শাইনিং – ৫০

অধ্যায় ৫০ – বিস্ফোরণ

তারপরের ঘটনাগুলো অতি দ্রুত ঘটে গেল। হ্যালোরান আর ওয়েন্ডি সিঁড়ি বেয়ে ছুটে এল চারতলায়। ওয়েন্ডি ড্যানিকে দেখে চেঁচিয়ে উঠল : “ড্যানি! ড্যানি! হে ঈশ্বর, তোমার তাহলে কিছু হয় নি!”

ও এক ঝটকায় ড্যানিকে কোলে তুলে নিল। ও নিজের ব্যাথার কথাও ভুলে গেছে।

হ্যালোরান ড্যানির চেহারা দেখতে পেল। ওর মনে হল ড্যানি আগের চেয়ে অনেক শুকিয়ে গেছে, আর ওর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ড্যানি ওর দিকে তাকিয়ে আবার চিন্তাটা ছুঁড়ে দিল :

(ডিক আমাদের এখান থেকে পালাতে হবে বয়লার ফাটার আগে)

ডিক মাথা নাড়ল। “ঠিক আছে।”

ও ওয়েন্ডির দিকে তাকাল। “আমাদের এখান থেকে বের হতে হবে। এখনই।”

“আমি কোন গরম কাপড় পড়ি নি, বাইরে–”  

ড্যানি মায়ের কোল থেকে নেমে ছুটে গেল নীচে। এক মিনিট পর ও ফিরে এল, ওর হাতে মায়ের গ্লাভস আর কোট।

“ড্যানি, তোমার বুট পড়তে হবে “ ওয়েন্ডি শুরু করল।

“সময় নেই,” ড্যানি বাধা দিল ওকে। ও হ্যালোরানের দিকে তাকাল আর হঠাৎ করে একটা ছবি ফুটে উঠল হ্যালোরানের মাথার ভেতর। কাঁচের গম্বুজে ঢাকা একটা ঘড়ি, যেটায় বারটা বাজতে মাত্র এক মিনিট বাকি আছে।

“হে ঈশ্বর,” হ্যালোরান বলল। ও এক হাতে ওয়েন্ডিকে পেঁচিয়ে ধরল, আরেক হাতে ড্যানিকে। তারপর সোজা দৌড় দিল সিঁড়ির দিকে।

বেসমেন্টে, যে জিনিসটা আগে জ্যাক টরেন্স ছিল সেটা এগিয়ে গেল বয়লারটার দিকে। বয়লারের মিটারের কাঁটা ২৫০ ছুই ছুই করছে। বয়লারটা প্রচণ্ড জোরে ‘হিস্’ করে উঠল, যেন শত শত সাপ একসাথে ফণা তুলেছে। জিনিসটা বলে উঠল : “না, না, এমন হতে পারে না -”

ওয়েন্ডি, ড্যানি আর হ্যালোরান মাত্র পোর্চে বেরিয়ে এসেছে যখন নীচ থেকে বিস্ফোরণের শব্দটা ভেসে এল। তার ঠিক দশ সেকেন্ড পর একটা গরম বাতাসের হলকা ছুটে এসে ওদের তিনজনকে ছুড়ে দিল সামনের দিকে।

প্রথমে ওভারলুকের জানালাগুলো গুঁড়িয়ে গেল। তারপর আগুনটা আস্তে আস্তে উঠে এল হোটেলের শরীর বেয়ে। আগুন গ্রাস করে নিল হোটেলের লিফটকে, সবগুলো রুম, সবগুলো করিডর। সবশেষে ধসে পড়ল হোটেলের টালি দেয়া ছাদটা।

ওরা তিনজন নিস্তব্ধ হয়ে এতক্ষণ দেখছিল ওভারলুকের মৃত্যু। ওয়েন্ডি এখন সম্বিত ফিরে পেয়ে হ্যালোরানকে জিজ্ঞেস করল, “আমাদের নীচে নামবার কি কোন উপায় আছে?”

হ্যালোরান বলল, “আমি একটা স্নো-মোবিল নিয়ে এসেছি। ওটা নিয়ে আমরা পার্ক রেঞ্জারদের স্টেশন পর্যন্ত যেতে পারব। তারপর ওরাই আমাদের নামাবার ব্যবস্থা করবে।”

ওরা তিনজন ক্লান্ত পায়ে এগিয়ে গেল স্নো-মোবিলটার দিকে।

উপসংহার – গ্রীষ্মকাল

হ্যালোরান কিচেনে ওর শিষ্যরা যে সালাদটা বানিয়েছে সেটা চেখে দেখল। কিছুক্ষণ চিন্তা করে ও জানাল রান্নাটা ঠিকই আছে।

ও এখন রেড অ্যারো লজ নামে একটা জায়গায় কাজ করে। রেঞ্জলি নামে একটা শহরের পাশে। ওয়েন্ডি আর ড্যানিও আপাতত ওর সাথে আছে। ওয়েন্ডির পাঁজরের দু’টো হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল জ্যাক ওকে হাতুড়ি দিয়ে পেটে মারবার পর। ওর শরীর এখনও পুরোপুরি ভাল হয় নি। আর ড্যানি…ড্যানির সাথে কথা বলতেই এখন হ্যালোরান যাচ্ছে।

ড্যানি লজের সুইমিংপুলের পাশে বসে ছিল। ওর পাশে একটা চেয়ারে বসে আছে হ্যালোরান যেয়ে ড্যানির পাশে বসে পড়ল ওয়েন্ডি।

“কি অবস্থা, ডক?”

“ভাল, ডিক।”

“তুমি কি এখনও ঘুমালে বাজে স্বপ্ন দেখ?”

“না,” ওয়েন্ডি ড্যানির হয়ে জবাব দিল। “এখানে আসার পর থেকে ওর আর ঘুমাতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না।”

ওরা সবাই কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকল। তারপর ওয়েন্ডি বলে উঠল : “অ্যাল শকলি যে চাকরিটার কথা বলেছে সেটা আমি নিয়ে নেব ভাবছি।”

হ্যালোরানের মুখে হাসি ফুটে উঠল। “ভাল। আমারও মনে হয়েছে চাকরিটা নিলে তোমাদের দু’জনেরই উপকার হবে।”

ওয়েন্ডি মাথা নাড়ল। “ও আমাদের ম্যারিল্যান্ড নামে একটা শহরে থাকতে বলছে। আমারও শহরটা পছন্দ হয়েছে। খোলামেলা, হাসিখুশি পরিবেশ। ড্যানির জন্যে চমৎকার একটা জায়গা।”

“পুরনো বন্ধুদের আবার ভুলে যেও না।”

“প্রশ্নই আসে না। আর আমি ভুলে গেলেও ড্যানি আমাকে মনে করিয়ে দেবে।”

হ্যালোরান এবার নিশ্চুপ ড্যানির দিকে ফিরল।

“তোমার মাঝে মাঝে বাবার কথা খুব মনে পড়ে, তাই না ডক?”

ড্যানি মাথা নাড়ল। ওর চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল ওর গাল বেয়ে। “মাঝে মাজে আমার মনে হয় বাবার জায়গায় আমি থাকলেই ভাল হত। সবকিছু আসলে আমার দোষ।”

“এমন বলে না বাবা। কিছুই তোমার দোষ ছিল না।” একটু থেমে হ্যালোরান যোগ করল, “কিছুদিন সময় দাও। তোমার সব দুঃখ, সব ব্যাথা আস্তে আস্তে চলে যাবে।”

“তুমি কি ততদিন আমার বন্ধু থাকবে?”

“নিঃসন্দেহে।”

হ্যালোরান জড়িয়ে ধরল ওকে।

***

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *