কলকাতার নৈশ দৃশ্যে হোটেলের ছবি বাদ পড়তে পারে না, কারণ হোটেলে খাওয়া শখের বাবুদের একটা আধুনিক ফ্যাশন বা ঢং।
কলকাতায় হোটেল আছে নানা শ্রেণির, কিন্তু সে সমস্তরই কথা এখানে আলোচনা করে লাভ নেই। কারণ সাধারণত ‘হিন্দু হোটেল বা ভদ্রলোকদিগের আহারের স্থান’ বলে যেগুলি বিখ্যাত, সেগুলির মধ্যে বর্ণনীয় বিশেষত্বের একান্ত অভাব। গরিব বাসাড়ে ভদ্রলোক বা গদির চাকুরে দলের লোকরাই সেখানে খাওয়া-দাওয়া করে এবং সে দৃশ্য নিতান্ত একঘেয়ে। অনেক চায়ের দোকানেরও আজকাল ‘হোটেলত্ব’ প্রাপ্তি ঘটেছে, কিন্তু বড়োজোর সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের পরমায়ু, আর স্কুল কলেজের ছাত্র বা দরিদ্র কেরানিরাই মুরুব্বি হয়ে তাদের বাঁচিয়ে রাখে। আর এক শ্রেণির হোটেল বড়ো বড়ো জমকালো আর ব্যাকরণ বিরুদ্ধ ইংরেজি বা ফরাসি নাম নিয়ে পথে পথে— বিশেষত থিয়েটারের আশেপাশে বিরাজ করে। এক-একখানা একতলা ঘরেই এসব হোটের সীমাবদ্ধ। এখানে রান্না হয় ও খাবার সাজানো থাকে পথের ধারেই এবং রাস্তার যত ধুলো, নোংরা জঞ্জালের টুকরো ও কীটপতঙ্গ উড়ে এসে খাবারের উপরে পড়ে। এখানকার বেয়ারারা রাধাবাজারের দোকানদারের মতো গলাবাজির দ্বারা এইসব বিষবৎ খাবার খেয়ে আত্মহত্যা করবার জন্য খরিদ্দারদের আকৃষ্ট করে। এখানে শখের বাবুরা ভুলেও পায়ের ধুলো দেন না। আরশোলা যেমন পাখি নয়, এগুলোও তেমনি আসলে হোটেল নয়, চলতি ভাষায় এদের নাম হচ্ছে, ‘চায়ের দোকান’। অবশ্য এরই মধ্যে দু-চারটে আসল হোটেলের ক্ষুদ্র সংস্করণ আছে— কিন্তু সেগুলোও অত্যন্ত প্রকাশ্য বলে রহস্য-বর্জিত।
কলকাতার দেশি পাড়ায় খুব বেশি হোটেল না থাকলেও মাঝারি দরের হোটেলের সংখ্যা বড়ো কম নয়। অবশ্য রূপে, গুণে ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় এর অধিকাংশগুলি সাহেব পাড়ার ক্ষুদ্রতম হোটেলেরও সমকক্ষ নয়, তবু কিন্তু এখানে খরিদ্দারের অভাব হয় না। এসব হোটেলের কোনো কোনোটির ব্যবস্থা অত্যন্ত জঘন্য এবং কোনো কোনোটির ভেতরে গেলে দেখা যায়, মালিকের যত্ন, চেষ্টা ও অর্থব্যয়ের অভাব না থাকলেও, রুচির অভাব একান্ত। ঘরদোর সাজানো হয়েছে যথেষ্ট— কিন্তু সবই যেন মাড়োয়ারি আদর্শে— অর্থাৎ আর্ট নেই, বাহুল্য আছে।
দিনের আলোয় এসব হোটেলের বিশেষত্ব কিছুই নজরে পড়ে না, কারণ গণিকাদের মতো এদেরও ঘুম ভাঙে ও জীবন শুরু হয় সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে। তখন এদের ঘরে ঘরে বিজলিবাতি জ্বলে ওঠে ও বনবন করে বিজলি পাখা ঘুরতে থাকে এবং আগাগোড়া যথাসাধ্য সাজিয়ে গুছিয়ে রাখা হয়। বাঙালির হোটেলে খাওয়ার সঙ্গে গণিকালয়ে গমনের সম্পর্ক কিছু ঘনিষ্ঠ, তাই সোনাগাছি অঞ্চলেই হোটেলের সংখ্যা বেশি। এ অঞ্চলে বারবনিতা ছাড়া দুটি প্রধান বিশেষত্ব হচ্ছে, হোটেল আর পানের দোকান।
দেশি পাড়ার হোটেল কর্ত,পক্ষ ‘বার’ রাখতে দেন না— যদিও কার্যত হরে-দরে হাঁটুজলই দাঁড়িয়ে গেছে। সোনাগাছি অঞ্চলে হোটেলওয়ালাদের সবচেয়ে বড়ো অতিথি হচ্ছেন সুরা সেবকরা এবং অনেক হোটেলে লুকিয়ে মদ বিক্রি যে অবাধে চলে না, তাও জোর করে বলতে পারি না। হয়তো হোটেলে প্রকাশ্য স্থানে বিজ্ঞাপন দেখবেন ‘মদ লইয়া প্রবেশ নিষেধ’, কিন্তু অন্দরে ঢুকে ঘরে ঘরে উঁকি মারলেই নজরে পড়বে, একাধিক মদের বোতল ক্রমেই খালি হয়ে আসছে। অনেক হোটেলে মদ বিক্রি হয় না বটে, কিন্তু ভেতরে বসে অন্তত মদ্য পান করতে না দিলে এ অঞ্চলে হোটেল চলা অসম্ভব। এখানকার অধিকাংশ খরিদ্দারই যখন মাতাল, তখন হোটেলওয়ালারা দায়ে পড়েই এদিকে অন্ধ হয়ে থাকে এবং এজন্য তাদের বড়ো দোষী করতেও পারা যায় না। কর্ত,পক্ষ হোটেলে ‘বারে’র বিরোধী কিন্তু মদ বিক্রির লুকোনো আড্ডা এখানে যথেষ্ট, মাঝে মাঝে লোকসান দিয়ে মরে খালি মাতাল বেচারিরাই। কারণ রাত আটটার পরে মদ কিনতে হলেই প্রত্যেক পাইটে তাদের এক টাকা করে বেশি দিতে হয়।
থিয়েটারের আশেপাশে যত হোটেল আছে তার মধ্যে সবচেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও সাজানো গুছানো হোটেল হচ্ছে বিডন স্ট্রিটের ‘মিনার্ভা রেস্তরাঁ’ এবং স্টার থিয়েটারের সামনে ‘মিনার্ভা গ্রিল’৬.১। দুই হোটেলই এক মালিকের অধীনে। এখানকার রান্না ও খাবার গুণে বাঙালি পাড়ার সব হোটেলের চেয়ে ভালো। ওই দুই হোটেলের খরিদ্দাররা প্রায়ই বিশিষ্ট ও সম্ভ্রান্ত শ্রেণির লোক। অবশ্য সুরাভক্তরা এক বিষয়ে হতাশ হবে —এখানে গোপনে মদ বিক্রি হয় না।
সোনাগাছি অঞ্চলে হোটেলে খরিদ্দার আসে, প্রধানত দুই সময়ে। সন্ধ্যার পরে বাবুরা যখন সুন্দরী শিকারে বাহির হন, তখন প্রায়ই আগে হোটেলে এসে ওঠেন। কিছু মাংস ও সুরার বোতল নিয়ে বসে প্রথমত তাঁরা ধাতস্থ হন। সেইসময়ে পরামর্শ হয়, কোন দিকে গেলে ভালো শিকার মিলবে। তার পর আর এক শ্রেণির খরিদ্দার আসে কিছু বেশি রাতে— একেবারে যুগল রূপে অর্থাৎ শ্রীমান ও শ্রীমতীতে একসঙ্গে। সাহেবি হোটেলে ভদ্র নারী অতিথির সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু দেশি পাড়ার কোনো হোটেলেই ভদ্র মহিলারা পদার্পণ করেন না— ‘মিনার্ভা গ্রিল’ ও ‘রেস্তরাঁ’ ছাড়া। কাজেই ফিরিঙ্গিদের দেখাদেখি বাবুরা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটান! অবিদ্যাদের মতো হোটেলওয়ালাদেরও খরিদ্দারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হয়, মাসকাবারের প্রথম শনিবারে। আরও এক বিষয়ে হোটেলের মালিকদের সঙ্গে অবিদ্যাদের মিল আছে। তাঁদেরও ব্যবসা পরের মন জুগিয়ে চলা, সকলকে মিষ্ট কথায় বশ রাখা এবং হরেকরকম অত্যাচার হাসিমুখে গায়ে মাখা।
সোনাগাছি অঞ্চলে হোটেলের সাধারণ নৈশ অভিনয় এই রকম। একদল বাবু খেতে এলেন। হোটেলের মালিক তাঁদের অভ্যর্থনা করে কোনো ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। বাবুরা ঘরে গিয়ে বসতে না বসতেই বেয়ারা এসে হাজির। তখনি প্রথমে কিছু ড্রাই খাবার, এক বোতল হুইস্কি বা ব্রান্ডি, খানিকটা বরফ ও কয়েক বোতল সোডার হুকুম হল। বেয়ারা যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি হুকুম তামিল করলে।
প্রত্যেকের গেলাসে যখন মদ ঢালা হচ্ছে, একজন আপত্তি জানিয়ে বললেন, ‘ না ভাই, আজ আমায় মাপ কর!’
‘তাও কি হয়?’
‘না, না, আজ আমাকে তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে, বাড়িতে শেষে মুখে গন্ধ পাবে!’
‘ইস ভারি যে গুড বয় দেখছি, ওসব সতীত্ব এখানে চলবে না!’
‘না হে, তুমি বুঝবে না! গিন্নি যদি টের পায়, তখনই গলায় দড়ি দেবে কী আফিম খাবে কী কেরোসিনে পুড়ে মরবে!’
‘আপদ যাবে! ভাগ্যবানের স্ত্রী মরে— ভয় কী দাদা? নাও, বেসুরো গেয়ে ফুর্তি মাটি করে দিয়ো না!’
এক এক পাত্র খালি হল, গেলাসে আবার মদ ও সোডা পড়ল। প্রথমে যিনি আপত্তি করেছিলেন, এবারেও তিনি আপত্তি করলেন বটে, কিন্তু তেমন জোরের সঙ্গে নয়। তৃতীয়বারে তিনি মোটেই আপত্তি করলেন না, এবং চতুর্থবারে নিজেই বোতল থেকে গেলাসে মদ ঢেলে নিলেন। মাতালের মনোবিজ্ঞান এমনই বিচিত্র! বাঘ যেমন রক্তের স্বাদ পেলে বেশি ভয়ানক হয়ে ওঠে, মাতালও তেমনই একবার সংযম হারালে মাত্রা আর ঠিক রাখতে পারে না! ইচ্ছার বিরুদ্ধেও সে তখন মদ খেতে বাধ্য!
নেশা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাবুদের গলার আওয়াজও ক্রমে উঁচু পর্দায় চড়তে লাগল। তখন তাদের কথাবার্তার মুখ্য বিষয় কী, সেটা স্থির করে বুঝে ওঠা শক্ত কথা। কখনো আপিসের বড়োবাবু বা সাহেবের কথা, কখনো নিজের নিজের স্ত্রী-র কথা, কখনো বাপ-মায়ের ‘অত্যাচারের’ কথা এবং তারই মাঝে মাঝে ‘বোয়’! বলে উচ্চকণ্ঠে চিৎকার, আরও খাবারের ফরমাশ বা টেবিল চাপড়ে এক-আধ লাইন গান।
একজন বললেন, ‘চল, আজ ডালিমের বাড়ি যাই।’
‘না, সে বেটির গুমোরে মাটিতে পা পড়ে না, ট্যাঁকের কড়ি ফেলে অত গুমোর সইতে রাজি নই বাবা!’
আর একজনও আপত্তি জানিয়ে বললেন, ‘না, না, সামনেই পুজো, এর মধ্যে আমি আর তার চৌকাঠ মাড়াচ্চি না— এখনই বিষম এক বায়না ধরে বসবে!’
‘ধরুক বায়না! অমন চোখ আর অমন হাসি অন্য কোথাও পাওয়া যায়?’
‘তোর চোখের আর হাসির নিকুচি করেচে, টাকা ফেললে বাঘের দুধ মেলে, চোখ আর হাসির কথা কী বলচিস?’
ডালিমের ভক্ত ভোটে হেরে ফোঁস করে এক নিশ্বাস ফেলে গেলাসে ফের মদ ঢালতে প্রবৃত্ত হলেন।
‘তার চেয়ে চীনে-চামেলির বাড়িতে চল, নাচে-গানে মাত করে দেবে!’
‘দরেও সস্তা—’
‘ভদ্রলোকের কদর বোঝে—’
‘কিন্তু ডালিম—’
‘ফের ডালিমের নাম মুখে এনেচ কী সোডার বোতল তোমার মাথায় ভেঙেচি!’
‘বোয়, বোয়! বিল লে আও!’…
কোন বাগানে চীনে-চামেলি ফুটে আছে বাবুরাও তখন সেই খোঁজে বেরুলেন। …খানিক পরে আর একদল ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত এসে হোটেলের আর এক কামরা দখল করলে। এ দলে চারজন পুরুষ দু-জন স্ত্রীলোক। স্ত্রীলোক দুটি কাপড় জামা পড়েছে ব্রাহ্ম-মহিলাদের নকলে৬.২। মাথায় এক একখানা কাপড় বাঁধা— নব্য তন্ত্রের মেয়েদের এ এক নতুন ফ্যাশন। তাঁদের দেখাদেখি এরাও শিখেছে। দু-জনেরই চোখে চশমা ও সোনালি লপেটা। অনেক গণিকাকে প্রথম দৃষ্টিতে দেখলেই শিক্ষিতা নব্য মহিলা বলে ভ্রম হয়, এমন সুকৌশলে তারা আত্মগোপন করে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গহনা, নাকছাবি ও পায়ের সোনালি জুতো তাদের আসল স্বরূপ ধরিয়ে দেয়।
নতুন দলের সকলেই ইতিমধ্যে যথেষ্ট মদ্যপান করে এসেছে, কিন্তু তাতেও তাদের তৃপ্তি হল না, কারণ এখনও তারা যে চলে-হেঁটে বেড়াতে পারছে! এসেই ‘মদ, মদ’ রব উঠল, একজন অমনি পকেট থেকে হুইস্কির একটি ছোটো বোতল বার করে টেবিলের ওপরে রাখল। তখনই তিন বোতল সোডা ও এক চাঙাড় বরফ এল এবং গান শুরু হল। নেশার ওপরে নেশার প্রভাব আধ ঘণ্টার মধ্যেই ফুটে উঠল! একজন হঠাৎ একটি স্ত্রীলোককে জড়িয়ে ধরে ঢুলু ঢুলু চোখে বললে, ‘আঙুর, তোকে বড্ড ভালোবাসি!’
আঙুর ঘাড় দোলাতে দোলাতে বললে, ‘আ মরে যাই, রস যে আর ধরচে না!’
প্রথম লোকটি অভিমানের স্বরে বললে, ‘আমার মুখের কথা বিশ্বাস হল না ভাই! …আচ্ছা, তবে এই দ্যাখ, আমার এ প্রাণ তোর জন্যে এখনি আমি দিতে পারি কি না।’ …বলেই সে টেবিল ছুরিখানা হাতে করে তুলে ধরল।
অমনি বাকি তিনজন পুরুষও তার স্বরে প্রতিধ্বনি করে উঠল, ‘আঙুর, তোকে বড্ড ভালোবাসি!’
‘থাক, থাক, আমার জন্যে শেষটা কী তোমার গিন্নি নিরমিষ্যি খাবে, সিঁদুর মুছে ফেলবে? প্রাণ টান কিছুই তোমাকে দিতে বলচি না ইয়ার, তার চেয়ে আমাকে একটা মুক্তোর ”কলার” কিনে দাও দেখি! তাহলেই তোমার ভালোবাসার দৌড় কত বুঝতে পারব।’
প্রথম প্রেমিক সে-কথা যেন শুনতেই পায়নি, এমনি ভাব দেখিয়ে অন্য স্ত্রীলোকটিকে বললে, ‘হেনা, একখানা গান গা না ভাই!’
হেনা বললে, ‘হোটেলে বসে গান গাইব কী গো?’
‘আলবত? গাইবে!’
হেনা মাতালদের আর না ঘাঁটিয়ে গুনগুন করে গাইল।
দিদি, লাল পাখিটা আমায় ধরে দে না রে!
একজন টেবিলকে তবলায় পরিণত করে তাল দিতে লাগল, আর একজন দুটো খালি কাঁচের গেলাস নিয়ে টুং টুং করে খঞ্জনির বোল ধরলে এবং সেই প্রাণ বিসর্জনে উদ্যত প্রেমিক বাবুটি দাঁড়িয়ে উঠে নাচতে গিয়ে মেঝের উপর টলে পড়ে স্থির হয়ে শুয়ে রইল। বাজাতে বাজাতে হঠাৎ একটা গেলাস ভেঙে কাঁচের টুকরোগুলো প্রেমিকের সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে পড়ল, কিন্তু যে ভাঙলে, যার গায়ে পড়ল, আর যারা দেখলে তাদের কেউই এজন্য এতটুকু ব্যস্ত হওয়া দরকার মনে করলে না!
আচম্বিতে সিঁড়ির উপরে একটা প্রবল হাসি-গানের হররা শোনা গেল— একসঙ্গে বারো-তেরো জন স্ত্রীলোকের গলা! …এ ঘরের গাইয়ে, বাজিয়ে ও শুনিয়েরা অমনি তাড়াতাড়ি উঠে ঘর থেকে মুখ বাড়িয়ে দেখলে, পরে পরে একঝাঁক কালো, ফর্সা ও শ্যামলা ‘পরি’ সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে— কিন্তু এ নারীর দল একেবারে পুরুষ বর্জিত!
আঙুর বললে, ‘মাতাল হরি!’
‘মাতাল হরি’ কলকাতার এক নামজাদা মেয়ে-কাপ্তেন। তাকে দেখতে মোটেই ভালো নয়, কিন্তু গান গেয়ে সে রাশি রাশি টাকা রোজগার করে এবং দু-হাতে তা খরচ করে ফেলে। তার একটি অদ্ভুত বাতিক আছে। টাকা পেলেই সে দিন কয়েক ব্যবসা বন্ধ করে দেয় এবং চেনাশুনো আরও জনা কয়েক স্ত্রীলোক নিয়ে ঘরে বাইরে ফুর্তি করে বেড়ায়। যতদিন তার হাতে টাকা থাকে, ততদিন তার ফুর্তি চলে— এ আমোদের মধ্যে কোনো পুরুষ-বন্ধুকে প্রায়ই সে ডাকে না! দিন-রাতই সে মদ খায়— সেইসঙ্গে গাঁজা-গুলি-চণ্ডুও নাকি বাদ যায় না! আমাদের ‘মাতাল হরি’ নামটা যদিও কাল্পনিক, আসল লোক কিন্তু সত্যই আছে।
মাতাল হরি তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে একটা বড়ো ঘরে বাহার দিয়ে বসে গেল— সমস্ত হোটেল তাদের স্ত্রী-কণ্ঠের হট্টগোলে ভরে উঠল। হোটেলের মালিকের মুখ আজ ভারি খুশি। মাতাল হরির মতন খরিদ্দারের আবির্ভাবে তাঁর হোটেলের সমস্ত খাবার যে আজ সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যাবে, তাতে আর সন্দেহ নেই। তিনি তাড়াতাড়ি উপরে এসে, একগাল হেসে বললেন, ‘কী চাই ভাই হরি, ফরমাশ করো!’
হরি বললে, ‘ব্রাদার! তুমি থাকতে আমি অর্ডার দেব কীরকম? আমাদের যা চাই তুমিই বলে দাও, আর আমাদের সঙ্গে এইখানে বসে যাও, তোমাকেও ছাড়চি না বাবা!’
দেখতে দেখতে মদের বোতল, সোডার বোতল, গেলাস, বরফের পাত্র ও খাবারের ডিসে টেবিলগুলো পরিপূর্ণ হয়ে উঠল— বেসুরো গান, খিলখিল হাসি, ধেইধেই নাচ, ঝন ঝন ডিস ও গেলাস ভাঙা, অশ্লীল চিৎকার ও অশ্রাব্য কথায় সেখানে কান পাতে কার এমন সাধ্য! হোটেলে নতুন খরিদ্দার এসে ব্যাপার দেখে অনেকে সরে পড়ল, যারা এতেও ভড়কাল না, মাতাল হরি তাদেরও কারোকে কারোকে নিজের দলে টেনে নিলে। আঙুর ও হেনাও ইতিমধ্যে মাতাল হরির দলে যোগ দিয়েছে, কিন্তু তার পুরুষ-বন্ধুরা ভয়ে ভয়ে সেখান থেকে পিঠটান দিয়েছে— এমন ব্যাপার তো তারা কখনো চোখে দেখেনি! কেবল প্রেমিকটি তখনও আত্মনিবেদনের সুযোগ ছাড়েনি, খানিক পরে কাঁচের বিছানা ছেড়ে উঠে, হামাগুড়ি দিয়ে সে আঙুরের পাশে এসে বসেছে এবং মাঝে মাঝে আঙুরকে ভালোবাসার ভাব দেখাচ্ছে।
হোটেলে এরকম দৃশ্য নতুন বটে, কিন্তু আঙুর ও প্রেমিকের মতন লোক কলকাতার সোনাগাছি অঞ্চলের অধিকাংশ হোটেলেই দেখা যায়।
মালিক দুর্দান্ত না হলে এ অঞ্চলে হোটেল চালাতে পারে না। অধিকাংশ খরিদ্দারই যেখানে মাতাল, সেখানে সকল রকম বিপদ ঘটবারই সম্ভাবনা আছে এবং তা ঘটে থাকেও। সেখানে শান্তিক্ষা করা ভালো মানুষের কাজ নয়।
এসব হোটেলে রান্নাও সাধারণ রুচিসঙ্গত নয়। মাতালরাই এখানে আনাগোনা করে এবং তারা ঝাল ভালোবাসে। এখানকার খাবারও তাই বেশি ঝাল হয়। আবার এক-একটা হোটেলে খাবারে এত ঝাল দেওয়া হয় যে, মদে অজ্ঞান না হয়ে থাকলে গলধঃকরণ করা অসম্ভব।
এসব হোটেলের খাবারও যে ভালো, তা নয়। প্রায়ই খাবারে ভেজাল থাকে। ঘি খারাপ, অনেকে আবার বাদামি তেলও ব্যবহার করে। আজকের মাংস বাঁচলে, কাল তার সদব্যবহার হয়। সস্তা বলে ছাগের নামে গোরুর মাংস চালিয়েও কোনো কোনো হোটেলওয়ালা ধরা পড়েছে। মাতালদের জ্ঞান থাকলে কলকাতার অধিকাংশ হোটেলই আজ খরিদ্দারের অভাবে উঠে যেত।
***
টীকা
৬.১ স্টার থিয়েটারের সামনে মিনার্ভা গ্রিল— সে যুগের বিখ্যাত অভিনেত্রী বিনোদিনী দাসীকে একান্ত আপন করে পাওয়ার জন্য তাঁর নামে নতুন থিয়েটার খুলতে আগ্রহী হন গুর্মুখ রায়। গুর্মুখ ছিলেন হোরমিলার কোম্পানির ‘বেনিয়ান’ গণেশদাস মু্সাদ্দির ছেলে।
স্টার থিয়েটার,শিল্পী রথীন মিত্র, ১৯৮৮
তাঁর থিয়েটার-প্রীতির কারণও ছিলেন বিনোদিনী। ৬৮, বিডন স্ট্রিটের ফাঁকা জমি ইজারা নিয়ে গুর্মুখ রায়ের টাকায় থিয়েটার খোলা হয় বটে, কিন্তু বিনোদিনীর নামে নয়। বারাঙ্গনার নামে থিয়েটার হলে সামাজিক বাধা আসবে— এই যুক্তিতে গিরিশচন্দ্র ঘোষ ও অন্যান্যদের চক্রান্তে থিয়েটারের নাম হয় ‘স্টার থিয়েটার’। ৩১ জুলাই, ১৮৮৩ গিরিশচন্দ্রর লেখা নাটক ‘দক্ষযজ্ঞ’ দিয়ে উদ্বোধন হয় প্রেক্ষাগৃহটির। তবে কয়েক বছর পরে পারিবারিক চাপে গুর্মুখ থিয়েটারের স্বত্ব ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। মাত্র ১১ হাজার টাকার বিনিময়ে স্টারের মালিক হন অমৃতলাল বসু, অমৃতলাল মিত্র, হরিপ্রসাদ বসু ও দাশুচরণ নিয়োগী। বিনোদিনী অবশ্য থেকে গেলেন স্টারের দলেই। তাঁর জীবনের সেরা অভিনয়গুলি ওই থিয়েটারে মঞ্চস্থ হলেও দলাদলি ও অপমানের কারণে তিনি অবসরও নেন ওখান থেকেই। ১ জানুয়ারি, ১৮৮৭-এ ‘বেল্লিকবাজার’ নাটকে রঙ্গিণীর ভূমিকায় অভিনয় করে বঙ্গরঙ্গমঞ্চ থেকে বিদায় নিলেন তিনি। এরই মাঝে, ২১ সেপ্টেম্বর, ১৮৮৪-এ ‘চৈতন্যলীলা’-র অভিনয় দেখতে এসে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের আশীর্বাদ করে যান শ্রীরামকৃষ্ণ। বিনোদিনী অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার অল্প দিন পরে স্টার থিয়েটারও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। মালিকপক্ষ তখন ৩০ হাজার টাকায় তা বিক্রি করে দেয় ধনকুবের গোপাললাল শীলকে। ওই প্রেক্ষাগৃহে ‘এমারেল্ড থিয়েটার’ নামে নতুন নাট্যদল গঠন করেন গোপাললাল। সেটিও অবশ্য বেশিদিন চলেনি। পরে নানা হাতবদলের মধ্যে দিয়ে একসময়ে তার নাম হয় ‘মনমোহন থিয়েটার’। ১৯৯১ সালে এটি সম্পূর্ণ ভস্মীভূত হয় এবং ২০০৪ সালে আবার পুননির্মিত হয়। সঙ্গে রথীন মিত্র অঙ্কিত স্টার থিয়েটার।
৬.২ ব্রাহ্ম মহিলাদের নকলে— মুসলমান, পারসিক ও শিখদের পোশাক লক্ষ করে আধুনিকভাবে পোশাক পরার প্রচলনের পথপ্রদর্শক বলা যায় কেশব সেনের কন্যা সুচারু দেবীকে। ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত হিন্দু মহিলা সমাজ এবং ব্রাহ্ম ও বাঙালি খ্রিস্টানেরা পর্যন্ত পাঁচমিশালে পোশাক পরতেন। তারপর ক্রমে ক্রমে পোশাকের উন্নত সংস্করণ বের হয়। ১৯০১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত একচেটিয়াভাবে কোনও এক বিশেষ পোশাক পরার নিয়ম চালু হয়নি। সুন্দর আধুনিক পোশাক সৃষ্টির গোড়াতে হিন্দু মহিলাদের মধ্যে যখন নানা বাধা দ্বিধা আসছিল, তখন প্রথমে এগিয়ে আসে বারাঙ্গনাসমাজ। তাতে ভদ্রলোকেরা একটু মুশকিলে পড়ে যান। বেশ্যাদের প্রচলিত ওই পোশাক পরলে তাঁদের মেয়েদেরও হয়তো কেউ কেউ বেশ্যা ভাবতে পারে, সেইজন্য শাড়ির ওপর একটি বাড়তি চাদর গায়ে দেওয়ার নিয়ম চালু হয়।
ঠাকুরবাড়ির বধু জ্ঞানদানন্দিনী মহিলাদের পোশাক নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করেছেন। এতদিন মহিলাদের স্থান ছিল অন্তঃপুরে, তখন একটা শাড়ি জড়িয়ে নিলেই যথেষ্ট হত; কিন্তু বাইরে বের হতে গেলে তো পোশাকের পরিবর্তন দরকার। বোম্বাই থেকে ফিরে এসে তিনি মহিলাদের বাইরে যাবার পোশাকের রূপ ও প্রকার নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করেন। শাড়ির সঙ্গে সায়া, সেমিজ ও ব্লাউজের প্রচলন করলেন তিনি; সঙ্গে জুতো ও মোজা জুড়ে দিয়ে তিনি ‘ব্রাহ্মিকা শাড়ি’-র প্রচলন করেন। ১৮৭১ সালে তিনি ‘বামাবোধিনী পত্রিকা’-য় তাঁর পরিকল্পিত পোশাকের কথা নিয়ে লেখা প্রকাশ করেন। চারিদিকে বিতর্ক ও ধিক্কার উঠলেও জ্ঞানদানন্দিনী স্ত্রী-স্বাধীনতার চিন্তা থেকে সরে আসেননি।
চিত্রা দেব তাঁর ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলে লিখেছেন, বোম্বাই থেকে আনা বলে ঠাকুরবাড়িতে এই শাড়ি পরার ঢংয়ের নাম ছিল বোম্বাই দস্তুর, কিন্তু বাংলাদেশে তার নাম হল ঠাকুরবাড়ির শাড়ি। জ্ঞানদানন্দিনী বোম্বাই থেকে ফিরে এ ধরনের শাড়ি-পরা শেখানোর জন্যে কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন। অনেক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মিকা এসেছিলেন শাড়ি-পরা শিখতে, সবার আগে এসেছিলেন বিহারী গুপ্তের স্ত্রী সৌদামিনী। অবশ্য তখনও তাঁর বিয়ে হয়নি। এ প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার, অন্যান্য ব্রাহ্মিকারাও বাইরে বেরোবার সাজের কথা ভাবছিলেন। মনোমোহন ঘোষের স্ত্রী সরাসরি গাউন পরতেন। ঠাকুরবাড়িতেও ইন্দুমতী পরতেন গাউন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ যেমন স্বদেশি পোশাক তৈরি করবার জন্যে পাজামাতে কোঁচা আর শোলার টুপির সঙ্গে পাগড়ির মিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন, তেমনি দুর্গামোহন দাসের স্ত্রী ব্ৰহ্মময়ী মেমসাহেবদিগের গাউনের উপরিভাগে আঁচল জুড়ে একপ্রকার আধা বিলিতি আধা দেশী পরিচ্ছদ সৃষ্টি করেন। বোম্বাই দস্তুর নতুনত্বের গুণে সবাইকে আকৃষ্ট করল। তবে এতে মাথায় আঁচল দেওয়া যেত না বলে প্রগতিশীলারা একটি ছোটো টুপি পরতেন। তার সামনেটা মুকুটের মতো, পিছনে একটু চাদরের মতো কাপড় ঝুলত। মাথায় শাড়ির আঁচলে ছোট্ট ঘোমটা টানা প্রবর্তন করেন জ্ঞানদানন্দিনীর মেয়ে ইন্দিরা, তখন সাবেকি ধরনে শাড়ি পরার গৌরব আবার ফিরে এসেছে।
এখনকার আধুনিকারা যে ভাবে শাড়ি পরেন সেই ঢংটি জ্ঞানদানন্দিনীর দান নয়। বোম্বাই দস্তুর-এ যেসব অসুবিধে ছিল সেগুলো দূর করবার চেষ্টা করেন কুচবিহারের মহারাণী কেশব-কন্যা সুনীতি দেবী। তিনি শাড়ির ঝোলানো অংশটি কুঁচিয়ে ব্রোচ আটকাবার ব্যবস্থা করেন। তার সঙ্গে তিনি মাথায় পরতেন স্প্যানিশ ম্যাটিলাজাতীয় একটি ছোট্ট ত্রিকোণ চাদর। তার বোন ময়ূরভঞ্জের মহারাণী সুচারু দেবী দিল্লীর দরবারে প্রায় আধুনিক শাড়ি পরার টংটি নিয়ে আসেন। এটিই নাকি তার শ্বশুরবাড়ির শাড়ি পরার সাবেকী ঢং। বাস্তবিকই উত্তর ভারতের মেয়েরা, হিন্দুস্থানী মেয়েরা এখনও যে ভাবে সামনে আঁচল এনে সুন্দর করে শাড়ি পরে তাতে ঐ ধরনটিকেই বেশি প্রাচীন মনে হয়। বাঙালী মেয়ের অধিক স্বাচ্ছন্দ্যগুণে এটিকেই গ্রহণ করলেন তবে জ্ঞানদানন্দিনীর আঁচল বদলাবার কথাটি তারা ভোলেননি তাই এখন আঁচল বাঁ দিকেই রইল। কিছুদিন মেমেদের হব স্কার্টের অনুকরণে হব করে শাড়ি পরাও শুরু হয় তবে অত আঁটসাট ভাব সকলের ভাল লাগেনি। শাড়ির সঙ্গে সঙ্গে উঠল নানান। ফ্যাশানের লেস দেওয়া জ্যাকেট ও ব্লাউজ। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, বিলিতি দরজীর দোকান থেকে যত সব ছাঁটকাটা নানা রঙের রেশমের ফালির সঙ্গে নেটের টুকরো আর খেলো লেস মিলিয়ে মেয়েদের জামা বানানো হত।
এই বিচিত্রবেশিনীরা সাধারণ হিন্দু সমাজের চোখে ছিলেন যোগেন বসুর মডেল ভগিনীর মতো বিচিত্র জীব। জ্ঞানদানন্দিনী নিজে অবশ্য এ বিষয়ে কিছু বলেননি তবে তার দুই ননদ সৌদামিনী আর স্বর্ণকুমারীর রচনা থেকে জানা যায় তাদের পথ মোটেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। তারা যখন সেমিজ, জামা, জুতো, মোজা পরে গাড়ি চড়ে বেড়াতে বেরোতেন তখন চারদিকে ধিক্কারের ঘূর্ণীঝড় উঠত। শুধু ধিক্কার নয়, শাড়ির সঙ্গে জ্যাকেট পরে বাইরে বেরোলে তাদের বিলক্ষণ হাস্যভাজন হতেও হত। হিন্দুদের সেলাই-করা জামা পরে কোন শুভ কাজ করতে নেই। তাই পোশাক-পরিচ্ছদ নিয়ে আরো কিছুদিন গণ্ডগোল চলেছিল। তবে যুগ বদলেছে, তাই মুসলমানী পোশাককে তাঁরা যেমন অন্তঃপুরে ঢুকতে দেননি তেমনি করে ব্রাহ্মিকাদের পোশাককে বাধা দিতে পারলেন না। নতুন ধরনের শাড়ি পরার ঢংএর নামই হয়ে গিয়েছিল ব্রাহ্মিক। শাড়ি। তবে বিয়ে-টিয়ের সময় সনাতন নিয়মই চলত। গগনেন্দ্রনাথ ১৯০১ সালে যখন তাঁর ন বছরের মেয়ে সুনন্দিনীকে সম্প্রদান করতে যাচ্ছেন তখনও বরপক্ষের একজন আপত্তি জানিয়ে বলেন, সেলাই-করা কাপড় পরে তো মেয়ে সম্প্রদান হয় না। গগনেন্দ্র যখন গৌরীদানই করছেন তখন আর নিয়মটুকু মানতে দোষ কি? গগনেন্দ্র জানতেন সে কথা। ঠাকুরবাড়ির ছেলে হলেও তাঁর বাড়িতে সনাতন হিন্দু নিয়মই চলে আসছে। তাই তিনি স্বভাবসিদ্ধ উদারভঙ্গিতে হেসে বলেছিলেন, দেখুন মেয়ের গায়ে কোন জামা নেই। সত্যিই তো! সমবেত বরযাত্রীরা দেখলেন মেয়ের গায়ে জামা নেই বটে তবে শাড়িটা এমন কায়দায় পরানো হয়েছে যে জামা নেই বোঝাই যায়নি। শিল্পী গগনেন্দ্র নিজস্ব পরিকল্পনা দিয়ে মেয়েকে সাজিয়েছিলেন। কনে সাজাবার এই ঢংটি সবার খুব পছন্দ হয়েছিল। সঙ্গে ব্রাহ্মিকা শাড়ি পরিহিত জ্ঞানদানন্দিনী দেবী।