শেষ ভালো যার…
দেশভাগের পরের কথা। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তুমুল আকার ধারণ করেছে। হিন্দু-মুসলমানের রক্তে চারিদিকের মাটি লাল হয়ে গেছে। এসব দেখেশুনে নসীম আখতার তার বুড়ি মাকে বলল, ‘মা, চলো। এখান থেকে চলে যাই।’
নসীম আখতার দিল্লির এক উঠতি গণিকা। অল্প বয়স।
বুড়ি নায়িকা তার জরাগ্রস্ত গালে পানের টুকরো পুরে চিবোতে চিবোতে জিগ্যেস করল, ‘কোথায় যাব?’
‘পাকিস্তান!’ বলে নসীম তার ওস্তাদ খানসাহেব অচ্ছন খাঁয়ের দিকে তাকাল।
‘খাঁ সাহেব! আপনি কী বলেন?…এখানে থাকা তো আর নিরাপদ নয়।’
খাঁ সাহেব সম্মতিসূচক মাথা নাড়লেন, ‘ঠিকই বলছ, মা! বাঈজিকে রাজি করাও। সবাই মিলে এখান থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যাই।’
নসীম আখতার তার মাকে বোঝাল, ‘মা, এখান থেকে চলে যাই, চলো!… এ এখন হিন্দুদের জায়গা। তারা তো একজন মুসলমানকেও ছাড়বে না!’
বুড়ি নায়িকা উত্তর দিল, ‘তাতে কী হয়েছে!…আমাদের পেট তো হিন্দুদের জন্যই চলছে! তোমার উমেদারদের প্রায় সবাই তো হিন্দু! ক’টা মুসলমান আসে এখানে? মুসলমান দিয়ে কী হবে?’
‘এরকম বলতে নেই, মা! তারা আমাদেরই ধর্মের লোক!…কায়েদে-আজম সাহেব এত কষ্ট করে মুসলমানদের জন্য একটা আলাদা দেশ বানিয়ে দিয়েছেন!…আমাদের সবার এখন ওখানেই থাকা উচিত!’
একজন গায়ক তখন আফিমের নেশায় বুঁদ! সে নেশাতুর গলায় বলল, ‘ছোট বাঈ! আল্লাহ তোমার ভালো করুন!…দারুণ বলেছ। আমি তো এখনই পাকিস্তান যেতে রাজি। আমার কবর ওদেশে হলেই আমার আত্মা শান্তি পাবে।’
বাকি গায়ক-বাদকেরাও যেতে রাজি হয়ে গেল। শুধু বড় বাঈ দিল্লি ছাড়ার বিরুদ্ধে। যেহেতু কোঠা তারই হুকুমে চলত, তাই শেষমেশ সবাই চুপ করে গেল।
বড় বাঈ শেঠ গোবিন্দপ্রকাশের বাড়িতে লোক পাঠিয়ে তাকে নিমন্ত্রণ করে আনল। শেঠ আসতেই বাঈ তাকে বলল, ‘আমার মেয়ে খুব ভয় পাচ্ছে আজকাল, শেঠজি!…পাকিস্তান যাবে বলছে…আমি ওকে বোঝাচ্ছি যে পাকিস্তানে কিছুই নেই!…এখানে আপনার মতো দয়ালু মানুষেরা রয়েছেন!…ওখানে গিয়ে তো ঘুঁটে দিতে হবে!…আপনি আমাদের একটা উপকার করুন শেঠজি!’
শেঠ গোবিন্দপ্রকাশ অন্য কী একটা কথা ভাবছিল। হঠাৎ বড় বাঈয়ের ডাকে চমকে উঠল, ‘কী চাও বল।’
‘আমাদের কোঠার নীচে দু-তিনজন বন্দুকধারী সিপাই মোতায়েন করে দিন শেঠজি! মেয়েটার ভয় একটু কাটবে তাহলে!’
শেঠ বলল, ‘এ আর এমনকী কাজ! এখনই গিয়ে পুলিশ সুপারিনটেনডেন্টের সঙ্গে কথা বলছি। বিকেলের মধ্যেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে।’
বড় বাঈ তাকে অজস্র দুয়া দিল।
শেঠ বেরোতে বেরোতে বলল, ‘আজ রাতে নসীম আখতারের মুজরা শুনতে আসব।’
বড় বাঈ বিগলিত কণ্ঠে উত্তর দিল, ‘আসবেন বৈকি!…আপনারই তো বাড়ি!…নসীম তো আপনারই দাসী!…এখানেই খেয়ে যাবেন।’
‘না।…আজকাল আমি সংযম করছি।’
এই বলে ভুঁড়ির উপর হাত বোলাতে বোলাতে শেঠ চলে গেল।
সন্ধ্যেয় বড় বাঈ নতুন সুজনি পাতল, গদি আর বালিশে নতুন ঢাকা পরাল, একটু বেশি উজ্জ্বল বালব লাগাল আর চাকরকে পাঠাল শেঠের জন্য উৎকৃষ্ট সিগারেটের ডিব্বা আনতে।
একটু পরেই চাকর দৌড়তে দৌড়তে ফিরে এল। এসেই সে হাঁপাতে শুরু করল। তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোচ্ছিল না। কিছুক্ষণ বাদে নিজেকে সামলে নিয়ে সে বলল যে মোড়ের মাথায় পাঁচ-ছ’জন শিখ মিলে এক মুসলমান খাঁচা-বিক্রেতাকে তলোয়ার দিয়ে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে! তার চোখের সামনে! দেখেই সে কোনওরকমে ছুটে পালিয়ে এসেছে!
শুনে নসীম আখতার অজ্ঞান হয়ে গেল।
খানসাহেব অচ্ছন খাঁ বহুকষ্টে তার জ্ঞান ফেরালেন।
জ্ঞান আসার পর অনেকক্ষণ ধরে নসীম চুপচাপ শূন্যদৃষ্টিতে কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে রইল।
শেষে তার মা অধৈর্য হয়ে বলল, ‘খুনখারাপি তো হয়েই থাকে!…এর আগে খুন হত না নাকি?!’
মায়ের অনেক বোঝানোয় নসীম নিজেকে একটু সামলে নিল। মা আদর করে তাকে বলল, ‘যাও মা! সাজগোজ করে নাও। শেঠ সাহেব এই এলেন বলে!…’
সে অনিচ্ছাসত্ত্বেও কোনওরকমে উঠে সাজগোজ করে নিল। তারপর এসে সিংহাসনে বসে পড়ল।
তার মাথা ভারী হয়ে ছিল। মনে হচ্ছিল ওই নিহত খাঁচা-বিক্রেতার সমস্ত রক্ত যেন তার মাথার মধ্যে এসে জমেছে! বুক ধড়ফড় করছিল। জরি-চুমকি দেওয়া নাচের জোড় খুলে ফেলে তার সাদা শালওয়ার-কামিজ পরতে ইচ্ছা করছিল।
শেষে আর থাকতে না পেরে সে জোড়হাতে মাকে বলল, ‘মা! আমার কথা শোনো। চলো পালাই এখান থেকে। আমার মন বলছে আমাদের কিছু একটা বিপদ হতে চলেছে।’
মা বিরক্ত হয়ে উত্তর দিল, ‘আমাদের কী বিপদ হবে?…আমরা কার কোন ক্ষতিটা করেছি?!’
নসীম গম্ভীরমুখে বলল, ‘গরিব খাঁচাওয়ালাটা কার কোন ক্ষতি করেছিল? তাকে টুকরো টুকরো করে কেন কেটে ফেলা হল?…যারা ক্ষতি করে, তাদেরই বরং কিচ্ছু হয় না, মা!…যারা কিছু করে না, তাদেরই ধরে ধরে মারা হয়।’
‘তোমার মাথাটা গেছে!’
‘চারদিকে রক্তের বন্যা বইছে! এই অবস্থায় কারোর কি মাথা ঠিক থাকতে পারে!!’ বলে নসীম উঠে ব্যালকনিতে চলে গেল। সেখানে দাঁড়িয়ে সে নীচে বাজারের দিকে তাকিয়ে থাকল।
ল্যাম্পপোস্টের কাছে সে চারটে লোককে দেখতে পেল। লোকগুলোর হাতে বন্দুক। সে খাঁ সাহেবকে হাতের ইশারায় ডাকল। তারপর লোক চারটের দিকে দেখিয়ে বলল, ‘এরা বোধহয় শেঠজির সিপাই!…সকালে বলে গেলেন না পাঠিয়ে দেবেন?!’
খাঁ সাহেব মন দিয়ে বেশ খানিকক্ষণ ওদিকে তাকিয়ে তারপর বললেন, ‘না, এরা সিপাই নয়…সিপাইদের তো উর্দি পরার কথা!…আমার তো এদেরকে গুন্ডা বলে মনে হচ্ছে!’
নসীমের বুক কেঁপে উঠল, ‘গুন্ডা!?’
‘আল্লাহ জানেন…ঠিক করে বলতে পারব না…এই দেখো, ওরা এই কোঠার দিকেই আসছে!…নসীম, তুমি তাড়াতাড়ি ছাতে যাও। আমি আসছি। ব্যাপারটা ভালো লাগছে না।’
সে লুকিয়ে মাকে কিছু না বলে ছাতে চলে গেল।
একটু পরে খাঁ সাহেব চোখ পিটপিট করতে করতে উপরে এলেন।
নসীম ভীতস্বরে জিগ্যেস করল, ‘কী হয়েছে?’
‘যেটার ভয় পাচ্ছিলাম!…তোমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। বলছিল, শেঠ গোবিন্দপ্রকাশ নাকি গাড়ি পাঠিয়েছে তোমায় নিয়ে যেতে!…বাঈজি তো শুনে খুব খুশি!…বললেন, ”অসীম দয়া শেঠজির!…আমি দেখছি নসীম কোথায়…বোধহয় স্নান করতে গেছে…আপনারা দাঁড়ান, আমিও তৈরি হয়ে নিচ্ছি।”…একটা গুন্ডা বলল, ‘তোমার গিয়ে কী হবে!…শেঠজি কি তোমায় নিয়ে ধূপধুনো দেবেন!…তুমি চুপচাপ এখানে বস…আমরা খুঁজে নেব তোমার মেয়েকে!”…এটা শুনে আর ওই গুন্ডাগুলোর মেজাজ দেখেই আমি উপরে উঠে এলাম।’
নসীমের মাথা কাজ করছিল না। সে আর্তনাদ করে উঠল, ‘এবার কী হবে?’
খাঁ সাহেব মাথা চুলকে বললেন, ‘দাঁড়াও, আমায় ভাবতে দাও। এখান থেকে পালানোর একটা উপায় বার করি।’
‘মা?’
‘বাঈজির ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। আল্লাহ ওনার মালিক! আমাদের পালাতে হবে।’
উপরে একটা খাটিয়ার উপর দুটো চাদর পড়েছিল। খাঁ সাহেব সে দুটোকে নিয়ে গিঁট দিয়ে একটা বড় দড়ি বানালেন। তারপর একদিক একটা খুঁটি বেঁধে অন্য প্রান্তটা উল্টোদিকের গলির দিকে ঝুলিয়ে দিলেন। ওদিকে নীচে লন্ড্রির ছাত।
‘লন্ড্রির ছাতে যদি নেমে পড়তে পারি, তারপর সামনের রাস্তা মোটামুটি পরিষ্কার। লন্ড্রির ছাত থেকে সিঁড়ি ওপাশে নামছে। ওটা দিয়ে নামলে আস্তাবলে গিয়ে পড়ব। সেখানে একজন মুসলমান সইস আছে। তার টাঙ্গায় সোজা স্টেশন চলে যাব…’, খাঁ সাহেব উপায় বাতলালেন।
নসীম আখতার দারুণ বাহাদুরির সঙ্গে কাপড়ের দড়ি ধরে ধীরে ধীরে নীচে নেমে লাফ মেরে লন্ড্রির ছাতে পৌঁছে গেল। খাঁ সাহেবও দিব্যি নেমে পড়লেন। দুজন লন্ড্রির সিঁড়ি বেয়ে নেমে আস্তাবলে গিয়ে ঢুকল।
কাকতালীয়ভাবে সইস তখন টাঙ্গায় ঘোড়া জুতছিল। দুজন টাঙ্গায় উঠল আর স্টেশনের দিকে রওনা দিল।
রাস্তায় তারা দেখতে পেল মুসলমান ফৌজিদের ট্রাক। তারা বিপজ্জনক এলাকা থেকে মুসলমানদের তুলে নিয়ে সুরক্ষিত জায়গায় পৌঁছে দিচ্ছিল। আর যারা পাকিস্তান যেতে ইচ্ছুক, তাদেরকে স্পেশাল ট্রেনে চাপিয়ে দিচ্ছিল। টাঙ্গা থেকে নেমে দুজন গিয়ে ট্রাকে উঠল। কয়েক মিনিটের মধ্যেই তারা স্টেশন পৌঁছে গেল।
স্পেশাল ট্রেন দাঁড়িয়েই ছিল। তারা একটা ভালো জায়গা পেয়ে বসে পড়ল। যথাসময়ে অক্ষত অবস্থায় তারা লাহোর পৌঁছে গেল।
লাহোরে প্রায় মাসখানেক তারা একটা ক্যাম্পে থাকল। খুবই অসহায় অবস্থায়। তারপর তারা শহরে এল।
নসীম আখতারের কাছে প্রচুর গয়না ছিল, যেগুলো সে সেই রাতে শেঠ গোবিন্দপ্রকাশের মুজরা উপলক্ষে পরেছিল। সে সমস্ত গয়না খুলে খাঁ সাহেবের হাতে তুলে দিল।
ক্যাম্প থেকে শহরে এসে তারা কিছু গয়না বেচে একটা সস্তার হোটেলে থাকতে শুরু করল। সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির খোঁজ চলতে লাগল। অনেক খুঁজেটুজে শেষে তারা হীরামণ্ডিতে একটা বাড়ি পেল। বাড়িটা বেশ ভালো।
সেখানে থিতু হয়ে খাঁ সাহেব নসীমকে বললেন, ‘গদি, চাদর, শামিয়ানা এসব কিনে নিই চলো!…আর তুমি বিসমিল্লাহ করে মুজরা শুরু করে দাও।’
নসীম আখতার উত্তর দিল, ‘না খাঁ সাহেব!…আমার সে পাট চুকে গেছে…আমার তো এই বাড়িতেও থাকতে ইচ্ছা করছে না…কোনো ভদ্র পাড়ায় ছোট্ট একটা বাড়ি খুঁজুন না!…সেখানেই গিয়ে থাকি!…এখন থেকে আমি একটা শান্তির জীবন কাটাতে চাই।’
খাঁ সাহেব অবাক হয়ে গেলেন, ‘কী হয়েছে তোমার?’
‘কিছু না। শুধু এসব আর ভালো লাগছে না। অনীহা এসে গেছে। আগের জীবনটা থেকে আমি মুক্তি চাই। দুয়া করুন যেন নিজের প্রতিজ্ঞায় অটল থাকতে পারি!’
বলতে বলতে নসীমের চোখে জল এসে গেল।
খাঁ সাহেব অনেক বোঝালেন, অনেক লোভ দেখালেন। কিন্তু সে নিজের সিদ্ধান্ত থেকে একচুল নড়ল না।
একদিন সে খাঁ সাহেবকে পরিষ্কার বলল, সে বিয়ে করতে চায়। আর যদি কেউ তাকে গ্রহণ না করে, তাহলে সারাজীবন কুমারী থাকবে।
খাঁ সাহেব ভীষণ অবাক হলেন যে নসীম কী করে এতটা বদলে গেল!… ‘শুধু দাঙ্গার জন্য তো নয় নিশ্চয়ই! এমন কী হল যে নসীম মুজরা-টুজরা ছেড়ে বিয়ে করে গৃহিণী হতে চায়!…অনেক ভেবেও তিনি কোনো কূলকিনারা পেলেন না।
নসীম আখতারকে অনেক বুঝিয়ে শেষে ক্লান্ত হয়ে তিনি ভদ্র পাড়ায় তার জন্য বাড়ি খুঁজতে লাগলেন। একটা ছোট বাড়ি পাওয়া গেল। নসীম তাতে গিয়ে উঠল। আর খাঁ সাহেব একজন ধনী বাঈজিকে তালিম দিতে হীরামণ্ডিরই আরেকটা কোঠায় গিয়ে থাকতে শুরু করলেন।
নসীম আখতার কিছু বাসনকোসন, একটা তক্তপোশ আর বিছানাপত্র কিনল। একটা ছোট্ট ছেলেকে রাখল ফাইফর্মাশ খাটার জন্য। তার শান্তির জীবন শুরু হল।
সে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে আরম্ভ করল। রমজান আসতে প্রত্যেকদিন রোজাও রাখল। কোনো ব্যতিক্রম ঘটল না।
একদিন স্নান করতে করতে সে নিজের বেখেয়ালে সুরেলা গলায় গুনগুন করতে লাগল।
তার বাড়িতে এক মহিলার আসা-যাওয়া ছিল। নসীম জানত না যে সেই মহিলা আসলে দালাল। ভদ্র পাড়ায় ঘুরে ঘুরে সেখান থেকে মেয়েদের ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিয়ে গিয়ে সে বিক্রি করত। অনেক পাড়ার অনেক বাড়ির মেয়েরই সে সর্বনাশ করেছে। তাদের ইজ্জতের দামই তার আয়ের উৎস ছিল।
মহিলার নাম ছিল জনতে। সে যখন নসীমের সুরেলা গলা শুনল, মনে মনে লাফিয়ে উঠল। তার মাথায় এল যে এই মেয়েটার আগে-পরে কেউ নেই! এ পয়লা নম্বরের গণিকা হতে পারে! সে বিভিন্নভাবে নসীমকে লোভ দেখাতে শুরু করল। মিষ্টি মিষ্টি কথায় তাকে গলানোর চেষ্টা করল। কিন্তু নসীম বাগে এল না।
শেষে সে ক্লান্ত হয়ে একদিন নসীমকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘সুখী হও মা!…তোমার পরীক্ষা নিচ্ছিলাম। তুমি ষোলো আনা পাশ!’
নসীম আখতারের চোখ ভিজে উঠল। সে আবেগের বশে জনতেকে বলে দিল যে সে বিয়ে করতে চায়। কুমারী মেয়ের একা থাকা বিপজ্জনক!
জনতে বলল, ‘এ আর এমন কী চাহিদা!…আমি কত বিয়ে করালাম! সবাই ভীষণ সুখে আছে।…আল্লাহ চাইলে তোমার পছন্দমতো বরও ঠিক পাওয়া যাবে। তোমার কথায় উঠবে-বসবে।’
জনতে অনেকগুলো সম্বন্ধ আনল। কিন্তু কারোর সম্বন্ধেই বিশেষ প্রশংসা করল না। অবশেষে একদিন সে একটা সম্বন্ধ নিয়ে এল। ছেলে নাকি সোনার টুকরো! দেবদূতের মতো! প্রচুর সম্পত্তির মালিক। আর বয়সও বেশি না।
নসীম আখতার রাজি হয়ে গেল। বিয়ের তারিখ ঠিক হল। যথাসময়ে নসীমের বিয়ে হয়ে গেল।
নসীম আখতার খুব খুশি। তার মিঞা সত্যিই দেবদূত! ভদ্র, সভ্য আর নসীমের সব ইচ্ছা-অনুরোধ মেনে চলে।
একদিন সে স্নান করে বেরিয়ে শুনতে পেল, পাশের ঘরে কোনো মহিলা তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলছে। সে অবাক হয়ে গেল। দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি মেরে দেখল, তার স্বামী দুজন বয়স্ক গণিকার সঙ্গে বসে তার ব্যাপারে কথা বলছে। জনতেও বসে! সবাই মিলে নসীমের দরদাম স্থির করছে। তার মাথা গুলিয়ে গেল।
সে কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকল। চোখ দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা জল গড়াতে লাগল। কী করবে কিছু ভেবে উঠতে পারল না। অনেক কেঁদেও সে কোনো সমাধান খুঁজে পেল না।
শেষে সে উঠে পড়ল। চোখ মুছে তোরঙ্গ থেকে নাচের জোড় বার করে পরল। তারপর বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা গেল খানসাহেব অচ্ছন খাঁয়ের কাছে।…
মুজরার সঙ্গে সঙ্গে তার পেশাও শুরু হয়ে গেল…এক তীব্র প্রতিহিংসার সঙ্গে!…