শব্দজাল – ২

নিজের মনস্তত্ত্বের ভিন্ন এক স্তরে থাকায় ব্যাপারটা প্রথমে ঠিক পুরোপুরি ধরতে পারল না প্রফেসর।

শুরুতে মনে হলো কেউ যেন তার জানালায় মৃদু টোকা দিচ্ছে। প্রথমেই ব্যাপারটা তার সচেতন মস্তিষ্ক অস্বীকার করতে চাইল। কারণ প্রায় নির্জন এই বাড়িতে কেউ তার জানালায় টোকা দেওয়ার কথা নয়। দ্বিতীয়ত, তার বাড়িতে যারাই আছে তাদের কাউকে না ডাকলে দিনের বেলাতেও কেউ তাকে বিরক্ত করে না, রাতের বেলা তো প্রশ্নই আসে না। বাড়িতে যারাই আছে সবাই জানে রাতের এই সময়ে প্রফেসর ধ্যানে বসে, কাজেই এই সময়ে তাকে বিরক্ত করবে এত সাহস কারো নেই।

কিন্তু যান্ত্রিক পিপপিপ শব্দটা প্রথমে ধীরে শুরু হয়ে বাড়তে বাড়তে যেন প্রফেসরের মাথার খুলির ওপরে টোকা মারতে শুরু করল। ব্যাপারটা অগ্রাহ্য করতে করতে যখন অসহ্য পর্যায়ে চলে গেল, চূড়ান্ত বিরক্তির সাথে প্রথমে চোখ খুলল প্রফেসর, তারপর ঘাড়টাকে একপাশে কাত করে ফিরে তাকাল দরজার পাশে লাগানো সুইচবোর্ডের মতো দেখতে বিশেষ বোর্ডটার দিকে– যেখানে সুইচ টিপে সে রুমটাকে সাউন্ড আর লাইটপ্রুফ করেছিল।

যা ভেবেছিল তাই।

বোর্ডটাতে একটা লাল রঙের ছোট লাইট জ্বলছে-নিভছে, আর একটু পরপর পিপপিপ শব্দ করে উঠছে। সেকেন্ডের ভগ্নাংশের ভেতরে প্রফেসর সচেতন মস্তিষ্ক বিরক্তিটাকে যুক্তিতে রূপান্তর করতে সমর্থ হলো। সেইসাথে একাধিক সম্ভাবনা তার ভাবনার দরজায় কড়া নেড়ে গেল। কিন্তু কোনোটাকেই পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত না করে বরং সে সামনে রাখা মোমবাতিটা ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে উঠে দাঁড়াল।

কামরার ভেতরের মৃদু আলোতে দরজার পাশে লাগানো বোর্ডটাতে একটা সুইচ টিপতেই সেখানে একটা ছোট মনিটরের মতো উদয় হলো। সেটার দিকে তাকিয়ে সে দেখতে পেল তার কামরার দরজার ওপাশে রাতে ঘুমানোর পোশাক পরিহিত মশিউর দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরপর সে অস্থির ভঙ্গিতে দরজার অন্য পাশে লাগানো অ্যালার্ম বোর্ডটার বাটনে চাপ দিচ্ছে।

এক হাতে লাইট জ্বেলে অন্য হাতে দরজাটাকে অনলক করে সেটাকে মেলে ধরল প্রফেসর। দরজার অন্য পাশে অস্থির হয়ে নড়া চড়া করতে থাকা মশিউরের এক হাতে ধরে থাকা ল্যান্ড ফোনের এক্সটেনশন রিসিভারটা এই প্রথম প্রফেসরের চোখে পড়ল। সিকিউরিটি বোর্ডের মনিটরে দেখে ব্যাপারটা চোখে পড়েনি তার।

প্রফেসরকে দরজায় উদয় হতে দেখে তড়বড় করে মশিউর একসাথে অনেক কিছু বলতে গিয়ে প্রফেসরের চোখের দিকে দৃষ্টি পড়াতে মুখ হাঁ হয়ে গেল তার কিন্তু কথা বের হলো না। এতে প্রফেসরের জন্য অবশ্য ভালোই হলো। যদিও দরকার ছিল না, তবুও মশিউরকে হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বলে প্রফেসর তার হাত থেকে রিসিভারটা নিয়ে নিজের পকেটে রেখে দিল। অপর প্রান্তে যে-ই থাক সে এখন আর ওদের কথোপকথন শুনতে পাবে না।

প্রফেসর জানে, তার ম্যানেজার মশিউর রাতের বেলা ইমার্জেন্সি বাটন চেপে ফোন হাতে তার সাথে গল্প করতে আসেনি। নিশ্চয়ই খুবই জরুরি কিছু ঘটেছে তা না হলে মশিউরের সাহস নেই রাতের বেলা এই সময়ে তাকে বিরক্ত করার। আর যাই ঘটে থাকুক না কেন, সেটার সাথে অবশ্যই এই ফোনের অপর প্রান্তে থাকা মানুষটার কোনো না কোনো সংযোগ আছে।

“এবার বলো”, প্রফেসর বোঝার চেষ্টা করছে এত রাতে আসলে ঘটলটা কী। ডাইনিংরুমের অপর দরজায় প্রফেসর মশিউরের স্ত্রী রুম্পাকেও সে দেখতে পেল, কোলে তাদের বাচ্চাটাকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনেই প্ৰায় একই ভঙ্গিতে হা করে তার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। এবার প্রফেসরের একটু অস্বস্তি বোধ হলো। একবারের জন্য মনে হলো রুমে ফিরে গিয়ে নিজের চশমাটা পরে আসা দরকার। কিন্তু প্রয়োজন সামলানোটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সব ফালতু চিন্তা বাদ দিয়ে সে জানতে চাইল, “কে কল করেছে?”

“স্যার আপনি বুঝলেন ক্যামতে?” বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার ছেলে মশিউর অত্যন্ত স্মার্ট ছেলে। কিন্তু কোনো ঝামেলা দেখলে সে প্রথমে খুব ঘাবড়ে যায়, আর একবার ঘাবড়ে গেলেই সে মুখ দিয়ে ক্রমাগত আঞ্চলিক শব্দ উৎপাটন করতে থাকে।

“তোমার হাতে থাকা রিসিভারে ছোট্ট একটা লাল বাতি আছে, ফোন রিসিভড লাইনে থাকলে ওটা জ্বলতে থাকে। এবার বলো”, প্রফেসর আগে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছে। “কে কল করেছে?”

“স্যার, আতিকুল আলম স্যার”, শব্দের আগে-পরে দুবার সে স্যার শব্দটা উচ্চারণ করল। এটাও তার নার্ভাসনেসের লক্ষণ। কিন্তু মশিউরের কাছে নামটা শোনা মাত্রই প্রফেসরের ভুরু কুঁচকে উঠল। যে মানুষটাকে সে গত ছয় মাস ধরে একটা বিষয়ে কনভিন্স করার চেষ্টা করতে-করতে ত্যক্তবিরক্ত আর ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ভিন্ন পথ ধরতে যাচ্ছিল, সেই মানুষটাই কি না রাতের বেলা এই সময়ে তাকে ফোন করেছে। ঘটনা কী?

“আতিক স্যার, অনেকক্ষণ ধরে আপনাকে মোবাইলে কল করার চেষ্টা করে না পেয়ে বাধ্য হয়ে ল্যান্ড লাইনে ফোন করেছেন। তাও আমরা লাইনটা পেতাম না যদি না…” মশিউরের গলায় তার স্বাভাবিক সুর ফুটে উঠতে শুরু করেছে। তবে সে আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু প্রফেসরের চাহনি দেখে থেমে গেল।

“তুমি বাইরে অপেক্ষা করো”, বলে সে রুম্পার কোলে বসে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা মশিউরের ছেলেটার দিকে একবার স্নেহসুলভ হাসি দিয়ে পকেট থেকে রিসিভারটা বের করে কানে লাগাল।

যাহা ভবিতব্য, তাহাই কর্তব্য।

কাজেই আগে থেকে অকারণ কল্পনা না করে বরং ঘটনার মুখোমুখি হওয়াই শ্রেয়।

“হ্যালো”, শব্দটা খুব ভারি স্বরে উচ্চারণ করেই সে গলায় একটা হালকা চটুল সুর নিয়ে এলো। পুলিশ ব্যুরো অব স্পেশাল ইনভেস্টিগেশনের হেড, বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম লেজেন্ডদের একজন আতিকুল আলম যত শক্ত মানুষ আর যতই বড় পদের অফিসারই হোক না কেন, সে প্রফেসর জাকারিয়া আহমেদের ছোটবেলার বন্ধুও বটে। “কী! পুলিশ-দারোগারা কি আজকাল মাঝরাতে মানুষদেরকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে অস্থির হয়ে ওঠে নাকি?”

“মাঝরাত?” ব্যস্ততা-অস্থিরতা আর আতঙ্ক ছাড়িয়ে পুলিশ সুপারের গলায় কৌতুকটাই প্রধান হয়ে উঠল। “এখন বুঝি মাঝরাত?” বলেই মৃদু খিকখিক শব্দে হেসে উঠল অপর প্রান্তে থাকা মানুষটা। “ও, তুমি তো আবার ‘আর্লি টু বেড অ্যান্ড আর্লি টু রাইজ’ টাইপের ভালো ছেলে”, গলার সুরের গহিনে লুকিয়ে থাকা জরুরি অবস্থা আর ওপরে ভাসমান কৌতুক তার হাসিটাকে খুব অদ্ভুত করে তুলেছে। “সুখে আছ তো, টের পাও না। যদি পুলিশের চাকরি করতা, বুঝতা ঠেলা কাহাকে বলে!”

“যে মানুষটাকে আমি গত ছয়টা মাস ধরে সামান্য একটা বিষয় নিয়ে কনভিন্স করার চেষ্টা করেও পেরে উঠিনি, সে নিজে থেকে এই মাঝরাতে আমাকে নিশ্চই পুলিশি জীবনের গভীরতম তত্ত্বকথা বোঝানোর জন্য কল করেনি,” আতিকুল আলম যতই দুষ্টামির ছলে কথা বলুক না কেন তার গলার গহিনে লুকিয়ে থাকা অস্থিরতা ঠিকই উঁকি দিচ্ছে রসবোধের ফাঁক গলে।

তার চেয়ে বড় কথা কী এমন হলো যে আতিকুল আলমকেই কল করতে হলো নিজ থেকে, তাও আবার এমন এক রাতে যেদির ঢাকা শহরের প্রতিটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকের ব্যস্ত থাকার কথা।

যত দ্রুত সম্ভব সেই জরুরি ব্যাপারটাই বোঝার চেষ্টা করছে প্রফেসর জাকারিয়া। কারণ আতিকুল আলমের স্কুল রসিকতা যে মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে সামান্য বিলম্বমাত্র সেটা না বোঝার মতো বোকা সে নয়।

কিন্তু তার ঘেরাটোপে ধরা পড়ল না আতিকুল আলম। আবারও সে কথার চক্র তৈরি করল মূল প্রসঙ্গকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য। “বন্ধু, তোমার মতো মানুষ যে বিষয়ে মরিয়া হয়ে আমার মতো লোকের কাছে সাহায্য চাইছে সেই বিষয়কে মোটেই সামান্য বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। আর তাছাড়া…” আতিকুল আলম কথা শেষ না করে ফোনের ওপাশে অন্য কারো সাথে কথা বলতে লাগল।

প্রফেসরের মাথার ভেতরে ঝড় চলছে, ব্যাপার কী? আতিকুল আলম আবারও কথা ঘুরিয়ে দিল কেন। এত রাতে কল করে সে বারবার কথা ঘুরিয়ে চলেছে, তার মানে সে এমন কিছু বলতে চাইছে যা বলতে সে দ্বিধা বোধ করছে। আর না হয়-

“হ্যাঁ বন্ধু, লাইনে আছ?” আতিকুল আলমের গলায় এবার যেন আগের চেয়ে বন্ধুত্বের মাত্রা খানিকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রফেসর অনুমান করল দুজনার ভেতরে এই ধারার কথাবার্তা আরও কিছুক্ষণ চলতে থাকলে এটা আরও গভীর হতে থাকবে। কিন্তু আতিককে তার মতো করে খেলতে দেওয়া চলবে না। আতিকের চক্র ভেঙে তাকেই ভেতরে প্রবেশ করতে হবে।

“আতিক, তুই কি এভাবে কথা ঘোরাতে থাকবি? নাকি যেটা বলার জন্য কল করেছিস সেটা বলবি?” কথাটা বলে প্রফেসর একটু ভাবল, বেশি সরাসরি হয়ে গেল কি ব্যাপারটা? দেখা যাক।

অন্য পাশে আতিকুল আলমের ভারি নিঃশ্বাস শোনা গেল। “বন্ধু, একটা বিষয়ে তোমার সাহায্য দরকার,” বলে আতিকুল আলম আবারও থেমে গেল।

প্রফেসর মনে মনে বলে উঠল, সে আর বলতে! তা না হলে তোমার মতো ঝুনো নারকেল এত সহজে ফাটে। মুখে বলল, “নির্দ্বিধায় বল, কোনো সমস্যা নেই।”

“তুমি তো জানো আগামীকালকের বিশেষ আয়োজন উপলক্ষ্যে এই মুহূর্তে ঢাকায় তিনটি দেশের প্রধানমন্ত্রী অবস্থান করছেন,” আতিকুল আলম অনেকটা নিঃশ্বাস ত্যাগ করার মতো করে বলে উঠল। “কালকের এত বড় আয়োজন, এর মধ্যে হঠাৎ করেই একটা ইর্মাজেন্সি পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে-”

“এর সাথে আমার কী সম্পর্ক?” প্রফেসর খুব অবাক হয়েই জানতে চাইল। সে এখনও বুঝতে পারছে না আতিকুল আলমের বক্তব্য কোনদিকে মোড় নিতে যাচ্ছে।

“আরে, আগে পুরোটা শোনোই না,” এইটুকু বলে আতিকুল আলম বলতে গেলে প্রায় হড়বড় করে টানা কথা বলে চলল কয়েক মিনিট। প্রফেসর নীরবে শুনে গেল তার কথা। টানা অনেকক্ষণ কথা বলে আতিকুল আলম থেমে যোগ করল, “আশা করি তুমি পরিস্থিতি বুঝতে পারছ। আমরা বলতে গেলে প্রায় জিম্মি হয়ে পড়েছি। ব্যাপারটা যদি শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের নিরাপত্তার বাপার হতো, তবুও হয়তো কোনো না কোনোভাবে আমরা সামলে নিতাম কিন্তু এর সাথে জড়িয়ে আছে লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষের জীবন,” এই পর্যন্ত বলে আতিকুল আলম থেমে গিয়ে প্রফেসরকে পুরো বিষয়টা অনুধাবন করার একটু সুযোগ দিল। তারপর প্রায় অসহায়ের মতো বলে উঠল, “আজ সন্ধে থেকে আমরা যখন চোখে প্রায় অন্ধকার দেখছি হঠাৎই আমার মনে হলো এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র মানুষ যে আমাদেরকে সাহায্য করতে পারে, সেটা হলে তুমি। এরকম পরিস্থিতিতে কেউ যদি সামান্য আলোর রেখাও দেখাতে পারে সেটা একমাত্র তুমিই পারবে,” বলে সে থেমে গেল।

আতিকুল আলমের কথাগুলো এখনও পুরোপুরি হজম করে উঠতে পারেনি প্রফেসর জাকারিয়া। সে সম্পূর্ণ ব্যাপারটাকে দুটো পয়েন্ট অব ভিউ থেকে অ্যানালিসিস করার চেষ্টা করছে। কিন্তু পুরো চিত্রটা কিছুতেই ধরা দিচ্ছে না তার চোখে। একটু ভেবে নিয়ে সে বলে উঠল, “তুমি যা বললে ব্যাপারটা যদি সেরকমই হয়… এমনকি,” বলে প্রফেসর আপনাতেই একবার ঢোক গিলল। “এমনকি আমিও যদি কিছু করতে পারি কিংবা যদি না পারি—”

“তুমি পারবে বন্ধু,” প্রফেসরকে কথা শেষ করতে না দিয়ে হুট করে যোগ করে দিল আতিকুল আলম। “আমি জানি তুমি পারবে, তোমাকে পারতেই হবে, শেষ কথাগুলো প্রায় ফিসফিসিয়ে বলে উঠল সে। “আর যদি তুমি কিছু একটা করতে পার কিংবা না পার, তবুও আমি কথা দিচ্ছি তোমার সেই ফাইলটা- যেটা পাওয়ার জন্য তুমি গত কয়টা মাস ধরে ক্রমাগত কষ্ট করে যাচ্ছ— আমি কথা দিচ্ছি সেটা কাল সকাল হওয়ার আগেই তোমার হাতে পৌঁছে যাবে।”

আতিকুল আলমের শেষ কথাটা কানে যেতেই প্রফেসরের মুখে সামান্য দুঃখের হাসি ফুটে উঠল। মনে মনে সে ভাবল, যদি আমি আজ রাতে ব্যর্থ হই তবে সেই ফাইলের কোনো মূল্যই থাকবে না। হয়তোবা তার জীবনেরই কোনো মূল্য থাকবে না, আর ফাইল তো অনেক পরের ব্যাপার। এরকম জরুরি পরিস্থিতিতেও প্রফেসরের মনে গভীর দার্শনিক কথা খেলে গেল।

মানুষের জীবনটাই এমন, এতদিনের আরাধ্য ব্যাপারটা যখন সাধ্যের মধ্যে এলো তখন সেটাকে এমনভাবে পেল যে আরাধ্য জিনিসটাকে এখন মূল্যহীন মনে হচ্ছে।

“ঠিক আছে,” আরেকটু ভেবে নিয়ে বলে উঠল সে। “আমি চেষ্টা করে দেখতে পারি। তবে সেটা করতে হলে আমার কিছু শর্ত আছে। তুমি যা বলছ তা যদি…”

“তোমার সব শর্ত মেনে নেওয়া হবে,” আতিকুল আলমের গলায় ডুবন্ত মানুষের খড়কুটো আঁকড়ে ধরার স্বস্তি। “আর তোমার সেই ফাইলটার ব্যবস্থাও করা হবে। তুমি রেডি হয়ে চলে এসো, তোমার বাড়ির বাউন্ডারির বাইরেই আমাদের একটা গাড়ি অপেক্ষা করেছ। ওখানে আমার এক জুনিয়র অফিসার অপেক্ষা করছে তোমাকে রিসিভ করার জন্য। ও তোমাকে ঘটনা আরও ডিটেইল ব্রিফ তো করবেই, সেইসাথে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সাপোর্টিং ডকুমেন্টও প্রোভাইড করবে।”

প্রফেসর মনে মনে একবার আফসোসের সাথে মাথা নাড়ল। কথায় যে বলে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোককে বিশ্বাস করো না, ব্যাপারটা মোটেই ভুল নয়। যে মানুষ একটা ফাইলের জন্য গত ছয়টা মাস ধরে ওকে ঘোরাচ্ছে, সেই মানুষটা এক রাতে সেই বিশেষ ফাইলটা কীভাবে ম্যানেজ করবে সেটা মোটেই বোধগম্য হওয়ার মতো কোনো ব্যাপার নয়। এর একটাই অর্থ হতে পারে, আতিকুল আলম চাইলে আগেই ওটা ম্যানেজ করে দিতে পারত, কিন্তু দেয়নি। “ঠিক আছে,” বলে প্রফেসর কলটা কেটে দিল।

মাথার ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, মুখে যতই বলুক ‘ঠিক আছে’ মনের ভেতরে সে জানে, আসলে কিছুই ঠিক নেই। মানুষ ঝুঁকি নিয়ে জ্বলন্ত আগুনে হাত দেয়, আর সে হাত দিতে যাচ্ছে ফুটন্ত লাভার ভেতরে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *