শ্বাপদ সনে – ৪

অধ্যায় ৪ – জামশেদের জবানবন্দি থেকে

খালেকুজ্জামান স্যারের দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিটা কাঁচুমাচুর চূড়ান্ত।

হাজার হলেও মানুষটা আমার শিক্ষক। কাজেই আমি বিব্রত হলাম। আর বিব্রত হতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, এই অনুভূতিটার সাথে, আমার কোনো সম্পর্ক নেই, বিব্রত হলে কি করতে হয় তা জানা নেই। স্বভাবতই রেগে উঠলাম। মোটা গলায় বললাম, “দাঁড়িয়ে কেন স্যার, বসুন।”

নিতান্ত বাধ্য হয়েই যেন সোফাটার কোণায় পা জড়ো করে বসলেন খালেকুজ্জামান স্যার। পরনে ঢলঢলে সস্তা প্যান্ট আর পলিয়েস্টারের শার্ট। ময়লা।

আমি লোকটার দিকে তাকিয়ে আছি বেশ অবাক হয়েই। খালেকুজ্জামান স্যার আমার খুব পছন্দের একজন মানুষ। পেশা বাংলাদেশের উঠতি শুটারদের কোচিং করা। এর চেষ্টা আর তদবির না থাকলে আমি সাফ গেমসের দলে সুযোগই পেতাম না। প্রথম দিন ট্রায়ালে শুটিং রেঞ্জে আমার শুটিং দেখেই খুব খুশি হয়েছিলেন তিনি। দ্বিতীয় দিনে আমার আরেক দফা ভালো শুটিং, আর স্যারও বলে বসলেন, “জামশেদ, তোমাকে সাফ গেমসে পাঠাবো আমি। হ্যা, আগামি বছরই। এয়ার রাইফেলে সোনা না হোক, তোমার রূপা জেতা কেউ ঠেকাতে পারবে না।” এরপর সবকিছুতেই আমার পাশে ছিলেন তিনি-দিনের পর দিন হাতে ধরে কোচিং করানো থেকে শুরু করে সাফ গেমসের দলে আমাকে নেবার সব আনুষ্ঠানিকতা সারা, গেমসের প্রতিযোগিতার সময়ে আমাকে সাহস দেয়া, সত্যি সত্যি সোনা জেতার পরে আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদা।

সোনা জেতার আগেই আমাকে নিয়ে খুব গর্ব করতেন তিনি। আমি নাকি জাত শুটার। কথাটা মনে হয় সত্যি। আমার তেরতম জন্মদিনে আমাকে একটা বি.বি. গান উপহার দিয়েছিলেন বাবা। সেটা নিয়ে বাসার ছাদে গিয়ে প্রথম গুলিতেই উড়ন্ত একটা শালিক মেরেছিলাম। বাবাও খেয়াল করেছিলেন আমার এই বন্দুক-প্রীতি। আঠারো বছর বয়স হবার পরই আমাকে ভর্তি করে দিলেন শুটিং ক্লাবে। উনি নিজেও ওখানকার সদস্য ছিলেন।

শখের বশে দুয়েকটা শুটিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে খুবই ভালো করার পরে আমার মাথায় ভুত চাপলো, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় যাবো। শুটিং ফেডারেশনের সাথে যোগাযোগ করলেন বাবা। খালেকুজ্জামান স্যারের কাছে সবক নিতে হলো কয়েক মাস। সাফ গেমসের শুটিং দলের জন্য মনোনীত হলাম। তার পরের গল্প আপনাদের আগেই বলেছি।

সোনা জেতার পর বহু পানি গড়িয়েছে বুড়িগঙ্গায়। সেই খালেকুজ্জামান স্যার আজ পাঁচ বছর পরে এই তেরানব্বই সালে আমার বাসায়?

সরু চোখে লোকটাকে জরিপ করতে করতে উল্টো দিকের সোফায় বসলাম। আমি লোকটা এত বড় গুরুভক্ত নই যে তাকে পাঁচ বছর পর হাজির হতে দেখে হা-হা করে ছুটে গিয়ে পায়ের ধুলো নেব। স্যারের উপস্থিতির নেপথ্যে নিশ্চিত অর্থাভাব। তার হাতের টিপ যতো ভালোই হোক না কেন, সরকারের ট্যাঁক থেকে যথেষ্ট বড় অংকের বেতন খসাবার জন্য তা যথেষ্ট নয়। তাছাড়া তার সংসারে আরো কি কি জানি সমস্যা ছিলো, তখন জানতাম, এখন মনে পড়ছে না।

“তারপর বাবা জামশেদ, সব ভালো তো?” চওড়া একটা হাসি দিলেন খালেকুজ্জামান স্যার, ক্লিষ্ট না-কামানো মুখটাতে পটাপট ভাঁজ পড়লো কয়েকটা। চোখ দুটো ক্ষুধার্ত মানুষের মত জ্বলজ্বল করছে।

