৭
ভিক্টর আইল্যান্ডের জলসীমার অনেক ভিতরে। দুই মাইলের মতো পশ্চিমে দাঁড়ানো জাহাজ থেকে একটা বড় ধরনের বোট নেমে এলো। তার সাথে নেমে এলো কালো পোশাক পরা দুজন আরোহী। দুজনের একজন আহমদ মুসা, দ্বিতীয়জন নৌকমান্ডার আব্দুল্লাহ আলী।
বোটটি নৌবাহিনীর।
বোটের মাঝখানে দুই লেয়ারের একটা মঞ্চে দুইটি কামান সাজানো।
বোটের ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসল কমান্ডার আব্দুল্লাহ আলী।
তার পেছনের সিটে বসেছে আহমদ মুসা।
স্টার্ট নিল বোট।
নিকষ অন্ধকারের বুক চিরে ছুটে চলল বোটটি।
বোটের সব আলোই নিভানো।
আহমদ মুসা এবং কমান্ডার আলী দুজনের চোখেই নাইট ভিউ গগলস। বোটের কম্পাসের লাল-ইন্ডিকেটর ভিক্টর, আইল্যান্ডের দিকে স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে।.
কম্পাসের ইন্ডিকেটর এবং বোটের মাথা এক প্যারালালে।
বোটের সামনে অন্ধকারের কালো দেয়াল ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।
নাইট ভিউ গগলস-এর দৃষ্টিসীমা খুব বেশি নয়।
‘স্যার, আমাদের বোট এখন সুবর্ণ দ্বীপের মাঝ বরাবর চলছে। সুবর্ণ দ্বীপের এই অবস্থান থেকে রাজধানী দুই দিক থেকেই সমান দূরত্বে।’ আহমদ মুসাকে লক্ষ্য করে ড্রাইভিং সিট থেকে বলল কমান্ডার আব্দুল্লাহ আলী।
‘রাজধানী সুবর্ণ নগরীর সবচেয়ে কাছের ঘাঁটি তোমাদের কোনটা?’ বলল আহমদ মুসা।
‘জেবেল আল কবির থেকে বের হওয়া তালিয়া নদীর একেবারে মোহনার কাছে ছোট একটা পাহাড় আছে। পাহাড়ের পশ্চিম প্রান্তের প্রশস্ত সমতল তট নদীর গা ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এখানে পর্যটন বোটকেন্দ্র অবস্থিত। তার সাথে আছে কিছু দোকানপাট। বোটকেন্দ্রের বোট কোম্পানি, বোট চালক, দোকানদার সব আমাদের লোক। বোটকেন্দ্রের পেছনে যে জনবসতি সেটাও আমাদের। এটাই রাজধানীর সবচেয়ে কাছে।’ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আলী বলল।
‘তাহলে বোট সেখানেই নিয়ে যাও। কিন্তু ঘাঁটিতে আমি উঠব না। বোট কেন্দ্রের আশেপাশে পর্যটকদের জন্য বাংলো বা বাড়ি আছে।’ বলল আহমদ মুসা।
‘আছে স্যার, নদীরে ধার ঘেঁষে এরকম অনেক ভিলা আছে।’ কমান্ডার আব্দুল্লাহ্ আলী বলল।
‘আচ্ছা আব্দুল্লাহ আলী, কর্নেল ওসামার জামিন দেয়ার ডেট কি পাওয়া গেছে?’
‘না, সম্ভবত এখনো ডেট হয়নি। আজকের খবর এখনো দেয়া হয়নি।’ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আলী বলল।
‘প্রতিদিনের ডেভলপমেন্ট কি তোমাকে জানানো হয়?’ জিজ্ঞাসা আহমদ মুসার।
‘নতুন খবর বা তথ্য থাকলে জানানো হয়।’ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আলী বলল।
‘কার কাছ থেকে এত বিস্তারিত সহযোগিতা তোমরা পাচ্ছ?’ বলল আহমদ মুসা।
‘কর্নেল ওসামা ওবায়দুল্লাহ সোর্ন-সন্ত্রাসীদের হাত থেকে যে মেয়েটাকে বাঁচিয়েছিল, সেই মেয়েটাই এই সাহায্য করছে। একবার আপনাকে এই মেয়েটার কথা বলেছিলাম। সে এই দ্বীপের প্রেসিডেন্ট বা রাজার মেয়ে ইভা হেরাল্ড। সে বাপের একমাত্র মেয়ে। শুনেছি খুবই বুদ্ধিমতি এবং উদারমনা।’ কমান্ডার আব্দুল্লাহ আলী বলল।
‘আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর সাহায্য এভাবেই আসে। সে সত্যিই অত্যন্ত মূল্যবান সাহায্য করছে।’ বলল আহমদ মুসা।
‘স্যার, সে মেসেজ করে এবং পরে ওয়ারলেসে কল দিয়ে না জানালে আমরা জানতেই পারতামনা যে, কর্নেল ওসামা কোথায় এবং তাকে নিয়ে তারা এত বড় মরাত্মক পরিকল্পনা করছে। তারপর থেকে সে নিয়মিতই আমাদের ব্রিফ করে যাচ্ছে।’
‘এটা আল্লাহর খাস রহমত। সে প্রেসিডেন্টের মেয়ে হওয়ার কারণেই ওয়ারলেস সুবিধাসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা পাচ্ছে।’
একটু থেমেই আহমদ মুসা আবার বলে উঠল, ‘আচ্ছা আব্দুল্লাহ আলী, তুমি ইভা হেরাল্ডের বাবাকে একবার প্রেসিডেন্ট বলেছ, এর আগে রাজাও বলেছ, ব্যাপার কি?’
হাসল কমান্ডার আব্দুল্লাহ আলী। বলল, ‘তিনি নিজের পার্লামেন্টসহ নিজের লোকদের কাছে রাজা চতুর্থ হেরাল্ড, অন্যদের কাছে প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের যে মহড়া হয়, তাতে তিনি নির্বাচিত বলে সাধারণের কাছে প্রেসিডেন্ট।
হাসল আহমদ মুসাও। বলল, ‘আসলে তিনি রাজাই।’
এই সময় বোট ডান দিকে বড় একটা টার্ন নিল।
‘স্যার, আমরা ঘুরে দক্ষিণ উপকূলের দিকে যাচ্ছি।’ বলল কমান্ডার আব্দুল্লাহ আলী।
আহমদ মুসা কোনো জবাব দিল না।
কারণ তার চোখে তখন নাইট ভিউ গগলস ছিল না।
আহমদ মুসার দৃষ্টি সামনের অন্ধকারে নিবদ্ধ।
বাম চোখ ঘুরিয়ে আহমদ মুসা তাকাল পুবের নিকষ অন্ধকারের দিকে। ঐ অন্ধকারেই তো লুকিয়ে আছে সুবর্ণ দ্বীপ, দখলদারদের ভিক্টর আইল্যান্ড। যে অন্যায় এবং আগ্রাসন বয়ে নিয়ে এসেছে মানুষের জীবনে শতাব্দীর দীর্ঘ অভিশাপ। রক্তস্নাত ঐ দ্বীপের জন-জীবনে কবে ‘ আসবে শান্তির সুবাতাস, কবে মুক্ত হবে মানুষ অভিশাপের কালো কবল থেকে! এর মাঝেও আহমদ মুসার মন খুশিতে ভরে গেল। শত্রুর শীর্ষ ঘর থেকে আল্লাহর সাহায্য আসা শুরু হয়েছে। আল্লাহর সাহায্যই তাদের সম্বল। অপার্থিব এক প্রশান্তির হৃদয় উপচানো স্নিগ্ধ পরশ নামল তার হৃদয় জুড়ে। শান্তিতে চোখ দু’টি তার বুজে আসতে চাইল।
চেয়ারে গা এলিয়ে দিল আহমদ মুসা।
বোটটি আবার টার্ন নিয়েছে পুর্ব দিকে।
ছুটে চলেছে বোটটি তালিয়া নদীর উদ্দেশ্যে।
***
পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষায় থাকলাম।ভালো কিছু জিনিস জানা গেল: ইউক্রেনের আজভ ব্যাটালিয়ন, ডিপ স্টেট এ কিভাবে ডিসিশান ফাইনাল হয় ইত্যাদি..
ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুর দিকে আজব স্টিল মিল থেকে আজব সেনাদের গ্রেফতার করা হয় February, March 2022 , আরেকবার নিউজে আসে তারা চেচেন সেনাদের বিরুদ্ধে শুভ শূকরের চর্বি মিশ্রিত বুলেট ব্যবহারের ভিডিও প্রচারের মাধ্যমে। আমি পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।