শরতের গ্রাম

শরতের গ্রাম

ফসল তোলা সারা,
গরু ভেড়ার শীতের সঞ্চয়ও জড়ো করা সারা,
মেশিনগুলো ঝিমোচ্ছে, নিঝুম সারা পাড়া
কৃষকের কোনও কাজ নেই টেলিভিশনের বোতাম টেপা ছাড়া
কমপিউটারের ইঁদুর হাতে নিয়ে বসে থাকা ভদ্র বেড়াল
কোথাও যেতে ইচ্ছে, ঝকঝকে গাড়ি দাঁড়ানো আঙিনায়
প্ৰায় উড়ে কাছে কিংবা দূরে
চিড়িয়াখানায়, যাদুঘরে, গানের নাচের উৎসবে চলে যায়।

শরতের আকাশে মেঘবালিকারা ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে নেমেছে,
পাতায় পাতায় লাল হলুদ রং, ঘাসের বিছানায় টপু টাপ ঝরছে
আপেলে লাল হয়ে আছে মাঠ,
ময়লা তোলা গাড়ির পেটে কয়েকশ আপেল ঢুকে যাবে আসছে বুধবার।
শরত ছাপিয়ে কৃষকের মনে হয় এই বুঝি শীত এল, এই বুঝি
বরফে ঢেকে গেল সমস্ত সবুজ, আকাশ আকাশ অন্ধকার হুমড়ি খেয়ে পড়ল মাথায় আর
না বন্ধু না প্ৰতিবেশি, মোমের আলোয় একা বসে মাখনে ভাজা শুকর খেতে খেতে
ফুরোচ্ছে বোতল বোতল আঙুরের রস।
এত মান, এত যশ তবু এই স্বৰ্গকেও কৃষকের মনে হয় স্বৰ্গ নয়,
স্বৰ্গ অন্য কোথাও, অন্য কোনও সূর্যালোকের দেশে।
ওদিকে অন্য দেশে অন্য কৃষকেরা লাঙলে জমি চাষ করে খালি পায়ে খালি গায়ে রোদে পুড়ে
বাড়ি ফেরে, ক্ষিদে পেটে নুন-ভাত গিলে ছাড়পোকা ভরা চট পেতে শোয়
আকাশের তারার মত দুএকটি স্বপ্ন ঝিকমিক করে নাগালের অনেক দূরে।
ভোর হলে শীর্ণ গরুদেরর তাড়িয়ে নেয় ক্ষেতে,
হাতে হাতে বুনতে হয় ধান, হাতেই কাটতে হয়, বইতে হয়। কাঁধে, ঘামে ভেজা তামাটে কাঁধে,
সারাবছর শস্য ফিলিয়েও দুবেলা পায় না খেতে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *