সওগাত

পুজোর পরব কাছে। ভাণ্ডার নানা সামগ্রীতে ভরা। কত বেনারসি কাপড়, কত সোনার অলংকার; আর ভাণ্ড ভ’রে ক্ষীর দই, পাত্র ভ’রে মিষ্টান্ন।

মা সওগাত পাঠাচ্ছেন।

বড়োছেলে বিদেশে রাজসরকারে কাজ করে; মেজোছেলে সওদাগর, ঘরে থাকে না; আর-কয়টি ছেলে ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া ক’রে পৃথক পৃথক বাড়ি করেছে; কুটুম্বরা আছে দেশে বিদেশে ছড়িয়ে।

কোলের ছেলেটি সদর দরজায় দাঁড়িয়ে সারা দিন ধরে দেখছে, ভারে ভারে সওগাত চলেছে, সারে সারে দাসদাসী, থালাগুলি রঙবেরঙের রুমালে ঢাকা।

দিন ফুরোল। সওগাত সব চলে গেল। দিনের শেষনৈবেদ্যের সোনার ডালি নিয়ে সূর্যাস্তের শেষ আভা নক্ষত্রলোকের পথে নিরুদ্দেশ হল।

ছেলে ঘরে ফিরে এসে মাকে বললে, ‘মা, সবাইকে তুই সওগাত দিলি, কেবল আমাকে না।’

মা হেসে বললেন, ‘সবাইকে সব দেওয়া হয়ে গেছে, এখন তোর জন্যে কী বাকি রইল এই দেখ্‌‍।’

এই বলে তার কপালে চুম্বন করলেন।

ছেলে কাঁদোকাঁদো সুরে বললে, ‘সওগাত পাব না?’

‘যখন দূরে যাবি তখন সওগাত পাবি।’

‘আর, যখন কাছে থাকি তখন তোর হাতের জিনিস দিবি নে?’

মা তাকে দু হাত বাড়িয়ে কোলে নিলেন; বললেন, ‘এই তো আমার হাতের জিনিস।’

পৌষ ১৩২৬

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *