ষষ্ঠ অধ্যায় : কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা নেতৃবৃন্দের ভূমিকা

ষষ্ঠ অধ্যায়
 কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা নেতৃবৃন্দের ভূমিকা

প্রথম থেকেই কংগ্রেস ভারত বিভাগের প্রস্তাবের বিরোধী ছিল। কিন্তু ১৯৪৬-৪৭ খ্রিস্টাব্দে একদিকে একটানা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও অন্যদিকে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয় নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে ভারতীয় নেতৃবৃন্দের আলাপ-আলোচনা চলে, তাতে অবস্থার এমন মৌলিক পরিবর্তন ঘটে যে, কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ উপলব্ধি করেন ভারত বিভাগ মেনে নিয়েই রাজনৈতিক-সাম্প্রদায়িক সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। স্বভাবতই এই অবস্থায় তাঁরা পাঞ্জাব ও বাংলাদেশ বিভাগের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সোহরাওয়ার্দি কতৃক ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের প্রস্তাব প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা এই পরিকল্পনাকে এই অঞ্চলে মুসলিম প্রাধান্য বজায় রাখার এক দুরভিসন্ধিমূলক পরিকল্পনা বলে মনে করে। একই কারণে তারা শরৎচন্দ্র বসু প্রচারিত সোশ্যালিস্ট রিপাবলিকের পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করে।

এই সময়ে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে কংগ্রেস কমিটিগুলি হিন্দু নির্যাতনের খবর প্রাদেশিক নেতৃবৃন্দের নিকট প্রেরণ করে। বাংলাদেশের অবস্থা পর্যালোচনা করে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটি ও হিন্দু মহাসভা বাংলাদেশ বিভাগের সমর্থনে যথাক্রমে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৪ এপ্রিল ও ৬ এপ্রিল প্রস্তাব গ্রহণ করে এবং এই প্রস্তাব কার্যকরী করার জন্য সক্রিয় হয়। ২৬ এপ্রিল (১৯৪৭ খ্রি.) নয়াদিল্লিতে বেঙ্গল অ্যাসেম্বলির কংগ্রেস পার্টির নেতা কিরণশঙ্কর রায়, হিন্দু মহাসভার নেতা ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় এবং ডা. বিধানচন্দ্র রায় এক বৈঠকে মিলিত হন। তাঁরা সিদ্ধান্ত করেন, বাংলার প্রতিনিধিরা কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটিকে বাংলাদেশ বিভাগের দাবি সমর্থন করার জন্য অনুরোধ করবেন। এই উদ্দেশ্যে তাঁরা পন্ডিত নেহরু, সর্দার প্যাটেল, মৌলানা আজাদ, আচার্য কৃপালনী প্রমুখ নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা ভাইসরয়ের সঙ্গেও দেখা করার সিদ্ধান্ত নেন। বাংলাদেশ বিভাগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে একটি আবেদনপত্রও তাঁরা রচনা করেন।৯১

বঙ্গীয় প্রাদেশিক হিন্দু মহাসভার কার্যকরী প্রেসিডেন্ট নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সমস্ত জেলা ও মহকুমা হিন্দু মহাসভাকে ৪ মে রবিবার (১৯৪৭ খ্রি.) বাংলাদেশ বিভাগের দাবিতে সভা-সমাবেশ করতে নির্দেশ দেন। তাদের কলকাতাসহ হিন্দু-অধ্যুষিত অঞ্চল নিয়ে পৃথক প্রদেশ গঠনের ও এই নতুন প্রদেশকে অখন্ড হিন্দুস্থানের বা ভারতীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত করার দাবি সংবলিত প্রস্তাব গ্রহণের নির্দেশও দেওয়া হয়। প্রস্তাবের অনুলিপি ভাইসরয়, কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা নেতৃবৃন্দের নিকট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। এইভাবে ৪ মে থেকে হিন্দু মহাসভার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিভাগের আন্দোলন ব্যাপকভাবে শুরু হয়।৯২ এই আন্দোলনকে প্রাদেশিক কংগ্রেস নেতৃত্ব সমর্থন করে এবং তাঁরাও সভা-সমাবেশ করে জনমত গঠন করেন।৯৩

খুব দ্রুতগতিতে বাংলাদেশ বিভাগের পক্ষে হিন্দু জনমত গঠিত হয়। ৩০ এপ্রিল (১৯৪৭ খ্রি.) কলকাতাতে বেঙ্গল ন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের ভবনে প্রভাবশালী শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী সংগঠনসমূহ একটি সভার আয়োজন করে। ইণ্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের ডি সি ড্রাইভার সভাপতিত্ব করেন। এই সভার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বিভাগের দাবিতে প্রস্তাব উত্থাপন করে এক দীর্ঘ ভাষণ দেন এন আর সরকার। তিনি বলেন, যদি সত্যিই সোহরাওয়ার্দি এক ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আগ্রহশীল হন, তাহলে তাঁর প্রথম কাজ হবে মুসলিম লিগ থেকে পদত্যাগ করা এবং ভারতীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাকে যুক্ত রাখার কথা বলা। তা না হলে সোহরাওয়ার্দির উদবেগ সম্পর্কে এই ধারণা হবে যে, হিন্দুপ্রধান অঞ্চল বাদ পড়লে পাকিস্তান রাষ্ট্র শাসনতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে ভালোভাবে চলবে না এই উপলব্ধি তাঁর হয়েছে। মুসলিম লিগ কতৃক পাকিস্তান দাবি করার জন্য আমরা দেশভাগের দাবি করছি। সোহরাওয়ার্দি পরিকল্পিত বিচ্ছিন্ন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কোনো ভবিষ্যৎ আছে বলে আমরা মনে করি না। জনসাধারণের অবস্থার উন্নয়নের জন্যই প্রদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি প্রয়োজন, আর তা করতে হলে বাংলাকে ভারতীয় ইউনিয়নের সঙ্গেই যুক্ত থাকতে হবে। এন আর সরকার বিস্মিত হন এই ভেবে, যে-কেন্দ্রীয় সরকার থেকে সোহরাওয়ার্দি এত সাহায্য পান, আজ তিনি সেই কেন্দ্রীয় সরকারকেই আক্রমণের লক্ষ্যস্থল করেন। যুক্ত নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কে কোনো মতামত ব্যক্ত না করায় তিনি সোহরাওয়ার্দির সমালোচনা করেন। সোহরাওয়ার্দি ২৭ এপ্রিল (১৯৪৭ খ্রি.) যে দীর্ঘ ভাষণ দেন তারই এক দীর্ঘ সমালোচনা এন আর সরকারের এই ভাষণে পাওয়া যায়।৯৪ ৩০ এপ্রিলের এই সভাতে যে প্রস্তাব গৃহীত হয় তাতে বলা হয়, যদি বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানেরা ভারতীয় ইউনিয়নের বাইরে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন, তা হলে বাংলার হিন্দুপ্রধান অঞ্চল নিয়ে (কলকাতাসহ) গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ভিত্তি করে একটি পৃথক প্রদেশ গঠন করতে হবে, আর এই প্রদেশ ভারতীয় ইউনিয়নের একটি অংশ হবে। এই সভায় ভারতীয় ইউনিয়নকে একটি অর্থনৈতিক ইউনিটরূপে গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।৯৫ এই উদ্দেশ্য বাস্তবে রূপায়িত করার জন্য এই সভা থেকে একটি কমিটি গঠন করে তার ওপরে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। এই কমিটিতে যাঁরা যুক্ত হন : ডি এন সেন, ডি সি ড্রাইভার, বি এম বিড়লা, বি এল জালান, জে কে মিত্র, এম এল শাহ, এস সি রায়, এন আর সরকার, বীর বদ্রিদাস গোয়েঙ্কা এবং ড. এস বি দত্ত।৯৬ সুতরাং ভারতীয় শিল্পপতি ও বণিক সংঘ বাংলাকে একটি পৃথক ইকনমিক ইউনিটরূপে মেনে নিতে অস্বীকার করে।

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৯ এপ্রিল বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটি বাংলাদেশ বিভাগের দাবিতে একটি মেমোরেণ্ডাম তৈরি করে এবং ভাইসরয়, পন্ডিত নেহরু ও সর্দার প্যাটেল প্রমুখের নিকট প্রেরণের সিদ্ধান্ত করে। এই উদ্দেশ্যে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সম্পাদক কালিপদ মুখোপাধ্যায় ৩০ এপ্রিল প্লেনে দিল্লি যাত্রা করেন।৯৭

কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির প্রেসিডেন্ট ড. রাজেন্দ্রপ্রসাদ ৩০ এপ্রিল (১৯৪৭ খ্রি.) নয়াদিল্লি থেকে একটি বিবৃতিতে বলেন, যদি ভারত বিভাগ করতে হয় তা হলে যতটা সম্ভব তা সম্পূর্ণ ও পুরোপুরি করতে হবে এবং সেইসঙ্গে পাঞ্জাব ও বাংলাদেশও বিভক্ত করতে হবে। ড. প্রসাদ একথাও বলেন, লিগের লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ীই পাঞ্জাব ও বাংলাদেশ বিভাগের দাবি করা হচ্ছে। কংগ্রেস, হিন্দু ও শিখ কেউ ভারত বিভাগ চায় না। কেবলমাত্র মুসলিম লিগ ও জিন্নাই এই দাবি করেন। তাঁদের লাহোর প্রস্তাব অনুযায়ীই তাঁরা এমন কোনো অঞ্চল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন না যা তার সংলগ্ন নয় এবং যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। যদি জিন্না ভারত বিভাগে বদ্ধপরিকর হন তা হলে তাঁকে পাঞ্জাব ও বাংলাদেশ বিভাগ মেনে নিতেই হবে। তিনি সম্পূর্ণ ভুলে যান, তিনিই ভারতবর্ষের শাসনতান্ত্রিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জীবন বিধ্বস্ত করার জন্য দায়ী। তা ছাড়া জিন্নার পরামর্শমতো যদি লোক-বিনিময় করতেই হয় তা হলেও সংখ্যালঘু সমস্যার জটিলতাও অনেক কম হবে যদি এই প্রদেশগুলো বিভক্ত হয়।৯৮

সোহরাওয়ার্দি স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের পক্ষে যেসব কথা বলেন তার উত্তরে দীর্ঘ বিবৃতিতে বাংলাদেশ বিভাগের সমর্থনে বক্তব্য রাখেন ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সভাপতি সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ।৯৯সোহরাওয়ার্দি ‘প্রাদেশিকতা’ প্রচার করায় সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ তার সমালোচনা করেন। তিনি সোহরাওয়ার্দীকে দ্বিজাতিতত্ত্ব বর্জন ও সাম্প্রদায়িকতা পরিহার করতে আহ্বান জানান। তাঁর মতে, তা হলেই সোহরাওয়ার্দি বাংলাদেশ বিভাগ রদ করতে পারবেন। তিনি একথাও বলেন, কংগ্রেসও ঐক্যবদ্ধ ভারতে এক ঐক্যবদ্ধ ও বৃহৎ বঙ্গের স্বপ্ন দেখে। কিন্তু কংগ্রেস বিভক্ত ভারতে অবিভক্ত বঙ্গদেশ রাষ্ট্র গঠন অসম্ভব মনে করে।১০০

