শিল্প-সংস্কৃতি : ইহুদি ছোবল

শিল্প-সংস্কৃতি : ইহুদি ছোবল

থিয়েটারশিল্প পৃথিবীর অতি প্রাচীন একটি সংস্কৃতি, যা বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সাধারণত নাটক-চলচ্চিত্রে মানুষ যা দেখে, মানুষ তা নিয়েই কল্পনার জগৎ তৈরি করে। এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মগজে নতুন নতুন মতাদর্শ ও চিন্তা-চেতনার বীজ ঢুকিয়ে দেওয়া সম্ভব। এ কারণে বিশেষ এই শিল্পটি ইহুদিদের পরিকল্পনায় কখনো উপেক্ষিত হয়নি। বলশেভিক বিপ্লব রাশিয়ার সব শিল্প প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিলেও থিয়েটার ও পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অক্ষত রেখেছে।

চলচ্চিত্র শিল্প (Movie Industry) বাজারে আসার পূর্বে থিয়েটার হলগুলো নিয়মিত ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা দৈর্ঘ্যের বিভিন্ন নাটক তৈরি করত, যা দেখার জন্য প্রতি সপ্তাহে লাখো মানুষ ভিড় করত। বিনোদনের নামে থিয়েটারে যীশুকে যতটা ছোটো করে উপস্থাপন করা হতো, তা কোনো বিবেকবান খ্রিষ্টানের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষ বোঝেই না, তাদের অবচেতন মনে কীভাবে শয়তানি চেতনার বীজ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যীশু ও মেরিকে ছোটো করে আজ পর্যন্ত যত বেশি নাটক তৈরি হয়েছে, যার বর্ণনা এখানে উপস্থাপন করা সম্ভব নয়।

১৯১৮-১৯ সালের দিকে ইহুদিরা মাঝারি মানের একটি থিয়েটার থেকে টিকিট বিক্রি করে ৪৫০০-৫০০০ ডলার উপার্জন করত। এ রকম অসংখ্য থিয়েটার গোটা আমেরিকার বিভিন্ন শহরতলিতে গড়ে ওঠে। সুতরাং প্রতিদিন বা প্রতি মাসে তারা কত ডলার উপার্জন করত, তা হিসাব করে দেখুন। অন্যদিকে, নির্বোধ জ্যান্টাইলরা কষ্টে তাদের উপার্জিত মজুরির একটি বড়ো অংশ নিয়মিত এই সব কুৎসিত নাটক ও চলচ্চিত্রের পেছনে খরচ করত।

এই শিল্প ইহুদিদের দখলে যাওয়ার পর চারদিকে যে নগ্ন সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ে, তা সবার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পরে জন্ম নেয় চলচ্চিত্রশিল্প, যা গোড়া থেকেই ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আজকের সমাজে শেক্সপিয়রকে নিয়ে কোনো রকম আলোচনা হয় না। সমাজ-সচেতনতামূলক গল্প নিয়ে হাজির হলে প্রডিউসারগণ ভ্রু কুঁচকে বিরক্তি প্রদর্শন করেন। সবকিছু জ্যাজ সংগীত ও যৌন আবেদনময়ী নৃত্যের নোংরামিতে ছেয়ে গেছে।

Sheridan, Sothern, McCullough, Madame Janauschek, Mary Anderson, Frank Mayo এবং John T. Raymond ছিলেন সোনালি দিনের কিছু থিয়েটারশিল্পী। তারা চলে যাওয়ার পর এই শিল্প নতুন কোনো যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজে পায়নি। বর্তমানে যে নতুন অভিনেতারা থিয়েটার শিল্পে আসছে, তাদের অধিকাংশরই গড় বয়স ১৩ থেকে ১৭। পরিচালক ও প্রডিউসারগণ এই কমবয়সিদের প্রতি অধিক আগ্রহী। কারণ, তাদের নিজেদের মতো করে গড়ে তোলা সম্ভব; তা ছাড়া পারিশ্রমিকও কম। বলা চলে তারা থিয়েটার মালিকদের হাতের পুতুল।

যেকোনো চলচ্চিত্রে নায়ক-নায়িকাদের আবেদনময়ী শয়নকক্ষের চিত্র প্রদর্শন যেন দৈনন্দিন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঐতিহাসিক গল্পগুলো ইচ্ছামতো পরিবর্তনের মাধ্যমে যৌন আবেদন যুক্ত করে নিয়মিত চলচ্চিত্র বানানো হচ্ছে। এরপরও বলা হয়, সত্য কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র! কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা, তা বোঝা এখন আর আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে ঐতিহাসিক সেই গল্পগুলোতে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনা হয় না, যেগুলো ইহুদিদের বীরত্ব নিয়ে লেখা হয়েছে। যেমন : Ben Hur। এর বাইরের সব নাটক বা চলচ্চিত্রে নগ্নতা প্রদর্শনের মাধ্যমে যৌনক্ষুধা তৈরি এবং যীশুকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সাথে উপস্থাপন করে আমাদের মাথায় নাস্তিকতার বিষ ঢেলে দেওয়া যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে অভিনেত্রীদের নগ্নরূপে উপস্থাপনের জন্য ব্যবহার করা হয়, তাদের অধিকাংশই জ্যান্টাইল। খুব কম খরচের বিনিময়ে পরিচালক ও প্রডিউসারগণ তাদের বাজার থেকে কিনে আনে। এভাবে সংস্কৃতি জগতে শুরু হয় নতুন এক বিবর্তন। এই অপ-সংস্কৃতিগুলো কৌশলে জ্যান্টাইলদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। সচেতন ও বিবেকসম্পন্ন মানুষ থিয়েটারে যাওয়ার পরিবর্তে লাইব্রেরিকে শ্রেয় বলে মনে করবে। কারণ, নাটক-চলচ্চিত্র ও থিয়েটারে এখন নৈতিকতার ক্ষুধা মেটানো সম্ভব নয়। শেক্সপিয়র আজ কেবল থিয়েটার থেকেই নয়; পাঠ্যপুস্তক থেকেও হারিয়ে গেছে। যে প্রক্রিয়ায় ইহুদিরা থিয়েটার শিল্পে বিবর্তন এনেছে, তাকে চার ভাগে বিভক্ত করা যায়। যথা—

১. ইহুদিরা নতুন নতুন যন্ত্র-সামগ্রী সংযোজনের মাধ্যমে প্রতিটি থিয়েটার মঞ্চকে জমকালো রঙিন সাজ দিয়েছে। লাইট, ক্যামেরা, লেন্স, ঝাড়বাতি, বাদ্যযন্ত্র, ঝকঝকে জামা-কাপড়, মঞ্চ, পর্দা প্রভৃতি সংযোজনের মাধ্যমে থিয়েটারগুলোতে এক ‘Realistic Effect’ নিয়ে এসেছে। আগে দর্শকরা যেখানে ২ ঘণ্টা চলচ্চিত্রের পুরোটা সময় ধরে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকত, এখন থাকে নতুন কোনো প্রযুক্তির খেলার দিকে।

প্রতিভাবান অভিনেতাদের আজ তেমন একটা প্রয়োজন পড়ে না। ফলে কোনো রকম প্রতিভা ছাড়াই অনেক নতুন মুখ নিয়মিত নাটক-চলচ্চিত্রগুলোতে স্থান পাচ্ছে। এমনও আছে, যাদের দু-তিনটি নাটকে অভিনয় করার পর আর খুঁজে পাওয়া যায় না; এমনকী দর্শকরাও তাদের চেহারা মনে রাখে না। কেন্দ্রীয় চরিত্রের থিয়েটারগুলোতে দলগত সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনের সময় যে পার্শ্ব চরিত্রদের দেখা যায়, তারা যেন কিছু সময় পর হাওয়া হয়ে যায়। যেমন : ‘Floradora Girls’। থিয়েটারগুলোতে জ্যান্টাইল অভিনেতারা আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত হচ্ছে। আর যুবকরা তো প্রযুক্তির খেলা দেখার পাশাপাশি অপেক্ষা করে, কখন ছোটো ছোটো জামা পরে নতুন কোনো অভিনেত্রী মঞ্চে আসবে।

২. থিয়েটার হলগুলোতে আজ যে শয়তানি চর্চা শুরু হয়েছে, তা খুব দ্রুত প্রতিটি ঘরে ছড়িয়ে পড়বে। টিকিট মূল্যের ওপর ভিত্তি করে থিয়েটারগুলোকে কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। সম্পদশালীদের জন্য উঁচু হল এবং গরিবদের জন্য নিচু হল। অশ্লীলতার প্রদর্শন উঁচু শ্রেণির হলগুলোতে যতটা হয়, ততটা নিচু শ্রেণির ঘরগুলোতে হয় না। অর্থাৎ নিষিদ্ধ শয়তানের রূপ কে কতটা দেখবে, তা টিকিট কেনার ক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে।

‘Aphrodite’ নাটকের শেষ সিজন তার একটি অকাট্য প্রমাণ। ‘Aphrodite’ হলো গ্রিকদের সৌন্দর্য ও ভালোবাসার দেবী। এই চরিত্রটি চূড়ান্ত নগ্নতা দিয়ে উপস্থাপন করেছে। আরও আকর্ষণীয় করার জন্য অভিনেত্রীকে চিতাবাঘ, হরিণ ও গাছপালার চামড়া পরানো হয়। নাটকটি যখন প্রথম মুক্তি পায়, তখন নিউইয়র্ক পুলিশ এর বিরুদ্ধে মামলা করে। এটিকে বাজার হতে উঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। সাথে সাথেই ইহুদিদের পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলো নাটকটির পক্ষে জ্যান্টাইলদের সমর্থন লাভের জন্য খুব সুন্দর করে, কাব্যিক ছন্দে আর্টিকেল প্রকাশ করতে থাকে। শেষ পর্যন্ত মুক্ত সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে তারা সমর্থন লাভ করতে সক্ষম হয়। তারপর মামলা আদালতে তোলা হলে শুরু হয় নতুন নাটক। কারণ, প্রধান বিচারপতি, সহকারী বিচারপতি এবং গণ্যমান্য উকিল সবাই তো ইহুদি! মাদকদ্রব্য বিক্রি করা অবৈধ। কারণ, তা চোখে দেখা যায়, কিন্তু নৈতিকতায় বিষ ঢালতে সমস্যা নেই। কারণ, তা চোখে দেখা যায় না। ফলে মামলাটি খারিজ হতে বেশি সময় লাগল না। প্যারিস ও ভিয়েনাসহ ইউরোপের আরও অনেক শহরের অবস্থা আজ একই রকম। রাতভর বাইজিদের নৃত্যানুষ্ঠান, অশ্লীল সব কৌতুক এবং অর্ধনগ্ন ঝলমলে কাপড় পরা যুবতি মেয়েদের আসরে প্যারিস তথা ইউরোপীয় শহরগুলোর অলিগলি ভরে গেছে। শুধু কি থিয়েটারশিল্প? বই, ম্যাগাজিন ও পত্রিকার প্রচ্ছদ ছাপাতেও নগ্ন তরুণীদের ব্যবহার করা হচ্ছে!

৩. থিয়েটারশিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে ইহুদিদের উদ্ভাবিত নতুন কৌশল হলো ‘স্টার’। এখানে স্টার অর্থ আলোচিত ও অনুকরণীয় অভিনেতা-গোষ্ঠী, যাদের আমরা জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকা বলে অভিহিত করি। পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর দায়িত্ব থাকে, এই স্টারদের পছন্দ-অপছন্দ এবং দৈনন্দিন জীবনযাপন যেন এমনভাবে উপস্থাপন করে, যাতে জ্যান্টাইলরা তাদের আদর্শ বলে মনে করে। ফলে এই স্টারদের অনুকরণে অনেক উঠতি বয়সি যুবক-যুবতি নিজেদের স্টারদের মতো করে সাজিয়ে নেয়। এতে থিয়েটার হাউজগুলোর নতুন নতুন মুখ খুঁজে পেতে তেমন কোনো কষ্ট করতে হয় না। কিন্তু আজ যাদের স্টার হিসেবে দেখছি, কালও যে একই অবস্থায় দেখব, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। পরিচালক ও প্রডিউসারগণ এখানে খুব সূক্ষ্ম একটি খেলা খেলে। অভিনেতারা যদি পরিচালকদের পছন্দমতো গল্পে অভিনয় করতে রাজি না হয়, তাহলে পরদিন থেকেই তাদের স্টার খেতাব মুছে যাবে। স্টার হতে গেলে নোংরা-নগ্নতায় ভরা গল্পে অভিনয় করতে হবে। সেইসঙ্গে অর্জন করতে হবে পরিচালকদের ব্যক্তিগত অনুগ্রহ!

বর্তমান থিয়েটার শিল্পে আর কখনো Mary Anderson বা Julia Marlowe-এর মতো গুণী অভিনেত্রীদের দেখা পাওয়া যাবে না। সত্যিকারের অভিনেতা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে তাদের দীর্ঘ সময় লেগেছিল। তারা কোনো পরিচালক বা প্রডিউসারের ব্যক্তিগত অনুগ্রহের দানপাত্র হতে চায়নি। তারা শুরুতে জন-সমর্থন জুগিয়েছে এবং একটু একটু করে অভিনয় শিল্পে পারদর্শী হয়েছে। সেই সময় অভিনয় শিল্পে এত যান্ত্রিকতা, কৃত্রিমতা ও নগ্নতা ছিল না। সেখানে ছিল শুধু নৈতিকতার খোরাক। আফসোস! তাদের মতো উত্তরসূরি আর গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না।

আজ পত্রিকা ও ম্যাগাজিনগুলোতে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে ছোটো-বড়ো অনেক অডিশনের আয়োজন করা হয়। সকাল-বিকাল অডিশনের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত অভিনেতাদের খোঁজা হয়। সামান্য প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের কিছু নাটক চলচ্চিত্রের জন্য গ্রহণ করে এবং কাজ শেষে ছুড়ে ফেলা হয়। তাদের ব্যক্তিগত সম্মান বলতে কিছুই নেই।

৪. ১৮৮৫ সালের পর থেকে থিয়েটার শিল্পে দুটি নতুন বিষয়ের সংযোজন ঘটে : বক্স অফিস ও বুকিং এজেন্সি। থিয়েটারশিল্পকে বাণিজ্যিকীকরণ এবং মুনাফার পরিমাণ বৃদ্ধি করাই এর মূল উদ্দেশ্য। বুকিং এজেন্সিগুলো সম্ভাব্য ক্রেতাদের সন্ধান করে, যারা পুরো এক মৌসুম বা একাধিক মৌসুমের জন্য থিয়েটার হলগুলো কিনে নেয়। এতে কয়েক মৌসুমের জন্য থিয়েটারগুলো দর্শক পেয়ে যায়। ফলে তাদের আর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাদের মূলনীতি-দর্শক যা দেখতে চায়, তা-ই দেখাও; হোক তা বস্তাপচা জিনিস।

বুকিং এজেন্সি সবচেয়ে বড়ো আঘাত হানে ‘থিয়েটার ট্রাস্ট’ সংস্কৃতির ওপর। থিয়েটার প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে, নতুন নতুন গল্প-নাটক ও তারকা অভিনেতা তৈরি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠী নিয়মিত অনুদানের ব্যবস্থা করত, যা থিয়েটার ট্রাস্ট নামে পরিচিত ছিল। এর কারণে থিয়েটার প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমাজের বিভিন্ন স্তরের জনসাধারণের এক বন্ধুসুলভ সম্পর্ক তৈরি হতো।

সমাজের বিভিন্ন স্তরে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি, মানুষের মনের কথা, সমাজের আনন্দ-বেদনা প্রভৃতিকে পুঁজি করে তৈরি হতো গল্প-নাটক। তা ছাড়া শেক্সপিয়রের কালজয়ী নাটকগুলোতেও খুঁজে পাওয়া যেত সমাজের বাস্তব চিত্র। তখনকার থিয়েটারগুলো শিক্ষণীয় বহু বিষয়ে পরিপূর্ণ ছিল। অর্থের জন্য নয়, হৃদয়ের আবেগ থেকে মানুষ অভিনয় শিল্পে আসত।

বুকিং এজেন্সি থিয়েটার শিল্পে নিয়ে আসে এক বাণিজ্যিক সংস্কৃতি, যা ধ্বংস করে দেয় এই পুরো শিল্পকে। যেখানে মুনাফার প্রসঙ্গ আসে, সেখানে শিল্প অবশ্যই নিজের গুণগত মান হারাবে। আজ যারা অভিনয় শিল্পে আসছে, তারা কেবল শারীরিক সৌন্দর্য বা পারিবারিক ক্ষমতা খাটিয়েই আসছে। বিপরীত দিকে দক্ষ অভিনেতা হওয়ার পরও নিজেকে প্রমাণ করতে পারছে না—এ যুগে এমন অনেক উদাহরণ ও পাওয়া যাবে। কারণ, তার পেছনে কেউ অর্থ বিনিয়োগ করতে রাজি নয়।

দর্শকদের বিভিন্ন প্রকার আনন্দের খোরাক জোগাতে ‘Vaudeville’ নামে বিশেষ এক থিয়েটারশৈলী তৈরি করা হয়। নাটক, গান, নৃত্য, কৌতুক, জাদু প্রদর্শনী, পশু-পাখিদের সার্কাস, ক্রীড়াবিদ, সুন্দরী নারী ইত্যাদির সমন্বয়ে সংগীতে হয় এই ‘Vaudeville’। সবকিছু আছে, শুধু নেই নৈতিকতার উপাদান। Klaw & Erlanger- বুকিং হাউজটি কমিশনের বিনিময়ে বিভিন্ন থিয়েটার মালিকের সঙ্গে প্রডিউসারদের পরিচয় করিয়ে দিত। যেহেতু Vaudeville সাধারণ মানুষের নিকট ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে, সেহেতু প্রডিউসারদেরও আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। এভাবেই ইহুদিদের হাত ধরে গড়ে উঠে নতুন এক থিয়েটার ট্রাস্ট।

আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে—বুকিং হাউজগুলো থিয়েটার দলগুলোর মধ্যে এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা চাপিয়ে দিয়েছে। যেসব থিয়েটার যত বেশি হাস্যরস ও দর্শক জোগাতে সক্ষম, প্রডিউসারদের কাছ থেকে সেগুলো তত বেশি বাজেট লাভ করবে। এবার থিয়েটারগুলোতে নিত্য-নতুন বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান চালু হওয়া শুরু করে। তা ছাড়া বাজারে তো এখন অল্প খরচে অনেক অভিনেতা খুঁজে পাওয়া সম্ভব। ফলে নতুন এই অনুষ্ঠানগুলো চালিয়ে নিতে তাদের তেমন কোনো আর্থিক সমস্যা হয় না। আর দর্শকরাও এসব অখাদ্য আনন্দ উপভোগ করতে থাকে। সারাদিন পরিশ্রম করে তারা ইহুদি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে যে মজুরি পাচ্ছে, তার একটি বড়ো অংশ আবার তাদেরই পেটে চালিয়ে দিচ্ছে।

ইহুদিরা যেভাবে থিয়েটারশিল্পকে ধ্বংস করল

নতুন যে ট্রাস্ট সংগঠনটির কথা পূর্বে বলা হয়েছে, তার সদস্যরা হচ্ছেন—Klaw, Erlange, Nixon, Zimmerman, Hayman, Frohman, Rich, Harris ও Josheph Boork। ১৮৯৬ সালে এই ট্রাস্ট সংগঠনটি আমেরিকার ৩৭টি গুরুত্বপূর্ণ থিয়েটারকে নিজেদের করে নেয়। এর ফলে থিয়েটারগুলো বহু আগেই পরবর্তী মৌসুমের জন্য ভাড়া হয়ে যেত। নতুন মৌসুমের জন্য কী ধরনের গল্প-নাটক সংগীতে করা হবে, তা ট্রাস্টের সদস্যরা আগেই ঠিক করে দিত। তা ছাড়া যদি কোনো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন বাণিজ্যিক চুক্তিতে থিয়েটারগুলো ভাড়া করতে চাইত, তবে তা ট্রাস্টের মাধ্যমে করা হতো। বিনিময়ে সংগঠনটি সপ্তাহে ৪৫০ হতে ১০০০ ডলার পর্যন্ত রয়্যালটি উপার্জন করত।

এই ট্রাস্টের নিবন্ধনের বাইরে যেসব স্বাধীন থিয়েটার ছিল, তাদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হওয়া শুরু করে। টিকিট বিক্রি একেবারেই কমে যায়। আর্থিক ক্ষতির কারণে তাদের সদস্যরা বাধ্য হয়ে অন্য থিয়েটারগুলোতে যোগ দেওয়া শুরু করে। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে, ‘Motion Technology’-কে কাজে লাগিয়ে ইহুদিরা আমেরিকার বাজারে চলচ্চিত্র শিল্পের যাত্রা শুরু করে। এই শিল্পের লাগাম শুরু থেকেই ইহুদিদের হাতে রয়েছে। কারণ, তারাই এর জন্মদাতা।

জ্যান্টাইলদের বিরুদ্ধে ইহুদিদের কোনো কৌশলগত যুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি; বরং যে থিয়েটারগুলো আর্থিক ক্ষতির মুখে বন্ধ হয়েছিল, তাদের সদস্যরা চাকরির আশায় এই শিল্পে হাত পাততে শুরু করে।

তবে চলচ্চিত্র শিল্পের উত্থান ঘটানো এত সহজ কাজ ছিল না। কারণ, থিয়েটারশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে চারদিকে জোরালো আন্দোলন শুরু হয়। Nat C. Goodwin, Joseph Jefferson, James A. Herne, James O’Neil, Richard Mansfield, Francis Wilson, Mrs. Fiske এবং James K. Hackett হলেন এমন কিছু ব্যক্তি, যারা দীর্ঘ সময় ধরে এই আন্দোলন টিকিয়ে রেখেছিলেন। সময়ের পরিক্রমায় আস্তে আস্তে তারা সবাই এই আন্দোলন থেকে সরে আসেন।

প্রথমে সরে আসেন Nat C. Goodwin। তিনি ছিলেন এই আন্দোলনের প্রথম আহ্বায়ক। তবে তার বেশ কিছু দুর্বলতাও ছিল। যেমন : ব্যবসায়িক ও ব্যক্তিগত কাজে তাকে প্রায়-ই নিউইয়র্কে যেতে হতো। নিকারবোকার থিয়েটারের ওপর তার বেশ লোভও ছিল। ইহুদিরা তাকে এই থিয়েটারের ম্যানেজার হওয়ার প্রস্তাব দেয়। ফলে আন্দোলনে ইস্তফা দিয়ে তিনি ট্রাস্ট সংগঠনটির গোলামে পরিণত হন।

Joseph Jefferson শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত থিয়েটারশিল্পীদের সাথে এবং একই সঙ্গে ট্রাস্ট সংগঠনটিরও সদস্য ছিলেন। এককথায় তিনি ছিলেন গুপ্তচর।

Richard Mansfield ও Francis Wilson প্রতিরাতে থিয়েটার ঘরগুলোতে জ্বালাময়ী কিছু বাণী শোনাতেন। অনেক মানুষ রাতভর তাদের বাণী শোনার অপেক্ষা করত, কিন্তু অসংগঠিত একটি জনগোষ্ঠী এমন কিই-বা করতে পারে? মানুষ যে কথা শুনতে আসছে, এটাই তাদের জন্য পুরস্কার ছিল।

১৮৯৮ সালের দিকে Francis Wilson-এর জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করলে ফিলাডেলফিয়া ট্রাস্ট সংগঠন তাকে ৫০ হাজার ডলারের পারিতোষিক অর্থাৎ বকশিশ প্রস্তাব করে। তিনি প্রস্তাবে রাজি হন এবং এটা দিয়ে ব্যাবসা শুরু করেন। এরপর পুরো আন্দোলন ভেস্তে যায়। বাকি যে সদস্যরা ছিল, তারাও কোনো একসময় এই আন্দোলন থেকে সরে পড়ে।

সবাই আত্মসমর্পণ করলেও Mrs. Fiske একা এই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার স্বামী Harrison Grey Fiske-এর সাহায্য চাইলেন। তার স্বামী নিউইয়র্কের নামকরা পত্রিকা প্রতিষ্ঠান Dramatic Mirror-এর সম্পাদক ছিলেন। তিনি একটি কলামে উল্লেখ করেন—

‘থিয়েটার শিল্পের মৃত্যু সেদিন হয়েছে, যেদিন এর নিয়ন্ত্রণ একদল অযোগ্য ও অদক্ষ লোকের হাতে চলে গেছে। এর মাধ্যমে আমাদের গৌরব, ঐতিহ্য ও শালীনতার সূর্যাস্ত ঘটেছে। এরপরও কি আমরা এটিকে সুস্থ-সুন্দর বিনোদনের মাধ্যম বলব? যারা এই শিল্পকে নিজেদের করে নিয়েছে, তারা এটি পরিচালনায় একেবারে অদক্ষ। আমাদের সমাজ ও অর্থনীতির প্রতিটি ক্ষেত্র এই সন্ত্রাসী চক্রের দরুন ইতঃপূর্বেও বহুবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ (Dramatic Mirror, December 25, 1897; Reprinted in March 19, 1898 )

আগেও বলা হয়েছে, যখন কোনো ইহুদির ওপর আক্রমণ আসে, তখন তাকে রক্ষায় পুরো সম্প্রদায় এগিয়ে আসে। এবার তাদের পত্রিকা ও ম্যাগাজিন প্রতিষ্ঠানগুলো Dramatic Mirror-এর বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক আর্টিকেল প্রকাশ শুরু করে। হোটেল, স্টেশন, অফিস-আদালত সব জায়গা থেকে এই পত্রিকাটি বর্জন করা হয়। বিজ্ঞাপনদাতারাও সরে পড়ে। সবশেষে Mr. Fiske-কে চাকরিচ্যুত করা হয়।

তিনি সেই কলামে আরও অনেক তথ্য উপস্থাপন করেন। যেমন : গোপন ছদ্মনাম ব্যবহার করে কারা এই শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করছে, কারা এটিকে নিয়ে সিন্ডিকেট বাণিজ্য করছে, কীভাবে তারা টিকিটের মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। সেইসঙ্গে তিনি সেই সকল ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করেন, যারা ইতঃপূর্বে সন্ত্রাসী তৎপরতায় অভিযুক্ত হয়েছে। তিনি এটাও উল্লেখ করেন—প্রচারণার কাজে বিভিন্ন শহরের পত্রিকাগুলোতে তারা এতটা উচ্চমূল্যে বিজ্ঞাপন দিত যে, দ্বিতীয় কোনো থিয়েটার প্রতিষ্ঠান সেখানে বিজ্ঞাপন ছাপানোর সুযোগই পেত না। পুরো বাজার শয়তান আর ভণ্ডে ছেয়ে গেছে।

এই খবরের প্রতিশোধ নিতে ট্রাস্ট সংগঠনটি Mr. Fiske-এর বিরুদ্ধে ১০ হাজার ডলারের মানহানি মামলা করে।

অবাক করা বিষয়—মামলাটি আদালতে তোলা হলে বিচারপতি সাহেব সাক্ষ্য শোনার ন্যূনতম প্রয়োজনবোধও করেননি; এমনকী তাকে কিছু বলার সুযোগ পর্যন্ত দেননি! যাদের অভিযুক্ত করে কলাম ছাপিয়েছিলেন, তাদের অতীত ইতিহাস অনুসন্ধানের ন্যূনতম আগ্রহ পর্যন্ত কেউ দেখায়নি। আদালতকক্ষে উপস্থিত এক মহিলা চেঁচিয়ে কিছু বলার চেষ্টা করলে তাকেও থামিয়ে দেওয়া হয়।

সেদিন আদালতে অন্যতম আসামি Abraham L. Erlanger হাজির ছিলেন না। ফলে তাকে আর জেরা করা হয়নি। তিনি বাদে যতজন সেখানে উপস্থিত ছিল, তাদের জেরা করার সময় গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো বিচারক সাহেব ‘Overruled’ করে যান। একে একে সবাই খালাস পায়। আর বিশাল অঙ্কের মানহানি মামলায় Mr. Fiske-কে অভিযুক্ত করা হয়।

তবে তিনি যে ভয়ংকর সত্য প্রকাশের সাহস দেখিয়েছিলেন, তার গুরুত্ব যদি সেই যুগের মানুষরা উপলব্ধি করতে পারত, তাহলে জ্যান্টাইল যুবসমাজের নৈতিকতাবোধ কখনো ধ্বংস হতো না। তিনি ঠিকই বলেছিলেন, এই শিল্পে অশ্লীলতার যাত্রা তাদের হাত ধরেই হয়েছে, যারা একসময় জুতা পালিশ, পত্রিকা বিক্রি এবং টোকাইয়ের কাজ করত। সেকালে এই শিল্পের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন Morris Gest। তিনি ছিলেন রাশিয়ান ইহুদি। আমেরিকার সবচেয়ে বড়ো প্রোডাকশন হাউজ তার হাতে গড়ে ওঠে। থিয়েটার জগতের প্রথম দুটি অশ্লীল নাটক ‘Aphrodite’ ও ‘Mecca’ তার বিনিয়োগকৃত অর্থেই নির্মিত হয়। মজার বিষয় হচ্ছে, নাটক দুটির সব টিকিট এক বছর আগেই বিক্রি হয়; যার অধিকাংশ ক্রেতা ছিল জ্যান্টাইল।

Mr. Gest-এর সফলতার বড়ো কারণ হলো—তিনি হাতের কাছে যা পেয়েছেন, তা-ই করেছেন। রাশিয়া থেকে আমেরিকায় আসার পর প্রথমে তিনি বোস্টনে পত্রিকা বিক্রির কাজ করতেন। এরপর প্রপারটি বয়ের কাজ শুরু করেন (যারা বিশেষ কোনো চরিত্র ছাড়া নাটক-সিনেমাতে অংশগ্রহণ করে, তাদের প্রপারটি বয় বলা হয়)। ১৯০৬ সাল থেকে তিনি চোরাই পথে থিয়েটারের টিকিট বিক্রির কাজ শুরু করেন। এজন্য বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে ধরাও খান। একসময় তাকে থিয়েটার অঞ্চলগুলোতে নিষিদ্ধ করা হয়। এ রকম হাজারো কুৎসিত গল্প তার নামের সঙ্গে মিশে আছে।

প্রডিউসার হিসেবে তিনি দর্শকদের তা-ই দিয়েছেন, যা তারা দেখতে চেয়েছে। সমাজে যখন অশ্লীলতা সবে জায়গা পেতে শুরু করেছে, তখন তিনিও নিঃসংকোচে নিজের থিয়েটারগুলোতে অশ্লীলতার সংযোজন করেন। আর জ্যান্টাইল যুবকরাও খুব আগ্রহ নিয়ে এই অনুষ্ঠানগুলো দেখতে যেত। এর দরুন সব টিকিট আগেই বিক্রি হয়ে যেত।

এমন আরেকজন ব্যক্তি হলেন Sam Harris। তিনি দীর্ঘদিন Cohan & Harris প্রতিষ্ঠানটির একজন জুনিয়র অংশীদার হিসেবে কাজ করেছেন। Sam Harris একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির দর্শককে টার্গেট করেন, যারা মারামারি, রক্তারক্তি ও ভয়ংকর শারীরিক কসরতের প্রদর্শন দেখতে পছন্দ করত। তাদের জন্য ‘Atrocious Melodrama’ নামে নতুন একটি শৈলী তিনি থিয়েটার শিল্পে নিয়ে আসেন। সেকালের সেরা বক্সিং তারকাদের সঙ্গে তিনি চুক্তি করেন। যেমন : Dixon ও Terry McGovern। তা ছাড়া সুঠাম দেহের সকল যুবকদের তিনি থিয়েটারে আমন্ত্রণ জানাতেন। তাদের দিয়ে ভয়ংকর সব শারীরিক কসরত (Stunt) প্রদর্শনের আয়োজন করা হতো। Sam Harris নিজের প্রোডাকশন হাউজকে শক্তিশালী করতে Al H. Woods-কে অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব করেন।

Mr. Woods ব্যক্তি হিসেবে কিছুটা অসংযত হলেও শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষকতায় তার বেশ অবদান রয়েছে। তিনি একসময় নিউইয়র্কের একটি নাট্যদলের হয়ে পিয়ানো বাজাতেন। তার নেতৃত্বে থিয়েটার জগতে কালজয়ী দুটি নাটকের জন্ম হয় : ‘The Girl from Rector’s’ ও ‘The Girl in the Taxi’। ভিয়েনার থিয়েটার প্রতিষ্ঠান ও অপেরা হাউজগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে তিনি যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। তবে এটাও ঠিক, সেখানে তখন অশ্লীলতা ও নগ্নতার জমজমাট প্রদর্শন হতো। এ জাতীয় প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করতে গিয়ে তিনি নিজেও একসময় অশ্লীলতার মাঝে হারিয়ে যান।

Al Woods-এর মতো হাতেগোনা কয়েকজন ব্যক্তি বাদে এই শিল্পটি একদল অশিক্ষিত, মূর্খ ও নৈতিকতাহীন মানুষদের হাতে পড়ে। যারা সাহিত্যের কিছুই বোঝে না, তারাই আমাদের সাহিত্য শেখাচ্ছে। যারা দর্শনের কিছুই জানে না, তারাই দর্শন শেখাচ্ছে। যাদের কোনো নৈতিকতাবোধ নেই, তারাই আবার নৈতিকতার সবক দিচ্ছে।

Devid Belasco থিয়েটার জগতের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। অভিনয় দক্ষতার জন্য তাকে বিভিন্ন মহল থেকে আমন্ত্রণ জানানো হতো। খুব অল্প সময়ে তিনি দর্শকদের মন জয় করে ফেলেন। তিনি যখন যীশুর চরিত্রে অভিনয় করতেন, তখন অনেকেই তার মাঝে যীশুর ছায়া খুঁজে পেত।

আঠারো শতকের শেষের দিকে ট্রাস্টের বিভিন্ন সদস্যের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয়। সিরাকিউস থিয়েটারের ম্যানেজার Samuel Shubert ছিলেন এই ট্রাস্টের একজন সদস্য। জীবনের প্রথম দিকে থিয়েটার হলগুলোতে তিনি চা-নাস্তা তৈরির কাজ করতেন। কিছুদিন পর তিনি চোরাই পথে টিকিট বিক্রির কাজ শুরু করেন। এই টাকা জমিয়ে একসময় নিজের নামে একটি থিয়েটার খুলে বসেন। তার থিয়েটারের মূল বিষয় ছিল ‘Burlesque and Comedy’ অর্থাৎ যৌন আবেদনময়ী কৌতুক নাটক।

১৯০০ সালে Belasco ও Shubert ট্রাস্টের বিভিন্ন সদস্যের সঙ্গে ঝগড়া করে বেরিয়ে আসেন। নিউইয়র্কে তাদের ভক্তের অভাব ছিল না। থিয়েটারগুলোতে তখন খ্রিষ্টানরা

সুবিধা করতে পারছিল না বলে অনেকে ক্ষেপে গিয়েছিল। এই ক্ষোভটাকে তারা সুযোগ হিসেবে কাজে লাগায়। Shubert নাট্যগল্প সংগীতে, টিকিট বিক্রি ও থিয়েটার প্রচারণার কাজ করত। Belasco সেই গল্প অনুযায়ী ছোটোখাটো থিয়েটারগুলোতে অভিনয় করত। যীশু, পবিত্র আত্মা, খ্রিষ্টান পুরোহিত ইত্যাদি নানা চরিত্রে তিনি দর্শকদের আকর্ষণ করার চেষ্টা চালাতেন। তার শারীরিক গঠন, কম্পমান কণ্ঠ, রুপালি চুল এবং লাজুক দৃষ্টি খ্রিষ্টান মেয়েদের মনে ছোবল মারত। অভিনয় শেষে তিনি ট্রাস্ট সংগঠনটির কুৎসিত বিভিন্ন গল্প এবং কীভাবে সেখান থেকে বেরিয়ে এলেন, তা তুলে ধরেন। ধীরে ধীরে সংগঠনটির প্রতি মানুষের অনীহা বাড়তে শুরু করে। তা ছাড়া উনিশ শতকের শুরুতে বার্ধক্যের কারণে সংগঠনটির অনেক সদস্য মারা যায়।

বাজারের এমন অবস্থা দেখে ১৯০৭ সালে ম্যানহ্যাটনে তিনি নিজেই একটি থিয়েটার খুলে বসেন। ততদিনে সবাই তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে পড়েছিল। শুরু থেকেই তিনি সফলতা পাচ্ছিলেন। ১৯১০ সালে পুরোনো ট্রাস্ট সংগঠনটি একেবারে ভেঙে যায়। এবার সেই সদস্যরা একে একে বেলাস্কো থিয়েটারে যোগ দেওয়া শুরু করে। এভাবে জন্ম নেয় নতুন আরেকটি ট্রাস্ট সংগঠন 1

মানুষ ভেবেছিল, এবার হয়তো খ্রিষ্টান অভিনেতারা থিয়েটার শিল্পে জায়গা পাবে। নতুন সংগঠনটি হয়তো পৃষ্ঠপোষকতা করবে। কিন্তু এখানেও তাদের বোকা বানানো হয়। মানুষ বুঝল না, সংগঠনটি নতুন হলেও ভেতরের মানুষগুলো পালটায়নি। খ্রিষ্টানদের ছদ্মনাম ব্যবহার করে তারা আবারও এই ট্রাস্টে যোগ দেয়। তাই সাধারণ মানুষ তাদের সনাক্ত করতে পারেনি। লেখক, নাট্যকারসহ কেন্দ্রীয় চরিত্রগুলো আগের মতো এবারও তাদের দখলে গেল। পার্শ্ব চরিত্রে কিছু সুন্দরী খ্রিষ্টান তরুণীকে নিয়ে আসা হতো। তবে তাদের অভিনয় যেন ইহুদিদের মতো হয়, তার জন্য আগে থেকেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো। তারা নিজেদের পৌরাণিক গল্পগুলো নিয়ে নাট্যশালার আয়োজন করত। ধীরে ধীরে মানুষ আবারও থিয়েটারের দিকে ফিরেতে শুরু করল। যারা কিছুদিন আগেই ইহুদিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল, তারা বুঝতেই পারল না, এই অভিনেতাদের আসল পরিচয় তাদের ছদ্মনামের নিচে লুকিয়ে আছে।

একসময় মানুষ যখন সবকিছু স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়, তখন সবাই ছদ্মনামের খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসা শুরু করে। সে সময়ের বেশ কিছু জনপ্রিয় অভিনেতা হলেন : Al Jolson, Charlie Chaplin, Louis Mann, Sam Bernard, David Warfield, Joe Weber, Barney Bernard, Ed Wynne, Israel Leopold, Lou Fields, Eddie Cantor Robert Warwick ।

একইভাবে জনপ্রিয় কিছু অভিনেত্রী হলেন : Theda Bara, Nora Bayers, Olga Nethersole, Irene Franklin, Gertrude Hoffman, Mizi Hajos, Fanny Brice, Bertha Kalisch, Jose Collins, Ethel Levy, Belle Baker, Constance Collier এবং Anne Held। এমন আরও অনেকে আছেন, যাদের সত্যিকারের পরিচয় কখনো প্রকাশ পায়নি। কারণ, তারা ছদ্মনামেই খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

এত কিছুর পরও তাদের সাধ মিটল না। এবার তারা থিয়েটারকে কেবল নাট্যশিল্পে আবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দিতে চাইল সংগীত, নৃত্য-সংগীত ও চলচ্চিত্রে। এর জন্য দরকার পড়ে আলাদা আলাদা গান, কবিতা ও গল্প-উপন্যাসের। কিন্তু তাদের ভালো কোনো সুরকার, গল্প লেখক ও মঞ্চ ডিজাইনার ছিল না। ফলে বিখ্যাত কিছু জ্যান্টাইল কবি, গীতিকার, সুরকার, নাট্য লেখক ও গল্প লেখকদের তারা অর্থের বিনিময়ে আমন্ত্রণ জানাতে শুরু করে। এমন কিছু ব্যক্তির নাম নিচে উল্লেখ করা হলো—

Victor Herbert ও Gustav Kerker আমেরিকার সংগীত শিল্পে জনপ্রিয় দুটি নাম। বিখ্যাত গল্প The Lion and The Mouse-এর লেখক Charles Klein। এমন আরও অনেকে হলেন—Jack Lait, Montague Glass, Samuel Shipman, Jules Eckert Goodman Aaron Hoffman ।

তাদের নির্দেশনায় বাধ্য হয়ে জ্যান্টাইল লেখকরাও একসময় যৌন গল্প লিখতে শুরু করে। যে গল্পে যৌনতার ন্যূনতম সংস্পর্শ নেই, তার প্রতি পরিচালক, প্রডিউসার ও ট্রাস্ট বোর্ড কোনো রকম ভ্রুক্ষেপ করে না। কোনো অভিনেতা যদি এসব গল্পে অভিনয় করতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে তাকে একেবারে বের করে দেওয়া হয়।

Shuberts নিউইয়র্কসহ আশপাশের বেশ কিছু থিয়েটার প্রতিষ্ঠান ইজারা নেওয়া শুরু করে। গান, গল্প, অভিনয়ের মতো শিল্পের কোনো শাখায় তার ন্যূনতম জ্ঞান ছিল না। তবে কীভাবে টিকিটের মূল্য বাড়াতে হয় এবং দর্শকদের থিয়েটারে আনতে হয়, তিনি তা খুব ভালো করেই জানতেন।

১৯২০ সালে থিয়েটার শিল্পে বড়ো ধরনের ধস নামে। প্রায় ৩ হাজার থিয়েটারশিল্পী তাদের পেশা পরিবর্তন করতে অন্যত্র চলে যায়। অনেকে থিয়েটার হলগুলো বিক্রি করা শুরু করে। এমন কঠিন অবস্থার মধ্যেই Shuberts নিউইয়র্কে ৬টি থিয়েটার হল ও ৪০টি নতুন নাটক তৈরির আগাম ঘোষণা দেয়। এমন হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে অনেকে তাকে পাগলও বলতে থাকে; কিন্তু তিনি কী তৈরি করবেন, তা সাধারণ মানুষ তখনও বুঝতে পারেনি। তার চিন্তা ছিল গল্প-নাটক যা-ই হোক, তাতে যদি নগ্নতার মিশ্রণ থাকে, তাহলে দর্শকের অভাব হবে না।

১৯১০ সালের পর থেকে ‘চলচ্চিত্র’ নামক একটি নতুন শিল্পের জন্ম হয়, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় ‘Motion Picture’। নতুন নাটক তৈরির আগাম ঘোষণা দেওয়ার অর্থ হচ্ছে- তিনি ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র শিল্পেও ক্ষমতাধর হতে চলেছেন। এ পর্যায়ে এসে নৈতিকধর্মী থিয়েটার শিল্পের চূড়ান্ত মৃত্যু হয়। আজ একজন অভিনয় শিল্পীর দক্ষতা মাপা হয় পরিচালকের নির্দেশে তিনি কতটুকু অভিনয় করতে পারছেন তার ওপর। মহিলা শিল্পীদের জামা-কাপড় নির্ধারণে আজ আর কোনো নিয়মনীতি নেই। গান ও নৃত্য প্রদর্শনে যে যুবতিদের মঞ্চে উঠানো হয়, তাদের খামারের মুরগি বললেও ভুল হবে না।

সাধারণ মানুষ আজ আর নৈতিকতার জন্য আন্দোলন করে না। ইহুদিরা আঁচ করতে পেরেছিল, তাদের যৌনতা ভরা চলচ্চিত্রশিল্প নিয়ে জান্টাইল সম্পাদকরা একসময় মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। তাই তাদের ঘুস দিয়ে নিজেদের দলভুক্ত করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা চালায়। কিন্তু এমন অনেক সম্পাদক ছিল, যারা তাদের অর্থের সামনে বিক্রি হয়ে যায়নি। যেমন : S. Metclafe, Hillery Bill, Frederick F. Schrader, Norman Hapgood এবং James O Donnell Bennett। তারা যথাক্রমে Life, New York Press, Washington Post, New York Evening Globe Chicago Record- Herald পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন।

সম্পাদকদের কাবু করতে না পারায় ইহুদিরা পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলো কাবু করতে শুরু করে। আর এটাই ছিল তুলনামূলক সহজ কাজ। প্রথমে তারা বড়ো অঙ্কের অর্থ অনুদানের লোভ দেখিয়ে দলে ভেড়ানো শুরু করে। এতে কাজ না হলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দিয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়। এভাবে একে একে সবাই ইহুদিদের পায়ের নিচে ধরনা দিতে বাধ্য হয়। তারপর যেসব সম্পাদক তাদের বিরুদ্ধে লিখতে পারে বলে আশঙ্কা হয়, তাদের সবাইকে একে একে চাকরিচ্যুত করা হয়। এভাবে থিয়েটার ও চলচ্চিত্রশিল্প হয়ে উঠে ইহুদিদের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার উপার্জনের সম্ভাবনমায় উৎস।

ইহুদিদের নগ্নতার থাবায় চলচ্চিত্রশিল্প

Anthony Comstock-এর নাম শুনেছেন কখনো? তিনি মিডিয়া জগতের বিখ্যাত কোনো ব্যক্তিত্ব নন। তার নাম উচ্চারিত হলে চারদিকে হাসির ধুম পড়ে যেত। পত্রিকায় তাকে নিয়ে অনেক ব্যঙ্গ কলাম লেখা হতো। অথচ বাস্তবে তিনি ছিলেন অশ্লীলতা, নোংরামি এবং সকল অসামাজিক কাজের বিরুদ্ধে একজন প্রতিবাদী ব্যক্তি। পেশায় ছিলেন পোস্টাল পুলিশ ডিপার্টমেন্টের সদস্য। এসব অপসংস্কৃতি যেন সমাজে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য তিনি ‘সেন্সর বোর্ড’ তৈরির প্রস্তাব করেন। আর এ কারণেই তিনি ইহুদি নিয়ন্ত্রিত চলচ্চিত্রশিল্পের কাছে চির শত্রু বনে যান। সাধারণ মানুষ যেন তার কথায় কর্ণপাত না করে, এজন্য পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া হয়। ১৯১৫ সালে তিনি মারা যান।

ব্যাপারটা এমন নয়—তারা ইচ্ছা করে খারাপ ও নোংরা জিনিস তৈরি করে। মূলত তাদের রুচিবোধটাই এমন। ইহুদিরা নোংরামির কতটা নীচু স্তরে পৌঁছে গেছে, তা তারা উপলব্ধিও করতে পারে না। এটা সত্যি, এখনও কিছু ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ হচ্ছে। তবে তাদের সহমর্মিতা জানানো ছাড়া আর কিছুই করার নেই। কারণ, দর্শকসমাজ আজ সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রের দিকে ফিরেও তাকায় না। সেন্সর বোর্ড প্রতিষ্ঠা পেলে ইহুদিদের নগ্নতা ভরা চলচ্চিত্রশিল্প ভয়ানক হুমকির মুখে পড়ত। তাই তারা সুকৌশলে এটাকে ঠেকিয়ে দিতে চেষ্টা করে।

১৯০৯ সালে নিউইয়র্ক শহরে National Board of Review of Motion Pictures প্রতিষ্ঠিত হয়। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে অশালীন ও নগ্ন চলচ্চিত্রের নির্মাণ ঠেকাতে চারদিকে যখন আন্দোলন শুরু হয়, তখন চাপের মুখে এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রথমে এর নাম ছিল Motion Picture Censorship। মানুষ ভেবেছিল, এবার হয়তো অশ্লীল চলচ্চিত্রের নির্মাণ বন্ধ হবে। কিন্তু সংগঠনটির উদ্দেশ্য ছিল এই বিশেষ চলচ্চিত্ৰ নির্মাতা গোষ্ঠীটির স্বার্থ রক্ষা করা এবং কিছু একটা বুঝিয়ে সাধারণ মানুষদের আন্দোলনকে কবর দেওয়া। Frederick Boyd Stevenson সংগঠনটির একজন সাবেক কর্মী। ব্রুকলাইনের Eagle ম্যাগাজিনে তিনি উল্লেখ করেন—

‘চলচ্চিত্র শিল্পের নাটাই ধরে যে যৌনতা সমাজে প্রবেশ করেছে, তার দরুন সন্ত্রাসী তৎপরতা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্দোলন ও মামলা- মোকাদ্দমা করেও যৌনতার আঠালো থাবা থেকে এই শিল্পকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না। যেখানে একটি সুস্থ-শালীন চলচ্চিত্র থেকে আয় হয় ১ লক্ষ ডলার, সেখানে যৌনতা ভরা একটি চলচ্চিত্র থেকে আয় হয় ২.৫ লক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ ডলার। তাহলে বাজারে কোন চলচ্চিত্র বৃদ্ধি পাবে?’

Dr. James Empringham নিউইয়র্কের World ম্যাগাজিনের একটি কলামে লিখেন—

‘কিছুদিন আগে চলচ্চিত্রশিল্প নিয়ে আমেরিকার বিভিন্ন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান একটি সম্মেলনের আয়োজন করে। আমাকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। অবাক করা ব্যাপার—উপস্থিত ৫০০ জন সদস্যের মধ্যে কেবল আমিই ছিলাম খ্রিষ্টান, আর বাদ বাকি সবাই ইহুদি।’

শতাব্দীর শুরুতে মাত্র ১০টি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আমেরিকার প্রায় ৯০ ভাগ চলচ্চিত্র নির্মাণ করত। এর ৮৫ ভাগ সদস্যই ছিল ইহুদি। দর্শকসংখ্যা বাড়াতে পৃথিবীজুড়ে তারা অসংখ্য শাখা প্রতিষ্ঠানের জন্ম দেয়। পৃথিবীর আনাচে-কানাচে তৈরি করে দশ হাজার সিনেমা হল। যে গ্রাম্য মানুষ একসময় থিয়েটারও দেখতে যেত না, তারা আজ দল বেঁধে সিনেমা হলে যাচ্ছে।

বাজারে সুন্দর ও সুস্থ ধারার চলচ্চিত্রের অভাব নেই—এটা শুনে পাঠকরা হয়তো চোখ কপালে তুলবেন। সত্যি বলতে শিক্ষামূলক, মার্জিত ও সুস্থ ধারার অনেক চলচ্চিত্র এখনও তৈরি হচ্ছে, তবে তা দর্শকমহলে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। হল মালিক এমন কোনো চলচ্চিত্র প্রদর্শনে রাজি হবে না, যেখানে বাণিজ্যিক ঝুঁকি রয়েছে। সবার মনে এমন একটি ধারণা গেঁথে বসেছে, নগ্নতা ও যৌনতার সংস্পর্শ না থাকলে দর্শক সিনেমা হলে আসবে না।

তবে এই ধারণার বিরুদ্ধে সমুচিত জবাব দেন David Wark Griffith। ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে তিনি একটি শিক্ষণীয় চলচ্চিত্র তৈরি করেন। ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে বেশ কয়েকটি সিনেমা হল ভাড়া নেন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, চলচ্চিত্রটি বাণিজ্যিকভাবে বেশ সফল হয়। সেইসঙ্গে দর্শকরাও দারুণ মুগ্ধ হয়।

তাহলে ইহুদিরা এমন চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে না কেন? আপনাদের বুঝতে হবে—যাদের মধ্যে শিক্ষা, সাহিত্য, আদর্শ ও নৈতিকতার জ্ঞান নেই, তারা কখনো নোংরামি ছাড়া অন্য কিছু করতে পারে না। যে মাছ ধরতে জানে না, সে তো কেবল পানি-ই ঘোলা করবে। ‘শিল্প’ বিষয়টা কী, তা-ই তো ইহুদিরা জানে না। তারা বলে—দর্শক যা চাচ্ছে, আমরা তা-ই তৈরি করছি। এটা ঠিক যে, বর্তমান যুবসমাজের বিরাট একটা অংশ নৈতিকতা বিবর্জিত। সমাজের এই অধঃপতন কীভাবে হয়েছে, তা ইতোমধ্যেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যীশুকে আজ আমরা কজনই-বা স্মরণ করি! প্রতি সপ্তাহে কজন গির্জায় যাই? এমতাবস্থায় যৌনতা ভরা চলচ্চিত্রে দর্শকের অভাব হওয়ার কথা নয়।

Carl Laemmle একজন বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং Universal Film Company – এর মহাপরিচালক। জন্মসূত্রে তিনি জার্মান ইহুদি। আমেরিকান দর্শকরা কোন ধরনের চলচ্চিত্র দেখতে আগ্রহী, তা জানার জন্য ‘What Do You Want?’ শিরোনামে তিনি একটি জরিপ করেন। Mr. Laemmle ধারণা করেছিলেন, হয়তো ৯৫ শতাংশ দর্শক বলবে তারা সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র দেখতে আগ্রহী, কিন্তু ৬০ শতাংশ দর্শকই যৌনতাময় চলচ্চিত্রকে সমর্থন করে!

‘কোকেন’ যেমন একজন মাদকাসক্তের দৈনন্দিন চাহিদা, তেমনি যৌন চলচ্চিত্রও নৈতিকতা বিবর্জিত সমাজের দৈনন্দিন চাহিদা। মাদকাসক্ত রোগীর সুস্থতার জন্য তাকে যেমন কোকেন থেকে দূরে রাখা উচিত, তেমনি সমাজে নৈতিকতা ফিরিয়ে আনতে যৌন দৃশ্যের প্রদর্শন বন্ধ করা উচিত। দর্শক যা চাচ্ছে, তা-ই তাদের দিচ্ছি—এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না।

অশ্লীল চলচ্চিত্রের নির্মাণ ঠেকাতে আমেরিকার বার কাউন্সিলে বেশ কয়েকটি প্রোডাকশন হাউজের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলা ঠেকাতে যে উকিল ও আইনজীবীগণ হাজির হন, তারা সবাই ছিলেন ইহুদি। যেমন : Meyers, Ludvigh, Kolm, Friend ও Rosenthal; এমনকী একজন রাবাইকে পর্যন্ত এই আন্দোলন ঠেকানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি খুব চৌকসভাবে একটি বক্তৃতা দেন। তার কিছুটা অংশ তুলে ধরা হলো—

‘আমি একজন ইহুদি। আপনাদের কি মনে আছে, অশ্লীল থিয়েটারগুলো ইতঃপূর্বে আমাদের ধর্মকে ছোটো করে কত নাট্যশালার আয়োজন করেছে? দর্শকদের নিকট আমাদের ধর্মকে কতটা হাস্যরসাত্মক বানিয়েছে? আমাদের হৃদয়ে তা কতটা কষ্টের দাগ কেটেছে?’

তাদের ধর্মকে যদি কেউ ছোটো করে থাকে, তবে সেটা তারাই করেছে। আগেই বলেছি, শিল্পকলা সম্পর্কে খ্রিষ্টান শিল্পীদের যথেষ্ট জ্ঞান ছিল। নিছক একটি ধর্মের পেছনে লাগার কোনো প্রয়োজন তাদের পড়েনি।

তিনি আরও বলেন—’বিষয়টির সমাধান করতে আমরা B’nai Brith নামে এক সংগঠন তৈরি করি। সংগঠনটি বর্তমানে Anti – Defamation League নামে পরিচিত, যার সদর দপ্তর শিকাগোতে অবস্থিত। আমরা একত্রিত হয়ে ক্যাথলিক গির্জা, সমাজের ধর্মীয় সব সংগঠন এবং নির্মাতা প্রতিষ্ঠানদের নিকট চিঠি পাঠাই, যেন আমাদের ধর্মকে অবজ্ঞা করে আর কোনো চলচ্চিত্র তৈরি না হয়। পৌরাণিক চরিত্রগুলো উপস্থাপন করতে সমস্যা নেই, কিন্তু তাদের নিয়ে যেন ব্যঙ্গ চিত্র করা না হয়। এরপর আমরা প্রতিটি পৌরসভা কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি পাঠাই এবং ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করি, যেন এমন কোনো চলচ্চিত্র বা নাটকের অনুমতি দেওয়া না হয়, যেখানে আমাদের ধর্মকে অশ্লীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ফলাফল কী? আমরা কোনো কংগ্রেস বা আদালতে মামলা করতে যাইনি। আমরা কিন্তু আপনাদের মতো দল বেঁধে আন্দোলনও করিনি। আমরা সবাই একতাবদ্ধ হয়েছিলাম এবং একত্রিত হয়ে ধর্মবিরোধী চলচ্চিত্র নির্মাণ বন্ধ করেছি।’

সত্যই যদি ধর্মকে অপবিত্রতার হাত থেকে রক্ষা করা Anti – Defamation Leauge-এর উদ্দেশ্য হয়, তাহলে খ্রিষ্টান ধর্মকে যখন কলুষিত করা হয়, তখন তারা চুপ থাকে কেন? রাবাই যদি খ্রিষ্টানদের এত উপদেশ দিতে পারেন, তাহলে নিজেদের কেন এই উপদেশ দিচ্ছেন না?

রাবাই আরও বলেছেন—’অশ্লীল-নোংরা থিয়েটারগুলো ইতঃপূর্বে বহুবার তাদের ধর্মকে ছোটো করেছে।’

বিশ্বাস করা যায়, আমেরিকার মাটিতে ইহুদি ধর্মকে ছোটো করা হয়েছে! এটা তো কোনো খ্রিষ্টানের পক্ষে কল্পনা করাও অসম্ভব! ভিনগ্রহের কোনো এলিয়েন যদি করে থাকে, তবেই মেনে নেওয়া সম্ভব। তাহলে তাদের ধর্মকে কীভাবে ছোটো করা হলো? উত্তর শুনলে পিলে চমকে যাওয়ার মতো অবস্থা হবে।

কোনো জনসমাবেশে যদি যীশুকে স্মরণ করা হয়, তবে তা ইহুদিদের জন্য চরম অপমানকর বিবেচনা করা হয়। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যদি জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদানকালে যীশুর নাম উল্লেখ করেন কিংবা কোনো চলচ্চিত্রে খ্রিষ্টধর্মকে মর্যাদার সঙ্গে প্রচার করা হয়, তবে সেটাকেও চরম অপমানকর মনে করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, সেকালে Life of the Savior নামক একটি চলচ্চিত্রের প্রচারণা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। কারণ, উক্ত সিনেমায় যীশু ও খ্রিষ্টান ধর্মকে বড়ো করে উপস্থান করা হয়েছে।

Way Down East ও The Shepherd of the Hills চলচ্চিত্র দুটিকে কেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল? কারণ, গ্রাম্য জীবন, কৃষি সংস্কৃতি ও জীবন-প্রবাহ সম্পর্কে ইহুদিদের কোনো ধারণা ছিল না। গ্রামের মানুষদেরও যে একটা জীবন আছে, তা তারা বুঝতেই চাইত না। তাদের জন্ম হয়েছে বিভিন্ন শহুরের অলিতে-গলিতে। যেমন : ফ্রাঙ্কফ্রুট, হ্যানয়, ওয়ারস, নিউইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিস ইত্যাদি। কৃষকরা তো তাদের কাছে হাসির পাত্র।

ইহুদিরা ভাবে—এই ধরনের চলচ্চিত্র দিয়ে তাদের বক্স অফিসে পয়সা আসবে না। সুতরাং এসবের পেছনে সময় নষ্ট করার কোনো প্রয়োজন নেই। তা ছাড়া তারা এটাও চায় না—এমন কোনো চলচ্চিত্রের প্রদর্শন হোক, যেখানে পুঁজিবাদ ব্যাংকিং ব্যবস্থার কারণে গ্রাম্য কৃষকদের নিষ্পেষিত জীবনচিত্র ফুটে ওঠে।

চলচ্চিত্রশিল্প থেকে শালীনতা ও নৈতিকতা যে বহু আগেই বিদায় নিয়েছে, তা আমরা ভালো করে জানি। তারপরও অনেক সংগঠন এ পর্যন্ত ছোটোখাটো বহু আন্দোলন করেছে, কিন্তু ফলাফল কিছুই হয়নি। কারণ, আমরা সমস্যার মূল শিকড়ে পৌঁছাতে পারিনি। কে জানে, যারা আন্দোলন করছে তারা হয়তো ইহুদিদেরই কিছু সদস্য! আমরা যদি এসব সংগঠন ও সদস্যদের চিহ্নিত করতে না পারি, তাহলে বছরের পর বছর আন্দোলন করেও কোনো সমাধান হবে না।

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র শিল্পে ইহুদিদের একচেটিয়া আধিপত্য

একটা সময় ছিল, যখন ইহুদিরা খ্রিষ্টান ছদ্মবেশে ব্যাবসা-বাণিজ্য করত, যেন তাদের কেউ অবজ্ঞা না করে। তবে আজ তারা অনেক সাবলম্বী। সমাজে এখন নিজ পরিচয়ে কাজ করতে পারে। সম্পদ তো অনেক হলো, এবার কিছু খ্যাতি কামানো দরকার! সেই কাজটা করে দিয়েছে চলচ্চিত্র শিল্প, যা আজ তাদের মিলিয়ন ডলার উপার্জনের রাস্তা করে দিয়েছে। এখন তাদের প্রথম লক্ষ্য, যেভাবেই হোক সিনেমা হলগুলোতে দর্শক বাড়াতে হবে। দেখবেন, দিন-রাত সিনেমা হলগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এমন তো নয়—প্রতিদিন-ই সুন্দর সুন্দর চলচ্চিত্র, গল্পনাট্য ও প্রমাণ্যচিত্র প্রদর্শন হচ্ছে, তাহলে মানুষ হলগুলোতে প্রতিদিন কী দেখার জন্য এত ভিড় করে?

কেউ না কেউ তো আছেই, যে আমাদের মগজ নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা ঠিক, আধুনিক বিজ্ঞানের অনেক কিছুই ইহুদিরা আবিষ্কার করেছে, কিন্তু তার অধিকাংশই মানব সভ্যতার কোনো উপকারে আসেনি। কারণ, এগুলো দিয়ে কেবল সভ্যতাকে ধ্বংসই করা যায়; গড়া সম্ভব নয়।

যে প্রতিষ্ঠানগুলো আজ পুরো পৃথিবীর চলচ্চিত্রশিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো : The Famous Players, Selznick, Selwyn, Goldwyn, Fox Film Company, The Jesse L. Lasky Feature Play Company, United Artists’ Corporation, The Universal Film Company, The Metro, Vitagraph, Seligs, Thomas H. Ince Studios, Artcraft, Paramount Picture ইত্যাদি। এবার প্রতিষ্ঠানগুলো কাদের হাতে জন্ম নিয়েছে এবং কারা পরিচালনা করছে, তা নিচে উপস্থাপন করা হলো-

The Famous Players প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালক হলেন Adolph Zukor। তিনি একজন হাঙ্গেরিয়ান ইহুদি। চলচ্চিত্র জগতে আসার আগে নিউইয়র্কের হ্যাস্টার স্ট্রিটে পশমি পণ্যের ব্যাবসা করতেন। মানুষের ঘরে ঘরে পণ্য ফেরি করতেন। জীবনের প্রথম সঞ্চিত অর্থ তিনি ‘নিকেল থিয়েটারে’ বিনিয়োগ করেন এবং Marcus Loew-এর সাথে যৌথভাবে কাজ শুরু করেন।

Adolph Zukor পরবর্তীকালে আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের ওপর নিজের ক্ষমতা বিস্তৃত করেন। যেমন : Famous Players – Lasky Corporation, The Oliver Morosco Photoplay Company, Paramount Pictures Corporation Artcraft Pictures । এভাবে ধীরে ধীরে তিনি আমেরিকার অন্যতম ধনকুবের হয়ে ওঠেন।

অনেকে বলে United Artists Corporation জ্যান্টাইলদের প্রতিষ্ঠান, কিন্তু American Hebrew ম্যাগাজিনের একটি আর্টিকেল অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির প্রধান পরিচালক হলেন Hiram Abrams। এটি একসময় চারজন তারকা অভিনেতা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের নাম হলো Mary Pickford, Douglas Fairbanks, Charlie Chaplin ও David Wark Griffith। জন্মসূত্রে Hiram Abrams রাশিয়ান ইহুদি। ওরেগন শহরে থাকাকালে তিনি সংবাদপত্র বিক্রি করতেন। কিছুদিন পর ‘Penny Arcade’ নিয়ে কাজ শুরু করেন। Paramount Pictures Corporation-এর তিনি একজন যৌথ প্রতিষ্ঠাতা এবং এর কিছুদিন পরই প্রেসিডেন্ট হন।

Fox Film Corporation ও Fox Circuit Theater প্রতিষ্ঠান দুটি William Fox-এর একক নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হতো। তিনি একজন হাঙ্গেরিয়ান ইহুদি। ধারণা করা হয়—তার প্রকৃত নাম William Fuchs। একসময় তিনি স্পঞ্জ কাপড়ের বাণিজ্য করতেন। তা ছাড়া ‘Penny Arcade’ বাণিজ্যের মধ্য দিয়ে তিনি পেশাজীবন শুরু করেন। এটি অনেকটা বায়োস্কোপের মতো। বাক্সের ভেতর নাটাইয়ের একটি রিলে অনেকগুলো পর্ন ছবি স্থিরচিত্র আকারে সাজানো থাকত। বাক্সের ফুটায় চোখ রাখা মাত্রই রিল ঘুরিয়ে স্থির চিত্রগুলো পর্যায়ক্রমে দেখানো হতো। কিছু কয়েনের বিনিময়ে যে কেউ-ই এসব দেখতে পারত।

Metro Pictures Corporation গড়ে তোলার পেছনে বিশেষ দায়িত্ব পালন করেন Marcus Loew। সেকালে তিনি আমেরিকার ৬৮টি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও শেয়ারহোল্ডার ছিলেন।

চলচ্চিত্র শিল্পের ইতিহাসে Marcus Loew ও Adolph Zukor খুব পরিচিত দুটি নাম। তারা উভয়েই একসময় পশমি পণ্যের বাণিজ্য করতেন। Zukor একাই চলচ্চিত্র শিল্পে বহুদূর এগিয়ে গিয়েছিলেন; যদিও পরবর্তীকালে Loew-এর প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেন। তিনি সবচেয়ে বেশি তৈরি করতেন Vaudeville শ্রেণির চলচ্চিত্র, যা মূলত নীচু শ্রেণির হলগুলোতে দেখানো হতো। পরবর্তী সময়ে তিনি একাই ১০৫টি সিনেমা হল গড়ে তোলেন।

Goldwyn Film Corporation পরিচালনা করতেন Samuel Goldwyn, যিনি ছিলেন একজন পোলিশ ইহুদি। চলচ্চিত্র শিল্পে আসার পূর্বে তিনি বিভিন্ন পণ্যের পাইকারি ব্যবসায় করতেন। ১৯১২ সালে Jesse Lasky ও Cecil DeMille-এর সাথে ২০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করে তার প্রথম চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এতে তিনি এতটাই লাভ করেন যে, পরবর্তীকালে ২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে Shuberts, A.H.Woods ও Selwyns-কে সাথে নিয়ে আরও একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সেখানে মূলত জ্যান্টাইল লেখকদের গল্প-উপন্যাস নিয়ে নাটক-চলচ্চিত্র তৈরি করা হতো।

Universal Film Company বাজারের অনেকের নিকট Universal City নামে পরিচিত। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠে Carl Laemmle-এর একক নিদের্শনায়। তিনি একজন জার্মান ইহুদি। ১৯০৬ সালে এই শিল্পে তিনি প্রথম পা রাখেন। পূর্বে তার কাপড়ের ব্যাবসা ছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে যখন নতুন ট্রাস্ট সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়, তখন তিনি সুকৌশলে সেখানে প্রবেশ করেন। পরে ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে লস অ্যাঞ্জেলেস Universal City প্রতিষ্ঠা করেন।

Select Picture Corporation ও Selznick Pictures প্রতিষ্ঠান দুটি গড়ে উঠে Lewis J. Selznick-এর একক নেতৃত্বে, যিনি ছিলেন একজন রাশিয়ান ইহুদি। একসময় তিনি World Film Corporation-এর সহকারী পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন

এরা ছাড়াও ইহুদিদের আরও অনেক সদস্য রয়েছে, যারা সরঞ্জামাদি প্রস্তুত, অভিনেতা বাছাই, শুটিং স্থান নির্ধারণ, সিনেমা হল তৈরি, বিজ্ঞাপনের প্রচার, বাজারে টিকিটের চাহিদা বৃদ্ধি করাসহ এ জাতীয় বিভিন্ন কাজ করত।

আমাদের চারপাশে আজ অনেকের দেখা মিলবে, যাদের নিকট চলচ্চিত্রই একমাত্র বিনোদন মাধ্যম। অনেকে আছে, যাদের দিনে একবার হলেও সিনেমা হলে যেতে হয়। আবার কেউ কেউ আছে, যাদের দুপুর ও রাতে দুইবার যেতে হয়। এখন তো প্রায় সিনেমা হলগুলোই দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। অনেকে তো দিনের ৩/৪ ঘণ্টা সময় শুধু এসব দেখেই কাটিয়ে দেয়। মূলত আমাদের মস্তিষ্কে নাটক-সিনেমার প্রতি এক অদম্য ক্ষুধার জন্ম নিয়েছে। বাজারে এসবের চাহিদা এতটা বেড়েছে, এতগুলো প্রতিষ্ঠান মিলেও এই চাহিদার জোগান দিতে সক্ষম হচ্ছে না। তাই মানুষ একই নাটক-চলচ্চিত্র বারবার দেখে সময় কাটাচ্ছে। আবার এটাও মনে রাখতে হবে, ভালো জিনিস প্রতিদিন তৈরি করা যায় না। তাই আজ যেসব চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে, তার মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটা হয়তো ভালো, আর বাদবাকি সব বস্তাপচা জিনিস। মানুষ কষ্ট করে যে অর্থ উপার্জন করে, তা নোংরামিতে ভরা চলচ্চিত্র দেখে নষ্ট করে।

চলচ্চিত্রে ইহুদি চরিত্রগুলো তখনই আনা হয়, যখন তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হয়।

১৯১১ সালে Triangle Shirtwaist Factory-তে আগুন ধরে প্রায় ১৫০ জন পোশাককর্মী মারা যায়, যাদের বেশিরভাগই ছিল নারী। এই গল্পের ওপর ভিত্তি করে নিউইয়র্ক মেয়র একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের ঘোষণা দেন; যার নাম হবে ‘The Locked Door’। গল্প লেখার দায়িত্ব পেলেন একজন ইহুদি, যিনি বিভিন্ন Holocausts-এর ওপর আগেও অনেক গল্প লিখেছেন। দুর্ঘটনায় যে নারীরা মারা যায়, তাদের চরিত্রে তিনি ইহুদি মেয়েদের চরিত্র ঢুকিয়ে দেন, যাদের নামমাত্র মূল্যে পোশাক শিল্পের মালিকরা খাটিয়ে মারছে। আগুন লাগার পর তারা বেরিয়ে আসার কোনো পথ পায়নি। কারণ, প্রধান ফটক বন্ধ ছিল। ঠিক এ রকম সুবিধাজনক জায়গাগুলোতে তারা নিজেদের চরিত্র প্রবেশ করায়। আর যখন রাবাইদের ভূমিকা আসে, তখন পূর্ণ ধর্মীয় সম্মানের সঙ্গে তাদের উপস্থাপন করা হয়।

চলচ্চিত্র শিল্পে খ্রিষ্টান ধর্মকে কতটা নোংরা করা হয়েছে, তা বিগত অধ্যায়ে বিস্তারিত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। শুধু যীশুকে ব্যঙ্গ করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি; ধর্মীয় গুরু ফাদার ও পোপদের নিয়েও অনেক নোংরা চরিত্রের জন্ম দিয়েছে। খুনি, সন্ত্রাসী, পর্নোগ্রাফি, ড্রাগ ব্যবসায় ইত্যাদি প্রতিটি চরিত্রে তাদের উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে ইহুদিদের দুটি লাভ হয়েছে—

এক. খ্রিষ্টানদের ধর্মভক্তি হ্রাস পেয়েছে।

দুই. পকেটে মুনাফার অঙ্ক ভারী হয়েছে।

আজ অনেককে বলতে শোনা যায়—’ধর্ম বলতে কিছু নেই, এটা মানুষের সৃষ্টি। যারা নিজেদের ধার্মিক বা ধর্মীয় গুরু বলে দাবি করে, তারা আসলে ধর্ম বিক্রি করে অর্থ উপার্জনের রাস্তা করছে।’ মূলত এই নাস্তিকতার প্রসার ইহুদিদের হাত ধরেই হয়েছে।

সবকিছু যে ইহুদিদের দীর্ঘ ষড়যন্ত্রের অংশ, তা কি বুঝতে কষ্ট হচ্ছে? এই শিল্পে এখন একটি বিষয় নিয়মিত দেখা যাচ্ছে। অনেক খ্রিষ্টান লেখক ইহুদিদের জন্য গল্প লিখছে। অথচ তারাই একসময় ইহুদিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিল। আর আজ তারা হলোকাস্ট ও পৌরাণিক কাহিনিগুলো নিয়ে একের পর এক গল্প লিখে যাচ্ছে। বুঝতেই পারছেন, মানুষকে ইহুদিতন্ত্রে ধাবিত করতে তারা কতটা সফল হয়েছে। (শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে গত ৭০ বছরে শুধু হলোকাস্টের ওপর হলিউডে ২৩০টিরও বেশি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে, যেন মানুষের মনে ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতি তৈরি করা যায়।)

আজ কে স্টার হবে, তা প্রডিউসার ও পরিচালকদের ওপর নির্ভর করে। যদি কোনো অভিনেতা তাদের গল্পে অভিনয় করতে রাজি না হয়, তাহলে সে সেখানেই বাদ পড়ে। তাই অনেক অভিনেতাকে আজ বিভিন্ন নোংরা পথ পাড়ি দিয়ে স্টারের খেতাব অর্জন করতে হচ্ছে। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতেও অনেকে স্টার হচ্ছেন। যেমন : সিনেমা পরিচালক ও প্রডিউসারের ছেলেমেয়ে ও আত্মীয়স্বজন।

আরেকটি বিষয় খেয়াল করার মতো। সবাইকে কিন্তু একই শ্রেণির স্টার বানানো হয় না। কাউকে প্রথম শ্রেণির, কাউকে দ্বিতীয় শ্রেণির, কাউকে তৃতীয় শ্রেণির। বাদবাকিরা থাকে পার্শ্ব চরিত্রে। এর ফলে কী হয়? প্রতি শ্রেণির স্টারের জন্য নির্দিষ্ট একটি পারিশ্রমিক বরাদ্দ করা হয়। দ্বিতীয় শ্রেণির কোনো স্টার চাইলেও প্রথম শ্রেণির মতো পারিশ্রমিক দাবি করতে পারবে না। আর পার্শ্ব চরিত্রের অভিনেতারা তো পরিচালক ও প্রডিউসারদের দয়া-মায়ার ওপর নির্ভর করে। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, প্রত্যেক অভিনেতাই নিজস্ব অবস্থান থেকে যথেষ্ট ভালো অভিনয় করছে। তারপরও সবাই একই শ্রেণির স্টার হতে পারছে না। মূলত এই বিভাজন আমাদের চলচ্চিত্রশিল্প তৈরি করেছে। নাটক-চলচ্চিত্রের চাহিদা বাজারে যত বাড়বে, স্টারদের এমন বিভাজন ততই বাড়বে।

সংগীতশিল্প ধ্বংসে ইহুদিদের পরিকল্পনা

New York Times প্রতিষ্ঠানটির মালিক আমেরিকার একজন প্রতাপশালী ইহুদি। তবুও ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমন একটি কলাম প্রকাশ করে, যার ফলে তাদের অ্যান্টি- সেমেটিক বলে অভিযুক্ত করা হয়। কলামটির কিছু অংশ উপস্থাপন করা হলো

‘Irving Berling ও Leo Feist-সহ আরও কিছু উচ্চপদস্থ ব্যক্তি সাতটি সংগীত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমেরিকার প্রায় ৮০ ভাগ কপিরাইটযুক্ত সংগীত নকল করে বাজারে পরিবেশন করছে। একই সঙ্গে তা পর্ন চলচ্চিত্রের আবহ সংগীত (Background Music) হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। টেক্সাস প্রদেশের Federal District Court-এ এ নিয়ে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পিয়ানো থেকে শুরু করে জনপ্রিয় অনেক বাদ্যযন্ত্রের সুর তারা যথেচ্ছা নকল করে যাচ্ছে। দেখা যায়—দুই-তিনটি সংগীতের সুর একত্রিত করে তারা একটি নতুন সুর তৈরি করছে।

অভিযুক্ত সংগীত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো : Consolidated Music Corporation, 144 West Thirty-seventh street, Irving Berlin Inc, 1567 Broadway; Leo Feist Inc, 231 West Fortieth Street, T. B. Harms, Francis, Day and Hunter Inc, 62 West Forty-fifth street, Shapiro, Bernstein & Company, 218 West Forty- seventh street, Watterson, Berlin & Synder Inc, 1571 Broadway and M. Witmark & Sons Inc, 144 West Thirty-seventh street।

এই প্রতিষ্ঠানগুলো মূলত Consolidated Music Corporation-এর মাধ্যমে সংঘবদ্ধ হয়ে নিজেদের পরিচালনা করছে।’

১৮৮০-এর দশকে ইউরোপ-আমেরিকার সংগীত শিল্পে বড়ো ধরনের এক বিপ্লব ঘটে। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে এই শিল্পে অনেক ভারী ভারী বাদ্যযন্ত্রের আগমন ঘটতে দেখা যায়। জন্ম নেয় জনপ্রিয় অনেক সংগীত রীতি। যেমন : Monkey Talk, Jungle Sequals, Grunts & Squaks, Gasps ইত্যাদি। এই সময় বিভিন্ন ব্যান্ড হাউজগুলোর মাঝে কাদা ছোড়াছুড়ির ঘটনাও শুরু হয়। হঠাৎ আবির্ভূত হওয়া একটি শক্তির দাপটে বাজারের জনপ্রিয় অনেক ব্যান্ড দল তাসের ঘরের ন্যায় ভেঙে পড়তে থাকে। দিশেহারা হয়ে পড়ে সেই হাউজগুলোতে কর্মরত বাদক, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীরা। সুযোগ বুঝে সেই দাপুটে শক্তিটি অর্থের জোরে তাদের নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নেয়। তাদের মেধাকে ব্যবহার করে তৈরি করে নতুন সব অর্কেস্ট্রা এবং সংগীত রীতি, যা আজ অবধি বাজারে টিকে আছে। বর্তমান এই শিল্পে যে ধাতব যন্ত্রকেন্দ্রিক নির্ভরতা, তা তাদের হাত ধরেই হয়েছে। এ ছাড়া জ্যাজ সংগীতের পুরোটাই ইহুদিদের আবিষ্কার।

ওপরে যে সাতটি প্রতিষ্ঠানের নাম বলা হয়েছে, তারা একাই আমেরিকার ৮০ ভাগ সংগীতশিল্প নিয়ন্ত্রণ করছে। বাকি যে ২০ ভাগ রয়েছে—তাও ইহুদিদের ছোটোখাটো প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণে। অবাক না হয়ে পারা যায় না—যেদিকে তাকাই, সেদিকেই ইহুদিদের সংগীত দল! অথচ তারা আদৌ সংগীতের ব্যাকরণ বোঝে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তথাপি এটাও যে অর্থ উপার্জনের খনি হতে পারে, তা ইহুদিরা আগেই আঁচ করতে পেরেছিল।

হঠাৎ এই অশুভ শক্তিটির আগমন বুঝতে পেরে তৎকালীন সংগীত বিশেষজ্ঞগণ যেসব আশঙ্কা-বাণী ব্যক্ত করেছিলেন, তা New York Times-এর সেই কলামটিতে ছাপানো হয়। যেমন :

‘পশ্চিমা সংগীতশিল্প ইহুদিদের সংক্রমণে যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমেরিকার অবস্থা তারচেয়েও খতরনাক। আজ যদি তাদের এই শিল্প থেকে নিষিদ্ধ করা হয়, তবে পুরো সংগীতশিল্পকেই বন্ধ করে দিতে হবে। এই শিল্প যেন নীরস-নিস্তেজ হয়ে পড়বে। তাদের ছলনাময়ী সংগীত সুগভীর দক্ষতায় আমাদের মনে জায়গা করে নিয়েছে। প্রথমত, তাদের কিছু সারেগামা আছে, যা মানুষের মনে ত্বরিত আনন্দ তৈরি করে; যদিও তা ক্ষণস্থায়ী। এক্ষেত্রে তারা উচ্চ ধাতব সুর (High Metalic Music) ব্যবহার করে। দ্বিতীয়ত, তাদের সংগীতের আরেক শ্রেণি চিকন ও আবেগী সুরের মাধ্যমে হতাশাগ্রস্ত মানুষদের সাময়িক আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করে। এটা মনে নেশাগ্রস্তের ন্যায় আবহ তৈরি করে। তৃতীয়ত, আবেগপ্রবণ (Romantic) ও কল্পনাপ্রেমী মানুষদের জন্য তাদের আরেকটা শ্রেণি রয়েছে। তারা দক্ষতার সঙ্গে নিজেদের হিব্রু শিল্পকে ফুটিয়ে তুলেছে এবং তা যুবসমাজের মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছে

আজকের সংগীতশিল্পকে যারা নিয়ন্ত্রণ করছে, তারা মূলত ইউরোপিয়ান ইহুদি। আজকের তরুণ প্রজন্ম প্রকৃত পক্ষে তা-ই গাইছে, যা তারা শিখিয়ে দিয়েছে। বিশ্বের বড়ো বড়ো ব্যান্ড হাউজগুলো ছাড়াও সংগীত পরিবেশনকারী কোম্পানিগুলোও তাদের আজ্ঞাধীন হয়েছে। যখনই কোনো প্রতিভাবান শিল্পীর আবির্ভাব হয়, তখন তাদের অর্থের জোরে কিনে নেওয়া হয়। তা ছাড়া বাজারে সংগীতের প্রতিটি বিপণিবিতানেও ইহুদিদের আধিপত্যের কমতি নেই। শহরের বিভিন্ন অলিতে-গলিতে, এমনকী পাড়া-মহল্লার আশেপাশে গড়ে উঠা বিপণিবিতানগুলোতেও তাদের এজেন্টরা বসে আছে। অথচ তাদের অধিকাংশই জ্যান্টাইল এজেন্ট! তারা কেবল সেসব সংগীতের অ্যালবাম বিক্রি করে, যার অর্ডার ইহুদিদের কাছ থেকে আসে। ফলে প্রতিভাবান কোনো খ্রিষ্টান চাইলেও তার সংগীত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবে না। কারণ, তার পেছনে কোনো পৃষ্ঠপোষক নেই। ফলে তাকে বাধ্য হয়ে সেই অপশক্তির নিকট ধরনা দিতে হচ্ছে। যেমন : তাদের অন্যতম একটি প্রতাপশালী প্রতিষ্ঠান হলো Tin Pan Alley, যা আজ অবধি বাজারে টিকে আছে।

একটি বিষয় বলে রাখা উচিত, ইহুদিরা সহজে নতুন কোনো গান বা সুর তৈরি করে না; আসলে তাদের সেই ক্ষমতাও নেই। তারা অন্য গানের সুর চুরি করে নতুন সুর করে এবং তা দিয়ে নতুন গান তৈরি করে। পুরাতন গানের বই, সারেগাম নোট, অপেরা স্বরলিপি, পল্লিগীতি ইত্যাদি সব খুঁজে খুঁজে তারা নিজেদের কাছে জমা করে। এসব মৌলিক সংগীতকে নিজেদের ধাতব যন্ত্রের (Metalic Instrument) নিচে রেখে বহুমাত্রিক সুর তৈরি করে। এভাবে তারা সংগীতজগতে নিজেদের আবির্ভাব ঘটিয়েছে। বর্তমান যুগে আপনারা যেসব গান শুনছেন, তার অধিকাংশই শেষ প্রজন্ম বা তার আগের প্রজন্মের গেয়ে যাওয়া গানের বিকৃত রূপ। এই চৌর্যবৃত্তির ওপর প্রশ্ন করা হলে তারা বলে—’আমরা তো চুরি করছি না, কেবল যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সংগীতে পরিবর্তন আনছি।’

সাধারণত জ্যান্টাইলদের সংগীতানুষ্ঠানগুলোতে কেবল সম্পদশালীরাই যাওয়ার সুযোগ পায়। কারণ, জ্যান্টাইলরা যা তৈরি করে, তা নিখাদ মৌলিক সংগীত। এজন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। তাই তাদের প্রতিটি অনুষ্ঠানের টিকিটের মূল্যও অনেক বেশি হয়।

১৮৮০ সালের একটি ঘটনা। জ্যান্টাইলদের একটি সংগীত ধনী-গরিব সবার মাঝে প্রচুর জনপ্রিয়তা পায়, কিন্তু ধনীরা সেই সংগীত শুনতে পেলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় গরিবরা তা থেকে বঞ্চিত হয়। ইহুদিরা এই সুযোগটিই লুফে নেয়। তারা পরিকল্পনা করল প্রতিটি গান নকল করার। কিন্তু গানগুলোর সারেগাম এতটাই কঠিন ছিল, তারা তা ভাঙতেই পারল না। ফলে নতুন আরেকটি পরিকল্পনা আটল; সুর একই থাকবে, সাথে নতুন গীতিকবিতা জুড়ে দেওয়া হবে এবং জ্যাজ ইন্সট্রুমেন্ট দিয়ে মূল সুরের মাঝে সামান্য বৈচিত্র্য আনা হবে।

মজার বিষয় হচ্ছে–তারা এখানেও চরমভাবে পরাজিত হলো, এমনকী নিজেদের হাসির পাত্র বানিয়ে ছাড়ল। মানুষকে ধোঁকা দিতে তারা ইংরেজি বাক্যের পরিবর্তে ইডিশ বাক্য ব্যবহার করল। তাই তাদের শিল্পীরা কী উচ্চারণ করছিল, তার একটা শব্দও সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেনি। শুধু নাক টেনে সুরের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুরো সময়টা পার করে দেয়। প্রথমে একক সংগীত পরে যৌথ সংগীত; প্রতিটি গানেই ছিল একই সুর। দর্শক- শ্রোতারা এই রম্য অভিনয় দেখে হাসতে হাসতে ভেঙে পড়েছিল।

এরূপ পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে ১৮৮৫ সালে Tin Pan Alley নিউইয়র্ক শহরে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। তারা ভালো কণ্ঠশিল্পী, লেখক ও প্রতিভাবান সুরকারের সমন্বয়ে একটি পরিপূর্ণ দল গঠন করে। অবুঝ শিল্পীরা ভেবেছিল—নামকরা এই সংগীত প্রতিষ্ঠানটি হয়তো বাজারে তাদের প্রতিষ্ঠিত হতে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাবে। কিন্তু তাদের যে কেবল ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, তা অনেক পরে বুঝতে পারে। শুরু হয় মৌলিক সংগীত রচনা এবং বাজারের বিখ্যাত সব সংগীতের সারেগাম উদ্ধারের মিশন।

এই উদ্যোগের পেছনে প্রথমে যার নাম আসে, তিনি হলেন Julius Witmark। তার হাতে সংগীতশিল্প প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকতার ছোঁয়া পায়। তার সংগীত প্রতিষ্ঠানের নাম M. Witmark & Sons, যা ১৮৮৬ সালে নিউইয়র্ক শহরে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুরুতে তিনি ছিলেন একজন ব্যালাড (Bllad/ লোকসংগীত শিল্পী)।

এরপর আসে Irving Berlin-এর নাম। তার প্রকৃত নাম Isadore Baline। পেশা ছিল গান লেখা ও সুর করা। ১৮৯৫-১৯১৮ সাল পর্যন্ত সংগীত শিল্পের ইতিহাসে ‘Rag- time’ বলা হয়। এই সময়টিতে জ্যাজ সংগীত পুরো আমেরিকায় জনপ্রিয়তার তুঙ্গে ওঠে। Irving Berlin ছিলেন এই সংগীতের অন্যতম পথিকৃৎ। তার বিশেষ একটি কৃতি হলো—১৯১১ সালে পরিবেশিত ‘Alexander’s Rag – Time Band’ গানটি। এর জনপ্রিয়তা আজও অক্ষুণ্ণ রয়েছে। এই একটি গানই তাকে রাতারাতি অগাথ সম্পদের মালিক বানিয়ে দেয়। এই সংগীতের পেছনে Joe Frisco-এর অবদান নেহায়েত কম নয়। তাকে সে সময় বলা হতো জ্যাজ সংগীতের স্বঘোষিত বাদশাহ।

কিন্ত আপনি যদি তার জনপ্রিয় অ্যালবাম ‘ Berlin Big Hits’-এর গানগুলোর ওপর গবেষণা করেন, তবে দেখবেন—প্রতিটি গানের সুরই জোড়া-তালি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। আরও ভয়ংকর বিষয় হচ্ছে—প্রতিটি গানে ব্যবহার করা হয়েছে অকথ্য অশ্লীল শব্দ। অনেকের মনে হবে, এই গানগুলো যেন পর্ন ছবির ধারা বিবরণী। এমন কয়েকেটি গান হলো : ‘Harem Life’; ‘You Cannot Make Your Shimmy Shake on Tea’; ‘I Like it’ এবং ‘Mary Green, seventeen’।

খুব ভালো হতো, যদি পুরো একটি গান এখানে তুলে ধরা সম্ভব হতো। কিন্তু অকথ্য ভাষা দিয়ে এই বইটি নোংরা না করাই ভালো। গানগুলো শুনে অনেকে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে, ইনি কি সেই মাতা মেরি, যিনি যীশুকে গর্ভে ধারণ করেছিলনে!

সংগীত শিল্পে তাদের দ্রুত সফলতা অর্জনের আরেকটি বড়ো কারণ রয়েছে। তাদের অশালীন ও অকথ্য গানগুলো সহজেই তরুণসমাজের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে। তারা মুখে যা উচ্চারণ করছে, তার অর্থ হয়তো নিজেরাও জানে না। তারা গানের কথার চেয়ে সুরের প্রতি অধিক আগ্রহী। তাই জনপ্রিয় সব মৌলিক সংগীতের সুরগুলো ব্যবহার করে একাধিক সংগীত তৈরি করে যাচ্ছে। এটা ঠিক যে, তাদের তৈরি করা নতুন গানগুলোর সুর-তাল-লয়ের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়, তবে সুরের ছন্দ ও কাঠামো একই থাকে।

বিভিন্ন শ্রোতার চাহিদার ধরন অনুযায়ী তারা সংগীত বাজারকে কয়েক শ্রেণিতে বিভক্ত করেছে। প্রথম শ্রেণিতে থাকছে তরুণ শ্রোতা এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে বয়স্ক শ্রোতা। এর মধ্যে রয়েছে আরও অনেক বিভাজন। যেমন : কেউ উচ্চ ধাতব গান পছন্দ করে, কেউ চিকন সুরের গান পছন্দ করে, কেউ-বা মাঝারি সুরের গান পছন্দ করে। এবার তারা কোনো একটি মৌলিক গানের ছন্দ ঠিক রেখে সুর-তাল-লয়-এর মধ্যে পার্থক্য এনে প্রতিটি শ্রেণির জন্য আলাদা আলাদা গান ও সুর তৈরি করে। এভাবেই ছোট্ট একটি কৌশল ব্যবহার করে এবং খুব অল্প পরিশ্রমে তারা একাধিক গান তৈরি করে চলেছে। তাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রকৃত শিল্পীরা কখনো পেরে উঠছে না। কারণ, তারা চৌর্যবৃত্তিতে অভ্যস্ত নয়।

মানুষ এখন মৌলিক সংগীত নিয়ে একেবারেই গবেষণা করে না। ফলে এই শিল্পে বিশেষজ্ঞ না হলে কারও পক্ষে ইহুদিদের চৌর্যকর্ম উদ্ধার করা সম্ভব নয়। আর যারা সাধারণ শ্রোতা, তাদের পক্ষে তো কখনোই নয়। এবার কিছু বিখ্যাত গানের নাম জানিয়ে রাখছি, যা চাইলে যাচাই করে দেখতে পারেন : I’ll Say She Does; You Cannot Shake That Shimmy Here; Sugar Baby; In Room 202; Can You Tame Wild Wimmen?

সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষক সম্প্রদায়, অভিভাবক শ্রেণি ও সুশীল সমাজ আজ একটি বিষয় ভেবে খুবই বিচলিত, কী এমন নেশা যুবসমাজকে পেয়ে বসেছে যে, তাদের একদল সারাক্ষণ কেবল হতাশার গান শুনতেই পছন্দ করে? আরেক দল তো অশ্লীল ভাষার মধ্যেই ডুবে আছে!

যখন আমাদের সন্তানদের ড্রাগের নেশা পেয়ে বসেছিল, তখন কিন্তু শাসন করেও লাভ হয়নি। কারণ, ড্রাগ নিজ দায়িত্বে তাদের হাতে এসে হাজির। যতদিন না মূল উৎসে আঘাত হানা সম্ভব, ততদিন এই অপশক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। ড্রাগের মতো সংগীতশিল্পও এখন আমাদের যুবসমাজকে পেয়ে বসেছে। আজ যেকোনো সামাজিক পালা-পার্বণ বা অনুষ্ঠানে এই গানগুলো উচ্চ শব্দে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর ফলাফলও আমরা অনুধাবণ করতে পারছি। এসব গান কখনো আমাদের মনে চিরস্থায়ী আনন্দের জোগান দিতে পারে না; বরং আমাদের থেকে অধ্যাত্মিকতা নামক বিষয়টি ধ্বংসের মাধ্যমে কামুক করে তুলছে।

,

ইডিশদের খেলায় চিরস্থায়ী বলতে কিছু নেই। আপনি যেকোনো একটি পিয়ানো ক্লাবে যান, তাদের জিজ্ঞেস করুন—তিন সপ্তাহ আগে কোন গানটি জনপ্রিয় ছিল? দেখবেন সে বলতে পারছে না। কারণ, সব সংগীতের ছন্দ তো একই রকম। কোনটা বাদ দিয়ে সে কোনটার নাম বলবে? শুধু যে সংগীত শিল্পের বেলায় এমনটা ঘটছে তা নয়; থিয়েটার, চলচ্চিত্র, পোশাক-আশাক, খাদ্য, রুচি, ফ্যাশন ইত্যাদি সবকিছুতে একই রূপ। এত কিছুর পরও আমরা মাঝে মাঝে ভালো জিনিস পাচ্ছি। হয়তো কোনো নির্মাতা তার সর্বস্ব উজাড় করে, মুনাফার প্রতি মায়া না করে কেবল নিজেরে শখ মেটাতে নান্দনিকতার জন্ম দিচ্ছে!

জাতিগতভাবে আজ আমরা এতটা বিভক্ত হয়ে পড়েছি যে, চাইলেও এই শক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখতে পারব না। এর কারণ আগেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এমতাবস্থায় ব্যক্তিগত উদ্যোগ ব্যতীত এই অপসংস্কৃতি থেকে নিজেদের মুক্ত রাখার ভিন্ন কোনো উপায় নেই।

সংগীত শিল্পে অশ্লীলতা সংযোজনের ইতিহাস

সংগীত চর্চা বিশ্ব ব্রক্ষ্মাণ্ডের ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। আমাদের পূর্বপুরুষদের যুগেও এই শিল্পের চর্চা ছিল এবং সেখানেও আবেগ, বিরহ, ভালোবাসা ও দেশপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ছিল। সে যুগেও তরুণরা চলার পথে গুনগুন করে গান গাইত কিন্তু তখনকার গানের লিপি আর আজকের গানের লিপির মধ্যে রয়েছে অনেক ফারাক। সত্যি বলতে, এটাকে জনপ্রিয় শিল্পরূপে জ্যান্টাইলরাই প্রতিষ্ঠা করেছে। আর ইহুদিরা এই শিল্পকে নোংরা-আবর্জনা দিয়ে ভর্তি করছে। প্রেমের গান এখন আর ভালোবাসার জন্ম দেয় না; জন্ম দেয় কাম-উদ্দীপনার তরুণ-সমাজ হয়তো বলবে—’বর্তমানে আমরা যেসব জনপ্রিয় গান শুনছি, তার মধ্যে খারাপের তো কিছু দেখছি না। এসব শুনে তো আমাদের ভালোই লাগে!’ তাদের উদ্দেশ্যে বলা প্রয়োজন, পছন্দ-অপছন্দ কিন্তু মানুষের অভ্যাসের একটি অংশ। এই অভ্যাস যে দুই-এক বছরে তৈরি হয়েছে, তা নয়। আগের অধ্যায়ে ‘Rag-time’ নিয়ে সামান্য আলোচনা করা হয়েছে। এটা এমনই একটি সময়কাল, যখন সংগীত শিল্পে খুব পরিকল্পিত উপায়ে নোংরা আবর্জনার আবির্ভাব ঘটানো হয়েছে। সেই ইতিহাস তরুণসমাজ মোটেও জানে না। যে প্রজন্মগুলো এই বিপ্লবপরবর্তী সময়কালে বড়ো হয়েছে, তারা এসব সংগীত শুনেই বড়ো হয়েছে। তারা কী করে বুঝবে কোনটা ভালো আর কোনটা খারাপ!

১৮৮০ সালের পূর্বেও এই নোংরা সংগীত সংস্কৃতির চর্চা ছিল, তবে তা একটি ভৌগোলিক সীমারেখায় আবদ্ধ ছিল। সমাজ থেকে বহুদূরে নির্দিষ্ট কোনো বায়েজিখানায় এসব নোংরা গানের চর্চা হতো। মুক্ত উদ্যানে বা জনসম্মুখে এসব গান পরিবেশনের কথা কল্পনাও করা যেত না। কিন্তু ১৮৮০ সালের পর হঠাৎ এক বিবর্তন এসে আমাদের পুরো সভ্য সংস্কৃতিকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়।

পুরোনো গানের কথা কখনো ভোলা সম্ভব নয়। সেসব গান বহু যুগ পরেও অমর হয়ে থাকে। কিন্তু বাজারে আজকে যা জনপ্রিয় গান, তার কথা এক-দুই মাস পর কেউ মনে রাখবে কি না সন্দেহ। আপনাদের হয়তো ‘Listen to the Mocking Bird’ গানটির কথা মনে আছে। বহু বছর পরও তা আমাদের হৃদয়ে গেঁথে আছে। তবে যে পাখির কথা এখানে বলা হয়েছে, তা এখন হাঁস-মুরগির গানে পরিণত হয়েছে।

আরও আছে Ben Bolt, Nellie Grey, Juanita, The Old Folks at Home, The Hazel Dell, When You and I were Young, Maggie, Silver Threads Among the Gold। এগুলো আমাদের যুগের বিখ্যাত কিছু আবেদনময়ী গান। আজকের তরুণ সমাজ যারা এই অধ্যায়টি পাঠ করছে, তাদের উচিত নিজ উদ্যোগে এই গানগুলো শোনার চেষ্টা করা। তারপর এগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন, বর্তমানে আপনারা কী ধরনের গানের চর্চা করছেন।

এমন আরও কিছু গান হলো— Annie Rooney, Down Went McGinty to the Bottom of the Sea, She’s Only a Bird in a Gilded Cage, After the Ball is over। এদের মধ্যে নোংরামির কোনো ছায়া নেই।

মনোবিজ্ঞানীরা বলে, হতাশা ও বিরহের গান কিছুটা হলেও মানুষের মনে অলসতার জন্ম দেয়। তথাপি, My Wild Irish Rose ও In the Baggage Coach Ahead বিরহের গান দুটিতে এমন কিছু খুঁজে পাবেন না—যা আপনাকে খারাপের দিকে উসকে দেবে।

Jim Thornton-এর বিখ্যাত কিছু গান হলো— In the Shade of the Old Apple Tree, When the Sunset Turns the Ocean’s Blue to Gold, Down by the Old Mill Stream, My Sweetheart’s the Man in the Moon। আরও আছে Paul Dresser-এর বিখ্যাত গান, On the Banks of the Wabash এবং Charles Lawlor-এর বিখ্যাত গান, The Sidewalks of New York। এগুলো হলো সংগীত ইতিহাসের সম্পদ।

একসময় এ দেশে পাশ্চাত্য ও ভারতীয় সংগীতেরও ভালো চর্চা ছিল। যেমন : Cheyenne, Hop on My Pony; Arawanna; Trail of the Lonesome Pine ।

এরপর আসে আফ্রিকান সংগীত; যা আমাদের সমাজে সাপ হয়ে ঢুকে সর্বস্তরে বিষ পৌঁছে দেয়। এমন কিছু গান হলো—Congo; High Up in the Coconut Tree ও Under the Bamboo Tree ।

আফ্রিকান সংগীতের কাল থেকেই ‘Rag-time’-এর আবির্ভাব। সংগীতশিল্প পরিবেশনে সংযোজন ঘটে ‘Cake Walk’ সংস্কৃতির (একটি নৃত্যদল, যেখানে মূলত নারীদের উপস্থিতি থাকে)। এমন একটি গানের উদাহরণ হচ্ছে There’ll Be a Hot Time in the Old Town Tonight। গানের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে আবির্ভাব ঘটে একটি নতুন শব্দের—’ma baby’। সবার কানে বাজতে শুরু করে ‘ma baby’। অপ্রয়োজনীয় ও অকথ্য বিষয়বস্তু দ্বারা গানের বাক্যগুলো শুরু হয়।

এরপর এসেছে ‘Vamp Music’-এর যুগ। হাজারো নির্বোধ মেয়ে তাদের সৌন্দর্য বিকিয়ে দিতে মডেলিং পেশায় অংশগ্রহণ শুরু করে। Vamp সংস্কৃতির প্রথম আবির্ভাব হয় একটি ফরাসি উপন্যাসে, যা পরে নিষিদ্ধ করা হয়। সেখানে থিয়েটার প্রডিউসার Morris Gest গ্রিকদের প্রেমের দেবী ‘Aphrodite’-কে নগ্নরূপে উপস্থাপন করে। ইহুদিরা যেভাবে তাদের সংগীত শিল্পে হেরেমবাসিনী মেয়েদের কাল্পনিক চরিত্র উপস্থান করেছে, তা Vamp-এর সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছে গেছে। এই কাজে তারা আমেরিকার সাদা চামড়ার কমবয়সি মেয়েদের যথেচ্ছা ব্যবহার করতে কুণ্ঠিত হতো না। দর্শকদের মনে ঢুকিয়ে দিয়েছে—হেরেমবাসী মেয়েদের প্রকৃত চরিত্র হয়তো তা-ই, যা তারা উপস্থান করেছে।

এত সব অধঃপতনের পরও আমরা তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে পারছি না। কারণ, Anti-Defamation League। এই প্রতিষ্ঠানটি থিয়েটার, চলচ্চিত্র, ক্রীড়া, শিক্ষা, নেশাজ দ্রব্য ইত্যাদি প্রতিটি কাজেই ইহুদিদের অভিভাবক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। তারা খুব ভালো করেই জানে, কোন পথে আমাদের আটকাতে হবে। কোথাকার আগুন পরে কোথায় গিয়ে লাগে—এই ভয়ে জ্যান্টাইলরা প্রতিবাদ করার সাহস পায় না।

সংগীত ও চলচ্চিত্র শিল্পে ইহুদিদের আবির্ভাবের মধ্যে যথেষ্ট মিল আছে। তাদের বিরুদ্ধে পূর্ব থেকেই জ্যান্টাইলদের বিরূপ ধারণা ছিল, তাই ইহুদি সংগীতশিল্পী বা তাদের কোনো অনুষ্ঠানের নাম শুনলে তারা উলটো দিকে পথ ধরত। তাদের থেকে দূরত্বের সর্বাত্মক মাপকাঠি বজায় রাখত, কিন্তু এখানেও তারা ধরা খায়। কারণ, ইহুদিদের রয়েছে ‘ছদ্মনাম’ কৌশল। এই একই কৌশলে তারা চলচ্চিত্র, থিয়েটার শেয়ারবাজার ও ক্রীড়াশিল্পকেও নিজেদের করে নিতে থাকে। তারা বিভিন্ন ছদ্মনামে নিজেদের ব্যান্ডগুলোকে আমাদের মাঝে পরিচিত করা শুরু করে। যেমন : Geological Society Scientific Society ।

অমর শিল্প তৈরি করলে তো দ্রুত অর্থ উপার্জন সম্ভব নয়। তাই তাদের অমরত্বের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন প্রচুর গান, যা থেকে কাঁচা পয়সা উপার্জন করা সম্ভব। ‘Rocked in the Cradle of the Deep’-এর সাথে I’m Always Chasing Rainbows গানটিকে মিলিয়ে দেখুন। এই দুটির গানের মিল বোঝার জন্য অন্তত সংগীত বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। এমন নয়, ‘Rocked in the Cradle of the Deep’ নকল করে দ্বিতীয় গানটি তৈরি করা হয়েছে। মূলত দুটো গানই নকল হয়েছে ‘Opus of Chopin’ থেকে। এটা নিয়ে আদালতে দীর্ঘদিন মামলা হয়েছিল, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এরপর থেকে তারা গান চুরি করার অলিখিত বৈধতা পায়। গানের বাক্য যদি হুবহু না মেলে, তাহলে তাকে আর নকল বলা যায় না—এটাই ছিল আদালতের কথা। আর এটাও ঠিক, আইনজীবীরা তো আর সংগীত বিশেষজ্ঞ নয় যে গান চুরি ধরতে পারবে!

এমন নয় যে, বাজারে এসব উগ্রসংগীতের উপচে পড়া চাহিদা রয়েছে। আপনাদের হয়তো মনে আছে, বইটির একদম শুরুর দিকে উল্লেখ করা হয়েছে—

‘বিক্রয় শিল্পে ইহুদিদের মতো দক্ষ জাতি পৃথিবীতে আর দ্বিতীয়টি নেই। বিক্রয় কাজে প্রতিবন্ধকতা তারা কোনোভাবে সহ্য করতে পারে না। একদিক দিয়ে আটকালে তারা নতুন আরেকটি পথ খুঁজে বের করে। বিজ্ঞাপন সংস্কৃতির আবির্ভাবও ইহুদিদেরই হাত ধরেই।’

এটাই সংগীত শিল্পে তাদের সফলতার মূল কারণ। পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনে তারা নোংরা কাজ করতেও প্রস্তুত। এর প্রমাণ হচ্ছে—ইহুদিদের বিজ্ঞাপন হাউজগুলো। তারা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে অশালীন ভঙ্গিমায় নারী মডেলদের উপস্থাপন করছে। তাদের শারীরিক সৌন্দর্যকে পণ্য বানিয়ে বিলবোর্ড, পোস্টার, ফ্লাইয়ার, ব্রসিউর ও ম্যাগাজিন ছাপাচ্ছে এবং তা সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে। স্বভাবতই সমাজের হাতেগোনা কয়েকজন বুদ্ধিদীপ্ত নীতিবান মানুষ ব্যতীত সবাই এসব বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ছে। তারা যেসব মিউজিক ভিডিও তৈরি করছে, তাতে উঠতি বয়সি অনেক তরুণ-তরুণী অবচেতন মনে মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এসব কারণে তারা এই শিল্পে অল্প সময়ে প্রচুর অর্থকড়ি উপার্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এখন যদি অর্থকে সফলতার মাপকাঠি ধরা হয়, তবে বলতে হবে ইহুদিরাই সফল।

তাদের আরও একটি বিশেষণ হলো—নাছোড়বান্দার মতো লেগে থাকা। অনেক পণ্যের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষ যা পছন্দ করে, মূলত সেটাকেই জনপ্রিয় পণ্য বলা হয়। কিন্তু এমন যদি হয়—বাজারে কেবল একটি পণ্য রয়েছে এবং সাধারণ মানুষ তা ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে, তখন আর তাকে জনপ্রিয় পণ্য বলা চলে না। আজকের বাজারে যে গানগুলোকে আমরা জনপ্রিয় সংগীত বলে অভিহিত করছি, তা কেবল মাত্রাতিরিক্ত পুনরাবৃত্তির ফলাফল।

বিদেশি কোনো রাজকীয় অতিথি যখন আমেরিকা ভ্রমণে আসে, তখন তাদের আতিথেয়তায় জ্যাজ সংগীত পরিবেশন করা হয়। Prince of Wales যখন আমেরিকা ভ্রমণে আসেন, তার দেখাশোনার কাজে যে ছেলেটিকে রাখা হয়েছিল, তার নাম Rose রোজের আমন্ত্রণে তিনি ইডিশ সংগীত নির্মাণ হাউজ পরিদর্শনে হাজির হন। Prince of Wales ইডিশ সংগীত শুনে অসম্ভব মুগ্ধ হন; যদিও সেগুলো চুরি করে তৈরি করা ছিল। এরপর থেকে তিনি ইডিশ সংগীতের ভক্ত হয়ে যান।

আশা করি ইতোমধ্যেই উপলব্ধি করতে পারছেন, Charlie Chaplin-এর যে কমেডি চলচ্চিত্রগুলো আমরা দেখি, তার সাথে যে আবহ সংগীত (ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক) জুড়ে দেওয়া হয়, তা সম্পূর্ণ জ্যাজ মিউজিক। কমেডি ছাড়া বিভিন্ন চলচ্চিত্রের থিম সংগীত তৈরিতেও আজ জ্যাজ বাদ্যযন্ত্রসমূহ ব্যবহৃত হচ্ছে। চলচ্চিত্রের কোনো একটি অংশে দেখবেন, পেছন থেকে গান ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং গল্পের নায়ক তার সাথে ঠোঁট নেড়ে নেড়ে গান গাওয়ার অভিনয় করছে। এগুলোও জ্যাজ সংগীত।

মনে করুন, আপনার বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য কোনো একটি রেস্টুরেন্ট বা কফি হাউজে গেলেন। খেয়াল করবেন—পেছন থেকে বাদকদল সংগীত বাজাচ্ছে, এর সাথে চলচ্চিত্রের নায়ক ঠোঁট নেড়ে নেড়ে অভিনয় করছে। আপনি বুঝতেও পারবেন না, কীভাবে এই সংগীতগুলো আপনার অবচেতন মনে জায়গা করে নিচ্ছে। একসময় আপনি নিজেও এই সংগীতগুলো গুনগুন করে গাইতে শুরু করবেন। শপিংমল, কফিশপ, সেলুন, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি যেখানেই যান না কেন—দেখবেন, একই গান বাজছে কিংবা একই ছন্দের বিভিন্ন গান বাজছে।

ধরুন আপনার ছোট্ট মেয়েকে সাথে নিয়ে কিছু জামা কিনতে গেলেন। বাসায় এসে চেয়ারে আরাম করে বসা মাত্র দেখবেন, আপনার মেয়ে শপিংমলে শোনা গানটি বিরবির করে গাচ্ছে। অর্থাৎ আপনি চাইলেও এই উগ্র সংগীতচর্চা এড়িয়ে যেতে পারছেন না।

ইহুদিদের প্রতিষ্ঠানগুলো কয়েকটি ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির সংগীত রীতিতে বিভক্ত যেমন : Vamps, Harems, Hooch ও Hula Hula। তারা প্রতিটি সংগীত রীতির মধ্যে ইচ্ছা করেই প্রতিযোগিতা বাধিয়ে দিয়েছে, ঠিক যেমনটা মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানগুলো একই প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য ব্র্যান্ড বাজারে এনে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বাধিয়ে দেয়। এখন কারও যদি Harem শুনতে ভালো না লাগে, তবে তার জন্য রয়েছে Vamp অর্থাৎ আপনি যা-ই খুঁজুন না কেন, একটি দোকানেই সবকিছু পাবেন। আর বাজারে এই একটি দোকান বাদে আর কোনো দোকানের অস্তিত্ব নেই।

নোংরা গান লিখতে তো আর সৃজনশীলতা লাগে না! তাই হাজার হাজার গান তৈরি করতে ইহুদিদের তেমন পরিশ্রমও করতে হয় না। যদি এমন হয়—তাদের তৈরি করা কোনো গানে অশ্লীলতার আবহ নেই, তবে বুঝবেন সেই গানটি অন্য কোথাও থেকে চুরি করা হয়েছে! তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো বছরব্যাপী যে পরিমাণ গান তৈরি করে, তার সিংহভাগ অন্য কোথাও থেকে চুরি করা।

ইহুদিরা পরিকল্পিতভাবে কিছু সমালোচক গোষ্ঠীর জন্ম দিয়েছে। নতুন কোনো ইডিশ সংগীত মুক্তি পেলে তাদের ভাড়া করা সমালোচকদের একপক্ষ সেই গানের পক্ষে সাফাই গায়, অপর পক্ষ বিপক্ষে সাফাই গায়। আর জ্যান্টাইল সমাজ আগ্রহ ভরে বসে থাকে বিতর্কসভার চূড়ান্ত ফলাফল কী হয়, তা জানার জন্য। তারা সেই গানই ক্রয় করতে বাজারে যায়, যার পক্ষ বিতর্কে বিজয়ী হয়েছে। এই যখন অবস্থা, তখন তাদের গর্দভ বলার চেয়ে মস্তিষ্ক-বিকৃত জ্যান্টাইল বলাই শ্রেয়।

এভাবেই Tin Pan Alley প্রতিষ্ঠান আমেরিকার পুরো সংগীত বাজার নিজেদের করে নিয়েছে। আমেরিকার পর তাদের অপসংস্কৃতির আগ্রাসন পৃথিবীর কোন অংশে গিয়ে পড়বে, তা বলা খুবই কঠিন। তবে নিশ্চিত করে বলা যায়, ধীরে ধীরে তা পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে।

ক্রীড়া শিল্পে ইহুদি জুয়াড়িদের দৌরাত্ম্য

প্রথমেই বলে রাখি, খেলাধুলায় ইহুদিদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। ইহুদিদের মধ্য থেকে কেউ ভালো ক্রীড়াবিদ হতে পারেনি। এটা তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নয়। শারীরিক বা স্নায়ুবিক কোনো দুর্বলতার কারণে যে তারা খেলাধুলায় কম আসক্তি অনুভব করে তা নয়। হয়তো এটাও ইহুদি জাতিগত বৈশিষ্ট্য! কলেজ ও বিদ্যালয়গুলোতে ইহুদিদের সন্তানরা কেবল তখনই খেলাধুলায় অংশ নেয়, যখন তাদের নিয়ে কেউ কটু কথা বলে।

তবে শারীরিক খেলাধুলায় পারদর্শী না হলেও ইহুদিরা জুয়া খেলায় যথেষ্ট পারদর্শী। তাদের জুয়াড়িদের নোংরা থাবায় জনপ্রিয় প্রতিটি খেলাই বহুবার কলুষিত হয়েছে। দঙ্গল খেলায় (Wrestling) কিছু পেশিবহুল খেলোয়ারদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মঞ্চে দাঁড় করিয়ে দেয়। মুষ্টিযুদ্ধের (Boxing) খেলায়ও একই ঘটনা ঘটে। প্রতিবছর ঘোড়াদৌড় খেলার জন্য কেবল প্রশিক্ষণ মাঠেই হাজারো ঘোড়া আহত হয়, পরে অযত্ন-অবহেলায় সেগুলো মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। কেন নিরীহ একটি প্রাণীকে নিয়ে এমন কুৎসিত খেলার আয়োজন করা হলো? কারণ, এতে রয়েছে প্রচুর মুনাফা উপার্জনের সম্ভাবনা। বাস্কেটবলও তাদের নোংরা হাতের স্পর্শ থেকে মুক্তি পায়নি।

১৮৭৫ সালে বেসবল খেলা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ধাক্কা খায়। জুয়া, গুন্ডামি, মাদক সেবন ও অব্যবস্থাপনার কারণে জনগণ কমিটির ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। একই অব্যবস্থাপনা ঘটতে দেখা যায় ১৯১৯ ও ১৯২১ সালেও। দর্শকরা মাঠ ছেড়ে বেড়িয়ে এসে টিকিট আগুনে পুড়িয়ে দেয়। বিতর্কের সূত্রপাত হয় ১৯১৯ সালে, যখন শিকাগো আমেরিকান ক্লাবের কাছে শিকাগো ন্যাশনালস ক্লাব পরাজিত হয়। গ্যাল্যারিতে রটে যায়, উভয় দলের মধ্যে অর্থের লেনদেন হয়েছে। বেড়িয়ে আসে কিছু পরিচিত ইহুদি ব্যক্তির নাম। তখন বিক্ষুব্ধ দর্শক মাঠ থেকে বেরিয়ে আসে।

১৯২০ সালে শিকাগো বনাম ফিলাডেলফিয়া জাতীয় দলের খেলা শুরু হওয়ার ঠিক আগের দিন শিকাগো ক্লাবের নিকট এক অদ্ভুত খবর আসে। কিছু পরিচিত ইহুদি জুয়াড়ি ফিলাডেলফিয়া ক্লাবের পেছনে বড়ো অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করছে। শিকাগো ক্লাব বিষয়টি দ্রুত ম্যাচ রেফারি Grover C. Alexander-কে জানায়। তিনি খেলা শুরুর আগ মুহূর্তে টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটিকে পুরো বিষয়টি অভিহিতি করেন, কিন্তু তারপরও সেই খেলা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। ফলে জুয়াড়িরা নির্বিঘ্নে উপার্জন করে নেয় নগদ কাঁচা পয়সা।

খেলা শেষে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। অবাক করা বিষয়, তদন্ত রিপোর্টে শিকাগো ক্লাবের আটজন সদস্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়! চারদিকে এ নিয়ে প্রচণ্ড আন্দোলন শুরু হয়। ফলে দ্বিতীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং প্রথম কমিটির ফলাফল বাতিল করা হয়। দ্বিতীয় কমিটির অনুসন্ধানে নতুন পাঁচজন অভিযুক্তের নাম উঠে আসে, যাদের সবাই ছিল ইহুদি। তাদের নাম হলো : Carl, Benny, Ben, Louis ও Levi। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি। দায়িত্বপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি Replogle বলেন—’উল্লেখিত ব্যক্তিরা ছাড়াও তো আরও অনেক অপরাধী আছে। তাদেরও খুঁজে বের করতে হবে। শুধু এই পাঁচজনকে শাস্তি দিয়ে কিই-বা এমন হবে!’ তবে তাদের যেন কোনো প্রকার সাজা দেওয়া না হয়, সেজন্য শিকাগোর বিখ্যাত ইহুদি আইনজীবী Alfred S. Austrian পেছন থেকে কাজ করেন।

Albert D. Lasker হলেন American Jewish Committee-এর অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য। তিনি সেই বিখ্যাত ‘Lasker Plan’-এর রচয়িতা, যার মাধ্যমে পুরো বেসবল খেলার নিয়ন্ত্রণ ইহুদিদের হাতে চলে যায়। তবে একটি বিষয় বলে রাখা ভালো—এই পরিকল্পনার প্রকৃত রচয়িতা কিন্তু তিনি ছিলেন না। এর প্রকৃত রচয়িতা ছিলেন Alfred S. Austrian; যিনি Mr. Lasker ও Replogle-এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তিনি Lasker সাহেবকে নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে পরিকল্পনাটি চালিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন। ১৯২০ সালে শিকাগো বনাম ফিলাডেলফিয়ার পাতানো খেলার মূল কারিগর ছিলেন তিনিই। খেলার রেফারি Hendryx-কে তদন্ত কাজে ডাকা হলে তিনি কী জবানবন্দি দিয়েছেন, তা কখনো প্রকাশ করা হয়নি।

এরপর আসে Arnold Rothstein-এর নাম। একাধিক ক্যাসিনো ছাড়াও তার ড্রাগ ও নেশাজাত দ্রব্যের অবৈধ্য ব্যাবসা ছিল। তিনি নিউইয়র্ক ন্যাশনাল ক্লাবের অন্যতম স্টকহোল্ডার ছিলেন। তাকে বলা হতো একজন ‘পিচ্ছিল ইহুদি’। কারণ, তিনি সব সময় হাত ফসকে বেরিয়ে যেতেন। তাকে কেন যে আটকে রাখা যেত না, সেই ব্যাখ্যা কেউ-ই দিতে পারে না।

দ্বিতীয় কমিটির রিপোর্টে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হলে উকিল সাহেব আদালতে তার বিপক্ষে সাক্ষী তলব করে, কিন্তু বিচারালয়ে সেই সাক্ষীকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। শিকাগো বা নিউইয়র্কের কোনো পত্রিকা প্রতিষ্ঠান যেন তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক কিছু না লিখে, সেজন্য তাদের কাছে আগে থেকেই প্রচুর উৎকোচ পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। এমন পরিস্থতিতে কেউ যে তার বিরুদ্ধে কলাম প্রকাশ লিখবে না, এটাই স্বাভাবিক। তা ছাড়া এ ঘটনায় Mr. Austrian ছিলেন তার পক্ষের আইনজীবী।

২৮ জুলাই, ১৯২১, Evening Mail-এর সাংবাদিক Hugh S. Fullerton একটি কলামে প্রকাশ করেন—

‘খেলার মাঠে দুর্নীতির দায়ে যে একবার অভিযুক্ত হয়েছে, তাকে কেবল একটি থেকে নয়; বরং সব ধরনের খেলা থেকেই বহিষ্কার করা উচিত। কারণ, তাদের নোংরা হাতের ছোঁয়ায় প্রতিটি শিল্পই প্রাণ হারাবে। নিউইয়র্কে Rothstein নামে একজন জুয়াড়ি আছে, যার ভয়ে পুরো শহর আতঙ্কগ্রস্ত। খেলার মাঠে যে বড়ো বড়ো জুয়া লেনদেনের গল্প শোনা যায়, তার প্রতিটির সঙ্গেই সে জড়িত বলে ধারণা করা হয়। কিছুদিন আগের বেসবল কেলেঙ্কারির সঙ্গেও সে সরাসরি জড়িত ছিল। সেই খেলাকে কেন্দ্ৰ করে অন্তত ২ লাখ ডলারের লেনদেন হয়েছে, কিন্তু তার ক্ষমতার ভয়ে কেউ মামলা করতে পারছে না। এরপরও প্রতিটি খেলায় তার জন্য ভিআইপি বক্সসহ অনেক সুবিধা বরাদ্দ থাকে।

এই কলামে তিনি আরও কয়েকজন জুয়াড়ির নাম উল্লেখ করে তাদের নিউইয়র্ক ক্লাবগুলো থেকে বয়কট করার সুপারিশ করেন।

এরপর আসে Harry Grabiner-এর নাম। তিনি হোয়াইট সক্স ক্লাবের ম্যানেজার Charles A. Comisky-এর স্থলাভিষিক্ত হয়ে ক্লাবটির দায়িত্বে আসেন। বেসবল খেলায় ক্লাবগুলোকে উৎসাহিত করতে ‘Honor Systm’ নামক একটি নতুন পদ্ধতি চালু করা হয়।

এ নিয়ম অনুযায়ী হোম ক্লাবটি তার টিকিট বিক্রির একটি অংশ ভ্রমণকারী দলকে প্রদান করবে। টিকিটের মূল্য, আসন ও অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে একটি গ্যালারিকে কয়েকটি অংশে বিভক্ত করা হয়। যেমন : box gate, pass gate, grandstand gate ও bleacher gate। কী পরিমাণ টিকিট বিক্রি হলো—তা খেলা শুরুর আগে, মাঝামাঝি সময়ে ও খেলা শেষে উভয় দলের দুজন প্রতিনিধি পর্যবেক্ষণ করে। এরপর পূর্বনির্ধারিত চুক্তি অনুযায়ী নিজেদের মধ্যে অর্থ ভাগাভাগি করে নেয়।

Grabiner ক্লাবটির পরিচালনা দায়িত্বে আসার পর থেকে ভ্রমণকারী দলগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ ওঠে—টিকিট বিক্রি নিয়ে যে হিসাব দেখানো হচ্ছে, তা অনেকটাই সন্দেহজনক। স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকের পরিমাণ আর প্রকাশিত টিকিট বিক্রির হিসাবের মধ্যে বিশাল ফারাক দেখা যাচ্ছে। অভিযোগ তদারকি করতে বেসবল কমিটি ও ভ্রমণকারী দল গুপ্তচর বসায়। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর সন্দেহ সত্য প্রমাণিত হয়। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা বেসবল এখন বিনোদনের নাম করে টিকিট বাণিজ্য করছে! দুষ্টচক্র এই শিল্পে এমনভাবে প্রবেশ করেছে যে, এখন পুরো খেলাটাই বর্জন করতে হবে।

বেসবল জগতে সবার মুখে মুখে যে জুয়াড়ির নাম শোনা যায়, তিনি হলেন Abe Attell। তার মতো দক্ষ ফিক্সার মাঠে দ্বিতীয়জন ছিল না। স্বয়ং ইহুদি মহলগুলোও তাকে ফিক্সার বলতে দ্বিধাবোধ করত না। তাদের ১০ জনের একটি সংঘবদ্ধ টিম ছিল, যারা প্রতিটি খেলা শুরুর পূর্বে চাঁদা তুলে জুয়া খেলত। এমনও শোনা যায়, World Baseball Series- এর কোনো কোনো খেলাকে কেন্দ্র করে তারা ২ লাখ ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত চাঁদা তুলেছে। অসংখ্য প্রমাণাদি থাকার পরও আদালত তাকে শাস্তি দিতে পারেনি।

এরপর আসে Barney Dreyfuss-এর নাম। তিনি পিটসবার্গ ন্যাশনাল লিগ ক্লাবের অন্যতম মালিক ছিলেন। ‘Lasker Plan’ বাস্তবায়নে সক্রিয় হওয়ার পর থেকে তিনি বেসবল জগতে বিতর্কিত হতে শুরু করেন। যদি প্রশ্ন করা হয়—বেসবলশিল্প ধ্বংস হওয়ার প্রধান কারণ কী? উত্তর একটাই, মাত্রাতিরিক্ত ইহুদি। তারপরও তদন্ত রিপোর্টগুলোতে হাতেগোনা মাত্র কয়েকজনের নাম প্রকাশিত হয়েছে। এমন শত শত তদন্ত কমিটি তৈরি করেও কাজ হবে না। কারণ, তাদের গুন্ডামি এতটা বেড়ে গেছে, অনেক ক্লাবমালিক খেলোয়ারদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতাটুকুও হরণ করতে বাধ্য হয়েছে।

যে খেলোয়াড়দের তারা ছোটো থেকে লালন-পালন করে বড়ো করেছে, জুয়াড়ি দলগুলো অর্থের লোভ দেখিয়ে তাদের কিনে নেবে—এমন আশঙ্কা ক্লাবগুলোকে সর্বক্ষণ তটস্থ রেখেছে। এমনকী ম্যাচ রেফারিরাও তাদের লালসার হাত থেকে মুক্তি পায়নি I যে রেফারিরা ফিক্সারদের লোভনীয় প্রস্তাবে রাজি হয়নি, তাদের কতটা অপমান ও লাঞ্ছনার স্বীকার হতে হয়েছে, তা কেবল তারাই জানে।

যদিও ইহুদিদের চরিত্রে খেলোয়াড়সুলভ আচরণের লেশমাত্র দেখা যায় না, তারপরও বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের দেখা যেত। Benny Leonard হলেন একজন ইহুদি বক্সিং খেলোয়াড়। পেশাদার জীবনে জিতেছেন অসংখ্য পুরস্কার। তবে মজার বিষয় হলো—পুরো ক্রীড়া জীবনে তিনি একবারের জন্যও শরীরে আঘাত পাননি, কিন্তু অনেক বিখ্যাত বক্সিং খেলোয়াড় আছেন, শারীরিক আঘাতের দরুন যাদের খেলাই ছেড়ে দিতে হয়েছে।

Kid Lavinge-এর কানে ঘুসি লাগার কারণে তিনি শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেন। বুকে সজোড়ে ঘুসি লাগায় Ad Wolgast-কে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। Battling Nelson এতটাই আঘাত পান, শরীরে বড়ো ধরনের অস্ত্রপচার করতে হয়। অথচ Benny Leonard, Willie Ritchie ও Freddie Welsh-এর মতো খেলোয়াড়রা সারা জীবনে একটি আঘাতও পাননি! এটা নিয়ে তারা আবার গর্বও করেন! এর পেছনের গল্প হলো—তারা যা খেলেছে, তার সবই ছিল পাতানো খেলা। প্রকৃত খেলোয়াড়রা শারীরিক আঘাতের ঝুঁকি নিয়েই খেলতে আসেন, কিন্তু তারা আসেন নাটক করতে।

ইউরোপ-আমেরিকার অধিকাংশ ক্রীড়াশিল্প এখন ইহুদিদের নিয়ন্ত্রণে। মঞ্চে বা মাঠে যে খেলাগুলো আমরা দেখি—বিশেষত মুষ্টিযুদ্ধ সম্পর্কিত খেলাগুলো, তার অধিকাংশই বানানো নাটক। খেলা শুরু হওয়ার আগে একদল খেলোয়াড়কে দীর্ঘ প্রশিক্ষণ দিয়ে প্ৰস্তুত করা হয়। তারপর তাদের বিভিন্ন দলে ভাগ করে প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেওয়া হয়। আমরা দেখি—একজনের ঘুষি খেয়ে অন্যজন লুটিয়ে পড়ছে। কিছুক্ষণ পর সে আবার উঠে দাঁড়াচ্ছে এবং প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখে ঘুসি মারছে। এভাবে কিছুক্ষণ অভিনয় করার পর সে-ই জয়ী হয়, যাকে আগে থেকে নির্ধারণ করা হয়েছে। তারাই বক্সিং ও রেসলিং টুর্নামেন্টের আয়োজন করছে, রেফারি নিয়োগ দিচ্ছে, খেলোয়াড় বাছাই করছে, প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, কে কোন খেলায় বিজয়ী হবে তা নির্ধারণ করে রাখছে এবং টিকিট মূল্য বাড়ানোর জন্য কালোবাজারিদের ভাড়া করেছে। এসবের কোনো কিছুই সাধারণ মানুষ জানে না। এমতাবস্থায় বাজি ধরে জয়লাভ করা একজন জ্যান্টাইলের পক্ষে কীভাবে সম্ভব?

চলচ্চিত্র শিল্পের ন্যায় এখানেও পত্রিকা প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু খেলোয়াড়কে বাছাই করে বাজারে ‘স্টার’ বানায়, যেন জুয়াড়িদের মাঠ গরম রাখা যায়। ধীরে ধীরে ক্রীড়াশিল্প ও যে ‘বক্স অফিস’-কেন্দ্রিক হয়ে উঠছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ পৃথিবীতে যদি গাধার চেয়েও কোনো নির্বোধ প্রাণী থেকে থাকে, তাহলে জ্যান্টাইল খেলোয়াড়দের সে নামেই সম্বোধন করা উচিত। তারা খুব কাছ থেকেই দেখছে—ইহুদি জুয়াড়িদের দৌড়াত্ম্যে আমাদের প্রতিটি ক্রীড়াশিল্প আজ কতটা ধ্বংসের মুখে। তারপরও কোনো খেলোয়াড় যদি জুয়াড়িদের সঙ্গে হাত মেলায়, তাহলে তাকে আর কিই-বা বলা যেতে পারে? চাইলে এমন অজস্র উদাহরণ এখানে তুলে ধরা সম্ভব!

Jack Johnson-এর নাম আশা করি অনেকে শুনেছেন। বক্সিং খেলায় তিনি চ্যাম্পিয়নশিপ খেতাবও পেয়েছিলেন। এই ভদ্রলোক বিলাসিতার দোষে পুরস্কারের অর্থ এত দ্রুত খরচ করে ফেলে যে, অচিরেই দরিদ্রতা নেমে আসে। এমতাবস্থায় একদিন Frazee ও Curley তাকে একটি পাতানো খেলায় অংশগ্রহণের প্রস্তাব দেয়। বলা হলো Jess Willard-এর সঙ্গে পরবর্তী খেলায় যদি সে হেরে যায়, তাহলে তাকে ৩৫,০০০ ডলার দেওয়া হবে। Jes Willard তখন দুর্বলশ্রেণির একজন খেলোয়ার ছিল। কেউ তাকে পাত্তাই দিত না। কিন্তু সে Jack Johnson-এর মতো খেলোয়াড়কে হারিয়ে দিলো! জুয়াড়ি দুজন প্রচুর অর্থের বাজি ধরে পুরোটাই জিতে নিল। এই জুয়াড়ি হলো সেই Harry Frazee, যারা নিজেকে সৃষ্টিকর্তার মনোনীত সম্প্রদায়ের অধিবাসী বলে দাবি করে। সেই যে Jack Johnson-এর ক্রীড়া-জীবনে ভাটা পড়ল, পরে আর কখনোই ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।

এতে যে জুয়াড়ি দলের খেলোয়াড়ের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, তা নয়। কারণ, পৃথিবীতে গরিব মানুষের শেষ নেই। তাদের মধ্যে পেশিবহুল ও শক্ত-সামর্থ্যবান পুরুষের ও অভাব নেই। তা ছাড়া অল্প সময়ে শরীরের পেশিগুলোকে ফুলিয়ে নেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় ড্রাগ তো জুয়াড়িদের কাছে আছেই। সুতরাং অল্প সময়ে নতুন খেলোয়াড় তৈরি করে নেওয়া তাদের জন্য কোনো ব্যাপারই না। শুধু ড্রাগ দিয়ে তো আর স্টার বানানো যায় না। এক্ষেত্রে ইহুদিদের রয়েছে সমুদ্র পরিমাণ অর্থ। তাদের এত পরিমাণ অর্থ রয়েছে যে, তা দিয়ে প্রতিটি ক্লাব কিনে নেওয়া সম্ভব।

ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে যখন কোনো খেলোয়াড়কে আদালতে তোলা হয়, তখন জুয়াড়িরা ঘাপটি মেরে বসে থাকে। খেলোয়াড়দের রক্ষা করার কোনো তাগিদ জুয়াড়িদের থাকে না। আর কেনই-বা রক্ষা করতে যাবে! যে পরিমাণ অর্থ খরচ করে আইনজীবী ভাড়া করবে, তা দিয়ে তো নতুন আরেকজন খেলোয়াড় তৈরি করতে পারবে। ফলে সেই আদিকাল থেকে নিরীহ মানুষরাই কেবল ক্রসফায়ারের শিকার বা বলির পাঠা হয়ে আসছে। আর প্রকৃত অপরাধীরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে আমাদের আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের চক্রান্তে আমাদের কত প্রতিভাবান খেলোয়াড় যে বলির পাঠা হয়ে হারিয়ে গেছে, তার তালিকা উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। এই মাত্রাতিরিক্ত জুয়াড়ি এবং সৃষ্টিকর্তার তথাকথিত মনোনীত সম্প্রদায়ের অধিবাসীদের যদি ক্রীড়াজগৎ থেকে বিতাড়িত করা সম্ভব না হয়, তবে হয়তো একদিন ক্রীড়াজগৎ-ই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কারণ, দূষণ বা নোংরামির বাহন কখনো সুস্থ বিনোদনের মাধ্যম হতে পারে না।

হুইস্কি উৎপাদন শিল্প নিয়ে ইহুদিদের ষড়যন্ত্র

একটা সময় ছিল যখন হুইস্কিকে বলা হতো আভিজাত্যের প্রতীক। এটি ছিল ইউরোপ- আমেরিকার খুব জনপ্রিয় পানীয়। পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় যেকোনো অনুষ্ঠানেই এর প্রচলন ছিল। এর উৎপাদন প্রক্রিয়াতে ছিল নান্দনিক সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ।

আমাদের পূর্বপুরুষরা ঘোড়া ও গল্পের বই যেমন পছন্দ করত, তেমনিভাবে শরাবও পছন্দ করত। প্রাচীন লেখক ও রাজাদের কাছে এটা ছিল গর্বের প্রতীক। কারণ, স্বাস্থ্য মান ও ভেজালশূন্যতা প্রাধান্য দিয়ে পরিশুদ্ধ আঙুরের রস থেকে এই শরাব তৈরি হতো। সে সময় বাজারে এমন অনেক শরাব পাওয়া যেত, যার সাথে বহু প্রজন্মের প্রাকৃতিক নির্যাস মিশে থাকত।

বলে রাখা ভালো, হুইস্কি ও শরাব উৎপাদন প্রক্রিয়ায় আহামরি কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য কেবল ভাষাগত ব্যবহারে। যেমন : হুইস্কি হলো সাধারণ মানুষের মুখের ভাষা। আর শরাব সাহিত্যিক ভাষা, যা ব্যবহৃত হয় গল্প-কবিতা-উপন্যাসে। বিশুদ্ধ পানি ও ফলের রস ছাড়া আরও একটি উপাদান হুইস্কি উৎপাদন শিল্পে বিশেষভাবে জরুরি তা হলো—ধৈর্য। মানুষ কেবল শখ ও আবেগ থেকেই এই শিল্পে কাজ করত। এই শিল্পে কাজ করতে যে নান্দনিক দক্ষতার প্রয়োজন, তা অর্জন করতে দীর্ঘ সময়, পরিশ্রম ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। বাণিজ্যিক মুনাফা এখানে ছিল গৌণ বিষয়।

তাহলে এমন কী ঘটল, যার দরুন সচেতন মানুষেরা আজ হুইস্কি বর্জন করা শুরু করেছে! হঠাৎ এই অনীহার কারণ কী? মানবসমাজ কি আগের চেয়ে বেশি পরিশুদ্ধ হয়ে গেছে? যা ছিল আভিজাত্যের প্রতীক, তার উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে সরকারের কেন এত কড়াকড়ি? কেন তার স্বাস্থ্যমান নিয়ে এত প্রশ্ন তোলা হচ্ছে?

কারণ, এই শিল্পে আজ ইহুদিদের থাবা পড়েছে। যে হুইস্কিকে আজকের সুশীল সমাজ বর্জন করছে, তার সাথে কয়েক প্রজন্ম আগের হুইস্কির রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য । শুধু তা-ই নয়; আমাদের প্রাত্যহিক খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত এমন কোনো ভোগ্যপণ্য নেই, যা তাদের অশুভ থাবা থেকে মুক্তি পেয়েছে। হয়তো অনেকে হুইস্কি পান করে না। কিন্তু কীভাবে এর গুণগত মান নষ্ট করে এটিকে একটি অস্বাস্থ্যকর পানীয়তে পরিণত করা হলো, তার ইতিহাস জেনে রাখা উচিত। কারণ, এর সাথে চারপাশে ঘটমান অনেক ঘটনার সাদৃশ্য মেলানো সম্ভব হবে।

যে নান্দনিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে হুইস্কি উৎপাদন করা হয়, তা ভাষায় বর্ণনা করা সত্যি-ই কঠিন। গল্প-সাহিত্যে (ইউরোপীয় সাহিত্য) যে অমর পানীয়ের কথা শোনা যায়, তা মূলত তিনটি অঞ্চলে তৈরি হতো। স্কটল্যান্ডের গ্যানলিভেটে, আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাব্লিনে ও আমেরিকার কেনটাকি প্রদেশের ব্লুগ্রাস শহরে। প্রথমত, এই অঞ্চলগুলো ইহুদিমুক্ত ছিল। দ্বিতীয়ত, এখানকার জ্যান্টাইলরা ভালো হুইস্কির জন্য অন্তত ১০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষ করত। তৃতীয়ত, এখানকার খাবার পানি ছিল অতি বিশুদ্ধ। এ কারণে এখানকার হুইস্কি ব্র্যান্ডগুলোর বিশ্বজোড়া খ্যাতি ছিল। যেমন : Pepper, Crow, Taylor ইত্যাদি।

অনেকেই হয়তো Bourbon Whisky-এর নাম শুনে থাকবে। এটি বিশ্বের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর একটি। এটি তৈরি হতো হুইস্কি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত আমেরিকার কেনটাকি প্রদেশে। একবার এর মূল কারিগর উৎপাদন খরচ কমাতে প্রতিষ্ঠানটিকে ইলিনয়েসে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করে। কিন্তু ইলিনয়স ও বোরনের পানি এক নয় জেনে তিনি হতাশ হন। বোরনের পানি গ্লেন ক্রেকের চুনাপাথর মিশ্রিত পানি আর ইলিনয়সে পাচ্ছে শস্য কাজে ব্যবহৃত নদীর পানি। সামান্য এই পার্থক্যেই হারিয়ে যেতে পারে সু-বিখ্যাত একটি ব্র্যান্ডের বিশেষত্ব। তাই তিনি কারখানা স্থানান্তরের পরিকল্পনা বাতিল করেন। এ কারণে আঞ্চলিক বিশেষত্বের জন্য একই হুইস্কি পৃথক পৃথক নামে পরিচিত। যেমন : ‘রাম’ সবচেয়ে ভালো হয় জ্যামাইকাতে, ‘পোর্ট শরাব ভালো হয় পর্তুগালের ডোরো শহরে, ‘শ্যাম্পেইন’ ভালো হয় ফ্রান্সের রাইহেম শহরে এবং ‘বিয়ার’ ভালো হয় ব্যাভারিয়াতে।

যেই না বিশুদ্ধ ‘হুইস্কি’ বাজার থেকে গায়েব হয়ে গেল, অমনি ‘বিয়ার’ এসে জায়গা দখল করে নিল। শুরুতে কেবল সচেতন মানুষই বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরেছিল। ফল ও সবজি রস হতে মিষ্টিজাত উপাদানসমূহ আলাদা করে ভারী পানীয় তৈরির যে কার্যপদ্ধতি, তাকে গাজন প্রক্রিয়া বলা হয়। প্রাকৃতিক উপায়ে এই কাজ করা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। কিন্তু ইহুদিরা এমন সব কৌশল উদ্ভাবন করে, যা দ্বারা কৃত্রিম উপায়ে অতি অল্প সময়ে গাজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। এভাবেই তারা অতি অল্প সময়ে প্রচুর হুইস্কি উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করে। ফলে তাদের উৎপাদন ব্যয় বহুলাংশে কমে যায়। কারণ, আগে যে পানীয় তৈরিতে লাগত ১০ বছর, তা এখন হচ্ছে ১০ দিনে! কিন্তু তারপরও স্বাদ-রস-গন্ধে তাদের আলাদা করার কোনো উপায় নেই।

যেহেতু ভালো হুইস্কি তৈরি হতে দীর্ঘ সময় লাগে, তাই এর বিক্রয়মূল্য বেশি হবে— এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ইহুদিদের উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় স্বল্পমূল্যে বিক্রি করতে পারত। তা ছাড়া বাজারজাতকরণে ইহুদিদের মতো দক্ষ জাতি যে গোটা দুনিয়ায় দ্বিতীয়টি নেই, তা আগেই বলা হয়েছে। বিভিন্ন দোকান, সুপারস্টোর, সেলুন ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সাথে তারা গড়ে তোলে মজবুত ব্যবসায়িক জোট। ইহুদিদের পানীয় বিক্রি করে এসব ব্যবসায়ীরা বেশ ভালো উপার্জন করত। কারণ, বিক্রয়মূল্য কম হওয়ায় এসব পণ্য বেশি বিক্রি হতো। আবার বিক্রি বেশি হওয়ায় তাদের কমিশনের পরিমাণও বেশি হতো। ফলে এ জাতীয় হুইস্কি খুব দ্রুত বাজারে ছড়িয়ে পড়ে। আগে যেখানে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বছরে এক বোতল হুইস্কি কিনতেই হিমশিম খেতো, আজ পানির দরে কিনতে পারছে। অপর দিকে ভালো জ্যান্টাইল প্রতিষ্ঠানগুলো; যারা নিজেদের আবেগ ও ভালোবাসা পুঁজি করে দীর্ঘ সময় নিয়ে প্রাচীন গৌরবময় হুইস্কি উৎপাদন ধারা অব্যাহত রেখেছিল, তারা বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে হারিয়ে যেতে শুরু করে। সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে না—তারা যা পান করছে, তা কৃত্রিমতায় ভরা বিষাক্ত পানীয় বই কিছু নয়।

বিষয়টির ওপর ১৯১৬ সালে John Foster Fraster তার লেখা The Conquering Jew বইয়ে উল্লেখ করেন—

‘ইহুদিরা হলো আমেরিকান হুইস্কি শিল্পের রাজা। National Liquor Dealer-এর তালিকাভুক্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শতকরা ৮০ ভাগ সদস্যই এই গোত্রের সদস্য। শুধু তা-ই নয়; এখানকার যে প্রদেশগুলোতে তামাকের ভালো চাষ হয়, সেই অঞ্চলগুলোতে তারা অন্য প্রতিষ্ঠানকে ভিড়তে পর্যন্ত দেয় না। ফলে স্বল্পমূল্যে ইহুদিদের কাছে তামাক বিক্রি করা ছাড়া কৃষকদের ভিন্ন কোনো উপায় থাকে না। এর দরুন ইদানীং সিগারেট শিল্পে তাদের দাপট বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। American Tobacco Company যে পরিমাণ সিগারেট তৈরি করে, তা দিয়ে দেশের কেবল ১৫ ভাগ চাহিদা মেটানো সম্ভব হয়। বাকি ৮৫ ভাগ আসে ইহুদিদের গুদাম থেকে।’

১৯০৪ সালে আমেরিকার Bureau of Chemistry-এর প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন Dr. Wiley. সে বছর তিনি বাজারে চলমান হুইস্কি বিতর্কের ওপর একটি বিবৃতি প্রদান করেন। এর অংশবিশেষ তুলে ধরা হলো—

‘ভালো হুইস্কি প্রস্তুত করা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার, যা অনেকাংশে ব্যয়বহুল। এ প্রক্রিয়ায় অন্তত চার বছর সময় লাগে, যেন অ্যালকোহল অন্যান্য খাদ্য উপাদান জারণ (Oxidation) প্রক্রিয়া সম্পাদন করে, জৈব উপায়ে পানীয় রঙিন করতে পারে। এজন্য উপাদানগুলো দীর্ঘদিন গুদামজাত করতে হয়, যা উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেয়।

ইহুদিরা কৃত্রিম উপায়ে কিছু কৌশল আবিষ্কার করে, যা দ্বারা মাত্র কয়েক ঘণ্টায় হুইস্কি তৈরি করা সম্ভব। একই পানীয় জ্যানটাইলদের প্রস্তুত করতে লাগে কয়েক বছর। প্রধম ধাপে, ফল বা সবজি রসের সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি মিশিয়ে পরিমাণ বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় ধাপে, দগ্ধ চিনি ও কেমিক্যাল মিশিয়ে পানীয় রঙিন করা হয়। তৃতীয় ধাপে, রুচিকর স্বাদ ও গন্ধ সংযোজন করা হয়। এভাবে মাত্র কয়েক ঘণ্টার বা কয়েকদিনে প্রচুর পানীয় উৎপাদন করা সম্ভব, যা আপাত দৃষ্টিতে স্বাদে-গন্ধে সত্যিকারের হুইস্কি বলে মনে হবে। তবে এতে রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্যঝুঁকি। খাঁটি হুইস্কির যুগ বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে তা কেবল গল্প-উপন্যাসেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব।’

Jewish Encyclopedia-তে উল্লেখ আছে-

‘১৮৯৬ সালে রাশিয়ান সরকার হুইস্কিশিল্পকে রাষ্ট্রীয়করণ করায় অনেক ইহুদি পরিবারের ভাগ্যে দুর্দশা নেমে আসে।’

অতি মুনাফালোভী এই সম্প্রদায়টির হাত থেকে ভদকাশিল্প পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে রাশিয়ার সরকার তা রাষ্ট্রীয়করণ করে। পোল্যান্ড ও রোমানিয়াতেও একই ঘটনা ঘটে। তাদের ব্যাংকাররা রোমানিয়ান কৃষকদের জমি আত্মসাৎ করে ভদকা ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিত। পরে একই কৃষকদের দিয়ে স্বল্প মজুরির বিনিময়ে সেই জমিগুলোতে ভদকা তৈরির মূল উপকরণ চাষ করানো হতো। বিষয়টি জানতে পেরে আমেরিকার সুশীল সমাজ হুইস্কিশিল্প রক্ষায় প্রেসিডেন্ট দপ্তরে জোর দাবি জানাতে থাকে। এরপর সরকারি দপ্তর থেকে ঘোষণা আসে, যারা এই শিল্পে জড়িত হবে; হোক উৎপাদনকারী বা খুচরা ব্যবসায়ী- সবাইকে যোগ্যতা প্রমাণ করে লাইসেন্স নিতে হবে। যদি এর বাইরে কারও দোকানে বা গুদামে হুইস্কি মজুদের সন্ধান পাওয়া যায়, তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিন্তু ইহুদিরা তো পারদের মতো! তাদের কোনো কিছু দিয়েই আটকে রাখার উপায় নেই। তাদের যে জালেই আটকানো হোক না কেন, ঠিকই ছিদ্র গলে বেড়িয়ে আসবে। লাইসেন্স আইন বলবৎ হওয়ায় ইহুদিদের বৈধ্য বাণিজ্যের পথ বন্ধ হয়ে গেলেও অবৈধ্য উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে যায়নি। এ পর্যায়ে তারা খুব সূক্ষ্ম একটি খেলা খেলে। এর চূড়ান্ত পরিণতি কী ছিল, তা অধ্যায়টির শেষাংশে দেখতে পাবেন। তাদের পরিকল্পিত চক্রান্তটি তিনটি ধাপে নিচে উপস্থাপন করা হলো।

প্ৰথম ধাপ

ইহুদিরা সে সময়ের বিখ্যাত সব হুইস্কি ব্র্যান্ডের লোগো নকল করে নিজেদের বোতলে লাগিয়ে বাজারে সরবরাহ করতে শুরু করে। বাজারের বিপণন চক্রটির সঙ্গে ইহুদিদের ভালো সম্পর্ক ছিল বলে তারা আপসে বিষয়টি মেনে নেয়। কিন্তু চাইলেও তো আর মূল্য কমাতে পারছে না! কারণ মূল্য তালিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। যদি আপসে নকল পানীয়ের মূল্য কমায়, তারপরও বিষয়টি প্রকৃত উৎপাদনকারীর কানে চলে যাবে।

ফলে কোম্পানির যে গাড়িগুলো এক গুদাম থেকে অন্য গুদামে এবং দূরবর্তী স্থানে হুইস্কি পৌঁছে দিত, সেসব গাড়ির চালকদের সঙ্গে আঁতাত করতে শুরু করে। তারা চালকদের সঙ্গে চুক্তি করে গাড়িগুলোকে বিভিন্ন ঝোপঝাড় বা জঙ্গলে নিয়ে আসত। তারপর গাড়ির হুইস্কিগুলো পালটে নিজেদের বোতল সেখানে উঠিয়ে দিত। পুলিশি তদন্তে পাওয়া যায়, James E. Pepper-এর বোতলগুলোতে যে হুইস্কি পাওয়া যাচ্ছে, তা ইহুদিদের উৎপাদিত পানীয়। সে সময় বেশ কয়েকজন অপরাধীর নামও প্রকাশ পেয়েছিল, কিন্তু আইনি প্রক্রিয়া বেশি দূর এগোতে পারেনি।

দেখা গেল, লাইসেন্স করেও কোনো লাভ হচ্ছে না। যে ভেজাল বন্ধ করতে সুশীল সমাজের এত আন্দোলন, তা আগের মতোই রয়ে গেছে। ভয়ানক ব্যাপার হচ্ছে—এই নোংরা কাজে এমন সব বিখ্যাত হুইস্কি ব্র্যান্ড জড়িয়ে পড়েছে, যাদের রক্ষায় একসময় মানুষ আন্দোলন করেছিল। শুধু হুইস্কিই নয়; যত ধরনের পানীয় বাজারে বিক্রি হচ্ছে, ততদিনে প্রায় সবকটি-ই বিষাক্ত হয়ে পড়েছে।

১৯১৩-১৪ সালে Bonfort’s Wine & Spirits Circular প্রতিষ্ঠানটি একটি কলাম প্রকাশ করে। তাতে উল্লেখ্য করা হয় –

‘বিখ্যাত সব ব্র্যান্ডের নামে যেসব হুইস্কি ও স্পিরিট আজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে, তা সবই ভেজালে পরিপূর্ণ। এই বাজার এতটা লাভজনক, একটি মহল মৌমাছির ন্যায় ঝাঁকে ঝাঁকে এই শিল্পের ওপর চেপে বসেছে। অবৈধ ও ভেজাল মিশ্রিত পানীয় আমাদের সমাজে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে তারা নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। সামাজিক বিভিন্ন পার্বণ ও ধর্মীয় উৎসবগুলোতে ঐতিহ্য রক্ষার্থে আজ আমরা যেসব হুইস্কি পান করছি, তা রাসায়নিক উপাদানে তৈরি পানীয় ব্যতীত আর কিছুই নয়। এর মধ্যে ফলমূল বা ভেষজ উদ্ভিদের সামান্যতম নির্যাস নেই। কেবল কণ্ঠ ও গলনালিকে শান্ত করতে আমরা বাজারের এসব নোংরা ও বিষাক্ত সব পানীয় গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছি। এমতাবস্থায় আমরা প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

পরিস্থিতি যখন এতটা জটিল, তখন সুশীল সমাজ হুইস্কি পান করাই ছেড়ে দেয় এবং সবাইকে এ পানীয় বর্জনে আহ্বান জানায়। এই বর্জন আন্দোলন ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন প্রদেশে ছড়িয়ে পরে এবং এর সঙ্গে অনেক সংগঠন যুক্ত হয়। এই আন্দোলনে Young Men’s Christian Association-এর অবদান কখনো ভোলার নয়। ক্রীতদাস বিতর্কের পর হুইস্কি-বিতর্ক আমেরিকার সবচেয়ে বড়ো সমস্যায় রূপ নেয়। প্রবল আন্দোলনের মুখে আমেরিকান প্রশাসন বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে এই পানীয় উৎপাদন ও বণ্টন প্রক্রিয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বাধ্য হয়।

দ্বিতীয় ধাপ

১৯২১ সালের এপ্রিল মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত Central Conference of American Rabbis-এ রাবাই Leo M. Franklin-এর বক্তব্যের খানিকটা অংশ তুলে ধরা হলো—

‘ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে বিনয়ের সাথে সম্মানিত কংগ্রেস সভাসদগণের নিকট আর্জি জানাতে চাই, ধর্মীয় উৎসব এবং শাস্ত্রীয় আচার পালনের নিমিত্তে সংশোধিত হুইস্কি আইনে ইহুদিদের কিঞ্চিৎ ছাড় দেওয়া উচিত। আমাদের বিভিন্ন ধর্মীয় আচারে শরাব একটি ঐতিহ্যময় ও বাধ্যতামূলক বিষয়। শরাবহীন খিডিস[২৯] রাতগুলো আজ তার সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। ধর্মীয় আচার পালনে হাজার বছর ধরে এ রাতে আমরা আঙুরের রস পান করে আসছি। আমাদের প্রার্থনা শুরু হয় আঙুর রস দিয়ে তৈরি বিশেষ এক শরাব পানের মধ্য দিয়ে।

আমাদের বিশ্বাস, দেশ ও জনগণের স্বার্থে যা ভালো, আপনারা তা-ই করছেন। বিগত কয়েক দশকে হুইস্কিশিল্প যে প্রাচীন গুণমান হারিয়ে বসেছে, তা বলা বাহুল্য। কিন্তু তারপরও অন্যান্যদের ন্যায় আমরাও এ দেশের নাগরিক। এ দেশের জল-হাওয়ায় নিজেদের সঁপে দিয়েছি এবং দেশের সংবিধানের ওপর পূর্ণ শ্রদ্ধা ব্যক্ত করছি। মহামান্য সভাসদগণ, যে সংবিধানের বাস্তবায়নে আপনারা অহর্নিশ কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে উল্লিখিত ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি কি আপনারা ভুলে গেছেন? আজও মিলিয়ন মিলিয়ন ইহুদি নাগরিক এ দেশের উন্নয়নে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে। তারা এ দেশকে মনে-প্রাণে নিজেদের দেশ বলে স্বীকার করে নিয়েছে। তাহলে আপনারা কীভাবে তাদের আবেগের বিষয়টি (হুইস্কি) নতুন আইন পাসের সময় উহ্য রাখতে পারলেন?

আমি এতটুকু বাড়িয়ে বলছি না। গত এক বছরে অসংখ্য রাবাইয়ের পক্ষ থেকে ১৫০টি চিঠি আমার নিকট এসেছে, যেখানে সবাই হুইস্কি উৎপাদনের অনুমতি চেয়ে আর্জি করেছে। আমি সত্যতা যাচাই করে দেখেছি, প্রতি দশটির মধ্যে নয়টি চিঠির উদ্দেশ্য ধর্মীয় উৎসব ও শাস্ত্রীয় আচার পালনে হুইস্কির উৎপাদনের অনুমতি লাভ করা। যেহেতু নতুন আইন অনুযায়ী অনুমতি ব্যতীত এই পানীয় উৎপাদন পুরোপুরি নিষিদ্ধ, তাই আপনাদের অনুমোদন একান্ত আবশ্যক।

গত কয়েক দশকে এই শিল্প নিয়ে যে বিতর্কের জন্ম হয়েছে, তা আমরা অস্বীকার করছি না। সেই ভেজাল উৎপাদকদের মধ্যে যে আমাদেরও কিছু সদস্য জড়িয়ে ছিল, তাও অস্বীকার করছি না। তবে আমাদের পাশাপাশি খ্রিষ্টানদেরও তো অনেক সদস্য এ প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিল। তা ছাড়া গুটিকয়েক অপরাধীর জন্য পুরো একটি সম্প্রদায় শাস্তি পাবে—এটাও সভ্য সমাজে কাম্য নয়।

আশা করি, কংগ্রেস সভাসদগণ বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন এবং সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনপূর্বক আমাদের ধর্মীয় আচার পালনে পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করবেন।’

তাদের আর্জি কংগ্রেস পার্লামেন্টে উঠলে সভাসদগণের মধ্যে এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়। একপক্ষ এই শিল্প পুনরায় চালু করার পক্ষে, অন্যপক্ষ এর বিপরীত দিকে অবস্থান নেয়। সবশেষে সিদ্ধান্ত হয়, এই শিল্প কেবল ইহুদিদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এতে জ্যান্টাইলদের কোনো অংশগ্রহণ থাকবে না। তবে ইহুদিদের সবাই ইচ্ছেমতো হুইস্কি উৎপাদন করতে পারবে না। এই অনুমতি কেবল রাবাইদের জন্য প্রযোজ্য। তারা প্রত্যেকে সিনাগাগের জন্য বাৎসরিক ১০ গ্যালন হুইস্কি উৎপাদন করতে পারবে।

তৃতীয় ধাপ

বাৎসরিক ১০ গ্যালন পরিমাণে খুব বেশি নয়, কিন্তু ইহুদিদের জন্য ছোট্ট একটি ছিদ্ৰই যথেষ্ট। যেহেতু রাবাই ব্যতীত অন্য কেউ এই পানীয় উৎপাদন করতে পারবে না, তাই তারা দলবেঁধে সরকারি দপ্তরগুলোতে নিজেদের নাম তালিকাভুক্ত করতে শুরু করে। ফিলাডেলফিয়া, ফ্লেরিডা, নিয়ইয়র্কসহ আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে ব্যাঙের ছাতার মতো অজস্র সিনাগাগ গড়ে উঠা শুরু করে। সরকারি নিয়ম ছিল—অনন্ত ৫০ জন উপাসনাকারী না হলে নতুন কোনো সিনাগাগ প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। তাই একই ব্যক্তি নিজের নাম অসংখ্যবার পরিবর্তন করে একাধিক সিনাগাগের অধীনে তালিকাভুক্ত হতে শুরু করে। ধরুন, ফ্লোরিডা প্রদেশের অরল্যান্ড শহরে ৫০ জন ইহুদি বাস করে। কিন্তু তারা নিজেদের নাম একাধিবার পরিবর্তন করে সরকারের খাতায় ৩০০ জনের নাম দেখায় এবং ছয়টি সিনাগাগ খোলার অনুমোতি নেয়। একই সঙ্গে জন্ম নেয় ছয়জন রাবাই, যাদের কাছে ৬০ গ্যালন হুইস্কি উৎপাদনের অনুমতি থাকবে।

যদিও প্রত্যেককে ১০ গ্যালন উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু রাবাইদের বাড়িতে শত শত লিটার হুইস্কি পাওয়া যেত। Rabbi Cohen নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, বেশি উৎপাদন করা হচ্ছে যেন কিছু নষ্ট হয়ে গেলেও শাস্ত্রীয় আচার পালনের দিনে কোনো ঘাটতি না পড়ে। নাম পরিবর্তন করে রাবাইদের সংখ্যা বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা, তার মূল হোতাও এই ব্যক্তিই ছিলেন।

অপরদিকে, সাধারণ মানুষকে হুইস্কির প্রতি পুনরায় আবেগপ্রবণ করে তুলতে তারা থিয়েটার, চলচ্চিত্র ও সংগীত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করতে শুরু করে।

১৫ বা ২০ মিনিটের এমন কোনো নাটক পাওয়া যেত না, যেখানে হুইস্কিকে একবারের জন্যও উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে ধীরে ধীরে এর চাহিদা বাড়তে শুরু করে। কিন্তু বাজারে তো হুইস্কির অস্তিত্ব নেই, আছে কেবল ইহুদিদের বাড়িতে। জ্যান্টাইল যুবকরা অতি গোপনে সেসব বাড়িতে গিয়ে বোতলে বোতলে পানীয় নিয়ে আসত। ফলে তাদের কাঁচা অর্থ উপার্জনের রাস্তা বন্ধ হলো না। এই গোপনীয়তা বেশি দিন চাপা থাকল না। আইন মন্ত্রণালয় তৎক্ষণাৎ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। যেমন : ১৯১৯-২০ সালে নিউইয়র্কের এক কোম্পানিতে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে ৪ মিলিয়ন ডলারের অবৈধ্য হুইস্কি জব্দ করে, যা শাস্ত্রীয় আচার পালনের নিমিত্তে তৈরি করা হয়েছিল! দেশজুড়ে অসংখ্য রাবাই গ্রেফতার হয়। পরে দেখা যায়, সরকারি খাতায় তাদের প্রত্যেকেরই একাধিক নাম রয়েছে। রচেস্টার, ফ্লিন্ট, মিশিগান ও পোর্ট হিউরনের সে সময়কার কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করলে এমন অসংখ্য তথ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। অধিকাংশ পত্রিকার শিরোনাম ছিল এমন—অবৈধ্য হুইস্কি রাখার অভিযোগে রাবাই আটক।

কিন্তু পক্ষপাতিত্বপূর্ণ মেরুদণ্ডহীন প্রশাসন থেকে যে বেশি কিছু প্রত্যাশা করা যায় না, তা কে না বোঝে? তারপরও কিছু রাবাইকে দীর্ঘ মেয়াদে শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হয়েছিল। কিছুদিন পর কংগ্রেস থেকে পুনরায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এত জনপ্রিয় একটি পানীয়কে নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে বর্জন করা সম্ভব নয়। যারা অবৈধ্য প্রক্রিয়ায় উৎপাদন করার, তারা ঠিকই চালিয়ে যাবে। তাই নিষিদ্ধ করার পরিবর্তে এর মান নিয়ন্ত্রণের ওপর অধিক গুরুত্বারোপ করা উচিত ফলে এই শিল্পের বাজার পুনরায় খুলে দেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়, কিন্তু ততদিনে তো জ্যান্টাইল প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হয়ে বা হাত গুটিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। যাদের হাত ধরে একসময় গড়ে উঠেছিল বাজারের বিখ্যাত সব হুইস্কি ব্র্যান্ড, তাদের অনেকেই তখন এই ব্যবসায় পুনরায় ফিরে আসতে ইচ্ছুক নয়। ইহুদিদের যেহেতু কাঁচা পয়সার অভাব ছিল না, তাই এই ব্র্যান্ডগুলো তারা একে একে কিনে নিতে শুরু করে। এমন কিছু ব্র্যান্ডের নাম নিচে লেখা হলো—

Old 66, Highland Rye, T. W. Samuel Old Style Sour Mash, Bridgewater Sour Mash and Rye Whiskes, T. J. Monarch, Davies County Sour Mash Whiskies, Louis Hunter 1870, Crystal Wedding, Gannymede 76, Jig – Saw Kentucky Corn Whisky, Lynndale Whisky, Brunswick Rye and Bourbon, Red Top Rye, White House Club, Green River, Sunnybrook, Mount Vernon, Belle of Nelson, James E. Pepper, Cedar Brook, Great Western Distillery, Old Grove Whisky, Old Ryan Whisky 4 Bucha Gin ।

এমন আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম হলো : Bernheim, Rexinger & Company, Elias Bloch & Sons, J. & A. Freiberg, Freiberg & Workum, Helfferich & Sons, Hoffheimer Brothers Company, Elias Hyman & Sons, Kaufman, Bare & Company; Klein Brothers; A. Loeb & Co.; H. Rosenthal & Sons; Seligman Distilling Company; Straus, Pritz & Company; S. N. Weil & Company; F. Westheimer & Sons এবং আরও অনেক।

এত এত ব্র্যান্ড ও প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে খাঁটি হুইস্কি খুঁজে পাওয়া সহজ কাজ নয়। মজার বিষয় হলো—ক্রেতাসমাজ এখন অনেক কম মূল্যে বাজারে বিখ্যাত সব পানীয় পান করতে পারছে। তবে তারা বুঝতে পারেনি, এই পানীয়গুলো কারা তৈরি করছে। খুব অল্প সময়ে পুরো বাজার হুইস্কিতে সয়লাব হয়ে গেল। নোংরা-বিষাক্ত হুইস্কি আমাদের পুরো যুবসমাজকে মাতাল করে ছাড়ল, যার দরুন খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা এখন সমাজে নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাদ্যে ভেজাল মেশানোর যে সংস্কৃতি, তার জন্ম মূলত এই হুইস্কি শিল্প থেকে; যা অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবীর দূরবর্তী বিভিন্ন প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে। জাতি ভাবে—এই শিল্প বন্ধ করেও যখন পার পাওয়া যায়নি, তখন পারিবার ও সামাজ রক্ষায় নিজেদের সচেতন করে গড়ে তোলা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

*

২৯. খিডিস (Kiddush)-সাব্বাত রাতের বিশেষ এক প্রার্থনা পর্ব, যেখানে পরিবারের সকল সদস্য শরাব হাতে দাঁড়িয়ে থাকে এবং গৃহকর্তা বিশেষ এক প্রার্থনাবাণী পাঠ করে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *