শিকারি দত্তর সংগ্রহশালা
হিউয়েন সাং ভারতে ঘুরে-বেড়ানোর সময় একবার তমলুকে অভ্রদের বাড়িতে এসেছিলেন। একদিন দুপুরবেলা ওঁদের বাড়িতে ভাতও খেয়েছিলেন। তিনি তো চিনদেশের পরিব্রাজক ছিলেন। তাই তাঁর জন্যে নিরামিষ রান্না করা হয়েছিল। কিন্তু মজা হল, হিউয়েন সাং তো হাত দিয়ে ভাত খেতে পারতেন না। চিন দেশের মানুষ তো দুটো কাঠি দিয়ে ভাত খান। হিউয়েন সাঙের কাঠি দিয়ে ভাত খাওয়া দেখতে ওদের গ্রামের কত লোক যে জড়ো হয়েছিল সেদিন। সে সাতশো সালের বেশ কয়েক বছর পরের কথা।
শিকারি দত্তর আসল নাম ব্রজেন্দ্রনন্দন দত্ত। উনি শিকারপাগল মানুষ ছিলেন বলে লোকের মুখে মুখে ওঁর নাম হয়ে গিয়েছিল ‘শিকারি দত্ত’। আসলে শিকারি দত্তর এক পূর্বপুরুষ ছিলেন তাম্রলিপ্তের নামি জমিদার নগেন্দ্রনন্দন দত্ত। তিনি শিকার করতে খুব ভালোবাসতেন। তখন শিকার করার মধ্যে বেশ একটা গৌরবেরও ব্যাপার ছিল। এখনকার মতো শিকার করা তো তখন সরকার থেকে নিষেধ করে দেওয়া হয়নি। তখনকার দিনে শিকার-করা হরিণের চামড়ার আসন পেতে পুজোয় বসার মধ্যে ছিল একটা আভিজাত্য। বাঘের চামড়া সাজিয়ে রাখা হত বৈঠকখানায়। বৈঠকখানার দরজার চৌকাঠের মাথায় দেওয়ালের গায়ে ঝুলিয়ে রাখা হত বাইসনের শিং বা হাতির দাঁত। এসব ছিল তখনকার দিনে শৌর্য এবং সাহসের পরিচয়। সেই নগেন্দ্রনন্দনের শিকারি হিসেবে খুব নাম ছিল গোটা তাম্রলিপ্ত জুড়ে। তিনি বাঘ শিকার করেছিলেন তেরোটা। সবই সুন্দরবনের রয়াল বেঙ্গল টাইগার। আর শিকার করেছিলেন তিনটে হাতি ও গোটা তিরিশেক হরিণ। হিউয়েন সাঙ নগেন্দ্রনন্দন দত্তর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। কেন এসেছিলেন, সেই নিয়ে অনেক কথা শোনা যায়। কেউ বলেন, হিউয়েন সাং জানতে এসেছিলেন, একজন মানুষ কেন বনের প্রাণীকে এভাবে হত্যা করে? কেউ বলেন, ভগবান বুদ্ধের বাণী শুনিয়ে পশুহত্যা থেকে মানুষকে নিরস্ত করা যায় কি না, হিউয়েন সাং তাই পরখ করতে এসেছিলেন। তবে তিনি নগেন্দ্রনন্দনের সঙ্গে যে প্রায় দু-ঘণ্টা কথা বলেছিলেন দোতলার ঘরে বসে, একথা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন।
ওঁর পূর্বপুরুষদের শিকার করা জিনিস এক জায়গায় জড়ো করে শিকারি দত্ত একটা সংগ্রহশালা বানিয়েছিলেন। পূর্বপুরুষের শিকার করা জিনিসের সঙ্গে নিজের শিকার করা জিনিসও যত্ন করে সাজিয়ে রেখে গিয়েছেন তিনি। অভ্রর বাবা একটা প্লেটে খোদাই করে তাঁরই নাম লিখিয়েছেন ‘শিকারি দত্তর সংগ্রহশালা’। এসব অভ্রর মুখ থেকে শোনা।
শিকারি দত্ত মারা গিয়েছেন তিপ্পান্ন বছর আগে। এখন ওঁর ছেলে দেবেন্দ্রনন্দন দত্ত, অর্থাৎ আমাদের অভ্রনন্দনের বাবা ওই সমস্ত জিনিস যত্ন করে রেখে দিয়েছেন। অভ্র আমাদের সঙ্গে নাইনে পড়ে। থাকে মামার বাড়িতে, আহিরীটোলায়। আমাদের স্কুলে গরমের ছুটি পড়েছে। তাই আমরা কলকাতা থেকে চার বন্ধু যাচ্ছি অভ্রর বাড়ি তমলুকে বেড়াতে। সেইসঙ্গে ওর দাদুর সংগ্রহশালাটাও দেখা হয়ে যাবে।
অয়নেন্দু আমাদের মধ্যে গুল দেওয়ার রাজা। ও আসবে না আসবে না করেও এসেছে। ওর নাকি হাজারিবাগে মাসির বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। তিব্বত থেকে এক লামার ওর মাসির বাড়ি আসার কথা। তিনি একটা বাঘের বাচ্চা কিনতে আসছেন হাজারিবাগে।
দীপন ওর কথা শুনে বলল, ‘এখন কি হাজারিবাগে মুরগির মতো বাঘের বাচ্চাও রাস্তাঘাটে, বাজারে বিক্রি হয় নাকি? তা ছাড়া যদি মেনেও নিই, তা তুই অত বড়ো একটা রোমাঞ্চকর সুযোগ হাতছাড়া করতে পারলি? এ তো প্রায় চাঁদে বেড়াতে যাওয়ার মতোই।’
বিপ্লব আমাকে বলল, ‘তুই কী করতিস বল তো সুদীপ?’
আমি বললাম, ‘দ্যাখ, আমার মা-র কোনো বোনই নেই, তাই আমার মাসির হাজারিবাগে থাকারও প্রশ্ন নেই, আর লামার বাঘের বাচ্চা কেনা দেখার সুযোগও নেই।’
বিপ্লব বলল, ‘আহা, তা কেন? অয়নেন্দুর বাঘের বাচ্চা কেনা দেখা হবে না ঠিকই। তবে বাঘ শিকারির সংগ্রহশালা তো দেখা হবে। সেইসঙ্গে দু-একটা বাঘ শিকারের গল্পও তো শোনা যাবে। তাই বা কম কী?’
আমরা অভ্রর বাড়ি পৌঁছোতেই বৈঠকখানা থেকে ফর্সা, লম্বা, একমাথা কোঁকড়ানো চুলওয়ালা যে ভদ্রলোক বেরিয়ে এলেন, তিনিই যে অভ্রর বাবা, সে আর বলে দিতে হল না। আমরা প্রণাম করতেই উনি নিরস্ত করার ভঙ্গিতে বললেন, ‘আহা, পায়ে হাত দিতে হবে না, পায়ে হাত দিতে হবে না! এসো, এসো, ভিতরে এসো।’ বলেই তিনি ভিতরে চলে গেলেন।
আমরা বৈঠকখানায় সোফায় বসলাম। দেওয়ালে হরিণ আর বাইসনের শিং রাখা আছে। আমি ফিসফিস করে অভ্রকে বললাম, ‘এটা যে শিকারি দত্তর বাড়ি তা বেশ বোঝাই যাচ্ছে। সংগ্রহশালাটা কোথায় রে?’
অভ্র মুচকি হেসে চলে গেল ভিতরে। আমরা ভিতর থেকে ওর মায়ের গলা শুনতে পেলাম, ‘বন্ধুদের বৈঠকখানায় বসিয়ে রাখলি কেন রে নুটু?’
অভ্রর এরকম একটা মজাদার ডাকনাম আছে আমরা জানতাম না। এই নিয়ে আমরা যখন হাসছি, তখন কাকিমা নিজেই বেরিয়ে এলেন, ‘এসো বাবা, তোমরা ভিতরে এসো।’
আমরা কাকিমাকে প্রণাম করে ব্যাগ নিয়ে ভিতরে গেলাম। দোতলায় আমাদের থাকার ব্যবস্থা। সে-একটা বেশ বড়োসড়ো হলঘর বলা যায়। তারই পাশের একটি বন্ধ দরজায় লেখা ‘শিকারি দত্তর সংগ্রহশালা’। তা হলে এই ঘরেই আছে অভ্রর দাদুর সেইসব মূল্যবান কালেকশন। দেখার জন্যে আমার মনটা উদগ্রীব হয়ে উঠল। দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন দারুণ। ভাতের থালায় একটা সুন্দর নকশাদার গোল জিনিস দেখে দীপন কাকিমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘এই সুন্দর জিনিসটা কী কাকিমা?’
কাকিমা বললেন, ‘এটা হল তমলুকের গয়নাবড়ি। এটা এখানকার খুব বিখ্যাত জিনিস। জানো তো, এখানকার লক্ষ্যা গ্রামের হিরণ্ময়ী মাইতি একটা বড়ো গয়নাবড়ি তৈরি করে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের কাছে পাঠিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ অমন সুন্দর গয়নাবড়ি দেখে মুগ্ধ হয়ে একটা চিঠিও লিখেছিলেন তাঁকে।’
আমি বললাম, ‘রবীন্দ্রনাথ এই বড়ি দেখে অবাক হয়েছিলেন। তুই আগে খেয়ে দ্যাখ না। আমি তো খাচ্ছি, দারুণ খেতে।’
অয়নেন্দু কী যেন বলতে যাচ্ছিল। তাকে থামিয়ে দিয়ে অভ্র বলল, ‘এটা নিশ্চয়ই তোর হাজারিবাগের মাসি সেই লামাকে খাওয়াতে পারবেন না?’
অয়নেন্দু বলল, ‘শোন, এখন গ্লোবালাইজেশনের যুগ। আমি যদি মাসির বাড়ি যেতাম, তা হলে হয়তো দেখতাম, লামা ভদ্রলোক নিজেই এক বাক্স গয়নাবড়ি এনেছেন তিব্বত থেকে মাসির বাড়ির জন্যে।’
অভ্রর বাবাও আমাদের সঙ্গে খেতে বসেছেন। আমাদের কথা শুনে মুখ টিপে হাসছিলেন। তারপর বললেন, ‘গয়নাবড়ি নিয়ে অনেক কথা তো হয়েছে। এবার বলো তোমরা কখন আমাদের মিউজিয়ামটা দেখবে?’
কাকিমা বললেন, ‘ওরা অত দূর থেকে এসেছে। খেয়েদেয়ে একটু বিশ্রাম করুক তো! তারপর মিউজিয়াম-টিয়াম দেখবে’খন।’
বিপ্লব বলল, ‘না না, আমরা খেয়েই মিউজিয়াম দেখব কাকিমা। অভ্রর মুখে দাদুর শিকারের গল্প অনেক শুনেছি। কাকুর মুখে সেসব গল্প শোনার লোভেই তো আমাদের এখানে আসা। ওই সব দারুণ দারুণ গল্প শুনতে শুনতে মিউজিয়াম দেখব।’
আমিও ঘাড় নেড়ে বিপ্লবের কথায় সায় দিলাম। কাকু খুব খুশি হলেন আমাদের মিউজিয়ামের প্রতি আগ্রহ দেখে। সত্যি সত্যি খাওয়া শেষ করেই কাকু শোওয়ার ঘর থেকে চাবির গোছা নিয়ে উপরে উঠে এলেন। আমরাও চারজনে ওঁকে ঘিরে দাঁড়ালাম মিউজিয়ামের দরজার সামনে। দরজা খুলতেই, একটা সাত-আট ফুট লম্বা রয়াল বেঙ্গল টাইগার প্রায় আমাদের ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ছিল আর কী! অয়নেন্দু আমার বগলের তলায় লুকিয়ে পড়ছিল আর একটু হলে।
কাকু বললেন, ‘এই বাঘটা আমাদের পূর্বপুরুষ নগেন্দ্রনন্দন দত্ত শিকার করেছিলেন ছশো একুশ সালে সুন্দরবনে। এটা স্টাফ করে রাখা আছে।’
তারপর হলঘরটার চারপাশে তাকিয়ে আমাদের দু-চোখে শুধু অবাক হওয়ার পালা। এদিকে হরিণের লম্বা শিং তো ওদিকে হাতির প্রায় এক ফুট লম্বা জোড়া দাঁত। এদিকে বাইসনের মাথা তো ওদিকে বাঘের দাঁতের সারি। মেঝেয় কার্পেটের মতো করে একদিকে হরিণের ছাল পাতা তো আর একদিকে বাঘের চামড়ার গালিচা। ক্লাসের ফাঁকে অভ্র আমাদের যেসব গল্প শোনাত, তখন মনে হত, নিজের পূর্বপুরুষদের কথা বলতে গিয়ে ও অনেক বাড়িয়ে বলছে। এখন মনে হচ্ছে, অভ্র যতটুকু বলেছে, আর আমরা যা দেখছি, তার সঙ্গে কোনো তুলনাই করা যাবে না।
গুলবাজ অয়নেন্দুরও চোখ ছানাবড়া। তবু ও মিনমিন করে বলল, ‘এরকম একটা সংগ্রহশালা আছে হাজারিবাগে আমার মাসিদের পাড়ায়।’
আমি বললাম, ‘তোর হাজারিবাগের মাসিদের বাড়িতে আর মাসির পাড়ায় আরও কত কী যে আছে তার ঠিক নেই। তুই তো একবারও আমাদের নিয়ে গেলি না। অভ্র কিন্তু সত্যি তার দাদুর মিউজিয়াম দেখাতে এনেছে। আর আমরা এখন নিজের চোখে এসব দেখছি। রাখ তোর ওইসব গালগল্প।’
বেশ দমে গেল যেন অয়নেন্দু। কাকু একজোড়া হাতির দাঁতের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। ধবধবে সাদা অমন হাতির দাঁত আমি মাইসোর রাজবাড়িতে দেখেছিলাম খুব ছেলেবেলায়। কাকু বললেন, ‘এই হাতিটা বারবার চলে আসত গ্রামে। ঘরবাড়ি ভাঙত, ফসল নষ্ট করত, এমনকী, মানুষও তার হাত থেকে রেহাই পেত না। অযোধ্যা পাহাড় থেকে লোকজন এসে ধরল নগেন্দ্রনন্দনকে, একটা বিহিত করে দিতে হবে। তিনি বন্দুক নিয়ে চললেন হাতি শিকার করতে। তিনি তো সঙ্গে লোকজন নিয়ে যেতে বিশেষ পছন্দ করতেন না। তিনি মনে করতেন, শিকার করতে হলে একাই যেতে হয়। শুধু তাঁর সঙ্গে থাকত এই বন্দুকটা।’ বলে কাকু দেওয়ালে ঝোলানো একটা বন্দুকের গায়ে হাত বোলাতে লাগলেন, ‘এই বন্দুকটায় আমার বাবা শিকারি দত্ত কোনোদিন হাতই দিতেন না। এ আমাদের বংশের গর্ব! এই বন্দুক দিয়ে নগেন্দ্রনন্দন সুন্দরবনের বড়ো বাঘটাকে মেরেছিলেন। শুধু একটা বাঘ তো নয়, তিনি এই বন্দুকে সাত-সাতটা বাঘ আর তিনটে হাতিও মেরেছিলেন। আর হরিণ? তার সঠিক হিসেব বোধ হয় তিনিও রাখতেন না।’
আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি মিউজিয়ামের মধ্যে। বিপ্লব জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা কাকু, শিকারি দত্তর সঙ্গে জিম করবেটের আলাপ ছিল?’
‘তা আর ছিল না? হিউয়েন সাং যে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন, তা তো অভ্র বলেছে নিশ্চয়ই। নগেন্দ্রনন্দনের সঙ্গে আলাপ করতেই তিনি এসেছিলেন। তিনি শুনেছিলেন, নগেন্দ্রনন্দন আগে থেকে নাকি বাঘের আসার কথা টের পেয়ে যেতেন। এ কি শুধু শিকারির দক্ষতা, নাকি এর পিছনে বৌদ্ধধর্মের বা বুদ্ধের সাধনার কোনো যোগ আছে?’
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘সত্যি কি সেরকম কিছু…?’
কাকু বললেন, ‘আমি জানি না। নগেন্দ্রনন্দনের ডায়েরিতে সেরকম কিছুর উল্লেখ পাওয়া যায়নি।’
অয়নেন্দু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘উনি ডায়েরিও লিখতেন? অত সময় পেতেন কোথায়? আমরা পরীক্ষার পড়া করতেই হিমশিম খেয়ে যাই।’
‘ওই যে কাচের ছোটো বাক্সে রাখা আছে ডায়েরিটা।’
আমরা দেখলাম, রেক্সিনে বাঁধানো ফুলস্ক্যাপ সাইজের মোটা একটা খাতা। উপরে ছাপার অক্ষরে লেখা ‘শিকার স্মৃতি’। তার নীচে লেখা নগেন্দ্রনন্দন দত্তর নাম।
কাকু বললেন, ‘আমার বাবা ডায়েরিটা ভালো করে বাঁধিয়ে ছিলেন।’
বিপ্লব জিজ্ঞেস করল, ‘আর জিম করবেট?’
‘হ্যাঁ, শিকারি দত্ত তিনবার জিম করবেটের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। একবার তো করবেট সাহেবকে খুঁজতে খুঁজতে রুদ্রপ্রয়াগে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন। সেবার করবেট সাহেব তো একটা ম্যান ইটার লেপার্ডকে মারতে রুদ্রপ্রয়াগে গিয়েছিলেন। বাবা বায়না ধরলেন, তিনিও যাবেন সঙ্গে। কাছে থেকে জিম করবেটের শিকার করা দেখবেন।’
আমি বললাম, ‘শেষমেষ করবেট সাহেব নিয়ে গেলেন?’
‘না। করবেট সাহেব শিকার করার সময় একাই যেতে পছন্দ করতেন। সঙ্গে থাকত একমাত্র তাঁর পোষা কুকুর রবিন। বাবাকে তিনি সঙ্গে নিলেন না। বাবা অপেক্ষা করছিলেন করবেট সাহেবের ফিরে আসা পর্যন্ত।’
আমি বললাম, ‘সেবার করবেট সাহেব ম্যান ইটারটাকে মারতে পেরেছিলেন?’
‘তা আর পারেননি? রুদ্রপ্রয়াগের সেই পুরুষ চিতাটা, যার ভয়ে গ্রামের লোক কেদারনাথ আর বদরিনাথের মাঝের রাস্তা দিয়ে একা একা যাতায়াত করতেই পারত না। এই অঞ্চলটা ছিল ওই চিতা বাঘটার নিজের সাম্রাজ্য। চিতাটা খাবারের লোভে মানুষকে ঘরের দরজা ভেঙে, জানলা দিয়ে গলে গিয়ে টেনে আনত। সে ছিল ওখানকার ত্রাস। সেই চিতাটার আবার দাঁত পড়ে গিয়েছিল, মাড়ির অসুখেও ভুগছিল। শিকারিরা বলেন, বাঘ অসুস্থ হলে তার পক্ষে অন্য জন্তু শিকার করা কঠিন হয়ে পড়ে বলে মানুষ মারে। তোমরা শুনলে অবাক হবে, ওই চিতাটা যখন যুবক ছিল, তখন থেকেই সে মানুষ মারা শুরু করেছিল। তাও প্রায় বছর আটেক আগে। চিতাটা বুড়ো হয়েছিল বলে অসহায় হয়ে মানুষ মারত, তা কিন্তু নয়। ওর স্বভাবটাই ছিল ম্যান ইটিং। তখন পর্যন্ত সে একশো পঁচিশজন মানুষকে মেরেছিল।’
আমরা শুনছি অবাক হয়ে বাঘ শিকারের গল্প। তখন অয়নেন্দু ফট করে সিমেন্ট দিয়ে তৈরি একটা জিনিসের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলল, ‘ওটা কী কাকু? একদম গাছের মতো?’
‘ওটার কথা তোমাদের না শোনাই ভালো।’
দীপন বলল, ‘কেন, বলুন না ওটা কী?’
অভ্র বলল, ‘থাক, ওসব শুনে তোদের কাজ নেই। তোরা মিছিমিছি ভয় পাবি।’
অয়নেন্দু বলল, ‘ভয় তুই পেতে পারিস। কিন্তু আমি ভয় পাওয়ার বান্দা নই। জানিস তো সেবার বাবার অফিসকাকুদের সঙ্গে সুন্দরবনে বেড়াতে গিয়েছিলাম। সুধন্যখালি বলে একটা দ্বীপে আমি একাই কাঁটাতারের বেড়ার বাইরে জঙ্গলের মাটিতে পা রেখেছিলাম।’
আমি বললাম, ‘যাক, শুধু জঙ্গলের মাটিতে পা রেখেছিলি বললি। তুই যদি বলতিস, সেবার তুই খালি হাতে একটা রয়াল বেঙ্গল টাইগারও মেরেছিলি, তাতেও অবাক হতাম না।’
কাকুসুদ্ধ সক্কলে হো হো করে হেসে উঠল। অয়নেন্দু একটু লজ্জা পেয়ে বলল, ‘না, তার চেষ্টাও করতাম। কিন্তু বাঘ-মারা যে সরকার থেকে বেআইনি ঘোষণা করে দিয়েছে না!’
আমরা জানি অয়নেন্দু সহজে দমবার পাত্র নয়। একবার ক্লাস ফাইভে অঙ্কদৌড়ে সবাই চলে এসেছে, ফার্স্ট সেকেণ্ড থার্ডরা তখন ভিকট্রি স্ট্যাণ্ডে দাঁড়িয়ে। তখনও অয়নেন্দু বসে বসে অঙ্কটা করে যাচ্ছিল। পিটি স্যার ওকে হাত ধরে না তুললে, ও হয়তো আরও কতক্ষণ বসে থাকত কে জানে!
হাসির রেশ থামতে কাকু বললেন, ‘তোমরা ভয় পাবে না যদি কথা দাও, তা হলে বলতে পারি, ওটা কী?’
আমরা সবাই একসঙ্গে বলে উঠলাম, ‘না কাকু, আমরা ভয় পাব না। আপনি বলুন।’
কাকু শুরু করলেন, ‘একটা লোক সুন্দরবনে মধু ভাঙতে গিয়েছিল। সঙ্গে ছিল আরও তিনজন। বাড়িতে ছিল তার বউ আর একটা বছর আটেকের ছেলে। মধু ভাঙা ফেলে তিনজন বাড়ি ফিরে এল, কিন্তু সেই লোকটি ফিরে এল না। সঙ্গীরা বলল, একটা বড়ো সাদা ল্যাজকাটা বাঘ লোকটাকে তুলে নিয়ে গেছে। ছেলেটি এই কথা শুনে মনে মনে রাগে ফুঁসতে লাগল। কিন্তু সে তো ছোটো, কী আর করবে? যখন ছেলেটির বছর কুড়ি বয়স হল, একদিন সে তার মাকে বলল, সেও জঙ্গলে মধু ভাঙতে যাবে। মা তাকে কিছুতেই জঙ্গলে যেতে দেবে না। তার বাবাকে বাঘে খেয়েছে, শেষে তাকেও যদি…? কিছুতেই ছেলেটি মা-র কথা শুনবে না। শেষে অনেক বুঝিয়ে মাকে রাজি করিয়ে মধু ভাঙতে ছেলেটি জঙ্গলে যাওয়া শুরু করল। কিন্তু তার মনের মধ্যে বাবার খুনের প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিজ্ঞা যে লুকিয়ে ছিল তা কেউ জানত না। সে জঙ্গলে সেই ল্যাজকাটা সাদা বাঘটাকে খুঁজে বেড়াত।’
বিপ্লব বলল, ‘ছেলেটির সাহস আছে বলতে হবে!’
কাকু বললেন, ‘শুধু সাহস নয় তার ধৈর্যও কম ছিল না। সে-ছেলেটার তখন মাঝবয়স। অনেক বছর ধরে সে সেই সাদা বাঘটাকে খুঁজতে খুঁজতে একদিন নাকি দেখাও পেয়েছিল তার। আমার বাবা সুন্দরবনের গভীরে বাঘ শিকার করতে গিয়ে একদিন দেখলেন, একটা লোক উঁচু গাছের ডালে বসে আছে। তার কাছ থেকে বাবা সাদা বাঘটাকে খুঁজে বেড়ানোর গল্প শুনেছিলেন। সে নাকি একদিন দেখেছে, একটা গাছের গুঁড়ির একটু উপরে একটা মোটা ডালে বসে বাঘটা পিটপিট করে ওকে দেখছিল। লোকটার বিশ্বাস, এই বাঘটাই তার বাবাকে খেয়েছে। কেননা, সে দেখেছে, বাঘটা সাদা, আর তার ল্যাজটাও কাটা। বাবা তখনই বুঝে গেলেন, ওই লোকটা ঠিক কথা বলছে না। কেননা, লোকটার বাবাকে বাঘে খাওয়া থেকে লোকটা যেদিন বাঘটাকে দেখেছে, এ যে অনেক বছর সময়। পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের বেশি কোনো বাঘ তো বাঁচতেই পারে না। কিন্তু বাবা লোকটিকে সে-কথা বোঝাতে পারেননি কোনোমতেই। লোকটাকে বাবা বুঝিয়েছিলেন, এভাবে বন্দুক না নিয়ে একা জঙ্গলে আসা ঠিক নয়। কিন্তু বাবার কথা লোকটা এক কান দিয়ে শুনে আর এক কান দিয়ে যে বের করে দিয়েছিল, তা বাবা বেশ বুঝতে পেরেছিলেন। বাবা সেবার কোনো শিকার না করেই ফিরে এসেছিলেন।’
দীপন কোনোমতে ঢোক গিলে বলল, ‘তারপর?’
‘তারপর বাবা মাঝে মাঝে যেতেন সুন্দরবনে বাঘ শিকার করতে। শিকার তো বাবার নেশা। সবসময় যে বাঘ মারতে পারতেন, তা তো নয়। কখনো হরিণ, কখনো চিতা শিকার করতেন। শেষের দিকে বাবা বন্দুকের সঙ্গে একটা ক্লিক ক্যামেরাও নিতেন। ফোটো তোলাও তাঁর নেশার মধ্যে ঢুকে পড়ছিল। গভীর জঙ্গলের অনেক সাদা-কালো ফোটো আছে বাবার। যেখানে সূর্যের আলো একটু পড়েছে, বাবা সেখানেই একটা ফোটো তুলতেন। সেসব ফোটো সন্ধ্যেবেলা তোমাদের দেখাব।’
আমি বললাম, ‘তারপর? তিনি কোনো বাঘের ফোটো তুলেছেন কখনো?’
বিপ্লব বলল, ‘উনি কি সেই লোকটাকে ফের কোনোদিন জঙ্গলে দেখেছেন?’
কাকু একটু থেমে বললেন, ‘না, লোকটার সঙ্গে বাবার আর কোনো দিন দেখা হয়নি। কিন্তু বাবা একদিন জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে বাঘের সন্ধানে উঁচু গাছে উঠে বসেছিলেন। হঠাৎ দেখলেন, দূরে মোটা গাছের ডালে একটা বাঘ বসে আছে। ল্যাজ কাটা সাদা বাঘ। চোখ পিটপিট করে দেখছে। এই বাঘটা যে সেই লোকটাকে-খাওয়া সাদা বাঘ, বাবা তা বিশ্বাস করেননি। এটা হয়তো অন্য বাঘ। বাবা ক্যামেরা তাক করে একটা ফোটো তুলে ফেললেন পট করে। আর অমনি বাঘটা বুঝতে পারল কি না কে জানে, বিদ্যুৎবেগে উধাও হয়ে গেল জঙ্গলে। বাবা ভাবলেন, এ তো আর ফ্ল্যাশ ক্যামেরা নয়, তা হলে বাঘটা বুঝল কী করে তার ফোটো তুলছে কেউ? তখন তো আমাদের এখানে ফ্ল্যাশ ক্যামেরা পাওয়াই যেত না। যাক, বাবা ফিরে এসে সেই নেগেটিভটা ডেভলপ করে প্রিন্ট করালেন। সেটাই প্রথম বাবার ক্যামেরায় বাঘের ফোটো তোলা। প্রিন্ট দেখে স্টুডিয়োর লোক তো তাজ্জব। এ তো একটা বাঘের কঙ্কালের ফোটো। ওই দ্যাখো সিমেন্টের গাছের গুঁড়ির পিছনে দেওয়ালে সেই ফোটোটা।’
আমরা চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে সত্যিই অবাক। হ্যাঁ, একটা বাঘের কঙ্কালেরই ফোটো। এ কী করে হল? আমাদের চোখে পলকই পড়ছে না।
এমন সময় বিপ্লব বলল, ‘ওই সিমেন্টের গাছের গুঁড়িটা কেন করা হয়েছে?’
কাকু বললেন, ‘সেকথা তোমাদের বলতে আমার মন চাইছে না। থাক, ও কথা নাই বা শুনলে!’
আমি বায়না ধরলাম, ‘না কাকু, বলতেই হবে। বলুন না। আমার তো এইসব গল্প শুনব বলেই আপনার কাছে এসেছি।’
কাকু একটু চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন, ‘শুনবে? ওই ফোটোটা বাঁধিয়ে আনার পর একদিন রাতে পাশের শোওয়ার ঘর থেকে বাবা শুনলেন, এ ঘর থেকে যেন একটা ফোঁস ফোঁস আওয়াজ আসছে। ঘরটা তখন তালাবন্ধ করা থাকত। বাবা একা উঠে চাবি খুলে ঘরে ঢুকেই আঁ আঁ করে পড়ে গেলেন। বাবার চিৎকারে মা উঠে ছুটে এসে দেখলেন, বাবা মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। পরে জ্ঞান ফিরে আসার পর সেদিন রাতে তিনি কী দেখেছিলেন, মাকে অনেক দিন কথাটা বলেননি। তারপর একদিন বললেন, তিনি সেদিন সেই ল্যাজ কাটা সাদা বাঘটাকেই এই ঘরের মধ্যে পায়চারি করতে দেখেছিলেন।’
আমরা সবাই শিউরে উঠে একসঙ্গে বললাম, ‘ও মা, সত্যি?’
কাকু বললেন, ‘তারপর বাবার কী মনে হল, এই সিমেন্টের গাছের গুঁড়িটা তৈরি করালেন মিস্ত্রি ডেকে। বাবার ধারণা, বাঘটা ইচ্ছে হলে গাছের গুঁড়িতে উঠে বসবে।’
অয়নেন্দু বলল, ‘উনি কোনোদিন ফের এ ঘরে বাঘটাকে দেখেছেন?’
‘না। তবে বাবার কেন যেন ধারণা হয়েছিল, বাঘটা এঘরেই থাকে। এক-একদিন একা একা উঠে বাবা মাঝরাতে এঘরে আসতেন, ফের যদি বাঘটাকে দেখতে পান। কিন্তু সে আর দেখা দেয়নি।’
অয়নেন্দু যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল, ‘যাক, আমার বড্ড ভয় করছিল কিন্তু।’
গল্পে গল্পে বিকেল গড়িয়ে গেল। কাকু বললেন, ‘যাও, তোমরা তমলুক শহরটা একবার ঘুরে দ্যাখো। সন্ধ্যেবেলা ইচ্ছে হলে বাবার ডায়েরিটা তোমরা পোড়ো। ভালো লাগবে তোমাদের।’
কাকু নীচে চলে গেলেন। আমি অভ্রর বিছানায় একবার গড়িয়ে পড়লাম। বিপ্লব বলল, ‘ওঠ, এখন আর শুতে হবে না। বেরিয়ে পড়ি চল।’
অভ্র বলল, ‘চল, আমরা জাহাজঘাটার দিকে যাই।’
দীপন বলল, ‘হ্যাঁ রে অভ্র, অমন নাম কেন? ওখানে কি জাহাজ আসে? আমরা কি এখন গেলে জাহাজ দেখতে পাব?’
অভ্র বলল, ‘ধুর, একসময় যখন তমলুকের নাম ছিল তাম্রলিপ্ত, তখন দূর দূর দেশ থেকে বড়ো বড়ো জাহাজ এসে এখানের বন্দরে ভিড়ত। সেই থেকে ওই জায়গাটার নাম জাহাজঘাটা।’
আমরা বেরিয়ে টইটই করে বর্গভীমা মন্দির, কলেজ পাড়া, পায়রাটুঙি, জাহাজঘাটা সব ঘুরে-ঘুরে দেখলাম। আমাদের ফিরতে ফিরতে রাত আটটা হয়ে গেল। কাকিমা আলুর চপ আর মুড়ি খেতে দিলেন। তারপর এগল্পে-সেগল্পে দশটা বেজে গেল। কাকিমা নীচ থেকে খেতে ডাক দিলেন।
খাওয়ার পর কাকু বললেন, ‘আজ আর বেশি রাত জাগতে হবে না।’
আমি বললাম, ‘কাকু, আমরা এখন শিকারি দত্তর ডায়েরি ‘শিকার স্মৃতি’ পড়ব যে!’
কাকু বললেন, ‘না না। আজ আর পড়তে হবে না। অনেক রাত হল। কাল সকালে উঠে না হয় পোড়ো। আমি বরং ঘরটায় তালা দিয়ে দিই।’
অয়নেন্দু ছাড়া আমরা সকলেই চেঁচিয়ে বললাম, ‘না কাকু, না। আমরা এখনই পড়ব। এখন তো তেমন রাত হয়নি। আমরা তো পরীক্ষার সময় কত রাত জেগে পড়ি।’
কাকু বললেন, ‘ভয় পাবে না তো?’
আমি বললাম, ‘আমরা এতজন আছি। একদম ভয় পাব না। আপনি ঘুমোতে যান কাকু।’
কাকু নীচে ঘুমোতে চলে গেলেন। অয়নেন্দু তার হাজারিবাগের মাসির গল্প শুরু করল।
বিপ্লব বলল, ‘অমন আষাঢ়ে গল্প আর শুনতে পারছি না। অভ্র প্লিজ, তুই তোর দাদুর ডায়েরিটা আন তো এবার।’
অভ্র আর আমি সংগ্রহশালায় ঢুকে ‘শিকার স্মৃতি’ ডায়েরিটা নিয়ে এলাম। আমি ঘরটায় ঢুকে চারদিকে তাকিয়ে দেখছিলাম, যদি সত্যি সেই ল্যাজ কাটা সাদা বাঘটাকে দেখতে পাই। না, বাঘটাঘ কিচ্ছু দেখতে পেলাম না।
এ ঘরে ফিরে এসে আমরা গোল হয়ে ডায়েরিটা পড়তে শুরু করলাম। গোটা গোটা হাতের লেখায় কী সুন্দর করে শিকারের বর্ণনা করেছেন। পড়তে পড়তে আমার মনে হচ্ছিল, শিকারি দত্ত যদি ভালো করে এই শিকারের কাহিনি-গুলো লিখে বই করে বের করতেন, তা হলে খুব নাম করতে পারতেন।
শিকার কাহিনির লোভে কখন যে রাত অনেক হয়ে গেল, আমরা খেয়ালই করিনি। কাকু একবার ঘুম থেকে উঠেছিলেন মনে হয়। নীচ থেকে ডাক দিয়ে বললেন, ‘অভ্র, এবার তোরা শুয়ে পড়। রাত দুটো বাজল যে।’
আমরা কেউই খেয়াল করিনি যে অত রাত হয়েছে। শিকারি দত্তর ডায়েরিটা এক পাশে রেখে আলো নিভিয়ে আমরা শুয়ে পড়লাম।
ভোর রাতে অভ্রর ঘুম ভাঙতে পাশ ফিরে দ্যাখে, অয়নেন্দু নেই। অভ্রর ডাকে আমরাও ধড়মড়িয়ে ঘুম চোখে উঠে বসলাম। না, সত্যিই অয়নেন্দু ঘরের মধ্যে নেই। বাইরে কাক ডাকছে। দূরে কোথাও মোরগ ডেকে উঠল। কী একটা পাখি যেন অভ্রদের বাড়ির পিছনের আমগাছটায় বসে ক্র্যাকাও ক্র্যাকাও করে ডেকে চলেছে।
অভ্র বলল, ‘চল তো, মিউজিয়ামটায় একবার যাই।’
আমরা শিকারি দত্তর সংগ্রহশালার সামনে গিয়ে দেখি, দরজা হাট করে খোলা। আর মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে অয়নেন্দু। আমাদের চেঁচামেচিতে কাকু এক্সারসাইজ ফেলে একতলা থেকে ছুটে এলেন। কাকিমা তো এসে হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলেন। তক্ষুনি গাড়িতে করে অয়নেন্দুকে নিয়ে কাকু আর আমরা সবাই সোজা কলকাতায় এস এস কে এম হসপিটালে গেলাম। ততক্ষণে অয়নেন্দুর বাবা-মাও চলে এসেছেন। ডাক্তারবাবু ওকে দেখে-টেখে বললেন, ‘ছেলেটি কিছু একটা দেখে খুব ভয় পেয়েছিল। চিন্তার কিছু নেই।’
একদিন পরে অয়নেন্দুকে হসপিটাল থেকে বাড়ি নিয়ে আসা হয়েছে। আমরাও ওর সঙ্গে আছি। ওর ঘরে বসে আমরা হাজারবার প্রশ্ন করেও কোনো উত্তর পাইনি, শিকারি দত্তর সংগ্রহশালায় ও কেন একা ঢুকেছিল। আর অয়নেন্দু সেদিন রাতে ওই ঘরে ঠিক কী দেখেছিল, একবারও মনে করতে পারল না।