর মহাবীর সিং একে অপরের দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। দুজনেই বাজারের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে হাঁটতে শুরু করার পর কিছুক্ষণ পর্যন্ত একে অপরের সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলেনি। এর পেছনে অবশ্য একটা কারণ আছে। চুম্বকের সমধর্মী মেরু ঠিক যেভাবে পরস্পরকে বিকর্ষণ করে ঠিক তেমনি নিষ্পেষিত সমাজের সর্বনিম্ন স্তরে বসবাসরত লোকজনের মনে কোনো এক অদ্ভুত কারণে পরষ্পরের প্রতি এক ধরনের বিরূপ মনোভাব কাজ করে। ঠিক এই ব্যাপারটাই ঘটছে শংকর আর মহাবীর সিংয়ের ক্ষেত্রে। দুইজন সম্পূর্ণ দুই সমাজ থেকে উঠে আসা দুই ধর্মের মানুষ। যারা এমনকি পরস্পরকে স্পর্শ করলেও জাত যাবার সম্ভাবনা রয়েছে, তাদের পক্ষে একসঙ্গে কাজ করাটা কঠিন বইকি।

শংকরের জন্ম একেবারেই নিচু পরিবারে। সেখান থেকে নিজের বুদ্ধিমত্তা আর চতুরতা দিয়ে সে উঠে এসেছে আজকের অবস্থানে। অবহেলিত সমাজ থেকে উঠে এলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে হয়ে উঠেছে এমন একজন যে জমিদার পরিবারের সব জানে। তার পদবিটা নায়েবের হলেও সে আসলে জমিদার পরিবারের ম্যানেজারের মতো। অন্দরমহল থেকে শুরু করে বাহিরমহল পর্যন্ত সবই সে জানে-দেখে-বোঝে, সেই সঙ্গে অনেক কিছু সামলায়ও। এই কারণে কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রেক্ষিতে জমিদার বাড়িতে যখন বড়ো ধরনের একটা বিপদ এসে হাজির হয় তখন তার ডাক পড়ে। তাকে ভিড়িয়ে দেওয়া হয় ক্যাপ্টেনের দলের সঙ্গে।

প্রথমে মনে মনে একটু বিরক্ত হলেও ক্যাপ্টেন লোকটাকে তার ভালো লাগতে শুরু করেছে। এই মোটকু পাঠানকে চোখের সামনে দেখতে অসহ্য লাগছে তার। একে তেমন কিছু বলা যাবে না। কারণ কিছু বলতে গেলে কী-না-কী বিপদ হবে কে জানে। সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাজারে ক্যাপ্টেনের লোকেরা যেভাবে ঘোড়া খুঁজতে এসেছে সে ওভাবে খুঁজবে না। তারচেয়ে নিজের মতো কাজ করবে সে।

বাজারের যে অংশে ঘোড়া পরীক্ষা করার জন্যে ওদেরকে পাঠানো হয়েছে সে অংশে খুব বেশি ঘোড়া নেই। এদিকটা মূলত বিভিন্ন ধরনের খাবার সামগ্রীতে ভরপুর। ওরা কিছু দূর হেঁটে অল্প সংখ্যক ঘোড়া যতগুলো আছে সেগুলো দেখা শেষ হতেই মহাবীর সিংয়ের দিকে তাকিয়ে ভাঙা হিন্দিতে জানাল এখানে আর খুব বেশি দেখার কিছু নেই। তারচেয়ে বরং তার পরিচিত এক লোক আছে সেই লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে হয়তো কিছু পাওয়া যেতে পারে।

মহাবীর সিং তলোয়ারের হাতলে হাত রেখে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ছোটোখাটো শংকরের দিকে। মনে মনে যতই সাহসী হোক না কেন মহাবীর সিংয়ের ভয়ংকর দৃষ্টির সামনে নিজেকে কেমন জানি ছোটো মনে হলো শংকরের। সে মহাবীর সিংয়ের দিকে তাকিয়ে ভাঙা হিন্দিতে জানতে চাইল সে কি চায় না ক্যাপ্টেন ম্যাকফি আসল অপরাধীদের খুঁজে বের করুক? সঙ্গে সঙ্গে মহাবীর সিংয়ের দৃষ্টি একটু নরম হয়ে এলো। শংকর বুঝতে পারল কাজ হয়েছে। সে আবারো বলতে লাগল, যদি সত্যিই ক্যাপ্টেনের ভালো চায় তবে ওর উচিত তাকে সাহায্য করা। কারণ স্থানীয় অনেকের সঙ্গে ওর যোগাযোগ আছে।

মহাবীর সিং চিন্তিত ভঙ্গিতে একটু ভাবল, ভেবে সে মাথা নেড়ে সামনে এগোতে বলল। শংকর পা বাড়িয়েছে সে হাতির শুঁড়ের মতো মোটা একটা হাত রেখে ওর পথ আটকালো। শাসনের ভঙ্গিতে ভাঙা বাংলায় বলল, ও যদি উলটোপালটা কিছু করে কিংবা কিছু খুঁজে বের করতে না পারে তবে ওর খবর আছে। শংকর মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই সে পথ ছেড়ে দিল।

রাজবাড়িতে কাজ করার ফলে শংকরের একটা বিরাট সুবিধে হয়েছে। অত্র এলাকার একেবারে নিচু থেকে শুরু করে উঁচু পর্যন্ত সব স্তরের মানুষের সঙ্গে তার পরিচয় আছে, সেইসঙ্গে এই এলাকায় কার সঙ্গে কে কী করছে, কীভাবে কী হচ্ছে এসব ব্যাপারে শংকরের খুব ভালো ধারণা আছে। সে নিজেও রাজবাড়িতে কাজ করার সুবিধে নিয়ে অবৈধ দুয়েকটা ব্যাপারের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে এই ব্যাপারগুলো আরো ভালোভাবে জানে। আজকের হাটে আসার আগেই সে অনুমান করেছিল ক্যাপ্টেন যেপদ্ধতিতে কাজ করতে চাইছে ওতে কাজ হতেও পারে আবার নাও পারে। তাই সে আগে থেকেই এখানকার এক আড়তদারের সঙ্গে যোগাযোগ করে রেখেছিল কিছু খবর বের করে দেওয়ার জন্যে।

স্থানীয় এক দালাল আছে, কামাল শেঠ। এই লোকটার সঙ্গে দেখা করে একটু চাপ দিতে হবে। তা না হলে কাজ হবার সম্ভাবনা কম। কারণ এই লোক একদিকে ঠিক যেমন প্রভাবশালী, অন্যদিকে আবার ঠিক একইরকম ধূর্ত প্রকৃতির। নিজের স্বার্থ না দেখলে এই লোক একটা আঙুলও নাড়াতে রাজি হবে না। তবে শংকরের ধারণা অত্র এলাকায় কামাল শেঠের অজান্তে একটা পাখিও ডাক দেয় না।

শংকর আগেও বহুবার এই হাটে এসেছে, কাজেই সে জানে কোনো জায়গায় ব্যবসায়ীরা জমায়েত হয়। মহাবীর সিংকে নিয়ে ওদিকেই রওনা দিল সে। বাজার পার হয়ে ওরা চলে এলো টোল ঘরের কাছাকাছি। টোল ঘরের কাছে এসে এক স্থানীয় প্রহরীকে জিজ্ঞাসা করে সে জানতে পারল এখনো ব্যবসায়ীদের জমায়েত হয়নি কারণ সবাই যার যার মালামাল সামলানো নিয়ে ব্যস্ত। ওখান থেকে চলে আসছিল এমন সময় এক পরিচিত স্তবকদারের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল শংকরের।

তাকে পেয়ে খুশি হয়ে উঠল শংকর। কারণ এই লোক দীর্ঘদিন ধরে কামাল শেঠের মালামাল মজুদ করে আসছে। তার কাছে জিজ্ঞেস করতেই সে সঙ্গে সঙ্গে জানাল শেঠ বাজারেই আছে। ভারত থেকে দড়ির খেলা দেখানোর জন্যে বাজিকরেরা এসেছে। কামাল শেঠসহ আরো কয়েকজন গেছে সেই খেলা দেখতে। সে আরো জানাল-বাজারের মাঝখানে যে বড়ো বট গাছটা আছে ওটার নিচেই দড়ির খেলা দেখানো হচ্ছে, ওখানে গেলে শেঠকে অবশ্যই পাওয়া যাবে।

‘এই দড়ির খেলা ব্যাপারটা আসলে কী?’ ওরা বাজারের কেন্দ্রে অবস্থিত বট গাছটার দিকে রওনা দেওয়ার একটু পরেই মহাবীর সিং শংকরের কাছে জানতে চাইল। যদিও সে হিন্দিতে প্রশ্নটা করেছে তবুও শংকরের বুঝতে সমস্যা হয়নি কিন্তু সে উত্তর দেওয়ার গরজ অনুভব করল না। একমনে হেঁটে চলেছে বাজারের কেন্দ্রের দিকে। মহাবীর সিং আবারো একই প্রশ্ন করল। শংকর যে ইচ্ছে করে তার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছে না এটা সে বুঝতেই পারেনি। সে ভেবেছে শংকর তার কথা শুনতেই পায়নি কিংবা বুঝতে পারেনি।

শংকর একটু বিরক্ত সুরেই তার প্রশ্নের জবাবে জানাল, ‘এইডা একরঙের খেলা, দেইখা মাইনষে মজা পায়।’

‘দড়ির খেলায় এত মজার কী আছে?’ খুবই নিরীহ সুরে জানতে চাইল মহাবীর সিং।

চরম বিরক্ত দৃষ্টিতে তার দিকে ফিরে তাকাল শংকর। ‘হেইডা আমি কইবার পারতাম না। অহন চুপ কইরা হাডুইন। আর যার লগে দেহা করবার যাইতাছি হের সামনে কুনো কতা কইন না যে। হেয় মানুষ বেশি সুবিধার না,’ বলে সে আবারো মহাবীর সিংয়ের দিকে তাকিয়ে একবার কড়া দৃষ্টিতে মাথা নাড়ল। মহাবীর সিং একটু অবাক হয়ে তাকাল তার দিকে। এরকম পুঁচকে একটা লোক হঠাৎ তার সঙ্গে এত কড়া হবার কারণ কী, সে ঠিক বুঝতে পারছে না। অবশ্য বুঝতে পারার কথাও না। ভারতীয়দের জাতি বিভেদ যদি খুব সহজই হতো তবে এত দূর থেকে এসে ইংরেজরা কখনোই ভারতবর্ষ শাসন করতে পারতো না। শংকরের দিকে তাকিয়ে একবার কাঁধ নেড়ে হাঁটতে লাগল সে।

আরো কিছুদূর এগোতেই বট গাছের নিচে ভিড় আর লোকজনের উপস্থিতি দেখতে পেল ওরা। ‘খেলা মনে অয় জইম্মা উঠছে, বেশ খুশি-খুশি সুরে কথাটা বলে জোরকদমে পা চালালো শংকর। মনে মনে সে নিজেকে ধন্যবাদ দিচ্ছে কামাল শেঠের সঙ্গে দেখা করার কথাটা ভেবেছিল বলে। তা না হলে জানতেও পারতো না যে বাজারে দড়ির খেলা দেখানো হচ্ছে। তুমুল আগ্রহ নিয়ে সে সামনে এগোতে গিয়েও থেমে গেল। কারণ দূর থেকে সে কামাল শেঠকে দেখেতে পেয়েছে।

দড়ির খেলা দেখানোর ফাঁকা জায়গাটার অন্যপাশে বটগাছের একটা উঁচু শিকরের ওপরে দাঁড়িয়ে আছে লোকটা। শংকরের কাছ থেকে বেশ দূরে অবস্থান করলেও সঙ্গে সঙ্গে সে শেঠকে চিনতে পেরেছে লোকটার বিরাট ভুঁড়ির কারণে। এরকম পেটমোটা লোক এই অত্র এলাকায় খুব কমই আছে। তবে তার দিকে তাকিয়ে শংকর একটু অবাক হয়ে গেল। কারণ লোকটা এরকম জমজমাট খেলার সামনে দাঁড়িয়েও খেলা দেখছে না বরং তার ঠিক সঙ্গেই দাঁড়িয়ে থাকা এক লোকের সঙ্গে কথা বলছে।

আগন্তুক দেখতে একেবারেই সাধারণ। তবে তাকে প্রথমেই খুব বেশি চোখে পড়ছে কারণ তার উচ্চতা। আশপাশের সবার থেকে এক মাথা ওপর থেকে তাকিয়ে আছে লোকটা। তার পরনে খুবই সাধারণ পোশাক হবার পরও শরীরের পাশ থেকে ঝুলছে চামড়ার তৈরি একটা পাশ ব্যাগ। এই পাশ ব্যাগ সাধারণত ভারতীয়রা ব্যবহার করে না। একে তো উচ্চতা তার ওপরে আবার ব্যাগটা দেখে কেন জানি শংকরের সন্দেহ হলো : এই লোকটা কি তবে ভারতীয় নয়? তবে সেটা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। কারণ এই মুহূর্তে মানুষটা ওর দিকে পেছন ফিরে আছে। শংকর একবার ভাবল ওদিকে এগোবে কি না। তবে সে নড়ে ওঠার আগে লোকটাই নড়ে উঠল।

এতক্ষণ কামাল শেঠের সঙ্গে কথা বলতে থাকলেও হঠাৎ সে তার কাঁধে হাত রেখে বন্ধুসুলভ ভঙ্গিতে একবার ঝাঁকি দিয়ে ঘুরে দাঁড়াল।

লোকটা ঘুরে তাকানোর সঙ্গে সঙ্গে শংকরের শরীরে একটা শিহরণ বয়ে গেল। লোকটার মুখ ঢাকা। এভাবে মুখ ঢেকে রাখে লোকজন হয় ধুলোবালি আর রোদ থেকে বাঁচার জন্যে আর না হয় নিজের পরিচয় গোপন করার জন্যে। এই লোককে দেখে মনে হচ্ছে না সে ধুলোবালি নিয়ে চিন্তিত। তবে মুখ ঢেকে রাখার কারণে শংকর বেশি অবাক হয়নি। সে অবাক হয়েছে লোকটার চোখের দিকে দৃষ্টি পড়াতে। যদিও সে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখান থেকে লোকটার দূরত্ব একেবারে কম নয়, তবুও সে পরিষ্কার দেখতে পেল লোকটার চোখ একেবারে গভীর নীল।

এরকম গভীর নীল চোখ ভারতীদের হতেই পারে না। তারমানে লোকটা ব্রিটিশ। একজন ব্রিটিশ এভাবে নিজের চেহারা লুকিয়ে ঘুরে বেড়াবে কেন। মনের কথা মনেই রয়ে গেল হঠাৎ তীব্র চিৎকার আর লোকজনের হুড়োহুড়িতে ধাক্কা খেয়ে একপাশে ছিটকে পড়ল সে।

কোনো মতে নিজেকে সামলে নিলেও হঠাৎ দেখতে পেল বাজিকরদের খেলা দেখানোর দড়ির টানে বট গাছের মোটা একটা ডাল ভেঙে নেমে আসছে নিচের দিকে। সরাসরি তার দিকে ধেয়ে আসতে থাকা মোটা ডালটাকে দেখে স্থবির হয়ে গেল শংকর।

***

অন্যদিকে মহাবীর সিংয়ের সমস্ত আগ্রহ দড়ির খেলার দিকে ছিল কিন্তু পুরোপুরি সামনে এগোনোর আগেই হঠাৎ চিৎকার আর লোকজনের ঠেলাঠেলির ভেতরে পড়ে গেল সে।

শংকরের মতো পড়ে না গেলেও লোকজনের ধাক্কা আর ঠেলার স্রোতে দিগবিদিক হারিয়ে একপাশে সরে এলো সে। কোনো মতে নিজের ভারসাম্য রক্ষা করে একটু সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আশপাশে শংকরকে খুঁজতে লাগল। ঘাড় ঘুড়িয়ে অন্যপাশে তাকিয়েই দেখতে পেল মানুষজনের ধাক্কায় মাটিতে ছিটকে পড়েছে শংকর।

আরো অবাক হয়ে খেয়াল করল বাজিকরদের খেলা দেখানোর দড়ির টানে বটগাছের একটা মোটা ডাল ভেঙে মাটিতে পড়ে থাকা শংকরের দিকে ধেয়ে চলেছে। সঙ্গে সঙ্গে সে লাফ দিল ওদিকে। ডালটা ওপর থেকে শংকরের ওপরে নেমে আসছে, এমন সময় একেবারে শেষ মুহূর্তে সেটা ধরে ফেলল মহাবীর সিং। ভারী ডালটা মাটির দিকে নেমে আসার তীব্র ধাক্কার চোটে তার মনে হলো নিজের হাতটা ছুটে যাবে কাঁধ থেকে। প্রচণ্ড শক্তিতে সে ডালটা ধরে কাঁধ দিয়ে আটকে দিল ওটাকে।

মহাবীর সিং ডালটা ধরে ফেলার পরও শংকর ভয়ের চোটে চোখ বন্ধ করে আছে। তাকে চিৎকার করে সরে যেতে বলল মহাবীর সিং। শংকর ভেবেছিল ভারী ডালটার আঘাতে তার ভবলীলা শেষ। কিন্তু মহাবীর সিংয়ের চিৎকারে হুঁশ ফিরে এলো তার। চোখ খুলেই দেখতে পেল মহাবীর সিং তার বিশাল দুই হাত দিয়ে ততোধিক বিশাল ডালটাকে কোনো মতে আটকে রেখে চিৎকার করে সরে যেতে বলছে তাকে। পলকের জন্যে হতভম্ভ হয়ে রইলেও হুঁশ হবার সঙ্গে সঙ্গে সে এক গড়ান দিয়ে পাতলা শরীরটাকে নিয়ে সরে গেল। সঙ্গে সঙ্গে গাছের শাখাটা ছেড়ে দিতেই মাটি কাঁপিয়ে পড়ে গেল ওটা।

ডালটাকে মাটিতে ছেড়ে দিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল মহাবীর সিং, পাগলের মতো হাঁপাচ্ছে। লোকজনের ধাক্কাধাক্কি আর প্রায় এক মণ ওজনের ডালটার পতন ঠেকিয়ে ফুসফুসের সব বাতাস বেরিয়ে গেছে তার।

শংকরের মনে হচ্ছে দ্বিতীয়বার জন্ম হয়েছে তার। ভারী গাছের ডালটা যখন নেমে আসছিল ওর দিকে, সে ভেবেছিল সব শেষ, পালোয়ানের মতো দেখতে লোকটা যাকে সে জাত আর ধর্মের কারণে একরকম নিচু জাতের ভেবে আসছিল সেই লোকটা এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার প্রাণ বাঁচাবে সে ভাবতেও পারেনি। মহাবীর সিংয়ের দিকে তাকিয়ে সে একবার হাসার চেষ্টা করল, কিন্তু শুকনো মুখে কোনো ভাব ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হলো সে। কিছু করার আগেই বিশাল আকৃতির মানুষটা এগিয়ে এসে একটা হাত বাড়িয়ে দিল তার দিকে। কোনো মতে শংকর তার হাতটা ধরতেই একটানে মাটি থেকে তাকে দাঁড় করিয়ে ফেলল মানুষটা।

শংকর একটু অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল তার দিকে। স্বল্প পরিচিত মানুষটা এভাবে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে তার প্রাণ বাঁচাবে ব্যাপারটা এখনো সে পুরোপুরি মেনে নিতে পারছে না। কিন্তু তাদের দুজনার জন্যেই আরো চমক অপেক্ষা করছিল। একটু স্বাভাবিক হয়ে ঘুরে দাঁড়াতেই শংকর দেখতে পেল ক্যাপ্টেন ম্যাকফি দৌড়াতে দৌড়াতে বট গাছের সীমানার শেষ প্রান্তে একটা ছোটো টিলার আড়ালে হারিয়ে গেল।

মহাবীর সিংকে ইশারা করে সেদিকে রওনা দিল সে। মূল বাজারটা বট গাছের সীমানাতেই শেষ হয়ে গেছে। ওখান থেকে ঢালু জমি নেমে গেছে নিচের দিকে।

শংকর মনে মনে দ্রুত হিসেব করল। ক্যাপ্টেন ওদিকে কী করছে এখনো জানে না সে। হয়তো সে কারো পিছু নিয়েছে। যদি সত্যিকারো পিছু নিয়ে থাকে তবে লোকটা পালানোর জন্যে নিচের দিকেই যাবে।

মুহূর্তের জন্যে দ্বিধায় পড়ে গেলে সে দ্বিধা কাটিয়ে পশ্চিম দিকে হাত তুলে ইশারা করল। ‘উছ তারাফ।’

বটগাছের সীমানা শেষ হয়ে ওখান থেকে জমি ঢালের মতো নেমে গেছে নিচের দিকে। ওরা যেখানে আছে সেখান থেকে ডান দিকে একটা ঝলকের মতো দেখতে পেল। লাল পোশাক পরা কেউ একজন জংলা মতো জায়গাটার ভেতরে হারিয়ে গেল।

‘ওই যে,’ শংকর হাত তুলে দেখাল। ‘ওটাই, ক্যাপ্টেন।’

তার বলার দরকার ছিল না। কারণ লাল ঝলকটা মহাবীর সিং আগেই দেখতে পেয়েছে। আর ওটা যে ক্যাপ্টেনের লাল ইউনিফর্মের অংশ, সেটা না বোঝার কোনো কারণ নেই। মহাবীর সিং দ্রুতই ঢাল বেয়ে নামতে লাগল। শংকর পিছু নিলোতার। ওরা যেখান দিয়ে নামছে সেখান থেকে আধা মাইলের মতো দূরে ফাঁকা জায়গার পর জঙ্গলের মতো শুরু হয়েছে। এই জায়গাটাতেই লাল ঝলকটা দেখতে পেয়েছে ওরা।

মাটিতে নেমে দুজনে মিলে সেদিকে রওনা দিল। তীব্র কাঠফাটা রোদের ভেতরে দরদর করে ঘামতে ঘামতে দুজনেই এগিয়ে চলল জংলা মতো জায়গাটার দিকে। জংলার ছায়ায় এসে থেমে গেল ওরা। ছোটো একটা নালার মতো আছে এখানে। সেটা পার হলে ছোটো একটা জঙ্গল। জঙ্গলের অন্য পাশ থেকে শুরু হয়েছে বাঁশ ঝাড়। ছোটো নালাটা লাফিয়ে পার হয়ে ওরা বাঁশঝাড়ের ভেতর দিয়ে এগোল। জঙ্গুলে জায়গাটার অন্যপাশে একটা টিনের ঘরের মতো দেখা যাচ্ছে। ওরা জঙ্গুলে জায়গাটা পার হয়ে সেটার কাছাকাছি এগোতেই শংকর চিনতে পারল জায়গাটা। তার যতটুক মনে পড়ছে, এখানে একটা ছোটো আস্তাবলের মতো আছে। কারণ বাজারে নিয়ে আসা ঘোড়াগুলো তো এখানেই রাখা হয়ে থাকে।

আস্তাবল থেকে শ’খানেক গজ দূরে এসে থেমে গেল দুজনে। আশপাশে কোথাও ক্যাপ্টেনের ছায়াও দেখা যাচ্ছে না।

‘কিধার গেল, ক্যাপ্টেন সাহেব? হামি কি জোরে ডাক দিবো, নাকি এটা দিয়ে কিছু একটা করব?’ বলে সে কোমর থেকে পাতার বাঁশিটা নিয়ে মুখে ঠেকানোর জন্যে তুলে ধরতেই তাকে থামিয়ে দিল শংকর।

হাতে বাধা পড়তেই অবাক হয়ে তার দিকে ফিরে তাকাল মহাবীর সিং, কিন্তু কেন শংকর হাত ধরে ফেলেছে সেটা ব্যাখ্যা করার আগেই তীক্ষ্ণ শব্দে বাঁশির আওয়াজ শোনা গেল। দুজনেই একসঙ্গে ফিরে তাকাল আস্তাবলটার দিকে। কারণ বাঁশির আওয়াজ ওখান থেকেই ভেসে এসেছে।

‘এ তো…’ মহাবীর সিং কিছু বলার জন্যে মুখ খুলেছিল কিন্তু তার মুখের কথা শেষ করার আগেই বাজ পড়ার মতো গুলির শব্দে চমকে উঠল দুজনে। ঝট করে ফিরে তাকোলো আস্তাবলটার দিকে। কারণ গুলির শব্দটা ওটার ভেতর থেকেই ভেসে এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে দুজনে মিলে দৌড় দিল আস্তাবলের দিকে। প্রায় পৌঁছে গেছে এমন সময় আবারো গুলির শব্দ ভেসে এলো। সঙ্গে সঙ্গে শংকরকে জাপটে ধরে মাটিতে পড়ে গেল মহাবীর সিং।

তবে মাটিতে পড়ে গিয়েও ওরা থামলো না। বাকি পথটুকু হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে কাছাকাছি পৌঁছে টিনের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিয়ে ভেতরের দৃশ্য দেখে তাজ্জব হয়ে গেল দুজনে। ভেতরে রীতিমতো দুটো খণ্ডযুদ্ধ চলছে।

***

জ্ঞান ফিরে আসতেই ম্যাকফি ওর চোখের সামনে উলটো হয়ে ঝুলে থাকা একটা কালো মুখ দেখতে পেল। মুখটা কালো হলেও চোখ দুটো বেশ মায়াময়। ভীষণ কৌতূহলি আর অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।

কিন্তু মনে মনে ও অবাক হলো মুখটা আছে তবে দেহটা কোথায়? আর এরকম উলটো হয়ে ঝুলে আছে কেন মুখটা। সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারল আসলে মানুষটা ঠিকই আছে সে-ই উলটো হয়ে পড়ে আছে মাটিতে। মুখটা একটা বাচ্চা ছেলের। ও চোখ মেলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ। মুহূর্তেই সব মনে পড়ে গেল ওর। একজন লোকের পিছু নিয়ে ও এই পর্যন্ত এসে আস্তাবলের ভেতরে ঢুকেছিল ও, হঠাৎ পেছন থেকে কারো আক্রমণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ও।

কারা আক্রমণ করেছিল তখন দেখতে পায়নি, কিন্তু বয়স্ক লোকটা ওর ওপরে ঝুঁকে আসতেই চিনতে পারল ও। এটা সেই লোক যারা বট গাছের নিচে দড়ির খেলা দেখাচ্ছিল। সঙ্গে সেই ছেলে দুটোও আছে। ওদেরই একজন ঝুঁকে ছিল ওর ওপরে।

হুঁশ ফিরতেই নিজেকে নাড়ানোর চেষ্টা করে ও বুঝতে পারল শরীর দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। একটা ছেলে ওর পা দুটো ধরে আছে, আর ওর ওপরে ঝুঁকে থাকা ছেলেটা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। ওর পা ধরে থাকা ছেলেটা ধমকের ভঙ্গিতে জোরে জোরে কিছু বলছে আর অন্য ছেলেটা মাথা নেড়ে মানা করছে। এবার ওর ওপরে ঝুঁকে থাকা লোকটা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুই কদমে ছেলেটার পাশে দাঁড়ানো ছেলেটার সামনে গিয়ে তার মাথার পেছনে একটা চাঁটি মারলো।

মাথায় চাঁটি খেয়ে সে একবার লোকটাকে দেখল আরেকবার ম্যাকফির পা ধরে থাকা ছেলেটাকে দেখল। তারপর রাগের সঙ্গে এক ঝটকা দিয়ে ম্যাকফিকে দেখিয়ে উত্তেজিত ভঙ্গিতে কিছু একটা বলতে লাগল।

ম্যাকফি আলগোছে শরীরটাকে নাড়িয়ে দেখল কোনোভাবে নিজেকে মুক্ত করা যায় কি না। এরা দড়ি নিয়েই কারবার করে, তাই বাঁধন বেশ শক্ত। তবে ওকে যে বাঁশের পাল্লার সঙ্গে বাঁধা হয়েছে সেটা বেশি শক্ত না। ম্যাকফি একঝটকা দিয়ে ডান হাত একটু আলগা করে কনুই দিয়ে বাড়ি মারলো বাঁশের পাল্লার গায়ে। ব্যথায় মনে হলো কনুই ভেঙে গেছে, কিন্তু কাজ হলো। বাঁশের পাল্লাটা ভেঙে ওর শরীরটা ঢলে পড়ল একদিকে, ফলে শরীরের একটা পাশ একেবারে আলগা হয়ে গেল।

হাত ছাড়িয়ে শরীর সোজা করার আগেই বাপ দেখে ফেলল ওকে, এক লাফে ম্যাকফির কাছে এসে ওর হাতটা ধরার চেষ্টা করার আগেই খোলা হাতে লোকটার মুখে একটা ঘুসি মারলো ম্যাকফি। ওর মনে হলো কাঠের ওপরে গিয়ে লাগল ঘুসিটা। তবে লোকটা পড়ে গেল মাটিতে, এই সুযোগে ব্রিচেসের পকেট থেকে পাতার বাঁশিটা বের করে মুখে পুরে ফুঁ দিল ও। বাঁশিটা ঠিকমতো বাজার আগেই লোকটা উঠে এসে ওর বুকের ওপরে বসে পড়ল। এমনিতেই সম্পূর্ণ শরীর আটকা, পা ও ধরে রেখেছে একজন তার ওপরে লোকটা উঠে এসে ওর বুকের ওপরে চেপে বসেছে। তার দুই হাতে বেরিয়ে এসেছে একটা সরু দড়ি। লোকটা ম্যাকফির পেটে ঘুসি মারলো, সঙ্গে সঙ্গে হাঁ হয়ে গেল ওর মুখ। মুখটা খুলে যেতেই লোকটা সরু দড়িটা ওর মুখে পরিয়ে দিল।

ম্যাকফি মোচড়া-মুচড়ি করছে এমন সময় আস্তাবলের অন্যপাশ থেকে শব্দ ভেসে এলো। ওর বুকের ওপরে চেপে বসা লোকটা কাকে যেন ইশারা করল। ম্যাকফি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল আরো দুজন কোথা থেকে যেন পয়দা হয়েছে। লোকটা ইশারা করতেই সঙ্গে সঙ্গে তারা দুটো খড়ের পাল্লার আড়ালে লুকিয়ে পড়ল। লোকগুলোও আরেকটু সামনে আসতেই ও দেখতে পেল জোনাথন আর ডুম্বুর। ম্যাকফি কিছু করার আগেই খড়ের গাদার আড়াল থেকে দুজন ঝঁপিয়ে পড়ল ওদের ওপরে। প্রথমেই ওদের ছুড়ে দেওয়া দড়ির ফাঁসে বন্দি হয়ে হাত থেকে ছুটে গেল অস্ত্র। এরপর দড়ি ধরে টানতে টানতে দুজনকে নিয়ে আসা হলো ওর কাছে।

অস্থির হয়ে উঠেছে ম্যাকফি। এক ঝটকায় নিজের খোলা হাতটা আবারো ছাড়িয়ে নিয়ে লোকটার বুকে ঘুসি মারলো, কিন্তু এই ঘুসিটাও তেমন একটা জোরদার হলো না। তবে ঘুসি খেয়ে লোকটার পাগড়ি খুলে লম্বা লম্বা চুল ছড়িয়ে পড়ল তার মুখের ওপরে। খপ করে ছড়িয়ে পড়া চুল ধরে একটানে তাকে সরিয়ে ফেলল একপাশে। তাল রাখতে না পেরে লোকটা পড়ে গেল। ম্যাকফিকে ধরে থাকা ছেলেটার হাত থেকে ছুটে গেল ওর পা। ঝটকা দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করতেই আবারো আটকে গেল ও দড়িতে। দড়ি ছাড়ানোর চেষ্টা করছে এমন সময় বয়স্ক লোকটা মাটি থেকে উঠে পেছন থেকে একটা দড়ির ফাঁস পরিয়ে দিল ম্যাকফির গলায়।

লোকটার সঙ্গে এসে হাত লাগাল ছেলেটাও। ম্যাকফির মনে হচ্ছে গলায় চাপ খেয়ে ওর চোখ দুটো ছিটকে বেরিয়ে আসবে। মরিয়া হয়ে সামনের বাঁশের পাল্লা ধরে সর্বশক্তিতে টান মারতেই ওটা ভেঙে তিনজনেই পড়ে গেল মাটিতে। নিশ্বাসের জন্যে হাঁসফাঁস করছে ও। হঠাৎ হাতে ঠেকলো সেই পাতার বাঁশিটা। ওটা মুখে পুরে ফুঁ দিতেই ছেলেটা এসে মুখ চেপে ধরল। তবে তার আগেই পেছন থেকে গুলির শব্দে চমকে উঠল সবাই।

ছেলেটা ওর মুখ ধরে থাকার পরও কোনো মতে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পেল জোনাথন আর ডুম্বুরের সঙ্গে ওই দুই বাজিকরের খণ্ডযুদ্ধও তুঙ্গে উঠেছে। সম্ভবত জোনাথনই কাউকে গুলি করেছিল, সেটা না লাগাতে আবারো ওরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে একে ওপরের উপরে। ম্যাকফি ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে গলা থেকে দড়ির ফাঁসটা খুলে ফেলার চেষ্টা করছে। কারণ আবারো যদি লোকটা ওকে দড়ির ফাঁসে আটকে ফেলে তবে খবর আছে। গলা থেকে ছাড়ানোর জন্যে ফাঁসটা ধরতেই হঠাৎ আস্তাবলের একপাশের দেওয়াল ভীষণভাবে কেঁপে উঠল।

সবাই যার যার জায়গায় জমে গেল। আবারো কেঁপে উঠল টিনের দেওয়ালের যেখানে কাঠের দরজা আছে। দ্বিতীয়বার শব্দ হবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভেঙে পড়ল আস্তাবলের পেছনের দরজা। সেখানে উদয় হলো বিশাল আকারের এক মূর্তি। এক হাতে খোলা তলোয়ার অন্য হাতে ধরা একটা ছোটো কুঠার। ম্যাকফি ভালোভাবে তাকানোর আগেই কুঠারটা ছুটে এসে নিখুঁত লক্ষ্যে ছুটে এসে ওর গলার সঙ্গে আটকানো দড়িটার টান হয়ে থাকা অংশটাকে দুভাগ করে দিল ওটা। দড়ি কেটে যেতেই লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল ম্যাকফি। ওকে উঠে দাঁড়াতে দেখে দরজা থেকে ছুটে এলো মূর্তিটা। সামনে বাগিয়ে ধরেছে খোলা তলোয়ার, অন্যহাতে কুঠার।

ম্যাকফি একবার ভালোভাবে তাকিয়ে বুঝতে পারল খোলা তলোয়ার হাতে মানুষটা আর কেউ না, মহাবীর সিং। তার পেছন পেছন দৌড়ে আসছে শংকর। মহাবীর সিং ছুটে এসে এক লাথি মারলো ম্যাকফিকে ধরে থাকা বয়স্ক লোকটাকে। অন্যদিকে ম্যাকফি ভাঙা একটা বাঁশের টুকরো তুলে নিয়ে বসিয়ে দিল ছেলেটার মাথায়।

এদিকটা সামলে নিয়ে জোনাথনদের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল ওদেরকে ধরে আছে অন্যদুজন। খোলা তলোয়ার হাতে মহাবীর সিং আর ম্যাকফি ছুটে যেতেই দ্বিধায় পড়ে গেল ওই দুজন। মুহূর্তের জন্যে মনে হলো ওদেরকে ছেড়ে দিয়ে এদেরকে আক্রমণ করবে। কিন্তু সেটা না করে ওদেরকে ছেড়ে দিয়ে দুজনেই উলটো ঘুরে দৌড় দিল। দুইপাশের দুই জানালা দিয়ে বাইরে পালানোর চেষ্টা করতেই মাটি থেকে পড়ে যাওয়া পিস্তলটা তুলে নিয়ে পলায়মান লোকটার দিকে তাক করল জোনাথন।

তবে জোনাথন গুলি চালানোর আগেই পলায়মান লোকটা ঝাঁপিয়ে পড়েছে টিনের জানালার অন্যপাশে। জোনাথন পিস্তল হাতে জানালার দিকে দৌড় দিল আর ম্যাকফি ঘুরে তাকাল ভেতরের দিকে। বয়স্ক লোকটা আর ছোটো ছেলেটা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। ওদের দুজনকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে শংকর আর ডুম্বুর, সামনেই খোলা তলোয়ার হাতে মহাবীর সিং।

ওদের থেকে একটু দূরেই দাড়িয়ে আছে ঘরের পঞ্চম সদস্য। টিনের দেওয়ালে হেলান দিয়ে ভয়ে কাঁপছে পিচ্চি ছেলেটা। এই ছেলেটাই আগে ম্যাকফির পা বাঁধতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এরপরে গন্ডগোল শুরু হবার পরে ওদের সঙ্গে যখন অন্যদের মারামারি হচ্ছে সে দাঁড়িয়েছিল চুপচাপ। এবার ম্যাকফিকে ওর দিকে এগোতে দেখে ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে মাটিতে পড়ে গেল ছেলেটা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *