অবদানশতক অনাথপিণ্ডদ বুদ্ধের একজন প্রধান শিষ্য ছিলেন ‘ প্রভু বুদ্ধ লাগি আমি ভিক্ষা মাগি , ওগো পুরবাসী , কে রয়েছে জাগি , অনাথপিণ্ডদ কহিলা অম্বুদ — নিনাদে । সদ্য মেলিতেছে তরুণ তপন আলস্যে অরুণ সহাস্য লোচন শ্রাবস্তীপুরীর গগনলগন প্রাসাদে । বৈতালিকদল সুপ্তিতে শয়ান এখনো ধরে নি মাঙ্গলিক গান , দ্বিধাভরে পিক মৃদু কুহুতান কুহরে । ভিক্ষু কহে ডাকি , ‘ হে নিদ্রিত পুর , দেহো ভিক্ষা মোরে , করো নিদ্রা দূর ' — সুপ্ত পৌরজন শুনি সেই সুর শিহরে । সাধু কহে , ‘ শুন , মেঘ বরিষার নিজেরে নাশিয়া দেয় বৃষ্টিধার , সর্ব ধর্মমাঝে ত্যাগধর্ম সার ভুবনে ।' কৈলাসশিখর হতে দূরাগত ভৈরবের মহাসংগীতের মতো সে বাণী মন্দ্রিল সুখতন্দ্রারত ভবনে । রাজা জাগি ভাবে বৃথা রাজ্য ধন , গৃহী ভাবে মিছা তুচ্ছ আয়োজন , অশ্রু অকারণে করে বিসর্জন বালিকা । যে ললিত সুখে হৃদয় অধীর মনে হল তাহা গত যামিনীর স্খলিত দলিত শুষ্ক কামিনীর মালিকা । বাতায়ন খুলে যায় ঘরে ঘরে , ঘুমভাঙা আঁখি ফুটে থরে থরে অন্ধকার পথ কৌতূহলভরে নেহারি । ‘ জাগো , ভিক্ষা দাও' সবে ডাকি ডাকি সুপ্ত সৌধে তুলি নিদ্রাহীন আঁখি শূন্য রাজবাটে চলেছে একাকী ভিখারি । ফেলি দিল পথে বণিকধনিকা মুঠি মুঠি তুলি রতনকণিকা — কেহ কণ্ঠহার , মাথার মণিকা কেহ গো । ধনী স্বর্ণ আনে থালি পুরে পুরে , সাধু নাহি চাহে , পড়ে থাকে দূরে — ভিক্ষু কহে , ‘ ভিক্ষা আমার প্রভুরে দেহো গো ।' বসনে ভূষণে ঢাকি গেল ধূলি , কনকে রতনে খেলিল বিজুলি , সন্ন্যাসী ফুকারে লয়ে শূন্য ঝুলি সঘনে — ‘ ওগো পৌরজন , করো অবধান , ভিক্ষুশ্রেষ্ঠ তিনি বুদ্ধ ভগবান , দেহো তারে নিজ সর্বশ্রেষ্ঠ দান যতনে ।' ফিরে যায় রাজা , ফিরে যায় শেঠ , মিলে না প্রভুর যোগ্য কোনো ভেট , বিশাল নগরী লাজে রহে হেঁট — আননে । রৌদ্র উঠে ফুটে , জেগে উঠে দেশ , মহানগরীর পথ হল শেষ , পুরপ্রান্তে সাধু করিলা প্রবেশ কাননে । দীন নারী এক ভূতলশয়ন না ছিল তাহার অশন ভূষণ , সে আসি নমিল সাধুর চরণ — কমলে । অরণ্য - আড়ালে রহি কোনোমতে একমাত্র বাস নিল গাত্র হতে , বাহুটি বাড়ায়ে ফেলি দিল পথে ভূতলে । ভিক্ষু ঊর্ধ্বভুজে করে জয়নাদ — কহে , ‘ ধন্য মাতঃ , করি আশীর্বাদ , মহাভিক্ষুকের পুরাইলে সাধ পলকে ।' চলিলা সন্ন্যাসী ত্যজিয়া নগর ছিন্ন চীরখানি লয়ে শিরোপর সঁপিতে বুদ্ধের চরণনখর - আলোকে ।