মহাত্মা গান্ধীর নিকট ভারত বিভাগের নীতি গ্রহণযোগ্য না হলেও জিন্না এই দাবির প্রতি অবিচল থাকেন। ৬ মে (১৯৪৭ খ্রি.) তাঁদের মধ্যে যে আলোচনা হয় তাতে তা আরও স্পষ্ট হয়।১০১ ৭ মে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় লর্ড লিস্টওয়েলের (সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ইণ্ডিয়া) নিকট একটি তারবার্তা প্রেরণ করে বলেন, যদি ভারত বিভক্ত হয় তা হলে বাংলার হিন্দুপ্রধান অঞ্চলকেও বিচ্ছিন্ন করতে হবে। আর পশ্চিমবঙ্গে একটি পৃথক প্রদেশ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত অনতিবিলম্বে বর্তমান মন্ত্রীসভাকে ভেঙে দিতে হবে। কারণ এই মন্ত্রীসভা শান্তি ও স্থিতি বজায় রাখতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে এবং হিন্দুদের সমর্থন হারিয়ে ফেলেছে। এখনই পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গে দুটো আঞ্চলিক মন্ত্রীসভা গঠন করতে হবে।১০২

লক্ষণীয় এই যে, এই সময়ে বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে যে আন্দোলন শুরু হয় তাতে বাঙালি বুদ্ধিজীবীদেরও এক বিশেষ ভূমিকা ছিল। বাংলা ও বাংলার বাইরে যেসব বাঙালি হিন্দুরা ছিলেন তাঁরাও একটি পৃথক প্রদেশ গঠনের দাবিতে সক্রিয় হন। ২২ এপ্রিল (১৯৪৭ খ্রি.) নয়াদিল্লিতে যে জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, সেখানে ঐতিহাসিক ড. সুরেন্দ্রনাথ সেনও বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে ভাষণ দেন।১০৩ ৭ মে বাংলার পাঁচজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ—স্যার যদুনাথ সরকার, ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার, ড. মেঘনাদ সাহা, ড. শিশির মিত্র ও ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়—লিস্টওয়েলের নিকট একটি তারবার্তায় বলেন, বাংলাদেশে একটানা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা চলায় জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে এবং শিক্ষা, ব্যাবসা ও শিল্প প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে যে ‘সাম্প্রদায়িক মন্ত্রীসভা’ রয়েছে তা আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থায় কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গে একটি পৃথক প্রদেশ গঠন করা প্রয়োজন। এই পাঁচজন শিক্ষাবিদের তারবার্তার কিছু অংশ এখানে উদ্ধৃত করা হল :

Education, trade and industry in Bengal have almost collapsed owing to recurrent riots causing insecurity of life and property. The present Communal Ministry is totally incapable of maintaining law and order. We strongly support the immediate formation of a separate West Bengal Province guaranteeing under a non-communal Ministry safety of life and unhindered progress in education industry and commerce, with the continuance and development of Calcutta a vital part of West Bengal, as a moral, intellectual, social and economic centre.১০৪

একই ধরনের টেলিগ্রাম তাঁরা স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ও স্যার জন অ্যান্ডারসনকে পাঠান।১০৫

২৬ মে (১৯৪৭ খ্রি.) বিহারের বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের পাটনা শাখার একটি সভা পাটনা কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ ড. সুবিমলচন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বাংলা বিভাগের দাবি উত্থাপিত হয়। ইণ্ডিয়ান নেশনের সম্পাদক ড. শচীন সেনও এই প্রস্তাবের সমর্থনে ভাষণ দেন।১০৬ প্রবাসী বাঙালি কতৃক এই ধরনের সভা আরও অনেক জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়।

৩০ মে ড. অমিয় চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশ বিভাগ করলেই কেবলমাত্র সমস্যার সমাধান সম্ভব। তিনি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের দাবিকে একটি ‘ধাপ্পা’ বলে উল্লেখ করেন।১০৭ ১ জুন দক্ষিণ কলকাতার সিংহীপার্কে একটি জনসভায় এক দীর্ঘ ভাষণে স্যার যদুনাথ সরকার বাংলাদেশ বিভাগের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করেন।১০৮ এইভাবে প্রভাবশালী বাঙালি হিন্দু বুদ্ধিজীবীরা বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেস নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একই মঞ্চে মিলিত হন।

এই সময়ে কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা যুক্তভাবে অনেক সভা-সমাবেশ অনুষ্ঠিত করে। মুসলিম লিগের সহযোগী তপশিলি সম্প্রদায়ের নেতা যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল বাংলাদেশ বিভাগের বিরোধিতা করলেও বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল ডিপ্রেসড ক্লাসেস লিগ (Bengal Provincial Depressed Classes League) পাঞ্জাব ও বাংলাদেশ বিভাগের দাবি করে। এই লিগের সম্পাদক আর দাস বলেন, মুসলিম লিগের সমর্থক যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের তপশিলি সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে কথা বলার কোনোই অধিকার নেই। কারণ বাংলায় মুসলিম লিগ শাসনে তপশিলি সম্প্রদায়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ ভুগতে হয়েছে। তাই আর দাস বাংলাকে হিন্দু ও মুসলিম বাংলায় বিভক্ত করার দাবি করেন।১০৯

১৩ মে (১৯৪৭ খ্রি.) কলকাতা কর্পোরেশন বাংলাদেশ বিভাগের সমর্থনে প্রস্তাব গ্রহণ করে।১১০ ১৪ মে ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সার্বভৌম বাংলাদেশ ও সোশ্যালিস্ট রিপাবলিক প্রস্তাবের নিন্দা করে বিবৃতি দেন। তিনি বলেন, এই ধরনের একটি প্রস্তাব গ্রহণ করার অর্থ হল পাকিস্তান দাবির নিকট আত্মসমর্পণ করা। সুতরাং এই প্রস্তাবকে অঙ্কুরে বিনাশ করতে হবে।১১১

১৫ মে (১৯৪৭ খ্রি.) নয়াদিল্লির খবরে জানা যায়, কংগ্রেস সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। অন্যদিকে লিগ হাইকমাণ্ডও এই ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। লিগ হাইকমাণ্ড যুক্ত নির্বাচন পদ্ধতি ও শাসনতন্ত্রে ৫০:৫০ হারে প্রতিনিধিত্ব গ্রহণ করতে অস্বীকৃত হয়। সুতরাং কংগ্রেসের ও লিগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সোহরাওয়ার্দি-শরৎচন্দ্র বসু প্ল্যান প্রত্যাখ্যান করেন।১১২ কিন্তু তা সত্ত্বেও সোহরাওয়ার্দি ও শরৎচন্দ্র বসু তাঁদের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চালান। অবশেষে তাঁরা ২০ মে বিখ্যাত দলিল রচনা করে বাংলার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। এই দলিল রচনার পরেই কংগ্রেস ও লিগ নেতৃত্ব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ২৮ মে আকরম খাঁর সভাপতিত্বে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লিগের ওয়ার্কিং কমিটি একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে সাম্প্রতিককালে বাংলার শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য যেসব প্রস্তাব উত্থাপন করা হয় তার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে। এই প্রস্তাবে বলা হয়, প্রাদেশিক লিগ ওয়ার্কিং কমিটির অথবা লিগ কতৃক মনোনীত সাব-কমিটির এই সমস্ত প্রস্তাব নিয়ে কিছুই করার নেই। প্রাদেশিক লিগ ওয়ার্কিং কমিটি পাকিস্তান প্রস্তাবের প্রতি তাদের সমর্থন ও জিন্নার নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা জ্ঞাপন করে। আর একথাও প্রাদেশিক ওয়ার্কিং কমিটি মনে করে, ভারতের মুসলমানদের পক্ষ থেকে ভবিষ্যৎ শাসনতন্ত্র সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ও আলোচনা চালানোর অধিকার কেবলমাত্র জিন্নারই রয়েছে এবং বাংলার মুসলমানেরা তাঁর সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন। এই সভাতেই বাংলার লিগ নেতৃত্ব সোহরাওয়ার্দি ও শরৎচন্দ্র বসুর প্রস্তাব সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।১১৩

এই প্রস্তাব গ্রহণের পরে সোহরাওয়ার্দি ও আবুল হাশেম আর বিশেষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। শরৎচন্দ্র বসুও কংগ্রেসের বিরোধিতার সামনে কোনোই কার্যকরী পন্থা অবলম্বন করতে পারেননি। যদিও প্রায় নি:সঙ্গ অবস্থায় তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে অবিভক্ত স্বাধীন বাংলার তত্ত্ব প্রচার করেন। তিনি এই বিষয়ে নিয়ে ৩১ মে দিল্লিতে পুনরায় মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে কথা বলেন এবং বঙ্গভঙ্গ রদ করতে চেষ্টা করেন।১১৪ কিন্তু সামগ্রিক পরিবেশ শরৎচন্দ্র বসুর অনুকূলে ছিল না। ১ জুন (১৯৪৭ খ্রি.) কলকাতাতে কংগ্রেস, হিন্দু মহাসভা, নিউ বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন, অল ইণ্ডিয়া ডিপ্রেসড ক্লাসেস ইত্যাদি সংগঠন যুক্তভাবে একটি সভা করে। এই সভায় স্যার যদুনাথ সরকার সভাপতিত্ব করেন। এই সভায় কলকাতাকে রাজধানী করে বাংলায় একটি হিন্দুপ্রদেশ গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়।১১৫

ইতিমধ্যে হিন্দু-আইনজীবী প্রভাবিত বার লাইব্রেরিগুলো বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে মত ব্যক্ত করে।১১৬ মার্চ-এপ্রিল (১৯৪৭ খ্রি.) মাসে অমৃতবাজার পত্রিকা Gallup Poll-এর মাধ্যমে এই পত্রিকার পাঠকদের মতামত গ্রহণ করে। ২৩ এপ্রিল Gallup Poll-এর যে ফলাফল প্রকাশিত হয় তাতে দেখা যায়, পাঠকদের মধ্যে শতকরা ৯৮.৩ ভাগ বাংলা বিভাগের পক্ষে মত দেয়।১১৭ হিন্দুদের দ্বারা পরিচালিত প্রভাবশালী দৈনিক কাগজগুলো বঙ্গভঙ্গের পক্ষে জনমত গঠন করে।১১৮ মোট কথা, বাংলার রাজনৈতিক হাওয়া তখন বঙ্গভঙ্গের অনুকূলে বইতে শুরু করে।

.

৯১. Statesman, 28 April, 1947, p. 7.

৯২. Statement by N C Chatterjee, in Statesman, 29 April, 1947, p. 5

৯৩. Statesman, April – May, 1947.

৯৪. Statement by N R Sarkar, in Statesman, Thursday, 1 May, 1947, p. 5.

৯৫. Ibid.

৯৬. Ibid.

৯৭. Ibid. See Appendix H.

৯৮. Statement by Dr. Rajendra Prasad, in Statesman, 1 May, 1947, p. 7. See Appendix 1.

৯৯. Dr. S P Mookherjee’s rejoinder to Suhrawardy and Statement by Surendra Mohan Ghosh, in Statesman, Friday, 2 May, 1947, p. 4. সুরেন্দ্রমোহন ঘোষের বিবৃতিটি যেভাবে কাগজে প্রকাশিত হয় তা এখানে উদ্ধৃত করা হল : Mr Surendra Mohan Ghosh, President of the Bengal Provincial Congress Committee, commenting on the recent statement issued from Delhi by Mr. Suhrawardy (Chief Minister of Bengal) opposing the partition of Bengal, says that, Over and above the ghost of communalism, he (Mr Suhrawardy) has evoked the ghost of provincialism and has added a note of threat at the end of his statement. This is not the way to prevent partition.

An undivided Bengal in a divided India is an impossibility. Let Mr Suhrawardy repudiate the two-nation theory and abandon communalism, and he will be able to prevent the partition of Bengal.

Even now we (Congress) hope that this is a temporary phase. We started our politics with an agitation to annual partition, and we hope we shall again have to annual this partition.

We too, dream of a united and greater Bengal in a united India. We have lived for it, worked for it, and suffered for it. We shall continue to do so till the temporary partition is annulled and we have achieved an undivided and free Bengal in an undivided free india. (Ibid). ১ মে (১৯৪৭ খ্রি.) সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ নয়াদিল্লি থেকে এই বিবৃতি দেন।

১০০. Ibid.

১০১. Gandhi-Jinnah talks on Division of India, in Statesman, Wednesday, 7 May, 1947, p. 1.

মহাত্মা গান্ধী ও জিন্না ভারত বিভাগের প্রশ্নে একমত হতে না পারলেও, তাঁরা দু-জনেই সাম্প্রদায়িক শান্তি বজায় রাখার ব্যাপারে একমত হন এবং যুক্তভাবে আবেদনও করেন। (Ibid.)

১০২. Dr. S P Mookerjee’s Cable to Lord Listowel, in Statesman, Thursday, 8 May, 1947, p. 8.

ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় তাঁর তারবার্তায় বলেন : Pending the creation of a separate province, we urge the immediate dissolution of the Bengal Ministry, which has completely failed to maintain peace and security, and has forfeited the confidence of the Hindus. We demand the immediate establishment of two zonal Ministries in Bengal for the interim period. We have already urged our viewpoint before the Viceroy and prominent members of the Interim Government. (Ibid.)

১০৩. Amrita Bazar Patrika, 25 April, 1947, p. 7.

১০৪. Cable to Lord Listowel by Sir Jadunath Sarkar and others, in Statesman, 8 May, 1947, p. 8

১০৫. Ibid. Hindusthan Standard, 8 May, 1947, p. 3. এই টেলিগ্রামের কপি স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস ও স্যার জন অ্যাণ্ডারসনকে পাঠানো হয় (vide Hindusthan Stadard, 8 May, 1947, p. 3.)। শ্রীঅরবিন্দ বঙ্গভঙ্গের সমর্থন করেন (vide Tribune, 7 May, 1947, p. 9) বাংলাদেশ ও পাঞ্জাব বিভক্ত করার সম্পর্কে ধারাবাহিকভাবে ট্রিবিউন কাগজে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে যে প্রবন্ধ প্রকাশিত হয় তাতে তৎকালীন অবস্থা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় (vide Tribune, May, 1947).

১০৬. Resolution by Bengal Association at Patna, in Statesman, Tuesday, 27 May, 1947, p. 8.

১০৭. Statement by Dr. Amiya Chakravorty, in Sunday Amrita Bazar Patrika, 1 June, 1947, p. 6.

১০৮. Speech by Sir Jadunath Sarkar, in Amrita Bazar Patrika, Monday, 2 June, 1947, pp. 1. 7; ‘Basic Principles of Formation of New West Bengal Provinces’, an article’ by Sir Jadunath Sarkar, in Hindusthan Standard, 8 July, 1947, p. 4. ‘Basic Principles of Formation of two Provinces’, Sir Jadunath Sarkar’s Memorandum to Boundary Commission, Case of Rajshahi and Maldah, in Hindusthan Standard, 19 July, 1947, p. 7.

১০৯. Resolution by Bengal Provincial Depressed Classes League, in Statesman, Friday, 9 May, 1947, p. 4.

১১০. Resolution by Calcutta Corporation, in Statesman, Wednesday, 14 May, 1947, p. 1.

স্টেটসম্যান কাগজে খবরটি এইভাবে প্রকাশিত হয় : With the unanimous support of Congress and Hindu Mahasabha Councillors, the resolution tabled by 37 Members of Calcutta Corporation in support of the move for the partition of Bengal was passed at the adjournment meeting of the Municipality yesterday. All Muslim Councillors stayed away from the meeting which was closed to the public but not to the Press. Two European members, who attended, refrained from voting. (Ibid.)

বঙ্গভঙ্গের সমর্থনে প্রস্তাব উত্থাপন করেন দেবব্রত মুখোপাধ্যায় ও সমর্থন করেন গণপতি সুর। মেয়র এস সি রায়চৌধুরী ও দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রস্তাবের সমর্থনে ভাষণ দেন। (Ibid).

১১১. Statement by Dr. S P Mookerjee, in Statesman, 15 May, 1947, p. 6.

১১২. Statesman, Friday, 16 May, 1947, pp. 1, 5.

১১৩. Resolution by Bengal Provincial Muslim League, in Statesman, Friday, 30 May, 1947, p. 8. দৈনিক আজাদ, ৩০—৩১ মে, ১৯৪৭। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লিগের প্রস্তাব এইভাবে কাগজে প্রকাশিত হয় : The Working Committee of the Bengal Provincial Muslim League on Wednesday adopted a resolution dissociating itself from the recently published proposals for the settlement of a Constitution for Bengal. Maulana Akram Khan presided, 24 out of 27 members attending. The resolution stated that neither the Working Committee nor the Sub-Committee appointed by it had anything to do with the proposals.

The Committee reiterated its adherence to the League demand for Pakistan and full confidence in the leadership of Mr. Jinnah and declared that, “he alone is the authority to negotiate and settle the future Constitution on behalf of Muslims of India as a whole, and Muslims of Bengal shall stand by his decision.’’

The Proposals referred to emerged from discussions between H. S. Suhrawardy, Chief Minister, Bengal, and Mr. Sarat Chandra Bose and some provincial League and Congress leaders. (Statesman, 30 May, 1947)

২৭ মে ঢাকার মুসলিম নাগরিকেরা একটি সভা করে অবিভক্ত স্বাধীন বাংলার পরিকল্পনাকে সমালোচনা করেন এবং জিন্নার প্রতি তাঁদের আস্থা জ্ঞাপন করেন। (Statesman, 1 June, 1947, p. 9.)

১১৪. Statement by S. C. Bose, in Statesman, 2 June, 1947; p. 5. ৩১ মে শরৎচন্দ্র বসু বলেন : ‘‘I do not say that Bengal should remain outside the union. What I say is that only a free Bengal can decide her relations with the rest of India.’’ (Ibid.)

১১৫. Statesman, 3 June, 1947, p. 9.

১১৬. Amrita Bazar Patrika, April-June, 1947, গোপালচন্দ্র দে, আমার জীবন (অপ্রকাশিত স্মৃতিকথা), মাদারিপুর, ১৯৭৪।

সম্প্রতি শ্রীগোপালচন্দ্র দে লিখিত স্মৃতিকথা ‘আমার জীবন’ (হস্তলিখিত ৪২৬ পৃষ্ঠা) আমি সংগ্রহ করেছি। এই অপ্রকাশিত স্মৃতিকথায় পূর্ববঙ্গের হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কের এক বিশদ বিবরণ পাওয়া যায়। লেখক পেশায় আইনজীবী এবং দীর্ঘ ৭৪ বৎসর ধরে পূর্ববাংলার ফরিদপুর জেলায় আছেন। কখনো দেশত্যাগ করেননি। এখনও তিনি মাদারিপুর কোর্টে প্র্যাকটিস করেন। যেদিন মাদারিপুর বার লাইব্রেরিতে বঙ্গভঙ্গের পক্ষে প্রস্তাব গৃহীত হয় যেদিন তিনি বাদে সমস্ত হিন্দু আইনজীবীরা দেশভাগের পক্ষে ভোট দেন। তিনি লেখেন, এই সময়ে অধিকাংশ বার লাইব্রেরি বাংলাদেশ ভাগের পক্ষে মত দেয়। (দ্রঃ আমার জীবন, পৃষ্ঠা : ২৮০-২৮১)

১১৭. Amrita Bazar Patrika, Wednesday, 23 April, 1947, p. 1.

অমৃতবাজার-এর পাঠকদের জন্য ২৩ মার্চ Gullup Poll-এর প্রশ্ন প্রকাশিত হয়। ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত তা চলে। ২৩ এপ্রিল ফলাফল প্রকাশিত হয় :

Yes – 5,25,170

No – 3,205

98.3 p.c. voted in favour of Bengal partition, 06% voted against partition. (Ibid.)১১৮. Amrita Bazar Patrika, আনন্দবাজার পত্রিকা, Hindusthan Standard, যুগান্তর প্রভৃতি পত্রিকার ফাইল দ্রষ্টব্য।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *