সত্যিকার রাজকন্যার কথা
এক রাজপুত্র ছিলেন। তার রাজকন্যাবিয়ে করার বড়ো শখ। তাই বলে যে-সে রাজকন্যা হলে চলবে না, সত্যিকার রাজকন্যা হওয়া চাই। সেইরকম পাত্রীর খোঁজে গোটা পৃথিবী ঢ়ুঁড়ে ফেলা হল, কিন্তু সব জায়গায় একটা না একটা খুত বেরিয়ে পড়ে । রাজকন্যা অনেক দেখা হল, কিন্তু তারা যে সত্যিকার রাজকন্যা, তাই-বা কি করে বলা যায় ? রাজপুত্রের ধারণা হয়ে গেল যে, সব পাত্রীরই একটানা-একটা কিছু যেমনটি হওয়া উচিত, তেমনটি নয়।
শেষপর্যন্ত তিনি নিজের প্রাসাদে ফিরে এলেন। মন বড়ো খারাপ। এত সাধ, সত্যিকার রাজকন্যা বিয়ে করেন, তা সে হল কই ? একদিন সন্ধেবেলায় ভীষণ ঝড় উঠল। বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল, বাজ পড়ল, আকাশ থেকে প্রবল ধারায় বৃষ্টি নামল, চারদিক ঘুটফুটে অন্ধকার হয়ে এল, তারই মধ্যে হঠাৎ শোনা গেল সদর দরজায় কে যেন জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে । রাজপুত্রের বাবা, বুড়ো-রাজা, নিজে গিয়ে দোর খুললেন। বাইরে একজন রাজকন্যা দাঁড়িয়ে। ঝড়বৃষ্টির মাঝে পড়ে তার যা অবস্থা ! চুল থেকে ঝরনা বইছে, জাম-কাপড় ভিজে গায়ে
লেপটে রয়েছে। সে বলল সে একজন সত্যিকার রাজকন্যা । বুড়ি রানী-মাও মনে মনে বললেন, ‘আচ্ছা, সে দেখা যাবে’খন! ‘ তার মতলবখানি তিনি ঘূণাক্ষরে প্রকাশ করলেন না। নিঃশব্দে শোবার-ঘরে গিয়ে, খাট থেকে সমস্ত বিছানাপত্ৰ নামিয়ে, তক্তার
উপর তিনটি মটর-দানা রাখলেন। তার উপর কুড়িটা তুলোর গদী চাপালেন, তার উপর আরো কুড়িটা পালকের তোষক রাখলেন।
ঐ বিছানায় রাজকন্যা রাত কাটালেন। পরদিন সকালে, রাজকন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হল, “কেমন ঘুম হল ?” রাজকন্যা বলল, “কিসের ঘুম ! সারা রাত চোখের ছু পাতা এক করতে পারলে, তবে তো ঘুম ! বিছানার মধ্যে কি ছিল তা জানি না, কিন্তু মনে হল শক্ত কিছু। বাবা! সারা গায়ে কালশিটে পড়ে গেছে আর সে কি ব্যথা!”
তখন স্পষ্ট বোঝা গেল যে এ মেয়ে সত্যিকার রাজকন্যা না হয়ে যায় না, নইলে কে আর কুড়িটা তুলোর গদী আর কুড়িটা পালকের তোষকের মধ্যে দিয়ে তিনটি ক্ষুদে মটর-দানার অস্তিত্ব টের পাবে ? এমন সূক্ষ বোধশক্তি সত্যিকার রাজকন্যা ছাড়া আর কারই-বা থাকতে পারে ?
রাজপুত্রও নিশ্চিন্ত হলেন যে, অবশেষে একজন সত্যিকার রাজকন্যা পাওয়া গেছে। কাজেই তাকে বিয়ে করে ফেললেন। মটর-দানা তিনটিকে নিয়ে অন্যান্য অদ্ভুত ও অত্যাশ্চর্য জিনিসের সঙ্গে একটা সিন্দুকে রাখা হল। এতদিনে যদি না হারিয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে সেখানেই তারা এখনো আছে।
রাজকন্যার কেমন মিহি বোধশক্তি বল তো ?