“হুঁ,” বলে গোঁফ মোচরাতে মোচরাতে লোকটার দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি। স্যার টাকার কথাটা কখন পাড়বেন, শোনার অপেক্ষায় আছি।

“তোমার বাবার ব্যাপারে শুনলাম। খুব খারাপ লাগলো। সত্যিই উনি বড় ভালো মানুষ ছিলেন।”

আমি আরেকটু কাত হয়ে হেলান দিলাম সোফায়। বাহ, আধাপাগলা লোকটা ইদানিং বেশ কথা শিখেছেন মনে হচ্ছে। অভাবে পড়লে যা হয় আর কি। আমার বাবার মৃত্যু দিয়ে কথা স্টার্ট, তারপর বলবেন বাবা তুমি তো কোম্পানির মালিক হইলা, তারপর কথার মোড় দুইদিকে ঘুরতে পারে-তার কোনো আত্মীয়ের চাকরি, কিংবা অর্থ সাহায্য। চাকরির ব্যাপারটা মোস্ট লাইকলি। তার একটা বখে যাওয়া ছেলে ছিল, এখন মনে পড়ছে।

“তোমার বাবা তোমাকে নিয়া অনেক আশা করতেন।”

আমি আমার প্রিয় গোঁফে তা দিতে দিতে মাথা পেছনে হেলিয়ে স্যারের কথা শুনছি। কথার মোড় কোনদিকে ঘুরছে বোঝার চেষ্টা করছি।

“উনি মাঝে মাঝে কোম্পানিতে যাওয়ার রাস্তায় তোমাকে রেঞ্জে নামায় দিতেন, উনি মনে আছে? তোমার বোধহয় জানা নাই, তুমি যখন রেঞ্জে প্র্যাকটিস করতা, অনেক সময় আমাকে ডেকে নিয়া অনেককিছু নিয়া কথা বলতেন। বলতেন, মা মরা ছেলে, খুব মেজাজি, আমি যেন কিছু মনে না করি। বলতেন, আমি ছেলেরে বিদেশে পাঠামু না, পাঠাইলে আমার এত কষ্টের ব্যবসা-বাণিজ্য আর বাড়িঘর কে দেখবে? সেইজন্যে তোমাকে আর বিদেশে পাঠায় নাই, ঢাকা ভার্সিটিতে পড়াইছে।” খালেকুজ্জামান স্যার পিঠ কুঁজো করে বসেছেন। হাত জড়ো করা। চোখের কোণে কালি।

মাথা তুলে ভালো করে এবার স্যারের দিকে তাকালাম আমি। বাবা এই লোকের সাথে এতক্ষণ কথা বলতেন এসব নিয়ে? নতুন তথ্য বটে।

“বলতেন, ছেলেটার আর কোনোকিছুতে তেমন আগ্রহ নাই কিন্তু শুটিং খুব ভালোবাসে। বলতেন, আমি যেন তোমাকে একটু ভালো কইরা দেখি।”

স্যারের একটাই ছেলে ছিল, এখন মনে পড়ছে। বখাটে না, ভালো ছাত্রই ছিল। “আমি বলতাম, চিন্তা কইরেন না, আপনার ছেলের হাতের টিপের জবাব নাই। সাফে শিওর সোনা জিতবে।”

ছেলেটাকে নিয়ে অনেক আশা ছিল স্যারের, মনে পড়ছে এখন

“তুমি সাফে ঠিকই সোনা জিতলা।”

স্যারের ছেলেটা কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিলো, মনে পড়ছে।

“তোমারে নিয়া আমি আরো বড় স্বপ্ন দেখা শুরু করলাম। কমনওয়েলথ, অলিম্পিক! আমার ছাত্র অলিম্পিকে সোনা জিতবে!” স্যারের চোখ এত চকচক করছে কেন? মানুষের চোখ এমন টর্চলাইটের মত চমকাতে পারে নাকি?

সোফায় হেলান দেওয়া মাথায় উঠেছে আমার। শিরদাঁড়া সোজা করে সামনে ঝুঁকে বসেছি আমি এখন। “কি বলতে চাচ্ছেন, স্যার?”

“অলিম্পিকে যাওয়ার সব প্রস্তুতি নিয়াও ফেললা তুমি, তারপরই…’ “স্যার!” কর্কশ গলায় প্রায় চেঁচিয়ে উঠলাম আমি। “ওই বিষয়ে আর একটা কথাও শুনতে চাচ্ছি না।”

“…তুমি এমন একটা কাজ করে ফেললা…” আমার হুঁশিয়ারি যেন কানেই ঢোকেনি স্যারের। চোখের দৃষ্টি কোন সুদূরে পাঠিয়ে আমার জীবনের সবচেয়ে লজ্জার ঘটনাটা বয়ানে ব্যস্ত তিনি।

“স্যার!” ঘরবাড়ি কাঁপিয়ে একটা ধমক দিলাম আমি, এমন জোরে যে দরজার কাছে ছুটে এসে দাঁড়ালো আক্কাস মিয়া।

ঘোর কাটলো যেন স্যারের। “মাফ কইরে দিও. বাবা। মাফ কইরে দিও। বয়স হইয়া গেছে তো, কি বলতে কি বলে ফেলি। সেদিন ডাক্তার বললো ডায়াবেটিস হইছে, ওষুদ কিনবো সেই টাকাটাও নাই। আমার ছেলেটা বাঁইচা থাকলে…”

স্যারের আসার উদ্দেশ্যটা পরিস্কার হলো। স্যারের প্রতি আমার অন্যরকম একটা শ্রদ্ধা আছে বটে, কিন্তু তাই বলে আমি এমন লোক না যে বসে বসে তার সুখ-দুঃখের আলাপ শুনবো। তড়িঘড়ি বলে উঠলাম, “আমার চাচাতো ভাইটা ডাক্তার। এই বাসাতেই থাকে। তাকে বলে দিচ্ছি, সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।”

“ছেলেটার খুব শখ ছিলো, ইঞ্জিনিয়ার হবে…”

“আপনার ঔষধের খরচ আমি দেবো…” স্যারের কথা চাপা দিয়ে বলার চেষ্টা করলাম।

“অংকও খুব ভালো পারতো…” স্যার যেন ঠিক করেছেন তার মৃত ছেলে নাড়িনক্ষত্র আমাকে না জানিয়ে ছাড়বেন না।

“যত টেস্ট লাগবে সব ফ্রিতে করাতে পারবে সামাদ…”

“কালকে রাতে তোমার বাবাকে স্বপ্নে দেখলাম।”

আমি বলতে চাচ্ছিলাম তার হসপিটাল বিলও আমি দেব, কিন্তু সেটা আর বলা হলো না, হা-করে তাকিয়ে রইলাম। “কি-কি বললেন?” দু’বার চেষ্টার পরে মুখ খুলতে পারলাম।

খালেকুজ্জামান স্যারের চোখের নিচে কালি, কিন্তু মণিদুটো চকচক করছে টর্চলাইটের মত। “তোমার বাবা…স্বপ্নে দেখলাম। একবারে য্যান জ্যান্ত, খুব পেরেশান লাগলো তাকে। আমারে ডাইকা বললো, আমার ছেলেটার খুব বিপদ, তাকে একটু সাবধান কইরা দিয়েন। আপনার কথা সে শুনবে, আর কারো কথা শুনবে না, আপনি তারে একটু সাবধান করে দিয়েন।”

আগস্টের গোড়ায় সন্ধ্যা সাতটায় এই ঢাকা শহরে নিজ বাসায় বসে আমি টের পেলাম, আমার পিঠের ঠিক মাঝখানটা দিয়ে বরফগলা পানি চালান করে দিল কে যেন। “আ-আর কি বললো?”

“আর কি জানি কইলো…কি জানি কইলো…” দারিদ্রক্লিষ্ট মানুষটা মাথা নাড়ছে, মনে করার প্রবল চেষ্টায় যন্ত্রণার ছাপ তার মুখে।

এত লং টাইম ধৈর্য ধরে রাখার রেকর্ড আমার নাই। চেঁচিয়ে উঠলাম, “কি বলেছে বলে ফেলেন, ফর গডস সেক!”

আমার দিকে চমকে তাকালেন স্যার। চোখের দৃষ্টিতে বুঝলাম, চিনতে পারছেন না আমাকে। দুই চোখের দৃষ্টিতে অনিশ্চয়তা মেশানো আতঙ্ক। খানিকক্ষণ সেভাবেই আমার দিকে চেয়ে থাকার পর ধীরে ধীরে বললেন, “বলছে তুমি যেন আসল নকল বিচার করো।”

মানে কি এর? বহু কষ্টে নিজেকে শান্ত করে বললাম, “এর মানে?”

স্যারকে আরো বিভ্রান্ত মনে হলো। যেন নিজের মুখের কথা শুনে তিনি নিজেই অবাক হচ্ছেন। “বলছেন, তুমি যেন সবকিছুর আসল নকল বিচার করো।”

“কি!”

“আসল নকল বিচার করো। তুমি যেনো সবকিছুর আসল নকল বিচার করো।” স্যার অপ্রকৃতিস্থের মত ভাঙা রেকর্ড বাজিয়েই যাচ্ছেন।

যাদের এই অভিজ্ঞতা হয়নি, তারা বুঝতে পারবেন না এই রকম মুহূর্তে কেমন রাগ লাগে। ধরুন, আপনাকে কেউ একটা কথা বললো, আপনি বুঝলেন না, আপনি বুঝিয়ে বলার জন্য বললেন। তখন সে যদি আবার বার বার সেই বোধের অগম্য কথাটাই বলে যায়, তাহলে কিরকম মেজাজ খারাপ হয়, নিজে তার শিকার না হলে কখনো বুঝতে পারবেন না। আমি জানি স্যার অসুস্থ, জানি তার মাথার ঠিক নেই, তবু লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালাম সোফা ছেড়ে। সর্বশক্তিতে চেঁচিয়ে উঠলাম, “ধ্যাত মিয়া! পাগল ছাগল কোথাকার! এই সব বালছাল শোনানোর জন্য এখানে এসেছেন!” দম নেবার জন্য এক মুহূর্ত থামলাম, রাগ কমেনি তখনো। “সামাদ! এই সামাদ! এই লোকটাকে পাগলাগারদে রেখে আয়! এক্ষুণি!” শেষের কথাগুলো ঘরের দরজায় এসে দাঁড়ানো সামাদের জন্য।

ধাঁ করে ঘুরে দাঁড়িয়ে গটগট করে চলে যাচ্ছি, পেছনে শুনলাম খালেকুজ্জামান স্যার বলছেন, “বাবা, আসল নকল বিচার করবা। খুব জরুরি, বাবা, খুব জরুরি। তোমার সামনে বিরাট বিপদ, বাবা, বিরাট বিপদ!”

*

পরের দিনটা সারাদিন কোম্পানিতেই কাটালাম। সব ডায়রেক্টরদের সাথে কথা বললাম। ম্যানেজার আর সুপারভাইজরদের সাথে কথা বললাম। বিভিন্ন ফ্লোরে ফ্লোরে ঘুরে ঘুরে কাজ দেখলাম, যদিও একটা এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কোম্পানিতে কি কাজ হয় তা সম্বন্ধে আমার কোনো ধারণাই নেই। ডায়রেক্টরদের সবাই বুড়ো বুড়ো, বাপ- চাচার বয়সের, কিন্তু তাতে কি? এই কোম্পানির আটাত্তর ভাগ শেয়ার আমার বাপের উত্তরাধিকারসূত্রে আমার। বলতে গেলে এই কোম্পানির মালিকই আমি। কাজেই দামি স্যুট পরে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে গম্ভির মুখে কোম্পানির ভালো-মন্দ নিয়ে ডায়রেক্টরদের সাথে কথা বললাম, কয়েকটা যুগান্তকারি ডিসিশনে সম্মতি জানালাম, কয়েকজনের চাকরি নট করে দিলাম। একেবারে ব্যস্ত দিন যাকে বলে। অন্যদিনের মতো দুপুর দুটোয় ঘুম থেকে ওঠা জামশেদের কোনো চিহ্ন তাতে নেই।

সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে টাইয়ের নট ঢিলে করে ড্রয়িংরুমে বসে টিভির রিমোট টিপছি, আর চিন্তা করছি দু-হাজার সাল আসতে আসতে আমার বাড়িতে কেল টিভির মতো আরো কি কি আজব বস্তু এসে ঢুকবে, তখনই শিপলু হাজির। লাল-কালো চেকের একটা শার্ট গায়ে, অনেকটা ফ্ল্যানেলের মতো লাগছে, জিন্সের প্যান্ট, আর ঝকঝকে চশমার কাঁচে পুরনো শিপলু

“জামশেদ আলী খানসাহেব আজ কোম্পানিতে গিয়েছিলেন?” আমার দিকে আড়ষ্ট হাসি দিয়ে বললো শিপলু, যেন আসলে মনের মধ্যে অন্য কোনো চিন্তা চলছে ওর।

“হ্যা,” বললাম আমি, কথার ভঙ্গিতে জবাব দেবার ভাবের চাইতে প্রশ্নের ভাবটাই বেশি।

“দুপুরেই এসেছিলাম এখানে,” একটা রুমাল বের করে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললো শিপলু। “তোকে পেলাম না। আক্কাস চাচার কাছে শুনলাম কোম্পানিতে গেছিস।”

“ব্যাপার কি?” শিরদাঁড়া সোজা করে বসে বললাম আমি। “কোনো সমস্যা?”

“আগে বল, আইরিনের সাথে তোর সম্পর্ক কেমন যাচ্ছে?”

চোখ কুঁচকে ফেললাম আমি। “সেটা নিয়ে…”

“দরকার আছে, জামশেদ!” অধৈর্য ভঙ্গিতে বলে উঠলো শিপলু।

কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। “ওর সাথে সম্পর্ক বলতে গেলে নেই এখন।”

“কোনো কিছু নিয়ে ফাইট হয়েছে?”

“হ্যা।” ইতস্তত করে বলে ফেললাম আমি।

“কিরকম? খুব খারাপ?”

“তা বলতে পারিস।” অন্যদিকে চেয়ে বললাম আমি।

আমার দিকে খানিকক্ষণ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকার পর বাঁ পকেট থেকে মার্লবোরোর প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ঠোঁটে ঝোলালো শিপলু। পকেটে ফেরত গেল প্যাকেট। ডান পকেট থেকে জিপো লাইটার বের করে ক্লিং করে জ্বালিয়ে নিলো সিগারেট। জিপো লাইটার আবার ফেরত গেল যথাস্থানে। তারপর আয়েশ করে অতি ধীরে সিগারেটে গভির দুটো টান দিলো সে। ততক্ষণে অধৈর্যের চরম সীমায় চলে গেছি আমি, কিন্তু মুখে কিছু বললাম না। বিরাট কিছু বলার আগে শিপলুর পূর্বপ্রস্তুতি এটা, জানা আছে আমার। এখন যদি আমি আমার গান র‍্যাক থেকে রাইফেল বের করে ওকে গুলি করি তাহলেও বিড়ি ধরানো বাদ দিয়ে আমার সাথে কথা বলবে না ও।

“কালকে একটা কাজে শ্যালে বারে যেতে হয়েছিল,” কথা শুরু করলো শিপলু, কথার সাথে সাথে সিগারেটের ঘন ধোঁয়াও বেরোচ্ছে ওর মুখ থেকে। “এক ইনফর্মারের কাছ থেকে একটা স্টোরির ব্যাপারে গরম খবর পাবার কথা ছিল, তাই গেছিলাম। বসেছি এক কোণার অন্ধকার টেবিলে। খেয়াল করলাম, এক টেবিল দূরে বসেছে আইরিনের এক্স বয়ফ্রেন্ড রাশেদের ডানহাত বোমা মজিদ। পাঁড় মাতাল। সাথে সাঙ্গপাঙ্গ। বোমা মজিদের চেহারা কেমন, জানিসই তো। তেল চকচকে কালো চেহারা, মাথায় ন্যাড়া করার পর সদ্য গজানো চুল, ময়লা দাঁত, পরনে স্কিন টাইট জিন্স আর ঘামে ভেজা গেঞ্জি। মদের নেশায় ভুলভাল বকছিল সে। প্রথমে কান দেইনি, পরে খেয়াল করলাম, ব্যাটারা তোকে নিয়েই কথা বলছে।”

সিগারেটে দম দেবার জন্য থামলো শিপলু। আমি ঠোটে চিমটি কাটতে কাটতে চেয়ে আছি ওর দিকে। নিজের মুখ নিজে চেপে ধরার মত করে সিগারেট ধরা হাতটা মুখের ওপর রেখে লম্বা দুটো টান দিলো ও। সিগারেটের আগুনটা জ্বলজ্বল করছে বিপদসংকেতের মত। “যতদূর শুনে বুঝলাম তোকে হিট করার প্ল্যান করছে ওরা।”

আমার পক্ষে এ মুহূর্তে যা করা সবচেয়ে স্বাভাবিক তাই করলাম আমি-হো হো করে হেসে উঠলাম কর্কশ গলায়। ব্যাঙ্গের দৃষ্টিতে তাকালাম শিপলুর দিকে। “তাই? কবে? কোথায়? ওদের হাতে কি কি অস্ত্র দেখলি? দুয়েকটা কালাশনিকভ রাশিয়া থেকে আমদানি করতে ভোলেনি তো?”

শিপলু কিন্তু একটুও হাসছে না। “আমার মনে হয়, ব্যাপারটা আরেকটু সিরিয়াসলি নিলে ভালো করবি তুই।”

হাসি থামালাম আমিও। “দেখ শিপলু, বোমা মজিদকে তোর চাইতে ভালো চেনা আছে আমার। ও ব্যাটা যত গর্জায় তত বর্ষায় না। এরশাদের আমলে ক্যাম্পাসে দুই একটা ককটেল ফাটিয়ে যে নামটা পেয়েছে, সেটা ভাঙ্গিয়েই খাচ্ছে এখনো।”

“জানি, ওর সাথে তোর বেশি একটা ঝামেলা নেই। কিন্তু রাশেদের কমান্ড সে ফেলতে পারবে না।” শিপলু বললো।

“রাশেদের আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই …”

“রাশেদের সাথে কমদিনের ঝামেলা তোর, বল? স্কুলে পড়ার সময়ই নাকি ওর সাথে মারামারি করেছিস ডজনখানেক বার। তারপর ওর গার্লফ্রেন্ডও ছিনিয়ে নিলি! আর মাস তিনেক আগে আইরিনের জন্মদিনে কি কান্ডটা করেছিলি, মনে আছে নিশ্চয়ই?” ধোঁয়া ছেড়ে বললো শিপলু।

মনে না থাকার কোনো কারণ নেই। ডিস্কো চলার সময় আইরিনের সাথে নাচার জন্য পীড়াপীড়ি করছিল রাশেদ। আমি এগিয়ে গিয়ে বলেছিলাম, ও আর তোর গার্লফ্রেন্ড না, সরে যা। রাশেদ আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে বলেছিল, “আরে চিল ম্যান। রাগ হস কিল্লাইগা। তর জিনিস তো আমি কুনখানে লইয়া যাইতাছি না। জাস্ট পাঁচ মিনিট নাচুম। জানি, তর বাপে এক্সিডেন্টে ভর্তা হওনের পর থিকা…” কথা শেষ হবার আগেই এক ঘুষিতে ওর নাকটা থেঁতলে দিয়েছিলাম আমি।

“রাশেদ কিন্তু পাল্টা কিছু করেনি,” কথা বলে চলেছে শিপলু। “ভুলবি না, ব্যাটা কমসে কম তিনটা মার্ডারের সাথে জড়িত। রাগ পুষে রেখেছে নিশ্চয়ই। আইরিনের সাথে তোর রিসেন্ট ইনসিডেন্টের শোধ তুলবে এবার।”

“আইরিনের সাথে আমার কিছু হয়েছে, বুঝলি কিভাবে?” চোখ কুঁচকে বললাম আমি।

“বোমা মজিদের কথা শুনে, আবার কিভাবে?” সিগারেটের ছাই ঝাড়লো শিপলু। “টাল হয়ে অনেক কথাই বলছিলো ও, কিন্তু তার মধ্যেও যা বুঝলাম, আইরিন আর তোর মাঝে ফাইট হয়েছে, আইরিন ব্যাক টু রাশেদ, রাশেদ অ্যাংরি উইথ ইউ, রাশেদ ওয়ান্টস রিভেঞ্জ। কমদিনের রাগ না তোর ওপর। কে না জানে, রিভেঞ্জ ইজ অ্যা ডিশ বেস্ট সার্ভড কোল্ড।”

“রাশেদ কচুটা করবে আমার,” ঠান্ডা গলায় বললাম আমি। শিপলুর ওপর আমি রাগিনা কখনো, কিন্তু এ ব্যাটাও দেখছি আমাকে চটিয়ে দিচ্ছে।

“তোর মতো একই কথা ভেবেছিল উঠতি তরুণ ব্যবসায়ি আসগর আলীও। ব্যবসা নিয়ে টেক্কা দিতে গিয়েছিল রাশেদের সাথে। বেশি ড্যাম কেয়ার ছিলো। খেসারতও দিতে হয়েছিল দারুণ। তুরাগে লাশ ভেসে উঠেছিল। কোনো প্ৰমাণ নেই, কিন্তু সবাই জানে কাজটা রাশেদের।” শান্ত গলায়, বোঝানোর ভঙ্গিতে বললো শিপলু।

সবই জানি, আর শিপলুও যে সত্যিকারের বিপদের কথা বলছে সেটাও বুঝি, কিন্তু কেয়ার করতে ইচ্ছা হচ্ছে না আমার। সারা জীবন এসব ব্যাপারকে কখনো মাথায় আনিনি, আর এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামাবো? অসম্ভব। শিপলু এদিকে হাল ছাড়বে না, জানি। ওর কথা বিবেচনায় নিচ্ছি এমন একটা ভাব করে বললাম, “আমার ওপর হিট নেবার চেষ্টা করছে—মানেটা বুঝলাম না। কবে? কখন?”

আমার অভিনয়ে কাজ দিল। শেষ হয়ে আসা সিগারেটটায় কষে টান দিয়ে নড়েচড়ে বসলো শিপলু। “সেটা স্পেসিফিকলি বলতে পারছি না। আসগার আলীর ক্ষেত্রে দেখলে দেখবি, তাকে আগে তুলে নিয়ে গিয়েছিল রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে। সেবারে অন্য লোক দিয়ে কাজ সেরেছিল রাশেদ। কিন্তু এবার বোমা মজিদের হাতে কেস। মনে তো হয় পুরনো স্টাইলেই কাজ সারবে মজিদ। তোকে ফলো করবে, কোনো চিপা-চুপায় যাবার পরে সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে অ্যামবুশ।”

এই ঢাকা শহরে আমাকে অ্যামবুশ করবে বোমা মজিদের মত নেশাখোর? হাসি

আটকালাম কোনোমতে। সন্দেহ নেই তিলকে তাল বানাচ্ছে শিপলু। কিন্তু বেচারারই বা কি দোষ। সাংবাদিকদের মগজটাই এমন। দড়িকে সাপ ভাবে সব সময়। তাছাড়া সে তো আমার ভালোর জন্যই বলছে। টিটকিরি করলাম না সেজন্য। “তো এখন আমার করণীয় কি? পুলিশকে জানাবো?”

“পুলিশকে জানিয়েই বা করবি কি? জানি, পুলিশের ওপর অনেক প্রভাব তোদের ফ্যামিলির, কিন্তু সেম প্রভাব কিন্তু রাশেদের ফ্যামিলিরও আছে, ম্যান! আর পুলিশ টাকার দিওয়ানা। কয়েক লাখ পকেটে সেঁধোলেই তোর দিক ছেড়ে ঝুঁকবে রাশেদের দিকে।”

বলতে চাচ্ছিলাম, কোন থানার কোন ওসির সাথে আমার সম্পর্ক কেমন। বললাম না। এসব বকে যদি সুখ পায় শিপলু, পাক না। আমার বন্ধুদের মাঝে এই ছেলেটাকেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি আমি, মে বি এই কারণে যে সে অন্যদের মতো বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলে না। বাপ বেঁচে থাকতে ছিল কেরাণি, বাপের রেখে যাওয়া কোনো সম্পত্তিও পায়নি বেচারা। সম্পত্তি থাকলেই না পাবে! বাবা মারা যাওয়ার পরে শিপলুর ওপর টানটা আরো বেড়েছে আমার।

“তাহলে? পুলিশের ওপরও ভরসা করতে পারছি না, বোমা মজিদও আমাকে মারার জন্য মুখিয়ে আছে, তাহলে এখন আমি করবোটা কি?”

“আমার মনে হয়, কয়েকদিনের জন্য ঢাকার বাইরে থেকে বেড়িয়ে এলে ভালো করবি তুই।” শেষ হওয়া সিগারেটটা অ্যাশট্রেতে পিষে ফেলতে ফেলতে বললো শিপলু।

সাইকিয়াট্রিস্টের কথা মনে পড়ে গেল আমার। সে-ও আমাকে বলেছিল ঢাকার বাইরে ঘুরে আসতে। ব্যাটা আমাকে কেমন পাগলের মত ট্রিট করেছে সেটা মনে পড়তেই খাপ্পা হয়ে উঠলো মেজাজটা। “নো ওয়ে। আমি কোথাও যাচ্ছি না।”

“কেন?” অবাক হয়ে বললো শিপলু।

সাইকিয়াট্রিস্টের ব্যাপারটা শিপলুকে বলিনি। ওর জানার কোনো দরকার আছে বলেও আমার মনে হচ্ছে না। প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গিয়ে বললাম “এমনিই। ইচ্ছা করছে না। তাছাড়া কোম্পানি নিয়ে ব্যস্ত আছি এখন।” শেষের কথাটা যে ডাহা মিথ্যা, সেটা বলাই বাহুল্য।

“কিন্তু দেখ, ব্যাপারটা দরকারি।” পকেট থেকে আবার সিগারেটের প্যাকেট বের করতে করতে বললো শিপলু। “রাশেদ হচ্ছে একটা পাগল। নতুন কিছু নিয়ে ভয়ানক মেতে ওঠে, আবার পরে সেটা ভুলতেও সময় লাগে না। তোকে একেবারে জানে শেষ করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে এখন, আবার কয়েকটা দিন পেরোলেই দেখবি তোর ব্যাপারে বেমালুম ভুলে গেছে। ভেবে দেখ-স্কুলে ওকে অনেকবার পিটিয়েছিস তুই। ওর গার্লফ্রেন্ড ভাগিয়ে নিয়েছিস। আবার ঘুষি মেরে ওর নাক ভেঙেছিস। প্রত্যেকবারই কয়েকদিন খুব ফুঁসেছে তোর ওপর, শোধ নেবার উপায় খুঁজেছে, আবার মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে উৎসাহে ভাটা পড়তেও সময় – “

“তোর পয়েন্টটা কি, সেটা বল আগে।” হাত তুলে বললাম আমি।

“পয়েন্টটা হচ্ছে,” না-জ্বলানো নতুন সিগারেটটা ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলতে থাকলো শিপলু, “তুই কয়েকটা দিন বাইরে থেকে ঘুরে আয়, রাশেদের মাথাও ঠান্ডা হোক। আইরিনের সাথে বিয়ের তোড়জোড় ততদিনে শুরু করবে নির্ঘাত। আইরিনের বাপের সম্পদের ওপর ওর লোভটা তো কমদিনের না। তখন তোর ওপর শোধ নেবার পোকা ওর মাথা থেকে দূর হবে। নোবডি গেটস হার্ট, পুলিশও কোনো টাকা খাবার চান্স পাচ্ছে না, আইরিনের ঝামেলাও দূর হচ্ছে তোর ঘাড় থেকে। মেয়েটা তোর ঘাড়ে সিন্দবাদের ভুতের মতোই ঝুলে ছিলো, যদ্দূর জানি।”

“সো বেসিক্যালি তুই বলছিস, আমি রাশেদের মতো একটা গাজীপুরিয়া ছুঁচোর ভয়ে পালিয়ে থাকবো।” ধীরে ধীরে থেমে থেমে বললাম আমি।

“পাগলের কাছে থেকে দূরে থাকাটাকে পালানো বলে না। বুদ্ধিমান লোকে পাগলের কাছে থেকে দৌড় মেরে দূরে সরে যায়। সেটাকে কি পালানো বলা যায় নাকি সেটা তুই-ই ঠিক করবি।”

তোর সাথে যুক্তিতে পারবো না, বাপ-মনে মনে বললাম আমি। টিভির দিকে রিমোটটা তাক করে চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে বললাম, “দেখি। ভাবার সময় দে। ভেবে দেখি।”

স্বস্তির একটা নিশ্বাস ছাড়লো শিপলু। হাতের তালুতে আড়াল করে সিগারেট ধরাতে ধরাতে বললো, “তাছাড়া তোর একটা রেস্ট নেওয়াও হয়ে যাবে। এই সময় তোর একটা ভ্যাকেশন সত্যি বড্ড দরকার।” কয়েক মুহূর্ত কী যেন ভাবলো ও, তারপর বলেই বসলো, “আমাকেও এ সময় একটা কাজে ঢাকার বাইরে থাকতে হবে। প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশন।”

আমি শিপলুর সাথে বেশ কয়েকবার প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেশনে গিয়েছিলাম খুব আগ্রহের সাথেই, কিন্তু সে সবই বাবা মারা যাবার আগে। এখন ওসব নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। স্রেফ বলার জন্য বললাম, “তো, কেসটা কিসের?” আমার গলায় অন্যমনষ্ক ভঙ্গি, চোখ রঙ্গিন টিভিতে।

শিপলু কিন্তু খুব আগ্রহের সাথেই আমার দিকে ঝুঁকে এলো। কি মনে করে পকেটে হাত ঢোকালো আবার, বের করে আনলো মানিব্যাগটা। সেটা থেকে

বেরোলো একটা আঞ্চলিক পত্রিকার কাটিং। “এই যে দেখ। রংপুরের প্রত্যন্ত এক গ্রামে রহস্যময় জন্তুর আবির্ভাব। সেটা যে কি জানোয়ার, সেটা কেউ বলতে পারছে না। বেশ কয়েকটা গবাদিপশু মারা পড়েছে সেটার হাতে-আর সর্বশেষ, গত সপ্তাহে এক গ্রামবাসি। স্থানীয় পুলিশ কোনো মন্তব্য করেনি এ ব্যাপারে, তদন্ত নাকি চলছে। গ্রামবাসিদের বদ্ধমূর ধারণা, জিনিসটা একটা পিশাচ।”

আমি শিপলুর কথা শুনছিলাম, আবার শুনছিলামও না; কিন্তু শেষ কথাটা ঠিকই আটকে গেল আমার কানে। আর থাকতে পারলাম না। জোরে জোরে হেসে উঠে বললাম, “পিশাচ! ভালোই তো।”

“এক্সাক্টলি!” চটাশ করে দু’ আঙুলে তুড়ি বাজিয়ে বলে উঠলো শিপলু, চকচক করছে ওর দুই চোখ। “দ্যাটস দ্য পয়েন্ট! ক্ল্যাসিক প্যারানরমাল কেস! রহস্যময় প্রাণী! মনে আছে জামশেদ, যশোরের গ্রামটার ওই কেসটা, যেবার-”

“হুঁ, আছে,” তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম আমি, ওই ব্যাখ্যাহীন ঘটনার কথা আর ইয়াদ করতে চাচ্ছি না। “বাট, জাস্ট একটা লোকাল পেপারের খবরে এত মাতিস না। এমনও হতে পারে যে পুরো ব্যাপারটাই বোগাস। বানানো খবর। জাতীয় দৈনিকই যেখানে বানানো খবরে ভর্তি, সেখানে একটা আঞ্চলিক পেপার।”

“সেটা তো হতেই পারে,” পেপার কাটিংটা মানিব্যাগে ফেরত পাঠাতে পাঠাতে বললো শিপলু। “বাট ভুলবি না, এভাবেই আমি আমার বেশিরভাগ কেসের হদিস পাই। আর আসল ব্যাপার তো সেটা না। তুই নাহয় কেসের ছলেই আমার সাথে কদিন ঘুরে এলি, মনে কর!”

আমার বিরস বদন দেখে শিপলু বললো, “থাকার জায়গারও সমস্যা নেই। ওই গ্রামে ব্রিটিশদের বানানো একটা বাংলো আছে। কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা আছে আমার। যেতে চাইলেই জায়গা মিলে যাবে।”

হু-হা করে মাথা নাড়িয়ে প্রসঙ্গটা কাটিয়ে দিয়েছিলাম ওই সময়

অবশ্য আসল ঘটনাটা এড়াতে পারিনি এত সহজে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *