শ্যামকান্ত সর্দেশাই একদা শান্তিনিকেতন আশ্রমে প্রবেশ করেছিল অপ্রত্যাশিতভাবে,তখন আমাদের বিদ্যালয়ে অন্য প্রদেশের ছাত্র প্রায় কেউ ছিল না। কিন্তু সে যেমন সকল দিক থেকে আমাদের আশ্রমের সঙ্গে একীভূত হয়েছিল এমন অন্য কোনো ছাত্র আমরা দেখি নি। পড়া মুখস্থ করে পরীক্ষায় ভালোরূপ সিদ্ধিলাভ করবার উপযুক্ত মেধা আমাদের দেশের ছেলেদের মধ্যে দুর্লভ নয়– কিন্ত বোধশক্তিবান যে-চিত্তবৃত্তি বিদ্যাকে এবং চারি দিকের পরিকীর্ণ প্রভাবকে সমঞ্জসীভূত ক’রে সজীব সত্তায় পরিণত করতে পারে তা অল্পই দেখা যায়। সেই শক্তি ছিল শ্যামকান্তের, তাই সে আমাদের অত্যন্ত আপন হয়ে উঠেছিল– কিছুই তার কাছে বিদেশি ছিল না। সে আমাদের আশ্রমকে হৃদয়ে গ্রহণ করেছিল, জীবনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল, এবং সে অধিকার করেছিল আমাদের হৃদয়। আমরা তাকে সকলেই ভালোবেসেছিলুম।
তার সময়কার এমন কোনো ছাত্র আমাদের ওখানে ছিল না, বাংলা ভাষার অধিকারে যে তার সমকক্ষ ছিল। তা ছাড়া আমাদের সংগীতে তার অনুরাগ এবং প্রবেশ ছিল স্বাভাবিক। এই দুই পথ দিয়েই তার মন আমাদের আশ্রমে আদর্শে ও জীবনযাত্রায় নিজেকে সহজেই বিস্তারিত করতে পেরেছিল। দূর গৃহ থেকে এসেছিল শ্যামকান্ত, কিন্তু আপন হৃদয়মনের শক্তিতে সে আমাদের একান্ত নিকটস্থ হয়েছিল, এবং এখনো নিকটেই আছে। ইতি ১১ জুন ১৯৩৩
[১৩৪০]