রঙিন মৃত্যু
“বোকারা সাধারণত একই ভুল বারবার করে একইভাবে। কিন্তু বুদ্ধিমানেরা? তারা একই ভুল করে বিভিন্নভাবে। সুকান্ত তাহলে কোন দলে পড়ছে? নির্ঘুম রাতটা সে এই ভেবেই কাটিয়েছে। ভোরের আলো ফুটতেই বেরিয়ে পড়েছে। সে বোকা না বুদ্ধিমান- এটা থেকে গিয়েছে অমীমাংসিতই। সস্তা প্লাস্টিকের ফ্রেমের পেছন দিকটা খুলে নীহারিকার ছবিটা বের করে শার্টের বুক পকেটে রেখেছে। তারপর অন্ধকার আড়মোড়া ভাঙতে থাকা শহরের অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছে।
আজ যা কিছুই হোক, সত্যিটা বলবে ঠিক করে রেখেছে সে। তার কাছে কোন পেনড্রাইভ নেই। তাকে তার মতো একা ছেড়ে দেওয়া হোক। খুব সহজ ভাষায় কথাগুলো বলবে সে। কিন্তু সহজ কথাগুলো বলাই যেন সব থেকে কঠিন!
সকাল সাতটা তেরোতে বাংলাবাজার পৌঁছাল সুকান্ত। বাবার দোয়া হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে গিয়ে একটা পরোটা আর ডাল অর্ডার করল সে।
যদি না যায় আজকে? কী হবে? নোভার ক্ষতি হবে? হলে হবে। সে তো আর নোভার কোন ক্ষতি করছে না। কত মানুষেরই তো কত রকম ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তাই বলে সব কোল্যাটেরাল ড্যামেজের দায়ভার কি সুকান্ত নেবে নাকি? কোন কিছুর জন্যই সুকান্ত দায়ী না। নিয়তি দায়ী। সব খুনের জন্য নিয়তিই দায়ী।
হোটেলের সামনে একটা বাস এসে দাঁড়ালো।
সুকান্ত এই বাসটাতে চড়েই দূরে হারিয়ে যেতে পারে, অনেক দুরে। যাবে কি?
***
সাতটা ঊনিশ।
আমানুল্লাহ শেভ করছিলেন। মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল। থুতনির কাছে লেগে থাকা শেভিং ফোম নিয়েই তিনি বেরিয়ে এলেন বাথরুম থেকে। ফোন রিসিভ করলেন। ওপাশ থেকে সাইদুর বললেন, “স্যার, আমরা পাঁচজন শাঁখারীবাজারে এসে পড়েছি।”
“গুড। যতীন এন্ড কোং এর দিকে নজর রাখো। আর এর আশেপাশে যতগুলো বিল্ডিং আছে সেগুলোর ওপরে নজর রাখ। বড় ব্যাগ, গিটারের ব্যাগ বা স্যুট কেস অথবা বস্তা টাইপের কিছু নিয়ে কাউকে দেখলেই তাকে নজরে রাখবা। ঠিক আছে?”
“ওকে স্যার।”
“ভালো কথা, এজেন্ট আরাফকে একটু বল যেন ড্রোনটা একবার টেস্ট করিয়ে নেন।”
“জ্বী আচ্ছা স্যার।”
লাইন কেটে গেল।
ভেতরে এক বিষময় অস্থিরতা। থুতনির শেষ দাড়িটুকু চেঁছে ফেলে রেজরটা ধুয়ে ফেললেন। এখন পর্যন্ত এজেন্ট প্রণবের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ভদ্রলোক সেই যে সিলেট গিয়েছেন গত সপ্তাহে, কোন খোঁজ নেই।
সিলেটের ডিআইজিকেও ব্যাপারটা জানানো হয়েছে। ইনভেস্টিগেশন শুরু হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি।
এ কোন বিপদের ভেতরে পড়লেন তিনি!
****
ভীষণ ভিড়। ভীষণ গরম। ভীষণ রোদ।
সব মিলিয়ে শাঁখারীবাজার রোডটা গমগম করছে। এমনিতে চিপা গলি। তার ওপরে রাস্তার দুপাশে পশরা সাজিয়ে বসিয়েছে রথের মেলার দোকানদারেরা। জিলাপী, খাগড়াই, কদমা, বাতাসা, খোরমা, গজা, হালুয়া, মিষ্টি, ভূট্টার খই, মুড়ি বিক্রি হচ্ছে। প্লাস্টিকের খেলনার সাথে সাথে সস্তা কাঠের চেয়ার টেবিলও বিক্রি হচ্ছে। রথ এখনও মন্দিরের সামনে। একটু পরেই লগ্ন শুরু হবে। তিনটা রথ পরপর যাত্রা শুরু করবে। একটা ভগবান বিষ্ণুর, একটা তার ভাই বলভদ্রের আর একটা তার বোন সুভদ্রার। এই পচা গলা পৃথিবীর নীরব দর্শক।
সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। এখন শুধু অপেক্ষা।
সকাল এগারটা তেত্রিশ।
আমানুল্লাহ যতীন এন্ড কোং এর সামনে একটা বাদামওয়ালার বেশ ধরে বসে আছেন। পরিমল থিয়েটারের অঞ্জনদা দুর্দান্ত মেকআপ করে দিয়েছেন। ভিড়ের ভেতরে অনেকেই তার কাছে বাদাম কিনতে আসছে, কিনে নিয়ে চলেও যাচ্ছে। কিন্তু আমানুল্লাহর দৃষ্টি যতীন এন্ড কোং এর ভেতরে। সাজানো বাদ্যযন্ত্রগুলোর সারির আশেপাশে ভিড় নেই আপাতত। কিন্তু বারোটার দিকে কেউ আসবে কিনা এখনো নিশ্চিত না। সামনে একটু বাম দিকে দুইটা বড় বড় বিল্ডিং আছে। বিল্ডিং-এর গায়ে লম্বা করে লেখা রক্সি পেইন্ট। স্নাইপার কি ওই বিল্ডিংটায় আসবে?
মোবাইল ফোন বেজে উঠল। এজেন্ট মল্লিকার ফোন, “স্যার, জিলাপী খাবেন?”
“জিলাপী!”
“হ্যাঁ স্যার। গোলাপ জলে ভেজানো জিলাপী। আমি একটা খাইছি। জোস! নাম হচ্ছে…”
“মল্লিকা, এটা কোন ধরণের ইয়ার্কি? তুমি বুঝতে পারছ কীরকম একটা সিরিয়াস কাজ করতে এসেছি আমরা?”
“সরি স্যার…… স্যার নমস্কার স্যার। ভালো আছেন স্যার?”
“আদাব। মল্লিকা শোন…”
“স্যার আপনাকে না, সৌমেন স্যারকে নমস্কার জানালাম। স্যার আমাকে চিনতেই পারল না।”
আমানুল্লাহর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। সৌমেন ঘোষ এখানে কি করে! হঠাৎ মনে পড়ল জয়েনুদ্দিনের কথা, সামনে নির্বাচন। সুকান্তকে গ্রেপ্তার করার কৃতিত্বটা তাহলে উনি নিতে চান! আমানুল্লাহ বললেন, “মল্লিকা, সৌমেন স্যারকে দেখেছ শিওর?”
“হ্যাঁ স্যার। একদম শিওর। কিন্তু স্যার আমাকে চিনতে পারলেন না কেন বুঝলাম না।”
“স্যারকে ফলো কর। কুইক। স্যার যেন তোমাকে দেখতে না পান। সাবধানে।”
“আচ্ছা স্যার।”
লাইন কেটে গেল। ভিড়ের ভেতরে চরকির মত চোখ বুলিয়ে নিলেন আমানুল্লাহ। এই ভিড়ের ভেতরে আর কে কে আছে কে জানে! গিজ গিজ করছে মানুষ, এর মধ্যে তিনি কাকে চিনবেন? এতটুকু নিশ্চিত যে যেহেতু সৌমেন ঘোষ স্বয়ং এখানে উপস্থিত, তখন এই ভিড়ের ভেতরে পঞ্চাশজন সাদা পোশাকে পুলিশ তো থাকবেই।
“আরাফ?” আমানুল্লাহ মোবাইল ফোনটা কানে ধরে বললেন, “ড্রোনটা দিয়ে তুমি সৌমেন ঘোষকে খুঁজে বের করতে পারবে?”
“এতগুলো মানুষের মধ্যে খুঁজে বের করা মুশকিল। তারপরও আমি ফেস রিকগনিশন প্রটোকল দিয়ে দেখছি কিছু করা যায় কিনা।’
“দেখো তো। দেখে জানাও। তাড়াতাড়ি।”
ড্রোনটাকে উড়তে দেখলেন আমানুল্লাহ। যেভাবেই হোক, সুকান্তকে ধরতেই হবে। যেভাবেই হোক। আবার ফোন তুললেন তিনি, “জয়েনুদ্দীন, ওদিককার অবস্থা কি?”
“মোটামুটি। ভিড় বাড়ছে। পুলিশ ঝামেলা করছে। বলছে এখানে পার্ক করা যাবে না।”
“হুম।”
লাইন কেটে গেল।
একটু পরে এজেন্ট আরাফের ফোন।
“স্যার।”
“হুম আরাফ বল।”
“সৌমেন ঘোষকে দেখিনি, কিন্তু আরেকজনকে দেখেছি যেটা একেবারেই আনএক্সপেক্টেড।”
“কে?”
“অপরেশ পাল।”
“কি বলছ!”
“জ্বী স্যার। অপরেশ পালকে দেখেছি একটু আগে। যতীন এন্ড কোং থেকে দশ গজ দূরে। কিছু করব স্যার?”
“নজরে রাখো। নজরে রাখো। কী হয় আমাকে জানাও।”
অপরেশ পাল এখানে কী করছে? আসন্ন এক অনিশ্চয়তার ঘূর্ণিপাকে একেবারে অসহায় এক মানুষ হিসাবে নিজেকে আবিষ্কার করলেন তিনি। প্রথমে সৌমেন ঘোষ, তারপর অপরেশ পাল- সুকান্তকে এরেস্ট করে নিয়ে বের হতে পারবেন এই সরু রাস্তাটা থেকে? যদি খালি হাতে ফেরেন, সৌমেন ঘোষ তাকে সাসপেন্ড করবেন সন্দেহ নেই।
***
জয়েনুদ্দীন একটা কাভার্ড ভ্যান নিয়ে অপেক্ষা করছেন ঘি লেনের বাঁকের কাছে। ভিড় বাড়ছে। একটু পরে রথ আসলে তাকে সরতেই হবে উপায় নেই। ভ্যাপসা গরমে টপ টপ করে ঘাম পড়ছে কপাল বেয়ে। এতটুকু বাতাস নেই। ঘি আর পোড়া ডালডার গন্ধ ভেসে আসছে।
রুদ্ধ নিঃশ্বাসে অপেক্ষা করছেন জয়েনুদ্দীন। সুকান্তকে গ্রেপ্তার করার সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে তাকে যতীন এন্ড কোং এর সামনে গিয়ে হাজির হতে হবে। তারপর সামনের বাঁক ঘুরে পৌঁছাতে হবে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে। পারবেন তো সব কিছু ঠিক মত করতে? ঢোঁক গিলে গলাটা ভিজিয়ে নিলেন।
এফএম-এ তখন অঞ্জন দত্তের গান বাজছে, ‘….আমি তাদের মত করে তোমাকে ভালোবাসিনি…’
***
দুপুর বারোটা সতেরো। এখনও সুকান্ত আসেনি।
সারি সারি গিটার আর ইউকেলেলের একেবারে শেষ মাথায় এক ভদ্রলোক বসে আছে। মাথায় বেরেট টুপি। ঠোঁটে বেনসন এন্ড হেজেস। চোখে কালো চশমা আর নাকের নিচে পুরু গোঁফ। নেড়ে চেড়ে গিটার দেখছেন।
সৌমেন ঘোষ যতীন এন্ড কোং এর ভেতরেই বসে আছেন। একটু আগে মল্লিকা নামের মাথা মোটা এজেন্টটা অবশ্য তাকে ফলো করছিল। আমানুল্লাহই হয়ত তাকে ফলো করতে বলেছিল। সুকান্তকে এরেস্ট করার পরে ঐ আমানুল্লাহর কিছু একটা করা যাবে। সাসপেন্ড করার মত অনেকগুলো কারণ আছে। এইবার ওই শালার সাসপেন্ড ওর বাপও আটকাতে পারবে না। অনেক কষ্টে একটা নকল গোঁফ, বেরেট ক্যাপ আর একটা সিগারেট দিয়ে নিজেকে পাল্টে ফেলেছেন। মল্লিকাও তাকে ভিড়ের ভেতরে হারিয়ে ফেলেছে।
ওয়াকিটকিতে সৌমেন ঘোষ বললেন, “অল ইউনিট, কপি, সুকান্তকে দেখতে পাওয়ার সাথে সাথে পুরো যতীন এন্ড কোং এর এন্ট্রেন্স ঘিরে ফেলবে। ভ্যান না আসা পর্যন্ত যেন আর কেউ যতীন এন্ড কোং থেকে বের হতে বা ঢুকতে না পারে। ভ্যান আসার পরে কেউ যদি ঝামেলা করে, ফাঁকা গুলি ছুড়বে। আর হ্যাঁ, পুলিশের ভ্যান ছাড়া অন্য কোন ভ্যান যেন এই গলি থেকে বের হতে না পারে। ওভার।”
এখন শুধু শিকারের অপেক্ষা।
***
যতীন এন্ড কোং-এ এক ভারী শরীরের মহিলা ঢুকলেন ঠিক বারোটা আঠাশে। আমানুল্লাহ, ড্রোন, সৌমেন কারোরই দৃষ্টি এড়ালো না। ভদ্রমহিলা একটা নীল রঙের বেহালা চাইলেন।
বারোটা সাঁইত্রিশে সুকান্ত এলো। ছদ্মবেশহীন সাদাসিধে। পায়ে চটি স্যান্ডেল। হাতে কোন ব্যাগ নেই। পরনে সস্তা হাফ হাতা শার্ট আর ছিট কাপড়ের প্যান্ট।
সাথে সাথে ওয়াকিটকিগুলো যেন ফেটে পড়ল। আমানুল্লাহকে এজেন্ট আরাফ ফোন দিয়ে বললেন, “স্যার, সুকান্ত ঢুকেছে।”
“দেখেছি। সৌমেন কোথায়?”
“দেখছি না স্যার। ভিড়ের ভেতরে অনেকক্ষণ খুঁজলাম। নেই।”
সুকান্ত বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে। হা করে গিটারগুলো দেখছে। ‘সাইকোপ্যাথের এটা প্রথম লক্ষণ। সে যা না, তা-ই সবাইকে দেখাবে। লোকটা কত বড় একটা ক্রিমিনাল অথচ ভাব দেখ! যেন কিছু জানে না বোঝে না।’ আমানুল্লাহ ভাবলেন। বাদামের স্তূপের ভেতর থেকে বের করে আনলেন বেরেটা এম নাইন। “জয়েনুদ্দীন, আপনি এগোতে থাকেন।” বললেন মোবাইল ফোনে।
ততক্ষণে ঢোল করতাল বাজিয়ে এগিয়ে আসছে তিনটা রথ। বিষ্ণু, বলভদ্র আর সুভদ্রা আগের মতই নীরব দর্শক।
***
“কপি, ইউনিট এ, তোমরা যতীন এন্ড কোং-এর সামনেটা ঘিরে ফেলো। ইউনিট ভি, তোমরা আস্তে আস্তে এগোও ভ্যান নিয়ে।” সৌমেন বললেন ওয়াকিটকিতে। তারপর এগিয়ে গেলেন ভদ্রমহিলা আর সুকান্তের দিকে। দুজনেই নিচু গলায় কথা বলছে।
***
মহিলাবেশী তৈমুর সুকান্তর পাশে এসে দাঁড়াল। নিচু গলায় বলল, “সুকান্ত, খুব ভদ্র ভাষায় জিনিসটা আমি কয়েকবার চাবো। যদি দিয়ে দাও, তোমাকে আর বিরক্ত করব না। আর যদি না দাও, এই দোকান থেকে বের হওয়ার পদক্ষেপটাই হবে তোমার শেষ পদক্ষেপ। ঠিক আছে? বুঝতে পারছ আমি কি বলছি?”
“আমার কাছে পেনড্রাইভ নেই। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি পেনড্রাইভটা নিয়ে পালিয়ে গিয়েছ?” সুকান্ত বলল।
“ন্যাকামি করবা না একদম। তুমিই ওই লোকটাকে মেরেছ, ওই যে সুভাষকে। তারপর পেনড্রাইভটা নিয়েছ। ভদ্র ভাষায় চাচ্ছি দিয়ে দাও।”
“বললাম তো নেই আমার কাছে।”
“শেষবারের মত বলছি, পেনড্রাইভটা দিয়ে দিলে তোমাকে আর বিরক্ত করা হবে না। তুমি তোমার রাস্তায় চলে যেতে পারবে। পেনড্রাইভটা না দিয়ে শুধু শুধু নিজের জীবন খোয়ানোর মানে নেই। নাকি? দাও।”
“আমার কাছে নেই।”
“আমি তোমাকে বাঁচাতে চেয়েছিলাম সুকান্ত। তুমি নিজেই বাঁচতে চাও না তো আমি কি করব। থাকো গেলাম।”
হাতের বেগুনি বেহালাটা হ্যাঙ্গারে রেখে ভদ্রমহিলা বের হয়ে যেতে গেল।
ঠিক সেই মুহূর্তেই সৌমেন স্বাভাবিক গলায় বলল, “হ্যান্ডস আপ। পুলিশ তোমাদেরকে ঘিরে ফেলেছে। স্মার্টনেস দেখাতে গিয়ে আহত হওয়ার চেষ্টা না করাটাই বেটার।” হাতের রিভলভারটা সুকান্তের দিকে তাক করা।
ঢোল করতালের রঙিন বাজনায় দৃশ্যটা খুব স্বাভাবিক মনে হল।
সুকান্ত হাল ছেড়ে দিল। দু হাত উপরে তুলে নিজেকে সমর্পন করল সৌমেনের কাছে।
***
আমানুল্লাহ যতীন এন্ড কোং-এ ঢোকার মুখেই সাদা পোশাকের পুলিশ তাকে বাঁধা দিল। আমানুল্লাহ নিজের ব্যাজটা দেখানোর সাথে সাথে তাকে বলা হল, “আপনাকে সৌমেন স্যার গাড়িতে বসতে বলেছেন।” মেজাজ চড়ে গেল আমানুল্লাহর। ভিড়ের ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখতে পেলেন, একজন টুপি পরা লোক রিভলভার তাক করে আছে সুকান্তের দিকে। পাশেই এক ভদ্রমহিলা দাঁড়িয়ে আছে।
প্রথম রথটা পার হয়ে গেল। দ্বিতীয়টা আসছে আস্তে আস্তে। ভিড়ের ভেতরে রঙ ছড়াছুড়ি শুরু হয়েছে। আমানুল্লাহর গায়েও রঙ এসে লাগল। কাঁচা সবুজ রঙ।
“দেখেন, আমার ভেতরে যাওয়াটা জরুরী।” আমানুল্লাহ বললেন।
“প্লিজ স্যার, স্টেপ ব্যাক। স্যার আসছেন।” প্রায় ধাক্কা দিয়েই পুলিশটা আমানুল্লাহকে পেছনে ভিড়ের দিকে ঠেলে দিল। ঢাক ঢোলের শব্দে কিছু শোনা যায় না। আমানুল্লাহ মেজাজ হারিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে আরো কি সব বলতে গেলেন, কিছুই বোঝা গেল না। সৌমেন সুকান্ত আর সেই ভদ্রমহিলাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে বের হয়ে আসলেন যতীন এন্ড কোং থেকে।
চোখের সামনে নিজের পরাজয় দেখতে পেলেন আমানুল্লাহ।
হঠাৎ একটা গুলি।
সুকান্তের পাশে দাঁড়ানো সাদা পোশাকের একজন পুলিশ লুটিয়ে পড়ল।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই আরো একটা গুলি, সৌমেন ছিটকে যতীন এন্ড কোং-এর ভেতরে গিয়ে পড়লেন।
স্নাইপার! কোথা থেকে গুলি চলছে? কোন বিল্ডিং থেকে?
“রথ থেকে গুলি চলতেছে। রথ থেকে!” চিৎকার করে কোন একজন পুলিশ অফিসার বললেন।
হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল। বন্ধ হয়ে গেল ঢাক ঢোল আর করতালের বাজনা। চিৎকার চেঁচামেচি আর হুড়োহুড়িতে জায়গাটা নরক গুলজার হয়ে গেল সেকেন্ডের ভেতরে। রাস্তার পাশের দোকানগুলো মানুষের হুড়োহুড়িতে সব এলোমেলো হয়ে গেল।
ভিড়ের ধাক্কায় আমানুল্লাহ আবার যতীন এন্ড কোং-এর সামনে গিয়েই পড়লেন। আরেকটু হলেই ভিড়ের ভেতরে গিয়ে পড়তেন। সিংহের তাড়া খাওয়া পশুর মত মানুষ দিগ্বিদিক ছুটছে। ধূলায় অন্ধকার হয়ে গিয়েছে চারপাশ। রাস্তার পাশের দোকানগুলো লন্ডভন্ড হয়ে রাস্তার সাথে মিশে গিয়েছে। সব মিলিয়ে বিষাক্ত একটা পরিবেশ।
সুকান্তকে ধরে ধাক্কা দিয়ে যতীন এন্ড কোং-এর পাশেই পড়লেন আমানুল্লাহ। তারপর কোনমতে ওকে তুলে নিয়েই ভিড় বাঁচিয়ে দ্রুত হাঁটা শুরু করলেন। এই ভিড়ের ভেতরে পড়া মানেই নিশ্চিত পদদলিত হয়ে মৃত্যু। জয়েনুদ্দীন এই অবস্থায় ভ্যান নিয়ে আসতে পারবে না নিশ্চিত। আর এই মুহূর্তে ফোন বের করাও সম্ভব না। বুকের ভেতরে হৃৎপিণ্ডটা যেন ফেটে বেরিয়ে আসবে।
হঠাৎ একটা বিস্ফোরণ।
সুভদ্রার রথটা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হল। আমানুল্লাহ আর সুকান্ত ছিটকে পাশের একটা মিষ্টির দোকানে গিয়ে পড়লেন।
***
কিচ্ছু শোনা যাচ্ছে না। যেন পানির নিচ থেকে সব কিছু শুনছেন। চাপা। কাঁপা কাঁপা শব্দ। বিস্ফোরণের শব্দে কানে তালা লেগে গিয়েছে। মানুষের ছুটে যাওয়া। এলোপাতাড়ি স্যান্ডেলের বৃষ্টি। বেশ কিছুক্ষণ লাগল নিজেকে সামলে নিতে। তারপরেই মনে হল সুকান্তের কথা। সুকান্ত কই!
ওই তো, পাশেই পড়ে আছে। বাম কাঁধটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। একটু একটু নড়ছে। গোঙাচ্ছে। “দৌড়াতে পারবে?” সুকান্তকে তুলতে তুলতে আমানুল্লাহ বললেন, “এইতো সামনেই ভ্যান আছে, চল।”
পালানোর চেষ্টা করল না সুকান্ত। লক্ষ্মী ছেলের মত মেনে নিল। মাথা নেড়ে জানালো যে সে দৌড়াতে পারবে। “তাড়াতাড়ি চল।” বলেই আমানুল্লাহ সুকান্তের বাম হাতটা নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলেন। এক মুহূর্তের জন্য সেই ভদ্রমহিলার কথা মনে পড়ল। কই সেই মহিলা? আপাতত তার কথা না ভাবলেও চলবে।
উন্মত্ত ভিড়। ফুঁসে ওঠা জনসমুদ্রের পাশ কাটিয়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন আমানুল্লাহ। রঙ আর রক্তে বীভৎস লাগছে দুজনকেই।
ওইতো ভ্যানটা। আরেকটু। ভ্যানে উঠে গেলেই আর কোন সমস্যা নেই। আর একটু। আর একটু।
ভিড়ের ভেতর থেকে গুলি চলল।
আমানুল্লাহ খানিকটা ছিটকে সামনের দিকে লুটিয়ে পড়লেন মুখ থুবড়ে একটু নড়লেন মনে হল? আরেকবার চলল গুলি। আরো একবার। মোট তিনবার। আমানুল্লাহ উঠতে পারলেন না আর।
গুলি চালালো কে?
দেখার সময় নেই। জীবন বাঁচাতে এবার সুকান্ত ছুটল। পাশের একটা চিকন গলির ভেতরে হারিয়ে গেল মুহূর্তের ভেতরে। রক্তাক্ত কাঁধ আর হতবিহবল চাহনির সুকান্ত দ্বিতীয় জীবন পেল এক জীবনেই।
গুলির শব্দ জয়েনুদ্দীনও শুনেছে। তাড়াতাড়ি ভ্যানের গেট খুলে দৌড়ে আমানুল্লাহর কাছে গিয়ে দেখে, নিথর দেহটা ধূলায় লুটিয়ে পড়েছে। দেহটার ওপর দিয়েই মানুষ প্রাণ বাঁচিয়ে ছুটছে। জয়েনুদ্দীন চিৎকার করতে লাগল, আপনারা থামেন, একজন মারা গেছে থামেন আপনারা। কেউ থামল না, মৃতদেহটা পদদলিত হতে থাকল জয়েনুদ্দীনের সামনেই।
ঝড়ের পরে
“আজ দুপুর একটার দিকে শাঁখারীবাজার রোডে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় উৎসব রথ যাত্রায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় তেরোজন পুলিশ কর্মকর্তা নিহতসহ ছাব্বিশজন আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন আরো সতেরোজন সাধারণ মানুষ। আমাদের প্রতিনিধির পাঠানো তথ্য থেকে জানা যায় যে, আনুমানিক দুপুর একটার দিকে তিনটি রথের দ্বিতীয়টিতে বিস্ফোরণ হয়। সে সময় অকুস্থলে উপস্থিত থাকা সিনিয়র পুলিশ অফিসার সৌমেন ঘোষ মৃত্যুবরণ করেন। প্রাথমিক তদন্তে বলা হয়েছে, উগ্র কোন সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এর পেছনে জড়িত থাকতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, বিরোধীদলের কিছু দুষ্কৃতিকারী দেশের ভাবমূর্তি আর শান্তিশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন করতেই এমনটা করেছে। সার্বিক তদন্তের পরে দোষীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলেও তিনি জানান।”
টিভিটা বন্ধ করে নীরু একটু সোজা হয়ে বসার চেষ্টা করল। কাজের বুয়া সুফিয়ার মা সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতেই নীরু ইশারায় জানালো যে সাহায্য লাগবে না। বাম হাতটা সাদা প্লাস্টারে মোড়ানো। গলায় ফোমের গলা-বন্ধনী। বাম হাতটা খুব বাজেভাবে ভেঙে গিয়েছে, আর বাম কাঁধের মাংসপেশীতে টান পড়েছে। ফলে খুব বাজে রকমের একটা মাসল স্প্যাজম হয়েছে। বাম কাঁধটা এখনও অবশ। কথা বলতে গেলে গলায় একটা চিনচিনে ব্যথা।
স্নাইপার রাইফেল নিয়ে সে পজিশন নিয়েছিল তৃতীয়, মানে একেবারে শেষ রথটাতে। প্ল্যান ছিল, তৈমুর বের হয়ে আসার একটু পরেই ধীরে ধীরে চলমান রথটা ঠিক যতীন এন্ড কোং-এর সামনাসামনি অবস্থান করবে। আর সেই মুহূর্তেই সুকান্তকে গুলি করবে নীরু। খুব সহজ হিসাব।
কিন্তু হিসাব জটিল হল, যখন সুকান্ত আর তৈমুরের সাথে আরো একজন লোক বের হয়ে এলো। দুজনের হাতেই হাতকড়া দেখে কিছুক্ষণের জন্য হলেও অবাক হয়েছিল নীরু। তারওপরে দোকানের সামনে এতগুলো লোক ঘিরে দাড়িয়ে আছে। কিছুই বুঝতে পারছিল না সে। সুকান্ত আর তৈমুর কি এরেস্ট হয়ে গেল? কিন্তু পুলিশ কিভাবে জানল?
তারপরও গুলি চালিয়েছিল নীরু। কিন্তু ভিড়ের স্রোত গিয়ে পাড়ে দাঁড়ানো ওই ঘিরে থাকা লোকগুলোর ওপরে লাগল। সাথে সাথে বিশ্ৰী ব্যাপার হল। প্রথম গুলিটা মিস করল নীরু। সুকান্তের পাশে দাঁড়ানো একজন লোকের গায়ে গিয়ে লাগল। প্রথম গুলিটা মিস হতেই এক ভীষণ অস্থিরতা পেয়ে বসল তাকে। সে আরো দুটো গুলি চালালো। কিন্তু কোনটা কার গায়ে লাগল, কিছুই খেয়াল করতে পারল না। গুলি চলছে দেখে ভিড়টা ছন্নছাড়া হয়ে গেল। নীরুর পরিকল্পনা মাঠে মারা গেল। স্নাইপার রাইফেলটা নিয়ে লাফিয়ে পড়বে এমন সময়েই সামনের রথটা বিস্ফোরিত হল।
কেন হল? এটা তো তার পরিকল্পনার ভেতরে ছিল না।
বিস্ফোরণের সাথে সাথে নীরুর রথটার সামনের অংশটুকু ভেঙে পড়ে। নীরু লাফ দিতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গেল একেবারে নিচের রাস্তায়। ধাক্কা, শকওয়েভ আর প্রচণ্ড শব্দে মুহূর্তের জন্য অচেতন হয়ে পড়ল। তারপর নিজেকে আবিষ্কার করে রথের কাষ্ঠল অবকাঠামোর নিচে। কোনরকমে হাতড়ে বের হয়ে আসল সে। চারপাশে তখন এক বন্য পরিস্থিতি।
ভিড়ের সাথে মিশে যাওয়ার সব থেকে ভালো উপায় ভিড় যেদিকে যাচ্ছে, সেদিকেই যাওয়া। নীরুও সেদিকে গেল। স্নাইপার রাইফেলটা কোথায় পড়ে থাকল সেটা আর খোঁজা হয়নি। যদি তার চেতনা না ফিরত সেই সময়ে? কি হত? পুলিশ তাকেসহ তার রাইফেলটা উদ্ধার করত। আর যদি ও দ্বিতীয় রথটাতেই পজিশন নিত? আর বাড়ি ফিরতে হত না। অবশ্য রাইফেলে তার হাতের ছাপ নেই, কিন্তু পুলিশ যদি তদন্ত শুরু করে?
সুফিয়ার মা এক বাটি স্যুপ এনে রাখল সামনের কাঁচের টেবিলটার ওপরে। স্যুপের বাটিটার দিকে তাকিয়ে তৈমুরের কথা মনে পড়ল। মোবাইল ফোনটা তুলে একটা ফোন করল নীরু। ঢাকা মেডিকেলে বাবার এক বন্ধু আছে, ডাঃ ইউনুস হৃদয়। উনি বলতে পারবেন হয়ত।
“ইউনুস আংকেল।”
ওপাশে হৈ চৈ। কোলাহল। তার মধ্যেই সে বলে উঠল, “তৈমুরের কি অবস্থা জানেন? পুলিশ কি ডেডবডিগুলো কাস্টডিতে নিয়েছে নাকি হাসপাতালে এনেছে?”
পরক্ষণেই মনে হল, ইউনুস আংকেলের তো এই ব্যাপারটা জানার কথা না।
“তৈমুর? বুঝতে পারছি না।”
“মানে আজকে একটা কাজে ও শাঁখারীবাজারে গিয়েছিল। ভাবছি ওর আবার কিছু হল কিনা।
“আহহা। তৈমুর ওখানে কি করছিল? পুলিশ তো সব মিলিয়ে অনেকগুলো লাশ এনেছে। যারা আহত হয়েছে তাদেরকে ক্যাজুয়াল্টি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। এর পরে তো আর কিছু জানি না। আমি দেখছি দাঁড়াও।”
“দেখেন না আংকেল প্লিজ।”
“হ্যাঁ আমি দেখছি। তুমি কোথায়? বাইরে-টাইরে বেরিও না একদম। আমি এনশিওর করে তোমাকে জানাচ্ছি।”
লাইনটা কেটে গেল। “স্যুপটা খায়ে ন্যাও মা। ভাল্লাগবেনে।” সুফিয়ার মা বলল। অনিচ্ছাসত্ত্বেও স্যুপের বাটিটা ডানহাতে তুলে নিল নীরু।
“খাওয়ায়ে দেব?” সুফিয়ার মা বলল।
নীরু ডানে বামে মাথা নাড়ল।
“ম্যানেজার সাব জানতে চাছছিল তুমার এই হাল ক্যাবা কইরে হলো? ডাক্তার ডাকতি হবে কিনা জানতি চাছছিল।”
“ডাক্তার ডাকতে হবে না,” মিন মিন করে বলল নীরু।
সব কিছু যেন ঘোলাটে লাগছে নীরুর কাছে। সুকান্ত কি তাহলে সাথে করে পুলিশ এনেছিল? তৈমুরের সাথে সেও নিজেকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার নাটক করেছিল? নাকি? নাহ, এলোমেলো লাগছে। পুরোটাই এলোমেলো লাগছে। সুকান্ত নামের জানোয়ারটা সব কিছু করতে পারে। মাঝখানের রথটাতেও ও-ই হয়ত বোম রেখেছিল। ওই বিস্ফোরণটার জন্য ও-ই দায়ী। কিন্তু ও এখন কোথায়? এত প্রশ্ন। উত্তর নেই একটারও।
আধ ঘণ্টা করে ফোন আসল ডাঃ ইউনুসের।
“হ্যালো, হ্যাঁ নীরু? তৈমুরের লাশ মর্গের তিন নাম্বার ড্রয়ারে রাখা আছে। পোস্টমর্টেম এখনও হয়নি। সন্ধ্যার দিকে হয়ত শুরু হবে। আর…”
লাইন কেটে দিল নীরু। অন্ধকার ঘরটা আরো অন্ধকার হয়ে গেল তার কাছে। অনেক বেশি অন্ধকার। কি হল এটা? কি হল?
বাবা বেঁচে থাকতে বার বার বলেছে, মেয়েছেলের বুদ্ধি থার্ড ক্লাস বুদ্ধি। মেয়েছেলে মানেই ভেজাল। মেয়েছেলে মানেই অভিশাপ। জীবনের অনেকটা সময় নীরু এইসব শুনেই কাটিয়েছে। মা বেঁচে থাকতেও বাবার মুখে সে এগুলো শুনেছে। আর একটু একটু করে নীরুর ভেতরে এক ক্ষোভ আর ঘৃণার জন্ম হয়েছে। ‘মেয়েছেলে’ হয়ে সে-ও একদিন নিজেকে প্রমাণ করবে। বাবাকে দেখাবে মেয়েছেলের বুদ্ধি থার্ড ক্লাস না। রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে সে সেনাবাহিনীতে ভর্তি হয়েছে। রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে সে সামান্য বিষয় নিয়ে তর্কে জড়িয়েছে। সামান্য বিষয় নিয়ে লোকজনের ওপরে চড়াও হয়েছে। নীরুর এই নিজেকে প্রমাণ করার চক্করে দুজন সেনাবাহিনীর সদস্য তাদের জীবন দিয়ে দিয়েছে। আর শেষমেশ, সেনাবাহিনী থেকে তাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সাসপেন্ড করা হয়েছে। নিজেকে প্রমাণ করার অন্ধ চেষ্টায় নিজের অজান্তেই কবে যে একটা অন্ধ রাক্ষসে পরিণত হয়েছে, সে নিজেই খেয়াল করেনি। সবটাই হয়েছে পুরনো সেই ক্ষোভ আর বারবার নিজেকে প্রমাণ করার অসীম আত্মভিমান থেকে।
আজ তৈমুরও কি সেই একই কারণে হারিয়ে গেল?