৭
জালাল সাহেব অনেক চেষ্টা চরিত্র করে এমন কি বাড়ি-গাড়ি দেয়ার কথা বলেও জাকিয়ার বিয়ে পছন্দমতো ছেলের সঙ্গে দিতে পারলেন না। জাকিয়াকে দেখতে এসে সবাই মমতাজকে পছন্দ করে। একদিন স্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করার সময় শাফিয়া বেগম বললেন, আচ্ছা শিহাবের সঙ্গে দিলে কেমন হয়?
জালাল সাহেব বললেন, তা হলে তো খুব ভালো হয়। শিহাবের মতো ছেলে এ যুগে নেই বললেই চলে।
কিন্তু সে যদি রাজি না হয়? তা ছাড়া সে হয়তো ভাবতে পারে, জাকিয়ার সঙ্গে বিয়ে দেব বলে আমরা তাকে উচ্চ শিক্ষা দিয়েছি।
তা ভাবতে পারে; তবু চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি?
আমি কিন্তু তাকে মমতাজের জন্য ভেবেছিলাম।
তোমার ভাবনাটা অত্যন্ত সঠিক; কিন্তু আমি ভাবছি, মমতাজের জন্য অনেক উপযুক্ত পাত্র পাওয়া যাবে; কিন্তু যাকিয়ার জন্য এতদিন চেষ্টা করেও পাওয়া গেল না।
তোমার ভাবনাটাও সঠিক। চিন্তা করে দেখি কি করা যায়।
একটা কথা তোমাকে বলে রাখি, আমি কিন্তু আমাদের সব কিছু ওদের দু’বোনের নামে উইল করে রাখতে চাই।
আমার কোনো আপত্তি নেই। বরং এটা করে রাখাই উচিত বলে আমিও মনে করি।
মমতাজ বারান্দা দিয়ে যাওয়ার সময় মা-বাবাকে জাকিয়ার বিয়ের কথা বলাবলি করতে শুনে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে এতক্ষণ সব কথা শুনছিল। মায়ের কথা শুনে সেখান থেকে চলে আসার সময় ভাবল, যাক, আল্লাহ যা করে ভালই করে। আমাকে আর মা-বাবাকে শিহাবের সঙ্গে জাকিয়ার বিয়ে দেয়ার কথা বলতে হল না।
পরের দিন শিহাব ছোট বোন আতিয়ার টেলিগ্রাম পেল, “আম্মা খুব অসুস্থ। যত শীঘ্রী সম্ভব বাড়ি এস।”
টেলিগ্রাম পেয়ে শিহাব ফুপা-ফুপুকে মায়ের অসুখের কথা বলে সেই দিনই রওয়ানা দিল।
শাফিয়া বেগম তাকে বলে দিলেন, তোমার মা একটু সুস্থ হলে নিয়ে চলে এস। কিছুদিন পরপর তোমার মায়ের শুধু অসুখ করে, এখানে এনে ভালোমতো চিকিৎসা করাও।
বাড়িতে পৌঁছে শিহাব মায়ের অবস্থা দেখে খুব চিন্তিত হল। বড় ডাক্তার এনে চিকিৎসা করাতে লাগল।
কয়েকদিন পর লতিফা বানু একটু সুস্থ হলে শিহাব মাকে বলল, এবারে আমি তোমাকে ঢাকা নিয়ে গিয়ে আরো বড় ডাক্তার দিয়ে ভালোভাবে চিকিৎসা করাব। এবার থেকে আমার কাছে থাকবে। ফুপুও তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে।
কিন্তু এখানকার বাড়িঘর, জমি জায়গা দেখবে কে?
ওসব তোমাকে ভাবতে হবে না। তোমার মেয়ে-জামাই দেখবে। আমি তোমার কোনো কথাই শুনব না।
ঠিক আছে, নিয়ে যেতে চাচ্ছিস যাব; কিছু দিন থেকে না হয় আসব। ওসব কথা থাক। এবার আমি তোর বিয়ে দিতে চাই। শরীরের যা অবস্থা, কবে বলতে কবে আল্লাহ আমাকে দুনিয়া থেকে তুলে নেয় তার ঠিক আছে?
বিয়ের কথা শুনে শিহাবের মমতাজ ও জাকিয়ার কথা মনে পড়ল। বাড়িতে এসে মাকে নিয়ে এই কদিন খুব ব্যস্ত ছিল। তাদের কথা মনে পড়লেও পাত্তা দেয়নি। এখন মনে পড়তে চুপ করে রইল।
কিরে, বিয়ের কথা শুনে চুপসে গেলি যে? তোর কত বয়স হল খেয়াল করেছিস? এবার বিয়ে না করলে কবে করবি? তা ছাড়া আমি একা একা আর কতদিন থাকব? আমর কি বৌ দেখার সাধ নাই?
শিহাব বলল, আমি কি বলছি, বিয়ে করব না? তার আগে ফুপুর সাথে আলাপ করবে না? সে আমাদের জন্য এতকিছু করল, তাকে না জানিয়ে কিছু করলে খুব দুঃখ পাবে।
তুই কি মনে করিস, তার সঙ্গে আলাপ না করেই আমি তোর বিয়ে দেব?
না আম্মা, তা মনে করিনি। তাই তো তোমাকে ঢাকা নিয়ে যেতে চাই। চিকিৎসা হবে আর ফুপুর সঙ্গে আলাপটাও করে নেবে।
এমন সময় বাইরে কারো গলা শোনা গেল, শিহাব ভাই বাড়িতে আছেন নাকি? শিহাব মাকে বলল, কে ডাকছে দেখি। তারপর বাইরে এসে দেখল, করিম মোল্লার ছেলে জয়নুদ্দিন। সালাম দিয়ে বলল, কি খবর জয়নুদ্দিন? কেমন আছ?
জয়নুদ্দিন সালামের উত্তর দিয়ে বলল, ভালো আছি শিহাব ভাই। আব্বা আপনাকে আজ মাগরিবের নামাযের পর যেতে বলেছেন।
ঠিক আছে যাব। তুমি চাচাকে আমার সালাম দিও।
জয়নুদ্দিন চলে যাওয়ার পর শিহাব ফিরে এলে লতিফা বানু জিজ্ঞেস করলেন, কে ডাকছিল?
করিম মোল্লার ছেলে জয়নুদ্দিন। ওদের বাড়িতে সন্ধ্যের পর যাওয়ার জন্য বলতে এসেছিল।
কেন কিছু বলল?
না বলেনি। কাল মোল্লা চাচার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বলছিলেন, এন.জি.ও. রা গ্রামে দু’তিনটে স্কুল এবং একটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র খুলতে চায়। সে ব্যাপারে আমার সঙ্গে কিছু আলাপও করেছিলেন। আজ ওনার বাড়িতে চেয়ারম্যান মিটিং করবেন। মনে হয় সেই জন্য ডেকেছেন।
লতিফা বানু বললেন, হ্যাঁ, কথাটা আমার কানেও পড়েছে। তাদেরকে নিয়ে গ্রামে দু’টো দল হয়েছে। মোল্লারা ঐ সবের বিরুদ্ধে। তুই দু’দিনের জন্যে এসেছিস। ওসবের সঙ্গে জড়াবি না।
শিহাব বলল, তুমি কিছু ভেবো না আম্মা, আমি কোনো দলের পক্ষেই যাব না। তবে ইসলামের বিরুদ্ধে যে দল কিছু করবে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবই। এটা করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। তাতে যদি দলাদলি করতে গিয়ে জীবন দিতে হয়, তাও দেব। ধর্মের জন্য যদি তোমার ছেলের মৃত্যু হয়, তা হলে মা হিসাবে তোমার মর্যাদা আল্লাহপাকের কাছে অনেক বেড়ে যাবে।
ছেলের কথা শুনে লতিফা বানুর চোখে পানি এসে গেল। ভিজে গলায় বললেন, আয় বাবা আমার পাশে এসে বস।
শিহাব মায়ের পাশে বসে তার চোখের পানি দেখে বলল, তুমি কাঁদছ কেন আম্মা? আমার কথা শুনে মনে ব্যথা পেয়ে থাকলে মাফ করে দাও। তারপর মায়ের দু’পা জড়িয়ে ধরল।
লতিফা বানু চোখের পানি মুছে বললেন, না বাবা না, মনে ব্যথা পাব কেন? বরং আনন্দে ও গর্বে চোখে পানি এসে গেছে। তোর মতো ছেলে পেটে ধরেছি বলে আল্লাহ পাকের কাছে শুকরিয়া জানাচ্ছি। তাঁর দরবারে ফরিয়াদ করি, “তিনি যেন তোকে গাজী করে রেখে আজীবন ইসলামের খিদমত করার তওফিক দেন।”
শিহাব বলল, আমিন।
সেদিন মাগরিবের নামাযের পর শিহাব মায়ের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে করিম মোল্লার বাড়িতে রওয়ানা দিল। সেখানে পৌঁছে দেখল, নিজেদের গ্রামের লোকজন তো এসেছেই, তার উপর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও আশ-পাশের গ্রাম থেকেও সব শ্রেণীর লোকজন এসেছে। শিহাব সালাম দিয়ে মঞ্চের একপাশে বসে পড়ল।
কিছুক্ষণের মধ্যে চেয়ারম্যান সবাইকে চুপ করতে বলে বললেন, এন.জি.ও. নামে দেশী-বিদেশী অনেক সংস্থা সরকারের অনুমোদন নিয়ে দেশের সবখানে স্কুল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং বিভিন্ন প্রকল্প ও প্রতিষ্ঠান করতে চাচ্ছে। এই সব প্রতিষ্ঠানে গ্রামের অনেকের কর্মসংস্থান হবে। স্কুলের ছেলে-মেয়েদের বই, খাতা, পেন্সিল ও পোশাক-পরিচ্ছদ ফ্রি দেয়া হবে। আমাদের মধ্যে একশ্রেনীর ধর্মান্ধ লোক এসবের বিরোধীতা করছে। ফলে গ্রামে দলাদলি সৃষ্টি হয়েছে। এর একটা মিমাংসা করার জন্য আমি আপনাদেরকে এখানে আসতে বলেছি। যারা এসবের বিপক্ষে, শুধু তাদেরকে বলছি, কেন তারা বিরোধীতা করছেন তা সবাইকে বুঝিয়ে বলুন।
করিম মোল্লা এই গ্রামের অবস্থাপন্ন ও সম্ভ্রান্ত লোক। অত্যন্ত ধার্মিক ও পরোপকারী। এন.জি.ও.দের বিরুদ্ধে তিনি বেশি সোচ্চার। শিহাবকে ধার্মিক ও সৎ ছেলে হিসাবে জানেন। তাই কাল সকালে দেখা হতে এ ব্যাপারে আলাপ করেছিলেন। শিহাব এসবের বিরুদ্ধে জেনে তাকে ছেলের হাতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। চেয়ারম্যানের কথা শুনে তাকে কিছু বলার জন্য বললেন।
শিহাব দাঁড়িয়ে প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা ও রসুল (দঃ) এর উপর দরুদ পেশ করে সবাইয়ের উদ্দেশ্যে সালাম জানাল। তারপর বলল, চোয়ারম্যান সাহেব এন.জি.ও. অর্থাৎ দেশি-বিদেশী যে সব সংস্থার কর্মকাণ্ডের কথা বললেন, তা নিঃসন্দেহে গ্রামের দুঃস্থ ও গরিব মানুষের উপকার করবে। একদিকে যেমন অনেক বেকারের কর্মসংস্থান হবে, অপরদিকে তেমনি গরিব ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া হবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, সরকার যখন এইসব খাতে কোট কোটি টাকা ব্যয় করছে তখন এন.জি.ওরা আবার করছে কেন? ঐ সব সংস্থাদের কর্মকাণ্ডের কথা শুনে আমি খোঁজ খবর নিয়ে জেনেছি, এসবের পিছনে তাদের একটা বিরাট স্বার্থ রয়েছে। তাদের স্বার্থের কথা বলার আগে আমাদের জানা-অজানা অথবা ভুলে যাওয়া কিছু ইতিহাস বলছি। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে খৃষ্টান ইংরেজরা ভারতে আসে বাণিজ্য করার জন্য। তারপর ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে হতে সারাভারতের অধীশ্বর হয়ে প্রায় পৌনে দুইশত বছর রাজত্ব করেছে এবং আমাদের দেশের সম্পদ হাতিয়ে নিয়েছে। তারপর যখন এই দেশ ছেড়ে চলে গেল তখন মানুষের মধ্যে হিন্দু-মুসলমানের বীজ বপন করে দেশটাকে দু’ভাগ করে দেয়। ফলে সেই থেকে আজ পর্যন্ত কত লক্ষ লক্ষ মানুষ যে হত্যার স্বীকার হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে, তা আমরা সবাই জানি। বর্তমান বিশ্বের চতুর্দিকে দ্বন্দ, কলহ, রক্তপাত এবং যুদ্ধের কারণ অনুসন্ধান করলে দেখতে পাবেন, এর মূলে রয়েছে ইহুদী ও খৃষ্টানরা। ইহুদীরা ভিয়েতনামের যুদ্ধে ৭০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। ১৯৬৫ সালে ৬ ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তানের অতর্কিত আক্রমনের মূলে ছিল এই ইহুদী ও খৃষ্টানরা। পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী লিয়াকত আলি খাঁন ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউল কের হত্যার এবং সমগ্র বিশ্বের একটি ব্রেন জুলফিকার আলি ভুট্টো, যার দূরদর্শীতা ও চিন্তা ধারাকে দেখে আমেরিকা ও রাশিয়া কম্পবান, তাকেও অন্ধকার বন্দীখানায় প্রাণত্যাগ করতে বাধ্য করল এই ইহুদী ও খৃষ্টানরা। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে যেখানে কাশ্মিরীদের স্বাধীনতার মীমাংসা করা যায়, সেখানে বিগত ৪০ বছর ধরে বাধা সৃষ্টি করছে এই ইহুদী ও খৃষ্টানরা। আফগানিস্তানের জনসাধারণের উপর চরম সীমা লংঘন করছে এই ইহুদী ও খৃষ্টানরা। ইরাক ইরানের আট বছর যুদ্ধের মুল ষঢ়যন্ত্রকারী এরাই। ফিলিস্তিন জর্দান, লেবানন, সিরিয়া ও মিশরের সুয়েজখাল নিয়ে গন্ডগোলের মূলেও এরাই। মুসলিম জাহানের নয়নের মনি ও রাবেতায়ে আলম-আল-ইসলামীর মহাসচিব বাদশা ফায়সালের হত্যার মূলেও ইহুদী খৃষ্টানরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের আর এক জনপ্রিয় নেতা জিয়াউর রহমানের হত্যার পিছনে এদেরই কালো হাত ছিল। সমস্ত জাহানের প্রথম কেবলা ও নবী হযরত সোলায়মান (আঃ) এর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ আল-আকসায় আগুন লাগিয়েছে এই ইহুদীরাই। ভারতের মাটি মুসলমানদের জন্য খৈ ভাজা বালুর চাইতে গরম। সেখানে অযোদ্ধার বাবরী মসজিদ এবং মুর্শিদাবাদের কাঠরা মসজিদই শুধু নয়, বরং হাজার হাজার বহু পুরাতন জামে মসজিদগুলোকে ভেঙ্গে মন্দিরে পরিনত করা হচ্ছে। আর প্রতিদিন মুসলমানদের উপর চালাচ্ছে চরম নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ। এসবের পিছনে ইন্ধন যোগাচ্ছে এই ইহুদী ও খৃষ্টানরা। ১৯৮৭ সালে ভারতে কুরআন পড়া ও ছাপান এবং কুরআনের আইনকে বাতিল করতে হবে বলে কলকাতার হাইকোর্টে অভিযোগ তুলে মামলা দায়ের করেছিল একজন উগ্রপন্থি হিন্দু চান্দ মোহন চোপড়া। আর এই কাজের জন্য তাকে চল্লিশ লক্ষ টাকা দিয়েছিল ইহুদীরা। সালমান রুশদীকে দিয়ে যারা স্যাটানিক ভার্সেস লেখাল এবং বৃটেনের পেঙ্গুইন সংস্থা এই বই ছাপাল, আর বইখানা ব্যাপক প্রচার করল এবং যারা এই বই লেখার জন্য আট কোটি সত্তর লক্ষ টাকা সালমান রুশীদকে দিল, তারা সকলেই ইহুদী ও খৃষ্টান। বাটা স্যান্ডেলের তলদেশে আল্লাহর নামের নকশা অঙ্কিত করে মহান রাব্বুল আল আমিনের অবমাননা করার পিছনেও ইহুদী খৃষ্টানদের ষড়যন্ত্র ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত পর্য্যন্ত যে অরাজকতা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, বর্বরতা ও নাস্তিকতার প্লাবন বয়ে চলছে এবং দেশের আইন শৃঙ্খলার বিরুদ্ধে উচ্ছৃঙ্খল গণআদালতের নৈপথ্যের নায়কও এই ইহুদী ও খৃষ্টানরাই। এমন কি গণআদালত পর্যবেক্ষণ করার জন্য ১৯৯২ সালের ২৬ শে মার্চে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে মার্কিন এটনী নামে যার আগমন ঘটেছিল, তিনি একজন ইহুদী। [তার আসল নাম এটনীটমান টিকিটিং (ইনকিলাব ১১ এপিল ১৯৯২ )]
চেচনিয়া, বসনিয়া, হার্জেগভিনা ও আলজিরিয়ার মুসলমানদের উপর নীপিড়ন চলছে, তার পিছনেও এই ইহুদী ও নাসারাদের চক্রান্ত রয়েছে। তারাই আবার মানবতার বুলি আওড়িয়ে জগতের কাছে সুনাম অর্জন করছে।
এই ইহুদীদের চরিত্র এত জঘন্য যে, দেশবাসীর নিকট থেকে প্রচুর পরিমাণে ধনৰ্ম্মপদ উপার্জনের জন্য আল্লাহর কেতাব তৌরাতকে (যা মূসা নবী (আঃ) এর উ. নাজিল হয়েছিল) নিজ হাতে রদ বদল করে বলতে থাকে- “ইহাই আল্লাহর কেতাব।” আল্লাহর বহু সুখাদ্যকে ইহুদীরা ইচ্ছাকৃতভাবে হারাম করে দেয়। মা- বেটি-বোনের মধ্যে এরা কোনো পার্থক্য না করে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়। কয়েক হাজার নবীকে এরাই কতল করেছিল; আর খৃষ্টানরাও ইঞ্জিল কেতাবকে বহু রদ- বদল করেছে। এরা হযরত ঈসা (আঃ) কে আল্লাহর বেটা বলে। (নাউজুবিকা মিন জালেক)। অথচ ঈসা (আঃ) বলেছেন, আমি আল্লাহর বান্দা ও নবী।
বদর, ওহুদ, খন্দক, তাবুক ও খয়বরের যুদ্ধের মূলে ছিল এই ইহুদী ও খৃষ্টানরা। বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর উপর যখন কুরআন নাজিল হচ্ছিল তখন তাদেরকে ঈমান আনার জন্য আহ্বান করলে তখন তারা প্রকাশ্যে বলল, “এতো সেই জীবরীল যে চিরদিন আমাদের বিরুদ্ধে ওহি বহন করে এনেছে? কেমন করে আমরা সেই জীবরীলের আনিত ওহির উপর ঈমান আনব? এরা নবী (দঃ) কে অপমান করার জন্য দেশের একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত জ্ঞানী লোকদের অনুসন্ধান করে তাদের কাছ থেকে তৌরাত ও ইঞ্জিলের জটিল তথ্য জেনে এসে নবী (দঃ) কে প্রশ্ন করত এবং ইসলাম প্রচারের কাজ চিরতরে বন্ধ করে দেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকত। এদের ষড়যন্ত্রকে দমন করার জন্য তাদেরকে ধমক দিয়ে আল্লাহপাক আয়াত নাজিল করলেন-”তোমরা বিশ্বনবীকে অহেতুক জটিল প্রশ্নাবলী দ্বারা বিরক্ত করে অপমান করার চেষ্টা করো না। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐ সমস্ত প্রশ্নাবলীর জবাব প্রদান করা হলে, পরিনামে তোমরাই অপমানিত ও কঠিন অসুবিধায় পড়বে।” আল্লাহর এই কঠোর বাণী অবতীর্ণ হওয়ার পরও তারা নিজেদের বদস্বভাব ছাড়তে পারেনি। কুরআন মজিদে ইহুদীদের চরম বদস্বভাবের সমস্ত গোপন কথা প্রকাশ করে দেয়া হয়েছে। সেই সমস্ত পড়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মুসলমানদের চরম ক্ষতিসাধনে লিপ্ত হয়। নবী (দঃ) এর তিরোধানের পর হাজার হাজার ইহুদী ও খৃষ্টানরা গোপনে পরামর্শ করে কুরআনকে ধ্বংস করার জন্য কয়েক লক্ষ কুরআন জ্বালিয়ে দেয় এবং কয়েক লক্ষ কুরআনের হাফেজকে হত্যা করে। কোনো কিছুতেই তারা যখন সফলকাম হতে পারল না তখন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (দঃ) এর লাশ চুরি করে খন্ড খন্ড করে কেটে আগুনে পুড়িয়ে মনের বিদগ্ধ আগুন কিছুটা নিরাময় করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ইহুদীরা এরকম ষড়যন্ত যে করবে, তা মহান আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টির আগেই জানতেন। তাই তিনি নবী পাক (দঃ)-এর জীবদ্দশায় এবং মৃত্যুর পরও তাঁকে রক্ষা করবেন বলে কুরআনে আয়াত্ নাজিল করলেন- “আর আল্লাহ তা’য়ালা আপনাকে মানুষ (অর্থাৎ কাফের ) হইতে সংরক্ষিত রাখিবেন; নিশ্চয় আল্লাহ এই কাফেরদিগকে পথ (অর্থাৎ আপনাকে হত্যা করার সুযোগ) দিবেন না।” [সূরা মায়েদা, পারা -৬, ৬৭ নং আয়াতের শেষের অংশ] ইহুদী ও খৃষ্টানরা যে ইসলামের জন্মলগ্ন থেকে দুশমনী করছে, তার প্রমাণ ইতিহাসের পাতায় পাতায় রয়েছে। সেসবের মধ্যে একটা ঘটনা বলছি শুনুন, বিশ্বনবী (দঃ) এর তিরোধানের পর ৫৫৫ হিজরী সালের ঘটনা। তখন বাগদাদের খলিফা অলিয়ে কামেল ও ন্যায়পরায়ন নূরুদ্দিন। তিনি এক রাতে তাহাজ্জুদের নামায পড়ে ঘুমিয়ে স্বপ্নে দেখলেন, আমাদের পেয়ারা নবী (দঃ) তিন জন সুফি পোশাক পরিহিত লোককে সঙ্গে নিয়ে সামনে এসে তাদেরকে দেখিয়ে বলছেন, “হে নূরুদ্দিন, এই তিনজন জালিমের হাত থেকে আমাকে রক্ষা কর। এদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও।”
খলিফা নূরুদ্দিন স্বপ্ন দেখে চমকে উঠলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভেঙ্গে গেল। তিনি খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন। ভাবলেন, নবী (দঃ) মদিনা মোনাওরায় শায়িত রয়েছেন। এই তিনজন লোক কিভাবে ওনার উপর জুলুম করতে পারেন? ভেবে কিছু ঠিক করতে না পেরে গোসল ও অযু করে দু’রাকায়াত নফল নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। ঘুমিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার ঐ একই স্বপ্ন দেখলেন। এবারেও চমকে উঠে ঘুম ভেঙ্গে গেল! উঠে অনেক চিন্তা-ভাবনা করে কিছু ঠিক করতে না পেরে আবার গোসল ও অযু করে দু’রাকায়াত নফল নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। এবারেও একই স্বপ্ন দেখলেন। তৃতীয়বার দেখার পর খলিফা আর স্থির থাকতে পারলেন না। আতঙ্কিত হয়ে ভাবলেন, তা হলে কী রওজা মোবারকের উপর জুলুম হচ্ছে? তাড়াতাড়ি উজির জালালুদ্দিন মৌগুলীকে খবর দিয়ে আনিয়ে স্বপ্ন বৃত্তান্ত খুলে বললেন।
উজির বললেন, যে তিনজন লোককে নবী (দঃ) আপনাকে দেখিয়েছেন নিশ্চয় তারা মাজার শরীফে কোনো কুকর্মে লিপ্ত আছে। অতি শিঘ্রী আপনি মদিনা গিয়ে এর প্রতিকার করুন।
কথাটা খলিফার মনঃপুত হল। তৎক্ষণাৎ তিনি সিপাহশালারকে হুকুম করলেন তৈরি হতে। সিপাহশালার ষোল হাজার দ্রুতগামী অশ্বারোহী সৈন্য নিয়ে মদিনাভিমুখে রওয়ানা হলেন।
মদিনায় পৌঁছে সেখানকার শাসনকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে মদিনা ঘেরাও করে ফেললেন। তারপর কড়া নির্দেশ জারী করলেন, বাহির থেকে লোকজন মদিনায় প্রবেশ করলেও মদীনা থেকে একটা প্রাণীও যেন বাইরে যেতে না পারে যতক্ষণ পর্যন্ত না খলিফা নূরুদ্দিনের দ্বিতীয় আদেশ জারী করা না হয়। তারপর ঘোষণা করলেন, আমি সমস্ত মদিনাবাসীকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে চাই। আমার অভিলাষ, কেউ যেন এই দাওয়াত থেকে বঞ্চিত না হয়।
প্রায় পনের দিন মদিনাবাসীকে খলিফা খাওয়ালেন; কিন্তু যে তিনজন লোককে নবী (দঃ) তাকে দেখিয়েছিলেন, তাদেরকে দেখতে পেলেন না।
তিনি লোকজনদের জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা কি সবাই এসেছেন, না কেউ কেউ আসেননি?
কয়েকজন লোক বলল, মদীনার প্রায় সবাই এসেছে; শুধু মাত্র তিনজন লোক আসেনি?
খলিফা জিজ্ঞেস করলেন, কেন তারা আসেনি?
ওনারা খুব সুফি লোক। সব সময় ইবাদৎ বন্দেগীর মধ্যে মশগুল আছেন।
খলিফার মুখে মৃদু হাসি ফুঠে উঠে মিলিয় গেল। বললেন, আমাদেরকে তাদের কাছে নিয়ে চল। তারপর কয়েকজন সিপাহী নিয়ে রওয়ানা দিলেন। লোকগুলো খলিফা ও তাঁর লোকজনেদের নিয়ে একটা তাঁবুর কাছে গিয়ে বলল, এখানে ওনারা আছেন।
তাঁবুর দরজার বাইরে একজন দারোয়ানকে দেখে খলিফা বললেন, ভিতরে যারা আছে, তাদেরকে ডেকে নিয়ে এস।
দারোয়ান বলল, ওনারা নামায, জিকীর ও কুরআন তেলাওয়াতে মশগুল আছেন, ডাকা নিষেধ।
যারা খলিফাকে নিয়ে এসেছে তারাও বলে উঠল, ওনারা বের হন না। সব সময় ইবাদত বন্দেগী করেন। শুধু দিনে একসময় কিছুক্ষণের জন্য বাইরে এসে গরিবদের অন্ন-বস্ত্র ও আর্থিক সাহায্য করেন। ওনাদের সাহায্যে বহু গরিব লোকের জিবীকা চলছে।
খলিফা তাদের কথায় কান না দিয়ে সিপাহীদের নিয়ে ভিতরে ঢুকে স্বপ্নে দেখা সেই তিনজন লোককে দেখতে পেলেন। তাদের একজন নামাযরত, একজন তসবীহ পড়ছে আর একজন কুরআন তেলাওয়াত করছে।
খলিফা তাদেরকে বন্দি করতে বলে ঘরটা সার্চ করতে হুকুম দিলেন। সিপাহীরা তাদেরকে বন্দী করে সার্চ করতে গিয়ে যে জায়নামায বিছিয়ে তারা ইবাদৎ করছিল, সেটা উঠাতে দেখতে পেলেন, একটা সুড়ঙ্গ নবীজী (দঃ) এর রওজা মোবারকের দিকে গেছে। খলিফা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে খুব নরম মেজাজে তাদের পরিচয় জানতে চাইলেন।
তারা প্রথমে পরিচয় দিতে অস্বীকার করলেও শেষে বাধ্য হয়ে বলল, তারা সুদুর ইউরোপের ইহুদী। তাদের সংস্থা তাদেরকে প্রচুর ধণ দৌলত দিয়ে হযরত মুহাম্মদ (দঃ) লাশ এর চুরি করে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিন বছর আগে পাঠিয়েছে। আমরা আজ তিন বছর এখানে অবস্থান করে দিনে লোক দেখানো ইবাদত করি ও গরিবদের প্রচুর দান খয়রাত করে সবার প্রিয় পাত্র হয়ে উঠি। আর রাতে সুড়ঙ্গ কেটে নবী (দঃ) এর লাশের দিকে এগোতে থাকি। আমাদের একজন মাটি পাথর রাতের অন্ধকারে মদীনার বাইরে ফেলে দিয়ে আসে। এভাবে আমরা যখন লাশের কাছাকাছি পৌঁছেছি তখন আমাদের মনে হল, সারা পৃথিবী ভীষণ কাঁপছে, আমরা বুঝি সুড়ঙ্গের ভিতরেই সমাধিস্ত হয়ে পড়ব। আমরা ভীত হয়ে সেই থেকে অপেক্ষা করে চিন্তা করছি কি ভাবে কি করব। তারপরের দিনই আপনি এসে মদিনা অবরোধ করেন। তাদের কথা শুনে খলিফা প্রকাশ্যে লক্ষ লক্ষ লোকের সামনে তাদেরকে হত্যা করলেন। তারপর খলিফা নূরুদ্দিন বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে রওজা মোবারকের চতুপার্শ্বে মোটা মোটা লোহার রডসহ এক হাজাব মন সীসা গালিয়ে ১৩০ হাত নিচ থেকে অত্যন্ত মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করে দেন। যাতে করে ভবিষ্যতে আর কোনো দুশমন যেন রসুল (দঃ) এর লাশ চুরি করার সুযোগ না পায়।
এই পর্যন্ত বলে শিহাব বলল, এবার আপনারা চিন্তা করুন, ইহুদী ও খৃষ্টানরা কিভাবে গরিবদের সাহায্য করে মুসলমানদের সঙ্গে বেঈমানী করছে। অনুরূপভাবে আমাদের দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোর গরিবদের সাহায্যের নাম করে অল্প শিক্ষিত মুসলমানদের মন জয করছে। আর সেই সাথে এমন শিক্ষা ব্যবস্থা ও আইন কানুন তারা মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছে, যার ফলে তারা না জেনে না বুঝে তাদেরকে গরিবের বন্ধু বা মা-বাবা মনে করে তাদের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। এ ব্যাপারে যদি ইসলাম দরদীরা হস্তক্ষেপ না করে, তা হলে এদেশের মুসলমানরা যে ক্রমশঃ ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্মাবলম্বী হয়ে পড়বে একথা একশভাগ সত্যি। মোল্লা, মৌলভী ও আলেমরা ইহুদী ও খৃষ্টানদের আসল চেহারা চিনে। তাই তারা এদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে। একটা কথা আপনাদের সকলের জানা উচিত এবং বিশ্বাস করা উচিত, ইহুদী খৃষ্টানরা আমাদের চির শত্রু। তারা যদি নিঃস্বার্থভাবে মানুষের উপকার করতে চায়, তা হলে আজ বসনিয়া, হার্জেগভিনা, কাশ্মির, ফিলিস্তিন, লেবানন, আলজেরিয়া ও আরো অনেক দেশের মুসলমানদের উপর ইহুদী ও খৃষ্টান শাসকরা ঐ সব দেশের শাসকদের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে মুসলমানদের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্মম অত্যাচার চালাত না। দুশমনকে যারা বন্ধু মনে করে তারা নির্বোধ। আল্লাহ কুরআনপাকে বলিয়াছেন, “হে ঈমানদারগণ, তোমরা ইহুদী ও নাসারাদেরকে (খৃষ্টানদেরকে) বন্ধুরূপে গ্রহণ করিও না। তাহারা পরস্পর বন্ধু, আর যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্য হইতে তাহাদের সহিত বন্ধুত্ব করিবে; নিশ্চয় সে তাহাদেরই মধ্যে গণ্য হইবে ও নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা সে সমস্ত লোককে সুবুদ্ধিদান করেন না, যাহারা নিজেদের অনিষ্ট করিতেছে।” [সূরা মায়েদা, আয়াত-৫০, পারা-৬]
আমি আর বেশি কিছু বলতে চাই না। আপনারা আমার কথাগুলো চিন্তা করে দেখুন। বিভিন্ন পত্র পত্রিকা পড়ে দেখুন, যে সব যায়গায় সাহায্যের নামে এইসব সংস্থা গড়ে উঠেছে, সে সব জায়গায় মুসলমান নারীদের সম্ভ্রম নষ্ট হচ্ছে। পর্দানসীন মেয়েদের চাকরির লোভ দেখিয়ে বেপর্দা করছে। স্বামী স্ত্রীদের মধ্যে কলহের সৃষ্টি করছে। অনেক নারী পুরুষ তাদের প্রলোভনে পড়ে ইসলাম ধর্মকে ঘৃণা করছে। অর্থাৎ মুরতাদ ও মুনাফেক হয়ে যাচ্ছে। আর বেশি কিছু না বলে এখানেই আমার বক্তব্য শেষ করছি। তারপর শিহাব সালাম জানিয়ে বসে পড়ল।
শিহাব বসে পড়ার পর চারদিকে গুঞ্জন উঠল।
চেয়ারম্যান সাহেব সবাইকে চুপ করতে বলে বললেন, আপনারা আর কেউ পক্ষে বা বিপক্ষে বলতে চাইলে বলতে পারেন।
কেউ কিছু বলার আগে করিম মোল্লাহ বললেন, শিহাব বাবাজী যা কিছু বললেন, এরপর আমাদের আর কোনো কিছু বলার আছে বলে আমি মনে করি না। আমরা যা কিছু বলি বা করি না কেন, তার আগে সে সব ইসলামের আইনের কষ্ঠি পাথরে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যেগুলো ইসলামের পরিপন্থি তা বাদ দিতে হবে আর যেগুলো তা নয়, তা গ্রহণ করতে আমাদের কোনো বাধা নেই।
চেয়ারম্যান সাহেব শিক্ষিত ও ধার্মিক লোক। করিম মোল্লাহ থেমে যাওয়ার পর বললেন, এই সব সংস্থাদের কাজ কর্ম আমি ভালো মনে করেছিলাম; কিন্তু শিহাব আমার সেই ভুল ভাঙ্গিয়ে দিয়েছে। আমি শিহাবের ও করিম মোল্লাহর কথা সমর্থন করছি। আশা করি, আপনারাও আপনাদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আমি একটা প্রস্তাব দিচ্ছি, আমরা সবাই মিলে নিজেদের গ্রামে এন.জি.ও. দের মতো একটা প্রতিষ্ঠান করে সমাজের উপকার করতে পারি। আর এটা করলে দেশের যেমন উন্নতি হবে, তেমনি পরকালেও আল্লাহ আমাদেরকে পুরস্কৃত করবেন।
সমস্ত লোকজন সম্বস্বরে বলে উঠল, আমরা আপনার প্রস্তাবে রাজি।
চেয়ারম্যান সাহেব আলহামদুলিল্লাহ বলে বললেন, তা হলে আমরা আগামী মাসে এই দিনে আবার এখানে জমায়েত হয়ে একটা সংগঠন তৈরি করব এবং সেই সংগঠন মারফত কাজে অগ্রসর হব। আজ এখানেই সভার কাজ মুলতবী ঘোষনা করছি।
সভা ভেঙ্গে যাওয়ার পর শিহাব এশার নামায আদায় করে বাড়িতে ফিরল।
লতিফা বানু জিজ্ঞেস করলেন, করিম মোল্লা ডেকে ছিলেন কেন?
শিহাব সবকিছু বলে বলল, জান আম্মা, এন.জি.ও. মানে বিদেশী যে সব সংস্থা দেশের উন্নতির জন্য যা কিছু করছে, তাতে দেশের ও দশের কিছু কিছু উপকার হলেও এ দেশের মুসলমানদেরকে ইহুদী খৃষ্টান বানাবার চক্রান্ত করছে। সাধারণ মানুষেরা তা বুঝতে না পেরে তাদের দলে ভীড়ছে। অনেক ভালো ভালো ঘরের মুসলমান ছেলে মেয়েরা নব্যশিক্ষায় শিক্ষিত হলেও ইসলাম সম্বন্ধে জ্ঞান না থাকায় তারাও ঐ সব নিয়ে মেতে উঠেছে, বড় বড় পোষ্টে চাকরি করছে।
লতিফা বানু বললেন, সরকার ঐসব সংস্থাগুলোকে সাহায্য করছে কেন?
যারা সরকার তারাও ইসলাম সম্বন্ধে তেমন জ্ঞান রাখে না। আর যদিও কেউ রাখে, তারা নিজেদের স্বার্থের জন্য ইসলামকে পাশ কাটিয়ে ঐ সব করছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সব কিছু বোঝার ক্ষমতা দিক। আল্লাহর সাহায্য ছাড়া মুসলমানরা ইহুদী ও খৃষ্টানদের চক্রান্ত থেকে বাঁচতে পারবে না।
লতিফা বানু বললেন, আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দিক।
শিহাব আরো কয়েকদিন বাড়িতে থেকে মা সুস্থ হলে তাকে নিয়ে ঢাকা ফিরে এল।