।। সত্যনারায়ণব্রতে চন্দ্রচূড়ন্পকথাবর্ণনম্।।
।। সত্যনারায়ণ ব্রতে চন্দ্ৰচূড়নৃপ কথা বর্ণন।।
এই অধ্যায়ে সত্যনারায়ণ ব্রতে চন্দ্রচূড় নৃপকথা বর্ণনা করা হয়েছে।
রাজাসীদ্ধমিকঃ কশ্চিক্তেদারমণি পূরকে। চন্দ্রচূড় ইতি খ্যাতঃ প্রজাপালনতত্তপরঃ।।১।। শান্তো মধুরবান্ধীরো নারায়ণপরায়ণঃ। বভূবুঃ শত্রবস্তস্য ম্লেচ্ছা বিন্ধ্যনিবাসিনঃ।।২।। তস্য তৈরবভবদ্যুদ্ধমতিপ্রবলদারুণৈঃ। ভুশুন্ডী যুদ্ধনিপুনঃ ক্ষেপনৈঃ পরিঘায়ুধৈঃ।।৩।। চন্দ্রচূড়স্য মহতী সেনা যমপুরে গতা শতং রথাস্তথা নাগা সহস্ৰং তু হয়াস্তথা।।৪।।
শ্রীসূতজী বললেন, কেদারমণিপুরকে কোনো পরম ধার্মিক রাজা ছিলেন। তিনি প্রজাপালনে তৎপর ছিলেন, তাঁর নাম ছিল চন্দ্ৰচূড়।।১।।
পত্তয়ঃ পঞ্চসাহস্রা মৃতাঃ স্বর্গপুরং যযুঃ। দস্যবঃ পঞ্চসাহস্রা মৃতাঃ কৈতবয়োধিনঃ।।৫।। আক্রান্তঃ স মহাভাগস্তৈস্লেচ্ছৈদন্তয়োধিভিঃ। . ত্যক্ত্বা রাষ্ট্রং চ নগরং সৈকাকী বনমাযযৌ।।৬।। তীর্থব্যাজেন স নৃপ পুরীং কাশীং সমাগতঃ। তত্র নারায়ণ দেবং বন্দ্যং সৰ্বগৃহে গৃহে।।৭।। দদর্শ নগরীং চৈব ধনধান্যসমন্বিতাম্। যথা দ্বারাবতী জ্ঞেয়া তথা সা চ পুরী শুভা।।৮।। বিস্মিতশ্চন্দ্রচূড়শ্চ দৃষ্ট্বাশ্চর্যমনুত্তমম্। সত্যেন রোধিতাং লক্ষীং শীলধৰ্মসমন্বিতাম্।।৯।। দৃষ্ট্বা শ্রুত্বা সদানন্দং সত্যদেবপ্রপূজকম্। পতিত্বা তচ্চরণয়োঃ প্রণনাম মুদা যুতঃ।।১০।।
সেই রাজা ছিলেন অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের, মধুর বাক্য ব্যবহারকারী এবং ভগবান্ নারায়ণের প্রতি সেবা পরায়ণ। বিন্ধ্যাচলে বসবাসকারী ম্লেচ্ছ তাঁর শত্রুতে পরিণত হল। অত্যন্ত প্রবল সেই শত্রুর সাথে তাঁর যুদ্ধ হয়েছিল। তারা ভুশুন্ডী যুদ্ধে পারদর্শী ছিলেন। এছাড়া ক্ষেপণ ও পরিখার দ্বারা তারা রাজা চন্দ্রচূড়ের প্রচুর সৈন্যকে যমপুরীতে পাঠিয়েছিলেন। শতরথ নাগ এবং একসহস্র অশ্ব, পাঁচসহস্র পদাতিক সৈন্য সেই যুদ্ধে মারা যায়। পাঁচ সহস্র দস্যু কৈতব যুদ্ধে মারা গিয়েছিল।।২-৫।।
মহাভাগ রাজা চন্দ্রচূড় দম্ভের সংগে যুদ্ধ করতে গিয়ে ম্লেচ্ছগণের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে নিজ রাজ্য ত্যাগ করে একলা বনে চলে গিয়েছিলেন। ৬।।
তীর্থ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে সেই রাজা কাশীপুরীতে গিয়েছিলেন। সেখানে ভগবান্ নারায়ণ প্রত্যেকগৃহে পূজিত হতেন।।৭ ॥
সেখানে ধন্য-ধান্যে পূর্ণনগরীও তিনি দেখেছিলেন। দ্বারাবতী নগরীর ন্যায় পরমশুভ নগরী সেখানে ছিল।।৮।।
রাজা চন্দ্রচূড় সেই পরমোত্তম নগরী দেখে বিস্মিত হন। সত্যের দ্বারা অবরুদ্ধ শীল ধর্মযুক্ত লক্ষ্মীকে দেখে এবং সদানন্দরূপ সত্যদেবের প্রপূজক শ্রবণ পূর্বক তিনি তাঁর চরণে পতিত হলেন এবং প্রভূত আনন্দমগ্ন হয়ে তাঁকে প্রণাম করলেন।।৯-১০।।
দ্বিজরাজ নমস্তুভ্যং সদানন্দ মহামতে। ভ্রষ্টরাজ্যং চ মাং জ্ঞাত্বা কৃপয়া মাং সমুদ্ধর।।১১।। যথা প্রসন্নো ভগবাল্লক্ষ্মীকান্তো জনার্দনঃ। তথা তদ্বদ যদ্যোগ্যং ব্রতং পাপপ্রণাশনম্।।১২।। দুঃখশোকাদিশমনং ধনধান্য প্রবন্ধদম্। সৌভাগ্যসন্ততিকরং সর্বত্র বিজয়প্রদম্।।১৩।। সত্যনারায়নব্রতং শ্রীপতেস্তুষ্টি কারকম্।। যস্তিমস্মিন্দিনে ভূপ যজেচ্চৈব নিশামুখে।।১৪।। তোরণাদি প্রকর্তব্যং কদলীস্তম্ভমণ্ডিতম্। পঞ্চভিঃ কলশৈর্যুক্তং ব্ধজপঞ্চসমন্বিতম্।। ১৫।। তন্মধ্যে বেদিকাং রম্যাং কারয়েৎস ব্রতী দ্বিজৈঃ। তত্র স্থাপ্য শিলারূপং কৃষ্ণং স্বর্ণ সমন্বিতম্।।১৬।।
হে দ্বিজরাজ, হে মহামতি, হে সদানন্দ, আপনাকে প্রণাম। আমি রাজ্যভ্রষ্ট, আপনি আমাকে উদ্ধার করুন–এইরূপ বাক্য দ্বারা চন্দ্রচূড় সত্যনারায়ণ দেবের চরণবন্দনা করলেন।।১১।।
ভগবান্ জনার্দন যেরূপে প্রসন্ন হন তা আমাকে বলুন।।১২।।
সদানন্দ বললেন–দুঃখ এবং শোকাদি শমনকারী তথা ধম-ধান্য বৃদ্ধিকারী এবং সৌভাগ্য এবং সন্ততি প্রদানকারী, সর্বত্র বিজয় দানকারী ভগবান্ সত্যনারায়ণ দেবের ব্রত পালন করলে শ্রীপতি তুষ্ট হন। হে নৃপ, যে কোনো নিশারম্ভে তাঁর যজন করা উচিৎ।।১৩-১৪।।
সেই দিন তোরণাদি প্রস্তুত করে কাদলীর স্তম্ভের দ্বারা মন্ডপ তৈরী করতে হয়।।১৫।।
কুর্যাদগন্ধাদিভিঃ পূজাং প্রেমভক্তিসমন্বিতঃ। ভূমিশায়ী হরিং ধ্যায়সম্প্ররাত্রং ব্যতীতয়েৎ।।১৭।। ইতি শ্রুত্বা স নৃপতিঃ কাশ্যাং দেবমপূজয়ৎ। রাত্রৌ প্রসন্নো ভগবান্দদৌ রাজ্ঞেহসিমুত্তমম্।।১৮।। শত্রুপক্ষক্ষয় করং প্রাপ্য খড়্গং নৃপোত্তমঃ। প্রণম্য চ সদানন্দং কেদারমনিমাযযৌ।।১৯।। হত্বা দস্যুষ্মষ্টিশতাংস্তেষাং লব্ধা মহদ্ধনম্। হরিং প্রপূজয়ামাস নর্মদায়াস্তটে শুভে।।২০।। পৌর্ণমাস্যাং বিধানেন মাসি মাসি নৃপোত্তমঃ। অপূজয়ৎসত্যদেবং প্রেমভক্তিসমন্বিতঃ।।২১।। তদব্রতস্য প্রভাবেন লক্ষগ্রামাধিপোহ ভবৎ। রাজ্যং কৃত্বা স ষষ্ট্যদ্বমন্তে বিষ্ণুপুরং যযৌ।।২২।।
ব্রতীকে সেখানে শিলারূপ কৃষ্ণ স্থাপন করে প্রেম, ভক্তিভাব দ্বারা গন্ধ, অক্ষত, পুষ্পাদি উপাচারের দ্বারা তাঁর পূজা করতে হয়। ভূমিতে শয়ন করে তাঁর ধ্যান করে সাতরাত্রি সেখানে ব্যতীত করতে হবে।।১৬-১৭।।
এই কথা শ্রবণ করে রাজা কাশীতে দেবনারায়ণের পূজা করেছিলেন। রাত্রে প্রসন্ন হয়ে ভগবান্ রাজাকে একটি অত্যুত্তম তলোয়ার দিয়েছিলেন। এরপর নৃপশ্রেষ্ঠ শত্রু বিনাশকারী খড়্গ প্রাপ্ত হয়ে সদানন্দকে প্রণাম করে কেদারমণিতে চলে গেলেন।।১৮-১৯।।
অতঃপর ছয়সহস্র দস্যুকে হত্যা করে তাদের ধন-সম্পদ গ্রহণ করে সেই রাজা নর্মদাতীরে হরি ভজনা করেছিলেন।। ২০।।
প্রত্যেক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে যথাবিধি নৃপ চন্দ্রচূড় প্রেমভক্তিভাবে ভগবান্ সত্যদেবের পূজা করতেন।।২১।।
সত্যদেবের ব্রতের প্রভাবে তিনি পুনরায় একলক্ষ গ্রামের অধিপতি হয়েছিলেন। এইভাবে পরমানন্দে ষাট বৎসর তিনি সেখানে রাজত্ব করেছিলেন এবং দেহান্তে বিষ্ণুপুর প্রাপ্ত হয়েছিলেন।।২২।।