শিলাবৃষ্টির শরবত

শিলাবৃষ্টির শরবত

ভর দুপুর। বাইরের গনগনে রোদ্দুর থেকে ঘরে ঢুকেই বিশ্বকাকু হাঁক ছাড়ল : ‘বাবান-মৌ, শিগগির এক গেলাস শরবত নিয়ে আয়!’ বলেই বসবার ঘরের সোফায় ধপাস করে বসে পড়ল।

ইস্কুলের পরীক্ষা শেষ, গরমের ছুটি পড়ে গেছে। তাই বাবান-মৌ দুজনেরই পুরোপুরি ছুটি এখন। বাবান দিনরাত ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে শ্যাডো-প্র্যাকটিস করছে, আর মৌ গল্পের বইয়ে মুখ গুঁজে চব্বিশ ঘণ্টা। শুধু টিভি-তে ভালো কিছু থাকলে দুজনে সেই ইলেকট্রনিক বাক্সের সামনে স্ট্যাচু।

মা পাশের ঘরে শুয়ে শুয়ে খবরের কাগজ পড়ছিল। সেখান থেকেই বলল, ‘এই ঠা-ঠা রোদ্দুরে কোথায় বেরিয়েছিলে, ঠাকুরপো?’

বিশ্বকাকু লম্বা একটা নিশ্বাস ফেলে বলল, ‘কী করব, বউদি, আমার কি আর ছুটি আছে! বেরিয়েছিলাম গরম মাপতে— ‘

মা অবাক হয়ে বলল, ‘গরম মাপতে! সে আবার কেমন করে মাপে?’ এমন সময় বাবান-মৌ দুজনেই ঘরে এসে ঢুকল। মৌ-এর হাতে আধখোলা গল্পের বই, আর বাবানের হাতে একগ্লাস অরেঞ্জ স্কোয়াশ। ঠান্ডা গ্লাসের গায়ে বাষ্প জমে রয়েছে।

‘কাকু, তুমি গরম মাপার কথা কী বলছিলে?’ বাবানের কানে এড়ায়নি কথাটা। এবারে ও ক্লাস সেভেনে উঠেছে। ফিজিক্স-কেমিস্ট্রির হাতেখড়ি হবে নতুন ক্লাসে, গরমের ছুটির পরে! আর মৌ উঠল সবে ফাইভে। কিন্তু এর মধ্যেই এনিড ব্লাইটন আর অ্যালফ্রেড হিচককের বইয়ের পোকা। বিশ্বকাকুর কথাটা দুজনকেই কৌতূহলী করেছে। ওরা দেখল, সামনের ঘরে মা-ও উঠে বসেছে বিছানায়, হাত ঘুরিয়ে এলোখোঁপা বেঁধে নিচ্ছে। খবরের কাগজ রেখে দিয়ে এখন এদিকেই তাকিয়ে।

বিশ্বকাকু যখন-তখন হুটহাট করে এসে অদ্ভুত-অদ্ভুত সব গল্প শোনায় বাবানমৌকে। সেগুলো সত্যি কি মিথ্যে কে জানে! কখনও বলে ‘সাইলেন্ট ভ্যালি থেকে ঘুরে এলাম।’ আবার কখনও শোনায় ‘কালাহারির রিসার্চ ক্যাম্প থেকে আমাকে

কল করেছে গরম মাপার জন্যে।

মৌ জিগ্যেস করল, ‘কাকু, গরম মাপে কেমন করে?’

বিশ্বকাকু গলা খাঁকারি দিয়ে বলল, ‘গরম মাপে শিলাবৃষ্টির শিল দিয়ে।’ বাবান অবাক হয়ে বলল, ‘সে কী! কেমন করে?’

বিশ্বকাকু হাতের গ্লাসে ছোট্ট একটা চুমুক দিয়ে বলতে শুরু করল, ‘শিলগুলোকে খুব সাবধানে ভ্যাকুয়াম প্যাক করে প্রথমে প্রিজার্ভ করতে হয়, বুঝলি? তারপর গরম মাপার সময়ে সেগুলো ফ্রিজ থেকে বের করে, প্যাকেট ছিঁড়ে, প্লেটে করে রেখে দিতে হয় ছায়াতে। সরাসরি রোদ্দুর লাগলে কিন্তু মাপে ভুল হয়ে যাবে। বরফের শিলগুলো গলে জল হতে যে সময় লাগে, সেটাই হল গরমের মাপকাঠি।

মা অবাক হয়ে বলল, ‘এরকম তো কখনও শুনিনি?’

বিশ্বকাকু হেসে বলল, ‘দুনিয়ার সব জিনিস সবাইকে সবসময় শুনতেই হবে এমন কে মাথার দিব্যি দিয়েছে, বউদি! তুমি কি ক্যাঙটার্কটিকা নামে অ্যান্টার্কটিকার একরকম ক্যাঙারুর নাম শুনেছ? জানো, প্রজাপতিরা সাবসনিক শিস দিতে পারে? উপনিষদে বংশনির্বংশ নামে একরকম পারম বক বোমার উল্লেখ আছে, তা আগে কখনও শুনেছ?’

এসব কথায় মা কীরকম ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেল। বাবান-মৌ একবার বিশ্বকাকু আর একবার মা-কে দেখছিল।

স্কোয়াশের গ্লাসে শব্দ করে চুমুক দিয়ে বিশ্বকাকু আবার বলতে শুরু করল, ‘এখন কলকাতায় গরম মাত্র চার মিনিট। অবশ্য শিলগুলো ভালো করে প্রিজার্ভ করার টেকনিক এখানকার সায়েনটিস্টরা এখনও রপ্ত করতে পারেনি।’

মৌ বলল, ‘কাকু ক’দিন আগে দেখেছ, কাগজে দিয়েছিল চায়নায় সাঙ্ঘাতিক শিলাবৃষ্টি হয়েছে! এক-একটা শিলের ওজন প্রায় পাঁচ কেজি! বেশ কয়েকজন লোকও মারা গিয়েছে শিলের ঘায়ে।’

বিশ্বকাকু গম্ভীর গলায় বলল, ‘দেখেছি। তবে যারা মারা গেছে তাদের ডেথ ততটা পেইনফুল হয়নি। চোখের নিমেষে মর্ত্য থেকে স্বর্গে চলে গেছে। শিলের ঠ্যালায় আমার যা একবার অবস্থা হয়েছিল! জানিস, এইরকম এক গেলাস অরেঞ্জ স্কোয়াশ খেতে গিয়েই একেবারে যমরাজকে কল করে বসেছিলাম। সোজা সাহারার বুকে সমাধি হয়ে যেত। আমাকে কি আজকে আর দেখতে পেতিস!’

মায়ের চোখ কপালে। বাবান-মৌয়েরও তাই। সাহারার বুকে সমাধি? কাকু বলে কী! শিল, অরেঞ্জ স্কোয়াশ, পেইনফুল ডেথ—ওদের সবকিছু কেমন গুলিয়ে যাচ্ছিল।

একটু চেপে ধরতেই বিশ্বকাকু রহস্য খোলসা করে বলতে শুরু করল। মাঝেমাঝে চলতে লাগল শরবতে চুমুক।

‘সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড-ওয়ারের ঠিক পরের বছরের ঘটনা। একটা স্পেশালিস্ট টিম নিয়ে সাহারায় গরম মাপতে গেছি। উদ্দেশ্য, গোটা সাহারার গরমের একটা ম্যাপ তৈরি করা। তারপর সেখানে কৃত্রিম আবহাওয়া-পরিবেশ তৈরি করে চাষবাসের সম্ভাবনা চেক করে দেখা। আমাদের সঙ্গে ছিল কয়েক শো ভ্যাকুয়াম প্যাকেট ভরতি শিল—নুন আর বরফের মিক্সচারে ঠেসে প্যাক করে রেখেছিলাম। নুন আর বরফ মেশালে মিক্সচারের মেলটিং পয়েন্ট মাইনাস কুড়ি ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে যায় জানিস তো! যাই হোক, দলবল মালপত্র নিয়ে আমরা আলজিরিয়া দিয়ে সাহারায় ঢুকে পড়লাম।

‘কিছুদিন আগেই আলজিরিয়াতে প্রচণ্ড শিলাবৃষ্টি হয়েছিল। একমাস দারুণ গুমোট চলার পর হঠাৎই একদিন বজ্রবিদ্যুৎ এবং শিলাবৃষ্টি। মাত্র পাঁচ মিনিট সেই বৃষ্টি চলেছিল—তারপরেই ঝপ করে শেষ। আকাশ থেকে যে-শিলগুলো পড়েছিল সেগুলো চিন দেশের মতো অত প্রকাণ্ড তো নয়ই, বরং সাধারণ মাপের চেয়েও ছোট। ঠিক মটরদানার সাইজ। আলজিরিয়ায় ওই সময়ে যে শিলাবৃষ্টি হবে, সে-প্রেডিকশান আগে থেকেই ছিল। সুতরাং আমরা তৈরি ছিলাম। বৃষ্টি শুরু হতেই আমাদের শিল কালেকশান স্টার্ট হয়ে গেল। আর তার সঙ্গে বিদ্যুৎগতির ভ্যাকুয়াম প্যাকিং। দশ মিনিটেই কাজ শেষ। তারপর সাতদিন রেস্ট এবং প্রিপারেশান নিয়ে অভিযান শুরু। চলো সাহারা—।

‘সাহারায় গরম মাপার কাজ নির্বিঘ্নে চলতে লাগল—।’

বাবান বাধা দিয়ে বলল, ‘গরম মাপতে তো ছায়া লাগে বললে। সাহারা মরুভূমিতে ছায়া পেলে কোথায়, কাকু?’

বিশ্বকাকু আদর করে ওর থুতনিটা নেড়ে দিয়ে বলল, ‘তুই একেবারে চাইল্ডিশ প্রশ্ন করলি। মহেন্দ্র দত্তের ছাতার নাম শুনিসনি!’

‘দাদাটা কিচ্ছু জানে না।’ মৌ মন্তব্য করল।

মা আগ্রহ ভরা সুরে বলল, তারপর কী হল, ঠাকুরপো?’

‘তা আমি তো গরম মেপে চলেছি। টিমের চিফ যেমন যেমন বলছেন অক্ষরে-অক্ষরে তাঁর কথা পালন করে যাচ্ছি। এসব এক্সপিডিশানে ডিসিপ্লিনই হচ্ছে আসল, বুঝলি? কিন্তু শেষপর্যন্ত চিফের কথা অমান্য করেই আমার হল বিপদ—।’

‘কীসের বিপদ কাকু?’ বাবান-মৌ একসঙ্গে প্রশ্ন করল।

‘শরবত খাওয়ার বিপদ!’ বলে বিশ্বকাকু শরবতের গ্লাসটা এক লম্বা চুমুকে খালি করে টেবিলে নামিয়ে রাখল। তারপর আবার শুরু করল : ‘একদিন কাজের সময় প্রচণ্ড তেষ্টা পেল, বুঝলি। কোমরের ওয়াটার বল-এ ঝাঁকুনি মেরে দেখি জল অল্প রয়েছে। আমাদের সঙ্গে ভিটামিন মেশানো অরেঞ্জ স্কোয়াশ ট্যাবলেট থাকত। এক গেলাস জলে একটা ট্যাবলেট দিয়ে পাঁচ সেকেন্ড ওয়েট করলেই শরবত তৈরি। সেইরকম একটা ট্যাবলেট হ্যাভারস্যাক থেকে বের করে ওয়াটার বল-এর জলে ফেলে দিলাম। জল তখন ভীষণ গরম। কারণ সাহারায় সে সময়ে আট সেকেন্ড গরম চলছে। শরবত তৈরি হওয়ার পর মাথায় কী দুর্বুদ্ধি চাপল, ফ্রিজিং মিক্সচার থেকে দু-প্যাকেট শিল খুলে নিয়ে চুপি-চুপি ঢেলে দিলাম জলের বোতলে।

‘আমাদের টিমের চিফ খুব কড়া। তাঁর স্ট্রিক্ট অর্ডার ছিল শিল কিংবা শিল গলা জল কেউ যেন কখনও না খায়। কারণ সমস্ত এক্সপেরিমেন্টের জিনিস। তবে কারও প্রাণসংশয় হলে অন্য কথা।’

‘কিন্তু কাকু, গরম মাপার পর প্লেটে যে-জল পড়ে থাকে সেটা তো তুমি খেতে পারতে—।’ মৌ বলল কথাটা।

বিশ্বকাকু হাসল : ‘গরম তো মাপিসনি কখনও, কী করে জানবি? গরম মাপার সময়ে প্লেটের শিল একটুখানি গলে জল হওয়ামাত্রই আমরা সেই জলটুকু ফেলে দিতাম বালিতে। তা না হলে জল আর বরফ মিশে গিয়ে শেষ দিকে কারেক্ট টাইম মাপায় গোলমাল হয়ে যাবে যে! সে যাই হোক, জলের বোতলে বারকয়েক ঝাঁকুনি দিয়ে চিফকে লুকিয়ে সেই শরবত ঢেলে দিলাম মুখে। আর প্রাণ জুড়োবার সঙ্গে-সঙ্গেই প্রাণ ফুরোবার জোগাড়!’

‘কেন? কেন?’ বাবান তড়িঘড়ি প্রশ্ন করল।

বিশ্বকাকু করুণ মুখ করে বলল, শরবতের সঙ্গে কয়েকটা বরফের কুচিও যেন মুখে টের পেয়েছিলাম। আনন্দে যেই না তাতে কামড় বসিয়েছি অমনি ব্রহ্মতালু পর্যন্ত কিরমির করে উঠেছে। দুটো দাঁত পড়ে গেছে তৎক্ষণাৎ। আর যন্ত্রণায় সাহারায় সর্ষে ফুল দেখে একেবারে সেন্সলেস হয়ে গেলাম। সে যে কী পেইনফুল, কী বলব! তার তুলনায় চিনের শিলাবৃষ্টি তো সুইট ডেথ।

‘জ্ঞান ফিরতেই দেখি দলের তিন-চার জন আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে। ওদেরই কেউ হয়তো আমার মুখে চোখে জল দিয়েছে। হাতপাখা দিয়ে মাথায় বাতাস করছে আর একজন। চিফ বললেন, “বিশ্ব, কী ব্যাপার?” আমি কোনওরকমে উঠে বসলাম। আমার মুখে তখনও কয়েকটা বরফের কুচি খোঁচা মারছে। কোনও জবাব না দিয়ে মুখ থেকে তিনটে কুচি বের করলাম। সর্ষের মতো ছোট্ট তিনটে দানা আমার হাতের তালুর ওপরে হিরের মতো ঝকঝক করতে লাগল।

‘আমাদের দলে একজন মণিরত্ন বিশেষজ্ঞ ছিল। তার কেমন সন্দেহ হতেই আতসকাচ নিয়ে চট করে ঝুঁকে পড়ল আমার হাতের ওপর। আর সঙ্গেসঙ্গেই সে চিৎকার করে উঠল, “ও মাই গুডনেস! ডায়মন্ড! রিয়েল ডায়মন্ড!” চিফসমেত দলের বাকি সবাই তো হতভম্ব। আর আমি স্রেফ হাঁ হয়ে বসে আছি। হিরে! শিলের মধ্যে হিরে এল কোত্থেকে?

‘চিফ প্রশ্ন করতেই কিচ্ছু না লুকিয়ে সমস্ত খুলে বললাম। বললাম শিলাবৃষ্টির শরবতের কথা। তখন তিনি গম্ভীরভাবে নিজের মাথায় কয়েকটা টোকা মারলেন। বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, “শিলের মধ্যে ডায়মন্ড পার্টিক্ল্.….. আলজিরিয়া… পলিউশান…কার্বন পার্টিক্‌ল্‌…বজ্র-বিদ্যুৎ…হাই টেম্পারেচার…তারপর হঠাৎ ঠান্ডা…হুঁ, বুঝেছি।”

‘আপনমনে কথা বলা শেষ করে চিফ আমার হাত থেকে হিরের টুকরোগুলো নিয়ে একটা খামে সিল করলেন। তারপর বললেন, “প্যাক আপ। আমরা আলজিরিয়ায় ফিরে যাব। এরকম একটা যুগান্তকারী ঘটনা নিয়ে সেখানে এখুনি সরকারি মিটিংয়ে বসতে হবে। আর শিলের প্যাকেটগুলো খুব সাবধানে নিয়ে যাবে। একটিও যেন না হারায়। কপাল যদি ভালো হয় তাহলে আমাদের সঙ্গে এখন লক্ষ-লক্ষ টাকার হিরে রয়েছে।”

‘ব্যস। আমরা এক্সপিডিশান ছেড়ে ফিরে এলাম।’ বিশ্বকাকু ফোঁস করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘খুব জোর প্রাণে বেঁচে গেছি সে-যাত্রায়।’

বিশ্বকাকুকে চুপ করে যেতে দেখে বাবান আর থাকতে পারল না। বলল, ‘কী করে হিরের দানাগুলো তৈরি হয়েছিল, কাকু?’

মা জিগ্যেস করল, ‘আলজিরিয়ায় এসে শিলগুলো ভেঙে আর হিরে পেয়েছিলে তোমরা?’

বিশ্বকাকু হাত নেড়ে বলল, ‘বলছি, সব বলছি। …না বউদি, আর একটি কণাও হিরে পাইনি আমরা। তবে ওই তিনটে হিরের কুচি আলজিরিয়ার মিউজিয়ামে রেখে দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গে ছিল আমার ফটো—ছিল কেন, আজও আছে।’ এবার বাবানের দিকে ফিরল বিশ্বকাকু : ‘ওই হিরেগুলো তৈরি হয়েছিল কেমন করে জানিস? ময়সাঁ মেথডে—।’

‘ময়সাঁ মেথড?’ বাবান অবাক হয়ে বলে উঠল।

‘হ্যাঁ, ফরাসি রসায়নবিদ ফার্দিনান্দ ফ্রেদরিক অ’রি ময়সাঁ। ময়সাঁ বুঝতে পেরেছিলেন কাঠকয়লা বা কয়লার কণাকে খুব হাই টেম্পারেচারে গরম করে প্রচণ্ড চাপ দিলে হিরে পাওয়া সম্ভব। তাঁর চেষ্টার বাষট্টি বছর পরে আমেরিকার পদার্থবিজ্ঞানী পার্সি উইলিয়ামস ব্রিজম্যান নকল হিরে তৈরি করার ব্যাপারে . সাকসেসফুল হন। ব্রিজম্যান নোবেল প্রাইজও পেয়েছিলেন। তা আলজিরিয়ায় কী হয়েছিল শোন। ওখানে তখন নতুন কিছু ফ্যাক্টরি বসেছিল। সেখান থেকে খুব কালো ধোঁয়া বেরোত। এয়ার পলিউশান আর কী! জানিস তো, কালো ধোঁয়ার মধ্যে খুব সূক্ষ্ম কার্বন পার্টিক্ল্ থাকে। সেগুলো ভেসে-ভেসে উড়ে গিয়েছিল আলজিরিয়ার আকাশে। সেখানে বজ্র-বিদ্যুতের পাল্লায় পড়ে সেগুলো পৌঁছে গিয়েছিল হাই টেম্পারেচারে। তারপর জলদ মেঘে ঢুকে পড়ে। সেখানে হঠাৎ চাপ কমে গিয়ে পরিবেশ খুব ঠান্ডা হয়ে যায়। তখন ওই হাই টেম্পারেচার থেকে কার্বন পার্টিগুলো হঠাৎ ঠান্ডা হয়ে পড়ায় ওদের শরীরে সঙ্কোচনের জন্যে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে তৈরি হয়ে যায় হিরের দানা। আর তাদের ঘিরে মেঘের জলকণা হঠাৎ জমে গিয়ে সোজা বরফের শিল। যেমন করে শিলাবৃষ্টি হয় আর কী! তারপর…যাকগে, অতশত টেকনিক্যাল ব্যাপার তোরা বুঝবি না।’

গল্প শেষ করে বিশ্বকাকু হাঁফ ছাড়ল। তারপর বলল, ‘মৌ, ঝটপট আর এক গেলাস স্কোয়াশ। গরমে ছাতি শুকিয়ে যাচ্ছে। আমাকে এক্ষুনি আবার বেরোতে হবে। চিফের সঙ্গে দেখা করার কথা আছে। নতুন একটা এক্সপিডিশান সামনের মাসে শুরু হবে, আমাকেও নিতে চায়। চিফ এখন নামজাদা লোক। তাঁর সঙ্গে যাওয়ার ডাক পাওয়াটাই রীতিমতো ভাগ্যের ব্যাপার।’

মৌ উঠল শরবত নিয়ে আসতে। বাবান গালে হাত দিয়ে বসে। মা জিগ্যেস করল, ‘ঠাকুরপো, তোমার ওই নামজাদা চিফের নাম জানতে পারি?’

বিশ্বকাকু গম্ভীর গলায় বলল, ‘তুমি নন-টেকনিক্যাল লোক বউদি, নাম শুনলে কি চিনতে পারবে! চিফের ভালো নাম ঘনশ্যাম দাস, আমি ঘনাদা বলে ডাকি।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *