অধ্যায় এক – বর্তমান সময়
শানকিপাড়া শেষ মোড়, ময়মনসিংহ
সাঈদ আলী একটা ফালতু লোক।
এটা সে নিজে যেমন জানে, ঠিক তেমনি তার আশপাশের প্রতিটা মানুষও জানে। প্রকৃতপক্ষে সাঈদ আলীর মতো লোকদেরকে ফালতু বলাটাও ঠিক না। কারণ এই ধরনের মানুষেরা ঠিক ফালতু না। এরা এক অদ্ভুত ধরনের ল্যালপা ধাঁচের মানুষ। আপনারা যারা ‘ল্যালপা’ শব্দটা ঠিক বুঝতে পারলেন না তাদেরকে বুঝিয়ে বলছি।
ময়মনসিংহের স্থানীয় ভাষায় ‘ল্যালপা’ একটা বিশেষণ। যে বিশেষণ দ্বারা নির্দিষ্ট প্রকৃতির মানুষকে বোঝানো হয়ে থাকে। এক ধরনের মানুষ আছে যারা পৃথিবীর অনেক বিষয়েই অজ্ঞ ও ডাহা মূর্খ; কিন্তু এরা একটা কাজ খুব ভালো পারে। সেটা হলো টাকা কামানো।
এইসব মানুষেরা পোশাক-আশাক ঠিকমতো পরবে না, সামাজিক কোনো দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করতে পারবে না, সংসারের লোকজনের প্রতি এদের থাকবে চরম অবহেলা…কিন্তু এরা টাকা কামাতে জানে। সেটা যেভাবেই হোক। এই ধরনের মানুষ যারা পারিবারিক-সামাজিক-মানবিক কোনো কিছুরই ধার না ধেরে শুধুমাত্র টাকা কামাতে পারে, যাদের জীবনে শুধুমাত্র একটা শব্দই অর্থ বহন করে ‘টাকা’, এই ধরনের মানুষকে বলা হয়ে থাকে ল্যালপা।
ল্যালপা শব্দটার এই বিশেষ সংজ্ঞার সঙ্গে একেবারে খাপে খাপে মিলে যায় সাঈদ আলীর জীবন। এক অর্থে বলতে গেলে তাদের পুরো পরিবারই এমন। ময়মনসিংহ শহরের গোলকিবাড়ি ও কাঁচিঝুলি এলাকার একচ্ছত্র অধিপতি বলা চলে তাদের পরিবারকে।
সাঈদ আলীরা ছয় ভাই। সেই সঙ্গে প্রত্যেক ভাইদের ছেলে-মেয়ে-নাতি সব মিলিয়ে বিশাল পরিবার তাদের। আর এই পরিবারতান্ত্রিক মাস্তানি দিয়ে এলাকায় আধিপত্য বজায় রাখে তারা। মাফিয়ারা যেমন যেকোনো পরিস্থিতিতে পরিবারকে আগে প্রাধান্য দেয় সাঈদ আলীদের পরিবারও ঠিক একই কাজ করে। আর এই পরিবারকেন্দ্রিক মাস্তানি দিয়েই তারা সমাজের একেবারে নিচু স্তর থেকে উঠে এসেছে আজকের অবস্থানে। কন্ট্রাকটারি আর রিয়াল এস্টেট ব্যবসায় ময়মনসিংহ শহরে একচ্ছত্র আধিপত্য তাদের।
সাতচল্লিশের দেশভাগের সময় সাঈদ আলীর দাদা রহমত আলী পাকিস্তানের করাচি থেকে পরিবার নিয়ে ভাগ্যের অন্বেষণে চলে আসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, মানে বর্তমান বাংলাদেশে। বেচারি ভাগ্যের অন্বেষণে এলেও ভাগ্য তাকে খুব বেশি সহায়তা করতে পারেনি। বরং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এসে সব হারিয়ে তার আর তার পরিবারের স্থান হয় ময়মনসিংহ শহরে।
এ শহরেই বেড়ে ওঠে সাঈদ আলীর বাবা সাদেক আলী। চোখের সামনে নিজের বাপকে সব হারাতে দেখে ছোটোবেলা থেকে সাদেক আলীর মনের ভেতরে বড়োলোক হবার একটা বাসনা আসন গেঁড়ে বসতে থাকে। কিন্তু কীভাবে সেটা হবে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিল না সে। কারণ না সে ছিল দেখতে সুন্দর, না ছিল তার মেধা। এটা নিয়ে মাঝে মাঝেই সে খুব গভীর ভাবনায় পড়ে যেত।
সাদেক আলী যখন বিশ বছরের পরিপূর্ণ যুবক তখনই একাত্তরের যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধ শুরু হবার পর তার বয়সি ছেলেরা যখন যুদ্ধে যেতে শুরু করে তখন সে যোগ দেয় শান্তি কমিটিতে। কিন্তু ব্যাপারটা খুবই সাবধানে লুকিয়ে রাখতে সমর্থ হয় সে।
সে ছিল আসলে শান্তি কমিটির চর। কোন বাড়ির ছেলে যুদ্ধে গেছে, কোন বাড়িতে মালিক অনেক সম্পদ লুকিয়ে রেখেছে, কোন হিন্দু পরিবারকে মেরে তাদের সম্পত্তি দখল করা যাবে—এসব খবর শান্তি কমিটিতে পৌঁছে দিয়ে লাভের বখরা নেওয়াই ছিল তার কাজ। এভাবেই লুকিয়ে লুকিয়ে একাত্তরের যুদ্ধের প্রথম কয়েক মাসের ভেতরেই ভালো পরিমাণ অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করে ফেলে সে। এরপর যখন যুদ্ধের পরিস্থিতি উলটোদিকে বইতে থাকে তখন সাদেক আলী বুঝে ফেলে পাকিস্তানী বাহিনী এদেশে আর বেশিদিন টিকবে না। সঙ্গে সঙ্গে সে ভোল পালটে আড়ালে-আবডালে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে শান্তিকমিটির ভেতরের খবর পাচার করতে থাকে।
ডিসেম্বরে যখন বিজয় মিছিল ময়মনসিংহ শহরে প্রবেশ করে তখন সাদেক আলীকে দেখা যায় সেটার অগ্রভাগে। পুরো একাত্তর জুড়ে সে মুক্তিবাহিনীতে যোগদানকারী পরিবারকে মেরে তাদের সম্পদ দখল করেছে। বহু হিন্দু পরিবারের সম্পত্তি আত্মসাৎ করেছে আর একাত্তরের পর বহু রাজাকারকে খুন করে তাদের সম্পত্তি দখল করে ওই বয়সেই সে রীতিমতো পয়সাওয়ালা হয়ে ওঠে
একাত্তরের পর তার সব সম্পত্তির পাকা কাগজপত্র তৈরি করে গ্যাঁট হয়ে ব্যবসা শুরু করে দেয় সে।
এই সাদেক আলীর ঔরসেই জন্ম সাঈদ আলীর। বাবার দ্বিতীয় সন্তান সে। সাঈদ আলী জন্মের পরপরই যখন সে স্কুলে যেতে শুরু করে, তার বাপ তখুনি বুঝতে পারে এই ছেলেকে দিয়ে পড়ালেখা হবে না। তাই মোটামুটি অক্ষর জ্ঞান হবার পরপরই তাকে স্কুল থেকে সরিয়ে পারিবারিক ব্যবসায় লাগিয়ে দেয় তার বাবা। সাঈদ আলী যখন সদ্য যুবক, সময়টা তখন আশির দশকের শেষ ভাগ। ওই
সময়ে সারা দেশে ডেভলপারদের জোয়ার মাত্র শুরু হচ্ছে। ঢাকা শহরের চেহারা পালটে যাচ্ছে বড়ো বড়ো হাউজিং সোসাইটিগুলোর ছোঁয়ায়।
এমন সময় সাঈদ আলীর বাপ সাদেক আলী দারুণ একটা কাজ করে। সে নিজের কানেকশনের জোরে ছেলেকে ঢাকায় একটা বড়ো হাউজিং কোম্পানির চাকরিতে ঢুকিয়ে দেয়। সাদেক আলীর ইচ্ছে ছিল—ছেলে বড়ো কোম্পানিতে কাজ করে হাতে-কলমে ডেভলপার ব্যবসার খুঁটিনাটি শিখে আসুক। কারণ সেই সময় সাদেক আলী বুঝতে পেরেছিল : যে উন্নয়নের ছোঁয়া এখন ঢাকায় লেগেছে, দুদিন বাদে সেটা ঢাকা ছাড়িয়ে অবশ্যই অন্যান্য শহরগুলোতে লাগবেই। তখন যেন তারা ময়মনসিংহ শহরে এই ব্যবসার অধিনায়ক হতে পারে সেটাই ছিল তার উদ্দেশ্য…
…সেই উদ্দেশ্য শতভাগ কাজে লাগে।
বেশি শিক্ষিত না হলেও ছোটোবেলা থেকেই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে সাঈদ আলী চাকরিতে ভালোই করতে থাকে, সেই সঙ্গে শিখে নিতে থাকে ডেভলপার ব্যবসার খুঁটিনাটি। কয়েক বছর চাকরি করার পর নব্বইয়ের দশকের দিকে সে ফিরে আসে ময়মনসিংহ শহরে। ততোদিনে তার অন্যান্য ভাইয়েরাও বড়ো হয়ে গেছে। নিজেরও বিয়ে হয়েছে। মেয়ে হয়েছে। তার বাপ ততোদিনে খুব বেশি বুড়ো না হলেও অসুস্থ হতে শুরু করেছে। বাপের পরামর্শে সে প্রথমেই নিজের পরিবারের দিকে নজর দেয়। পরিবারের সবাইকে নিয়ে সে একটা শক্তিশালী দলের মতো তৈরি করে ফেলে। এরপর নজর দেয় ব্যবসার দিকে। এতদিনে সে যা শিখে এসেছে তা কাজে লাগাতে শুরু করে।
ফলাফল খারাপ ছিল না। কখনো নরম, কখনো গরম পন্থায় সে পরবর্তী দশ বছরের ভেতরেই ময়মনসিংহ শহরে ডেভলপার ব্যবসায় নিজের পরিবারকে এক নম্বর আসনে অধিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়। কাঁচিঝুলি গোলকিবাড়ি থেকে শুরু করে পন্ডিতপাড়া, শানকিপাড়াসহ আরো অনেক এলাকার বেশিরভাগ কাজই তার পরিবারের অধীনে চলছে। ইতিমধ্যে তার বাপ মারা গেছে। বাপ মারা যাবার আগে তাকে একটা অদ্ভুত অনুরোধ করে যায়।
তাদের বাড়ির খুব কাছেই শানকিপাড়া শেষমোড়ে হাইওয়ের একেবারে পাশে একটা বিরাট পুকুর আছে। শহরের ভেতরে মূল রাস্তার পাশেই এরকম একটা পুকুর থাকবে আর সেটার দিকে ডেভলপারদের নজর পড়বে না, তা কি হয়! এই পুকুরটা বহুবছর আগে থেকে তার বাপ দখল করে কিছু একটা করতে চাইছিল কিন্তু পারেনি।
সাঈদ আলীর বাপ মারা যাবার সময়ে তাকে অনুরোধ করে যায়—সে যেন এই ব্যাপারে কিছু একটা করে।
মৃত বাপের অনুরোধ সে ফেলেনি। বছর দুয়েক আগে বাপ মারা যাবার পর থেকেই সে চেষ্টা করে আসছিল এই জায়গাটার দখল নেওয়ার, কিন্তু পারেনি।
পারেনি কারণ জায়গাটার মালিক ছিল এক গোঁয়ার বুড়ো। সরকারি ম্যানপাওয়ার অফিসের রিডায়ার্ড কর্মচারী এই বুড়োকে কিছুতেই বাগে আনতে পারেনি প্রভাবশালী সাঈদ আলী। প্রথমে স্বাভাবিকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছে, টাকার লোভ দেখিয়েছে, কাজ হয়নি। এরপর দেখিয়েছে ভয়, তাতেও কাজ হয়নি। সবশেষে এমনকি পরিবারের লোকজনকে হাত করেও জমিটা উদ্ধার করার চেষ্টা করেছে, তাতেও কাজ হয়নি। গত দুইটা বছর ধরে প্রতিদিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিজের অফিসে যাবার পথে পুকুরটা দেখত আর বুড়োকে অভিশাপ দিত সাঈদ আলী। অবশেষে তার সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বছরখানেক আগে বুড়ো মানুষটা মারা গেলে নতুন উদ্যমে আবার জায়গাটা দখল করার চেষ্টা শুরু করে সে।
এবার বলতে গেলে প্রায় কোনো কষ্টই হয়নি। বুড়োর একটাই মাত্র ছেলে, একটাই মেয়ে। মেয়ে স্বামীর সঙ্গে কানাডাতে সেটেল। বুড়োর মৃত্যুর পর ছেলেকে বলা মাত্রই সে রাজি হয়ে গেছে। পুকুরের জায়গা বিক্রির টাকা দিয়ে সে ‘সপরিবারে’ কানাডায় চলে যাবার প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই।
কাগজপত্র থেকে শুরু করে সব ঠিক-ঠাক করার পর সে পুকুরের জায়গাটা নিয়ে কাজ শুরু করবে, এমন সময় আরেকটা অনাকাঙ্খিত ঘটনা দেখা দেয়।
এই পুকুরের জমিটা নিয়ে যেন ঝামেলা পিছুই ছাড়ছিল না ল্যালপা সাঈদের। সে যেমন এই জমিটার পেছনে দীর্ঘদিন যাবৎ লেগে ছিল, ঠিক তেমনি লেগে ছিল আরেকটা ডেভলপার কোম্পানি। নিজে বেশি প্রভাবশালী হবার কারণে তাদেরকে টপকে সাঈদ আলী জায়গাটার দখল নিয়ে নেওয়াতে ওরা শত্রুতা শুরু করে। শত্রুতার ধরনটাও খুব অদ্ভুত। পুকুরের জমিটার ব্যাপারে সবকিছু ঠিকঠাক করে যেই সে কাজ শুরু করতে যাবে এমন সময় ওই কোম্পানির মালিক খুঁজে বের করে জমির কাগজপত্রে ঝামেলা আছে। কী ঝামেলা?
মারা যাওয়া বুড়ো লোকটা এই জমি যার কাছ থেকে কিনেছিল সেই লোক এই জায়গা পেয়েছিল ওয়ারিশ সূত্রে, মানে পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রে। সেই ওয়ারিশের কিছু ঝামেলা ছিল। সত্যিকথা হলো বাংলাদেশে খুঁজতে গেলে বেশিরভাগ জমিতেই এইরকম কোনো-না-কোনো ঝামেলা আছে। এইগুলো কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু ঝামেলা করতে চাইলে ছোট্ট ব্যাপারই অনেক কিছু হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। অবশেষে বহু দেন দরবার করে বহু জায়গায় ঘুস দিয়ে জায়গাটা নিজের করায়ত্ত করতে সমর্থ হয়েছে সে।
নিজের অফিসে বসে সাঈদ আলী ঘড়ি দেখল। এগারোটার ওপরে বাজে। মনে মনে পুকুরের কাজের অগ্রগতির হিসেব করে ফেলল সে।
বেশ কয়েকদিন যাবৎই কাজের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সে-কাজেরই অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি নিয়ে গতকাল রাতেই পুকুরের পানি সেচার জন্যে পাম্প মেশিন সেট করা থেকে শুরু করে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখা হয়েছে। এই ধরনের জলাধারে কনস্ট্রাকশনের কাজ করতে গেলে সাধারণত পানিতেই মাটি ফেলে পুকুর ভরাট করে কাজ করা হয়। তবে এক্ষেত্রে সেটা করা সম্ভব হয়নি কারণ তার ইঞ্জিনিয়াররা পুকুরের মাটি পরীক্ষা করে কিছু ঝামেলা পাওয়াতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় : আগে পুকুর সেচা হবে, তারপর ভরাট করা হবে।
সেই হিসেবে সব ঠিক থাকলে তার লোকেরা আজ ভোর ছয়টা থেকে পানি সেচার কাজ শুরু করে দেওয়ার কথা। তার নিজের কর্মচারী, ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে এক চাচাত ভাইয়ের ছেলেকেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ওখানে। আর হ্যাঁ, তার ভাড়াটে বাহিনীও প্রস্তুত আছে পুকুর এলাকার আশপাশেই। ওরা আড়ালে আছে, তবে কেউ ঝামেলা করতে চাইলে এগিয়ে আসবে। সব প্রস্তুত থাকলেও সে নিজে এখনো যায়নি। এর পেছনেও কারণ আছে। সে চাচ্ছে পানি সেচার কাজটা আরেকটু এগোলে সে জায়গামতো গিয়ে সবার মাঝে মিষ্টি বিতরণ করবে।
টেবিলের ওপর থেকে হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা উঠিয়ে নিলো সে। মিষ্টি আনা হয়েছে কিনা, খবর নিতে হবে। সে মোবাইলটা আনলক করতেই ওটার রিংটোন বাজতে লাগল। ডিসপ্লেতে দেখতে পেল তার ভাতিজার কল, যাকে সে সাইটে পাঠিয়েছিল তদারকি করার জন্যে। কলটা রিসিভ করল সে।
‘হ্যালো, আদনান। সব ঠিকঠাক আছেনি ওনু?’
‘না চাচা, একটা ঝামেলা হয়া গেছে।’
ছেলেটার আতঙ্কিত কণ্ঠ শুনে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হয়ে গেল সাঈদ আলী। নিশ্চয়ই বাজে কিছু একটা হয়েছে, তা নাহলে এর মতো মাস্তান ছেলের এত উত্তেজিত হবার কথা নয়।
‘ক দেহি আদনান, কি অইছে? কেউ কোনো ঝামেলা করতাছে? স্থানীয় কেউ নাহি…?’
‘চাচা, আইন্নে জলদি এইনে চইলা আসেন,’ তাকে কথা শেষ করতে দিল না ছেলেটা। ‘ফুনে কউন যাবে না। আগে আপনি আসেন, পরে সব কইতাছি।’
সঙ্গে সঙ্গে সে ফোন কেটে দিয়ে গাড়ি বের করতে বলল। গাড়িতে করে তার অফিস থেকে জায়গামতো পৌঁছাতে দশ মিনিটও লাগল না।
তার ভাতিজা আদনানের কল পেয়ে সে ভালো খারাপ অনেক ধরনের আশঙ্কা করেছিল। মনে মনে সম্ভাব্য ঝামেলা সামলানোর প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিল, কিন্তু জায়গামতো পৌঁছে যা আবিষ্কার করল এরকম কিছু সে স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি।