‘সত্য কথাই কলির তপস্যা’

‘সত্য কথাই কলির তপস্যা’

শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন: সংসারে থাক্‌তে গেলে সত্য কথার খুব আঁট চাই। সত্যতেই ভগবানকে লাভ করা যায়। (২-১৩-২) উপনিষদে আছে: ‘সত্যেন লভ্যস্তপসা হ্যেষ আত্মা’। এই আত্মাকে সত্যরূপ তপস্যার দ্বারা লাভ করা যায়। সত্য মানে শুধু মুখে সত্য কথা বলা না, কায়-মনো-বাক্যে সত্যকে ধরে থাকা। সত্য চিন্তা করব, মুখে সত্য কথা বলব, আর সত্য আচরণ করব। ঠাকুর বলছেন: ‘মন মুখ এক কর।’ অর্থাৎ একটা আদর্শকে আমি যখন ধরব, কায়-মনো-বাক্যে সেটাকে ধরে থাকব। নাহলে আমার মিথ্যাচার হবে। ঠাকুরের কাছে একবার একজন এসেছে গেরুয়া পরে। সে সন্ন্যাসী নয়, এমনি গেরুয়া পরেছে। ঠাকুর সেটা পছন্দ করছেন না, দেখেই বলছেন; আবার গেরুয়া কেন? একটা কি পর্‌লেই হ’লো? (১-৫-২) বাইরে সন্ন্যাসীর পোশাক পরেছি, অথচ সন্ন্যাসীর মতো জীবন যাপন করছি না—এটা ঠিক না। যদি সন্ন্যাসীর পোশাক পরি তাহলে আমাকে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করতে হবে সন্ন্যাসীর মতো ত্যাগের জীবন যাপন করতে। নাহলে মিথ্যা-আচরণ করা হল, ভাবের ঘরে চুরি করা হল। ঠাকুর বলছেন: মিথ্যা কিছুই ভাল নয়। মিথ্যা ভেক্ ভাল নয়। ভেকের মত যদি মনটা না হয়, ক্রমে সর্বনাশ হয়। মিথ্যা বলতে বা করতে ক্রমে ভয় ভেঙ্গে যায়। তার চেয়ে সাদা কাপড় ভাল। মনে আসক্তি, মাঝে মাঝে পতনও হচ্ছে, আর বাহিরে গেরুয়া! বড় ভয়ঙ্কর! (ঐ) গীতাতে শ্রীকৃষ্ণ বলছেন:

কর্মেন্দ্রিয়াণি সংযম্য য আস্তে মনসা স্মরন্।

ইন্দ্রিয়ার্থান্ বিমূঢ়াত্মা মিথ্যাচারঃ স উচ্যতে।।

আমি বাইরে ত্যাগব্রত নিয়েছি, স্থূলভাবে কোন কিছু ভোগ করছি না—কিন্তু মনে মনে সেসব নিয়ে চিন্তা করছি, তাহলে আমি ‘বিমূঢ়াত্মা’—মোহগ্রস্ত হয়ে আছি। মিথ্যাচার হচ্ছে আমার। কাজেই, সত্যাশ্রয়ী হওয়া মানে কায়-মনো-বাক্যে সত্যাশ্রয়ী হওয়া। একটা আদর্শকে আমি অনুসরণ করব বলে ঠিক করেছি, সর্বতোভাবে সেই আদর্শকে ধরে থাকব। আমার ভেতর-বার এক হবে। কেউ আমাকে দেখছে না, জানছে না—তবুও আমি সেই আদর্শকে ধরে আছি। কারও প্রশংসার লোভে আমি সত্যাশ্রয়ী হইনি। সত্যের জন্য সত্যাশ্রয়ী। আবার হয়তো এমন হতে পারে যে, সমস্ত জগৎ আমার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে আর এপাশে আমি একা। তবুও আমি আমার আদর্শকে ধরে থাকব। কত লাঞ্ছনা, কত কষ্ট আমার ভাগ্যে জুটবে, হয়তো আমাকে প্রাণ পর্যন্ত দিতে হবে। তবুও আমার আদর্শ থেকে আমি একচুলও সরব না। কারণ, তা যদি করি, সত্যচ্যুত হব আমি। স্বামীজী বলছেন: ‘সত্যের জন্য সব কিছুকেই ত্যাগ করা চলে, কিন্তু কোন কিছুরই জন্য সত্যকে বর্জন করা চলে না।’ বলছেন: ‘Truth does not pay homage to any society’—সত্য কখনও কোন সমাজের কাছে মাথা নত করে না। ‘Society has to pay homage to Truth’—সমাজই সত্যের কাছে মাথা নত করে। সবার উপরে সত্য। ন সত্যাৎ পরম্। সত্যের চেয়ে বড় আর কিছু নেই। সত্যই ঈশ্বর। God is Truth, Truth is God, যাকে আমি সত্য বলে জেনেছি, সর্বস্ব পণ করে তাকে ধরে থাকব। তা যদি করি তাহলেই আমার সত্য-আচরণ করা হবে। সত্যকে তপস্যা বলা হচ্ছে কেন? এইজন্যই বলা হচ্ছে। কায়-মনো-বাক্যে সত্যকে ধরে থাকা সত্যিই তপস্যা। সেই তপস্যা যে করতে পারে সেই ঈশ্বরলাভ করে বা আত্মোপলব্ধি করে।

ঠাকুরের জীবনে দেখি সত্যকে সবার উপরে স্থান দিচ্ছেন। হয়তো ভুল করে বলে ফেলেছেন ‘এটা করব’, যেমন করেই হোক তাঁকে সেটা করতেই হবে। যদু মল্লিকের বাগানে যাবেন বলেছেন। সারাদিনের ভিড়ে সেকথা ভুলে গেছেন। যখন মনে পড়ল, তখন অনেক রাত। তখন আর সেখানে যাবার প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু ঠাকুর চললেন হৃদয়কে নিয়ে;— হেঁটে গেলেন ঐ রাত্তিরে। গিয়ে দেখেন তাদের বাড়ির সদর-দরজা বন্ধ, সবাই ঘুমুচ্ছে। তখন দরজার ফাঁক দিয়ে পা-টা একটু গলিয়ে মাটিতে ঠেকিয়ে তিনবার বললেন: আমি এসেছি, আমি এসেছি, আমি এসেছি। তারপর তাঁর শান্তি হল। কথা রাখতে হবে, কথা রাখলেন। কেউ যদি কোন একটা কথা দিয়ে সেটা রাখতে ভুলে যেত, তাহলে তিনি বিরক্ত হতেন। একবার শিবনাথ শাস্ত্রী ঠাকুরকে বলেছিলেন: একদিন আপনার ওখানে যাব, অর্থাৎ দক্ষিণেশ্বরে যাবেন। তারপর ভুলে গেছেন সেকথা, যাননি। আমরা তো এরকম কতই করে থাকি, কিন্তু ঠাকুর সেটাকে ভালভাবে নিচ্ছেন না। বলছেন: শিবনাথের এটা ঠিক না। এদিকে কিন্তু প্রশংসা করছেন শিবনাথ শাস্ত্রীর: শিবনাথকে দেখলে আমার বড় আনন্দ হয়, যেন ভক্তিরসে ডুবে আছে।(১-৮-১) বলছেন: ওর মধ্যে ঈশ্বরের শক্তির বেশী প্রকাশ, কারণ, এত লোক ওকে সম্মান করে। যাকে অনেকে গণে-মানে, তাতে নিশ্চয়ই ঈশ্বরের কিছু শক্তি আছে। (ঐ) এরই সাথে সাথে কিন্তু আবার বলছেন: তবে শিবনাথের একটা ভারী দোষ আছে—কথার ঠিক নাই। আমাকে বলেছিল যে একবার ওখানে (দক্ষিণেশ্বরের কালীবাড়িতে) যাবে কিন্তু যায় নাই, আর কোন খবরও পাঠায় নাই, ওটা ভাল নয়। (ঐ) তারপরেই বলছেন আসল কথা এই রকম আছে যে, সত্য কথাই কলির তপস্যা। (ঐ) আগে দেখেছি, উপনিষদ্ বলছে, সত্যরূপ তপস্যা করতে। এখানে ঠাকুরও ঠিক সেই কথাই বলছেন। সত্যকে আঁট করে ধরে থাকলে ভগবান লাভ হয়। সত্যে আঁট না থাকলে ক্রমে ক্রমে সব নষ্ট হয়। (ঐ) একটা কথা আমরা সবাই শুনে থাকি: ‘সত্যমেব জয়তে নানৃতম্’ —একমাত্র সত্যই জয়লাভ করে, যা ‘অনৃত’ অর্থাৎ মিথ্যা তার কখনও জয় হয় না। সাময়িকভাবে হয়তো মিথ্যার জয় হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যা সত্য, যা ‘ঋত’ তারই জয় হবে। এই ‘ঋত’ কথাটার অর্থও সত্য। ইংরেজিতে মোটামুটিভাবে বোঝাতে গেলে ‘moral order’ কথাটা বলা যেতে পারে। এই জগৎসংসারে অনেক কিছু এলোমেলো ব্যাপার ঘটছে, কিন্তু পিছনে একটা ‘moral order’ আছে। আমি বিশ্বাস না করতে পারি যে, দেবতা আছেন বা ঈশ্বর আছেন। কিন্তু এটা অনেক সময় বিশ্বাস করতে বাধ্য হই যে, এ সবকিছুর পিছনে ‘এমন একটা কিছু’ আছে, যা এ সবকিছুর চেয়ে শক্তিমান, এ সবকিছুকে যা নিয়ন্ত্রণ করছে। তাকেই আমরা বলছি ‘ঋত’ বা ‘সত্য’ বা ‘moral order’। তারই শেষ পর্যন্ত জয় হয়। কালের মাপকাঠিতে বিচার করলে দেখা যাবে যে, সত্যই পরিণামে জয়লাভ করে। সেইজন্য বলা হচ্ছে: ‘ন হি সত্যাৎ পরো ধর্মঃ’—সত্যের চেয়ে বড় ধর্ম আর কিছু নেই, ‘ন পাপমনৃতাৎ পরম্‌’—মিথ্যার চেয়ে বড় পাপও আর কিছু নেই। সবচেয়ে বড় ধর্ম সত্য। আমরা দেখি, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে দুর্যোধন গেছেন গান্ধারীর কাছে আশীর্বাদ নিতে। দুর্যোধন তো তাঁর পুত্র, তিনি তো বলতে পারতেন, ‘তোমার জয় হোক’। তা বলছেন না তিনি। গান্ধারী আশীর্বাদ করছেন: ‘যতো ধর্মস্ততো জয়ঃ’। ধর্মের জয় হোক। সে কোন্‌ ধর্ম? সত্যরূপ ধর্ম। সত্যকে যে পক্ষ ধরে আছে, তারই জয় হবে। সেই আশীবাদ করছেন গান্ধারী। পাণ্ডবদের জয় হয়েছিল কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে—কারণ সর্বদা তাঁরা সত্যকে ধরে ছিলেন। ঈশোপনিষদে পাচ্ছি একটা কথা: ‘হিরন্ময়েন পাত্রেণ সত্যস্যাপিহিতং মুখম্। তত্ত্বং পূষন্নপাবৃণু সত্যধর্মায় দৃষ্টয়ে’—সত্যের মুখ ঢাকা রয়েছে, সত্য আবৃত হয়ে রয়েছে। তাই সূর্যের কাছে প্রার্থনা করা হচ্ছে: হে জগৎ-পরিপোষক সূর্য, তুমি দয়া করে এই আবরণ সরিয়ে নাও, এই যে জ্যোতির্ময় পাত্র দিয়ে সত্যকে ঢেকে রেখেছ তা সরিয়ে নাও। এই পাত্রটা কি? সংসার। খুব আকর্ষণীয় এই সংসার। এর দিকেই আমরা ছুটে যাই, এর পেছনে যে সত্যটা আছে সেটা আমাদের কাছে আড়াল হয়ে থাকে। কিন্তু আরও বড় আকর্ষণ এর পেছনে আছে—এর পেছনে আছেন ব্রহ্ম, আছেন ঈশ্বর, আছে সত্য। সেই সত্যকে আমি দেখতে চাই, বুঝতে চাই।

রবীন্দ্রনাথ গান গাইছেন:

সত্যমঙ্গল প্রেমময় তুমি, ধ্রুব জ্যোতি তুমি অন্ধকারে,

তুমি সদা যার হৃদে বিরাজ, দুখ জ্বালা সেই পাসরে।

ঈশ্বরকে বলছেন: তুমি সত্যস্বরূপ, মঙ্গলস্বরূপ। তুমি প্রেমময়, তুমি ধ্রুব, তুমি জ্যোতিস্বরূপ। তুমি সর্বদা যার হৃদয়ে রয়েছ, তার সমস্ত দুঃখ-জ্বালা দূর হয়ে যায়। আমাদের জীবনের উদ্দেশ্যই তো সেটা। তার প্রাথমিক পদক্ষেপ হচ্ছে সত্যকথা। মুখে আমি সত্যি কথা বলব। লোকে বলে যে, কেউ যদি সবসময় সত্যি কথা বলে তার এমন শক্তি জন্মায় যে, সে বাক্‌সিদ্ধ হয়ে যায়। যা তার মুখ দিয়ে বেরোবে তাই সত্যি হবে। সত্যকথাকে সে তপস্যা হিসেবে নিয়েছে, তাই ভগবান তার কোন কথাকে মিথ্যে হতে দেন না। তুলসীদাস বলছেন: ‘সত্যবচন অধীন্‌তা পরস্ত্রী মাতৃ সমান, ইস্‌সে না হরি মিলে, তুলসী ঝুট্ জবান্’—সবসময় সত্যকথা বল, ঈশ্বরের শরণাগত থাক আর নারীকে মায়ের মতো দেখ। এতে যদি তুমি ঈশ্বরলাভ না কর, তাহলে জানবে যে তুলসীদাসের সব কথা মিথ্যে। রাজা মহারাজও (স্বামী ব্রহ্মানন্দ) প্রায় একই কথা বলছেন। ‘ধর্মপ্রসঙ্গে স্বামী ব্ৰহ্মানন্দে’ আছে, এক ভক্তকে তিনি বলছেন: এই দুটো জিনিস মেনে চলবে—সত্য কথা বলবে আর পরস্ত্রীকে মায়ের মতো দেখবে। আর কিছু করতে হবে না। এই দুটোতেই আর সব হয়ে যাবে। বলছেন: ‘সত্যখোঁটাকে সর্বদা ধরে থাকতে হবে, প্রত্যেক কার্যে।’ শ্রীশ্রীমাও বলছেন:১০ ‘কলিতে শুধু সত্যের আঁট থাকলেই ভগবানলাভ হয়। ঠাকুর বলতেন, “যে সত্যকথাটি ধরে আছে সে ভগবানের কোলে শুয়ে আছে।”’ গীতায় (১৬/২) ভগবান বলছেন: ‘সত্য’ হচ্ছে একটা দৈবী সম্পদ। উপনিষদে বলছে:১১ ‘সত্যেন পন্থা বিততো দেবযানঃ’—সত্যের দ্বারা ‘দেবযান’ আস্তীর্ণ। দেবযান অর্থাৎ উত্তরমার্গ। যারা মৃত্যুর পর উত্তরমার্গ দিয়ে যায় — সবাই যেতে পারে না—তারা ব্ৰহ্মলোকে গিয়ে পৌঁছায়। আরও অনেক ‘লোক’ আছে। সেসব লোকে গেলে আবার ফিরে আসতে হয়। কিন্তু ব্ৰহ্মলোকে গেলে আর ফিরে আসতে হয় না। ধীরে ধীরে মানুষ সেখান থেকে মুক্ত হয়ে যায়। এই যে ব্রহ্মলোকে যাবার পথ, সেই ‘দেবযান’ও সত্যের দ্বারা আস্তীর্ণ। অর্থাৎ সত্যকে ধরে থেকে সেই পথে চলতে হয়। এইভাবে চলে কোথায় পৌঁছয় মানুষ? ‘সত্যস্য পরমং নিধানম্’—সত্যের যেটা পরম নিধান, সেখানে পৌঁছে যায়। চরম সত্যে উপনীত হয় তারা অর্থাৎ ব্রহ্মে উপনীত হয়। ব্রহ্মই হচ্ছে পরম সত্য। সত্যকে অবলম্বন করে সেখানে পৌঁছতে হয়। ঠাকুর বলছেন: আমি এই ভেবে যদিও কখন বলে ফেলি যে বাহ্যে যাব, যদি বাহ্যে না’ও পায় তবুও একবার গাড়ুটা সঙ্গে ক’রে ঝাউতলার দিকে যাই। ভয় এই—পাছে সত্যের আঁট যায়। আমার এই অবস্থার পর মাকে ফুল হাতে ক’রে বলেছিলাম, ‘মা! এই নাও তোমার জ্ঞান, এই নাও তোমার অজ্ঞান, আমায় শুদ্ধা ভক্তি দাও মা; এই নাও তোমার শুচি, এই নাও তোমার অশুচি, আমায় শুদ্ধ ভক্তি দাও মা; এই নাও তোমার ভাল, এই নাও তোমার মন্দ, আমায় শুদ্ধা ভক্তি দাও মা; এই নাও তোমার পুণ্য, এই নাও তোমার পাপ, আমায় শুদ্ধা ভক্তি দাও।’ যখন এই সব বলেছিলুম, তখন এ কথা বলিতে পারি নাই, ‘মা! এই নাও তোমার সত্য, এই নাও তোমার অসত্য।’ সব মাকে দিতে পারলুম, ‘সত্য’ মাকে দিতে পারলুম না। (১-৮-১) কেন ‘সত্য’ মাকে দিতে পারলেন না? ঠাকুর বলছেন; তাহলে, মাকে যে সর্বস্ব দিলাম, এই সত্য রাখব কি করে? সেইজন্য সব মাকে দিতে পারলেন, সত্য দিতে পারলেন না। বলছেন: আমার সত্য কথার আঁট এখন তবু একটু কমছে, আগে ভারী আঁট ছিল। যদি বলতুম ‘নাইবো’, গঙ্গায় নামা হ’লো, মন্ত্রোচ্চারণ হ’লো, মাথায় একটু জলও দিলুম, তবু সন্দেহ হ’লো, বুঝি পুরো নাওয়া হ’লো না। অমুক জায়গায় হাগ্‌তে যাবো, তা সেইখানেই যেতে হবে। রামের বাড়ী গেলুম কলকাতায়। ব’লে ফেলেছি, লুচি খাবো না। যখন খেতে দিলে, তখন আবার খিদে পেয়েছে। কিন্তু লুচি খাবো না বলেছি, তখন মেঠাই দিয়ে পেট ভরাই। (২-১৩-২) বলছেন; এখন তবু একটু আঁট কমেছে। বাহ্যে পায়নি, যাবো বলে ফেলেছি, কি হবে? রামকে (রাম চট্টোপাধ্যায় —রাধাকান্তের মন্দিরের সেবক) জিজ্ঞাসা কল্লুম। সে বললে গিয়ে কাজ নাই। তখন বিচার কল্লুম, সব ত নারায়ণ। রামও নারায়ণ। ওর কথাটাই বা না শুনি কেন? হাতী নারায়ণ বটে, কিন্তু মাহুতও নারায়ণ। মাহুত যেকালে বল্‌ছে, হাতীর কাছে এসো না, সেকালে মাহুতের কথা না শুনি কেন? এইরকম বিচার করে আগেকার চেয়ে একটু আঁট কমেছে। (ঐ)

ঠাকুর বলতেন: যার সত্যনিষ্ঠা আছে মা তার কথা কখনও মিথ্যে হতে দেন না। জগদম্বা তাকে বেচালে পা পড়তে দেন না। ঠাকুরের নিজের জীবনেই এরকম অনেক ঘটনা আছে। একদিন শম্ভু মল্লিকের বাগানে গেছেন ঠাকুর। ঠাকুরের সেদিন পেটের অসুখ করেছে। শম্ভু মল্লিক জানতে পেরে বললেন: আপনি যাওয়ার সময় আমার কাছ থেকে একটু আফিম নিয়ে যাবেন। আফিম খাবেন, আফিম খেলে আপনার পেটের অসুখ কমবে। ঠাকুর বললেন: আচ্ছা, তাই হবে। তারপর কথাবার্তায় দুজনেই সেকথা ভুলে গেছেন। শম্ভু মল্লিকের বাড়ি থেকে বেরিয়েই ঠাকুরের মনে হল: আরে, আফিম তো নেওয়া হল না। আবার ফিরলেন। ফিরে দেখেন শম্ভু মল্লিক অন্দরমহলে চলে গেছেন। কি করেন? আবার তাঁকে ডাকবেন? তা না করে, একজন কর্মচারীকে ডেকে একটু আফিম নিয়ে ফিরছেন। শম্ভু মল্লিকের বাগান থেকে দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির—সামান্য একটু পথ। কতবার তিনি সেই রাস্তা দিয়ে গেছেন। কিন্তু ঐ আফিম হাতে নেওয়ার পর থেকে তাঁর এমন অবস্থা যে, রাস্তা-টাস্তা সব গুলিয়ে গেছে। রাস্তা মনে করতে পারছেন না। রাস্তার পাশে নালা আছে, বারবার তাঁর পা সেদিকে চলে যাচ্ছে। তখন তাঁর মনে পড়ল: শম্ভু মল্লিক তো তার কর্মচারীর কাছ থেকে আফিম নিতে বলেনি, সে বলেছিল তার হাত থেকেই নিতে। তিনিও তাতেই ‘হ্যাঁ’ বলেছিলেন। তাঁরও উচিত ছিল, কর্মচারীর কাছ থেকে না নিয়ে শম্ভ মল্লিকের কথামতো তারই হাত থেকে নেওয়া। যেভাবে তিনি আফিম নিয়েছেন, তাতে মিথ্যা এবং চুরি দুই দোষই হয়েছে। তিনি বুঝলেন যে, সেইজন্যই ‘মা’ তাঁকে এরকম ঘোরাচ্ছেন, মন্দিরে ফিরতে দিচ্ছেন না। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আবার শম্ভু মল্লিকের বাড়িতে গেলেন, আফিমের মোড়কটা জানলা দিয়ে ভিতরে ফেলে দিয়ে চলে এলেন। এবার আর তাঁর রাস্তা চিনতে কোন অসুবিধা হল না। ঠাকুর বলছেন: জগদম্বা তাঁর হাত ধরে রয়েছেন। সেইজন্য ভুল করেও তাঁকে মিথ্যা আচরণ করতে দিচ্ছেন না। তাঁর মুখের কোন কথাও মিথ্যে হতে দিচ্ছেন না। দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুরের রান্না মা-ই করতেন। গোপালের মা যখন আসতেন, মাঝে মাঝে তিনিও রান্না করতেন। অত্যন্ত ভক্তিমতী তিনি, ঠাকুরও খুব ভালবাসতেন তাঁকে, তাঁর রান্না খেতেন তিনি। একদিন গোপালের মা ঠাকুরের জন্য ভাত রেঁধেছেন। ঠাকুর খেতে বসে দেখেন ভাত ভাল সিদ্ধ হয়নি। ঠাকুর তো বালকস্বভাব, বললেন: এ ভাত কি আমি খেতে পারি? ওর হাতে আর কখনও ভাত খাব না। সবাই ভাবল: ঠাকুর এমনি বললেন কথাটা। গোপালের মা যাতে আরও সতর্ক হয়ে রান্না করেন সেইজন্য বললেন। নাহলে গোপালের মাকে তিনি যেমন আদর-যত্ন করেন তাতে তাঁর হাতে তিনি আর খাবেন না এটা কি কখনও হতে পারে? ঠাকুর সত্যিই হয়তো বিশেষ কিছু ভেবে বলেননি। কিন্তু ‘মা’ তো তাঁকে মিথ্যে বলতে দেবেন না। এর কিছুদিন পরেই তাঁর গলার অসুখ শুরু হল, ভাত খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। সত্যি সত্যিই আর কোনদিনও তাঁর গোপালের মার হাতে ভাত খাওয়া হয়নি। আর একদিন ঠাকুর ভাবাবস্থায় বলে ফেললেন: এর পরে আর কিছু খাব না—শুধু পায়েস খাব। তখনও ঠাকুরের অসুখ শুরু হয়নি, সম্পূর্ণ সুস্থ। শ্রীশ্রীমা কাছে ছিলেন, তিনি কিন্তু শুনে ভয় পেয়ে গেলেন। কারণ, তিনি জানতেন যে, ঠাকুরের মুখ দিয়ে যা বেরোয়, মিথ্যে হয় না। সত্যি সত্যিই এর কিছুদিন পর থেকে ঠাকুরের গলার অসুখ শুরু হল—দুধ-ভাত ছাড়া আর কিছুই তখন তিনি খেতে পারতেন না।

ছোটবেলা থেকেই দেখি, তাঁর সত্যের প্রতি নিষ্ঠা। তাঁর যখন উপনয়ন হচ্ছে, তখন তিনি বলে বসলেন: ধনী কামারনী ‘ভিক্ষে-মা’ হবেন। তাঁর কাছ থেকে ভিক্ষে নেবেন তিনি। তাঁকে খুব স্নেহ করতেন ধনী কামারনী। ধনী কামারনীই বলেছিলেন: গদাই, তোমার যখন পৈতে হবে, আমাকে ‘ভিক্ষে-মা’ কোরো। তিনি কথা দিয়েছিলেন তাঁকে। ব্রাহ্মণ-সন্তান তিনি, পিতা অশূদ্রযাজী— শূদ্রের হাত থেকে কোন দান নেন না। আর তিনি এই কথা বলে বসলেন। সবাই এসে নানাভাবে বোঝাল—এ হয় না, হতে পারে না। কিন্তু গদাই শুনবেন না। তিনি একটা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলেন। বলছেন: তোমরা চাচ্ছ, আমি সদ্‌ব্রাহ্মণ হব। ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণত্ব কোথায় থাকবে যদি সে কথা দিয়ে কথা না রাখে? কতটুকুই বা বয়স তখন তাঁর, ন-বছর—ন-বছরের ছেলে এই কথা বলছে। শেষে তাঁর কথাই থাকল—ধনী কামারনীর কাছ থেকেই ভিক্ষে নিলেন তিনি।

পরবর্তীকালে তাঁর কাছে যেসব যুবক ভক্তেরা আসত তাদেরও তিনি সেইভাবেই শিক্ষা দিতেন। একদিন রাখাল মহারাজকে দেখেই বলছেন: কি রে, তোর মুখের দিকে তাকাতে পারছি না কেন? কোন কু-কাজ করেছিস্? রাখাল মহারাজ ভাবছেন: কি কু-কাজ করলাম আবার? চুরি, ডাকাতি এসবই তো কু-কাজ? সেরকম কিছু তো আমি করিনি। পরে তাঁর মনে পড়ল, ঠাট্টাচ্ছলে একটা মিথ্যে কথা বলে ফেলেছিলেন। ঠাকুর তো অন্তর্যামী, জানতে পেরেছেন সেকথা—তাকেই বলছেন কু-কাজ। ঠাট্টাচ্ছলেও মিথ্যে কথা বলতে নিষেধ করছেন ঠাকুর। কারণ ঐভাবে বলতে বলতেই শেযে অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যায়। শ্রীরামকৃষ্ণ সাবধান করে দিচ্ছেন: যারা সৎ, অভিনয়েও তাদের মিথ্যা কথা বা কাজ ভাল নয়। ⋯মন ধোপা ঘরের কাপড়, যে রঙে ছোপাবে সেই রঙ হ’য়ে যায়। মিথ্যাতে অনেকক্ষণ ফেলে রাখলে মিথ্যার রঙ ধরে যাবে। (১-৫-২)।

আমাদের শাস্ত্রে সত্যরক্ষার ব্যাপারে কত সব কাহিনী আছে। ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা বিখ্যাত। তাঁর নাম ছিল দেবব্রত। সত্যরক্ষার জন্য কতবড় ত্যাগ স্বীকার করলেন তিনি। তাই তাঁর নাম হল ভীষ্ম। ‘ভীষ্ম’ মানে যিনি ভীষণ কর্ম করেন। তাঁর পিতা শান্তনু সত্যবতী নামে এক ধীবর-কন্যার প্রতি আকৃষ্ট হলেন। কিন্তু সত্যবতীর পিতা ধীবররাজ বললেন: মেয়ে দেব, যদি তার যে সন্তান হবে, তাকে তুমি রাজা কর। শান্তনু সঙ্কটে পড়লেন। দেবব্রত সব দিক থেকে উপযুক্ত—তিনিই রাজা হবেন ঠিক আছে। ধীবররাজের দাবি মানলে দেবব্রতকে বঞ্চিত করতে হয়। তাই শান্তনু চুপ করে গেলেন। ভীষ্ম যখন সব জানতে পারলেন, তখন ধীবররাজকে গিয়ে বললেন:১২ ‘এবমেতৎ করিষ্যামি যথা ত্বমনুভাষসে’— তুমি যা বলবে তা-ই হবে, আমি তা-ই করব। ‘যোহস্যাং জনিষ্যতে পুত্রঃ স নো রাজা ভবিষ্যতি’—সত্যবতীর গর্ভে যে পুত্র হবে, সে-ই আমাদের রাজা হবে। তখন সকলে বলল: তোমাকে আমরা জানি, তোমার প্রতিজ্ঞা কখনও মিথ্যা হবে না ঠিকই। কিন্তু তুমি বিবাহ করবে, তোমার যে সন্তান হবে, সে তো আপত্তি করতে পারে! তখন ভীষ্ম তাঁর দ্বিতীয় প্রতিজ্ঞা করলেন: রাজ্য আমি আগেই ত্যাগ করেছি, এবার আমি পূত্র না হওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করছি১৩ —‘অপত্যহেতোরপি চ করিষ্যেহদ্য বিনিশ্চয়ম্‌’। ‘অদ্য প্রভৃতি মে দাস! ব্রহ্মচর্য্যং ভবিষ্যতি’—আজ থেকে আমার ব্রহ্মচর্যব্রত শুরু হল, আমি বিবাহও করব না। তখন ধীবররাজ রাজী হলেন, শান্তনুর সঙ্গে সত্যবতীর বিয়ে দিলেন। সত্যবতীর পুত্রের নাম হল চিত্রাঙ্গদ। যুদ্ধ করতে গিয়ে চিত্রাঙ্গদ মারা গেলেন। তখন তাঁর ছোট ভাই বিচিত্রবীর্য হলেন রাজা। উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করতেন তিনি। অপুত্রক অবস্থায় তিনিও মারা গেলেন। তখন সত্যবতী ভীষ্মকে বললেন: তুমি বিয়ে কর, তোমার যে দুই ভ্রাতৃবধূ তাদের তুমি বিয়ে কর।—তখনকার সমাজে এরকম বিয়ে প্রচলিত ছিল, এখনও কোন কোন অঞ্চলে আছে। শুনে ভীষ্ম বললেন; এ হতে পারে না। কারণ, আমি সত্যবদ্ধ। বলছেন:১৪ ‘পরিত্যজেয়ং ত্রৈলোক্যং রাজ্যং দেবেষু বা পুনঃ’—আমি সত্যরক্ষার জন্য ত্রৈলোক্যকে ত্যাগ করতে পারি, দেবতাদের রাজপদ, ইন্দ্রপদ—তাও ত্যাগ করতে পারি। ‘যদ্ বাপ্যধিকমেতাভ্যাং ন তু সত্যং কথঞ্চন’—শুধু ইন্দ্রপদ নয়, তার চেয়েও যদি বড় কিছু থাকে তাও ত্যাগ করতে পারি, কিন্তু কখনও সত্যকে ত্যাগ করতে পারি না। এই আমাদের আদর্শ, ভারতের আদর্শ। যুগ যুগ ধরে এই ধারা চলে আসছে ভারতবর্ষে।

আমরা রামায়ণে দেখি, কৈকেয়ী রাজা দশরথকে বলছেন: তোমার মনে আছে, তুমি কথা দিয়েছিলে, দুটি বর দেবে আমাকে। ভুলে গেছ বোধহয়? উত্তরে দশরথ বলছেন: না, আমরা কথা দিলে ভুলি না। তুলসীদাসের রামায়ণ থেকে উদ্ধৃত করছি—দশরথ বলছেন:১৫ ‘রঘুকুল রীতি সদা চলি আঈ’—এটা রঘুবংশের রীতি, এই রীতি বরাবর চলে আসছে। ‘প্রাণ জাহুঁ বরু বচনু ন জাঈ’—প্রাণ যাবে তবু কথার খেলাপ হবে না। কৈকেয়ীকে বলছেন; দেখ, কেউ যদি কথা দেয়, আর কথা না রাখে তবে তার থেকে বড় পাপ আর কিছু নেই। ‘নহিঁ অসত্য সম পাতক পুঞ্জা, গিরি সম হোহিঁ কি কোটিক গুঞ্জা’—অসত্যের থেকে বড় পাপ আর কিছু নেই। কোটি কোটি কুঁচফল দিয়েও যেমন একটা পাহাড় তৈরি হয় না, তেমনি যদি কেউ সত্যকে বর্জন করে তাহলে শতসহস্র ভাল কাজ করলেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। ‘সত্যমূল সব সুকৃত সুহাএ, বেদ পুরাণ বিদিত মনু গাএ’ —সব সুকৃতির মূলে এই সত্য, বেদ পুরাণে একথা বলে, মুনিরাও একথা বলেন।—বলছেন দশরথ। তখনও তো তিনি জানেন না, কৈকেয়ী তাঁর কাছে কি চাইতে যাচ্ছেন! তার পরেই কৈকেয়ী বললেন: সেই দুটি বর আমাকে এখন দিতে হবে। এক বরে আমার ছেলে ভরত হবে রাজা, আর এক বরে রাম যাবে বনে। দশরথের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কিন্তু উপায় নেই, সত্যরক্ষা করতে হবে, কথা দিয়েছেন। কৈকেয়ীর কথা মেনে নিলেন। রাম বনে গেলেন, ভরত রাজা হলেন। পুত্রশোকে মারা গেলেন দশরথ। অনেকে বলেন, দশরথ স্ত্রৈণ। তা নয়। এটা সত্যরক্ষা। জীবন দিয়ে তিনি সত্যরক্ষা করলেন।

মহাভারতের কর্ণ একটা অদ্ভুত চরিত্র। তাঁর জীবনে একটা মিথ্যাচারের পরিণতি কি হল! প্রথমে তিনি অস্ত্রবিদ্যা শিখতে দ্রোণাচার্যের কাছে গেলেন। সূত-পুত্র তিনি—তাই দ্রোণাচার্য তাঁকে অস্ত্রবিদ্যা শেখালেন না। তখন তিনি পরশুরামের কাছে গেলেন। পরশুরামের কাছে গিয়ে নিজেকে তিনি ব্রাহ্মণ বলে পরিচয় দিলেন। অস্ত্রশিক্ষা চলতে লাগল। একদিন পরশুরাম খুব ক্লান্ত হয়ে আছেন, কর্ণের হাঁটুতে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছন। এমন সময় কর্ণের হাঁটু ভেদ করে একটা পোকা উপরে উঠছে। কর্ণ বুঝতে পারছেন, যন্ত্রণা হচ্ছে—কিন্তু হাঁটু সরালেন না। হাঁটু সরালে গুরুর বিশ্রামে ব্যাঘাত হবে। তাই চুপ করে সব কষ্ট সহ্য করলেন। ঘুম ভাঙলে পরশুরাম দেখলেন, কর্ণের হাঁটু থেকে রক্ত পড়ছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন সব। তখন তিনি কর্ণকে বললেন: তুমি নিশ্চয়ই ব্রাহ্মণ নও, ব্রাহ্মণ কখনও এতটা শারীরিক কষ্ট সহ্য করতে পারে না। কর্ণ তখন নিজের পরিচয় দিলেন। পরশুরাম তখন কি করলেন? গুরুভক্তির জন্য প্রশংসা করলেন তাঁকে? না, উল্টে অভিশাপ দিলেন। সত্যভঙ্গের অপরাধ সবচেয়ে বড় অপরাধ, তাঁর কাছে আর সব তুচ্ছ। বললেন; যে অস্ত্রবিদ্যা তুমি আমার কাছ থেকে শিখেছ, বিপদের সময় সে সব তুমি ভুলে যাবে। আবার এই কর্ণের জীবনের আর একটা দিক আছে। সত্যরক্ষার জন্য কতবড় ত্যাগ করলেন তিনি। একবার তিনি প্রতিজ্ঞা করলেন: আমার কাছে যে যা চাইবে আমি তা-ই দেব। শ্রীকৃষ্ণ এলেন তাঁর কাছে ব্রাহ্মণের বেশে। বললেন: আমি ক্ষুধার্ত। তোমার ছেলে বৃষকেতুকে তুমি নিজের হাতে হত্যা করবে আর তোমার স্ত্রী তোমার পুত্রের মাংস রান্না করে আমাকে খেতে দেবে। কী সাংঘাতিক পরীক্ষা! কিন্তু কর্ণ সত্যরক্ষায় অবিচল—তা-ই করলেন তিনি, ব্রাহ্মণবেশী শ্রীকৃষ্ণের প্রার্থনা পূরণ করলেন। অবশ্য বৃষকেতু আবার শ্রীকৃষ্ণের আশীবাদে বেঁচে উঠলেন। আর একবার ইন্দ্র এলেন তাঁর কাছে প্রার্থী হয়ে। কর্ণ যখন সকালবেলায় নদীতে স্নান করে উঠতেন তখন ব্রাহ্মণরা যে যা প্রার্থনা করত তাঁর কাছে, তা-ই তিনি পূরণ করতেন। একদিন ওরকম স্নান করে উঠেছেন, এমন সময় ইন্দ্র ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে এলেন তাঁর কাছে। জন্ম থেকেই কর্ণের শরীরে একটা কবচ আর কুণ্ডল ছিল। এই কবচ-কুণ্ডলের জন্য কর্ণ ছিলেন অবধ্য। ইন্দ্র ছদ্মবেশে এসেছেন সেই কবচ-কুণ্ডল নিতে। কর্ণ অবশ্য আগে থেকেই জানতেন সেকথা। সূর্য তাঁকে বলে দিয়েছিলেন; দেখ, ইন্দ্র আসবে তোমার কবচ-কুণ্ডল চাইতে, খবরদার দিও না যেন। আর যদি দিতেই হয়, তাহলে পরিবর্তে আর একটা জিনিস তুমিও চেয়ে নেবে। ইন্দ্রের একটা শক্তি আছে, সেই শক্তি তুমি চেয়ে নেবে, তা দিয়ে শত্রুকে বধ করবে। ইন্দ্র এলে কর্ণ তাঁকে বললেন: আমি জানি, তুমি কে। তুমি যা নিতে এসেছ, সেই কবচ-কুণ্ডল আমি তোমাকে দিচ্ছি। কিন্তু তোমার যে শক্তি আছে সেটা আমাকে দিতে হবে। ইন্দ্র সেই শক্তি কর্ণকে দিলেন, দিয়ে বললেন: দেখ, এই অস্ত্র দিয়ে আমি অনেক শত্রু নিধন করতে পারি, তুমি কিন্তু একজনের বেশী আর কাউকে বধ করতে পারবে না। কর্ণ ভাবলেন: শত্রু তো আমার একজন—অর্জুন। তাকেই এই অস্ত্র দিয়ে নিধন করব। আর অন্য শত্রুদের জন্য আমার যা অস্ত্র আছে তা-ই যথেষ্ট। কিন্তু কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ যখন শুরু হল, তখন সব অন্যরকম হয়ে গেল। ভীমের ছেলে ঘটোৎকচ এমন উৎপাত শুরু করল যে, কর্ণ আর পারলেন না—শেষ পর্যন্ত বাধ্য হলেন ইন্দ্রের দেওয়া সেই অস্ত্র ঘটোৎকচের উপর প্রয়োগ করতে। ঘটোৎকচ নিহত হল—কিন্তু অর্জুনকে আর মারা হল না। অর্জুনের সাথে তাঁর সেই শেষ যুদ্ধের সময় রথের চাকা মাটিতে বসে গেল। যা অস্ত্রবিদ্যা শিখেছিলেন পরশুরামের কাছে সব ভুলে গেলেন। এই সুযোগে অর্জুন তাঁকে বধ করলেন। কী অদ্ভুত নিয়তি! সত্যভঙ্গের জন্য অভিশাপ পেয়েছিলেন, আবার সত্যরক্ষা করতে ঐ কবচ-কুণ্ডল ত্যাগ করেছিলেন—দুয়ে মিলেই তাঁর মৃত্যু ঘনিয়ে এল। মিথ্যাচার কত বড় অপরাধ আর সত্যরক্ষাই বা কত বড় জিনিস—এই দুটো শিক্ষাই আমরা কর্ণের জীবন থেকে পেতে পারি।

আর একটি উদাহরণ দিচ্ছি। রাম ও লক্ষ্মণ—দুভাই। একজন আর একজনকে ছাড়া থাকতে পারেন না। অথচ সেই লক্ষ্মণকে রাম বর্জন করলেন। কাল এসে উপস্থিত রামের কাছে, বললেন: তোমার সাথে আমার একটা কথা আছে, কথাটা খুব গোপন। তুমি আর আমি থাকব, সেখানে যেন অন্য কেউ না আসে। যদি কেউ আসে, সে যেই হোক, তাকে তোমার বধ করতে হবে। রামচন্দ্র কথা দিলেন, দাঁড় করিয়ে রাখলেন লক্ষ্মণকে, বললেন: দেখো, কেউ যেন না আসে। কালের সঙ্গে কথা বলছেন রামচন্দ্র, এমন সময় দুর্বাসা মুনি এসে উপস্থিত। বললেন: কোথায় রাম? আমি এক্ষুনি রামের কাছে যাব। লক্ষ্মণ বললেন: সে তো সম্ভব নয়, এখন তিনি কালের সাথে কথা বলছেন, জরুরী কথা। দুর্বাসা তো ভয়ানক চটে গেলেন: আমি সবাইকে ভস্ম করে দেব, এক্ষুনি রামের কাছে নিয়ে চল। তখন লক্ষ্মণ চিন্তা করছেন:১৬ ‘একস্য মরণং মেহস্তু মা ভূত্ সর্ববিনাশনম্’—একা আমার বিনাশ হোক, কিন্তু সকলের বিনাশ যেন না হয়। এ যা মুনি এক্ষুনি হয়তো সব ধ্বংস করে দেবেন, তার চেয়ে এঁকে রামের কাছে নিয়ে যাই, তাতে আমার মৃত্যু যদি হয় হোক। লক্ষ্মণের সঙ্গে গেলেন দুর্বাসা ভেতরে, তাঁর তেমন কিছু ব্যাপার না, খিদে পেয়েছে, খেলেন, খুশি হয়ে ফিরে গেলেন। এদিকে কালের কাছে রাম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যে আসবে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। কিন্তু তাই বলে রাম কি করে লক্ষ্মণকে এ দণ্ড দেন! চুপ করে আছেন রাম, কোন কথা বলতে পারছেন না। দুঃখে দুশ্চিন্তায় তাঁর মুখ পাণ্ডুর হয়ে গেছে। তখন লক্ষ্মণ নিজেই রামকে বললেন:১৭

জহি মাং সৌম্য বিস্রব্ধং প্রতিজ্ঞাং পরিপালয়।

হীনপ্রতিজ্ঞাঃ কাকুৎস্থ প্রয়ান্তি নরকং নরাঃ।।

—হে সৌম্য, আমাকে পরিত্যাগ কর, তোমার প্রতিজ্ঞা পালন কর। যাঁরা প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেন না, তাঁরা নরকে যান। অন্য যাঁরা ছিলেন তাঁরাও রামকে বললেন: রাম, প্রতিজ্ঞা রক্ষা না করলে ধর্ম নষ্ট হবে, ধর্ম নষ্ট হলে সবার অনিষ্ট হবে। তা তুমি হতে দিতে পার না। তখন রাম লক্ষ্মণকে বললেন:১৮

বিসর্জয়ে ত্বাং সৌমিত্রে মা ভূদ্ধর্মবিপর্যয়ঃ।

ত্যাগো বধো বা বিহিতঃ সাধূনাং হ্যুভয়ং সমম্।।

—সুমিত্রানন্দন, আমি তোমাকে বিসর্জন করছি—যাতে ধর্মবিপর্যয় না হয়। তোমায় ত্যাগ করছি, কারণ সাধুদের পক্ষে ত্যাগ এবং বধ উভয়ই সমান। বধ করলেন না, কিন্তু লক্ষ্মণকে ত্যাগ করলেন রামচন্দ্র—শুধু সত্যরক্ষার জন্য। লক্ষ্মণ বিদায় নিয়ে সরযূতীরে চলে গেলেন। সেখানে যোগমগ্ন হয়ে দেহত্যাগ করলেন।

আমরা ঠাকুরের পিতা ক্ষুদিরামের জীবনেও এরকম ঘটনা দেখি। ঠাকুরের পূর্বপুরুষের বাসস্থান ছিল দেরে গ্রাম, কামারপুকুর থেকে কিছু দূরে। ক্ষুদিরাম ছিলেন ধর্মপরায়ণ, সকলের শ্রদ্ধার পাত্র। সেখানকার জমিদার একজনকে জব্দ করার জন্য মিথ্যা এক মামলা শুরু করলেন। সেই মামলায় এমন একজন সাক্ষী দরকার, যাঁর কথা সবাই মেনে নেবে। তিনি যা বলবেন, তা মিথ্যা, কিন্তু তিনি এমন ব্যক্তি যে, তিনি মিথ্যা বললেও আদালত তা বিশ্বাস করে নেবে। জমিদার জানতেন ক্ষুদিরামই সেই লোক। ক্ষুদিরামকে তিনি বললেন: তোমাকে আমার হয়ে একটা সাক্ষ্য দিতে হবে, মিথ্যা সাক্ষ্য। ক্ষুদিরাম বললেন: সে আমি পারব না, অসত্য বলা আমার দ্বারা হবে না। জমিদার খুব রেগে গেলেন: এ গ্রামে বাস করছ, আমি গ্রামের জমিদার, আমার কথা রাখবে না? তোমাকে সাক্ষ্য দিতেই হবে। ক্ষুদিরামের এক কথা—মিথ্যা সাক্ষ্য দেবেন না। শেষে সেই জমিদারই এক মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে সর্বস্বান্ত করে ক্ষুদিরামকে গ্রামছাড়া করলেন। তার পরেই ক্ষুদিরাম এলেন কামারপুকুরে। এই রকম মানুষ না হলে কি ভগবানকে সন্তান হিসেবে পাওয়া যায়? গ্রামের লোক কত সম্মান করত ক্ষুদিরামকে। তিনি যখন ঘাটে স্নান করতে যেতেন তখন চারদিক সব থমথম করত—সবাই চুপ করে আছে, সেখানে কোন রকম বাচালতা নেই। এত সমীহ করছে তাঁকে। অথচ তিনি দরিদ্র। এই তো ভারতের আদর্শ।

স্বামীজী ছুঁৎমার্গের বিরুদ্ধে কত কথাই বলেছেন, শূদ্র-অভ্যুত্থানের কথা বলেছেন, কিন্তু বলেছেন, আদর্শ হচ্ছে ঐ ব্রাহ্মণ। কে প্রকৃত ব্রাহ্মণ? যে সত্যে স্থিত সে-ই প্রকৃত ব্রাহ্মণ। ক্ষুদিরামের মধ্যে আমরা সেই ব্রাহ্মণকেই দেখি।—নির্লোভ, নিরভিমান, সত্যনিষ্ঠ, জিতেন্দ্রিয়। আমি আমার জীবনে দেখেছি এরকম একজন ব্রাহ্মণ। প্রাইমারী স্কুলের পণ্ডিত—সবাই বলত তাঁকে তারিণী পণ্ডিত। তিন পুরুষ ধরে তিনি পাঠশালায় পড়াচ্ছেন। দরিদ্র, নিঃস্ব। কিন্তু কখনও ছাত্রদের কাছ থেকে অর্থগ্রহণ করতেন না। তাহলে তাঁর চলত কি করে? কারও বাড়িতে নতুন ধান উঠেছে, কিছু চাল তাঁকে দিল। কোন বাড়িতে ভাল কলা হয়েছে, তাঁকে কলা এনে দিল। গ্রামের লোক খুশি মনে তাঁর বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দিয়ে আসছে। কেউ হয়তো দুধ দিয়ে আসছে, কেউ হয়তো বিয়ে উপলক্ষ্যে তাঁকে কাপড় দিয়ে আসছে, এই রকম। কিন্তু কী সম্মান! দরিদ্র, খালি গায়ে থাকতেন, কালো রং, লম্বা চেহারা,বড় দাড়ি, গায়ের উপর সাদা পৈতেটা ঝুলছে। আমার বেশ মনে আছে, তিনি যখন স্নান করতে যেতেন, সবাই কী সমীহ করত তাঁকে। কথা বেশী বলতেন না, অথচ সবাই ভয় করত তাঁকে। স্বামীজী বলছেন, এই আমাদের আদর্শ।

উপনিষদে আছে:১৯ ‘সত্যং জ্ঞানমনন্তং ব্রহ্ম।’ কাকে আমরা ব্ৰহ্ম বলছি? এই সত্যকে। তিনিই জ্ঞান, আবার তিনিই অনন্ত। ভারতের এ-ই বৈশিষ্ট্য—সত্যকে ধরে আছে। এরই জন্য কত ত্যাগ কত তপস্যা। ত্যাগ মানে কি? বড়র জন্য ছোটকে ত্যাগ। আমি যদি বৈজ্ঞানিক হই তবে আমাকে ধীরে ধীরে অন্যান্য জিনিস ত্যাগ করতে হবে। এক জায়গায় ফুটবল খেলা হচ্ছে, সবাই দেখতে যাচ্ছে। আমি বৈজ্ঞানিক, গবেষণা করছি। গবেষণার কাজ ফেলে আমি খেলা দেখতে গেলাম না—আমি ত্যাগ করলাম। বড়র জন্য ছোট আনন্দকে ত্যাগ। স্বামীজী বলছেন: আমরা ‘lower truth’ থেকে ‘higher truth’এর দিকে এগিয়ে চলি। ত্যাগের অর্থ: বড় সত্যের জন্য ছোট সত্যকে ত্যাগ, চিরন্তন যে সত্য তার জন্য ক্ষণিক সত্যকে ত্যাগ, ঈশ্বরের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ।—এ-ই ভারতের আদর্শ।

স্বামীজী একটি কবিতায় (‘প্রবুদ্ধ ভারতের প্রতি’) ভারতকে সম্বোধন করে বলছেন:২০ ‘হে সত্য’! ‘ভারত’ বলছেন না—সত্য, সত্যস্বরূপ। বিদেশে এক জায়গায় স্বামীজী ভারত সম্বন্ধে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলছেন: আমাদের দেশের মানুষের আচরণ—এ তোমাদের কাছে বিসদৃশ ঠেকবে, মনে হবে যেন উন্মাদ। গিয়ে দেখবে যে, বরফ-গলা জল, অত্যন্ত ঠাণ্ডা, তারই মধ্যে গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মানুষ। আবার দেখবে, নদীর ধারের বালি, যেন তপ্ত কড়াই, তার উপর বসে আছে খালি গায়ে, ধ্যান করছে। কেন জান? সত্যকে জানবে বলে। ভারতের এই বৈশিষ্ট্য দেখেই স্বামীজী বলছেন: ‘হে সত্য’! আবার বলছেন: ভারত যদি মরে যায়, তবে সত্যের মৃত্যু ঘটবে, ধর্মের মৃত্যু ঘটবে, যত উচ্চ চিন্তা তার মৃত্যু ঘটবে। স্বামীজী বলছেন: কেন ভারতবর্ষকে ভালবাসি? এই আদর্শের জন্য ভারতবর্ষকে ভালবাসি। জন্মভূমি বলে নয়। এর ধূলিকণার সঙ্গে এই আদর্শ মিশে রয়েছে—এই সত্যের আদর্শ। বলছেন: জন্মভূমি নয়, পুণ্যভূমি। পাশ্চাত্যদেশ থেকে যখন তিনি দেশে ফিরে আসছেন, একদল ভক্ত তাঁকে বিদায় দিতে এসেছেন, তাঁদেরই একজন বললেন; স্বামীজী, এতদিন আমাদের দেশে কাটিয়ে গেলেন, এত আরামের মধ্যে, এত প্রাচুর্যের মধ্যে, এরপর কি আর আপনার ভারতবর্ষে ভাল লাগবে? উত্তরে স্বামীজী বলছেন: বল কী! ভারতবর্ষ আমার ভাল লাগবে না! তার প্রতি ধূলিকণা আমার কাছে পবিত্র। কেন পবিত্র? এই ত্যাগ ও তপস্যার জন্য। তপস্যা কার জন্য? সত্যকে জানব বলে তপস্যা। আমরা ঈশ্বরকে সত্যস্বরূপ বলে জানি—সচ্চিদানন্দ (সৎ-চিৎ-আনন্দ)। ‘সৎ’ মানে সত্য, সত্যই ঈশ্বর।

স্বামীজী বলছেন: শ্রীরামকৃষ্ণের আবির্ভাবের পর থেকে আবার সত্যযুগ শুরু হয়েছে। ‘সত্যযুগ’ অর্থাৎ যে যুগে মানুষ সর্বোচ্চ মর্যাদা দেবে সত্যকে—অর্থকে নয়, ক্ষমতাকে নয়, বা অন্য কিছুকে নয়। শ্রীরামকৃষ্ণের সারা জীবন এই সত্যের জন্য তপস্যা। সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতেই তিনি এসেছিলেন।

আকর-তালিকা

 । মুণ্ডকোপনিষদ্, ৩/১/৫

 । গীতা, ৩/৬

 । বাণী ও রচনা, ১০ম খণ্ড, ১৯৭৭, পৃঃ ৩২১

 । C.W., vol. II, 1963, p.84

 । মুণ্ডকোপনিষদ্, ৩/১/৬

 । মহানির্বাণতন্ত্র, ৪/৭৫

 । ঈশোপনিষদ্, ১৫

 । ধর্মপ্রসঙ্গে স্বামী ব্রহ্মানন্দ, উদ্বোধন কার্যালয়, কলিকাতা, ১৩৮৪, পৃঃ ৮৬

 । ঐ, পৃঃ ৭৫

১০। মায়ের কথা, ২য় ভাগ, পৃঃ ১৪৯

১১। মুণ্ডকোপনিষদ্, ৩/১/৬

১২। মহাভারত, আদিপর্ব, ৯৪/৮৭

১৩। ঐ, ৯৪/৯৫-৬

১৪। ঐ, ৯৭/১৬

১৫। রামচরিতমানস ও দোহাবলী, তুলসীদাস, ২য় খণ্ড, ১৯৮০, অযোধ্যাকাণ্ড, ২৮, সম্পাদনা: জ্যোতিভূষণ চাকী

১৬। রামায়ণ, উত্তরকাণ্ড, ১০৫/৯

১৭। ঐ, ১০৬/৩

১৮। ঐ, ১০৬/১৩

১৯। তৈত্তিরীয়োপনিষদ্, ২/১/৩

২০। বাণী ও রচনা, ৭ম খণ্ড, ১৯৭৭, পৃঃ ৪৫৬

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *