সন্ধ্যা হয়ে এল , এবার সময় হল হিসাব নেবার । যে দেব্তারে গড়েছিলেম , দ্বারে যাঁদের পড়েছিলেম , আয়োজনটা করেছিলেম জীবন দিয়ে চরণ সেবার— তাঁদের মধ্যে র আজ সায়াহ্নে কে বা আছেন এবং কে নেই , কেই বা বাকি কেই বা ফাঁকি , ছুটি নেব সেইটে জেনেই । নাই বা জানলি হায় রে মূর্খ ! কী হবে তোর হিসাব সূক্ষ্ম ! সন্ধ্যা এল , দোকান তোলো , পারের নৌকা তৈরি হল— যত পার ততই ভোলো বিফল সুখের বিরাট দুঃখ । জীবনখানা খুললে তোমার শূন্য দেখি শেষের পাতা— কী হবে ভাই , হিসেব নিয়ে , তোমার নয়কো লাভের খাতা । আপনি আঁধার ডাকছে তোরে , ঢাকছে তোমায় দয়া ক'রে । তুমি তবে কেনই জ্বাল মিট্মিটে ওই দীপের আলো ! চক্ষু মুদে থাকাই ভালো শ্রান্ত , পথের প্রান্তে প'ড়ে । জানাজানির সময় গেছে , বোঝাপড়া কর্ রে বন্ধ । অন্ধকারের স্নিগ্ধ কোলে থাক্ রে হয়ে বধির অন্ধ । যদি তোমায় কেউ না রাখে , সবাই যদি ছেড়েই থাকে— জনশূন্য বিশাল ভবে একলা এসে দাঁড়াই তবে , তোমার বিশ্ব উদার রবে হাজার সুরে তোমায় ডাকে । আঁধার রাতে নির্নিমেষে দেখতে দেখতে যাবে দেখা , তুমি একা জগৎ মাঝে , প্রাণের মাঝে আরেক একা । ফুলের দিনে যে মঞ্জরী ফলের দিন যাক সে ঝরি । মরিস নে আর মিথ্যে ভেবে , বসন্তেরই অন্তে এবে যারা যারা বিদায় নেবে একে একে যাক রে সরি । হোক রে তিক্ত মধুর কণ্ঠ , হোক রে রিক্ত কল্পলতা— তোমার থাকুক পরিপূর্ণ একলা থাকার সার্থকতা ।