শুক্লপক্ষের তারা – ১-২০

১.

কথা বলতে বলতে রাত্রি শেষ হয়ে গেল,
প্রেম-নীপকুঞ্জে আর যাওয়া হলো না।

আবার যদি এমনি একলা ঘরে থাকি,
এসো গো চুপি চুপি
এসো কেবল সুরের রূপে- দিও গো
এসে আমায় সাড়া….।

২.

রাত্রি নামে অন্ধকারে মর্মরিত ক্লেশে
আশা কেবল এইটুকুই অন্ততঃ জ্বলে উঠবে একটি নক্ষত্র, আঁধারেও দেখতে ইচ্ছে করবে তার
মায়ামলিন মুখ….
দেখতে পাব তখনই যদি দূরের ঐ নক্ষত্রের ম্লান আলো এসে পড়ে মুখের উপর।

৩.

কত ক্লান্ত শ্রান্ত হয়ে 
কত পথ পেরিয়ে যখন তোমার কাছে চলে এলাম,
তখন আমার জীবনকাল খুবই সংক্ষিপ্ত-

এত সংক্ষিপ্ত সময়ে আমার ভালোবাসা সংক্ষিপ্ত করে তোমাতে প্রকাশিত করব কীভাবে?

আমার দিন ফুরাল।

৪.

তুমি কান পেতে শুনলে না আমার শব্দ
দেখলে না আমার স্বপ্ন
স্বপ্ন ঘরে জ্বালানো আমার বাতি
সকল নৈবেদ্য। 

যখন তুমি আসবে
তখন সব শব্দহীন
কোথাও আলো জ্বালা নেই
তখন আর আলো জ্বালাবে না কেউ।

৫.  

ক্রমশঃ গহীনতম পথে চলতে থাকে আমাদের লীলাপর্ব
জলের ঢেউ ভেঙে নাবিক নোঙ্গর ফেলে আরো অতলে
আমরা বুঁদ হয়ে থাকি জলের নির্মাণে —
নিঃসঙ্গ বালিয়ারীতে তখন মুক্তা ফলায় ঝিনুক
জলধির গভীরে যে কথা হয় তার সাথে
তার বুকে কান রেখে সে কথা শুনি আমারই প্রাণে।

৬.

আমার পৃথিবী জুড়ে কেবলি স্বপ্ন ভঙ্গের শব্দ।
পথ হাঁটছি অবিরাম…শুধু হেঁটেই চলেছি…..।
প্রচন্ড ক্লান্তি এসে ভর করে। 
থেমে যেতে চায় আমার অনিশ্চিত পদযাত্রা।
তারপরও আমি হেঁটে চলি বন্ধুহীন, ভালোবাসাহীন।

৭.

হৃদয়ের রক্ত দিয়ে রক্তজবা ফুল ফুটিয়ে রেখেছি,
ওগো তুমি এস তোমার সকল মায়ায়,
এক’পা দু’পা চরণে এস– 
উজ্জ্বল চোখের দৃষ্টি মেলে দেখ গো আমায়…
নাও তোমার ফুল, দাও তোমার কনকচাঁপার বুক, ডোরাকাটা ঠোঁটের চুম্বন রাশি রাশি…
অবগুণ্ঠন খুলে দ্বিধাহীন তুমি বলো — ভালোবাসি ভালোবাসি।

৮.

অভিমান তুমি আমাদের মাঝখান থেকে সরে দাঁড়াও
কেউ থেকো না আজ
থাকবে না কোনো বৃক্ষের ছায়া, থাকবে না উপত্যকার কোনো ঘাসও।

লক্ষ্মীনদারের বাসর ঘরের মতো সবকিছু নিশ্ছিদ্র।
আমরা দুজন আজ একজন হবো।

৯.

আমার জন্যই আজ তোমার যত অসুখ বিসুখ
বিসর্জন দিয়েছ তুমি অপাত্রে তোমার যত সুখ

দায়ও নিয়েছ যত গ্লানি আর ব্যর্থতা আমার
তারপরও ভালোবাসো তুমি অজস্র অপার

আমার ছায়ার সাথে তোমার ছায়া রেখেছ মিশে
শিকড়ে তোমার অস্তিত্ব মন বোঝে তা অহর্নিশে।

১০.

বহুবিস্মৃত পদচিহ্নর পথ পেরিয়ে এসে,
এই পথে আজ আমার দীপ্ত চলন,
কত আপ্লুত মধুময় ক্ষণ হারিয়ে এসে
আজ আমি এই সন্ধ্যারাত্রির আঁধারে লুপ্ত এক জোনাকি…
কত বিমুগ্ধ অস্তরাগ অস্তমিত হয়ে গেছে।

১১.

আজ মনে হয় কপালে ভালোবাসা নেই
নেই একটি চুমোও
আজ যদি থাকে কাল আবার নেই
পরশুর কথা ভাবছিনে এখনও।

অর্ঘ্য দিতে চাও দিও তুমি, রাতের নিভৃত শয়নে,
তুমিই জ্বালাও তুমিই পোড়াও
তপ্ত প্রেমের দহনে।

১২.

একদিন মনখারাপ হবে খুব, অথচ কান্না নেই।

সে মুখোমুখি এসে দাঁড়ানোর পর হয়ত কান্না এসে যাবে
বড্ড অচেনা লাগবে তখন সারা পৃথিবী,
একদিন সবকিছু ফুরোবার আগেই আমিও হারিয়ে যাব..
তখন কারও চোখে আমার কান্না রয়ে যাবে।

১৩.

তোমাকে ফেলে দিয়ে
পথে নেমে একা একা পথে পথে ঘুরি। যাযাবর সন্ধ্যা বেলায় পথ ভুল করে আবার তোমার কাছেই ফিরে আসি।
কবে একদিন আমার জন্য তোমার দুই ফোঁটা চোখের জল ঝরে পড়েছিল, তারই ঋণ শোধ করার জন্য এমন করে বারে বারে ফিরে আসা।

১৪. চোখ

তুমি দাঁড়িয়ে আছো আমার চোখের পাতার কাছে
চেয়ে দেখি তোমার চুলে আমার চোখ ঢেকে আছে

চোখের উপর রেখেছ তোমার চোখ
জল ঝরে নাই ছিলনা কোনো শোক ,

তোমার চোখেই আমার ভালোবাসা জেগে আছে।

১৫.

বিচ্ছেদ চাইনি কখনও —
আঙ্গুলগুলো জড়িয়ে রয়েছে তার হাতেই
আকাশে চেয়ে দেখি একাকী নক্ষত্র
বাতাসেও কোনো সিম্ফণী নেই।

১৬.

আমার প্রাণ ছুঁয়ে গেল কে, শারদীয় রোদ্রের মতো, আমি আবেশে অবশ হয়ে যাই,
তুমি আজ যেই গানই গাও , তোমার সেতার জানে আমি কী গান শুনিতে চাই।

১৭.

জীবন ফুরালো ভালোবাসা করে দিয়ে উজার
ফতুর আমি কোনও কিছু নেই যে আর দেবার

কত চেয়েছিলাম তোমাকে চিরদিনের করে
চলে গেলে তুমি একলা ফেলে একলা ঘরে।

১৮.

তোমাকে যেখানে নিয়ে যাবে
সেখানে কেবলই শূন্যতা, কেউ নেই।

যেখানে থাকবে তুুমি
সেখানে কেবলই নিস্তব্ধতা, কান্নাও নেই।

যেখানে রবে তুমি, সেখানে আলো নেই
কেবলই অন্ধকার…

এত শূন্যতার ভিতর , এত শব্দহীন কান্নার ভিতর
চারপাশে অনিঃশেষ এত অন্ধকারের ভিতর —
আমাকেই তুমি খুঁজে পেতে পারো।

১৯.

আমার ভালোবাসা তোমার পুজোর থালায় ফুল দিয়ে রেখো ঢেকে যখন সন্ধ্যা নামে,
কোনও অনুযোগ নেই, তোমার থেকে যা আমি পেয়েছি তা রেখেছি অনেক অশ্রু দামে… …।

২০.

মনটা হয়ে আছে মেঘের মতো ধূসর
সামনের পথ আর রয়েছে কত বাকি?
যেতে যেতে পথে যদি আঁধার নামে
পথ দেখাবে না হয় কোনও জোনাকি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *