শিখা
যৌবনের রাগ-রক্ত লেলিহান শিখা জ্বলিয়া উঠিবে কবে ভারতে আবার জড়তার ধূমপুঞ্জ বিদারণ করি উদ্ভাসিয়া তমসার তিমির-শর্বরী? কোথা সে অনাগত সাগ্নিক পুরোধা নির্বাপিত-প্রায় এই যজ্ঞ হোমানলে উচ্চারিয়া বেদমন্ত্র দানিবে আহুতি, নব নব প্রাণের সমিধ কে জোগাবে সেথা? হায় রে ভারত, হায় যৌবন তাহার দাসত্ব করিতেছে অতীত জরার! জরাগ্রস্ত বুদ্ধিজীবী বৃদ্ধ জরদ্গব দেখায়ে গলিত-মাংস চাকুরির মোহ যৌবনের টিকা-পরা তরুণের দলে আনিয়াছে একেবারে ভাগাড়ে শ্মশানে। যৌবনে বাহন করি পঙ্গু জরা আজি হইয়াছে ভারতে জনগণপতি! যে হাতে পাইত শোভা খর তরবারি সেই তরুণের হাতে ভোট-ভিক্ষা-ঝুলি বাঁধিয়া দিয়াছে হায়! – রাজনীতি ইহা! পলায়ে এসেছি আমি লজ্জায় দু-হাতে নয়ন ঢাকিয়া! যৌবনের এ লাঞ্ছনা দেখিবার আগে কেন মৃত্যু হইল না? যৌবনের আবরণে ভারতে কি তবে ফিরিতেছে দলে দলে বৃদ্ধ-প্রাণ জরা? নহিলে এ সিন্ধবাদ কেমন করিয়া ফিরিতেছে যৌবনের স্কন্ধে চড়ি আজও? অতীতের অর্থ ভূত, সেই অদ-ভুত অতীত কি বর্তমানে এখনও শাসিবে? এই ভূতগ্রস্ত জাতি জানি না কেমনে স্বাধীন হইবে কভু, পাইবে স্বরাজ! রে তরুণ, তোমারে হেরিয়া আমি কাঁদি! অসম্ভবের পথে অভিযান যার সুদূর ভবিষ্যতে দুর্মদ দুর্বার সে আজি অতীতে পানে মেলিয়া নয়ন কেবলই পিছনে চলে, নেতার আদেশে। তলোয়ার হইয়াছে লাঙলের ফলা! তোমাদেরই মাঝে আছে নেতা তোমাদের, তোমাদেরই বুকে জাগে নিত্য ভগবান, ভয়হীন, দ্বিধাহীন, মৃত্যুহীন তিনি! তোমারে আধার করি সেই মহাশক্তি প্রকাশিতে চান নিত্য, চাহো আঁখি খুলি আপনার মাঝে দেখো আপন স্বরূপ! অতীতের দাসত্ব ভোলো! বৃদ্ধ সাবধানী হইতে পারে না কভু তোমাদের নেতা। তোমাদেরই মাঝে আছে বীর সব্যসাচী আমি শুনিয়াছি বন্ধু সেই ঐশীবাণী ঊর্ধ্ব হতে রুদ্র মোর নিত্য কহে হাঁকি, শোনাতে এ কথা, এই তাঁহার আদেশ। তোমাদের প্রাণের এ অনির্বাণ-শিখা যৌবনের হোমকুণ্ড-পাশে বৃদ্ধ বসি, আগুন পোহাবে, বন্ধু, এ দৃশ্য দেখিতে যেন নাহি বাঁচি আর। সমাধি হইতে আর যেন নাহি উঠি প্রলয়ের আগে!