শারদীয়া পূজা বাঙ্গালীর সবচেয়ে বড় উৎসব। এর প্রতি বাঙ্গালীর নরনারীর ঔৎসুক্যেরও অবধি নাই, স্নেহেরও অন্ত নাই। তাই এ প্রকাশ পায় তাদের আনন্দের নানা পথে, নানা বিচিত্র গতিতে। কোথাও বা অন্তর্মুখী—মানুষের আপন গৃহে ফিরে আসার তাড়া, আত্মীয়-স্বজনগণের সামীপ্য কামনা। আর কোথাও বা বহির্মুখী—ঘর ছেড়ে বাহিরে যাবার তাগিদ।
যে অপরিচিত আজও অজানা, তাঁদের আপন করে জানার ব্যাকুলতা। সুতরাং, সেদিন যখন শিলং পাহাড়ের হেমচন্দ্র এসে বললেন, এবার পূজায় তাঁরা একখানি কাগজ বার করবেন, আমি বিস্মিত হইনি, এ ভালোই হল যে, এঁদের আনন্দোৎসবের ধারা এবার সাহিত্যসেবার খাতে প্রবাহিত হবে। এ আয়োজন সম্পূর্ণ ও সুন্দর করবার শ্রম আছে, ব্যয় আছে,—সে থাক—তবু, সমস্তকে অতিক্রম করেও একাগ্র সাধনার যে সফলতা বাণীর প্রসাদস্বরূপ এঁরা পাবেন, তাতে অকলঙ্ক আনন্দরস মধুরতর দীপ্ততর হয়ে উঠবে।
কিন্তু একটা কথা বলারও আছে। আমি জানি, আমার এই কয়ছত্র মাত্র লেখার মূল্য কিছু নেই, থাকা সম্ভবও নয়। কারণ, শক্তি যাদের নিঃশেষিতপ্রায়, আয়ুঃ অস্তোন্মুখ, তাঁদের কাছে প্রত্যাশা করা আর চলে না। তবু এই আগন্তুক পত্রিকাখানির ক্ষতি হবে না। সাহিত্যব্রতে যাঁরা নবীন পথিক, যাঁরা উদীয়মান, বেগ যাঁদের চঞ্চল গতিশীল, এই বাণীপূজার মহৎ অর্ঘ্য তাঁদের কাছ থেকেই সম্পূর্ণ সমাহৃত হবে, এই আমার আশা। শিলং–এর বাঙ্গালী অধিবাসীগণের পক্ষে হেম চেয়েছিলেন শুধু আমার কাছে আশীর্বাদ; তাঁদের শারদবার্ষিকীর জন্য শুভ কামনা। একান্ত মনে প্রার্থনা করি, তাঁদের যত্ন, তাঁদের সাধনা সার্থক হোক, এই বাৎসরিক সাহিত্য পত্রিকাখানির আয়ু যেন সুদীর্ঘ হয়। এ যেন এমনি করেই বর্ষে বর্ষে ফিরে আসে। ইতি — ১৪ই ভাদ্র, ১৩৪১।
(১৩৪১ সালের ‘শিলং বার্ষিক পত্রিকা’)