শিখণ্ডী

পাঞ্চালরাজ দ্রুপদের জ্যেষ্ঠ পুত্র, যিনি কন্যা রূপে জন্মেছিলেন। মহাদেব বর দিয়েছিলেন যে, দ্রুপদের সন্তান কন্যা রূপে জন্মালেও পরে সে পুরুষত্ব লাভ করবে। তাই দ্রুপদ ও দ্রুপদমহিষী শিখণ্ডীকে পুত্ররূপেই পালন করেন। দশার্ণাধিপতি হিরণ্যবর্মার দুহিতার সঙ্গে শিখণ্ডীর বিবাহ দেওয়া হয়। বিবাহের পর অল্প সময়ের মধ্যেই হিরণ্যবর্মার দুহিতার কাছে শিখণ্ডীর নারীত্ব ধরা পরে যায়। ক্রুদ্ধ হিরণ্যবর্মা এই প্রবঞ্চনার জন্য যখন পাঞ্চালরাজ্য আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন, তখন শিখণ্ডী লজ্জায় ও শোকে প্রাণত্যাগের উদ্দেশ্যে এক নির্জন অরণ্যে প্রবেশ করলেন। শিখণ্ডীর দুরবস্থা কথা শুনে সেই অরণ্যের অধিপতি স্থূণাকর্ণ নামে এক যক্ষের দয়া হল। কিছুদিনের জন্য তিনি শিখণ্ডীকে নিজের পুরুষত্ব দিয়ে শিখণ্ডীর নারীত্ব গ্রহন করতে সন্মত হলেন। হিরণ্যবর্মার কাছে নিজের পুরুষত্ব প্রমান করেই শিখণ্ডী আবার স্থূণাকর্ণকে পুরুষত্ব ফিরিয়ে দেবেন এই কথা রইলো। কিন্তু যক্ষরাজ কুবের তা জানতে পেরে ত্রুদ্ধ হয়ে স্থূণাকর্ণকে বললেন যে, এই দুর্বুদ্ধির জন্য শিখণ্ডীর মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত, স্থূণাকর্ণকে নারী হয়েই থাকতে হবে। মহাদেবের বর এই ভাবেই ফলল। পূর্বজন্মে শিখণ্ডী ছিলেন কাশীরাজের কন্যা অম্বা। ভীষ্ম তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই বিচিত্রবীর্যের জন্য কাশীরাজের তিন কন্যাকে স্বয়ংবর সভা থেকে বল-পূর্বক হরণ করে আনার পর জ্যেষ্ঠা কন্যা অম্বা জানান যে, তিনি মনে মনে শাল্বরাজকে বরণ করেছেন। ভীষ্ম সেই শুনে অম্বাকে শাল্ব রাজের কাছে পাঠান। কিন্তু শাল্ব অম্বাকে নিজের ভার্যা করতে রাজি হন না। অম্বাকে তিনি বললেন যে, অম্বা অন্যপূর্বা। ভীষ্ম তাঁকে স্পর্শ করেছেন, অতএব তাঁর স্থান ভীষ্মের কাছে। অপমানিত অম্বা তখন তাঁর মাতামহ রাজর্ষি হোত্রবাহনের বন্ধু পরশুরামের শরণাপন্ন হলেন। পরশুরাম ভীষ্মকে আদেশ দেন অম্বাকে বিবাহ করতে। ভীষ্ম চিরকুমার থাকার ব্রত নিয়েছিলেন বলে এই আদেশ পালনে অসন্মত হন। পরশুরাম তখন ক্রুদ্ধ হয়ে যুদ্ধ শুরু করলেন, কিন্তু নিজের শিষ্য ভীষ্মকে পরাজিত করতে পারলেন না। তখন অম্বা নিজেই ভীষ্মকে বধ করার সংকল্প নিয়ে তপস্যা শুরু করেন। তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব দেখা দিলে, তাঁর কাছে অম্বা ভীষ্ম নিধনের বর চান। মহাদেব পরজন্মে ওঁর বাসনা পূর্ণ হবে বলে বর দিলেন। আর বললেন যে, পরজন্মে অম্বা পাঞ্চাল রাজের কন্যা হয়ে জন্মেও পরে পুরুষত্ব লাভ করবেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শিখণ্ডীর জন্ম-রহস্য জানতেন বলে ভীষ্ম দুর্যোধনকে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, শিখণ্ডীর বিরুদ্ধে তিনি অস্ত্রধারণ করবেন না। পাণ্ডবরাও তা জানতেন। শিখণ্ডী নিজে ভালো যোদ্ধা ছিলেন না। তাই শিখণ্ডীকে সামনে রেখে অর্জুন ভীষ্মকে বাণাহত করে শরশয্যায় শুইয়েছিলেন। শিখণ্ডী যুদ্ধের শেষদিন গভীর রাত্রে দ্রোণের পুত্র অশ্বত্থামার হাতে নিহত হন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *