ষষ্ঠ অধ্যায় – অস্থিরতা

ষষ্ঠ অধ্যায় – অস্থিরতা

যেহেতু এ বিশ্ব জাগতিক কাজকর্ম সম্পর্কে ইসলামের বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে তাই এ প্রশ্ন জাগা খুব স্বাভাবিক যে, অন্যান্য দেশের মতো মুসলিম দেশগুলোও কেন একই ধরনের অসাম্য ও ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে? কারণ খুবই স্পষ্ট। মুসলিম বিশ্বের কোথাও ইসলামী ব্যবস্থা পূর্ণভাবে কার্যকর নেই। রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে ইসলামের অনুপস্থিতিই বস্তুত সবচেয়ে বেশি দৃশ্যমান। মুসলিম দেশগুলোর নিজস্ব আদর্শ হতে বিচ্যুতি ও বর্তমান দুর্ভোগের জন্য যেসব ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক, সমাজতাত্ত্বিক কারণ দায়ী, তার সার্বিক বিশ্লেষণ এখানে সম্ভব নয়। তবে একটি সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা সমস্যার গুরুত্ব উপলব্ধি ও সাফল্যের সাথে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কর্মসূচির ধরন অনুধাবনে সহায়ক হবে।

রাজনৈতিক ও নৈতিক অবক্ষয়

গৌরবের শীর্ষে পৌছার পর ক্রমান্বয়ে সময়ের বিবর্তনে মুসলিম সমাজ রাজনৈতিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের শিকার হয়ে পড়ে এবং প্রেরণা ও গতিবেগ হারিয়ে ফেলে। প্রথমেই যে জিনিসটি পরিত্যক্ত হলো তা হলো ইসলামের খিলাফত ব্যবস্থা। এ প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাটি ছিল ইসলামের রাজনৈতিক ব্যবস্থার সর্বোত্তম রূপ। এর স্থান দখল করে নেয় একনায়কতান্ত্রিক ও বংশানুক্রমিক শাসনব্যবস্থা, যা শুরা বা ইসলামের গণতান্ত্রিক পরামর্শ ব্যবস্থার ধারাকে পরিত্যাগ করে। ফলে অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কুফল ক্রমান্বয়ে পুঞ্জীভূত হয়ে উঠল। ঈমানের প্রতি আবেগানুভূতি বজায় থাকা সত্ত্বেও ইসলামী শিক্ষার অনুশীলনে ক্রমাগত শিথিলতা দেখা দিলো। ইসলামী আদর্শ হতে ক্রমশ বিচ্যুত হয়ে মুসলমানরা চরিত্রের দৃঢ়তা হারিয়ে ফেলল। মুসলিম সমাজের তিনটি অনন্য বৈশিষ্ট্য তথা চরিত্রের দৃঢ়তা, ভ্রাতৃত্ববোধের সুদৃঢ় বন্ধন এবং দুর্নীতিহীন ন্যঅয়পরতা ক্রমাগত বিলুপ্ত হয়ে গোলো। ফলে মুসলমানরা আরো দুর্বল হয়ে পড়ল। তারা জীবনী শক্তি ও প্রাণচাঞ্চল্য হ্রাস পেল। সভ্যতার পতন বিশ্লেষণ করতে গিয়ে ঐতিহাসিক ট য়েনবীর অনুসরণে বলা যায় ‘মুসলিম সমাজ তার পারিপার্শ্বিকতার উপর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ হারাল।’

পারিপার্শ্বিকতার উপর নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে বৈদেশিক আধিপত্যের দুয়ার উম্মোচিত হলো। প্রাণশক্তিকে তা আরো শুষে নিলো। মুসলিম দেশগুলো কার্যকর জাতিসত্তা হতে বঞ্চিত হলো, বঞ্চিত হলো অর্থনীতির সুষম উন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম স্বাধীন ও ইসলামী মনোভাবাপন্ন সরকার হতে। জাপান, দড়্গিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানে দখলদার মিত্রশক্তি যে বৈপ্লবিক ভূমি সংস্কারনীতি গ্রহণ করেছিল, সেরূপ ব্যবস্থা না নিয়ে মুসলিম দেশসমূহ ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর সুবিধাভোগী শ্রেণী বিশেষ করে সামনত্ম শ্রেণীর সাথে মিত্রতা গড়ে তুলল। মিরডালের ভাষায়, ‘এসব সামনত্ম সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিবস্থার অধীনে তারা ছিল সবচেয়ে সুবিধাভোগী’ এবং এ অবস্থা বজায় রাখতে তারা ছিল খুবই আগ্রহী।৪ ফলে জনগণের উপর জুলুম, শোষণ ও নিপীড়নের শক্তিসমূহ আরো জোরদার হলো। মুসলিম সমাজের ভাঙন ও অবক্ষয় দ্রুততর হলো। ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তনের জনমত ও দাবিকে দাবিয়ে রাখা হলো। এ লক্ষ্য অর্জনের কর্মসূচি বাসত্মবায়ন দূরে থাক, রচনারও কোনো সুযোগ প্রদান করা হলো না।

অর্থনৈতিক পতন

সামাজিক সমতা ও ভ্রাতৃত্ববন্ধন দুর্বল হয়ে পড়ার মুসলিম সমাজ অধিকতর বিভক্ত ও পদমর্যাদামুখী হয়ে পড়ল। সত্যিকার মুসলিম সমাজের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আর্থ- সামাজিক ন্যায়নীতি হলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। সমান সুযোগ লাভের মধ্য দিয়ে উন্নতি লাভের দ্বার হলো প্রবলভাবে সংকুচিত। বিবেকসম্মত কঠোর পরিশ্রমের পুরস্কার প্রাপ্তি ও যোগ্যতার স্বীকৃতির সম্ভাবনা হলো তিরোহিত। ফলে যোগ্য ও দক্ষ লোকের সৃজনশীল কঠোর পরিশ্রম করার স্পৃহা হ্রাস পেল। সমাজের সকল ক্ষেত্রে প্রবিষ্ট বিলাসী জীবন ও নানা ভোগলিপ্সা পূরণ, এমনকি দৈনন্দিন জীবিকা অর্জনের জন্যও মানুষ ঝুঁকে পড়ল দুর্নীতি ও নানা অবৈধ পন্থার দিকে। সমগ্র সমাজ জীবনে দুর্নীতির সয়লাব বয়ে চলল।

ফলে শুধুমাত্র সমাজ জীবনের সংহতি ও নৈতিক বুননই দুর্বল হলো না, ধনী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সঞ্চয় ক্ষমতাও হ্রাস পেল। শোষণের কারণে দরিদ্র শ্রেণী নিম্নতম জীবিকা হতেও বঞ্চিত হলো। পুঁজি গঠনের পরিমাণ দাঁড়ালো খুবই অপর্যাপ্ত। আর্থ-সামাজিক ন্যায়নীতির অবক্ষয়ের সাথে সাথে উদ্যোগ, আবিষ্কার ও সৃজনশীলতা বিপুলভাবে ব্যাহত হলো।

অধিকাংশ মুসলিম দেশের প্রধান অর্থনৈতিক খাত কৃষিতে উদ্যোগ গ্রহণের সম্ভাবনাময় বর্গাচাষী ও ভূমিহীন কৃষক শ্রেণী বস্তুত ভূস্বামীদের ক্রীতদাসে পরিণত হলো। এসব সমানত্ম অধিপতিগণ কোনো মূল্যের বিনিময়ে নয়; বরং নানা কারসাজি ও ঔপনিবেশিক প্রভুদের আনুগত্যের মাধ্যমে বিশাল ভূমির মালিকানা লাভ করে। এসব অনুপস্থিত ভূমির মালিকরা উৎপাদিত পণ্যের অধিকাংশ আত্মসাৎ করত। ফলে কৃষকদের উদ্যম ও উৎসাহ হারিয়ে গেল। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ভূমি উন্নয়ন ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষক শ্রেণী কোনো উৎসাহ পেল না। বস্তুত বিনিয়োগ উদ্যোগ গ্রহণে তাদের সামর্থ্যই ছিল না। অধিকন্তু ভূস্বামী ও মহাজনদের নিকট হতে নেয়া ঋণের ভারে তারা ছিল পর্যুদনত্ম। অনুপস্থিত ভূস্বামীরা নিজেরাও কৃষিতে উন্নত বীজ, সার কীটনাশক, প্রশিক্ষণ তথা উন্নত প্রযুক্তিতে কোনো বিনিয়োগ করত না। উপরন্তু তারা বর্গাচাষী ও ভূমিহীন কৃষকদের শিক্ষা ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের যে কোনো পদড়্গেপকে বাধাদান করত। ফলে কৃষি খাত ছিল খুবই পশ্চাৎপদ।

ঐতিহাসিকভাবে সকল দেশে কৃষি বিপস্নব শিল্প বিপস্নবের পূর্বে বা একই সাথে সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু মুসলিম দেশসমূহে কৃষির দূরবস্থা টেকসই দ্রুত উন্নয়নের সম্ভাবনাকে তিরোহিত কেও দেয়। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ভাষ্য, ‘ভাষ্য, ‘বস্তুত যেসব দেশে কৃষি সমৃদ্ধি লাভ করেছে, সেসব দেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভ করেছে, সেসব দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়েছে। যদিও শত শত বছর যাবত উন্নয়নে কৃষির ভ্থমিকা নিয়ে বিতর্ক চলছে, তবু ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক সাক্ষ্য প্রমাণ এ বিষয়ে সুস্পষ্ট। উদাহরণস্বরূপ ইউরোপ, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে একটি গতিশীল সমৃদ্ধ কৃষি খাত শিল্পায়ন ও প্রবৃদ্ধিও ধারা সূচনা করেছে অথবা নিদেনপক্ষে এর সহগামী হয়েছে।’

মুসলমানদের গৌরব যুগে শিল্প কারখানায় কারুশিল্পী ও দক্ষ শ্রমিকবৃন্দ সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। ঔপনিবেশিক শাসকদেও মূল ভূখ- হতে উপনিবেশসমূহে রপ্তানি বৃদ্ধির নীতির দ্বারা তারা হতদরিদ্র হয়ে পড়ে। ঔপনিবেশিক শক্তিসমূহ মিরডালের ভাষায়, ‘তাদের শিল্পদ্রব্যের বাজার হিসেবে উপনিবেশসমূহকে ব্যবহার করে এবং দেশীয় শিল্পের বিকাশ রুদ্ধ করা, জন্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করে। হস্তশিল্প এভাবে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ভূমির উপর চাপ বৃদ্ধি পায়। কৃষক শ্রেণী কৃষি আয়ের সাথে কুটির শিল্পের আয় হতে বঞ্চিত হওয়ায় দরিদ্রতর হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে তারা স্বজন পরিজন ভিটেমাটি ত্যাগ করে শহরাঞ্চলে পাড়ি জমায়। শহরেও তারা শোষণের শিকার হয় এবং মানবেতর জীবনযাপন করতে থাকে।

মুসলিম দেশের কৃষক, কারুশিল্পী ও শ্রমিকবৃন্দ অন্যান্য দেশের মানুষের মতোই যৌক্তিক আচরণ করে। অর্থনৈতিক প্রণোদনায় সাড়া দেয়। উদ্যম, সৃজনশীলতা, সচেতনতা, দক্ষতা ও উৎপাদনশলিতার যে অভাব বর্তমানে তাদের মাঝে পরিলড়্গিত হয়, তা তাদের চরিত্রের অনত্মর্গত বৈশিষ্ট্য নয়। এগুলো তাদের উপর জোর করে চাপিয়ে দিয়েছে বিরূপ রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি। উপরন্তু কঠিন পরিশ্রম সত্ত্বেও সম্মানজনক জীবিকা অর্জনের ব্যর্থতাবোধের তাড়না এগুলোকে আরো ঘনীভ্থত করেছে। একটি সমাজের মনোবল, উদ্যম ও সৃজনশলিতার উপর দারিদ্র্য ও অবিচারের চেয়ে বড় ক্ষয়িষ্ণু প্রভাব আর অন্য কোনো কিছুর নেই। তাই কোনোরকম উপদেশ বা ধর্মীয় সানত্ম্বনার প্রলেপে কোনো কাজ হবে না। তাদের প্রতি ন্যায়বিচার করা হোক, কাজের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জাম সরবরাহ করা হোক, তাদের কর্মক্ষমতা শতগুণ বেড়ে যাবে। আর যদি ন্যায়বিচার করা না হয়, তবে তাদের কাছ থেকে ইতিবাচক কোনো সাড়া আশা করা যায় না।

হারানো সুযোগ

পরাধীনতা থেকে মুক্তি তথা জাতীয় স্বাধীনতা অর্জন মুসলমানদের মধ্যে আশার আলো সঞ্চার করেছিল। আশা করা হয়েছিল, জাতীয় সরকার ইসলামী মূল্যবোধ ও উন্নয়ন দর্শনের ভিত্তিতে জনগণের কল্যাণের জন্য নিষ্ঠার সাথে কাজ করবে। কিন্তু এ আশা পূরণ হয়নি। স্বাধীনতা লাভ শুধুমাত্র বিদেশী শাসকদেরই অপসারণ করল। অধিকাংশ মুসলিম দেশেই তাদের স্থঅন দখল করে নেয় সামরিক স্বৈরাচার ও জনসমর্থনহীন শাসকগোষ্ঠী। জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতি এদের কোনো সহমর্মিতা ছিল না। এদের কেউ কেউ সমাজতন্ত্র বা জাতীয় প্রতিরক্ষার নামে সমগ্র অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বার প্রানেত্ম নিয়ে আসে। স্বাধীনতা সত্ত্বেও ঔপনিবেশিক অতীতের অপছায়া সেকুলার, প্রতারক ও দুর্নীতিপরায়ণ আমলাতন্ত্রের মাঝে মূর্ত হয়ে উঠল। ভূস্বামী বৃহৎ শিল্প পরিবার ও সামরিকতন্ত্রের কায়েমী স্বার্থের সাথে আমলাতন্ত্র গাঁটছড়া বাঁধল।

স্বাধীনতার পর উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়নের ভার পড়ল আমলাতন্ত্রের উপর। কিন্তু এ দায়িত্ব সূচারুরূপে সম্পন্ন হয়নি। ইসলাম বা এর বৈপস্নবিক আর্থ-সামাজিক ন্যায়নীতির কর্মসূচি প্রণয়ন একটি কঠিন কাজ, তার তুলনায় অনেক বেশি সহজ অন্ধভাবে পাশ্চাত্যের অর্থনৈতিক পন্ডিতদের ব্যবস্থাপত্র অনুসরণ করা। উন্নয়ন অর্থনীতি রচিত হয়েছে পাশ্চাত্যের সেকুলারতার মতবাদের আবহে। আর্থ-সামাজিক ন্যায়নীতি ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি এর কোনো সুদৃঢ় অঙ্গীকার নেই। পরস্পর বিরোধী বিভিন্ন অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপত্রকে নৈতিক মানদন্দের ছাকনিতে ছেকে সঠিক পন্থা তথা স্থিতি ও সমতার ভিত্তিতে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথ বেছে নেয়ার কোনো কার্যকর প্রক্রিয়া পাশ্চাত্য অর্থনীতির মধ্যে স্বভাবত বিদ্যমান নেই। তাই অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মতো সমাজতন্ত্র ও মুক্তবাজার অর্থনীতি লিবারেলিজম ও এন্টি-লিবারেলিজমের ঢেউয়ের দোলায় দোলুল্যমান হয়ে রইল মুসলিম দেশসমূহের অনুসৃত নীতি। সৃষ্টি হলো অনিশ্চয়তা ও অসামঞ্জস্যতা। অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হলো এসব দেশের অর্থনীতির। অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তরান্বিত করার জন্য এসব দেশে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করা হলো। কিন্তু অবাঞ্ছিত ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয়কে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে নৈতিক বিবেচনা প্রয়োগ করা প্রয়োজন ছিল তা অবহেলা করা হলো। ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হলো সম্পদ ঘাটতি। এ ঘাটতি পূরণের জন্য মুদ্রা সরবারাহ বৃদ্ধি এবং অভ্যনত্মরীণ ও বৈদেশিক ঋণের দ্বারস্থ হওয়াকে ইতিবাচক পদড়্গেপ বলে মনে করা হলো। যারা এ ধরনের অসমীচীন নীতির বিরোধিতা করল তাদেরকে আধুনিকতার বিরোধী হিসেবে এমনকি মৌলবাদী নীতির বিরোধীতা করল তাদেরকে আধুনিকতার বিােধী হিসেবে এমনকি মৌলবাদী অভিধায়, অভিহিত করা হলো। ফলেই যদি বৃড়্গের পরিচয় হয়, তবে সেকুলার উন্নয়ন অর্থনীতি যে ফলের জন্ম দিলো, তা ছিল তিক্ত ও ব্যয়বহুল, যা প্রসব করল বিশাল সামষ্টিক অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক লেনদেন অসমতা, বৈদেশিক ঋণের গুরম্নভার এবং সামাজিক অস্থিরতা।

স্বাধীনতা লগ্নে দিগনত্মরেখায় সাধারণ মানুষ সুবহে সাদেরকে যে কিরণ রেখা দেখতে পেয়েছিল, তা ভোরের আলোয় প্রস্ফূটিত হয়ে উঠল না। তাদের সমস্যার জগদ্দল পাথর আগের মতোই রয়ে গেল। জীবনের ন্যূনতম প্রয়োজনের ঘানি তারা টানতে লাগল। বৈষম্য আরো উর্ধ্বগামী হলো। আর্থ-সামাজিক ইনসাফ প্রতিষ্ঠা স্বপ্নই রয়ে গেল। অতিরিক্ত বাজেটের ঘাটতির রথ টেনে নেয়ার জন্য দেদার টাকা ছাপাতে হলো। মুদ্রাস্ফীতির দানব গ্রাস করে নিল মুসলিম জনপদসমূহকে। বিশাল বৈদেশিক লেনদেন ঘাটতি বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভরশীলতা বাড়িয়ে তুলল। বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্যদাতা গোষ্ঠীর যাতাকলের ফাঁদে আটকে পড়ল মুসলিম দেশসমূহ। এসব বিদেশী পুঁজির বেনিয়াদের রয়েছে ইসলামের বিরম্নদ্ধে ক্রুসেডি মনোভাব। ইসলামী নীতিমালা ও কর্মসূচি অবলম্বনকে প্রতিহত করার জন্য এমন কোনো চাপ নেই, যা তারা প্রয়োগ করে না। মুসলিম দেশসমূহে প্রবৃদ্ধি, ন্যায়নীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশলিতা আনয়নে ইসলামের যে বিপুল সম্ভাবনাময় ভ্থমিকা রয়েছে তা উপলদ্ধি করার শক্তি তাদের ছিল না।

একটি শানিত্মবাদী ও সমৃদ্ধশালী ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন পূর্ণ হলো না। এমনকি অধিকাংশ মুসরিম দেশ কোন প থে ধাবিত হচ্ছে, কী তাদের নিয়তি, তাও অনির্ধারিত রয়ে গেল। ইসলামের প্রতি আনত্মরিকতাহীন যে মৌখিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়, তাতে গণমানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার কোনো প্রতিফলন নেই। অথচ হতাশ জনগণ সমাজ পরিবর্তনের জন্য উদগ্রীব। সময়ের দাবি ও দেয়ালের লিখন পড়ে নেবার জন্য মুসলিম নেতৃত্বের এটাই উপযুক্ত সময়। নেতৃবৃন্দের এখন প্রয়োজন জুলুম উৎখাতের জন্য ইসলামী পুনর্জাগরণের লড়্গ্যে কাজ করা। সময়ের এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যারা সাড়া দেবে, তারা জনতার রম্নদ্ররোষ হতে রক্ষা পাবে। ইতিহাসে নিজেদের জন্য উজ্জ্বল অবয় স্থান অধিকার করে নিতে পারবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, যেসব মুসলিম নেতৃবৃন্দ ইসলামের পক্ষে কথা বলেন, তারাও ইসলামী শাসিত্ম বা ফৌজদারী ব্যবস্থা প্রবর্তনের বাইরে আর কোনো কথা বলেন না। ফলে কঠোর শাসিত্ম প্রদানের ভয়ঙ্কর রূপের আড়ালে মানবতাবাদী ইসলামের শানিত্মময় তরম্নছায়া হারিয়ে যেয়ে মানুষের মনে প্রবল ভ্রানিত্মর সৃষ্টি হয়েছে। ইসলামের ধারণা ও প্রয়োজনীয় নীতির প্রতি এতে সামান্যতম সুবিচারও করা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে ইসলামের ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য শাসক শ্রেণী উল্লেখযোগ্য কিছুই করেনি। ইসলামের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে, হক, ইনসাফ ও আর্থ-সামাজিক ন্যায়বিচারের সুষম কাঠামো প্রতিষ্ঠা, কিন্তু তার পূর্বেই শাসিত্মর ব্যবস্থার কথা বলা বা প্রবর্তন করা বস্তুত ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেবারই সমতুল্য।

পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা

রাজনৈতিক বৈধতা

মুসলিম বিশ্বে পরিবর্তন প্রয়োজন। ইসলামের প্রতি মুসলিম জনতার গভীর আবেগানুভূতি ও আকর্ষণকে কার্যকরভাবে ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে আর্থ-সামাজিক সংস্কার ও উন্নয়নের বিপুল সম্ভাবনা।কে কাজে লাগানোর পন্থা উদ্ভাবন এবং মুসলিম চরিত্রের প্রকৃত বৈশিষ্ট্যসমূহকে জাগ্রত করা। সরকার এ কাজ কার্যকরভাবে আনজাম দিতে পারে তার নৈতিক নেতৃত্বের (কুদওয়াহ হাসানাহ) ছত্রচ্ছায়া বিসত্মার করে। শিক্ষা ও অন্যান্য বস্তুগত উপকরণ সরকারের হাতে রয়েছে। তা সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের জন্য প্রয়োজনীয় সুস্থ সামাজিক পরিবর্তন আনয়ন মুসলিম নেতৃত্বের পক্ষে সম্ভব। ইমাম হাসানুল বান্না যথার্থই বলেছেন, ‘আর্থ-সামাজিক সংস্কারের হৃৎপি- হচ্ছে সরকার। সরকার যদি সৎ হয় তবে সকল প্রকার সংস্কার সাধনই সম্ভব’। সরকার যথাযথ ভ্থমিকা কার্যকরভাবে পালন করে না বা করতে পারে না, যদি না সে সরকার বৈধ হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইতহাসের দীর্ঘসময়ব্যাপী মুসলিম জাহানের ক্ষমতাসীন সরকারসমূহের বৈধতা ছিল না। যতদিন পর্যনত্ম সরকারসমূহ বৈধতা অর্জন করতে না পারে, ততদিন ইসলামী লক্ষ্য হাসিলের সকল কর্মসূচি মুসলিম দেশের রাজনৈতিক কর্মকান্ডে শুধু সর্বাঙ্গীন আলঙ্কারিক রূপ বর্ধন করবে।

বৈধ মানদণ্ড

বৈধ সরকারের প্রশ্নে ইসলামের নিজস্ব সুদৃঢ় মানদণ্ড রয়েছে। সর্বপ্রধান মানদণ্ড হচ্ছে, সরকারের প্রথম জবাবদিহিতা হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে, যিনি সার্বভৌম আইনদাতা এবং শরীয়াহর সীমারেখার দ্বারা সীমাবদ্ধ। শরীয়াহর বিধান মেনে চলা সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক এবং শরীয়াহ বাসত্মবায়ন সরকারের কাজ। এ বিষয়ে আল-কোরআন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেছে, “তোমার প্রভু যা প্রেরণ করেছেন তা অনুসরণ করো এবং আল্লাহ ছাড়া আর কোনাকিছুর কর্তৃত্ব স্বীকার করো না” (৭:৩) এবং “আল্লাহর বিধঅন অনুযায়ী যারা শাসন কার্য পরিচালনা করে না, নিশ্চয় তারা সীমালঙ্ঘনকারী” (৫:৪৫)

যেহেতু শরীয়াহর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে কল্যাণ সাধন করা, বিশেষ কোনো শ্রেণী বা পরিবারের নয়, তাই সরকারের নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব হচ্ছে, সম্পদের দক্ষ ও সুষম ব্যবহারসহ সম্ভাব্য সকল প্রকার ব্যবস্থা অবলম্বনের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা। মহানবী (ﷺ) বলেছেন,

“তোমাদের প্রত্যেকে একজন রাখাল এবং তোমাদের অধীনসত্মদের জন্য তোমাদের দায়ী থাকতে হবে”।

“জনগণের দায়িত্ব যাকে অর্পণ করা হয়েছে এবং সে যদি আনত্মরিকতার সাথে প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ না করে, তবে জান্নাতের সুবাসও তার কাছে পৌঁছাবে না”।

“শেষ বিচারের দিন সমসত্ম মানব সমাজের মাঝে আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় আর সবচেয়ে ঘৃণিত ও আল্লাহ হতে দূরবর্তী হবে জালিম শাসক।”

বৈধতার দ্বিতীয় মানদণ্ড হচ্ছে জনসাধঅরণের নিকট জবাবদিহিতা। কেননা সরকার হচ্ছে আমানত। সরকার পরিচালনাকারী ব্যক্তিগবর্গ হচ্ছেন যুগপৎ আল্লাহ ও জনগণের পক্ষে হতে আমানত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে একবার সাহাবা আবু জার (রা) সরকারের সরকারের উচ্চপদ আকাঙ্ক্ষা করলে তিনি সুস্পষ্টভাবে বলেছিলেন, “হে আবু জার! তুমি দুর্বল, আর এ পদ হচ্ছে একটি আমানত। হাশরের দিন এ পদ ও মর্যাদা দুঃখ ও অপমানের কারণ হবে তাদের জন্য, যারা উপযুক্ততার ভিত্তিতে এ পদ অর্জন করেনি এবং এর দায়দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি”। তাই এ আমানতের সাথে সংগতি রেখে সরকার যেমন সফলতা বা ব্যর্থতার জন্য আল্লাহর কাছে দায়ী, তেমনি জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণের বিষয়েও সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।

সরকার জনগণের পরামর্শ ও সমালোচনার প্রতি যদি মুক্তমন না হয়, তবে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা কার্যকরভাবে পূরণে সরকার সফল হতে পারে না। রাসূলে করীম (ﷺ) তাই গুরম্নত্ব দিয়ে বলেছেন, ‘মুসলমানের ঈমানের অন্যতম দাবি হচ্ছে, শাসক শ্রেণীকে আনত্মরিক সৎ উপদেশ দেয়া, যে উপদেশ শাসকদের তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে সহায়তা করবে’। কিন্তু জনগণ কিভাবে সে দায়িত্ব পালন করবে, যদি তাদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকে; যদি তাদের সরকারি নীতি ও কার্যকলাপের সমালোচনা করার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়? যদি শাসকের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা না থাকে, যদি তা জনগণের পরামর্শ গ্রহণে উম্মুখ না হয়, তবে কোনো প্রকার সংস্কার সাধিত হতে পারে না। তাই হযরত আবুবকর (রা) যখন প্রথম খলিফা নির্বাচিত হন, তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তিনি ইসলামের এ অপরিহার্য অনুষঙ্গের বিষয়ে বলেছেন, “যদি আমি সঠিক পথে চলি, তবে আমাকে সাহায্য করুন”। অধিকার ও দায়িত্বের দ্বিমুখী ধারা এর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। শাসনকার্য পরিচালনার নীতি প্রণয়নে অং শগ্রহণ জনগণের অধিকার এবং জনগণকে সে অধিকার দেয়া শাসকের দায়িত্ব। একইভাবে সঠিক নীতি অনুসরণ ও কাজের ক্ষেত্রে জনগণের সাহায্য ও সহযোগিতা গ্রহণ শাসকের দায়িত্ব। একইভাবে সঠিক নীতি ও কাজের ক্ষেত্রে জনগণের সাহায্য ও সহযোগিতা পাওয়া সরকারের অধিকার। আর ভুল নীতি ও কার্যের ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্ক করে দেয়া জনগণের দায়িত্ব।

হযরত আবুবকরের উর্পযুক্ত ঘোষণা কোনো বিরল ঘটনা নয়। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা)ও একই নীতি অনুসরণ করেছিলেন। যখন খলিফাকে কোনো এক ব্যক্তির সমালোচনায় অন্য এক ব্যক্তি বাধা প্রদান করে, তখন হযরত ওমর দৃঢ়তার সাথে ঐ ব্যক্তিকে তার বক্তব্য বলার সুযোগ দিয়ে বলেন, ‘যদি তারা তাদের মনের কথা ব্যক্ত না করে, তবে তারা ভারৈা লোক নয়; আর আমরা যদি তাদের কথা না শুনি, তবে আমরা ভালো লোক নই’। সাধারণ মানুষের খলিফাদের সমালোচনা করার এবং খলিফাদের তা হাসিমুখে বরণ করে নেয়ার অসংখ্য উদাহরণ আছে, যা থেকে দ্বিধাহীনভাবে এ উপসংহারে উপনীত হওয়া যায় যে, জনগণের মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং নেতৃত্বের সমালোচনা অনুণ্ঠচিত্তে স্বীকার করে নেয়ার মনোভাব ছিল মুসলমানদের প্রাথমিক যুগের রাজনৈতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এমনকি খিলাফতের অবসানের পর যখন বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্র চালু হলো, তখনও কিছুকাল যাবত এ ঐতিহ্য বজায় ছিল।

বৈধতার তৃতীয় মানদণ্ড হচ্ছে, আল-কোরআনের নির্দেশ মোতাবেক পারস্পরিক পরামর্শ বা ইসলামী পরিভাষায় ‘শুরা’ ব্যবস্থার সাধারণ পরিবেশ বিরাজ করা (৪২:৩৮)। এটা কোনো ঐচ্ছিক বিষয় নয়, বরং বাধ্যতামূলক। ইমাম ইবনে তাইমিয়া ও শেষ মোহাম্মদ আবদুহু সুস্পষ্টভাবে এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এর অনিবার্য তাৎপর্য হচ্ছে, শরীয়াহর কাঠামের মধ্যে স্বেচ্ছাচার, সামরিক স্বৈরতন্ত্র বা একনায়কতন্ত্রের কোনো অবকাশ নেই। শেখ মোহাম্মদ আবদুহুর ব্যাখ্যাকে সমর্থন করে শেখ রশিদ রিদা এর কারণ হিসেবে বলেন, “একজন ব্যক্তির চেয়ে একটি দলের ভুল করার সম্ভাবনা অনেক কম। উম্মতের সকল শাসনভার তাই এক ব্যক্তির উপর অর্পণ করা অনেক বেশি বিপদজনক। যে পরামর্শ পর্ষদ বা শুরার কথা বলা হয়েছে তা নিছক অলঙ্কারিক নয়। শাসকের স্বৈরতান্ত্রিক সিদ্ধানত্ম অনুমোদনের রাবার স্ট্যাম্পের ভ্থমিকা পালন করা এর কাজ নয়। যা প্রয়োজন তা হচ্ছে, শরীয়াহর কাঠামের মধ্যে জনকল্যাণের সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়ের উপর ভয়, বাধাহীন মুক্ত আলোচনার জন্য সার্বভৌম এক প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা। ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রণীত সকল কর্মসূচির শাসন বিভাগ কর্তৃক আনত্মরিক ও যথাযথ বাসত্মবায়ন। শুরা ব্যবস্থা দাবি করে, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় প্রত্যক্ষ বা নির্ধারিত প্রতিনিধির মাধ্যমে সর্বাধিক জনগণের অংশগ্রহণ। শুরা ব্যবস্থার কাঠামো কী হবে নিজস্ব পরিস্থিতির ভিত্তিতে উম্মাহ তা নির্ধারণ করবে।

বৈধতার চতুর্থ শর্ত হচ্ছে, আইনের চোখে সকল মানুষের সমতার নীতি এবং সকল প্রকার দুর্নীতিমুক্ত ন্যায়বিচার। আল-কোরআনের ভাষায়, “এবং যখন তোমরা মানুষের মাঝে বিচার করো, তখন তা ন্যায়পরায়ণতার সাথে সম্পাদন কর” (৪:৫৮)। শরীয়াহর বিধান সমাজ বা সরকারের ব্যক্তি বিশেষের পদমর্য়া, সম্পদ বা অবস্থান নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। এর ব্যত্যয় ঘটানোর নাম জুলুম। শেখ মোহাম্মদ আবদুলস্নাহ যথার্থই বলেছেন, জুলুম হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাপ (এরাহ আলা মুনকার)। খলিফা আবুবকর (রা) তাঁর প্রথম ভাষণে যা বলেছিলেন তা এখানে স্মরণযোগ্য, তোমাদের মাঝে দুর্বলতম ব্যক্তি হচ্ছে আমার সামনে সবচেয়ে সবল, যতক্ষণ না তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারি। আর তোমাদের মাঝে শক্তিশালী ব্যক্তি হচ্ছে আমার সামনে সবচেয়ে দুর্বল, যতক্ষণ না তার কাছ থেকে আমি অধিকার আদায় করে নিতে পারি। এর অনত্মর্নিহিত অর্থ দাঁড়ায়, সরকারের দমনমূলক শক্তি থাকা প্রয়োজন শুধুমত্র ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং দুর্বল ও দরিদ্রকে তাদের অধিকার আদায়ের সাহায্য করার স্বার্থে।

শর্তসমূহ কখন পূরণ হয়

বৈধতার এ চারটি শর্ত পূরণ হবে না যতক্ষণ রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালীরা তাদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা জনগণের নিকট হতে প্রাপ্ত না হয় এবং তাদের কার্যকলাপের জন্য সরাসরি জনগণের নিকট দায়ী না থাকে। একমাত্র মুক্ত ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দ্বারা এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা সম্ভব। এরূপ নির্বাচন ব্যবস্থা ব্যকিরেকে জনগণ আল-কোরআনের ঐ নির্দেশ বাসত্মবায়ন করতে পারে না, যাতে বলা হয়েছে: “তাদেরকেই অভিভাবকত্ব দাও যারা যোগ্য” (৪:৫৮)। জনগণের স্বাধীনভাবে তাদের মন মতো যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার ও ক্ষমতা থাকতে হবে। বলপূর্বক বা বংশানুক্রমিকভাবে শাসন ক্ষমতা দখল বৈধ হতে পারে না।

তাই সমকালীন প্রখ্যাত দু’টি ইসলামী আন্দোলনের নেতা ইমাম হাসান আল-বান্না এবং সাইয়েদ আবুল আ’লা মওদূদী গণতন্ত্রকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছেন। হাসান আল-বান্নার মতে, জনগণের নির্বাচিত সরকার ইসলামের রাজনৈতিক দর্শনের স্পিরিটের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি নৈকট্যপূর্ণ। অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করে মাওলানা মওদূদী বলেছেন, ‘জনগণের সাথে গভীর সম্পৃক্তির মাধ্যমে সরকার গটিত ও পরিচালিত হওয়া উচিত। সরকারের গঠন এমন হওয়া প্রয়োজন, যাতে জনগণ খোলাখুলিভাবে তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারে। একমাত্র জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাই প্রাধান্য পারে। এ টা হতে পারে শুধুমাত্র এমন এক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় যা গঠন ও কার্যপ্রণালীতে গণতান্ত্রিক’। তিউনিসিয়ার ইসলামী আন্দোলন’ হিযব আল-ইসতিকলাল’ এর সভাপতি শেখ আলস্নাল আল ফাসি একইরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। সবার কল্যাণ সাধন এবং দুর্নীতিমুক্ত ইনসাফ কায়েমের কায়েমের জন্য শাসক শ্রেণী শরীয়াহর বিধান মেনে চলবে। এটা শুধুমাত্র জনগণের কাছে জবাবদিহিতামূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই নিশ্চিত করতে পারে। অবশ্য এর অর্থ এই নয় যে, বর্তমান প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি নেই। এতে এসব ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণে সামরিক একনায়কতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্রকে সমর্থন করা যায় না। প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে মুসলমানরা ইতিবাচকভাবে যতদূর সংস্কার করতে পারবে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বাচনে অপকৌশল, অর্থ ও পেশীশক্তির প্রভাব যতদূর হ্রাস বা অপসারণ করতে পারবে, বর্তমান গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ইসলামের আদর্শ শুরা ব্যবস্থার তত কাছাকাছি চলে আসবে। সার্বিকভাবে এটি হবে একটি পদড়্গেপ ও অগ্রাযাত্রা। তবে একবারেই এর সং স্কার সাধন হবে এরূপ প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। বিবর্তনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘকালীন সময়ে এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।

উলামাদের ভূমিকা

একদিকে যেমন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রত্যাশিত নৈতিক উচ্চমানের নেতৃত্ব (কুদওয়াহ হাসানাহ) প্রদানে ব্যথ হয়েছে, অপরদিকে রানেতিক কাঠামোয় প্রভুত প্রভাবশালী ধর্মবেত্তা উলামাবৃন্দ ও পেশাজীবী শ্রেনী ঐ কাঙিক্ষত নৈতিক নেতৃত্বের পতাকা বহনে র্ব্যথ হয়েছে। আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনের ঝান্ডা উত্তোলন এবং জনগণের বত্তুগত ও নৈতিক উন্নয়নে নিজেদের ক্ষমতা ও প্রভাব বিসত্মারের পরিবর্তে তাদের অধিকাংশই চাটুকারিতার মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ হাসিলে লিপ্ত রয়েছে। তারা একথা ভুলে গেছে যে, সমাজের ক্ষমতাশালী ও প্রভাবশালীদের উপর আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কাঙিক্ষত পরিবর্তন আনয়নের জন্য ইসলাম এক দায়িত্বপূর্ণ গুরুভার অর্পণ করেছে। দুর্নীতি ও বেইনসাফির যে প্রচলিত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু রয়েছে, বৈষয়িক স্বার্থ হাসিলের জন্য এ শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গের তা সমর্থন করে যাওয়া বা সে ব্যবস্থার অংশে পরিচালিত হওয়াকে শরীয়াহ সামান্যতম অনুমোদন করে না। মহানবী (ﷺ) এ ধরনের অবাধ আচরণকে কুফরীর সামর্থক বলে ঘোষণা করেছেন। বর্তমান প্রতিকূল পরিবেশে নিঃস্বার্থ ও বিবেকমানদের জন্যও উল্লেখযোগ্য কোনো অবদান রাখার সুযোগ নেই, বিশেষত যখন নিপীড়নমূলক সরকারসমূহ সংস্কারের ভয়ে শঙ্কিত এবং সংস্কারবাদীদের নির্যাতনের যূপকাষ্ঠে বলি দিতে যৎপরোনাসিত্ম বদ্ধপরিকর। রসূল পাক (ﷺ) তাই ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন,

“আমার উম্মত সম্পর্কে আমি তিনটি বিষয়ে শঙ্কিত- উলামাদের বিচ্যুতি ও অমনোযোগিতা, স্বেচ্ছাচারী শাসন এবং জাগতিক ভোগলিপ্সা”।

অবশ্য এ অবস্থা দীর্ঘকাল চলতে পারে না। গণবিড়্গোভ ধূমায়িত হয়ে উঠছে এবং মানুষ পরিবর্তনের জন্য উন্মুখ। মুসলিম বিশ্বের চলমান গণজাগরণ জনসাধারণের মধ্যে এ উপলব্ধি ও বিশ্বাসকে ক্রমাগত দৃঢ়তর করেছে যে, ইসলামের পুনর্জাগরণের মধ্যেই তাদের মুক্তি নিহিত। ফলে শাসক শ্রেণী ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় হোক শেষ পর্যনত্ম ইসলামী ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হবে।

নীতিমালার পুনর্গঠন

ইসলামের বিশ্ববীক্ষণ ও প্রয়োজনীয় নীতি কতগুলো সুসংবদ্ধ ও সুসমন্বিত নীতিমালার রূপানত্মর মাত্র। তাই এখন সময়ের দাবি যাতে ইসলামী আদর্শ কায়েমে আগ্রহী যে কোনো সরকার সে দেশের নিজস্ব প রিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী নীতিমালাসমূহ প্রয়োজনীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে বাসত্মবায়ন করতে পারে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে মুসলিম দেশসমূহ শূণ্য থেকে শুরু করছে না। তাই তাকে ইসলামের ছাঁচে ঢেলে সাজানো তুলনামূলকভাবে সহজ হবে। অনেক মুসলিম রাষ্ট্র অবশ্যই তীব্র বৈষম্য ও অসমতা দোষে দুষ্ট। ফলে ইসলামী কাঠামোয় এদের রূপানত্মর প্রক্রিয়া হয়ত কঠিন ও জটিল হতে পারে। এতদসত্ত্বেও পূর্ববর্তী আলোচনা হতে এ কথা সুস্পষ্ট যে, ইসলাম হতে অনুপ্রেরণা গ্রহণ ব্যতীত গত্যনত্মর নেই। সমাজ বাসত্মবতা তথা সীমিত সম্পদের মোকাবিলায় বিশেষ শ্রেণীর বল্গাহীন ভোগ ইচ্ছা এটাই দাবি করে যে, শরীয়াহ ব্যবস্থঅকে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করতে হবে। ‘প্যারেটো অপটিমালিটি’র নৈতিক বিবেচনাহীন ধারনাকে পরিহার করতে হবে, যাতে ধনিক ও সুবিধাভোগী শ্রেণীর বিলাসী চাহিদায় সম্পদের অপচয়ের পরিবর্তে সীমিত সম্পদকে সকল শ্রেণীর মানুষের মৌলিক প্রয়োজন পূরণে ব্যবহার করা যায়। যে কর্মসূচি আর্থ-সামাজিক মৌলিক লক্ষ্য পূরণে সম্পদের সরবরাহ বৃদ্ধির কথা বলে, অথচ কোন গৌণ খাতকে কাটছাট করে সম্পদের যোগান দেয়া হবে তা বলে দেয় না, এমন কর্মসূচি প্রকৃতপক্ষে বাসত্মবায়নযোগ্য নয়।

যদি সম্পদ সীমিত না হতো, তবে কোনোরূপ সমস্যা ছাড়াই মানুষের সকল চাহিদা পূরণ করা যেত। এমন ক্ষেত্রে বিশেষ শ্রেণীর নিয়ন্ত্রণ ভোগের স্বাধীনতাও অন্য কারো কোনো ক্ষতি করত না। কোনোরূপ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই আর্থ-সামাজিক ন্যায়পরায়ণতার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হতো। কিন্তু যেহেতু সম্পদ সীমিত, তাই বাঞ্ছিত আর্থ-সামাজিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্পদের সুষম ও দক্ষ ব্যবহার প্রয়োজন। মানুষের প্রবৃত্তির অভিরুচি অনুযায়ী সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ দানের মাধ্যমে সমাজে অসাম্য ও অসমতাকে স্থায়ীত্ব দেয়ার নামানত্মর মাত্র। তাই সম্পদ ব্যবহারে দক্ষতা ও মানুষের মাঝে সমতা আনয়নের জন্য সম্পদ ব্যবহার পদ্ধতির উপর কিছু নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা প্রয়োজন। কোনোরূপ নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোনো অর্থনীতিই চালিত হতে পারে না। ঐশী বিধিবিধানের নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে চলতে হয়। এতদসত্ত্বেও পূর্ববর্তী অধ্যায় হতে সুস্পষ্ট যে, উভয় ব্যবস্থাই ভারসাম্যহীনতা পরিহার করে একই সাথে দক্ষতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।

মুসলিম দেশসমূহের জন্য শরীয়াহর কাঠামোগত নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সকল বিষয়ে ইসলমের প্রথম যুগের উদাহরণ হতে পূর্বনজির খুঁজে পে তে হবে এমন কোনো আবশ্যিক শর্ত নেই। এটা সব সময় সম্ভব নাও হতে পারে। অবশ্য শরীয়াহর মূলনীতির মাঝে যে কোনো কর্মসূচি প্রণয়নের জন্য প্রয়োজনীয় সকল মৌলিক উপাদান ও অনুষঙ্গ মজুদ আছে। তবু প্রয়োগিক কর্মসূচি রচনার জন্য শরীয়াহর মাঝে পুঙ্খানুপুঙ্খ সকল বিষয়ে বর্ণিত হয়নি। কারণ হচ্ছে, স্থান কালের পরিসরে কাঠোর অনমনীয়তা যেন কোনো বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। খুঁটিনাটি বিষয়াবলীর কাঠামো এখানে গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ সামঞ্জস্যপূর্ণ সমস্যার ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা হতে সহায়তা নেয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে দুটি শর্ত লক্ষ্য রাখতে হবে- অন্যদেশ থেকে অভিজ্ঞতালদ্ধ বিষয়টি শরীয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক না হয়ে ‘মাকাসিদ’ অর্জনে যেন ইতিবাচক ভূমিকা রাখে এবং সম্পদের উপর অতিরিক্ত কোনো চাপ সৃষ্টি নাকরে। গৃহীত কর্মসূচি, বিশেষত সেসব কর্মসূচি যা পাশ্চাত্যের ‘প্যারেটো অপরিমালিটি’র মানদণ্ড সম্মত নয়, তা যদি এ শর্তের নিক্তিতে উতরে যায়, তবে তা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এবং সরকারের হাতকে শক্তিশালী করবে।

কেবলমাত্র একটি সূচারুরূপে বাসত্মবায়িত অর্থনৈতিক সমন্বয় কর্মসূচি মুসলিম দেশসমূহের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের শ্রীবৃদ্ধি আনতে পারে। এরূপ সমন্বয় কর্মসূচি মনে হতে পারে কঠোর ও তিক্ত। কিন্তু এই তিক্ততাকে ইসলামী মূল্যবোধের সাথে এক করে দেখা সটিক হবে না। কেননা ইসলাম বৈরাগ্যধর্মী কোনো জীবন ব্যবস্থা নয়। যে ধরনের কৃচ্ছতা বর্তমান বিরূপ পরিস্থিতির কারণে প্রয়োজন, স্বাভাবিক ও অনুকূল পরিবেশে ইসলাম তা দাবি করে না। স্বাভাবিক অবস্থায় কৃচ্ছতার পথ অবলম্বন ছাড়াই ইসলামী অনুশাসনের অনুসরণে দক্ষতা ও ইনসাফ উভয়ই অর্জন সম্ভব। ইসলামের চারিত্রিক পরিশুদ্ধিকরণ ব্যবস্থা এবং অনুপ্রেরণা এমনই উজ্জীবনকারী যে, অর্থনৈতিক সমন্বয় সাধনের ফলে যে দায়ভার সৃষ্টি হবে, তার বোঝা গরীবের পরিবর্তে ধনীরাই বহনে সম্মত হবে। মানুষের মানবিক চেতনার স্ফূরণে এটা ইসলামের এক বিশাল অবদান। নিওক্লাসিক্যাল বা সমাজতান্ত্রিক সৃষ্ট আর্থিক গুরুভার গরীবের উপর হাতে স্থানানত্মর সম্ভব নয়।

পঞ্চনীতিমালা

মুসলিম দেশের সমস্যাবলী সমাধানের জন্য প্রসত্মাবিত নীতিনির্ধারক কর্মসূচিগুলো পাঁচ ভাগে ভাগ করে পরবর্তীতে বিভিন্ন অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রথম কর্মসূচিতে (অধ্যায় ৭) আলোচিত হয়েছে ব্যক্তির স্বীয় ও সমাজের সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য মানুষকে মানবসম্পদে প রিণত করা ও উজ্জীবিত করার পথ ও পন্থা নিয়ে। দ্বিতীয় কর্মসূচি (অধ্যায় ৮) মুসলিম দেশসমূহের সম্পদের বর্তমান কেন্দ্রীভূতকরণ হ্রাসের প্রশ্নের সাথে সম্পৃক্ত। তৃতীয় ও চতুর্থ কর্মসূচি (অধ্যায় ৯ এবং ১০) ইসলামী আদর্শ বাসত্মবায়নের লক্ষ্য অর্জনে মুসলিম দেশসমূহে জনগণের জীবনযাত্রার ধরন, সরকারি আয়ব্যয়, আর্থিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও ব্যবস্থাপনায় কী ধরনের পরিবর্তন ও পুনর্গঠনের প্রয়োজন তার বিবরণের সাথে সম্পৃক্ত। উপযুক্ত পরিকল্পনা ব্যতীত এই সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন অসম্ভব। তাই পঞ্চম কর্মসূচি (অধ্যায় ১১) যে কৌশলগত পরিকল্পনা এই লক্ষ্য অর্জনে অপরিহার্য সেই প্রশ্নের সাথে সম্পৃক্ত।

উলিস্নখিত অধ্যায়সমূহে বর্ণিত অনেকগুলো নীতিনির্ধারক কর্মসূচির সাথে উন্নয়ন অর্থনীতিতে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিগণ পরিচিত থাকতে পারেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে, অন্যান্য সবকিছুর সাথে এখানে সংযোজিত হয়েছে ইসলামের বিশ্ববীক্ষণ ও জীবনবিধানের আলোকে জীবনের বৈষয়িক দিকের সাথে আধ্যাত্মিক দিকের সুন্দর ও সুষম সমন্বয়। এরূপ সমন্বয়ের অভাবে সীমিত সম্পদের উপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ সৃষি।ট ব্যতিরেকে সামাজিক লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *