৬
প্রিন্সেস এলিজাবেথ আন্না স্বামীর ঘরে ঢুকে দেখল তার স্বামী বেড সাইড সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে। দুহাত দুদিকে ছড়ানো। মুখে-চোখে কিছুটা উদাস বিষণ্ণ ভাব।
প্রিন্সেস এলিজাবেথ আন্না গিয়ে স্বামীর পাশে বসল।
ডান হাতটা সে স্বামীর মাথার চুলে ঢুকিয়ে কিছুটা সমবেদনার সুরে বলল, ‘কিছু ঘটেছে নাকি? তোমাকে বেশ উদাস, বিষণ্ণ দেখাচ্ছে।’
প্রিন্সেস এলিজাবেথ আন্নার স্বামী রাজা প্রিন্স অগাস্টাস ফেয়ারহেয়ার স্ত্রীর কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে সোজা হয়ে বসল। মুখে হাসি টেনে বলল, ‘কি বল আন্না? আমাকে কি সে রকম লাগছে? কিছু ঘটেনি তো?’
রাজা প্রিন্স অগাস্টাস হেরাল্ড ফেয়ারহেয়ার সবার কাছে রাজা চতুর্থ হেরাল্ড হিসেবে খ্যাত।
তার প্রপিতামহ হেরাল্ড ফেয়ারহেয়ার নরওয়ের প্রথম স্বাধীন রাজা ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় হেরাল্ড নাম নিয়ে সিংহাসনে বসেন। আর রাজা ফ্রেডারিক অগাস্টাস সম্ভবত ছিলেন প্রথম হেরাল্ড। তিনি নরওয়ের অলডেন বার্গের একজন প্রতাপশালী ব্যক্তি ছিলেন।
স্বামীর কথা শুনে রানী প্রিন্সেস এলিজাবেথ আন্না মুখ ভার করে বলল, ‘তোমাকে তো নতুন দেখছি না। তোমাকে দেখেই, এমনকি কথা শুনে বুঝতে পারি তুমি কেমন আছ। আমি নিশ্চিত, তুমি কিছু লুকাচ্ছো আমার কাছে।’
রাজা চতুর্থ হেরাল্ডের মুখে গাম্ভীর্য নেমে এলো। সে আবার সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বসল। অনেকটা স্বাগত কন্ঠে বলল, ‘রাজ্যে তো সমস্যা থাকবেই। আমরা একটা বড় সমস্যায় পড়েছি, সেটা তো তুমিও জান।’
‘কোনটা? কোন ঘটনা?’ বলল রানী এলিজাবেথ আন্না।
কর্নেল ওসামাকে নিয়ে ঘটনাটা।’ চতুর্থ হেরাল্ড বলল।
‘হ্যাঁ, সেটা তো জানি। এখন তো সে জুডিশিয়াল কাস্টডিতে। খুবই ভালো হয়েছে ওদের হাত থেকে তাকে জুডিশিয়াল কাস্টডিতে এনে। সবাই আমরা যেটা চেয়েছি, সেটাই হয়েছে। এখন আবার কি সমস্যা হলো?’ বলল রানী এলিজাবেথ আন্না।
বড় সমস্যা ভিক্টর আইল্যান্ডে সোর্ন-এর দুই নম্বর নেতা হের রুডিগার সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছে, এটাও তুমি জানো। কিন্তু হের রুডিগার যে সেখানে নিহত হয়েছে এবং কার হাতে সে নিহত হয়েছে, একথা তারা বলতে পারছে না। অন্যভাবে তারা এর প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছে। সোর্ন আল্টিমেটাম দিয়েছে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কর্নেল ওসামাকে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। এটাই বড় সমস্যা।’ রাজা চতুর্থ হেরাল্ড বলল।
‘এই আল্টিমেটাম এর অর্থ কি? কর্নেল ওসামার কি দোষ? তোমরা তাহলে এখন কি ভাবছ?’ বলল রানী এলিজাবেথ আন্না।
‘কর্নেল ওসামাকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে নয়। আইন অনুসারে আদালত থেকে কর্নেল ওসামার বেল নিয়ে আমরা তাকে ছেড়ে দেব। সোর্ন তাকে ধরে নিয়ে যাবে।’ রাজা চতুর্থ হেরাল্ড বলল।
‘কি সর্বনাশ! বল কি তুমি! তোমরা এটা করতে পারো না, একটা রাষ্ট্র এটা করতে পারে না। একজন বিচারাধীন আসামিকে হত্যা নির্যাতন করার জন্য সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়া যায় না।’
‘আমরা এটা করতে চাইনি আন্না। কিন্তু পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করেছে।’ বলে রাজা চতুর্থ হেরাল্ড মন্ত্রীসভা ও জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল কেন, কিভাবে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে তা সংক্ষেপে তুলে ধরে বলল, ‘সোর্ন-এর সাথে এখন বিরোধ বাধাতে আমরা কেউ চাইনি, তাই আমাদের উপায় ছিল না কর্নেল ওসামাকে ওদের হাতে তুলে না দিয়ে।’
রানী এলিজাবেথ আন্নার চোখ মুখ ভারী হয়ে উঠেছিল। বলল, ‘তোমরা নিজেদের এবং রাষ্ট্রস্বার্থের অস্ত্র দিয়ে মানবতাকে কুরবানি দিয়েছ। ওসামা ছেলেটাকে আমি দেখিনি, চিনি না, জানিও না। কিন্তু সে নিজের জীবন বিপন্ন করে আমার মেয়ের সম্মান ও জীবন বাঁচিয়েছে। আমরা বিনিময়ে তাকে কি দিলাম। আমরা…।’
রানী এলিজাবেথ আন্নার কথা আর এগোতে পারলো না। কান্নায় রুদ্ধ হয়ে গেল তার কন্ঠ
রাজা চতুর্থ হেরাল্ড রানী এলিজাবেথের একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, ‘আমিও কষ্ট পেয়েছি আন্না। কিন্তু আমাদের কষ্ট এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজন এক নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রাজা-রানী হিসেবে বা প্রেসিডেন্ট বা প্রেসিডেন্ট পত্নী হিসেবে রাষ্ট্রের প্রয়োজনকেই আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।
রানী এলিজাবেথ কিছু বলতে যাচ্ছিল। এ সময় ইন্টারকমে তাদের মেয়ে ইভা হেরাল্ডের কথা শোনা গেল।
এলিজাবেথ আন্না ইন্টারকমে অন করে বলল, ‘বল মা।’
বাবা তো আছেন মা, আমি আসছি।’ বলল ইভা হেরাল্ড।
‘ওয়েলকাম। এসো মা।’ বলল রানী এলিজাবেথ আন্না।
ইন্টারকম অফ হয়ে গেল।
ফিরে এসে স্বামীর পাশে না বসে পাশের সোফায় গিয়ে বসল। বলল স্বামীকে লক্ষ্য করে, ‘তোমার মেয়ে আসছে।’
‘‘এ সময় তো তার বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার কথা।’ বলল রাজা চতুর্থ হেরাল্ড।
‘আজ একটু আগেই ফিরেছে। দুই ভাই বোন একসাথেই এসেছে।’ রানী এলিজাবেথ আন্না বলল।
ইভা হেরাল্ড এসে গেছে।
দরজা নক করে বলল, ‘আমি ইভা, আসতে পারি বাবা?’ ইভার মা রানী এলিজাবেথ আন্না উঠে গিয়ে নব ঘুরিয়ে দরজা খুলে বলল, ‘এসো মা।’
ইভা তার মায়ের সাথে প্রবেশ করল ঘরে।
পরনে তখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের পোশাক।
শ্বেতাঙ্গ হলেও তার গায়ের রংটা কাশফুল সাদা নয়, হালকা গোলাপি। হাজারো মেয়ের মধ্যে চোখে পড়ার মতো সে। কিন্তু আজ তার মুখটা মেঘ ঢাকা রোদের মতো, বিষণ্নতায় ভরা।
বাবাকে ‘গুড ইভনিং’ বলে মাকে জড়িয়ে ধরে হাসার চেষ্টা করল। কিন্তু তার হাসিটা বেদনায় ম্লান হয়ে গেল।
‘মা ইভা, কি ব্যাপার! বিশ্ববিদ্যালয়ের পোশাক পাল্টাওনি? মনে হচ্ছে ফ্রেশও হওনি। অসুখ করেনি তো?’ বলল বাবা চতুর্থ হেরাল্ড। তার চোখে মুখে কিছুটা উদ্বেগ।
‘না বাবা, শরীর ভালো আছে। কিন্তু একটা ব্যাপারে মনটা খারাপ হয়ে গেছে বাবা।’ ইভা হেরাল্ড বলল।
‘কি ব্যাপার? কি হয়েছে বলত?’ বলল রাজা চতুর্থ হেরাল্ড।
ইভা হেরাল্ড একটুক্ষণ চুপ থাকল। বলল, ‘বাবা, তোমরা নাকি কর্নেল ওসামাকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিচ্ছ?’
‘তুমি কোথায় শুনলে?’ বলল রাজা চতুর্থ হেরাল্ড।
‘বাবা, তুমি এ রাষ্ট্রের প্রধান। আমি তোমার মেয়ে। তোমাদের মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত জানা আমার পক্ষে কি অসম্ভব?’ ইভা হেরাল্ড বলল।
সাথে সাথেই আবার শুরু করল ইভা হেরাল্ড ‘বাবা, তুমি কি জানো না, তোমার মন্ত্রীসভার সদস্যরা কি জানে না সোর্ন-এর সন্ত্রাসীরা কি করেছে, আর কর্নেল ওসামা কি করেছে? কি করে তারা পারল সেই সোর্ন-এর সন্ত্রাসীদের হাতে কর্নেল ওসামাকে তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে!’ ইভা হেরাল্ড বলল। তার কণ্ঠ কান্নায় ভারি।
‘মা ইভা, তুমি যা বললে মন্ত্রীসভায় সে বিষয়টিও বিবেচনায় আনা হয়েছে। সবাই সোর্ন-এর লোকদের সন্ত্রাস ও আইন অমান্যকারী কাজ সম্পর্কে একমত এবং কর্নেল ওসামার প্রশংসনীয় কাজ সম্পর্কে কারো দ্বিমত নেই। কিন্তু এরপরও তাদের আল্টিমেটাম অনুসারে কর্নেল ওসামাকে তাদের হাত তুলে না দিয়ে উপায় ছিল না। তবে আল্টিমেটামের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে তাকে ওদের হাতে তুলে দিচ্ছি না এবং আমরা সরাসরি তাকে তাদের হাতে তুলেও দেব না। আদালত থেকে বেল নিয়ে কর্নেল ওসামাকে ছেড়ে দেয়া হবে। তারপর তাকে ধরে নিয়ে যাবার দায়িত্ব সোর্ন-এর। আমরা এতটুকুই করতে পেরেছি মা।’ বলল রাজা চতুর্থ হেরাল্ড।
‘বাবা, তোমরা একটা রাষ্ট্র, সন্ত্রাসী সোর্নের কাছে এতটা অসহায়?’ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলল ইভা হেরাল্ড।
‘মা, সোর্ন একটা বিশ্বজোড়া নাজী বর্ণবাদী সংগঠন। ওদের জনবল, অস্ত্রবলের কাছে আমাদের মতো ক্ষুদ্র রাষ্ট্র কিছুই নয়। তার উপর তারা ইউক্রেন থেকে উৎখাত হবার পর বিশ্বের কয়েক স্থানে জড়ো হবার পরিকল্পনা নিয়েছে। তার মধ্যে আমাদের ভিক্টর আইল্যান্ড একটি। যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ওদের হাতে বিসর্জন দিতে হবে। এটা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু এই মুহূর্তে ওদের সাথে সংঘাতে গেলে আমরা পারব না। এজন্যে আমাদের সময় প্রয়োজন। এই সময় নেবার জন্যেই আমরা ওদের দাবি মেনে নিয়ে ওদের সাথে বিরোধ মিটাতে চেয়েছি।’ বলল রাজা চতুর্থ হেরাল্ড।
‘এটা করে কি শেষ রক্ষা হবে বাবা। যেখানে রাষ্ট্রকে ওরা দুর্বল পায়, সেখানেই তারা রাষ্ট্রের মাথায় চেপে বসে। ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত ওদের লোক ছিল। ওদের হাত থেকে বাঁচতে হলে শক্তি বাড়ানো এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা লাভের কোনো বিকল্প নেই। সবার আগে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি প্রয়োজন। বাবা, ভিক্টর আইল্যান্ডের লক্ষ লক্ষ মানুষ তোমাদের শক্তির উৎস হতে পারে। কিন্তু…।’
ইভা হেরাল্ডের কথার মাঝখানেই তার পিতা চতুর্থ হেরাল্ড বলে উঠল, ‘কিন্তু ওরা তো আমাদের এক নম্বর শত্রু।
‘ওদের রাজ্য আমরা দখল করেছি। ওরা শত্রু হওয়া তো স্বাভাবিক। এখন কর্নেল ওসামাকে নিয়ে তোমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছ, তাতে শত্রুতা তো আরো বহুগুণ বাড়বে।’ বলল ইভা হেরাল্ড।
বললাম তো মা, এ সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া আমাদের কোনো উপায় ছিল না। এখন যা করণীয়, সেটা হলো সোর্ন-এর সাহায্যে প্রথমে আমাদের স্থানীয় শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। স্থানীয় শত্রুদের পথ থেকে সরানোর পর আমরা সোর্নকে দ্বীপ থেকে তাড়াব।’ রাজা চতুর্থ হেরাল্ড বলল।
‘স্যরি বাবা, তোমরা উল্টাপথে চলছ। স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে আপোষ করলে তোমরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিরাট শক্তি পেয়ে যেতে এবং সহজে সোর্ন-এর সন্ত্রাসীদের তাড়াতে পারতে।’ বলল ইভা হেরাল্ড।
হাসল চতুর্থ হেরাল্ড। বলল, ‘মা, তুমি একজন অভিজ্ঞ স্ট্র্যাটেজিস্ট-এর মতো কথা বলেছ। এটা হলে খুশি হতাম, কিন্তু এটা হবার নয়।’
‘যিনি এটা সম্ভব করতে পারতেন তাকেই তোমরা শেষ করে দিচ্ছ বাবা।’ কান্নারুদ্ধ কণ্ঠে বলল ইভা হেরাল্ড।
‘দুঃখিত মা, তাকে রক্ষার কোনো উপায় নেই। হয় তাকে সোর্ন- এর হাতে মরতে হবে, নয়তো মরতে হবে আমাদের আদালতের হাতে।’ বলল রাজা চতুর্থ হেরাল্ড।
‘ঈশ্বরের কথা ভুলে যেও না বাবা। তার ন্যায়দণ্ড সর্বব্যাপী। তিনি যা ইচ্ছা করেন আর সেটাই হয়। চোখ মুছে বলল ইভা হেরাল্ড।
‘ঈশ্বরকে ভুলবো কেন মা, আমরা তার সাহায্য চাই।’ বলল চতুর্থ হেরাল্ড।
‘তার সাহায্য চাইলে তার ন্যায়দণ্ড হাতে নিতে হবে।’ ইভা হেরাল্ড বলল।
‘ঠিক মা, কিন্তু আমরা কত দুর্বল সেটা তিনি জানেন।’ বলল চতুর্থ হেরাল্ড।
ইভা হেরাল্ড কিছু বলতে যাচ্ছিল। তার মা রানী এলিজাবেথ আন্না তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘মা ইভা, তুমি ভিতরে ভিতরে এত বড় রাজনীতিক ও ধর্মবেত্তা হয়ে উঠেছ আজ বুঝলাম। থাক, বাপ বেটির লড়াই এখন আর নয়। ঈশ্বরের হাতে সব ছেড়ে দিয়ে চল আমরা নাস্তার টেবিলে যাই। ইভা মা, তুমি তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাস্তার টেবিলে এসো।’
বলে উঠে দাঁড়াল রানী এলিজাবেথ আন্না।
উঠে দাঁড়াল ইভা হেরাল্ড। বলল, ‘বাব্রা আসি।’
রাজা চতুর্থ হেরাল্ড আবার সোফায় গা এলিয়ে দিয়েছে। বলল, ‘মা ইভা, আমাদের রাজবংশে কোনো মেয়ের হাতে রাজদন্ড ওঠেনি। তুমি বোধ হয় তার যোগ্য হয়ে উঠছ। আমি খুব খুশি হয়েছি মা। আরেকটা কথা মা, তোমার মন যা চাইছে, আমাদের মনও তাই চাইছে। ছেলেটা খুব ভালো, আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ মা। কিন্তু মা, আমি তো শুধু তোমার বাবা নই, আমি তো দেশের রাজা। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব আমার হাতে। তোমার বাবা এখানে অসহায় মা।’ থামল রাজা চতুর্থ হেরাল্ড।
শেষে তার কথাগুলো নরম ভারী হয়ে উঠেছিল।
ইভা হেরাল্ড তাকিয়ে ছিল তার বাবার দিকে। তার চোখে-মুখে করুণ বেদনার একটা ছায়া নামল।
সে এগিয়ে এসে বসল পিতার পাশে। বলল, ‘বাবা একটা কথা জিজ্ঞেস করব?’
পিতা চতুর্থ হেরাল্ড মেয়ের পিঠে হাত রেখে বলল, ‘অবশ্যই মা।’
‘সাগর সাইমুম নামে সত্যিই কি কিছু আছে বাবা? এই ছোট্ট দ্বীপে এই রকম কিছু কোথায় থাকবে? সাগর সাইমুমের নামে কর্নেল ওসামাকে বড় আসামি সাজানো হয়নি তো?’ বলল নরম কণ্ঠে ইভা হেরাল্ড।
‘না মা, সাগর সাইমুম সত্য। তবে আমরা এখনো তাদের কোনো ঘাঁটি খুঁজে পাইনি। শুধুমাত্র দুজন কর্মীকে ধরা গেছে, কিন্তু তারা মরে গেছে, কিন্তু মুখ খোলেনি। মাত্র গতকাল আমাদের গোয়েন্দা মনিটারিং ব্যুরো থেকে এই রিপোর্ট পেয়েছি। অবাক হয়েছি রিপোর্টটি পড়ে। বলে রাজা চতুর্থ হেরাল্ড পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে ইভা হেরাল্ডের হাতে দিল।
ইভা হেরাল্ড দ্রুত কাগজে চোখ বুলাল। পড়ে যেটা জানলো সেটা হলো দুইটি ওয়ারলেস কোডের আরবি কথোপকথনে ভিক্টর আইল্যান্ডে ছদ্মনামে বিশটি সাগর সাইমুম ঘাঁটি অপারেট করার কথা বলা হয়েছে। চার ডিজিটের ওয়ারলেস কোড থেকে আট ডিজিটের সাগর সাইমুম বিষয়ে সাংকেতিক ভাষায় অনেক তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে। আট ডিজিটের ওয়ারলেস কোডটি এশিয়ার কোনো একটি দেশের হবে। তার মানে সাগর সাইমুমের সাথে বাইরের খুব বড় রকমের যোগসাজস আছে। সমস্যা দাঁড়িয়েছে ভিক্টর আইল্যান্ডে সক্রিয় চার ডিজিটের ওয়ারলেস কোড চ্যানেলে কথা বলে কোনো জবাব পাওয়া যায় না। তবে কথাগুলো শুধু রেকর্ড হয়েছে, সেখান থেকে এই ইনফরমেশনটুকু পাওয়া গেছে। চার ডিজিট কোডের ওয়ারলেসটির লোকেশনও আইডেন্টিফাই করা যায়নি। এটা একদম লেটেস্ট প্রযুক্তির ওয়্যারলেস। এই ওয়ারলেসের কমিউনিকেশন সবসময় মনিটরিং-এ ধরা পড়ে না। ওয়েভলেনথ সংশ্লিষ্ট বিশেষ প্রযুক্তির কারণে হঠাৎ মনিটরিং-এর আওতায় আসে। ওয়ারলেসের এই প্রযুক্তিটি আমাদের রাষ্ট্রে এখনো পুরোপুরি আসেনি। এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় দিক হলো, এর কনট্যাক্টে আসা সব কোড, সব নাম্বার, সব চ্যানেলের লোকেশন সে আইডেন্টিফাই করতে পারে, কিন্তু তার লোকেশন কেউ আইডেন্টিফাই করতে পারে না।
ইভা হেরাল্ড চার ডিজিট এবং আট ডিজিট-এর ওয়ারলেস কোড ভালো করে দেখে নিয়ে তাকাল পিতার দিকে। বলল, ‘হ্যাঁ বাবা, এটা যদি সাগর সাইমুমের ওয়ারলেস হয়, তাহলে দেখছি ওরা কমিউনিকেশনের সবচেয়ে মডার্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
‘মা, এজন্যে তোমাকে দেখতে দিলাম যে তারা দেখ কতটা এগিয়েছে। যাদের কমিউনিকেশন প্রযুক্তি এত উন্নত তাদের সংগঠন তাহলে কেমন হবে। চিন্তা করতে পার, এই ছোট্ট দ্বীপে তাদের বিশটি ঘাঁটি কাজ করছে! তারা কতটা সংগঠিত এ থেকে বোঝা যায়। এই রিপোর্ট পাওয়ার আগে আমার কল্পনাতেও ছিল না যে তারা এতটা এগিয়েছে।’ বলল রাজা চতুর্থ হেরাল্ড।
মনটা হেসে উঠলো- ইভা হেরাল্ডের। কিন্তু মুখে গাম্ভীর্য টেনে বলল, ‘এদের বৈরী না করে বাবা, এদের সাথে নিলে ভালো করতে।’
‘মা, তুমি একটু আগেও বলেছ এই কথা। কিন্তু এটা সম্ভব নয়। যাদের আমরা পথে বসিয়েছি, তারা আমাদের পথে বসাতে চাইবে, এটাই বাস্তবতা। বলল রাজা চতুর্থ হেরাল্ড।
‘বাবা তুমি এক’শ বছর আগের কথা বলছো এক’শ বছরে অনেক কিছু বদলে যায়। ইভা হেরাল্ড বলল।
‘ইতিহাস বদলায় না মা। ইতিহাস এমন একটা কালের পাতা যা চিরদিন জ্বলজ্বল করে জ্বলেই থাকে।’ বলল রাজা চতুর্থ হেরাল্ড।
ইতিহাস বদলায় না বাবা, কিন্তু ইতিহাসের নতুন পাত্র-পাত্রীরা বদলায়। ইভা হেরাল্ড বলল।
রাজা চতুর্থ হেরাল্ড উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, ‘ঠিক বলেছ মা। তোমার শুভকামনা সত্যি হলে খুশিই হতাম। কিন্তু তা হচ্ছে না।’
ইভা হেরাল্ড কিছু বলতে যাচ্ছিল। তার বাবা তাকে বাধা দিয়ে বলল, ‘আর কথা নয়। চল। তোমার মাকে আবার ফিরে আসতে হলে অনর্থ বাধাবে।’
ইভা হেরাল্ড উঠে দাঁড়িয়েছিল। হাঁটতে হাঁটতে বলল, মা’র অনর্থ বাধানো কিন্তু বাবা অর্থের স্বার্থেই।
‘জোরে বলো না মা। তোমার মা শুনলে তার অনর্থের পরিসর আরো বাড়বে। তাতে আমার বিপদ।’ বলল রাজা চতুর্থ হেরাল্ড।
মুখটিপে হাসলো ইভা হেরাল্ড।
দুজনেই বেরিয়ে এলো ঘর থেকে।
নাস্তার পর বাবা রাজা চতুর্থ হেরাল্ড, তার কক্ষের দিকে চলে গেলে ইভা হেরাল্ড তার ভাই হ্যানস ফেয়ারহেয়ার হেরাল্ডকে বলল, ‘ভাইয়া, তুমি কি আমাকে একটু সময় দেবে?’
‘ঠিক আছে, তুমি যাও। আমি মার সাথে কয়েকটা কথা বলে আসছি।’ বলল হ্যানস ফেয়ারহেয়ার হেরাল্ড।
‘হ্যাঁ, এসো আমি গেলাম। ইভা হেরাল্ড বলল।
ঘরে ফিরে ইভা হেরাল্ড তাড়াতাড়ি নিজের হ্যান্ড ব্যাগ থেকে নোটপ্যাড বের করে বাবার গোয়েন্দা রিপোর্টে সাগর সাইমুমের যে চার ডিজিটের এবং আট ডিজিটের ওয়ারলেস কোড পেয়েছে তা নোট করল।
ঘর থেকে বেরিয়ে এলো ইভা হেরাল্ড তার ড্রইং রুমে।
সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগল তার ভাইয়ার জন্যে।
অলস অবস্থার সুযোগে চিন্তার মিছিল এসে ভিড় জমাল ইভা হেরাল্ডের মাথায়। হঠাৎ কর্নেল ওসামার মুখটা অন্তর জোড়া রূপ নিয়ে তার মনে ভেসে উঠলো। দেহ জুড়ে এক অশরীরী ছোঁয়ায় কেঁপে উঠল ইভা হেরাল্ড। তার সাথে সাথে হৃদয়ে নামল বেদনার প্লাবন। বাবা তো ফাইনাল কথা বলে দিয়েছেন। কর্নেল ওসামাকে সোর্ন-এর হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। কি করবে সে! সে জীবন বিপন্ন করে বাঁচিয়েছে তাকে। কর্নেল ওসামার এই পরিণতির কথা তার লোকরাও জানতে পারবে না। তাদের আগাম জানাতে পারলে তারা হয়তো কিছু করতে পারত। কিন্তু তাদের পাবে কোথায়, কিভাবে? বাবার কাছ থেকে পাওয়া ওয়ারলেস কোড কি কোনো কাজে আসবে?
এ সময় ড্রয়িং রুমের দরজায় নক হলো। চিন্তায় ছেদ নামল ইভা হেরাল্ডের।
‘নিশ্চয়ই ভাইয়া এসেছে। মনের এই স্বগোতোক্তির সাথে উঠে দাঁড়াল ইভা হেরাল্ড।
দরজা খুলে দিলে ভাইয়া হ্যানসসহ আবার প্রবেশ করল ড্রয়িংরুমে।
দুজনেই বসল।
বসেই হ্যানস বলে উঠল, ‘বাবার কাছে গিয়েছিলে, বাবাকে নরম করতে পেরেছো?’
‘নরম করতে পেরেছি। কিন্তু সিদ্ধান্ত পাল্টাতে পারিনি।’ বলল ইভা হেরাল্ড। তার মুখ শুকনো ও বিষণ্ণ।
‘তাহলে নরম হলেন কি করে?’ হ্যানস বলল।
‘শেষে তিনি বলেছেন, আমি যেটা চাই, বাবা হিসেবে তিনিও সেটা চান। কর্নেল ওসামা ছেলেটা ভালো, তিনি তার প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু তিনি শুধু বাবা নন, দেশের রাজা, দেশের প্রেসিডেন্টও। বারা হিসেবে যেটা তিনি চান, রাজা হিসেবে তা তিনি চাইতে পারছেন না। সবার সাথে তিনি রাজা হিসেবে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেটা রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত। রাষ্ট্রের স্বার্থেই আমাকেসহ সবাইকে তা মানতে হবে। বাবা হিসেবে তিনি এখানে অসহায়।’ বলল ইভা হেরাল্ড। কান্না মিশ্রিত ভারি কন্ঠ তার।
হ্যানস ছোট বোনের পিঠে হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ‘বাবা ঠিক বলেছেন। রাষ্ট্রের স্বার্থ তাঁকেই বেশি দেখতে হবে। সোর্ন নাজী বর্ণবাদীদের আন্তর্জাতিক সংগঠন। ওরা যেমন সন্ত্রাসী, হিংস্র, তেমনি সুসংগঠিত ও শক্তিশালী। ভিক্টর আইল্যান্ডের মতো ছোট রাষ্ট্র তাদের সাথে সংঘাতে জড়াতে পারে না।
‘বাবাও এই কথাই বলেছেন। কিন্তু ওসামার কি হবে। কি করবো তার জন্য!’ বলতে বলতে কেঁদে ফেলল ইভা হেরাল্ড। তার দুই গন্ড বেয়ে নামল অশ্রুর ধারা।
বড় ভাই হ্যানস ফেয়ারহেয়ার হেরাল্ডের মুখও বেদনায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল। একমাত্র ছোট বোনটি বাপ-মায়ের কাছে যেমন, তেমনি তার কাছে নয়নের মণি। খুব ভালোবাসে বোনটাকে। তেমনি সে আবার কর্নেল ওসামারও ফ্যান। সেনাবাহিনীতে কর্নেল ওসামার ব্রিলিয়ান্ট রেকর্ড-এর কারণে হ্যানস-এর কাছে সে একজন ‘আইডল’ হয়ে আছে।
‘কেঁদো না ইভা। তার জন্যে কিছু করতে হবে।’ বলল হ্যানস।
দ্রুত মুখ তুলে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কিছু করা যাবে ভাইয়া? কি করা যাবে?’
‘আমি শুনেছি আদালত থেকে বেল নিয়ে কর্নেল ওসামাকে ছেড়ে দেয়া হবে। তারপর সোর্ন তাকে ধরে নিয়ে যাবে। বেল নিয়ে তাকে ছেড়ে দেবার পর এবং সোর্ন-এর লোকরা তাকে ধরার আগের সময়টুকু ব্যবহার করে কর্নেল ওসামাকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করা, যাতে সে পালিয়ে যেতে পারে অথবা সাগর সাইমুমের কাছে খবরটা পৌঁছানো যাতে ওই সময় সাগর সাইমুম তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে পারে।’ বলল হ্যানস হেরাল্ড।
চোখ মুছে লাফ দিয়ে উঠে ইভা হেরাল্ড বলল, ‘ঠিক বলেছ ভাইয়া। এ সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাকে মুক্ত করার এটাই সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।’
‘কিন্তু বোন, তাকে মুক্ত করবে কে? একা তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। সরকারি বাহিনী তাকে ছেড়ে দিয়ে খালাস। তারা তাকে সাহায্য করবে না। তুমি আর আমিও পারবো না। তাহলে কে মুক্ত করবে! এটা পারবে সাগর সাইমুম। কিন্তু তারা তো এ ব্যাপারে কিছুই জানে না। তাদেরকে জানানোর কোনো উপায় তো আমাদের হাতে নেই। তাদের কাউকেই তো আমরা চিনি না, জানি না।’ বলল হ্যানস হেরাল্ড।
ভাবছিল ইভা হেরাল্ড। বলল, ‘ভাইয়া একটা সুযোগ আছে। কিন্তু জানি না সুযোগটা কতখানি কাজ দেবে।’
‘কি সুযোগ? বল।’ উদগ্রীব কণ্ঠে বলল হ্যানস হেরাল্ড।
ইভা হেরাল্ড চার ও আট ডিজিটের কোড়ের কথা বলল। আরো জানাল যে, সাইমুমের এই ওয়্যারলেস কোড আমাদের গোয়েন্দা বিভাগের মনিটরিং এ হঠাৎ ধরা পড়েছে। সাগর সাইমুম কতটা উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে, সেটা বুঝবার জন্য বাবা একটা গোয়েন্দা রিপোর্ট আমাকে দেখতে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে আমি সাইমুমের ওয়ারলেসের কোড দুটি পেয়েছি।’
হ্যানস হেরাল্ড ইভা হেরাল্ডের কথা শোনার সাথে সাথে সোৎসাহে হাততালি দিয়ে বলল, ‘কেল্লা ফতেহ। তুমি মোক্ষম জিনিস পেয়ে গেছ। কোথায় তোমার সেই কোড নাম্বার দেখি।’
‘আনছি ভাইয়া। কিন্তু বাবা বলল, ওদের ওয়ারলেস খুবই অত্যাধুনিক। কিছু জটিলতা আছে।’ বলল ইভা হেরাল্ড।
‘যত অত্যাধুনিক হোক, যতই জটিলতা থাকুক, আমার কাছে সব নস্যি। হ্যানস হেরাল্ড বলল।
‘হ্যাঁ, ইলেট্রনিক কমিউনিকেশন তো তোমার একটা সাবজেক্ট। টেনশনে ভুলেই গিয়েছিলাম। যাচ্ছি ভাইয়া, নিয়ে আসি।
বলে ইভা চলে গেল তার শোবার ঘরে।
আধা মিনিটের মধ্যেই কাগজে লেখা কোডটি তার ভাইয়াকে দিল।
ওয়ারলেস কোড দুটির উপর চোখ বুলিয়েই জোরে একটা অট্টহাসি দিয়ে বলল, ‘কোনো জটিলতা নেই ইভা। এই ওয়ারলেস প্রযুক্তি আমাদের দেশসহ অনেক দেশেই নেই। কিন্তু এই প্রযুক্তিতে নতুন কয়েকটি বৈশিষ্ট্য ও ফাংশান আছে, কিন্তু কোনো জটিলতা নেই। আমি জার্মানীতে এই প্রযুক্তির ওয়ারলেস দেখেছি। আমার ওয়ারলেস দিয়ে এই কোডে সহজে মেসেজ পাঠানো যাবে এবং কথাও বলা যাবে।’
খুশিতে মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল ইভা হেরাল্ডের। বলল, ‘ঈশ্বরকে অশেষ ধন্যবাদ কিন্তু সাগর সাইমুমের ওয়ারলেসের ভাষা নাকি আরবি।’
‘চিন্তার কারণ নেই, ইংরেজিসহ অন্য কিছু ভাষার অপশনও তাতে আছে।’ বলল হ্যানস হেরাল্ড।
‘থ্যাংকস গড। তাহলে এখন কি করণীয় ভাইয়া?’ ইভা হেরাল্ড বলল।
‘আজ রাতেই ওদের সাথে যোগাযোগ করব। প্রথমে তোমার নামে সব জানিয়ে মেসেজ পাঠাব। তারপর তুমি ওদের সাথে কথা বলবে।’ বলল হ্যানস হেরাল্ড।
‘আমাকে কি চিনবে ওরা?’ ইভা হেরাল্ড বলল।
‘তোমাকে কর্নেল ওসামা উদ্ধার করেছিলেন সোর্ন-এর সন্ত্রাসীদের হাত থেকে। তখন সোর্ন-এর চারজন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছিল- এ রিপোর্ট দলের কাছে তাকে অবশ্যই দিতে হয়েছে। এটাই এই ধরনের সংগঠনের নিয়ম। দেখবে তারা খুশি হবে তোমার ওয়ারলেস পেয়ে।’ বলল হ্যানস হেরাল্ড।
কথা শেষ করেই উঠে দাঁড়াল হ্যানস হেরাল্ড। বলল, ‘বাইরে আমার জরুরি কিছু কাজ আছে। রাত আটটার আগে ফিরতে পারব না। চিন্তা করিস না। আজই আমরা ওদের সাথে যোগাযোগ করব।’
‘ধন্যবাদ ভাইয়া।’ বলে ইভা হেরাল্ড উঠে দাঁড়াল।