শিলা জলে ভাসি যায়/ বানরে সঙ্গীত গায়

‘শিলা জলে ভাসি যায়/ বানরে সঙ্গীত গায়’

স্বাধীনতা বলুন, উচ্ছলতা নাম দিন, প্যারিস একটি সৎ গুণের জন্য বিখ্যাত। সে চিরকালই স্বাধীন চিন্তা, তথা পীড়িত বিদ্রোহী জনকে আপন নগরে আশ্রয় দিয়েছে। জর্মন কবি হাইনের প্রগতিশীল মতবাদ কাইজার সহ্য করতে পারেননি বলে তাকে আশ্রয় নিতে হয় প্যারিসে এবং জীবনের বেশিরভাগই তিনি কাটান সেখানে। আর এই বছর পঞ্চাশ পূর্বেই বীর সাবরকরকে ফ্রান্সভূমি থেকে ইংরেজ ধরে নিয়ে যায় বলে ফরাসি সরকার তারস্বরে প্রতিবাদ জানায়।(১)

এ শতকে আমাদের পক্ষে সবচেয়ে বড় আরামদায়ক তত্ত্ব-কথা ছিল এই যে, যেসব কূপমণ্ডুক দেশ কোনও বিশেষ ধরনের বই ছাপতে দিত না, সেগুলো ছাপা হত প্যারিসে। তার কিছুটা পাচার হত– যেমন ধরুন লেডি চ্যাটার্লি– ইংল্যন্ড, আমেরিকা, ভারত ইত্যাদিতে, আর বাদবাকিটা ফ্রান্সগত ইংরেজি পড়নেওয়ালা টুরিস্ট গিলত গোগ্রাসে। তখনকার দিনে রোক্কা একটি টাকাতে উত্তম উত্তম গ্রন্থ পাওয়া যেত। এদেশে যারা বিলিতি বই বিক্রি করে, তারা চিরকালই ছিল শাইলকের বাবার বাবা (আশা করি শাইলক জীবিত থাকলে অপরাধ নেবেন না)। ওয়ান সিনার রেইজেৎ এ হানড্রেড–এক পাপীকে দেখে একশো জন পাপপথে যায় আমিও তাই তাদেরই অনুকরণে, যত পারি এসব বই পাচার করে দেশে নিয়ে আসতুম। আমার পক্ষে প্রক্রিয়াটি কঠিন ছিল না। আমি তুলনাত্মক ধর্মতত্ত্বের ছাত্র। কাস্টম কর্মচারী সে যুগে সচরাচর হত গোয়ানিজ ক্যাথলিক। আমি ট্রাঙ্কের সর্বোচ্চ স্তরে রাখতুম একখানা ক্যাথলিক প্রেয়ার বুক এবং একটি মনোহর রোজারি– অর্থাৎ ক্যাথলিক জপমালা। ম্লেচ্ছ মুসলমানদের খ্রিস্টপ্রীতি দেখে ক্যাথলিক কর্মচারী বে-এক্তেয়ার।

সেই প্যারিস মহানগরীতে শত বছর পূর্বে ডকে উঠলেন ফ্লোবের মাদাম বোভারি বগলর্মে। অভিযোগ! তিনি ইমরাল (দুর্নীতি প্রচারকারী), অশ্লীল কেতাব লিখেছেন। সরকার পক্ষের উকিল গাঁটের ছ-পণ খেয়ে যে বক্তৃতা ঝাড়লেন, সেটা শুনে সকলেরই মনে হল, গাঁয়ের পাদ্রিকে বউবাচ্চাসহ খুন করে ওই গাঁয়ের যে একটিমাত্র কুয়ো আছে, তাতে সে লাশগুলো ফেলে দিয়ে জল বিষিয়ে দিলেও বুঝি ফ্লোবেরের অপরাধ এর তুলনায় সোনার পাথরবাটিতে আকাশকুসুম সাজানোর মতো হত।

মোপাসাঁ লিখলেন, ধন্য ধন্য এডভোকেট জেনারেল পিনার! (ড়িমশাই– অবশ্য তিনি মিন করেছেন শুড়ির শালা চামার!)। ফ্রান্সের ইতিহাসে তুমি অমর হয়ে রইলে!

ফ্লোবের খালাস পেয়েছিলেন। আদালতের ওপর জনমত হয়তো প্রভাব বিস্তার করেছিল। কারণ শুধু ফ্রান্স নয়, ফ্রান্সের বাইরেও তখন ওই বই এমনই চাঞ্চল্য জাগিয়েছে যে, তার পূর্বে বা পরে এমনতরো ক-বার হয়েছে সেটা আঙুলে গুনে বলা চলে। গুণীরা বললেন, যা বল, যা কও, বইখানা নিঃসন্দেহে পিস অব আর্ট, শেফ দ্যত্র, মাস্টারপিস।

মোপাসাঁ অতিশয় সবিনয় লিখলেন, সাহিত্যে নীতি? সে আবার কী চিজ বেরুলুম সেই চিজের সন্ধানে যাঁরা মহামানব, যারা সাহিত্যাচার্য তাঁদের কাছে। আরিস্তোফানেস, তেরেনৎস, প্রাউট, আপুলেয়ুস, ওভিড, ভের্গিল, শেকসপিয়ার, রাবলে, বকাচো, লা ফঁতেন, স্যাঁতামাঁ, ভলতের, জঁ জ্যাঁক রসো, দিদেরো, মিরবো, গোতিয়ে, ম্যুসে(২) ইত্যাদি ইত্যাদি একটিমাত্র উদাহরণও পেলুম না এদের কাছে।

ফিরিস্তিটি উচ্চাঙ্গের সন্দেহ নেই। গ্রিক, লাতিন, ইতালীয়, ইংরেজ এবং সর্বোপরি ফরাসি কারণ মোপাসাঁ স্বয়ং আঁটি ফরাসিস–মহারথীরা এতে রয়েছেন। কিন্তু সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, চীনা কোনও মহারথীর নাম তিনি করেননি। আরব্য রজনী পর্যন্ত না। কিন্তু আমার আশ্চর্য বোধহয়, ওল্ড টেস্টামেন্টটির কথা মোপাসাঁর স্মরণে এল না কেন? যদিও আশ্চর্য হবার বোধহয় কোনও কারণ নেই। অধুনা আমি আঁদ্রে জিদ-এর জুর্নাল বা রোজনামচাখানা ফের উলটে-পালটে দেখছিলুম, ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত।(৩)

পুস্তকান্তের নিঘণ্টতে দেখি, জিদ প্রায় ছ-শো জন লোকের নাম করেছেন। শতকরা আশিজন সাহিত্যস্রষ্টা। প্রাচ্যদেশীয় একজন লেখকের নামও তার আত্মচিন্তায়, বন্ধুমিলনে, সাহিত্যপাঠে উল্লিখিত হয়নি। অথচ গুণগ্রাহী এই জিদই গীতাঞ্জলি অনুবাদ করেন। ইয়োরোপের প্রাচ্যবিদ্যামহার্ণবদের কথা হচ্ছে না; ম্যাক্সমুলার, লেভি, উইনটার নিৎস, সাষাও (অল-বিরুনির অনুবাদক) এদের কথা আলাদা, কিন্তু যারা সাহিত্য-রস, কলাসৃষ্টি নিয়ে চিন্তা করেন, তাঁদের অল্পজনই সে-সব বস্তুর জন্য অস্তাচলে বসে পূর্বাচলের পানে তাকান– গ্যোটে রোলা (তিনিও সুন্দরের চেয়ে সত্যের সন্ধান করেছেন অধিকতর) বড়ই বিরল। প্রতিদিন বিরলতর হচ্ছে। কিছুদিন পরে অবশ্য এদের সম্বন্ধে আমরা আর কোনও খবরই পাব না। বিদেশি বই আসবে না। বিজলি বন্ধ হয়ে গেলে রেডিয়ো সেটের মতো অবস্থা হবে আমাদের।

মূল কথায় ফিরে যাই : মোপাস লিখছেন, রীতিমতো চটে যেতেন ফ্লোবের, যখন আর্ট সমালোচকরা সাহিত্যে নীতি সাধুতার দোহাই পাড়তেন। তিনি (ফ্লোবের) নিজেই বলেছেন, যবে থেকে মানবজাতির সৃষ্টি হয়েছে, সর্ব মহান লেখকই তাঁদের সৃষ্টির মাধ্যমে এইসব ক্লীবদের সদুপদেশের (উদ্ধৃতিচিহ্ন অনুবাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

(*Depuis quexiste lhumanite, disait-il, tous les grands ecrivains ont proteste per leurs oeuvres contre ces conseils dimpuissants) (8)

গুরুদত্ত এই আপ্তবচনটি সসম্মান উদ্ধৃত করে মোপাস বলেছেন, সুই, প্রতিষ্ঠিত সমাজজীবনের জন্য সুনীতি তথা সাধু আচরণ অপরিহার্য, কিন্তু প্রতিষ্ঠিত সমাজের সঙ্গে সাহিত্যের তো কোনও সম্পর্ক নেই। ঔপন্যাসিকের প্রধান লক্ষ্য, মানুষের প্রবৃত্তি পর্যবেক্ষণ করে সেগুলো বর্ণনা করা– তা তার প্রবৃত্তি সুপ্রবৃত্তিই হোক আর কুপ্রবৃত্তিই হোক। নীতিগর্ভ উপদেশ বিতরণ করা কিংবা অভিসম্পাত দেওয়া, অথবা তত্ত্বতথ্যের প্রচার করার জন্য জীবন উৎসর্গ করা তো তার কর্ম নয় (অর্থাৎ এসব প্রচারকর্মের মিশনারি সে নয়)। এ জাতীয় উদ্দেশ্যমূলক কোনও গ্রন্থই আর্টের পর্যায়ে উঠতে পারে না।

তৎসত্ত্বেও কোনও সার্থক গ্রন্থ যদি সুশিক্ষা দানে সক্ষম হয়, তবে সেটা লেখক সেই উদ্দেশ্য নিয়ে গ্রন্থ লিখেছিলেন বলে নয় (সেটা malgre lauteur inspite of the author, –সেটা লেখকের ইচ্ছা– এমনকি অনিচ্ছাবশত নয়), তিনি যেভাবে ঘটনাগুলো বর্ণনা করেছিলেন, তার অন্তর্নিহিত শক্তির বলেই সে সেই সুশিক্ষা দানে সক্ষম হয়েছে।

অর্থাৎ আন্কল টমস্ ক্যাবিন যদি দাসত্বপ্রথাকে নির্মম আঘাত দিয়ে থাকে, যদি এমিল জোলার জা কুজ(আই এক্যজ=আমি ফরিয়াদ জানাই)(৫) মিলিটারি স্বৈরতন্ত্রকে দ্বিখণ্ডিত করে থাকে, তবে তার কারণ, পুস্তকদ্বয় অনুভূতি সঞ্চারণে এমনই কৃতকার্য হয়েছিল যে, এগুলো তখন আর্টের সর্বোচ্চ পর্যায়ে আরোহণ করেছে।

মোপাসাঁ বিশুদ্ধ আর্ট, আর্টে শ্লীলতা-অশ্লীলতা নিয়ে আরও অনেক কিছু লিখেছেন, কিন্তু সেগুলো উপস্থিত থাক।

ছুঁৎবাই রোগে আক্রান্ত পদি পিসি সব দেশেই আছেন– তবে ফ্লোবের-মোকদ্দমায় হেরে গিয়ে ফ্রানসের পদি পিসিরা বড়ই মুষড়ে যান। বস্তুত ফ্লোবের-শতাব্দীর শেষের দিকে পেন্ডুলাম অন্য প্রান্তে চলে গিয়েছেন। ফ্রান্‌সের যে মিনিট্রি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন একদা ফ্লোবেরের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা করেছিলেন, তারাই তখন আইন করেছেন, যেসব পুস্তকে ভগবানের উল্লেখ থাকবে, মিনিসট্রি সেগুলো তাদের পাবলিক লাইব্রেরির জন্য কিনবেন না। সে খবর শুনতে পেয়ে কট্টর জাত-নাস্তিক আনাতোল ফ্ৰাস উত্তেজিত কণ্ঠে বলেন, এ আবার কী রকমের লিবার্টি যে লিবার্টি মানুষকে ভগবানের নাম প্রচার করতে দেয় না?

বভারি মোকদ্দমার একশত বছর পর আবার পেন্ডুলাম অন্য প্রান্তে গেছে। টপলেস ডাইনি পোড়াবার জন্য ফ্রান্সেই এখন সবচেয়ে পুলিশের দাপট, নাইটক্লাব টাইট দেওয়াতে এদের উৎসাহ-উত্তেজনার অন্ত নেই। আমাদের অবশ্য তাতে কিচ্ছুটি বলবার নেই।

কিন্তু একশো বছর পূর্বে যে বভারির বিরুদ্ধে মোকদ্দমা করে মার খেল ফ্রান্স, সেই ফ্রান্সই চেষ্টা করছে এখন, আবার মাদাম বভারির সর্বাঙ্গে বোরকা চাপিয়ে তুর্কিপাশার হারেমবদ্ধ করতে! হিটলার যখন পবিত্র জর্মন ন্যাশনালিজমের দোহাই কেড়ে ইহুদি বই পোড়াতে আরম্ভ করেন তখন এক মার্কিন গুণী বলেছিলেন, জর্মনি পুটস দি ক্লক ব্যাক ফ্রান্সে যে তারই পুনরাবৃত্তি! এ-ও এক নয়া নাৎসিবাদ।

দ্য গল লোকটিকে আমার খুব পছন্দ নয়। যদ্যপি গত যুদ্ধের সময় তাঁর আদর্শ এবং চার্চিলের আদর্শে কোনও পার্থক্য ছিল না, তবু চার্চিল পদে পদে দ্য গলের দম্ভ দেখে অতিষ্ঠ হতেন। প্রধান অভিনেত্রী বা প্রিমা দন্নার মতো তিনি এমনই অতি অল্পেতে ঠোঁট ফোলাতেন, গোসাঘরে আশ্রয় নিতেন(৬) যে, আইজেনহাওয়ারের মতো মাথাঠাণ্ডা মানুষ পর্যন্ত–যিনি কি না মন্টির মতো দেমাকি লোককেও সামলাতে পেরেছিলেন তার এদিকটা লক্ষ করে লেখেন We felt that his qualities were marred by hypersensitiveness and an extraordinary stubbornness in matters which appeared inconsequential to us. My own wartime contacts with him never developed the heat that seemed to be generated frequently in his meetings with many others.(৭)

মোগল পাঠান হদ্দ হল ফারসি পড়ে তাঁতি। চিতেবাঘের চিত্তির মুছতে লেগে গেলেন সঁসিয়ে ল্য জেনেরাল শার্ল দ্য গল। না হলেই তো চিত্তির! তবে শুনেছি, এ রবির পিছনেও নাকি একটি বিরাট ছায়া আছে। তিনি নাকি মাদাম। তিনিই নাকি ফ্রান্সের নব জোয়ান অব আর্ক পদি পিসি।

এ সুবাদে আমার মনে পড়ল, এমিল জোলারও নাকি কয়েকটি পদি পিসি দোস্ত ছিলেন। তারা নাকি একাধিকবার বায়না ধরে তাকে বলেন, ভাই, তুমি লেখো ভালো; কিন্তু তোমার কোনও বই-ই নিঃসঙ্কোচে পুত্রকন্যার হাতে তুলে দেওয়া যায় না। একখানা ক্লিন বই লেখ না কেন? জোলা ঢেঁকি গিললেন।

সে বইয়ের সমালোচনা করতে গিয়ে আনাতোল ফ্ৰাস বলেন, মঁসিয়ে জোলা যখন শূয়ারটার মতো কাদাতে গড়াগড়ি দেন তিনি সেটি করেন বড়ই গ্রেসফুলি (অর্থাৎ প্রকৃত সমঝদার আর্টিস্টের মতো), কিন্তু তিনি যখন বন্ধুজনের অনুরোধে পাখনা গজিয়ে দেবশিশুপারা স্বগৃগোপানে ওড়বার চেষ্টা করেন তখন সেই এলোপাতাড়ি ড্যানার বাড়ি দেখে হাসি সামলানো রীতিমতো মুশকিল হয়– হি ডাজ ইট মোস্ট গ্রেসূলেসলি। তার পর তিনি বলেন, আই প্রেফার মঁসিয়ে জোলা ওয়ালোইং ইন মাড়–মসিয়ো জোলার নর্দমাতে হুটোপুটি করাটাই আমি পছন্দ করি বেশি (৮)

***

 প্যারিস ড্যানা গজিয়ে ফেরেশতার মতো বেহেশৎ পানে ওড়বার চেষ্টা করছে ইয়াল্লা!!

———-

১. সাবরকরকে যখন বন্দি করে ইংরেজ ভারতে পাঠাচ্ছে, তখন তিনি ফরাসি বন্দরে পালিয়ে গিয়ে ডাঙায় উঠেন। ইংরেজ সেলার তাড়া করলে সাবরকর ফরাসি পুলিশম্যানকে বোঝাতে পারলেন না যে, তিনি রাজনৈতিক বন্দি ফরাসি ভাষা জানতেন না বলে। সাধারণ খুনি আসামি ভেবে পুলিশ তাকে ইংরেজের হাতে সমর্পণ করে। পরে ইংরেজ বলে, ফরাসি পুলিশ ফরাসি সরকারের প্রতিভূরূপে সাবরকরকে ইংরেজের হাতে যখন সমর্পণ করেছে, তখন পরে ফরাসি সরকারের আপত্তি করার কোনও হেতু নেই।… এসব কিন্তু আমার শোনা কথা।

২. Aristophanes, Terence, Plautas, Apleus, Ovid, Virgil, Shakespeare, Rabelais, Boccacio, La Fontaine, Saint-Amant, Voltaire, J. J. Rousseau, Diderot, Mirabeau, Gautier, Musset etc. etc.

ফরাসি জাতটা বিদেশি নাম বিকৃত করতে ওস্তাদ– অনেকটা বাঙালির মতো কিংবা বলতে পারেন, পরকে আপনাতে জানে।

৩. অধুনা এদেশে নাকি তুলনাত্মক সাহিত্যচর্চা পড়ানো হয়। এ চর্চাতে যাদের হাতেখড়ি হচ্ছে, তাদের স্মরণ করিয়ে দিই যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অনেক লোকই রোজনামচা লেখেন। এদের ভিতর একজন ফরাসি জিদ, দ্বিতীয়জন জর্মন– অ্যাঙার (স্ট্রোলুঙেন) এবং তৃতীয়জন সুইস ফ্রিশ (টাগেবুখ) যদিও যুদ্ধের পর লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, তবু তার মূল Weltanschauuang যুদ্ধ ও তৎপরবর্তী ধ্বংসকে কেন্দ্র করে। এরা তিন দেশের সর্বোত্তম না হলেও তারই কাছাকাছি লেখক।… পাঠক সবিস্ময়ে লক্ষ করবেন, ফরাসি জিদ কী মৈত্রীর চোখে জর্মনদের এবং জর্মন ঝুঙার ফরাসিদের শ্রদ্ধার চোখে দেখছেন! এর সঙ্গে পাঠক আইজেনহাওয়ারের ক্রুসেড ইন ইয়োরোপ মিলিয়ে পড়লে উপকৃত হবেন। এস্থলে উল্লেখ করা কর্তব্য মনে করি, শেষে ইংরেজি বই ভিন্ন বাদবাকি তিনখানা বই আমি এদেশের বিদেশি-পুস্তক বিক্রেতাদের কেরপায় পাইনি। ঈশ্বরাদেশে যারা পপলার গাছ পেতে, তাদেরই একজনের বদান্যতায়। তা সে যাক গে। কিন্তু এই সুবাদে আমি আমার বিশেষজ্ঞ পাঠকদের শুধোই আমার বাস মফস্বলে– আচ্ছা আজ যদি কোনও বন্টু বা হটেনটট বিদেশি বই কিনতে চায়, তবে তাকেও কী এক্সচেঞ্জের জন্য পন্টকদের পায়ে তেল দিতে হয়? বোধহয় না। কারণ তারা যে বর্বর। আর আমরা সভ্য। মহামানবের তীরে বাস করি।

৪. Dumesnil, Correspondance, পৃ. ১০৯।

৫. বইখানা অবশ্য মোপাসাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়ে শুধু ফ্রান্সে নয়, সর্ব সভ্য বিশ্বে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করে। আমি বিশেষ করে এ বইখানা যে উল্লেখ করলুম, তার কারণ, প্রবাদে আছে পেন ইজ মাইটিয়ার দ্যান সর্ড লেখনি তরবারি অপেক্ষা অধিকতর শক্তিশালী- এবং এই বইখানি তকালীন ফরাসি সেনাবাহিনীর স্বেচ্ছাচারী মদমত্ততাকে সম্পূর্ণ পর্যদস্ত করে প্রবাদবাক্যটি সপ্রমাণ করে। আমার জানামতে এটি লেখনী তরবারিতে একমাত্র সরাসরি যুদ্ধ।

৬. আজকের দিনের সম্মানিত মহিলারা যে খাস কামরায় অতিথি-অভ্যাগতকে আপ্যায়িত করেন তার নাম বুদোআর। শব্দটির ব্যুৎপত্তি নিয়ে সন্দেহ আছে। অনেকেই মনে করেন এই বুদর = to Sulk=অভিমান করা থেকে এসেছে।

 ৭. ক্রুসেড ইন ইউরোপ, পৃ. ৪৫৬।

 ৮. কাতরকণ্ঠে নিবেদন; দুনিয়ার কুল্লে বই- তা আমার জরুর যত কমই হোক আমি জোগাড় করি কী প্রকারে? তাই অনেক স্থলেই স্মৃতিশক্তির উপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু সরস্বতী সাক্ষী, সজ্ঞানে, স্বেচ্ছায় কারও প্রতি অধম অবিচার করে না। এসব মহাজনদের বচন খাঁটি সোনার মোহর উদ্ধৃতির চাপে ব্যাকট্যাড়া হয়ে গেলেও সোনা সোনাই থাকে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *