সংসার

সংসার

মজিদের বয়স সাড়ে চার বছর। এ বয়সেই সে তার বাবার প্রতিভার একজন মুগ্ধ সমঝদার। আজ তার মুগ্ধতা আকাশ স্পর্শ করেছে। কারণ তার বাবা কুদ্দুস মিয়া তাকে একটা ইঁদুর ধরে দিয়েছে। শুধু ধরে দেয়নি, হঁদুর নিয়ে সে যেন মজা করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করেছে। লাল সুতা দিয়ে ইঁদুরের লেজ বাঁধা। সুতা ছেড়ে দিলে ইঁদুর কুট কুট করে হাঁটতে থাকে। সুতা টেনে ইঁদুর কাছে আনা যায়।

মজিদ তার সাড়ে চার বছরের ক্ষুদ্র জীবনে অনেক বিস্ময়কর জিনিস তার বাবার কাছ থেকে উপহার পেয়েছে। এমন বিস্ময়কর কিছু পায়নি। ইঁদুরের সুতা ধরে আনন্দে তার প্রায় কান্না পেয়ে গেল।

কুদ্দুস মিয়া পুত্রের আনন্দ কিছুক্ষণ দেখল। তারপর উদাস ভঙ্গিতে একটা বিড়ি ধরাল। তিনটি মাত্র বিড়ি আজ তার সারাদিনের সম্বল। দিন সবে শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই একটা অকারণে খরচ করে ফেলা নিতান্তই বেকুবি। তারপরও কুদ্দুস মিয়া বেকুবিটা করলো। কারণ ছেলের আনন্দিত মুখ দেখে তার মনটা উদাস হয়েছে। মন উদাস হলে বিড়ি সিগারেট টানতে ইচ্ছা করে।

মজিদ বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা ইন্দুর কামড় দেয়?

কুদ্দুস মিয়া না সূচক মাথা নাড়ল। ছেলের সঙ্গে সে কথাবার্তা খুব কম বলে। ছেলেমেয়েদের সঙ্গে কথা কম বলাই নিয়ম। বেশি কথা বললে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক না। প্রশ্রয় পেলে ভয় ভক্তি কমে যায়। কুদ্স মিয়ার ধারণা ছেলেমেয়ে মানুষ করার সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো তাদের দিকে একেবারেই নজর না দেওয়া। অকারণে কথা না বলা। কিছুতেই যেন বাবার ভালবাসা এরা টের না পায়। ভালবাসা প্রকাশ করার জিনিস নয়, ভালবাসা গোপন রাখার জিনিস। যে ভালবাসা যত গোপন সেই ভালবাসা তত গভীর। এই যে মজিদ ইঁদুর নিয়ে খেলছে, খেলাটা দেখতে তার। ভাল লাগছে। সেই ভাল লাগা পুত্রের টের পাওয়া খুবই ভুল হবে। কাজেই সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়ি টানতে লাগলো। তার এই ঘর থেকে আকাশ দেখা যায়, এটাও এক আনন্দের কথা। তবে এটাকে ঘর বলা ঠিক হচ্ছে না। পাইপ ঘর বলা যায়। এক মাসের উপর হলো তারা উঠে এসেছে সিউয়ারেজ পাইপে। শুরুতে কুদ্দুসের কঠিন আপত্তি ছিল। পাইপের ভেতর মানুষ থাকে? রাতে ঘুমের মধ্যে পাইপ গড়াতে শুরু করলে তখন? তার ইচ্ছা ছিল মনোয়ারার সঙ্গে সে একটা কঠিন ঝগড়া করে। শেষ পর্যন্ত ঝগড়াটা করলো না, মেয়েছেলের সঙ্গে ঝগড়া করে ফায়দা কি? এরা যুক্তি বোঝে না। আল্লাহ পাক যুক্তি বোঝার ক্ষমতা এদের দেন নাই। তাছাড়া মনোয়ারা সংসারের জন্যে খেটে মরছে। তার সামান্য কথা শুনলে সে যদি খুশি হয়, হোক। মানুষকে খুশি করার মধ্যেও সোয়াব আছে।

মিরপুর ইলেকট্রিক সাব-অফিসের মাঠে জমা করে রাখা গোটা পনেরো পাইপের মধ্যে একটার দখল তারা নিয়েছে। পাইপগুলো দূর থেকে যত ছোট মনে হয় আসলে তত ছোট না। ঝড় বৃষ্টির সময় বড়ই আরাম। বৃষ্টির একটা ফোঁটাও ভিতরে আসে না। পাইপের দুই মাথা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিলেই হলো। সবচে বড় সুবিধা মশার যন্ত্রণা নাই। প্রথম দুই রাত ঘুমাতে একটু কষ্ট হয়েছিল দমবন্ধ দমবন্ধ লাগছিল। মনোয়ারাকে সে এক সময় বলেই ফেললো, ও বৌ! মনে হইতেছে কবরের ভিতরে শুইয়া আছি। মানকের নেকের আইস্যা সোয়াল জোয়াব শুরু করব।

মনোয়ারা জবাব দেয়নি। স্বামীর অধিকাংশ কথার সে কোনো জবাব দেয় না। এটা এক ধরনের বেয়াদবি। রোজ হাশরে মনোয়ারা এই বেয়াদবির কারণে বিপদে পড়বে। কুদ্দুস ঠিক করে রেখেছে সুযোগ সুবিধা মত বিষয়টা সে স্ত্রীকে বুঝিয়ে বলবে। সে রকম সুযোগ সুবিধা হচ্ছে না। মনোয়ারার মেজাজ খুবই খারাপ যাচ্ছে।

মনোয়ারা কোনো জবাব না দিলেও মজিদ উৎসাহের সঙ্গে জিজ্ঞেস করে, মানকের নেকের কে বাপজান?

কুদ্দুস পুত্রের কৌতূহলে আনন্দিত হয়। মানকের নেকেরের সোয়াল জবাব বিশদভাবে বলতে যায়—

এরা হইল আল্লাহ পাকের দুই ফেরেশতা। এরা আইস্যা পরথমে বলে তোমার রব কে? তারপর বলে কে তোমার রসুল? তারপর বলে…. মনোয়ারা চেঁচিয়ে বলে, চুপ কইরা ঘুম যান। দিক কইরেন না।

এটাও আদবের বরখেলাপ। স্বামীকে ধমক। স্বামী বড়ই আদবের জিনিস, তারে ধমক দেওয়া যায় না। এর জন্যেও রোজ হাশরে মনোয়ারার জটিল অসুবিধা হবে।

মনোয়ারার ধমকে কুদ্দুস খানিকটা উদাস হয়, তবে বিচলিত হয় না। যে সংসারের জন্যে এতো খাটাখাঁটি করে তার কিছু ভুলত্রুটি ক্ষমা’র চোখে দেখা যায়। এই যে থাকার জন্যে পাইপে সংসার পেতেছে, মনোয়ারার জন্যেই সম্ভব হয়েছে। এই সব খোঁজ-খবর সেই রাখে। গত শীতে মিউনিসিপ্যালিটি থেকে কিছু কম্বল দেওয়া হয়েছে। সংখ্যায় অতি অল্প। মনোয়ারা সেই কম্বল দু’টা জোগাড় করে ফেলল–অবিশ্বাস্য ব্যাপার। একটা তারা বিক্রি করেছে বিয়াল্লিশ টাকায়। দর ভাল পেয়েছে। অনেকে কুড়ি পঁচিশ টাকায় বিক্রি করেছে। সেই টাকা জমা আছে–একদিন রিকশা কেনা হবে। মনোয়ারার ধারণা তাদের একটা নিজস্ব রিকশা থাকলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। মেয়েছেলে যে কী পরিমাণ নির্বোধ হয় এটা তার একটা প্রমাণ। রিকশা চালানোর শক্তি কি তার আছে? একটা পা বলতে গেলে–অবশ। সে যে দিন রাত ঘরে বসে থাকে–অকারণে থাকে না। উপায় নেই বলেই থাকে। কোনো কারণে পা ঠিক হলেও ঢাকা শহরে মোটর গাড়ির যে উৎপাত এর মধ্যে রিকশা চালানো সহজ কথা? জীবন-মৃত্যুর ব্যাপার। বেবিট্যাক্সি হলে ভিন্ন কথা ছিল। কলের ইনজিন। চালিয়ে আরাম–চালানোর মধ্যে একটা ইজ্জতও আছে। রিকশাওয়ালাকে সবাই তুই তুমি করে। বেবিট্যাক্সিওয়ালাকে বলে আপনি করে। ইজ্জত ছোট করে দেখার কোনো বিষয় না।

কুদ্দুস অবশ্যি এখনো কিছু বলছে না। সময় হোক, সময় হলে বলবে। রাগারাগি চিৎকার করবে না। মেয়েছেলে অবলা প্রাণী, এদের সঙ্গে রাগারাগি করা যায় না। বুঝিয়ে বলতে হবে। তবে কুদ্দুসের ধারণা, বুঝিয়ে বলারও দরকার হবে না। রিকশার টাকা জমানোতো সহজ কথা না। বিপদ আপদের কি কোনো শেষ আছে? হুট করে একটা বিপদ আসবে–খরচ করো টাকা। গত ভাদ্র মাসে যে রকম বিপদ এসে ঘাড়ের উপর পড়লো, মনে হলে এখনো গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। তারা তখন পাকা দালানে মোটামুটি সুখেই ছিল। কল্যাণপুরে আটতলা দালান হচ্ছিল। কি কারণে কয়েক বছর ধরে কাজ বন্ধ হয়ে আছে। ঐ বাড়ির বিভিন্ন ঘর তাদের মত মানুষরা সেলামী। দিয়ে ভাড়া নিয়ে থাকে। তারাও দুশ টাকা সেলামী দিয়ে চার তলায় উঠে গেল। সিঁড়িতে রেলিং নাই এটাই সমস্যা। অন্ধকারে উঠতে নামতে ভয় ভয় লাগে। পরিবেশও খুব খারাপ, আজেবাজে মেয়েছেলে থাকে। রাত দুপুরে হুল্লোড়। এই সব জায়গায় সংসার করা ঠিক না। তারপরেও ছিল, উপায় কি? তখন বড় মেয়েটা পড়লো অসুখে–কথা নাই বার্তা নাই আকাশ-পাতাল জ্বর। তবে চিকিৎসার ত্রুটি হয় নাই। মনোয়ারা তার জমা টাকার প্রতিটি পাই পয়সা খরচ করেছে। আজেবাজে মেয়ে যে কয়টা ছিল তারাও সাহায্য করেছে। মেয়েটার মৃত্যুর পর আজেবাজে মেয়েগুলোও গলা ফাটিয়ে কেঁদেছে। রোজ হাশরে এই মেয়েগুলোর বিচার হবে। তখন কারো সুপারিশ কাজে লাগবে না। যদি কাজে লাগতো তাহলে অবশ্যই কুদ্দুস সুপারিশ করতো। আল্লাহ পাককে বলতো, ইয়া পরওয়াদেগার ইয়া গাফুরুর রহিম, তুমি এই মেয়েগুলোরে ক্ষমা করে দিও। এরা অভাবে পড়ে মহা অন্যায় করেছে। এই অভাব তোমারই দেওয়া। তুমি অবশ্য পরীক্ষা করার জন্যেই অভাব দিয়েছে। এরা তোমার জটিল পরীক্ষায় পাস। করতে পারে নাই। কিন্তু মেয়েগুলোর অন্তর ভাল ছিল।

বড় মেয়েটার কথা কুদ্দুসের প্রায়ই মনে হয়। তখন মনটা উদাস হয়। মেয়েটা বড়ই সুন্দর ছিল। ছবি দেখার পোকা ছিল। সবসময় ঘ্যান ঘ্যান করতো, বাপজান ছবি দেখব। ছবি দেখা বিরাট খরচান্ত ব্যাপার। তাছাড়া মনোয়ারা পছন্দ করে না। লুকিয়ে লুকিয়ে কয়েকবার মেয়েকে ছবি দেখিয়ে নিয়ে এসেছে। ছবির মধ্যে শিক্ষণীয় কিছু নাই। টাকা নষ্ট। তারপরেও শিশুর আব্দার বলে কথা। শিশুদের প্রশ্রয় দিতে নাই কিন্তু তাদের দুএকটা আব্দার রাখতে হয়। এই বিষয়েও নবীজির নির্দেশ আছে, নবীজি শিশুদের স্নেহ করার জন্যে কঠিন নির্দেশ দিয়ে গেছেন। নবীজী বলেছেন, যে শিশুদের স্নেহ করেনা, সে আমার উম্মত।

কুদ্দুস নবীজির নির্দেশ মেনে মেয়েটাকে স্নেহ করেছে। প্রয়োজনের বেশি করেছে। করা উচিত হয় নাই। আরেকটু কম স্নেহ করলে তার মৃত্যুতে কষ্ট কম হত।

তবে আল্লাহপাকের হিসেব ঠিক আছে। মেয়েটা বেশি সুন্দর ছিল। বড় হলে মেয়েকে নিয়ে বিপদ হত। স্নেহ দেখানোতে বিপদ আছে বলেই মজিদকে সে স্নেহ কম দেখাচ্ছে। ইঁদুরের বাচ্চা ধরে দিয়েছে। এতে অনেক খানি স্নেহ দেখানো হয়ে গেছে। কোনো এক ফাঁকে একটা ধমক দিয়ে স্নেহ কমিয়ে দিতে হবে।

বাপজান?

উঁ

ইন্দুর কী খায়?

যা পায় খায়। চিড়া গুড় মুড়ি কাগজ লোহা–খায় না এমন জিনিস নাই। ইন্দুর আর ছাগল দুইজনেই এক পদের-খাওনে উস্তাদ।

মজিদ চোখ বড় বড় করে বাবার কথা শুনে। এতে বড় ভাল লাগে কুদ্দুসের। মনোয়ারা আজকাল আর তার কথা শুনে না। কিছু বলতে গেলে বলে, চুপ যান। দিক কইরেন না।

কুদ্দুসের কথা বলতে ইচ্ছা করে। সংসার ধর্ম করতে হলে কথা বলতে হয়। কথার মধ্যেই থাকে ভাব-ভালবাসা। কথা না থাকলে ভাব-ভালবাসা আসবে কিভাবে? মনোয়ারা সহজ সত্য বোঝে না। তার শুধু রোজগারের চিন্তা। পথের ফকির হওয়ার মধ্যেও আনন্দ আছে। আমাদের নবীজিও বলতে গেলে পথের ফকির ছিলেন।

বাপজান!

উ।

ইন্দুরটার ক্ষিধা লাগছে।

তোর নিজের লাগছে?

মজিদ লাজুক ভঙ্গিতে হাসে।

কুদ্দুসের বড়ই মায়া লাগে।

তোর মা আসুক ব্যবস্থা হইব। ক্ষিধের কথায় কুদ্দুস নিজেও খানিকটা অস্থির বোধ করে। তার নিজেরও ক্ষিধে হচ্ছে। প্রবলভাবে হচ্ছে। ঘরে খানিকটা চিড়া ছিল। দুপুরে ভিজিয়ে মজিদকে দেওয়া হয়েছে। কুদ্দুসের ধারণা ছিল মজিদ খানিকটা হলেও বাবার জন্যে রেখে দেবে। তা রাখে নাই। বড় মেয়েটা বেঁচে থাকলে অবশ্যই রাখতো। মায়ের জাত তো, চারদিকে নজর না করে এরা খেতে পারে না। এটাও আল্লাহপাকের হুকুমে হয়। আল্লাহপাকের সবদিকে খুব কঠিন নজর।

ক্ষিধে লাগছে বাপজান।

একবারতো শুনছি। এক কথা একশবার বলনে ফয়দা নাই। দিক করিস না।

মজিদ চুপ করে যায়। ইঁদুরের বাচ্চা নিয়ে খেলে। সুতা ধরে ঝুলিয়ে রাখে। ক্ষুদ্র প্রাণীটা ছটফট করে। মজিদ তাতে মজা পায়। কুদ্দুসও আরেকটা বিড়ি ধরায়। বিড়িটা ধরায় ক্ষিধা কমানোর জন্যে। বিড়ি সিগারেটের ধোয়া ক্ষিধার জন্যে বড় উপকারী। তার মনে ক্ষীণ সন্দেহ হয়, মনোয়ারা যদি খালি হাতে আসে। কি উপায় হবে? জমানো টাকা সে খরচ করবে না। বড়ই কঠিন মেয়ে। এই টাকায় সে রিকশা কিনবে। কে চালাবে তার রিকশা? কিছুই বলা যায়। না। হয়তো সে নিজেই চালাবে। বড়ই কঠিন মেয়ে। তার অসাধ্য কিছুই নাই। মেয়েটার এখন কিছুটা মাথা খারাপের মত হয়ে গেছে। রোজগারের কোনো পথ দেখছে না। কুদ্দুসকে সে কিছু বলে না। কিন্তু সে বুঝতে পারে।

মনোয়ারা রাত নটার দিকে ফিরলো। মনোয়ারাকে দেখে কুদ্দুসের বুক ধক করে উঠলো। কারণ মনোয়ারার পেছনে ভদ্রলোক কিসিমের এক লোক। পরনে পায়জামা পাঞ্জাবি, হাতে রুমাল। নাকে চেপে ধরেছে। সেই লোক সন্দেহজনক দৃষ্টিতে এদিক ওদিক দেখছে। খুক খুক করে কাশছে। এই দৃষ্টি, এই কাশি, নাকে চেপে ধরা এই রুমাল কুদ্দুস চিনে। সে বড় বিষণ্ণ বোধ করে।

কুদ্দুস দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে। বেহেশতে তার একটা সুন্দর সংসার হবে এটা সে ধরেই নিয়েছিল। মজিদ সরিফা আর তার স্ত্রী মনোয়ারাকে নিয়ে অতি সুন্দর সংসার। সেখানে ছবিঘর থাকলে মেয়েটাকে রোজ ছবি ঘরে নিয়ে যেত। রাতে খাওয়া দাওয়ার পর চারজনে মিলে দাওয়ায় বসে গল্পগুজব। বেহেশতে নিশ্চয়ই চাঁদনি আছে। চাঁদনি পসরে গল্পগুজবের মজাই অন্য। এখন মনে হচ্ছে, বেহেশতের সেই সংসারে মনোয়ারার স্থান হবে না। রোজ হাশরে মনোয়ারা কঠিন বিপদে পড়বে। স্বামীর সুপারিশ সেদিন গ্রাহ্য হবে না। গ্রাহ্য হলে সে অবশ্যই বলতো, আল্লাহপাক, এই মেয়ে তার সংসার বড় ভালোবাসে। সে যা করেছে সংসার টিকিয়ে রাখার জন্যেই করেছে। স্বামী হয়ে আমি তাকে ক্ষমা করেছি। তুমিও তাকে ক্ষমা করে দিও।

মনোয়ারা কুদ্দুসের দিকে তাকিয়ে ক্লান্ত গলায় বলল, আফনে মজিদরে লইয়া একটু ঘুইরা আহেন। কুদ্দুস মজিদকে কোলে তুলে নিল। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে মনোয়ারা। তার দিকে তাকিয়ে বড় মায়া লাগে কুদ্দুসের। মজিদের হাতে ধরা সুতার মাথায় ইঁদুর ঝুলতে থাকে। মানুষের নিষ্ঠুরতায় সে ইঁদুর বড়ই কাতর বোধ করে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *