।। সত্যনারায়ণকথাবর্ণনম্।।
।। সত্যনারায়ণ কথা বৰ্ণন।।
এই অধ্যায়ে সত্যনারায়ণ কথা বর্ণনা এবং নারদের প্রতি ভগবান্ নারায়ণের ব্রত বিধি বর্ণনা করা হয়েছে।
একদা নৈমিষারণ্যে ঋষয়ঃ শৌনকাদয়ঃ। পৃচ্ছন্তি বিনয়েনৈব সূতং পৌরাণিকং খলু।।১।। ভগবন্ধহি লোকানাং স্থিতাথয়ি চতুযুগে। কঃ পূজ্যঃ সেবিতব্যশ্চ বাঞ্জিতার্থপ্রদায়কঃ।।২।। বিনায়াসেন বৈ কামং প্রাপ্নযুমার্নবাঃ শুভম্। সত্যং ব্রহ্মন্বদোপায়ং নরাণাং কীর্তিকারকম্।।৩।। নবাংভোজনেত্রং রমাকেলিপাত্রং চতুর্বাহুচামী- করাচারুগাত্রম্ জগত্রাণহেতুং রিপৌ ধূন্মকেতুং সদা সত্যনারায়ণং সংকরুণং স্তোমি দেবম্।।৪।।
শ্রীব্যাসদেব বললেন, একসময় নৈমিষারণ্যে শৌনচাকাদি ঋষিগণ সবিনয়ে পৌরাণিক সূতজীকে বললেন — হে ভগবন্, চতুর্যুগে লোকাহিতের জন্য কোন্ পূজা যোগ্য বা কোন্ পূজা যোগ্য বা কোন্ সেবা যোগ্য মনোবাঞ্ছিত অর্থ প্রদান করে।।১-২।।
মানব বিশেষ কোনো পরিশ্রম বিনা নিজ শুভকামনার বর প্রাপ্ত হয় এমন কোনো সত্য উপায় বলুন।।৩।।
সূতজী বললেন, নবীনকমল সদৃশ নেত্রযুক্ত রমাকেলিপ্রাত্র চতুর্বাহু, সুবর্ণকান্তি দেহধারী, জগৎত্রাণহেতু, শত্রুর প্রতি ধুম্রকেতু সত্যনারায়ণ দেবকে দেবতাগণ স্তুতি করেন।।৪।।
শ্রীরামং সহলক্ষণং সংকরুনং সীতান্বিতং। সাত্ত্বিকং বৈদেহীমুখপদ্ম লুব্ধমধুপং পৌলস্ত্য সংহারকম। বন্দে বন্দ্যপদাম্বুজং সুরবরং ভক্তা নুকম্পাকরং শত্রুস্নেন হনুমতা চ ভরতেনাসেবিতং রাঘবম্।।৫।। কলিকলুষ বিনাশং কামসিদ্ধিপ্রকাশং সুরবর মুখভাসং ভূ সুরেন প্রকাশম বিবুধবুধবিলাসং সাধুচর্যবিশেষং নৃপ তিবরচরিত্রং ভোঃ শূনুম্বেতিহাসম্।।৬।। ইতিহাসং তথা রাজ্ঞা ভিল্লানাং বণিজোহস্য চ। কথাস্তে প্রণমেদ্ভক্ত্যা প্রসাদং বিভজেত্ততঃ।।৭।। লব্ধং প্রসাদং ভুঞ্জীত মানয়ন্ন বিচারয়েৎ। দ্রব্যাদিভিন মে শান্তির্ভক্ত্যা কেবলয়া যথা।।৮।। বিবীনানেন বিপ্রেন্দ্র পূজয়ন্তি চ যে নরাঃ। পুত্রপৌত্রধনৈযুক্তা ভুক্ত্বা ভোগননুত্তমান্।।৯।।
লক্ষ্মণের সঙ্গে বিদ্যমান দয়াবান্, দেবী সীতার সঙ্গে বিরাজমান, পরমতাত্ত্বিক, বৈদেহী মুখপাত্র লোভী, পৌলস্ত্য সংহারকারী, বন্দনার যোগ্য পাদপদ্মযুক্ত, শত্রুঘ্ন, ভরত ও হনুমানের দ্বারা সেবিত রাঘবেন্দ্র শ্রীরামকে আমি বন্দনা করি।। ৫।।
কলিযুগের কলুষবিনাশকারী, কামনাসিদ্ধির প্রকাশ, ব্রাহ্মণ্যভাবযুক্ত মুখমন্ডল, দেব ও বিদ্বানগণের বিলাস স্বরূপ, সাধুচর্যাবিশেষ, নৃপতি শ্রেষ্ঠ সেই পুরুষের চরিত্র ইতিহাস শ্রবণ কর। এছাড়া রাজা, ভিল্ল অর্থাৎ ম্লেচ্ছগণের এবং বণিকগণের ইতিহাস শ্রবণ কর। কথান্তে ভক্তিভাবে প্রণাম করা এবং প্রসাদ গ্রহণ করা উচিৎ।।৬-৭।।
অন্তে সান্নিধ্যমাসাদ্য মোদত্তে তে ময়া সহ যংযং কাময়তে কামং সুব্রতী তন্তমাপুয়াৎ।।১০।। ইত্যক্ত্বান্তদধে বিষ্ণু বিপ্রোপি সুখ মাপ্তবান্। প্রণম্যাগাদ্যথাদিষ্টং মনসা কৌতুকাকুলঃ।।১১।। অদ্য ভৈক্ষ্যেণ লভ্যেন পূজ্যৌ নারায়ণো ময়া। ইতি নিশ্চিত্য মনসা ভিক্ষার্থী নগরং গতঃ।।১২।। বিনা দেহীতি বচনং লব্ধা চ বিপুলং ধনম্। কৌতুকায়াসমনসা জগাম নিজমালয়ম্।।১৩।। বৃত্তান্তং সর্বমাচখ্যৌ ব্রাহ্মণী সান্বমোদত। সাদরং দ্রব্যসম্ভারমাহৃত্য ভর্তুরাজ্ঞয়া।।১৪।।
প্রসাদ অভিমান ত্যাগ করে গ্রহণ করা উচিৎ। দ্রব্যাদির দ্বারা শান্তিলাভ সম্ভব নয়, কেবল ভক্তিভাবেই তা সম্ভব। হে বিপ্রেন্দ্ৰ, যে মানব, এই বিধানে পূজা করেন তিনি পুত্র পৌত্রাদি এবং ধন-সম্পত্তি প্রাপ্ত হন। তিনি পরম উত্তম সাংসারিক ভোগ্যবস্তু উপভোগ করে দেহান্তে আমার সান্নিধ্যে এসে আনন্দ উপভোগ করেন। সুব্রতী মনে যে কামনা করেন তা অবশ্যই প্ৰাপ্ত হন।।৮-১০।।
এইকথা বলে ভগবান্ অন্তর্হিত হলেন এবং বিপ্রও পরম সুখ লাভ করলেন। তিনি প্রণাম করে যথোদ্দিষ্ট স্থানে কৌতুকাকুল হয়ে চলে গেলেন।।১১।
সেই দিন তিনি মনে মনে সংকল্প নিলেন যে, আজ যা ভিক্ষা তিনি পাবেন তার দ্বারা ভগবানের পূজন করবেন। মনে এইরূপ বিচার করে তিনি নগরে চলে গেলেন।।১২।।
‘আমায় কিছু ভিক্ষা দিন’–এ কথা না বলেও ভগবানের কৃপাতে সেদিন তিনি ভিক্ষার অধিক ধন পেয়েছিলেন। কৌতুক এবং আয়াসযুক্ত মনে তিনি নিজের ঘরে চলে গেলেন।
নিজ গৃহে গিয়ে সেই ব্রাহ্মণ সমস্ত বৃত্তান্ত বললেন এবং ব্রাহ্মণী প্রসন্ন চিত্তে তা অনুমোদন করলেন। পরমাদরে তিনি স্বামীর আজ্ঞায় দ্রব্য সম্ভার একত্রিত করে নিকটস্থ বন্ধু-আত্মীয়গণকে বললেন, “আজ আমি আপনাদের সংগে নিয়ে ভগবান সত্য নারায়ণ দেবের যজন করব।।১৩-১৪।।
আহুয় বন্ধুমিত্ৰানি তথা সান্নিধ্যবর্তিনঃ। সত্যনারায়ণং দেবং যজামি স্বগনৈবৃতঃ।।১৫।। ভক্ত্যা তুতোষ ভগবান্সত্যনারায়ণঃ স্বয়ম্। কামং দিৎসঃ প্রাদুরাসীৎকথান্তে ভক্তবৎসলঃ।।১৬।। বরে বিপ্রোহভিলষিতমিহামুত্ৰ সুখপ্রদম্। ভক্তিং পরাং ভগবতি তথা তৎসঙ্গিণাং ব্রতম্।। ১৭।। রথং কুজ্ঞরং মঞ্জুলং মন্দিরং চ হয়ং চারু চামী করালং কৃতং চ। ধনং দাসদাসীগণং গাং মহীং চ লুলায়াঃ সদুগ্ধ হরে দেহি দাস্যম্।।১৮।। তথাস্থিতি হরিঃ প্রাহ ততশ্চান্তদর্থে প্রভুঃ। বিপ্রোহপিকৃত কৃত্যোহ ভূৎসর্বে লোকা বিসিস্সিরে।।১৯।। প্রণম্য ভুবি কায়েন প্রসাদং প্রাপুরাদরান্। স্বং স্বং ধাম সমাজধন্যধন্যেতি বাদিনঃ।।২০। সত্যনারায়ণ ব্রতে চন্দ্রচূড় নৃপকথা বর্ণন প্রচ্চার ততৌ লোকে সত্যনারায়ণাচনম্। কামসিদ্ধিপ্রদং মুক্তিভুক্তিদং কলুষাপহম্।।২১।।
এইপ্রকার ভক্তিতে ভগবান অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়ে কামনা পূরণকারী ভগবান ভক্তের উপর সন্তুষ্ট চিত্ত হয়ে তাঁর কথা সমাপ্ত হওয়ার পর প্রকট হলেন। ব্রাহ্মণ ইহলোক ও পরলোকের সমস্ত সুখপ্রদ অভিলষিত বস্তু প্রার্থনা করলেন।
বিপ্র বললেন, ভগবান্ পরমভক্তি, সৎসংগিব্রত, রথ, হাতী, সুন্দর মন্দির, অশ্ব, সুন্দর সুবর্ণের অলংকার, দাস-দাসীগণ, ভূমি, দুগ্ধবতী গাভী এই সকল প্রদান করে আপনার দাস্য আমাকে দিন।।১৫-১৮।।
বিপ্রের প্রার্থনা শ্রবণ করে ভগবান্ বললেন এই রকম হইবে। এইবলে ভগবান্ অন্তর্হিত হলেন, সেই ব্রাহ্মণও কৃতকৃত্য হয়ে সমস্ত লোকের বিস্ময় উৎপাদন করতে লাগলেন।।১৯।।
সকলে ভূমিতে স্পর্শ করে প্রণাম পরমাদরে প্রসাদ গ্রহণ করলেন এবং ধন্য ধন্য করে নিজ নিজ গৃহে চলে গেলেন।।২০।।
এরপর থেকে লোকের মধ্যে যজন কামনা সিদ্ধির প্রদানকারী ভোগ এবং মোক্ষ প্রদানকারী, সমস্ত পাপ বিনাশকারী ভগবান্ সত্য নারায়ণের কথা প্রচার হয়।।২১।।