শাপমুক্তি

শাপমুক্তি

পিসির অনুরোধ এবারে আর কাটানো গেল না। সুটকেসটা গুছিয়ে নিয়ে রেলগাড়িতে উঠে বসল ড্যাফনি। পিসিমা চাইছেন ও একটা মাস অন্তত থেকে আসুক তাঁর কাছে, ওর নিজের প্রোগ্রাম কিন্তু একটামাত্র হপ্তা ওখানে।

কী করেই বা থাকবে বেশিদিন? আফ্রিকার ওই যে দেশটা, কী নাম ভালো ওটার— ওখানে লড়াই চলছে তুমুল ধুমধামে। ব্রিটেন এখনও জড়িয়ে পড়েনি বটে, কিন্তু ‘মন্দটাই ভেবে রাখা ভালো’— এই নীতিবাক্য স্মরণ করে যুদ্ধবিভাগ ইতিমধ্যেই সব ছুটি বাতিল করে দিয়েছে সামরিক কর্মচারীদের। ড্যাফনি আবার বিমানবাহিনীর ডাকসাইটে পাইলট। ওকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে ঠিক দশ দিনের মাথায়। সুতরাং—

সুতরাং সাত দিনের বেশি হাতেই নেই ওর। এ-কয়টা দিন শুয়ে-বসে বিশ্রাম নেওয়াই দরকার ছিল। কিন্তু লেডি কিলবার্ন, মানে ওই নাছোড়বান্দা পিসিমাটি ওর পিছনে ফিঙ্গে হয়ে লেগেছেন আজ দু-বছর থেকে, ‘একবার এখানে আয় বাছা, একবার ঘুরে যা এসে। কত দি-ই-ন দেখিনি তোকে! কী পাষাণী মেয়ে ‘তুই’ ইত্যাদি! তাই বেশ খানিকটা বিরক্তি নিয়েই ড্যাফনি রওনা হয়ে পড়ল স্টাফোর্ডশায়ারের দিকে। বলা যায় না কিছু, যুদ্ধে বাঁচা-মরা দুইই আছে। তেমন তেমন কিছু ঘটলে বুড়ির ভাইঝি-দর্শনের সাধ অপূর্ণই থেকে যাবে এ জন্মের মতো। তার দীর্ঘনিশ্বাসের দরুন হয়তো মরার পরেও ড্যাফনি শান্তি পাবে না। কাজে কাজেই—

তা জায়গাটা মনোরমই বটে পিসির এই বাড়িটা। স্টেশনের পর থেকেই শুরু হয়েছে কিলবার্নদের জমিদারি। পঞ্চম হেনরির আমল থেকেই ওঁরা পুরুষানুক্রমে গোটা অঞ্চলটার সৌষ্ঠব বাড়িয়ে এসেছেন নানান ভাবে! তিন মাইল রাস্তা ড্যাফনিকে পেরুতে হল, স্টেশন থেকে বাড়ি পর্যন্ত। খোলা মোটর গাড়িতে বসে বসে সে দেখছে ছবির মতো সাজানো মাঠঘাট, নদীনালা, পাহাড়-বন। এমন একটা জিনিসকেও থাকতে দেওয়া হয়নি কোথাও, যা চোখে ভালো লাগবে না। অসুন্দরকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করা, আর সুন্দরকে এনে কায়েম করা তার জায়গায়, সতেরো পুরুষ ধরে কিলবার্ন জমিদারেরা এইটাকেই যেন তাঁদের জীবনের মস্তবড়ো কর্তব্য বলে ধরে নিয়েছিলেন।

বাড়িটা আগেও বহুবার দেখেছে ড্যাফনি, কিন্তু এখনও ওর চোখে একটা বিস্ময়। এর চেয়েও জমকালো বাড়ি লন্ডনের কোনো কোনো সওদাগরি কোম্পানির আছে, কিন্তু জাঁকজমকের সঙ্গে লালিত্যকে মিশিয়ে দিতে সে-সব বাড়ির স্থপতিরা মোটেই পারেনি। গেল বার যখন সে এসেছিল—

হ্যাঁ, তার বয়স তখন আঠারো। ইউনিভার্সিটি ছেড়ে দিয়ে সে তখন সবে বিমানবাহিনীতে শিক্ষানবিসি শুরু করতে যাচ্ছে। বছর পাঁচেক আগের কথা—

হ্যাঁ, সেবারে সে পিসিকে বলেছিল, ‘জানো পিসিমা, তোমার এ-বাড়ি দেখলে খামোকাই যেন আমার মনে পড়ে তাজমহলের কথা। সাদৃশ্য কিছুমাত্র নেই, তবু, মানে আমার এটা পাগলামি ছাড়া কিছু নয়। সাদৃশ্য থাকতেই তো পারে না। সে একটা সমাধি-মন্দির, আর এ হল একটা বসত-বাড়ি!’

এই কথার উপরই পিসিমা হঠাৎ একটা পিলে-চমকানো কথা বলে ফেলেছিলেন, ‘তুই জানিস না ফ্যানি, সমাধি-মন্দির এটাও!’

সমাধি-মন্দির এটাও? প্রথম চমকটা কাটিয়ে উঠেই ড্যাফনি লেডি কিলবার্নকে চেপে ধরেছিল, ‘এ কথার মানে কী, তা বলতে হবে। সমাধি-মন্দিরের কোনো লক্ষণ আছে কিলবার্ন কোর্টে?’

‘পরে বলব এখন।’— বলে পিসিমা সরে পড়েছিলেন তখন, কী একটা মনগড়া ছুতো করে। তার পরে আরও কয়েক দিন ড্যাফনি ছিল বটে ওখানে, কিন্তু সে-যাত্রা ও-কথা তুলবার আর সুযোগ পায়নি ও। এবার—

এবার গাড়ি থেকে বিশাল প্রাসাদটা প্রথম চোখে পড়ল যেই ড্যাফনি মনে মনে বলল, এবার কথাটা আদায় করতেই হবে পিসির কাছে। কিন্তু আশ্চর্য কথাই বটে! বাড়িটা দেখে এবারও আমার সেই তাজমহলকেই মনে পড়ছে।

কুশল প্রশ্ন, আদর আপ্যায়ন এসব দিয়ে পিসিমা এভাবে ড্যাফনিকে ঘিরে রইলেন প্রথম কয়েক দিন যে, প্রসঙ্গটা সে তুলবারই ফুরসুত পেল না তাঁর কাছে। অথচ তার ফিরে যাওয়ার সময়ও এসে যাচ্ছে। একরকম হাল ছেড়েই সে বসে আছে— এবারও তাহলে হল না রহস্যটা ভেদ করা।

কিন্তু সুযোগ এসে গেল অন্য দিক দিয়ে।

বাড়িতে অতিথি এবারে ড্যাফনি একা নয়। কোনো বারেই একা থাকে না। লেডি কিলবার্নের ছেলে থাকে মস্কোতে। সেখানে সে ব্রিটিশ দূতাবাসের হোমরাচোমরা একজন। মেয়েরা একজন বিয়ে করেছে মার্কিন দেশে, আর একজন অস্ট্রেলিয়ায়। তারাও নিজের নিজের স্বামীর দেশে। তাই বেচারি মা আর করেন কী, দূর সম্পর্কের আত্মীয় কুটুম্ব যেখানে যে আছে, ডেকে ডেকে এনে শূন্য গোয়াল পূর্ণ করে রাখেন বারো মাস ত্রিশ দিন। ড্যাফনি যতবার এসেছে এখানে, আসর দেখেছে জমজমাট।

এবারও তাই দেখল। তার বয়সি এবং তার চেয়ে বেশি বয়েসি মেয়েই রয়েছে জনা বারো। পিসিমা অবিচেক নন, মেয়েদের তোয়াজে রাখবার জন্য মানানসই বয়সের পুরুষও আমদানি করেছেন দরাজ হাতে। তাদের সংখ্যা বরং মেয়েদের চেয়ে কিছু বেশিই হবে। হইহই ব্যাপার বাড়িতে।

সকালে প্রাতরাশের পরেই এক দফা বেড়ানো। কখনো সবাই একসাথে, কখনো-বা ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে। লাঞ্চের পরে সকলে একসাথে বসে আড্ডা সন্ধ্যা পর্যন্ত, তার পরেই রাজসিক সমারোহের ডিনার এবং ডিনারের অবসানে আর এক দফা বায়ু সেবন। ফুটফুটে জ্যোৎস্নায় মাঠে বা বাগানে বিচরণ করছে কেউ, নৌকো নিয়ে ঝিলের জলে দাঁড় টানছেও অনেকে।

আবহাওয়া এ দেশের অনিশ্চিত। এক-একদিন মেঘে মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে যায় আকাশ, মে মাসের মৃদুল হাওয়া হঠাৎ ক্ষেপে উঠে শোঁ শোঁ শব্দে ছুটতে আরম্ভ করে সেডারবীথির মাথায় মাথায় দুর্বার দাপটে। সেদিন আর ঘরের বার হওয়া চলে না। জানলা বন্ধ করে আরামে বসে যায় সবাই খোশগল্পে সময়টা পার করে দেওয়ার জন্য।

সেদিন দুর্যোগটা শুরু হল লাঞ্চের পরে। আড্ডা জমে উঠল দরবার-হলে। দিনের আসর চিরদিন এই হলেই বসে থাকে। কিন্তু রাতের বেলায় এ-ঘর থাকে আষ্টেপৃষ্ঠে বন্ধ। সেই যে সন্ধ্যার আগে সবাই উঠে যায় ডিনারের জন্য পোশাক বদলাবার নাম করে, তার পরে আর কেউ আসে না এখানে। কেন আসে না, তা নিয়ে কোনোদিন মাথা ঘামায়নি ড্যাফনি। না-আসার যে বিশেষ কোনো কারণ থাকতে পারে, এমনটাও কোনোদিন সন্দেহ জাগেনি তার মনে। মনে যা হয়েছে, তা এইরকম—

ডজনে ডজনে ঘর রয়েছে নীচের তলাতেই, বড়ো, ছোটো, মাঝারি। কোনোটা ড্রয়িং রুম, কোনোটা পার্লার, কোনোটা সেলুন, কোনোটা বুডোয়ার। এ ছাড়া আছে লাইব্রেরি, স্টাডি, বিলিয়ার্ড রুম, বল-রুম, স্মোকিং রুম, রিটায়ারিং রুম, মিউজিক রুম, কার্ডরুম, ওয়েটিং রুম ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের উপরেও ওই দরবার বা অডিয়েন্স রুম, যেটা প্রাচীন জমিদার বাড়িতে ছাড়া অন্য ধনীর বাড়িতে থাকবার কথা নয়।

তা এত সব ঘরে ওঠা-বসা, নাচা-কোঁদা করে বেড়াবার জন্য মানুষ তো এ-বাড়িতে জনা পঁচিশ-ত্রিশ মাত্র। তারাই কখনো এখানে তাস পিটছে, কখনো ওখানে গিয়ে সিগার ফুঁকছে। সব ঘরেই দর্শন দিতে হবে তো এক-একবার! কাজেই একমাত্র দরবার-ঘরে দিনরাত কাটিয়ে দেওয়া চলে কেমন করে?

হ্যাঁ, ড্যাফনির মনে প্রশ্ন যদি কোনোদিন উঠে থাকে দরবার-ঘর নিয়ে, তাহলে তার সমাধান সে হয়তো এইভাবেই করে নিয়েছে নিজে নিজে। ও নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা করার দরকার মনে করেনি।

কিন্তু সেদিন— দুর্যোগটা হল সাংঘাতিক। একটা বাজ পড়ল রান্নাবাড়ির ছাদে। ক্ষতি অন্য দিক দিয়ে মারাত্মক কিছু হল না, তবে ডিনারের কতকগুলো পদ গেল নষ্ট হয়ে, ছাদের কিছুটা অংশ ভেঙে পড়েছিল খাবারের আলমারির উপর। সেই পদগুলি নতুন করে রাঁধতে হল আবার।

বাধ্য হয়ে লেডি কিলবার্ন বলে পাঠালেন, ডিনার হবে আজ দুই ঘণ্টা পরে, রাত আটটায়।

দু-ঘণ্টা? মুশকিল হল তো? খালি পেট ততক্ষণ বাপান্ত শুরু করবে না?

পিসিমা কিন্তু বিবেচক লোক আছেন। অতিথিদের পিত্তিটা দমনে রাখবার জন্য এক প্রস্থ কফি এই অসময়ে ব্যবস্থা করে ফেলেছেন, সঙ্গে অবশ্য কেক, প্যাসট্রি, পুডিং, বিস্কিট এন্তার আছে, যার যেটা রুচি চিবোও।

সর্দার খানসামা এসে সবিনয়ে এত্তেলা দিল, ‘মর্নিং রুমে কফি দেওয়া হচ্ছে।’

‘কেন? মর্নিং রুমে আবার কেন?’ দুই-একজন কলরব করে উঠল। ড্যাফনিও তাদের মধ্যে একজন। ‘আবার এখন ওঠে কে? এইখানেই কফি এলে দোষ কী?’

সর্দার খানসামা কান চুলকোয়, সমস্যায় পড়লে এইটিই তার অভ্যাস। কিন্তু কান চুলকে যাদের প্রশ্নবাণ থেকে রেহাই পাওয়া যায়, ‘এসব দৈত্য নহে তেমন’। দরবার-ঘরের প্রতি কোণ থেকে কৈফিয়ৎ তলব হচ্ছে, ‘এখানে কফি এলে ক্ষতি কী?’

ক্ষতি যে আছে সেটা বুঝিয়ে দেবার জন্য খোদ গৃহস্বামিনীকে আসরে আবির্ভূত হতে হল। তিনি এসে বললেন, ‘বাছারা আগে চল মর্নিং রুমে, সেখানে আমি বলব এখন তোদের। সন্ধ্যা হয়ে এল, এ ঘর এক্ষুনি বন্ধ করতে হবে।’

তাঁর কথার অবাধ্য কেউ হল না, কিন্তু উঠতে উঠতে যেতে যেতেও হরেকরকম উঁচু গলার এবং নীচু গলার আওয়াজ ওরা তুলতে লাগল, ‘কেন? সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গে ও ঘর বন্ধ হতেই হবে, এমন কোনো কথা আছে না কি? বাইবেল অশুদ্ধ হয়ে যাবে, বন্ধ না-হলে?’

কফি পরিবেশন করে ভৃত্যেরা বিদায় হয়ে গেল যখন, মর্নিং রুমের দরজা বন্ধ করে দিয়ে লেডি কিলবার্ন এসে দাঁড়ালেন তাদের সমুখে। বড়ো বিষণ্ণ গম্ভীর দেখাচ্ছে তাঁর সদ্য-হাসি-মাখা মুখখানাকে এই মুহূর্তে।

‘তোমাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে যখন, আমি আর কথাটা গোপন রাখতে চাই না। কিলবার্ন বংশের রক্ত তোমাদের সবাইয়ের দেহেতেই আছে। কারও ধমনীতে সেটা এখনও গাঢ়, কারও-বা খানিকটা ফিকে হয়ে এসেছে, এই যা তফাত। তবু গাঢ় হোক, ফিকে হোক, আত্মীয়তার বন্ধন এ বাড়ির সঙ্গে তোমাদের সবাইয়েরই আছে। আশা আছে আমার, একটা কলঙ্কের কথা শুনলে, তা সে কলঙ্ক যতই কালো আর বীভৎস হোক না-কেন, পূর্বপুরুষদের একটা পাপের কথা শুনলে, ক্রোধে লজ্জায় আত্মহারা হয়ে বংশটাকেই তোমরা অভিশপ্ত বিবেচনা করতে চাইবে না।’

এতখানি লম্বা এবং এমন গুরুগম্ভীর ভূমিকা নিয়ে যে কাহিনির অবতারণা হতে যাচ্ছে, না-জানি তা শোনার পর ডিনারটা বিস্বাদ লাগবে কিনা— এই আশঙ্কায় অতিথিরা সবাই চটপট প্যাসট্রি পুডিংগুলো দরাজ হাতে মুখে পুরতে লাগল। লেডি কিলবার্ন গল্প শুরু করলেন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই—

‘ঠিক এক-শো বছর আগে এ-বংশের প্রধান ছিলেন আর্ল রোহান। তোমরা তাঁর নাম জানো বোধ হয় অনেকেই’—

দুই-একজনই অস্পষ্ট গাঁ গাঁ আওয়াজ করল এক-একটা, কেক চর্বণে ব্যস্ত থাকার দরুন কথা কওয়ার সুযোগ তাদের নেই। অন্যেরা রইল নীরব। কারণ আর্ল রোহানের নাম তারা শোনেনি। কিলবার্ন-রক্ত এমন ফিকে মেরে গিয়েছে তাদের শিরায় শিরায় যে, ওদের বংশাবলি মনে রাখবার কোনো দরকার তারা বোঝেনি কোনোদিন।

লেডি কিলবার্ন বলে যাচ্ছেন—

‘রোহান ছিলেন বাপের ছোটো ছেলে। এদেশের আইন তোমরা সবাই জানো, বংশের সব সম্পত্তি বড়ো ছেলেই পেয়ে থাকে, ছোটোর কোনো দাবি থাকে না তার উপরে। সে শুধু সেইটুকুই পেতে পারে, বাপ ইচ্ছেমতো আলাদা করে স্বোপার্জিত কোনো অর্থ বা সম্পত্তি যদি তাকে দিয়ে যান লেখাপড়া করে।

‘রোহানকেও তাঁর বাবা সে-রকমভাবে দিয়েছিলেন কিছু, কিন্তু তাতে তাঁর মন ওঠেনি!

‘একসময়ে রোহানের দাদা লন্ডনে রয়েছেন, লর্ড সভার অধিবেশনে হাজিরা দেওয়ার জন্য। তাঁর স্ত্রী পুত্রেরা রয়েছেন এই বাড়িতে, কিলবার্ন কোর্টে। রোহানও আছেন লন্ডনেই, কারণ তাঁর একটা ঘোড়া তখন দৌড়ুতে যাচ্ছে ডার্বির ঘোড়দৌড়ে।

‘এইসময় একটা দৈব দুর্ঘটনায় হঠাৎই মারা গেলেন আর্ল কিলবার্ন। সিঁড়ি থেকে পড়ে গেলেন গড়িয়ে, মাথা ভেঙে গেল একেবারে। অনেকে সন্দেহ করেছিল যে দুর্ঘটনাটা আসলে দৈবাৎ ঘটেনি। রোহান সেই মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন দাদার বাড়িতে। অপঘাতটা তিনিই ঘটিয়েছিলেন।

‘কিন্তু যে ঘটনার সত্যতা কোনোদিন প্রমাণ হয়নি, তা নিয়ে আলোচনা করার দরকার তেমন নেই।

‘পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের জবাব দেবার জন্য যেটুকু সময় লন্ডনে উপস্থিত থাকা একান্তই অনিবার্য ছিল, সেইটুকুই রইলেন রোহান। তারপরই তিনি ঝড়ের বেগে ঘোড়া ছুটিয়ে দিলেন কিলবার্ন কোর্টের দিকে। পুলিশকে বলে দিলেন, আপনারা মৃতদেহ কিলবার্নে পাঠিয়ে দেবেন, আমি আগে গিয়ে খবরটা দিই আমার ভ্রাতৃবধূকে।

‘খবর দেবার জন্য রোহান যখন গভীর নিশীথে কিলবার্নের লোহার দরজায় নাড়া দিলেন সশব্দে, তখন সে পুরীতে একটি প্রাণীও ঘুমন্ত নয়, সবাই জেগে বসে আছে এক আকস্মিক বিপদে মুহ্যমান হয়ে। রোহানের ভ্রাতৃবধূ আর্লপত্নীও অজ্ঞান হয়ে রয়েছেন দুই ঘণ্টা যাবৎ।

‘না, আর্লের মৃত্যুর খবর এখানে কেউ পায়নি এখনও। এ-শোক অন্য কারণে। আর্লের যমজ ছেলে, দুই বছরের শিশু দু-টি আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছে।

‘কী করে হল এটা? কে বলবে? আয়া তাদের যথারীতি সন্ধ্যার পরে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছিল তাদের ঘরে। সে-ঘরের এক পাশে আয়ার ঘর, অন্যপাশে শয়নকক্ষ স্বয়ং আর্লপত্নীর। নিশুতি রাতে ঘুমন্ত ছেলেদের কে নিঃশব্দে তুলে নিয়ে এল বিছানা থেকে, মুখে কাপড় চাপা দিয়ে কীভাবে নিয়ে গেল আর্লের নিজ ব্যবহারে গোপন সিঁড়ি দিয়ে দরবার-ঘরে, কে জানবে তা?

‘দরবার-ঘরে আগুন জ্বলছিল অগ্নিকুণ্ডে দিনের বেলায়। শীতকালে এমন জ্বলে। আর্ল উপস্থিত না-থাকলে তাঁর নায়েব ওখানে বসে প্রজাদের দরি-দরবার শোনেন। আগুন আজও জ্বলছিল। তা মাঝরাতেও নেবেনি! সেই আগুনের ভিতর পাওয়া গিয়েছে দু-টি শিশুর ঝলসানো পোড়ানো দু-টি দেহ।

‘কে বলবে কে সেই শিশু-হন্তা পিশাচ? রোহান কি? আগে একবার গোপনে পাঁচিল টপকে তিনিই কি প্রবেশ করেছিলেন ঘুমন্ত প্রাসাদে? তারপর বেরিয়ে গিয়ে দুই ঘণ্টা বাদে আবার সোর-হাঙ্গাম করে ফিরে এসেছিলেন সদর দরজা দিয়ে? কে বলবে? লোকে যেরকমই কানাঘুসো করুক, প্রমাণ তো কিছুই ছিল না। থাকলেও সে প্রমাণ চাপা দেবার মতো অর্থবল রোহানের ছিল।

‘অতঃপর রোহানই হলেন কিলবার্নের আর্ল। তাঁর অভাগিনি ভ্রাতৃবধূ গেলেন পাগল হয়ে। রোহান আর্ল হলেন, কিন্তু সন্ধ্যার পরে তিনি দরবার-ঘরে আর ঢোকেন না। তাঁর হুকুমে সে-ঘর বন্ধ করে দেওয়া হয় সন্ধ্যার আগেই। সবাই বলাবলি করে, অগ্নিদগ্ধ দু-টি শিশুর প্রেতাত্মা এখনও সে-ঘরে সন্ধ্যার পরে আনাগোনা করে, নিঃশব্দে ছটফট করে মেজেতে গড়িয়ে গড়িয়ে। এখনও যেন চিতানলের জ্বালায় তারা জ্বলে যাচ্ছে অব্যক্ত যাতনায়।’

লেডি কিলবার্ন গল্পের শেষ করলেন এই বলে, ‘না, আমার স্বামী আর্ল রোহানের প্রত্যক্ষ বংশধর ছিলেন না। নিঃসন্তান রোহান মারা যাওয়ার পরে তাঁর এক জ্ঞাতি-ভ্রাতা পান এই জমিদারি ও এই আর্ল উপাধি। তাঁরই বংশ আমরা।’

ড্যাফনির দিকে ফিরে তাকিয়ে তিনি বললেন আবার, ‘বহুদিন হল আমি একদিন বলেছিলাম, এ বাড়িটাও এক হিসেবে সমাধি-মন্দির, মনে আছে? রোহান সেই দুই শিশুর হাড়গোড় এই ঘরেই নাকি পুঁতে ফেলেছিলেন।’

পরদিন লাঞ্চের পরে সবাই আবার যথারীতি জমায়েত হয়েছেন দরবার-ঘরে। সবাই কেমন যেন একরকম দৃষ্টিতে চাইছেন অগ্নিকুণ্ডটার দিকে। কাল যেভাবে সবাই শিউরে উঠেছিলেন, ভয় পেয়েছিলেন, ঘৃণায় বিতৃষ্ণায় অধৈর্য হয়ে উঠেছিলেন লেডি কিলবার্নের গল্প শুনতে শুনতে, আজ সে ভাবটা অবশ্যই কেটে গিয়েছে শ্রোতাদের মন থেকে, কিন্তু কোনো অতিথিই আর স্বচ্ছন্দভাবে চলা-ফেরা করতেই পারছেন না যেন। শুধু দরবার-ঘরে নয়, বাড়িটার কোনো অংশেই না।

বিশেষত ড্যাফনি। বড়ো দরদি মন কিনা ওর! পেশায় কাঠখোট্টা বৈমানিক হলে কী হবে, ছোটো ছেলে-মেয়েদের ও বড়ো বেশি ভালোবাসে। দুই দুটো শিশুকে আগুনে পুড়িয়ে মারার গল্প শুনে অবধি ড্যাফনি যেন এ-বাড়ির হাওয়াতেই আজ মাঝে মাঝে শুনতে পাচ্ছে তাদের ককানি আর কাতরানি। সে কালই চলে যাবে এখান থেকে। অজুহাতও আছে, ছুটি ফুরিয়ে এল।

কাল? না, কাল যাওয়া হতে পারে না। আপত্তি করে বসল অন্য অতিথিরা, ‘কাল ষোলো মাইল দূরের আর্গাইল পাহাড়ের চূড়ায় উঠবার কথা আছে না?’

প্রস্তাবটা গোড়ায় এসেছিল ড্যাফনিরই তরফ থেকে। আর্গাইল চূড়া থেকে সূর্যাস্ত যে না-দেখেছে, তার জন্মই বৃথা— এইরকম একটা প্রবাদ আছে এ-অঞ্চলে। ড্যাফনি আগেও একবার দেখেছে এরকম সূর্যাস্ত। সেই জপিয়েছে অন্য সবাইকে এবার। এখন সে আগেভাগে সরে পড়তে চাইছে, এ কেমনধারা কথা?

ড্যাফনি ভেবে দেখল, ওদের অনুযোগ ভিত্তিহীন নয়। এখন যদি সে পশ্চাৎপদ হয়, তাহলে সেটা হবে আক্রমণের আদেশ দিয়েই সেনাপতির পৃষ্ঠ-প্রদর্শনের মতো। না, তা হয় না। কালকের দিনটা থাকতে হবেই। পরশু তাহলে। পরশু সে যাবেই।

কিন্তু সেই পৃষ্ঠপ্রদর্শন তাকে করতেই হল। নিজের ইচ্ছায় নয়, দৈবচক্রে। পরদিনও লাঞ্চের পরে সবাই সমবেত হয়েছে দরবার-হলে। আর ঘণ্টাখানেক বাদেই রওনা হতে হবে আর্গাইল পাহাড়ের দিকে। চারখানা গাড়ি তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ির সামনে। যাত্রীরাও কেউ তৈরি হয়েই আছেন, কেউ হচ্ছেন তৈরি নিজের নিজের ঘরে। এমন সময়—

মিলিসেন্ট মেয়েটা ভারি চঞ্চলা। তার ভাবও বেশি ড্যাফনির সাথেই। যতকিছু ফস্টিনস্টি ড্যাফনিকে নিয়েই তার। সে করেছে কী, হঠাৎ পিছন থেকে এসে ড্যাফনির চুল ধরে দিলে এক হ্যাঁচকা টান, আর তারপরই খিলখিলিয়ে হেসে উঠে দুদ্দাড় দৌড় দিলে ঘরের ও-মাথায়।

বরাতের ফের দ্যাখো! ড্যাফনি সাধারণত ওর মতো চঞ্চলা নয়। কিন্তু আজ তার কী হল, তড়াক করে লাফিয়ে উঠে তিরবেগে ছুটল মিলিসেন্টের পিছনে। আর দুই পা যেতে না-যেতেই তার উঁচু হিলের জুতো পিছলে গেল মসৃণ মেজেতে। ড্যাফনি দড়াম করে আছাড় খেল একটা।

সবাই ধরাধরি করে বসিয়ে দিল যখন, ড্যাফনি ছটফট করছে যাতনায়, একটা পা তার মচকে গিয়েছে। হা-হুতাশ, মালিশ, মলম, ব্যান্ডেজ, বরফ— তোলপাড় ব্যাপার!

এখন তাহলে আর্গাইলে যাওয়ার কী হয়? অনেকে বলছে, ‘দরকার নেই ওতে, ড্যাফনিকে বাদ দিয়ে এ অভিযানে বেরুনোটা হৃদয়হীনের কাজ হবে।’

ড্যাফনি নিজেই জেদ ধরল, ‘অভিযান কখনোই বাতিল হতে পারে না। একজন অসুস্থ হয়েছে বলে এতগুলো লোকের উৎসাহে ঠান্ডা জল ঢেলে দেওয়া? নিছক পাগলামি হবে সেটা। যাও, যাও ভাই তোমরা, না-গেলে আমি সত্যিই বড়ো কষ্ট পাব।’

মিলিসেন্ট কাঁদো কাঁদো হয়ে বলছে, ‘সবাই অবশ্যই যাবে, তবে আমি থাকব ড্যাফনিকে দেখবার জন্য! আমার জন্যই বেচারার পা ভাঙল। ওদিকে ওর ছুটি ফুরিয়ে এসেছে, কী করে যে ও হাজির হবে হেড কোয়ার্টারে!’

ড্যাফনি তাকে ধমকে দিল বিষম, ‘তোর আর গিন্নিপনা করতে হবে না। আজ একটুখানি শুয়ে-বসে থাকলে কালই পা ঠিক হয়ে যাবে। তুই যা এখন, যেতেই হবে তোর—’

লেডি কিলবার্ন থাকতে চাইলেন ড্যাফনির কাছে, কিন্তু ভেবে দেখা গেল, সেটাও সম্ভব নয়। আর্গাইলের পথ উনিই চেনেন, আর চিনত ড্যাফনি। দু-জনই যদি বাদ পড়েন, গাইডশূন্য বাদবাকি লোক হয়তো খুবই অসুবিধায় পড়তে পারে। ড্যাফনিও বলছে, ‘তুমি যাও পিসিমা! আমার জন্য কারও থেকে দরকার নেই। আমি এখানে এই যে বসে আছি, সন্ধ্যা পর্যন্ত দিব্যি বসে থাকব একখানা বই হাতে নিয়ে। সন্ধ্যার সময় একটা দাসীকে ডেকে তার কাঁধ ধরে ঘরে চলে যাব এখন।’

‘সন্ধ্যার পরে কিন্তু এখানে থেকো না।’— লেডি কিলবার্নের সতর্কবাণীর সঙ্গে আরও অনেকগুলো কণ্ঠ সশব্দ হয়ে উঠল।

‘না, না, আমি সন্ধ্যার আগেই উঠে যাব। আমার বুঝি আর ভয় নেই?’— মুচকি হাসল ড্যাফনি।

ওকে বার বার সাবধান করে দিয়ে লেডি কিলবার্ন গোটা দলটাকে নিয়ে গাড়িতে গিয়ে চড়লেন। ডিনারের আগেই ফিরে আসবেন সবাই।

দাসীকে দিয়ে নিজের ঘর থেকে একখানা বই আনিয়ে নিল ড্যাফনি, আর সোফায় হেলান দিয়ে বসে একবার বইয়ের পাতার ভিতরে, একবার জানালার বাইরে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে লাগল। বাইরের দৃশ্যটা চমৎকার। জানালার নীচেই মস্ত বাগান, ফুলে ফুলে ঝলমল করছে। ওধারে ঝিল, তার জলে অপরাহ্ন সূর্যের একটা জ্বলজ্বলে ছায়া দোল খাচ্ছে ঢেউয়ে ঢেউয়ে। হাতের বই বুকের উপর উপুড় করে রেখে বাইরের দিকেই তাকিয়ে রইল ড্যাফনি। আর তাকিয়ে থাকতে থাকতে অজান্তেই দু-চক্ষু মুদে এল তার।

চোখ যখন খুলল ড্যাফনি, এ কী সর্বনাশ! কত ঘুমিয়েছে সে! চারদিক অন্ধকার যে ঘরের ভিতর! সন্ধ্যা? সন্ধ্যা হয়ে গেল নাকি? দাসীরা ডাকেনি তো কেউ! কী ভয়ানক! এই সেই দরবার-ঘর! সন্ধ্যার পরে যুগল শিশু-প্রেত—

তাড়াতাড়ি উঠে দরজার দিকে যেতে চাইল ড্যাফনি। ভয়ের তাড়নায় অন্য সব অনুভূতি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে তার ভিতরে। পা তার ভাঙা, তা মনে নেই তার। ছুটতে গিয়ে ব্যথা অবশ্যই করেছে, কিন্তু তা টের পায়নি ড্যাফনি।

কিন্তু দরজাটা কোথায়? দেখা তো যাচ্ছে না অন্ধকারে। হাতড়াচ্ছে! ড্যাফনি দেয়াল ধরে ধরে হাতড়াচ্ছে! হাতড়াচ্ছে আর ফিরে ফিরে তাকাচ্ছে অগ্নিকুণ্ডটার দিকে। ওই-না একটা আগুনের আভা ওর ভিতরে! সর্বাঙ্গ নিথর হয়ে আসছে ড্যাফনির।

এই যে! দরজা এই যে!— কিন্তু এ কী হল? দরজা যে বাইরে থেকে বন্ধ! হয়েছে! সর্দার খানসামা এসেছিল। যথাসময়ে দরবার-ঘরে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ভিতরে যে ঘুমিয়ে রয়েছে ড্যাফনি, তা সে টের পায়নি। এখন?

আবার অগ্নিকুণ্ডের দিকে চোখটা ছুটে গেল। আর অমনি চোখ ঠিকরে বেরুবার উপক্রম হল তার! কুণ্ড থেকে গড়াতে গড়াতে জড়াজড়ি করতে করতে দুটো খুদে খুদে দেহ বেরিয়ে আসছে মেজের উপরে। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে তাদের সর্বাঙ্গে। কাতরাচ্ছে, গোঙাচ্ছে, আধো আধো ‘মা-মা’ আর্তনাদে শিউরে শিউরে উঠছে দরবার-ঘর!

আগুনের ভিতর থেকেই দুই জোড়া ডাগর ডাগর শিশু-চোখ তাকিয়ে আছে ড্যাফনির দিকেই। কী অসহ্য যন্ত্রণা ফুটে বেরুচ্ছে সে চোখের দৃষ্টির ভিতর দিয়ে। ড্যাফনির বুকের ভিতরটায় আগুন জ্বলে উঠল সেই দৃষ্টির দুঃসহ জ্বালায়? সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ছটফট করতে লাগল দেয়াল ধরে। ভয়? না না, ভয়টয় ছুটে গিয়েছে তার।

ওইটুকুন দুটো শিশুকে আবার ভয় কী? আর ওরা যে পুড়ে যাচ্ছে! মরে যাচ্ছে পুড়ে পুড়ে! পুড়তে পুড়তেও ওরা যে মা-মা করে কাতরাচ্ছে ক্রমাগত! কে মা? কে মা? ড্যাফনিও কি মা নয়? অনাস্বাদিত মাতৃ-অনুভূতিতে চোখের পলকে কানায় কানায় ভরে উঠল ড্যাফনির অন্তর।

ড্যাফনি এক দৌড়ে ছুটে গেল সেইখানটায়। হুমড়ি খেয়ে পড়ল সেই জ্বলন্ত দেহ দুটোর উপরে, ‘বাবা! বাবা! বাছারা আমার! ভয় নেই বাবা! ভয় নেই!’

আর্গাইল থেকে ফিরে লেডি কিলবার্ন পাগলের মতো হয়ে গেলেন। ড্যাফনি তার ঘরে নেই। ড্যাফনি কোথাও নেই। তবে? তবে কি সে দরবার-ঘরেই পড়ে আছে? নিশ্চয় ঘোরতর বিপদ ঘটেছে কিছু। এই রাত্রি বেলা, সেই ভূতের ঘরে—

দরজা খুলে তিনি চমকে উঠলেন। ড্যাফনি মেঝেতে পড়ে আছে। তবে না, মরে যায়নি, জ্ঞানহারা। আর চোখে তার বিভীষিকার ছায়া নেই, আছে মমতার অশ্রু। দু-হাত শক্ত করে বুকের উপরে বাঁধা, যেন বাহুর বন্ধনে কোনো ভয়ার্ত শিশুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিচ্ছে ড্যাফনি।

বছর পাঁচেক পরে। ড্যাফনি বিয়ে করেছে। তার সন্তান হয়েছে। যমজ দু-টি ছেলে। ছেলেদুটির চোখের দৃষ্টিতে একটা বিশেষ যেন অর্থ খুঁজে পায় ড্যাফনি। সে দৃষ্টি যেন তাকে অব্যক্ত ভাষায় বলছে, ‘তোমায় আমরা আজ পাইনি মা বলে— পেয়েছিলাম পাঁচ বছর আগে, কিলবার্নের দরবার-ঘরে।’

কিলবার্নের দরবার-ঘরে আর ভূত নেই। নির্ভয়ে সেখানে চলা-ফেরা করে মানুষে, গভীর রাতেও।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *