শ্বাপদ সনে – ১৭

অধ্যায় ১৭ – জামশেদের জবানবন্দি থেকে

প্রবল উত্তেজনার সময় মানুষ ব্যথা পায় না। আমিও পেলাম না।

শিপলুর দাটা বসে গেছে আমার কাঁধে-সেটা ঠিক কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাঁ হাতটা তুলতে পেরেছিলাম আমি, অনেকটা ঠেকিয়ে দিতে পেরেছি কোপের তীব্রতা।

আমার হাত খালি এখন। রাইফেল আর টর্চ-দুটোই ফেলে দিয়েছি। বামহাতে ঝটকা দিলাম একটা, কাঁধের ওপর থেকে সরিয়ে দিলাম শিপলুর দা ওয়ালা হাতটা। ভোঁতা একটা ব্যথা জানান দিল যে মাংসের ভেতর থেকে বেরিয়ে গেল দা-য়ের ফলাটা।

মাটিতে পড়া টর্চটার বাল্ব ভাঙেনি। একবার এদিকে আরেকবার ওদিকে গড়িয়ে নানান দিকে আলোর ঝলকানি ফেলছে ওটা।

শিপলুর মুখটা এখন একদম সামনে আমার। ডান হাতটা মুঠো পাকিয়ে গিয়েছিল আগেই, সরাসরি ওটাকে ছুঁড়ে দিলাম শিপলুর চোয়ালে।

শরীরে কম শক্তি রাখি না আমি-কিন্তু ড্রাগ আর মারের চোটে ঘুষিটা জোরালো হলো না তেমন। আর শিপলুর ওপরে শয়তান ভর করেছে, ঘুষিটা অনায়াসে হজম করে নিলো ও, মাথাটা ঝট করে ঘোরালো আমার দিকে। আগুনে দৃষ্টি লাল টকটকে দুচোখে। গলা দিয়ে বেরোচ্ছে জান্তব গরগর।

চোখের কোণা দিয়ে দেখলাম, দা’ ধরা হাতটা আবার ওপরে উঠে যাচ্ছে শিপলুর। আরেকটা কোপ খেলেই আমি শেষ। মরিয়া হয়ে ডান পা তুলে একটা লাথি কষালাম ডেভিল ওরশিপারের পেটে। ছিটকে মাটিতে পড়লো শিপলু, অনিচ্ছাকৃত উল্টো ডিগবাজিও খেল একটা। মাটিতে পড়া টর্চের দুলতে থাকা আলোয় দেখতে পেলাম শিপলুর হাত থেকে দাটা ছিটকে পড়েছে।

চার হাত-পা ছড়িয়ে মাটিতে উপুড় শিপলু। এই-ই সুযোগ। ধাঁ করে ঝুঁকলাম আমি, মাটিতে পড়ে থাকা রাইফেলের ব্যারেলের ডগার দিকটা ধরলাম, ওটা তুলে নিয়ে সোজা হলাম তারপর।

ফুট দশেক দূরে ছিটকে পড়া শিপলু যতক্ষণে সোজা হচ্ছে, ততক্ষণে আমি রাইফেলটা মুগুরের মত করে তুলে ধরেছি, কুঁদোর দিকটা রয়েছে ওপরে।

অবিশ্বাস্য দ্রুততায় খাড়া হলো শিপলু, খেপা ষাঁড়ের মতো কাঁধ নিচু করে ছোটা শুরু করলো আমার দিকে।

আমি তৈরিই ছিলাম। বেসবল হাঁকানোর মত করে রাইফেলের কুঁদোটা সরাসরি বসিয়ে দিলাম ওর মাথায়।

ভেবেছিলাম, একটা মারই যথেষ্ট হবে। কিন্তু শয়তানের শক্তিতেই হোক বা জখমি কাঁধওয়ালা আমার মারের দুর্বলতার জন্যই হোক, মারটার যেন কোনো প্রভাবই পড়লো না ওর ওপরে। মারের মোমেন্টামে ঝটকা দিয়ে মাথাটা ঘুরে গেল ওর-কিন্তু ওই পর্যন্তই। সুইংগিং ডোরের মত পাঁই করে ঘুরলো আবার ও আমার দিকে।

ওর মুখটার দিকে তাকিয়ে মুহূর্তের ভগ্নাংশের জন্য থমকে গেছিলাম আমি। ভুত-জিনের মত শয়তানেও বিশ্বাস নেই আমার, কিন্তু সত্যি বলছি, এক সেকেন্ডের জন্য আমার মনে হচ্ছিলো যার মুখোমুখি আমি হয়েছি সে খোদ শয়তান। রক্ত মাংসের মানুষ না।

আমার ঘোর কাটার আগেই পা বাড়িয়ে একটা লাথি মারলো শিপলু, রাইফেলটা উড়ে গেল আমার হাত থেকে। পরের লাথিটা পড়লো আমার পেটে। সব বাতাস বেরিয়ে গেল আমার বুক থেকে, “হুঁক’ করে একটা শব্দ করে কুঁজো হয়ে গেলাম আমি।

তিন নাম্বার লাথিটা পড়লো ঠিক আমার কানের ওপর। কাত হয়ে মাটিতে পড়ার সময়টাও পেলাম না আমি, চার নম্বর লাথিটা ছুঁড়ে দিলো আমাকে পেছনে। চিৎ হয়ে আছড়ে পড়লাম মাটিতে।

ভেজা, আঁষটে গন্ধওয়ালা কোনোকিছুর ওপর পড়েছি আমি। শেয়ালটার জমাট রক্ত! এমনিতেই চারদিকে আলো-আঁধারি, তার ওপরে আরো বেশি অন্ধকার দেখছি আমি চোখে, ঝিমঝিম করছে মাথাটা। ওঠার শক্তি নেই। কাঁধ ইতিমধ্যেই ভিজে গেছে রক্তে।

কোনোমতে মাথাটা একটু উঁচু করে দেখি, দাটা মাটি থেকে তুলে নিচ্ছে শিপলু। ও ঝুঁকতেই টর্চের আলোয় ঝিকিয়ে উঠলো ওর চশমা-কিন্তু শুধু একটা লেন্স। অন্যটা ভেঙে গেছে আমার রাইফেলের মারে।

ঝাপসা চোখে দেখছি, দাটা তুলে নিয়ে খাড়া হলো শিপলু। তারপর একপা একপা করে হেটে আসতে শুরু করলো এদিকে।

আমি মাটিতে হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে থাকতে চাই না। আমি চাই উঠে দাঁড়াতে, উন্মাদটার সাথে লড়াই করতে। কিন্তু শরীর কথা শুনছে না আমার। এলএসডি- ম্যানড্রেকের বিষক্রিয়ার পরে এমন প্রচন্ড মার আর রক্তক্ষরণ…

আরেক পা এগিয়ে এলো শিপলু। পড়ে থাকা টর্চের আলোটা পেছন থেকে পড়ছে ওর ওপর-মুখটা দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু ওর চোখগুলো জ্বলছে ফসফরাসের মত। এক চোখের চশমা ভাঙা। ওর মাথার ওপরে ওই দুটো কি? শিংয়ের মত?

শিউরে উঠলাম আমি। আমার মগজ বলছে এ-সবই হ্যালুসিনেশন, কিন্তু মন বলছে যে আজ স্বয়ং শয়তানের মুখোমুখি পড়ে গেছি আমি এই শয়তানের মন্দিরের ভেতরে।

আরেক পা এগিয়ে এলো সাক্ষাৎ শয়তান। মাথায় চোখা দুটো শিং। পেছনে সাপের মত পাক খাচ্ছে একটা লেজ! আবছাভাবে শুনতে পাচ্ছি, ওটার গলার গভির থেকে বেরিয়ে আসছে একটা হালকা গুনগুন শব্দ। ধীরে ধীরে বাড়ছে সেটা শয়তানটা এগিয়ে আসার সাথে সাথে।

যেন গুনগুনিয়ে গান গাইছে ওটা। কিন্তু আমি জানি ওটা গান না।

আমাকে বলি দেবার আগে প্রভু শয়তানের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা সঙ্গিত গাইছে শিপলু। আমার নাড়িভুড়ি শীতল হাতে খামচে ধরলো কে যেন।

আমার পায়ের কাছে এসে থামলো শয়তানটা। দুর্বোধ্য ভাষায় প্রার্থনা সঙ্গিত গাইছে সুর করে। দুই চোখ জ্বলছে লালচে ফসফরাসের মত আভা নিয়ে।

আমি স্রেফ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি।

আরো উঁচু থেকে উঁচু হচ্ছে ওটার গলা।

সেইসাথে ওপরের দিকে উঠে যাচ্ছে হাতদুটো। সে দুটোর মাঝে শক্ত করে ধরা ঝকঝকে দাটা। ধীরে ধীরে বাম হাতটা নামিয়ে আনলো শিপলু। এখন শুধু দা’ ধরা ডান-হাতটা ওঁচানো ওর।

সাথে সাথে মন্দিরের কালো ছাদ ফুঁড়ে নামলো চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বল একটা লালচে-সাদা আলোর রশ্নি, এসে ঠেকলো দাটার সাথে। শয়তান যেন সরাসরি নরকের আগুনের একটা স্রোত পাঠিয়ে দিয়েছে শিপলুর হাতে, মঞ্জুর করেছে তার প্ৰাৰ্থনা!

শোঁ শোঁ করে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে শিপলুকে ঘিরে। যেন একটা ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে রয়েছে ও, ঝড়টা পাক খাচ্ছে ওকে ঘিরেই। কালো কী যেন কয়েকটা ফট ফট করে ডানা ঝাপটে উড়ছে সেই বাতাসে, প্রদক্ষিণ করছে অন্ধকার জগতের রাজপুত্র আর্দশির শাপুর শিপলুকে। ঠিক চিনতে পারলাম না জিনিসগুলোকে। দাঁড়কাক, না হয় বাদুড়।

টের পাচ্ছি, আমার চারপাশ ঘিরে যেন খলখলিয়ে হাসছে শত শত অশরীরী কণ্ঠ। নরক থেকে শয়তানের সব চ্যালা যেন চলে এসেছে শিপলুকে উৎসাহ দিতে। আমার মাথাটা কাটার পরই মহা শক্তিধর একজন হিসেবে শিপলুকে ওদের মাঝে বরণ করে নেবে ওরা যেন।

একেবারে ওপরে উঠে গেছে শিপলুর দাটা—ওখানেই ওটাকে স্থির করে ধরে চড়া সুরে মন্ত্র পড়ছে ও। নরকের আগুনের স্তম্ভটা এসে ঠেকেছে সেটায় গায়ে। আর বুঝি বেশি বাকি নেই শয়তানের কাছে শক্তিভিক্ষা চাওয়া শেষ হতে।

আমার হাত-পা জমে আসছে। বুকের ভেতর দ্রিম দ্রিম করে পড়ছে হাতুড়ির বাড়ি। আমি ভয় পেয়েছি। কোনো সন্দেহ নেই আমি ভয় পেয়েছি। পরাজয়ের চূড়ান্ত দোরগোড়ায় আমি—এমন সময় হঠাৎ আমার মাথার ভেতরে কি যেন হয়ে গেল।

“শিপলু!” শরীরের সমস্ত শক্তিতে চেঁচিয়ে উঠলাম আমি।

শয়তান উপাসকের প্রার্থনা সঙ্গিত থেমে গেল সাথে সাথে। দাটা মাথার ওপরে তুলে জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে রইলো ও আমার দিকে। চোখা মাথাওয়ালা লেজটা সাপের মত মোচড় খাচ্ছে পেছনে।

“শয়তান বলতে কিছু নেই!” হিসহিসিয়ে চেঁচিয়ে উঠলাম আমি। প্রচন্ড রাগে কাঁপছে সারা শরীর। এতদিনের জমানো সব ক্রোধ যেন উগরে দিতে চাইছি একসাথে। “তোর করা সব ইনভেস্টিগেশনের মত শয়তানও মিথ্যা! বানোয়াট! মানুষই শয়তান হয় শিপলু-মানুষই!”

জানোয়ারের মত গর্জে উঠলে সে, দাঁতের ওপর থেকে সরে গেছে ঠোঁট। রক্ত পানি করা একটা হুংকার ছেড়েই দাটা নামিয়ে আনলো ও আমার ঘাড়ের ওপর।

মাথার ওপরে একটা হাত তুলে দিয়েছি আমি, আর ডান পাটা স্প্রিংয়ের মত ছুটে গেছে সামনে, সরাসরি শিপলুর হাটুতে।

একেবারে মোক্ষম মার। আমার ওপরে হুমড়ি খেয়ে পড়লো শিপলু-কয়েক ইঞ্চির জন্য মিস করেছে আমার ঘাড়টা।

আমার শিরায় শিরায় মোটা ধারায় বইছে অ্যাড্রেনালিন-ড্রাগের প্রভাব নেই হয়ে গেছে প্রচন্ড রাগের চোটে। শিপলু আমার গায়ের ওপরে পড়তে না পড়তেই এক ঝটকায় ছুঁড়ে ফেলে দিলাম ওকে চার হাত দূরে।

স্প্রিংয়ের মত লাফিয়ে সিধে হলাম পরের মুহূর্তেই। ডান-হাতটা দপদপাচ্ছে ব্যথায়। ওটা চোখের সামনে তুলতেই হার্টটা গলার কাছে চলে এলো আমার-তিনটে আঙুল নেই ওটাতে! আমার ডান-হাতের বুড়ো আঙুল, তর্জনি আর মধ্যমা স্রেফ নেই হয়ে গেছে শিপলুর দায়ের কোপে।

হাতটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে টের পেলাম আমার শরীরের সব রক্ত চড়চড়িয়ে মাথায় উঠে যাচ্ছে। দপদপ করছে মাথার প্রত্যেকটা ধমনি। একটা আগ্নেয়গিরিতে যেন পাল্টে গেছি আমি-ফেটে পড়ার জন্য তৈরি।

রাইফেলটা কাছেই পড়ে ছিল, উল্টো করে তুলে নিলাম ওটা-ব্যারেলের দিকটা ধরে। কাটা হাতের তোয়াক্কা করলাম না।

শয়তানের পুজারি শিপলু কেবল শিঙওয়ালা মাথাটা একটু তোলার চেষ্টা করছিল, হাতে দা ধরা। ডানপায়ে শরীরের সব ভর চাপিয়ে দিয়ে সমস্ত শক্তিতে রাইফেলের কুঁদোটা সরাসরি বসিয়ে দিলাম ওর চাঁদিতে।

পাকা নারিকেল ফাটার মত ফটাস করে শব্দ হলো একটা। মারের চোটে মাটিতে ফুটবলের মত ড্রপ করে আবার লাফিয়ে শিপলুর শয়তানি মাথাটা-আর তখনই পড়লো আমার পরের মার, সোজা মুখের ওপর।

থামলাম না। আবার মারলাম। আবার। আবার। আবার। আবার।

থামলাম যখন, তখন শিপলুর মাথাটা আর মাথা বলে চেনার জো নেই, রক্ত- মাংস-হাঁড়-মগজের একটা দলায় পাল্টে গেছে স্রেফ। না, কোনো শিং নেই ওর চাঁদির ওপরে, কোনো লেজ নেই পেছনে।

ঝোড়ো হাওয়া গায়েব। সেই সাথে বাদুড়-দাঁড়কাকের দলও। ছাদ ফুঁড়ে নামা নরকের আগুনের স্তম্ভটাও হাওয়া।

সব হ্যালুসিনেশন কেটে গেছে।

আসল নকল বিচার করতে শিখেছি আমি।

হাঁফাচ্ছি আমি। রাইফেলটা ফেললাম না হাত থেকে, হাঁটার সময় লাঠির কাজ করবে ওটা, ভর দিতে পারবো ওটার ওপরে। পকেট থেকে রুমালটা বের করে কাটা হাতের ওপর বাঁধলাম ধীরে-সুস্থে। কাঁধটা ব্যথা করছে বটে, তবে ও কিছু না, রক্ত পড়া থেমে যাবে। হয়তো।

আস্তে আস্তে হেটে গেলাম টর্চটার দিকে, মাটি থেকে তুলে নিলাম ওটা।

পেছনের দিকে আর একবারও তাকালাম না। সোজা হাটা দিলাম বাইরের অন্ধকারের দিকে। টর্চটা বগলে চেপে ধরা। রাইফেলটা ব্যবহার করছি হাটার লাঠির মত করে।

অলৌকিক শিপলুকে শেষ করে বেরিয়ে এলাম আমি, লৌকিক জামশেদ।

উপসংহার

জামশেদ থেমেছে। এতক্ষণ একদৃষ্টে তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন পুলিশ ইন্সপেক্টর বোরহান মওলা, এবারে মুখ তুলে তাকালেন এই ভিআইপি কেবিনের দরজার দিকে I নাম ধরে ডাকতেই ভেতরে চলে এল দরজার কাছে পাহারা দিতে থাকা দুই কন্সটেবল। “যাও, ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে এসো।” হুকুম দিলেন ইন্সপেক্টর বোরহান মওলা। “হ্যা, দু-জনই যাও।”

দুই কনস্টেবল গায়েব হওয়ার দশ সেকেন্ড পরে মুখ খুললেন বোরহান মওলা। “নদীর তীর পর্যন্ত পৌঁছলেন কি করে?”

হসপিটালের এই ভিআইপি কেবিনটা এয়ারকন্ডিশন্ড, তবু জামশেদের কপালে হালকা ঘাম। বালিশে হেলান দিয়ে আধশোয়া হয়ে আছে ও। ব্যান্ডেজ করা হাতটা কোল থেকে নামিয়ে রাখলো পাশে। “আন্দাজ করে অনেকক্ষণ হাঁটতে হাঁটতে গাছপালার ফাঁক দিয়ে আলো দেখতে পেলাম। শ্মশানে চিতা জ্বলছিল। নদীর তীরে জঙ্গলের ওধারে একটা শ্মশান ছিলো, আগে বলেছিলাম মনে হয়। ওখানে যারা ছিলো তাদেরকে মুখে কিছু বলতে হয়নি। আমাকে দেখেই যা বোঝার বুঝে নিয়েছে। জগদানন্দপুরের কান্ডকাহিনী ওদেরও খানিকটা জানা ছিলো। কিন্তু এ-দেশে প্রমাণ না থাকলে কিছুই হয় না।”

“প্রমাণ থাকলেও কিছু হয় না।” মুখের পেশি না কাঁপিয়ে বললেন ইন্সপেক্টর বোরহান মওলা।

জামশেদ মলিন একটা হাসি হেসে মুখ আরেক দিকে ফিরিয়ে নিলো। ওর জবানবন্দি দেবার ছিলো, ও দিয়েছে। এখন বাকি কাজ পুলিশের।

বোরহান মওলা তাকিয়ে আছেন। পুলিশকে মানুষ এত বোকা ভাবে কেন? জামশেদের বিশাল একটা গল্প বলেছে। ফ্যাক্টগুলো কিন্তু জগদানন্দপুরে ঘটে যাওয়া ঘটনার সম্পূর্ণ অন্য একটা ব্যাখ্যার দিকেও ইঙ্গিত করে। তিনি সেটা ধরতে পারছেন, যে কোনো ঘিলুওয়ালা পাবলিকই পারবে। তবে তিনি সামান্য ছাপোষা অফিসার মাত্র। এ-সব ব্যাপারে হাত দেবার ক্ষমতা তার নেই। জামশেদ টাকা নিয়ে সবকিছু কিনে নিতে পারবে দুই সেকেন্ডে

কিংবা হয়তো জামশেদের কথাই সত্য। সে আসলেই হয়তো এক নির্দোষ ভিক্টিম। শয়তানের উপাসক শিপলু আর প্রতিহিংসায় পাগল মফিজ দারোগার অসহায় শিকার সে। সেই রাজাকারের ছেলে নয়, যে রাজাকার জগদানন্দপুরকে পাল্টে দিয়েছিল নরকের ছোট্ট একটা টুকরোয়।

হয়তো।

ডাক্তার চলে এসেছে। ইন্সপেক্টর উঠে দাঁড়ালেন। “যাই, খানসাহেব।” বললেন বটে তিনি, কিন্তু জামশেদ কোনো সাড়া দিলো না। ও মিউট করা রঙ্গিন টিভিটার দিকে তাকিয়ে আছে।

রুম থেকে বেরোনোর সময় ইন্সপেক্টরের কানে পড়লো, গুনগুনিয়ে গাইছে জামশেদ। গানটা আগে শোনেননি তিনি, কিন্তু সুরটা যেন বহুদিনের চেনা। যেন আগেও শুনেছেন গানটা। কি এক ভয়ানক বিষাদ আর একাকীত্ব মিশে আছে তাতে।

“সয়না জ্বালা, তুমি বিনে
চইলাম আমি শ্বাপদ সনে।’

***

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *