ষষ্ঠ অধ্যায়—ধূম্রলোচন বধ

ষষ্ঠ অধ্যায়—ধূম্রলোচন বধ

ঋষি কহিলেন, দেবীর এবম্বিধ বাক্য শ্রবণ করিয়া সে‌ই দূত ক্রোধপূর্ণ হ‌ইয়া দৈত্যেশ্বরের নিকট গমন করত সবিস্তারে সকল কথা বলিল। দূতের সে‌ই বাক্য শ্রবণ করিয়া অসুররাজ শুম্ভ ক্রোধপূর্ব্বক দৈত্যাধিপতি ধূম্রলোচনকে বলিল,—হে ধূম্রলোচন! তুমি স্বকীয় সৈন্যে পরিবৃত হ‌ইয়া সে‌ই দুষ্টা নারীকে কেশাকর্ষণ-পূর্ব্বক বিহ্বলা করত শীঘ্র আনয়ন কর। তাহার পরিত্রাণ করিবার জন্য অপর কেহ যদি সমুত্থান করে (রুখে দাঁড়ায়),—সে অমর (দেবতা), যক্ষ (এক ধরণের উপদেবতা) অথবা গন্ধর্ব্ব‌ই হ‌উক, তাহাকে হনন করিবে। ঋষি কহিলেন,—শুম্ভের এবম্প্রকার আজ্ঞা প্রাপ্ত হ‌ইয়া সে‌ই ধূম্রলোচন নামে অসুর ষষ্টিসহস্র (৬০,০০০) অসুরের সহিত শীঘ্র গমন করিল। তৎপরে ধূম্রলোচন হিমাচল-সংস্থিত (হিমাচলে অবস্থিত) দেবীকে দর্শন করিয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিল, যে দেবি! শুম্ভ ও নিশুম্ভের নিকট গমন কর। এখন তুমি যদি প্রীতিপূর্ব্বক মদীয় স্বামী (প্রভু) শুম্ভের নিকট উপস্থিত না হও, তবে এ‌ই আমি তোমাকে কেশাকর্ষণে বিহ্বলা করত সবলে ল‌ইয়া যা‌ইব! ১-৭

দেবী কহিলেন, দৈত্যেশ্বর শুম্ভ তোমাকে প্রেরণ করিয়াছে, তুমি স্বয়ং বলবান্‌ এবং সৈন্য-সমবেত। তুমি যদি আমাকে সবলে ল‌ইয়া যাও, তবে আমি তোমার কি করিব? ঋষি কহিলেন, দেবী এ‌ই কথা বলিবা মাত্র সে‌ই ধূম্রলোচন নামক অসুর তাঁহার অভিমুখে ধাবিত হ‌ইল। তখন অম্বিকা হুঙ্কার দ্বারা সে‌ই অসুরকে ভষ্মীভূত করিলেন। অনন্তর সে‌ই অসুরসেনাগণ ক্রুদ্ধ হ‌ইয়া অম্বিকার উপর তীক্ষ্ণ শর (তির বা বাণ), শক্তি ও পরশ্বধ (কুঠার) বৃষ্টি করিতে লাগিল। তখন দেবীর বাহন সিংহ, ক্রোধে কেশর কম্পিত করিয়া ভয়ঙ্কর গর্জ্জন করত অসুরসেনার উপর পতিত হ‌ইল এবং কাহাকেও করপ্রহার দ্বারা, কাহাকেও মুখ দ্বারা, কাহাকেও বা আক্রমণ দ্বারা ও কোন কোন মহাসুরকে অধর-প্রহার দ্বারা বিনষ্ট করিতে লাগিল। সিংহ কোন কোন অসুরের হৃদয় নখ দ্বারা পাটিত (বিদীর্ণ) করিল; হস্ততল প্রহার দ্বারা কোন কোন অসুরের মস্তককে দেহ হ‌ইতে পৃথক্‌ করিয়া ফেলিল; কোন কোন অসুরের বাহু ও মস্তক বিচ্ছিন্ন করিল এবং কেশর কম্পিত করিয়া অন্যান্য অসুরগণের হৃদয় হ‌ইতে রক্ত পান করিল। ক্ষণকালমধ্যে‌ই সে‌ই দেবীবাহন মহাত্মা কেশরী অসুরগণের সে‌ই মহাসৈন্যকে বিনাশ করিয়া ফেলিল। ৮-১৫

ধূম্রলোচন অসুরকে দেবী বিনাশ করিয়াছেন এবং সকল সৈন্যকে দেবীর বাহন সিংহ বিনাশ করিয়াছে, ইহা শ্রবণ করিয়া দৈত্যাধিপতি শুম্ভ সাতিশয় কুপিত হ‌ইল। কোপে তাহার অধর স্ফুরিত (কম্পিত) হ‌ইতে লাগিল। শুম্ভ তখন সে‌ই চণ্ড ও মুণ্ডকে আজ্ঞা করিল, হে চণ্ড! হে মুণ্ড! তোমরা বহুবলবেষ্টিত হ‌ইয়া সে‌ই স্থলে গমন কর এবং গমন করিয়া সে‌ই নারীকে শীঘ্র আনয়ন কর। তাহাকে কেশাকর্ষণপূর্ব্বক অথবা বন্ধন করিয়া ল‌ইয়া আইস। যদি এ‌ই প্রকারে আনয়ন করিতে তোমাদের অসমর্থতা হয়, তবে বহুশস্ত্র-সমেত অসুরগণের সহিত মিলিত হ‌ইয়া তাহাকে হনন কর। সে‌ই দুষ্টা ও সিংহ হত হ‌ইলে, তাহাকে সে‌ই অবস্থায় বন্ধনপূর্ব্বক গ্রহণ করিয়া শীঘ্র আগমন করিবে। ১৬-২০

ষষ্ঠ অধ্যায় সমাপ্ত॥৬॥

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *