শার্দূল সান্নিধ্যে শিকারি
একদিন অসুস্থ অবস্থায় দুর্বল দেহ নিয়ে বাংলোর মধ্যে শুয়ে ছিলেন জেমস ইংলিস। হঠাৎ তিনি চমকে উঠলেন– বাংলোর বাইরে পেপাষা কুকুরগুলো হঠাৎ তারস্বরে চিৎকার জুড়ে দিয়েছে।
পরক্ষণেই সারমেয় কণ্ঠের তীব্র ঐক্যতানে যোগ দিয়ে বেজে উঠল বিভিন্ন শব্দের উৎকট তরঙ্গ–
আস্তাবল থেকে চেঁচিয়ে উঠল ঘোড়ার দল, সাহেবের পোষা কালো প্যান্থার শিকলে টান মেরে গর্জন করতে লাগল ক্রুদ্ধস্বরে, এমনকী উঠানের উপর থেকে মুরগিরাও কণ্ঠস্বরের প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে ছাড়ল না!
পোষা জন্তুদের চাঞ্চল্যের কারণ বোঝা গেল একটু পরেই বিশ্বস্ত ভৃত্য এসে জানাল উটের পিঠে চড়ে এক ব্যক্তি দেখা করতে এসেছে সাহেবের সঙ্গে।
বাংলো থেকে বেরিয়ে ইংলিস সাহেব দেখলেন সৈনিকের মতো দেখতে ভারি চমৎকার চেহারার একটি ভারতীয় তার জন্যে অপেক্ষা করছে। লোকটি বার্তাবাহক। সে সাহেবের হাতে একটি চিঠি দিল। চিঠিটা এসেছে সীতাপুরের মিলিটারি রেজিমেন্ট অফিসার পদে নিযুক্ত কয়েকজন বন্ধুর কাছ থেকে চিঠিতে ইংলিস সাহেবের স্বাস্থ্যের জন্য উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে জানানো হয়েছে যদি সুস্থ থাকেন তবে তার এলাকার জঙ্গলে কয়েকজন অফিসার শিকার করতে ইচ্ছুক।
বন্ধুদের প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে সাহেব খবর পাঠিয়ে দিলেন এবং শিকার-অভিযানের প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত করে ফেললেন। সাহেবের সৈনিক বন্ধুর দল উপস্থিত হলেন যথাসময়ে।
জেমস ইংলিসের বাংলো থেকে প্রায় মাইল দুয়েক দূরে ক্ষীণস্রোতা একটি খাড়ির ভিতর থেকে মাথা তুলেছিল সারিবদ্ধ নলখাগড়ার ঝোপ। জনশ্রুতি, ওই জায়গাটা এক বা একাধিক শ্বাপদের বাসস্থান এবং তাদের কবলে নাকি প্রাণ হারিয়েছে গৃহপালিত অনেক পশুপক্ষী। উক্ত খাপদ বাঘ কি লেপার্ড, সংখ্যাটা এক না দুই, সে বা তারা এখনও সেখানে আছে কিনা, এসব বিষয়ে কোনো সঠিক সংবাদ পাওয়া যায়নি তবে ওইখানে মাংসাশি শ্বাপদের অস্তিত্ব নিয়ে একটা জনরব সাহেবের কানে এসেছিল বটে।
গুজব সব জায়গায় যেমন, এখানেও তেমনি অর্থাৎ মাংসাশির জাতি, সংখ্যা আর অবস্থানের অতীত ও বর্তমান নিয়ে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য শোনা যেত ওই অঞ্চলে।
সত্যি কথা বলতে কী ওই জায়গাটা সম্বন্ধে জেমস খুব ভালোভাবে অবহিত ছিলেন না। তবে সেজন্য খুব হতাশ হননি তিনি। কারণ, কাছেই বাস করতেন সাহেবের এক নেপালি প্রতিবেশী এবং স্থানীয় অঞ্চল ছিল তাঁর নখদর্পণে। ওই নেপালিটি সেনাবিভাগের এক কর্মচারী, জেমস ইংলিসের বন্ধুস্থানীয় ব্যক্তি। সাহেব তাকে জেনারেল নামে উল্লেখ করেছেন, আমরাও তাই করব। সাহেবের ব্যবস্থা অনুসারে ঠিক হল শিকারের জন্য নির্দিষ্ট বনভূমিতে এক জায়গায় উক্ত জেনারেলের সঙ্গে শিকারিরা মিলিত হবেন।
যথাসময়ে দলবল নিয়ে জেমস ইংলিস ও তাঁর সৈনিক বন্ধুরা শিকার-অভিযানে যাত্রা করলেন। সেদিনের শিকার-দলটি ছিল খুব বড়ো। ইংরেজ শিকারিদের পিঠে নিয়ে এগিয়ে চলছিল হাতির মিছিল, সেই সঙ্গে ছিল বিরাট গুম্ফধারী কিছু রাজপুত গ্রামবাসী আর নীল পাগড়ি মাথায় দিয়ে একদল কাঠুরে আর ছিল দলে দলে কয়লাওয়ালা, রাখাল প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের মানুষ। খুব বড়ো শিকার দল বনের ভিতর যাত্রা করলেই কোথা থেকে একদল লোক জুটে যায়। এবারের শিকার-অভিযানেও প্রচলিত নিয়মের ব্যতিক্রম হয়নি একদল অনাহূত মানুষ হইচই করে কোথা থেকে এসে জুটে গেল শিকারিদের সঙ্গে। ওই বিচিত্র জনতার ভিড়ে কয়েকটি মানুষ শিকারের পক্ষে অপরিহার্য। তারা হচ্ছে শিকারিদের নিযুক্ত পেশাদার ট্র্যাকার (যারা জঙ্গলের পথে জানোয়ারের যাতায়াতের চিহ্ন দেখে অনুসরণ করে)। সব মিলিয়ে বনের মধ্যে শিকারিদের পথ চলার দৃশ্যটা যে অতিশয় চমকপ্রদ হয়েছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
পাথুরে জমি পার হয়ে এমন একটা নীচু জমিতে শিকারিরা উপস্থিত হলেন, যেখানে, অসংখ্য জলার বিস্তারে জন্মগ্রহণ করেছে এক বিস্তীর্ণ জলাভূমি। ওই সব জায়গায় এক ধরণের নল-খাগড়ার ঝোপ দেখা যায়। হাতি এবং মহিষের কাছে সেই নলখাগড়া অতিশয় প্রিয় খাদ্য।
হঠাৎ হাওদার গায়ে নলখাগড়ার সশব্দ সংঘর্ষণে চমকে উঠলেন ইংলিস সাহেব। তিনি আর তার এক বন্ধু ব্রিগস এতক্ষণ গল্পে মশগুল ছিলেন তাদের হাতিদুটো যে কখন দল থেকে ছিটকে এসে নলখাগড়ার বনে সরস খাদ্যে উদরপরণ করছে সেটা তারা লক্ষ্যই করেননি।
জলাভূমি পার হয়ে আর একটা উচ্চভূমিতে উঠল হাতি– সেখান থেকে নীচের দিকে তাকিয়ে ঘন ঘাসজঙ্গলে পরিপূর্ণ আর একটা বিশাল জলাভূমি তাদের চোখে পড়ল। তারা ওই ঘাসজঙ্গলের মধ্যে যাওয়ার উদযোগ করছেন এমন সময়ে হঠাৎ তাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হল একদল বাঁদরের দিকে।
তাঁরা যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন সেখান থেকে একটু দূরে ডানদিকে একটা ঝোপের পাশে অবস্থান করছিল ফুলে ভরা একটি মহুয়া গাছ। একদল বাঁদর গাছের তলা থেকে মহুয়া ফুল কুড়িয়ে খাচ্ছিল। হঠাৎ তারা দারুণ ব্যস্ত হয়ে মাটি ছেড়ে দৌড়ে গাছটার উপর উঠে এ ডাল থেকে ও ডালে লাফালাফি করতে লাগল এবং অদ্ভুত ভাবে চিৎকার করতে লাগল সমস্বরে। ব্রিগস খুব আমোদ পেলেন বাঁদরদের ব্যবহারে। তিনি ভাবলেন তাদের আসতে দেখেই বোধ হয় বাঁদররা চমকে উঠেছে। কিন্তু ইংলিস সাহেব জানতেন বাঁদররা তখনো শিকারিদের উপস্থিতি বুঝতে পারেনি। অভিজ্ঞ শিকারি জেমস ইংলিসের কাছে বাঁদরদের ওই আচরণ বিশেষ অর্থপূর্ণ তিনি মাহুতকে হাতি পিছিয়ে নিতে বললেন।
ব্রিগস হতভম্ব হয়ে বললেন, কী ব্যাপার?
চুপ, ফিস ফিস করে মেজস ইংলিস জানালেন, সামনে বাঘ কিংবা লেপার্ড আছে।
ইংলিসের মুখের কথা শেষ হওয়ার আগেই বাঁদররা আবার ভীষণ জোরে চেঁচিয়ে উঠল। হাতি দুটির সঙ্গে পায়ে হেঁটে আসছিল কয়েকটি শিকারে অভিজ্ঞ স্থানীয় মানুষ তারা হঠাৎ সাহেবদের খুব কাছে জড় হল এবং জানাল কাছেই যে বাঘ আছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।
দলটা পিছিয়ে এসে উঁচু জমির পিছনে দাঁড়াল। ইংলিস সাহেব বন্ধুকে বললেন তিনি একজন ট্র্যাকারকে সঙ্গে নিয়ে মূল দলটাকে এখানে ডেকে আনবেন– কারণ, সামনের ঘন জঙ্গলে দুটি মাত্র হাতির সাহায্যে বাঘের সন্ধান করা অসম্ভব।
চলে যাওয়ার সময়ে ইংলিস সাহেব ব্রিগসকে বলে গেলেন যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি অন্যান্য শিকারিদের নিয়ে সেখানে ফিরে না আসেন, ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধুবর যেন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেন।
অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর মেজর বার্নস আর তার দলকে পাকড়াও করলেন জেমস ইংলিস। বার্নস ও তার সঙ্গীদের মেজাজ ভালো ছিল না– অনেকগুলো হরিণের দিকে তারা গুলি চালিয়েছিলেন বটে কিন্তু একটি গুলিও লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। ছুটোছুটির ফলে যে পথ দিয়ে তাদের যাওয়ার কথা ছিল, সেই পথে না গিয়ে তারা চলে গিয়েছিলেন অন্যপথে। কিন্তু ভুল পথে আসা হয়েছে তা বুঝতে না পেরে প্রতি মুহূর্তে তারা জেনারেল নামক বন্ধুটিকে আশা করছিলেন। ইংলিস সাহেব যদি তাদের ভুল না ভেঙে দিতেন তাহলে তারা আরও কতক্ষণ জেনারেলের জন্য অপেক্ষা করতেন কে জানে।
শিকারে ব্যর্থ হয়ে বানস ও তার সঙ্গীরা জঙ্গল, হাতি, হরিণ, নিজেদের ভাগ্য এবং বিশেষ করে জেমস ইংলিসকে গালাগালি দিচ্ছিলেন। হঠাৎ ইংলিস সাহেবকে দেখতে না পেয়ে তারা অবাক হয়ে গিয়েছিলেন, আর তাঁদের মতো অনভিজ্ঞ শিকারিদের ছেড়ে অন্যত্র সরে পড়ার জন্য বন্ধুর উপর বিষম খাপ্পা হয়ে উঠেছিলেন। এখন ইংলিস যখন সব ঘটনা খুলে বললেন তখন তারা শান্ত হলেন। একটু বিশ্রাম করে দলটাকে নিয়ে জেমস ইংলিস ফিরে চললেন সেইখানে, যেখানে শিকারিদের জন্য অপেক্ষা করছেন ব্রিগ্রস।
কিন্তু ব্রিগস অপেক্ষা করছিলেন না। তিনি সৈনিক পুরুষ, যুদ্ধের ব্যাপারটা ভালো বুঝলেও শিকার সম্বন্ধে তিনি সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর তার ধৈর্যচ্যুতি ঘটল। যদিও জেমস ইংলিস তাঁকে জায়গা ছেড়ে নড়তে বারণ করেছিলেন, কিন্তু অনভিজ্ঞ ব্রিগস ভাবলেন- একবার উঁকি মেরে জায়গাটা দেখে আসলে ক্ষতি কি? ইংলিস হয়তো ভুল করেছে। হয়তো ওখানে বাঘের বদলে আছে শুয়র কিংবা হরিণ। আর বাঘ থাকলেই বা কি? হাতে কি বন্দুক নেই? সত্যিই যদি বাঘের দেখা পাওয়া যায়, তবে কারো সাহায্য না নিয়ে বাঘ শিকারটা সেরে ফেলতে পারলে সবাইকে চমকে দেওয়া যাবে।
এইসব ভেবে ব্রিগস গুটি গুটি রওনা হলেন মহুয়া গাছের নীচে সেই সন্দেহজনক জায়গাটার দিকে, যেখান থেকে চেঁচামেচি করে বাঁদরের দল গাছের উপর পালিয়ে গিয়েছিল।
ব্রিগস এগিয়ে চললেন। উঁচু জায়গাটা পার হয়ে মহুয়া গাছের থেকে প্রায় তিরিশ হাত দূরে এসে থামলেন তিনি। সামনেই একটা বুনো গাছের ঝোপ। ঝোপের পিছনে এসে থামলেন ব্রিগস। কয়েকটা গাছের ডাল বাধা সৃষ্টি করছিল, সেগুলোকে সন্তর্পণে সরিয়ে ঝোপের ভিতর এক নজর তাকিয়েই চমকে উঠলেন ব্রিগস সামনেই প্রায় কুড়ি গজ দূরে বেশ বড়োসড়ো দুটি বাচ্চার সঙ্গে খেলা করছে বাঘিনী!
সজোরে লেজ নাড়তে নাড়তে অতিকায় বিড়ালীর মতো বাঘিনী গড়াগড়ি দিচ্ছে মাটির উপর, থেকে থেকে কেঁপে উঠছে তার লম্বা গোঁফের সারি, ছুরির মতো ধারাল নখগুলো একবার বেরিয়ে আসছে আবার ঢুকে যাচ্ছে প্রকাণ্ড থাবার ভিতরে! বাঘিনী হঠাৎ থাবা চাটতে শুরু করল রক্ত রাঙ্গা মুখের ভিতর থেকে ঝকঝক করে উঠল সাদা দাঁতের সারি।
ব্রিগসের সর্বাঙ্গে শিরায় শিরায় রক্তের স্রোত চঞ্চল হয়ে উঠেছিল, আগুনের মতো গরম হয়ে উঠেছিল কান আর মুখ। টকটকে লাল জিভ আর ঝকঝকে সাদা দাঁত দেখেই ব্রিগস সাহেবের সব উত্তেজনা ঠাণ্ডা হয়ে গেল, মুহূর্তে ফিরে এল স্নায়ুর স্বাভাবিক দৃঢ়তা- বিপদের গুরুত্ব বুঝে তিনি বন্দুক তুলে গুলি চালানোর উদ্যোগ করলেন।
সামান্য শব্দ হয়েছিল, কিন্তু বাঘিনী শব্দটা শুনতে পেল। মুহূর্তের মধ্যে সে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল– যে ঝোপটার পিছনে ব্রিগস ছিলেন, সেইদিকে নিবদ্ধ হল তার জ্বলন্ত দৃষ্টি। বাচ্চা দুটি মায়ের পিছনে আশ্রয় নিল– সর্বাঙ্গের লোম খাড়া করে পিঠ ধনুকের মতো বাঁকিয়ে তারা ফাঁসফাস করতে লাগল ক্রুদ্ধ বিড়ালের মতো!
বন্য জীবনের সেই হিংস্র প্রকাশ দেখে ব্রিগস আর থাকতে পারলেন না, দড়াম করে বন্দুক ছুঁড়ে দিলেন।
ব্রিগস পরে শপথ করে বলেছিলেন তিনি একটুও ঘাবড়াননি, তাঁর স্নায়ু যন্ত্র নাকি সেই সময় সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল।
ইংলিস সাহেব কিন্তু বন্ধুর কথা বিশ্বাস করতে রাজি নন, তার ধারণা ব্রিগসের হাত দস্তুর মতো কঁপছিল।
অমন ধারণার স্বপক্ষে যুক্তি আছে– বাঘিনীকে সম্পূর্ণ অক্ষত রেখে নলখাগড়ার বনের উপর দিয়ে জলাভূমির বুকে উধাও হয়ে উড়ে গিয়েছিল ব্রিগসের নিক্ষিপ্ত বুলেট!
বাঘিনীর সবুজ চোখ দুটি জ্বলে উঠল, সে নীচু হয়ে বসে পড়ল, তার কানদুটি গুটিয়ে মাথার সঙ্গে প্রায় মিশে গেল এবং মুখের ভিতর থেকে বেরিয়ে এল সাদা ঝকঝকে নিষ্ঠুর দাঁতের সারি। ব্রিগস বুঝলেন এইবার বাঘিনী তাকে লক্ষ্য করে লাফ দেবে। ব্রিগস মনে মনে বললেন, এবার যদি গুলি ফসকায়, তবেই আমি গেছি।
গুলি ফসকায়নি, কিন্তু বাঘিনীর নিশানাও ব্যর্থ হয়নি, নখদন্তের মারাত্মক আঘাত পৌঁছে গেল যথাস্থানে…।
আধ ঘণ্টা পরে হস্তিপৃষ্ঠে অন্যান্য শিকারিদের নিয়ে অকুস্থলে এসে জেমস ইংলিস দেখলেন রক্তপাত আর যন্ত্রণায় অর্ধমৃত ব্রিগস সাহেব প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছেন তার জ্বর উপর থেকে সমস্ত কপালটা ছিন্নভিন্ন এবং ঊরুর উপর দেখা যাচ্ছে এক গভীর ও বীভৎস ক্ষতচিহ্ন!
ঘটনার বিবরণে জানা গেল গুলি বাঘিনীর হৃদপিন্ড ফুটো করে দিয়েছিল, কিন্তু তার গতিরোধ করতে পারেনি আহত বাঘিনী ব্রিগসের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে থাবার এক আঘাতে তার কপাল ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিল। ব্রিগস যদি তাড়াতাড়ি মাথা সরিয়ে না নিতেন তাহলে বাঘিনী নিশ্চয়ই গলায় দাঁত বসিয়ে এক ঝটকায় তাঁর ঘাড় ভেঙে ফেলত। চটপট মাথাটা সরাতে পেরেছিলেন বলেই নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে তিনি আত্মরক্ষা করতে পেরেছিলেন। থাবার আঘাতে ব্রিগস অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। বাঘিনী তার দেহের উপর পড়ে গিয়েছিল এবং মরার আগে দাঁত বসিয়েছিল উরুর উপর। কপাল আর উরুর ক্ষত দুটি ছিল মারাত্মক শরীরের অন্যান্য জায়গায় কয়েকটা নখের আঁচড় পড়েছিল, সেগুলো এমন কিছু গুরুতর নয়।
অকুস্থলের নিকটেই দণ্ডায়মান মাহুত ও অন্যান্য লোকগুলো বাঘিনীর মৃত্যুর পর এগিয়ে এসে আহত ব্রিগস সাহেবকে শুশ্রূষা করার চেষ্টা করছিল- জেমস ইংলিস এসে দেখলেন বাঘিনীর সঙ্গে জড়াজড়ি করে ব্রিগস পড়ে আছেন মাটিতে, তাঁর কপাল থেকে মাথা পর্যন্ত চামড়াটা রক্তাক্ত অবস্থায় ছিঁড়ে ঝুলে পড়েছে ধরাশায়ী বাঘিনীর মৃতদেহের উপর বীভৎস দৃশ্য!
প্ৰচর সেবা শুশ্রূষা আর সুদক্ষ চিকিৎসকের অস্ত্রোপচারের ফলে ব্রিগস সাহেব সে যাত্রা আরোগ্য লাভ করে মৃত্যুকে ফাঁকি দিয়েছিলেন। ওই ঘটনার ফলে তার শিক্ষা হয়েছিল ভালো রকম, পরবর্তীকালে তিনি অনেক বাঘ মেরেছিলেন বটে, কিন্তু পায়ে হেঁটে বাঘ শিকারের চেষ্টা?– কখনো নয়!
ব্রিগসের আরোগ্য লাভের সংবাদ পাঠকদের জানিয়ে দিয়ে আমরা আবার আলোচ্য ঘটনার সূত্র ধরে অগ্রসর হতে পারি:
পরের দিন ব্রিগসের জ্বর এল, শরীরে শুরু হল সাংঘাতিক যন্ত্রণা। ওই অবস্থায় বন্ধুকে ফেলে শিকারে যেতে পারলেন না ইংলিস সাহেব। এর মধ্যে পূর্বে উল্লিখিত জেনারেল নামক নেপালি বন্ধুটিও দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে এসে গিয়েছিলেন। পরের দিন তিনিই লোকজন নিয়ে অকুস্থলে চলে গেলেন পলাতক দুই ব্যাঘ্ৰশাবককে গ্রেপ্তার করতে।
যেখানে বাঘিনীর সঙ্গে ব্রিগসের মারাত্মক শুভদৃষ্টি ঘটেছিল সেই জায়গায় গিয়ে শিকারের দলটা দক্ষিণ থেকে উত্তর পর্যন্ত সমস্ত জঙ্গলটা তন্ন তন্ন করে খুঁজতে শুরু করল। বলাই বাহুল্য, সেদিনের অভিযানে পরিচালক ছিলেন ওই জেনারেল।
জলাভূমির উপর অবস্থিত পূর্বোক্ত জঙ্গলের মাঝখানে মাটি এত নরম যে, সেখানে হাতির পা বসে যাওয়ার ভয় ছিল। তাই শিকারের দলটা বিপদজনক এলাকার বাইরে দাঁড়িয়ে ভীষণ চেঁচামেচি শুরু করল। কোনো জীবিত পশুর পক্ষে মনুষ্য কণ্ঠের সেই প্রচণ্ড কোলাহল অগ্রাহ্য করে লুকিয়ে থা: য় অসম্ভব। যেসব ঝোপের কাছে নরম কাদামাটির ভয়ে হাতি যেতে পারল না, সেই ঝোপগুলি লক্ষ্য করে হাতির পিঠ থেকে পাথর আর মাটির ঢেলা ছুঁড়তে লাগল সবাই- তবু কোনো জন্তুজানোয়ারের দেখা পাওয়া গেল না।
পরপর দুবার লম্বালম্বিভাবে জঙ্গল ভাঙা হল, তৃতীয়বারে আড়াআড়িভাবে এলাকার মাঝখানে খুঁজে দেখা হল। কিন্তু কোথায় কি? জেনারেল তবু হাল ছাড়লেন না, নূতন উদ্যমে আবার শুরু হল অনুসন্ধান-পর্ব। জেনারেল জানতেন, মানুষের অজ্ঞাতসারে বাঘ খুব কাছেই সামান্য আবরণের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে এবং বাচ্চা দুটো যে অকুস্থল ত্যাগ করে খুব বেশি দূরে যাবে না সে কথাও বুঝেছিলেন পশু চরিত্রে অভিজ্ঞ জেনারেল! অনেকক্ষণ জঙ্গল ঠেঙিয়ে কোনো বিপজ্জনক জানোয়ারের দেখা না পেয়ে লোকজন সাহসী হয়ে উঠল, তারা মাটিতে নেমে ঝোপেঝাড়ে আর পাথরের খাঁজে খাঁজে লম্বা লম্বা বাঁশ আর বল্লমের খোঁচা মারতে শুরু করল। এলাকার চার ভাগের তিন ভাগ অংশে যখন ওইভাবে তল্লাস কার্য শেষ, সেই সময় হঠাৎ গ্রীন সাহেবের উল্লসিত চিৎকারে জানা গেল পলাতকদের পাওয়া গেছে। পাহাড়ের গা থেকে একটা পাথর খানিকটা ঠেলে বাইরের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল সেই পাথরের ঝুঁকে-পড়া অংশের তলায় একটা ঝোপের মধ্যে বাঘের বাচ্চা দুটিকে আবিষ্কার করেছিলেন গ্রীন সাহেব।
জন্তু দুটি স্প্যানিয়েল কুকুরের চাইতে বড়ো নয়, কিন্তু তাদের ভাবভঙ্গি অত্যন্ত হিংস্র। অস্পষ্ট আলো-আঁধারির মধ্যে তাদের সবুজ চোখগুলো জ্বলছিল, পাথরের খাঁজে পিঠ লাগিয়ে যেভাবে তারা দাঁত খিঁচিয়ে ক্রুদ্ধ বিড়ালের মতো ফাঁস ফাঁস করছিল, তাতে সকলেই বুঝেছিল বাচ্চাদের জীবন্ত অবস্থায় ধরার কাজটা খুব সহজ সাধ্য নয়।
অরণ্যের অন্য এলাকায় আমাদের জেনারেল হাতির পিঠে চড়ে দুলতে দুলতে ব্যাঘ্র শাবকদের সন্ধান করছিলেন। হঠাৎ হাতি থামানোর নির্দেশ দিয়ে থমকে গেলেন তিনি। জলাভূমির নীচে একটা ঘন জঙ্গলের দুর্ভেদ্য আবরণের দিকে আকৃষ্ট হল তার দৃষ্টি। চারদিকে কালো জলের মাঝখানে শিকড়-বাকড়, ডালপালা, আর বিভিন্ন জাতের ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ ওই দ্বীপের মতো জায়গাটা জেনারেলের কাছে খুব সন্দেহজনক মনে হল।
জেনারেলের সঙ্গে ছিলেন স্টীল সাহেব। দুজনেই পাকা শিকারি। স্টীলও জায়গাটাকে লক্ষ্য করে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন।
এতক্ষণ ধরে জলাভূমির বিভিন্ন স্থানে জল মোরগ ও অন্যান্য পাখির সাক্ষাৎ পেয়েছেন তারা, কিন্তু দ্বীপের মতো ওই জায়গাটা পক্ষি কুলের পক্ষে আদর্শ আশ্রয়স্থল হওয়া সত্ত্বেও সেখানে একটি পাখিরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না।
হুঁ, এতো ভালো কথা নয়! তল্লাশকারী বিটারের দলও ওই সন্দেহজনক জায়গাটার দিকে এগোতে অনিচ্ছা প্রকাশ করল। জলাভূমির সেই জায়গাতে নরম মাটির মধ্যে পা বসে যাওয়ার ভয় ছিল, তাই জন্তুগুলিকে উল্লিখিত স্থানের খুব কাছে আনা হয়নি।
কিন্তু কেটু দূর থেকেই তারা অত্যন্ত অস্বস্তিপূর্ণ ভাবভঙ্গি প্রকাশ করে জানিয়ে দিল ওই জায়গাটা এমন কোনো জীবের বাসভূমি যার সান্নিধ্য হাতিদের পছন্দসই নয়।
নীরবতা ভাঙলেন প্রথমে স্টিল সাহেব, বাইজোভ! লেপার্ডের লুকিয়ে থাকার পক্ষে জায়গাটা চমৎকার।
জেনারেল শান্তস্বরে স্টিলকে উদ্দেশ করে বললেন, আমি শপথ করে বলতে পারি ওইখানে কোনো জানোয়ার লুকিয়ে আছে।
অন্যান্য জঙ্গল-তাড়ুয়াদের থেকে একটু আলাদা হয়ে জলের ধারে দাঁড়িয়েছিল একটি বোগা বুড়ো, তাকেই লক্ষ্য করে জেনারেল হাঁক দিলেন, এই গোপাল!
লোকটি কাছে এলে জোনারেল খুব মৃদুস্বরে বললেন, গোপাল, মনে হচ্ছে ওই জায়গাটাতে কোনো বুনো জানোয়ার লুকিয়ে আছে। অন্য লোকগুলো ওখানে যেতে সাহস পাচ্ছে না, তুমি যেতে পারবে?
মুহূর্তের মধ্যে দ্বিধাহীন কণ্ঠে উত্তর এল, সাহেব হুকুম দিলে তার নোকর সব কিছুই করতে পারে।
ব্র্যাভো! যদি সম্ভব হয় জায়গাটা দেখে এস। তবে দেখেশুনে চলাফেরা করবে।
বহুৎ আচ্ছা।
জলের মধ্যে নেমে পড়ল গোপাল। হাতের লোহা বাঁধানো লাঠি দিয়ে বিপজ্জনক জলাভূমির মাটি পরখ করতে করতে কখনো বা সাঁতার কেটে সর্বাঙ্গে জল কাদা আর আবর্জনা মেখে গোপাল জলাভুমির মাঝখানে যে জায়গাটাতে ঠেলে উঠল, সেইখানে তখন পর্যন্ত কোনো বিটার পা ফেলতে সাহস করেনি।
একবার চারদিকে সন্ত্রস্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দু এক পা এগিয়ে গেল গোপাল, ঝোপের ফাঁকে একবার উঁকি দিল তারপরই চটপট পিছু হেঁটে প্রায় সাপের মতো নিঃশব্দে পিছলে জলে নামল সে এবং তাড়াতাড়ি জল পার হয়ে এসে উত্তেজনায় দুই চোখ পাকিয়ে জানাল একটা নয়, দু-দুটো লেপার্ড রয়েছে ওখানে।
–হুঁ, ঠিকই ভেবেছিলাম তাহলে।
–কেমন! আমি বলিনি তোমাকে?
প্রায় একই সঙ্গে বলে উঠলেন জেনারেল আর স্টিল। ঠিক সেই সময়েই গ্রীন সাহেবের চিৎকারে জানা গেল পলাতক বাঘের বাচ্চা দুটির দেখা পাওয়া গেছে।
দুই বন্ধু তাড়াতাড়ি গ্রীন সাহেবের চিৎকার লক্ষ্য করে অগ্রসর হলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সমস্ত শিকারের দলটা এসে পাথরের খাঁজে ঝোপঝাড়ে ঢাকা গুহার মতো সেই জায়গাটার চারপাশে জড় হল, যেখানে ঝোপের মধ্যে ক্রুদ্ধ আস্ফালনে বিরক্তি প্রকাশ করছিল দুই ব্যাঘশাবক।
বাঘের বাচ্চারা সহজে ধরা দেয়নি, অনেক কষ্টে কম্বল চাপা দিয়ে তাদের বন্দি করে বেঁধে ফেলা হল।
ওহে বন্ধুরা, এবার লেপার্ডের সন্ধানে চল, বললেন জেনারেল।
লেপার্ড! জনৈক মেজর সবিস্ময় বললেন, লেপার্ড কোথায়?
তুমি কী বলছ হে? প্রশ্ন করলেন গ্রীন সাহেব।
আমাদের জেনারেল বলছে ওইখানে একটা ঝোপে লেপার্ড আছে, জানালেন স্টিল।
সমস্ত ব্যাপারটা সঙ্গীদের খুলে বললেন স্টিল। প্রথমে কেউ লেপার্ডের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে চাননি। পরে গোপালকে জেরা করে সাহেবরা সিদ্ধান্ত নিলেন ওখানে লেপার্ড থাকতে পারে বটে। মহা উৎসাহে এবার লেপার্ডের সন্ধান পর্ব শুরু হল।
খুব মোটা বখশিস দেওয়ার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিটারদের মধ্যে কেউ ভালোভাবে জায়গাটাতে খোঁচাখুঁচি করতে রাজি হল না। কিন্তু গোপাল নামে আধ বুড়ো মানুষটি অসাধারণ সাহস দেখাল। জলা পেরিয়ে গিয়ে সে সন্দেহজনক ঝোপটার মধ্যে অনেকগুলো পাথর ছুঁড়ল। ওই সময়ে একটা লেপার্ডকে সে দেখতেও পেয়েছিল চকিতের জন্য কিন্তু জন্তু দুটো ঝোপের বাইরে আত্মপ্রকাশ করল না কিছুতেই।
লেপার্ড অতিশয় ধূর্ত জানোয়ার। জন্তু দুটো ভালো করেই জানত তারা যেখানে রয়েছে, সেখানে এসে হানা দেওয়ার সাহস বা ক্ষমতা কোনো মানুষের নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই জেনারেল বুঝলেন লেপার্ডরা এখন দেখা দেবে না, তিনি বললেন, ভাই সব, এতগুলো লোক হইহই করলে ওরা কিছুতেই ঝোপের বাইরে আসবে না। এখন চল দুপুরের খাওয়াটা সেরে ফেলা যাক।
একদল লোক জায়গাটার উপর নজর রাখতে লাগল, সেই অবকাশে শিকারির দল চলে গেলেন মধ্যাহ্ন ভোজন সেরে নিতে। একজন অশ্বারোহী ডাক বাংলো থেকে কয়েকটা বোমা আর পটকা আনতে চলে গেল। যেসব জায়গায় বিটাররা ঢুকে জঙ্গল ঠ্যাঙাতে সাহস করত না, সেইসব জায়গা থেকে জানোয়ার তাড়ানোর জন্য বোমা আর পটকার সাহায্য নিতে চাইলেন শিকারিরা।
অনেকক্ষণ গোলমাল চেঁচামেচির পর জঙ্গল ভাঙার কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে অরণ্য-সংকুল জলাভুমির বুকে নেমে এল স্তব্ধতার রাজত্ব। লেপার্ডরা সম্ভবত ভেবেছিল দুরাত্মা মানুষের দল তাদের এলাকায় ঢুকতে না পেরে মুলুক ছেড়ে পালিয়ে গেছে। সে রকম কিছু ভাবলে তারা ভুল করেছিল।
আসন্ন সন্ধ্যার আভাস জানিয়ে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হল ছায়ার সারি অরণ্যের বুকে। জেনারেল তার লোকজনকে নিপুণভাবে সাজিয়ে ফেললেন সন্দেহজনক জায়গাটার আশে পাশে। ততক্ষণে বোমা আর পটকা নিয়ে লোক এসে গেছে অকুস্থলে।
জেনারেল নির্দেশ দিলেন। ইঙ্গিত পাওয়া মাত্র বিটারের দল চিৎকার করতে শুরু করল। জেনারেল নিজের হাতে অগ্নিসংযোগ করে ছুঁড়ে মারলেন বোমা। উদ্ভিদের দুর্ভেদ্য আবরণের ভিতর ফাটল তিন-তিনটি বোমা।
সমবেত জনতা দ্বিগুণ উৎসাহে আরও জোরে চাঁচাতে লাগল। হাতিরাও উত্তেজিত হয়ে তীব্র বৃত্তনে চারদিকে কাঁপিয়ে তুলল। বোমাগুলো ফটফট শব্দে ফেটে ঘন ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়ে দিল, তারপরই সগর্জনে দেখা দিল আগুনের ঝলক পলকে রক্তরাঙা শিখা বিস্তার করে ছড়িয়ে পড়ল লেলিহান অগ্নি।
গর্জিত কণ্ঠে ক্রুদ্ধ প্রতিবাদ জানিয়ে জ্বলন্ত ঝোপ থেকে ছুটে বেরিয়ে এল দুটি লেপার্ড। স্টিল একটাকে গুলি করে ফেলে দিলেন। কিন্তু অন্য জন্তুটা সমবেত জনতার ব্যুহ ভেদ করে ছুটল শিকারিদের পিছনে অবস্থিত পাহাড়ের দিকে এবং পর্বত শিখর অতিক্রম করে মিলিয়ে গেল দেখতে দেখতে।
আহত লেপার্ড শত্রুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার ব্যর্থ চেষ্টায় ছটফট করছিল মাটিতে পড়ে। কিন্তু তার উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ছিল না। গুলি তার মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছিল (গুলিটা নেহাৎ বরাত জোরে শিরদাঁড়ায় লেগে গিয়েছিল)। আহত জন্তুটাকে আবার আঘাত করে মেরে ফেলা হল। তারপর তার মৃতদেহ হাতির পিঠে তুলে শিকারিদের দল পলাতক শিকারের সন্ধানে যাত্রা করলেন। কিন্তু দুই নম্বর লেপার্ডকে ধরা গেল না। শিকারিদের ফাঁকি দিয়ে সে সরে পড়েছিল। নিরাপদ ব্যবধানে।