শূন্যমার্গ

শূন্যমার্গ

আমি পাকিস্তানী। আদাব করে জানালেন তিনি আমায়—আমি একজন শিয়া…

আমিও বেয়াদবি করলাম না, সালাম জানিয়ে বললাম—জানি। আপনাদের মধ্যে যে দুটি সম্প্রদায়—শিয়া আর সুন্নী তা আমার অজানা নয়।

না। সেদিক থেকে আমি সুন্নী। বললেন ভদ্রলোক : আপনি সাংবাদিক তো? অনেক খবর রাখেন, অনেকের খবর রাখেন। পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছি আমি কী কারণে তা বলছি—এখানে উঠেছি এই আপনাদের এলাকাতেই, ঠনঠনের পাশে ওই কলাবাগানের বস্তিতে। আপনি কাছাকাছি থাকেন জানতে পেরে খোঁজ নিতে এলাম…আপনার কাছেই খবরটা পাব বলে আমি আশা করি।

পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসেছেন? আমিই উল্টে খোঁজ করলাম–কিন্তু কেন? যদ্দুর জানি সেখানে তো অ-হিন্দুদের ওপরে তেমন কোনো অত্যাচার হয় না।

ব্যাপারটা বলি শুনুন তাহলে। তিনি শুরু করেন। আমি পূর্ব বাংলার মুসলমান। একজন বৈজ্ঞানিক। নিউক্লিয়ার ফিজিকস্ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে আমার। অ্যাটম বম-টম নিয়ে মাথা ঘামিয়েছি বহু। কিন্তু সে কথা থাক, একটা জরুরি প্রয়োজনে আমাকে রাওয়ালপিণ্ডির সরকারী দপ্তরখানায় যেতে হয়—বিশেষ একটা আর্জি নিয়ে। সেখান, থেকে আমাকে পাক-বাহিনীর কমাণ্ডার ইন চীফ-এর কাছে পাঠিয়ে দিল তারা…।

জেনারেল মুসো না মেসো কে যেন সে? আমি শুধোলাম।

আপনার মেসো কি মুসো তা জানিনে, তবে মাসি যে নয় তা হলফ করে বলতে পারি মশাই। ইয়া ইয়া লম্বা-চৌড়া গোঁফ রয়েছে জনাবের।

বটে! বলেই আমার মনে পড়ল, পাকিস্তানের জেনারেল ইয়া-ইয়ার নামটা যেন শোনা আমার।

…এত্তেলা দিয়ে ঢুকলাম জেনারেলের কামরায়। বলতে লাগলেন পাকিস্তানী বিজ্ঞানী। তিনি সেখানে একলাই ছিলেন তখন। প্রকান্ড এক টেবিলের সামনে বসে নিজের গোঁফে তা দিচ্ছিলেন এক মনে। আমাকে দেখে তা থামিয়ে হাত বাড়িয়ে বললেন—বলুন, কী করতে পারি আপনার জন্যে? বাংলায় নয়, চোস্ত উর্দুতেই বললেন কথাটা। বাঙালী হলেও এবং উর্দু তেমন ভালো কইতে না পারলেও বুঝতে পারি মোটামুটি রম।

তার কথার জবাবে আমার নক্সার খোলটা আমি তাঁর টেবিলের এক পাশে রাখলাম। তিনি শুধোলেন—চীজটা কী? আমি বললাম, জনাব, এটা একটা গোপনাস্ত্রের নক্সা। এই অস্ত্রের সাহায্যে এক চোটে কলকাতা, দিল্লী, বোম্বাই উড়িয়ে দেওয়া যায়। ইয়াল্লা! ই কভি হো শকতা শুনে তিনি যেন আঁতকে উঠলেন মনে হলো।

আপনার কথায় শক পেলেন মনে হয়? আমি বলি।

হতে পারে। তখন আমি তাঁকে পরিষ্কার করে জানালাম। আমার আবিষ্কারের কাছে। রুশ-মার্কিনের ঐ অ্যাটম কমও একেবারে কিছু না।

আমার কথায় হাসতে লাগলেন জেনারেল—কী সব আজে বাজে বকছেন। ওদের আণবিক হাতিয়ারের ধারে কাছে আগামী দুশো বছরের ভেতর কাউকে আর আসতে হবে না। এমন কি আমাদের পরম দোস্ত ঐ চীনকেও নয়।

ঠিকই বলেছেন জনাব। কী করে আসবে। ওঁর কথায় সায় দিতে হলো আমায়—সেই সব দেশে তো এই বান্দার মত কেউ পয়দা হয়নি এখনো। এহেন অস্ত্রের আইডিয়া তাদের মগজেই আসেনি এখন তক।

বলে আমার নক্সার রোলটা খুলে তার টেবিলের ওপরে বিস্তারিত করে দিলাম তখন…তিনি নাক সিঁটকে তাকালেন তার ওপর।

আমি বললাম-এটা হচ্ছে, বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় প্রজেক্ট-জে। জে মানে আমি। আমার নাম জালালুদ্দিন। তাই আমার নামেই এটার পেটেন্ট। বলে আমি অস্ত্রটির সব বিষয় বিশদ করে তাঁর কাছে ব্যাখ্যা করতে লাগলাম।

শুনতে শুনতে তাঁর উৎসাহ জাগল। তিনি আগ্রহের সঙ্গে আমার কথার সঙ্গে মিলিয়ে নক্সাটার সব কিছু লক্ষ্য করতে লাগলেন। প্রজেক্ট-জেকে আরও বিস্তারিত করতে হলো আমায় তখন—সবটা খুলে টেবিলের ওপরে ছড়িয়ে দিলাম। টেবিল ছাড়িয়ে গেল নক্সাটা। তখন তিনি নক্সাটা নিয়ে মেজের কার্পেটের ওপরে বিছিয়ে নিজে তার ওপরে হুমড়ি খেয়ে পড়লেন।

আধঘণ্টা ধরে নক্সাটার আগাপাশুলা সব কিছু দেখে শুনে বুঝে নিয়ে তিনি খাড়া হয়ে দাঁড়ালেন। আমার করমর্দন করে অভিনন্দন জানিয়ে বললেন—বাহাদুর আপনি! আপনার এই নয়া হাতিয়ারটা অদ্ভুত বটে সত্যিই…

হা। একচোটে দিল্লী কলকাতা বোম্বাই উড়িয়ে দেবার কিম্মত রাখে।

তা রাখে। তবে সেইখানেই যা একটু…তা সে কথা যাক। এর জন্যে কত দিতে হবে আপনাকে? দশ হাজার।

দশ? দশ কি বলছেন জনাব? একশ বলুন। বলে আমার প্ল্যান আমি গুটিয়ে নিলাম।

পঞ্চাশ হলে হয় না?

পঞ্চাশ! মাত্র পঞ্চাশ হাজার? বলেন কী জনাব? হিন্দুস্থানের মতন এক দুশমনকে রস্ত করতে মাত্র মোটে পঞ্চাশ হাজার? আমি পাঁচ লাখ টাকা পাবার আশা করে এসেছিলাম। পাঁচই আমার চাই, তার কমে ছাড়ব না।

আড়াই লাখ। বললেন তখন তিনি।

অলরাইট। আমি রাজি। বলে নক্সটা তাঁর হাতে আমি সঁপে দিলাম।

জেনারেল আড়াই লাখের একখানা কে লিখে আমার হাতে দিয়ে বললেন– এটা ট্রজারিতে জমা দিলেই ভাঙিয়ে দেবে। বলে তিনি আমার করমর্দন করলেন আবার।

করমর্দনের ফাঁকে আমি চেকের ওপরটায় চোখ বুলিয়ে দেখে নিয়েছি শূন্যিগুলো তিনি ঠিক ঠিক দিয়েছেন কিনা। না, পঁচিশের পর…পর চারটে শূন্যই রয়েছে বটে, দেখা গেল।

দরজা পর্যন্ত এগিয়ে আমাকে বিদায় দেবার আগে তিনি বললেন–আবার যদি এমনি বড়িয়া কিছু আবিষ্কার করতে পারেন, একটুও বিলম্ব না করে সোজা চলে আসবেন এখানে। আমরা উচিত মূল্যে তা কিনে নেব। এমনধারা যদি কিছু থাকে আপনার আর…।

আছে আমার। আমি জানালাম।

আছে আপনার?

আমার কাছেই আছে। বলে আমার ব্রিফ কেসটা খুলে আরেকটা নক্সা বার করলাম। -এ হাতিয়ারটা প্রজেক্ট-জের চেয়েও জববর।

সন্দিগ্ধ নেত্রে তাকালেন জেনারেল-তা কি কখনো হতে পারে? যেরকম বুঝলাম, এবং আপনি বোঝালেন তাতে মনে হলো প্রজেক্ট-জের ওপরে আর কোনো কথা নেই।

আছে বই কি! বিজ্ঞানের শেষ কথা কি কেউ বলতে পারে কখনো? আবিষ্কারের কি ইয়ত্তা আছে? বলে আমার নতুন নাটাকের চোখের সামনে মেলে ধরলাম—এটি হচ্ছে প্রজেক্ট-এম। প্রজেক্ট জালালুদ্দিনের সঙ্গে মোলাকাত করার এক্তিয়ার রাখে বলেই এর নাম প্রোজেক্ট-এম।

বটে? এর কেরামতিটা শুনি তো একবার?  শুধালেন জেনারেল তখন।

প্রজেক্ট-জের চেয়েও দ্রুতগতিতে যাবার ক্ষমতা আছে এর। ঐ প্রজেক্ট-জে তার টারগেটে গিয়ে পৌঁছবার আগেই এ গিয়ে শূন্য পথেই তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেবে।

তাজ্জব! বলে খানিকক্ষণ তিনি হাঁ হয়ে রইলেন, তারপর বললেন-ও জিনিসের আমাদের দরকার হবে বলে আমি মনে করি না। কেননা, এই প্রজেক্ট-জের মতই কেউ কিছু বহুদিন বানাতে পারবে না, তারপরে তো তার সঙ্গে মোলাকাতের কথা।

ঠিকই বলেছেন জনাব। বললাম আমি তখন-কিন্তু লড়াইয়ের কায়দাকানুন নিশ্চয়ই আপনার জানা আছে—আমার চেয়ে ঢের ভালোই জানেন আপনি জনাব যে, যতক্ষণ সেই হাতিয়ারের জবাব আপনার হাতে নেই ততক্ষণ তা ব্যবহার করতে যাওয়াই উচিত নয় আপনার। কেননা, অপর পক্ষের হাতে আপনার সেই হাতিয়ারের জবাব থেকে যেতেও পারে হয়তো বা।

ইয়াল্লা! জেনারেলের মুখ অতঃপর আর আগের মতন মোলায়েম রইল না, দারুণ গভীর হয়ে গেল এবার–তার মানে, তোমার জাহান্নামের ঐ মোলাকাতও আমাকে হাত করতে হবে, নইলে হয়তো তুমি ঐ প্ল্যান অপর পক্ষকে গিয়ে বেচবে।

আমি তাঁর কথায় কোনো প্রতিবাদ না করে চুপ করে রইলাম। তিনিও চুপচাপ—অনেকক্ষণ। এই নীরবতার ভেতর নিজের গোঁফের দুই প্রান্ত তিনি চিবুতে লাগলেন চটেটে।

অবশেষে গুম্ফ চর্বণ থামিয়ে আরেকটা চেক লিখলেন তিনি—আড়াই লাখের।

আমার হাতে চেকটা দিয়ে তিনি বললেন—চলুন, এবার আমাদের অফিসারস ক্যানটিনে গিয়ে একটু খিনপিনা করা যাক এখন। এক কাপ কফি অন্তত।

লম্বা করিডর ধরে যাবার পথে একটা বিরাট হলঘরের সামনে এসে আমরা দাঁড়ালাম। ইস্পাতের কলাপসিবল গেট ছিল হাটার। জেনারেল দেওয়ালের একটা বোতাম টিপতেই গেটটা দুক হয়ে সরে গেল দুধারে। যমদূতের মতন দুজন লোক ভেতর থেকে বেরিয়ে এল। এসেই পাকড়ালো আমাকে।

একি! এরা আমায় ধরছে কেন হুজুর? ছেড়ে দিতে বলুন এদের! চেঁচিয়ে উঠেছি আমি।

আমার জবাব না দিয়ে তিনি লোক দুটোকে বললেন-হুঁশিয়ার! হরবখৎ নজর রাখতে হবে লোকটার ওপর। যেন পালাতে না পারে। তবে ভদ্রলোকের কোন তলিফও যাতে না হয়। খানাপিনা গোসল উসলের বিলকুল সুবন্দোবস্ত চাই। ইনি এখানে বরাবরের জন্য আমাদের মেহমান-সম্মানিত অতিথি। খেয়াল থাকে যেন।

চিরদিনের জন্য কয়েদখানায় পুরছেন আপনারা আমায়? কিন্তু কেন? কী ক্ষতি করেছি আমি আপনাদের? আমি তো আপনাদের ভালোর জন্যই…।

আমার কথা শেষ হতে পেল না, মোক্ষম জবাব পেলাম আমার কথার—আপনি ভয়ঙ্কর লেক। বললেন তিনি—আপনার মত মানুষকে বাইরে রাখা মোটেই নিরাপদ নয়। পাকিস্তানের স্বার্থেই আপনাকে এইভাবে ইনটার্ন করতে হচ্ছে আমায়।

কিন্তু আমি তো পাকিস্তানের স্বার্থেই…আমার এই আবিষ্কার তো পাকিস্তানের স্বার্থেই দিতে চেয়েছিলাম জনাব। আমাকে কয়েদ করে…আমার এই প্রজেক্টগুলি নিয়ে আপনারা কী করবেন?

কিচ্ছু করব না। তিনি আশ্বাস দিলেন আপনার কোনো ভয় নেই। এসব কোননা কাজেই লাগাবো না আমরা কাজেই লাগবে না আমাদের।

সে কী! দুষমন হিন্দুস্থানকে জবেহ করতে হলে…।

কে চাইছে জবেহ্ করতে? হিন্দুস্তান না থাকলে আমরাই কি থাকব? হিন্দুস্তানের আকাশ বাতাস যদি আণবিক বোমার ঘায় ঝলসে যায় তো তার আঁচে কি আমরাই বাঁচব? তা কি আমাদের পাকিস্তানকেও লাগবে না? একই বাতাস পূর্ব থেকে পশ্চিমে বইছে। পশ্চিম থেকে পূবে। একই নদীর জলধারায় দু দেশের মাঠে ফলছে ফসল। না না, হিন্দুস্থানের ধ্বংস আমরা চাই না। তার সঙ্গে লড়াই করেই আমরা বাঁচতে চাই বরাবর। কিন্তু হিন্দুস্থান যদি না থাকে তো লড়ব কী নিয়ে, লড়াই করব কার সঙ্গে? মিলিটারি ডিপার্টমেন্টই উঠে যাবে, আমাদের চাকরি বিলকুল খতম্।

তিনি আদাব জানিয়ে বিদায় নিতেই তারপর সেখান থেকে ছাড়ান পাবার জন্যে সেই যমদূত দুটোকে চেক দুখানা আমি ঘুষ দিয়েছি। সেখান থেকে বেরিয়ে সোজা চলে গেছি দিলীতে। যদি হিন্দুস্থানের প্রতিরক্ষা দপ্তরে বেচতে পারি আমার প্রজেক্ট। আরো চড়া দামে গহানো যায় যদি তাদের। কিন্তু না, দিল্লী আমায় হতাশ করেছে। সেখানকার কর্তাদের কারোই এ ব্যাপারে কোনো গা দেখা গেল না। আমার কোনো প্রজেক্ট সম্বন্ধেই আঁরা। আগ্রহী নন।

মা জালালুদ্দিন—না মোলাকাত? আমি শুধালাম।

না। এই জালালুদ্দিন মিঞা সবার সঙ্গেই মোলাকাত করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী—কিন্তু…কিন্তু কী আর বলব!

কাউকেই কাত করতে পারেননি? আমি বললাম।

একদম না। পাকিস্তানী জেনারেল তবু তো আমার প্রজেগুলি খুটিয়ে দেখেছিলেন, ঐবা একেবারে তাকাতেই চাইলেন না। নক্সটা খুলতেই দিলেন না কেউ। সবার মুখেই এক কথা। আমরা পাকিস্তানের ধ্বংস চাই না, তার শ্রীবৃদ্ধিই আমাদের কাম্য, তাদের সঙ্গে নিরচ্ছিন্ন শান্তিতে সহাবস্থান করতে চাই আমরা। একজন তো দস্তুরমত সদুপদেশই দিলেন আমায়। বললেন, আপনার এসব পাগলামি ছাড়ুন, এ পথ ভালো নয়।

এই কথা বললেন?

শুনুন কথা! বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে, বিজ্ঞানের জয়যাত্রাকে বলে কিনা পাগলামি? যাক, এখানে কেউ আমায় গারদে দেবার চেষ্টা করেনি এটাই ভালো বলতে হবে। …বোধ হয় সেটা গণতন্ত্রের গলদ।…তারপরেই আমি সেখান থেকে চলে এসেছি এই কলকাতায় …দিল্লীর থেকে সটান।

উঠেছেন আমাদের কলাবাগানের বস্তিতে? আমি বললাম : তা ওটা তো পাকিস্তানই প্রায়, বলতে গেলে।

এসে অব্দি একজন সাংবাদিকের খোঁজে আছি, যিনি তামাম দুনিয়ার খবর রাখেন। সব কিছুর…সবাইকার খোঁজ-খবর। আই ওয়ান্ট এ সিয়া…সিয়ার খবব পেতে চাই।

তাহলে বড় ভুল জায়গায় এসেছেন মশাই। সংবাদপত্র পড়ে থাকি বটে, প্রত্যহই পড়তে হয়, অল্পবিস্তর লিখেও থাকি কাগজে, তবে সত্যি বলতে আমি সাংবাদিক নই। একান্তই এক বিসম্বাদিক। বাংলা মুল্লুকের খবর দূরে থাক, এই কলকাতারই খবর আমি রাখি না। এসিয়ার খবর আপনাকে আমি কী বাতলাব!

আপনি কি প্রখ্যাত সাংবাদিক এম শিবরাম নন তাহলে?

কী বললেন? এম শিবরাম? তিনি আবার কে? আমি ঘাড় নাড়লাম–না মশাই। আমার কোনো এম নেই-–না নামে না জীবনে। আমি শুধুই শিবরাম।

বস্তির লোকরা কি তাহলে ভুল বাতলেছে আমায়। তিনি যেন অবাক হয়ে গেলেন—শিবরাম কি নানারকমের হয়ে থাকে নাকি?

কে জানে! কেউ কেউ আমাদের মধ্যে হয়তো এমবিশাস থাকতেও পারেন। তবে আমি নই। আমি নিতান্তই শিবরাম। সামান্য…নামমাত্র।

আপনি শিয়ার কোনো খবর রাখেন না তাহলে? শিয়ার কিছু জানেন না আপনি?

জানব না কেন? খবরও পাই মাঝে মাঝে। শিয়া সুন্নীর লড়াই তো বেধেই থাকে। প্রায়। এমন কি আপনাদের পাকিস্তানেও তো লেগে যায় বলে শুনেছি।

আহা, সে শিয়া নয় মশাই! মার্কিন মুল্লুকের সিয়া। সি আই এ-সিয়া! নাম শোনেননি তার? তামাম দুনিয়া জুড়ে দু হাতে যারা টাকা ছড়াচ্ছে, রাজা উজীর মারছে, পলিটিক্যাল পাটিদের কিনছে, রাজ্য লোপাট করছে—শোনেননি নাকি?

শুনেছি বটে! তবে ঐ খবরের কাগজেই। তাদের কাউকে চাক্ষুষ করিনি কখনো।

তাদের এজেন্টদের একজনকেই আমি খুঁজছিলাম। আমার এইসব প্রজেক্ট কিনতে পারে তারাই কেবল। দু পাঁচ লাখ কি, এমন জিনিস পেলে ক্রোড়খানেক টাকা ঢালতেও তারা কসুর করবে না।

ওঃ, সেই CIA-র খোঁজ করছেন? বরাত ফেরাতে সবাই তাদের খোঁজে ফিরছে বলে শুনতে পাই, কিন্তু আমার জানাশোনার মধ্যে কেউ তাদের কৃপালাভ দূরে থাক, দর্শন পেয়েছেন বলে আমি জানি না। বিধাতার মতই তারা সর্বদা অন্তরালে; হয়তো কৃপা করে কিংবা কৃপা করবার জন্যই কোনো কোনো ভক্তকে কখনো-কদাচ দর্শন দেন। তবে চেষ্টা করে তাঁদের পাত্তা পাওয়া যায় না, নিজগুণে দেখা দিলেই দেখা মেলে। এই রকম শুনেছি।

সেই সিয়ার কোনো খবর তাহলে আপনি আমায় দিতে পারলেন না! বলে তিনি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন।

গোড়াতেই আপনি বললেন না যে শিয়া নন, আপনি সুন্নী; সেই কথাই আমি বলতে চাই আপনাকে শেষটায়। সিয়ার দিক থেকে আমিও শুন্যি! লাখ লাখ টাকা দেনেওয়ালা কেউ আমার ত্রিসীমানায় নেই—চারধারেই শূন্য আমার, বুঝেছেন?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *