১৯
ফাত্তাহ প্রফেসরের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল যেন অনন্তকাল। তারপর দুবার মুখ খুলল কিন্তু কিছু বলল না। বরং আবারও কথা বলে উঠল প্রফেসর। চশমার কাচের ওপাশ থেকে সোজা তাকিয়ে আছে ফাত্তাহর দিকে। মুখ উঁচু, গলা ইস্পাত নয়, ডায়মন্ডের মতো শক্ত।
“আপনি নিজেই যেসব মোটিভের কথা বললেন তার কোনোটাই আমি দেখতে পাচ্ছি না আপনার নিজের ভেতরে,” বলে প্রফেসর তার একটা আঙুল তুলল, “আপনার কথা থেকে যতটুকু আমি বুঝতে পেরেছি, ধর্মীয় অনুভূতি কিংবা গোঁড়ামি কোনোটাই আপনার নেই,” বলে খানিকটা ভারি করল সে গলাটাকে, “দেশাত্মবোধ কিংবা চেতনা সেটাও আপনার মাঝে নেই। বাকি রইল মানুষের সবচেয়ে বড় ড্রাইভিং ফ্যাক্টর তার পরিবার সেটারও কোনো ট্রেস আপনার আছে বলে মনে হলো না আমার,” এই কথাটা বলতেই প্রফেসর খেয়াল করল ফাত্তাহর ভালো চোখের পাতাটা একবারের জন্য মৃদু কেঁপে উঠল। সেটা রাগে নাকি অন্য কোনো কারণে ঠিক বুঝতে পারল না সে। কিন্তু কথা থামাল না, বলেই চলল।
“তাহলে মি. অ্যালবার্ট ফাত্তাহ,” বলে প্রফেসর নিজের মুখটাকে খানিকটা এগিয়ে নিল ফাত্তাহর দিকে। “নাকি বলা উচিত আবদুল্লাহ আল ফাত্তাহ। আপনার এই যে মহান পরিক্রমা, এর পেছনে টাকা ছাড়া আর কোনো কারণ তো আমি অন্তত দেখতে পাচ্ছি না,” বলে প্রফেসর একটু থেমে যোগ করল। “আপনি আমাকে বেশ্যার সাথে তুলনা করেছিলেন। কিন্তু আমি তো আপনার সাথেও একজন দেহপসারিণীর কোনো পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি না,” বলে প্রফেসর হাতের আঙুলগুলো মুঠো করল। “হ্যাঁ, একটা পার্থক্য আছে। একজন দেহপসারিণী অন্তত কারো ক্ষতি করে না। সে নিজের দেহ বিলিয়ে অর্থ উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহের জন্য,” বলে প্রফেসর একটা আঙুল তুলল। “আর আপনার মতো লোকেরা অন্য মানুষের জীবন শেষ করে দিয়ে, এক একটা পরিবার ও সমাজ নষ্ট করে দিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। এইটাই পার্থক্য। বলেন ভুল বললাম কি না আমি?” প্রফেসর সরাসরি তাকিয়ে আছে ফাত্তাহর দিকে। বোঝার চেষ্টা করছে তার প্রতিক্রিয়া।
প্রফেসরের কথা শুনতে শুনতে ফাত্তাহর নষ্ট চোখের শিরাগুলো প্রথমে লাল হয়ে উঠতে শুরু করল। তারপর সেটার প্রতিফলন ঘটতে শুরু করল তার ভালো চোখটাতে। রাগের উত্তাপে যেন দপ করে আগুন ধরে গেল তার ভালো চোখটায়। নিজের দুই হাত মুঠো করে টেবিলের ওপরে রাখল সে, তারপর মুখটাকে দুই হাতের ওপরে রেখে সরাসরি তাকাল প্রফেসরের দিকে। প্রফেসরের মনে হতে লাগল মানুষটার ফরসা চেহারা আর ক্ষতবিক্ষত মুখমণ্ডল থেকে যেন উত্তাপ বের হয়ে পুড়িয়ে দিতে যাচ্ছে তাকে।
“প্রফেসর জাকারিয়া আহমেদ,” বলতে গেলে আক্ষরিক অর্থেই চিবিয়ে চিবিয়ে উচ্চারণ করল সে। “তুমি এই চশমা কেন পরে আছ, বলো তো? কোনো ধরনের পুরুষ মানুষ সরাসরি অন্যের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস রাখে না? নিজের দৃষ্টিকে আড়াল করে রাখে ঘোলা চশমার আড়ালে, অবশ্য—” এই পর্যন্ত বলতেই প্রফেসর মৃদু হেসে উঠল তার কথা শুনে।
কানের এয়ার পিসের ভেতর থেকে আফসারের গলা ভেসে এলো। ‘স্যার লোকটা আপনাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে, প্লিজ সাবধান থাকবেন।‘ আফসারের কথা শুনে মনে মনে হেসে উঠল প্রফেসর। লোকটা তাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে, নাকি সে তাকে-
প্রফেসরের হাসির জবাবে একটা হাত তুলল সে। “এক মিনিট প্রফেসর,” প্রফেসর শব্দটা সে বিচিত্র এক ভঙ্গিতে উচ্চারণ করল। বলে সে মুখের একটা বিশেষ অভিব্যক্তি করল। “আরেকটা প্রশ্ন আছে আমার। আমি এর আগে অনেকবার তোমাদের এই শহরে এসেছি। দেখেছি তোমাদের এই ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় হিজড়া ঘুরে বেড়ায়,” শুব্দগুলো উচ্চারণ করার সময়ে ফাত্তাহর মুখে ফুটে উঠল ভয়ংকর তুচ্ছ করার প্রবণতা। সেই প্রবণতা এতটাই তীব্র যে হঠাৎ শুনলে মনে হবে যেন কথাগুলো আসলে কথা নয়, অনেকটা যেন নোংরা কোনো বস্তু গায়ে লেগে শরিরটা নোংরা হয়ে যাচ্ছে। “এইসব হিজড়াদের নাকি সরকারি কোনো প্রত্যাবাসন নেই। ওরা তোমাদের এই ঢাকা শহরের রাস্তায় রাস্তায় বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে মানুষের কাছ থেকে টাকা নেয়। কখনো হিজড়াদের টাকা নিতে দেখেছ প্রফেসর?” প্রশ্নটা করেই চট করে মুখটাকে প্রফেসরের চেহারা আরও কাছাকাছি নিয়ে এলো।
“হিজড়ারা টাকা নেওয়ার সময়ে মানুষের সথে আজেবাজে কথা কেন বলে জানো? কারণ বাজে কথাটাই ওদের একমাত্র অস্ত্র। শুধুমাত্র কথা দিয়ে ওরা মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় করে নেয়। আমি আসলে ভুল করে তোমাকে বেশ্যাদের সাথে তুলনা করেছিলাম। আমাকে বলো তো প্রফেসর তুমি গত কয়েক ঘণ্টা ধরে এই যে কথা বলেই চলেছ। তুমি কি মনে করো আমি বুঝতে পারি না এর পেছনে কারণটা কী?”
“কী, বলেন তো দেখি?” প্রফেসর খুব শান্তভাবে পাইপে তামাক ভরতে ভরতে জানতে চাইল।
“কারণ তুমিও ওদের মতোই একটা হিজড়া। যার কাছে নিজের কথাই একমাত্র অস্ত্র, একমাত্র মাধ্যম,” বলে সে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে চেয়ারে হেলান দিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে সামান্য হাসির ভঙ্গি করে বলে উঠল, “আসলে শুধু তুমি না, তোমরা পুরো জাতিটাই হিজরা একটা জাতি, তা-না হলে তোমাদের রাজধানী শহরের এই চরম সংকটের সময়ে তোমার মতো একটা হিজড়াকে ঠেলে দেয় আমার কাছ থেকে কথা আদায় করার জন্য! হাহ।”
ফাত্তাহর কথার জবাবে প্রফেসর হেসে উঠল। “আপনি নিজে কি সেটা জানেন?”
“ওহহ, ইয়া প্রফেসর কী সেটা আমি খুব ভালো করেই জানি,” রাগ আর তাচ্ছিল্য তার চেহারা আর কথা থেকে ফুটে-ফুটে বেরোচ্ছে। “তুমি কি জানো কুকুর কীভাবে কুকুর হয়েছে প্রফেসর? লক্ষ লক্ষ বছর আগে উলফ মানে নেকড়ের পালে যেসব নেকড়ে দুর্বল আর ভীতু ধরনের ছিল সেগুলোকে নেকড়ের পাল থেকে বের করে দিত। সেগুলো দলছাড়া হয়ে এদিক-সেদিক ঘুরতে ঘুরতে একসময় মানুষের সাহচর্যে আসত খাবার আর আশ্রয়ের সন্ধানে। আর মানুষেরা সেগুলোকে দিয়ে শিকার করানো থেকে শুরু করে নানা কাজ করাতে শুরু করে। কয়েক লক্ষ বছরের বিবর্তনে এই নেকড়েগুলো জেনারেশনের পর জেনারেশন মানুষের আশ্রয়ে থাকতে থাকতে দুর্বল হয়ে বিবর্তিত হতে হতে কুকুরে পরিণত হয়।”
প্রফেসর কিছু না বলে স্রেফ তাকিয়ে রইল তার দিকে।
“তুমি,” বলে সে নিজের নখবিহীন একটা আঙুল তুলে গোল করে প্রফেসরের চেহারার দিকে দেখাল। “তোমার মতো এরকম পরিষ্কার গোছানো পরিপাটি চেহারার লোকজন দেখলে আমার ওইসব বিবর্তিত কুকুরের কথা মনে পড়ে— যারা নেকড়ে থেকে বিবর্তিত হয়ে কুকুর হয়ে গেছে। তুমি জানো সোসিওলজির একটা থিয়োরি বলে, আমরা যারা বর্তমানে পৃথিবীতে বেঁচে আছি তারা বেশিরভাগই কাপুরুষের বংশধর। কেন জানো? আগের দিনে যখন গোত্র ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা ছিল তখন সমাজের সবচেয়ে সবল আর বীর্যশালী পুরুষেরা যুদ্ধে চলে যেত নিজের গোত্র-সমাজ আর পরিবারকে বাঁচানোর জন্য। আর পেছনে রয়ে যেত দুর্বল-ভীরু-কাপুরুষ আর কুচক্রী পুরুষগুলো। যুদ্ধে বেশিরভাগ মারা পড়ত সামনে থাকা ওইসব সাহসী লোকগুলো আর পেছনে থেকে তাদের বিজয়ের ফল ভোগ করত ওইসব কাপুরষেরা। এরাই পরবর্তীতে গড়ে তুলত নতুন সমাজব্যবস্থা। এরাই পত্নী কিংবা উপপত্নী হিসেবে বেছে নিত সেইসব পুরুষদের রেখে যাওয়া নারীদের। সত্যি কথা হলো এদেরই বংশধর আমরা। তুমি-আমি আমরা সবাই সেই কাপুরুষ আর কুচক্রীদেরই পরবর্তী প্রজন্ম। আমরা মানি আর না মানি এটাই সত্য। আর তুমি প্রফেসর, বলে সে ঘৃণার সাথে হাত নাড়ল।
“তুমি আর তোমার মতো মানুষেরাই হলো সেইসব কাপুরুষদের প্রকৃত প্রতিনিধি। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ, তোমার ওই ফ্যান্সি সুট আর লাল চশমা”।
“কফি কালারের চশমা—” প্রফেসর খানিকটা ফোড়ন কাটল।
“ওই একই,” রাগের সাথে হাত ঝাপটা মারল ফাত্তাহ। প্রফেসরের ফোড়নে আরও রেগে গেছে সে। “তোমার ওই পালিশ করা চুল-দাড়ি, হাতের দামি ঘড়ি দেখে আমার মনে হচ্ছে সুন্দর করে পরিপাটি পোশাক পরানো একটা কুকুর বসে আছে ওখানে। নেকড়ে থেকে বিবর্তিত হয়ে কুকুরে পরিণত হওয়া দুর্বল ভীরু আর কাপুরুষের প্রকৃত প্রতিনিধি। তোমার মতো মানুষেরাই এই সমাজে আমার মতো হিংস্র দানব তৈরি করে। আজকের দিনে পৃথিবীতে তৈরি হওয়া বড় বড় সব টেররিস্ট অর্গানাইজেশন, সমস্ত বড় বড় ক্রিমিনাল- যাদেরকে তোমারা সমাজের-রাষ্ট্রের ক্ষত বলো, এইসব ক্ষত তৈরি হয় তোমাদের মতো সুশ্রী পোশাক পরা মানুষদের অবহেলা, অবজ্ঞা আর তথাকথিত সমাজব্যবস্থার সৃষ্ট চাপের কারণে,” প্রতিটি কথার সাথে সাথে ফাত্তাহর গলা কাঁপছে রাগের সাথে। সেইসাথে প্রতিটি বাক্যের পরের বাক্যে তার গলার স্বর উঁচু থেকে উচ্চতর হচ্ছে।
“তোমাদের এই সমাজ-রাষ্ট্র, তোমাদের আইনকানুন এই সবই হলো ধোঁকা। তোমাদের সংবিধান, তোমাদের বিচার ব্যবস্থা এগুলো সবই শূন্যের ওপরে টিকে আছে। স্রেফ একটা মাত্র বিপদ দেখামাত্রই যারা এসব তৈরি করেছে, তারাই এগুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে সবার আগে পালাবে। আর এই সমাজ, এই আইন, এই গণতন্ত্র নিয়ে এত গর্ব— এত অহংকার তোমাদের, হাহ,” ফাত্তাহর শেষ বাক্যগুলোর সাথে যেন আগুনের হলকা বেরোচ্ছে।
এটুকু বলে একটু থেমে সে আবারও উত্তেজিত হয়ে সামনে এগিয়ে এলো, মুহূর্তের জন্য প্রফেসরের মনে হলো ফাত্তাহ বুঝি তাকে ধরেই ফেলবে কিন্তু সে তা করল না বরং খুব কাছে এসে বলে উঠল, “আজ আমি দুটো বোমা সেট করেছি তোমাদের এই নোংরা আর আজগুবি শহরে। পৃথিবীর সবচেয়ে কলুষিত, নোংরা, দুর্নীতিগ্রস্ত শহরে, আর এতেই তোমাদের পুরো দেশ পাগল হয়ে গেছে। বড়বড় ক্ষমতাওয়ালা লোকজন জীবন নিয়ে মেতে উঠেছে আমার কাছ থেকে দুটো তথ্য জানার জন্য। অথচ সেই ভালোমানুষ আমি গুদামঘরে টর্চার হওয়া আমি, বিনা কারণে জেলে পচতে থাকা আমি, কিংবা নিউইয়র্কে সেই রাতে আত্মহত্যা করতে যাওয়া সেই ভালো মানুষটা যদি সেদিন মরে পচে গলে শেষ হয়ে যেত, না রাষ্ট্র, না এই সভ্য সমাজ, না তোমার মতো সুটেড- বুটেড সুন্দর লোকেরা একবার চোখের পলকও ফেলত না। এই হলো তোমাদের তথাকথিত সভ্যতা, এই হলো তোমাদের তথাকথিত সমাজ,” বলে ফাত্তাহ একটা চাপড় মারল টেবিলের ওপরে, তারপর হেলান দিল চেয়ারে।
মুহূর্তের মধ্যেই আবারও চট করে সোজা হয়ে বলে উঠল, “তোমাদের এই নোংরা পচা-ক্ষয় হয়ে যাওয়া শহরে যদি আমি দুটো বোমা লাগিয়েও থাকি। সেটার জন্য তোমাদের উচিত আমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকা। কারণ তোমাদের এই নোংরা শহরটা আমার কারণে অন্তত একটু হলেও পরিষ্কার হবে। কীসের এত অহংকার তোমাদের? কী করতে পেরেছ তোমরা গত পঞ্চাশ বছরে,” বলে সে আঙুলের কড়ে গুনতে শুরু করল, “দুর্নীতিতে এক নম্বর, নোংরামিতে এক নম্বর, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে, পারোনি সমাজের সব স্তরে সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। তাহলে পেরেছটা কী? এই বালের শহর ধ্বংস হয়ে গেলে তোমাদের উচিত ধ্বংসকারীর কাছে কৃতজ্ঞ থাকা। আমার মনে হয় তোমাদের এই পচা-গলা শহরটা ক্ষয় হয়ে যাওয়াই ভালো। তাহলে অন্তত নতুন করে কিছু একটা গড়ে তুলতে পারবে তোমরা। সিভিল ওয়ারের সময় ধ্বংস হওয়া নিউইয়র্ক যেমন শূন্য থেকে আবারও গড়ে উঠেছে। ঠিক যেভাবে সতেরোশ শতকের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া লন্ডন আবারও শূন্য থেকে গড়ে উঠেছে। আমি যদি পারতাম তোমাদের এই বালের শহর পুরোটা ধসিয়ে দিতাম। বাংলাদেশিদের হৃৎপিণ্ডটাকে মুচড়ে ছিঁড়ে ফেলে দিতে পারলে তবে পুরোপুরি শান্তি হতো আমার,” ফাত্তাহ কথা শেষ করেও যেন তার মুখ চলছেই। ঘনঘন নিঃশ্বাস পড়ছে তার।
“আমরা কী করতে পেরেছি আর পারিনি সে প্রশ্নের জবাব তোমাকে দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই,” একেবারে শান্ত গলায় পাইপে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলে উঠল প্রফেসর। “তবে আমরা যে কিছু একটা করতে পেরেছি সেটার প্রমাণ তুমি নিজে।”
“মানে?”
“মানে হলো এই যে, আমরা যদি কিছুই করতে না পারতাম তবে তোমার মতো লোক আজ এই শহর, এই দেশ নিয়ে এত মাথা ঘামাত না, কী বলো?” ইচ্ছে করেই ফাত্তাহকে তুমি বলা শুরু করেছে প্রফেসর।
ফাত্তাহ আগুনে রাগের সাথে মুখ খুলল কিন্তু কিছু বলল না। তারপর যখন বলতে শুরু করল তার মুখে সেই আগুনেই হলকা বাষ্পে পরিণত হতে শুরু করেছে। “মানুষ রোজ সকালে তার উপাসনার বেদি পরিষ্কার করে আবার ডাস্টবিনও পরিষ্কার করে। কিন্তু তাই বলে ডাস্টবিনকে কখনো পূজা করে না। বেলা শেষে ডাস্টবিন ডাস্টবিনই আর প্রার্থনার বেদি প্রার্থনার বেদিই থাকে। তোমাদের এই জঞ্জালে ভরা শহরটা ওই ডাস্টবিনই থাকবে।”
“আচ্ছা, ব্যাপারটা তাহলে এই, তাই না?” প্রফেসর মৃদু হেসে বলে উঠল। “এই তাহলে তোমার মোটিভ।”
“মানে?” ঠিক একই সুরে একইভাবে জানতে চাইল ফাত্তাহ।
“মানে হলো, এই তাহলে তোমার উদ্দেশ্য, তাই না?” প্রফেসর ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে শান্ত গলায় বলে উঠল— “তোমার সমস্ত রাগ তাহলে এই দেশের মানুষের ওপরে, এই দেশের উন্নতির ওপরে, তোমার সমস্ত রাগ এই শহর এই বাংলাদেশের ওপরে?”
“কী বলতে চাইছ প্রফেসর, ঝেড়ে কাশো,” প্রায় ধমকে উঠল ফাত্তাহ।
“আমি শুরু থেকেই যেটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম এই শহরে বোমা সেট করার পেছনে তোমার মোটিভটা কী? এখানে আসার পেছনে তোমার সাথে কোনো টেররিস্ট অর্গানাইজেশনের সংযোগ পাওয়া যায়নি। কোনো বড় রাষ্ট্রের হয়েও তুমি কাজ করছ না। তবে তোমার মতো একজন লোক এখানে কেন এলো? প্রথমে ভেবেছিলাম এখানে বেশ কয়েকটা বড় বড় ঘটনা ঘটতে চলেছে হয়তো সে কারণেই তুমি একটা বিরাট ফোকাস পাবে এখানে কিছু একটা ঘটালে। পরে আবিষ্কার করলাম না, সেটাও কারণ নয়। টাকা তোমার মোটিভ নয়। তোমার মতো মানুষ টাকার পাগল নয় আমি জানি। টাকার ব্যাপারটা স্রেফ তোমাকে উত্তেজিত করার জন্য বলেছিলাম। যদি এগুলোর কোনোটাই তোমার মোটিভ না হয়, তবে মূল কারণটা কী?”
দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। ফাত্তাহর চোখ সরু হয়ে আসছে ধীরে ধীরে
“এখন বুঝলাম তোমার সমস্ত রাগ এই দেশের ওপরে। এই দেশের মানুষের ওপরে। কেন ফাত্তাহ, এই দেশের মানুষেরা তোমার বাবাকে হত্যা করেছিল এ কারণে?” বলে প্রফেসর হেসে উঠে যোগ করল, “নাকি সঠিকভাবে আমার বলা উচিত, তোমার বাবা এদেশের মানুষকে ভালোবাসত বলে তুমি নিজেই তোমার বাবাকে হত্যা করেছিলে?”
প্রফেসরের প্রথম কথা শুনে ফাত্তাহ চমকে উঠেছিল, পরেরটা শুনে স্রেফ হা হয়ে গেল। দুবার মুখ খুলেও সে কিছু বলল না। বরং একটা হাত তুলে শাসানোর ভঙ্গিতে নাড়ল প্রফেসরকে উদ্দেশ করে।
কিন্তু প্রফেসর থামার মুডে নেই, সে বলেই চলেছে। “আমি মনে হয় ঠিকই বলেছি, তাই না মি. অ্যালবার্ট ফাত্তাহ? তুমি যে দেশভাগ আর রায়টের কথা বলেছ ওটাতে মনে হয় সামান্য মিথ্যে মেশানো ছিল। তোমার বর্ণনা শুনলে যে-কেউ ভাববে তুমি হয়তো সাতচল্লিশের দেশভাগের কথা বলছ। তুমিও দারুণ চালাক লোক। বর্ণনাটা এমনভাবে করেছ যাতে পরিষ্কার কোনো চিত্র ধরা না যায়। আসলে যে দেশভাগের কথা তুমি বলেছিলে সেটা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বর্ণনা ছিল, তাই না?”
ফাত্তাহ এতটাই চমকে গেছে, সে এমনকি অস্বীকার পর্যন্ত করল না। বরং আপনাতেই বলে উঠল, “তুমি সেটা বুঝলে কীভাবে?”
তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে প্রফেসর বলে উঠল, “যশোরের সাগরদাড়ির কাছেই এক গ্রামে থাকত তোমাদের পরিবার, তাই না? আর তোমার বাবা আসলে কোয়াক ডাক্তার কিংবা বৈদ্য ছিল না, সে ছিল সরকারি ডাত্তার। পশ্চিম পাকিস্তানের মানুষ হলেও বাংলাদেশ মানে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। এমনি যুদ্ধের শুরুতে গ্রামের অনেক সাধারণ মানুষকে বাঁচিয়েছিলও সে, তাই না। পশ্চিম পাকিস্তানি হয়েও গোপনে বর্ডার পার হয়ে আসা মুক্তিদেরকে আশ্রয় দিত সে নিজের বাড়িতে। যুদ্ধে আহত মুক্তিদেরকে সাহায্য পর্যন্ত করত।”
ফাত্তাহর মুখটা দেখে মনে হচ্ছে সেটা একটা টাইম বোমা, যেকোনো সময়ে বিস্ফোরিত হবে।
“কিন্তু তোমার মা ছিল ভিন্ন মহিলা, পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি ছিল তার অপরিসীম ভালোবাসা, এ দেশের ঘোর বিরোধী ছিল সে। এদেশের মানুষের প্রতি স্বামীর অপরিসীম ভালোবাসা সে কোনোদিনই মেনে নিতে পারেনি। আর তাই নিজ থেকেই সুযোগ বুঝে একাত্তরের যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি মিলিটারির স্থানীয় ক্যাম্পে সে খবর দিয়ে আসে। কিন্তু তোমার বাবা সেটা টের পেয়ে স্থানীয় মুক্তিদেরকে জানিয়ে দেয়। সে রাতে ওই এলাকাতে পাকিস্তানি বাহিনী আর মুক্তিদের ভেতরে সাংঘাতিক যুদ্ধ হয়। অফিসিয়াল নথিতে সেই যুদ্ধ ‘ব্যাটেল অভ সাগরদাড়ি’ নামে লিপিবদ্ধ আছে এখনও। এমনকি এর কথা স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলে পর্যন্ত উল্লেখ আছে।’
“যুদ্ধে মুক্তিবাহিনী জয়লাভ করার পর তারা যখন ডাত্তারের বাড়িতে পৌঁছায় ততক্ষণে সব শেষ। ডাক্তার আর তার মেয়ের ঠান্ডা মৃতদেহ খুঁজে পায় সবাই। সম্ভবত তুমি আর তোমার মা মিলে তোমার বাবা আর বোনকে হত্যা করে সরে পড়েছিল আগেই। কী হয়েছিল সে রাতে ফাত্তাহ? তোমার মায়ের ক্যাম্পে খবর দেওয়ার ব্যাপারটা টের পেয়ে তাকে জেরা করতে শুরু করে তোমার বাবা। ওই সময়েই মনে হয় তুমি আর তোমার মা মিলে হত্যা করো তাকে। আমার তো মনে হয় দুজনে মিলে আক্রমণ করলেও নিজের বাবাকে আসলে তুমিই খুন করেছিলে। তোমার প্রথম শিকার ছিল আসলে তোমার নিজের পিতাকে। তুমি কীভাবে তোমার পিতাকে হত্যা করেছিলে আমি জানি না, কিন্তু এটা অনুমান করতে পারি ওই আয়া মহিলাকে হত্যার যে বর্ণনা তুমি দিয়েছিলে মনে হয় ওভাবেই তুমি খুন করেছিলে নিজের বাবাকে। তোমার বাবাকে হত্যা করার সময়েই কোনো না কোনোভাবে দুর্ঘটনায় সম্ভবত তোমার মায়ের হাতে মারা পড়ে তোমার বোন।”
ফাত্তাহর চেহারা বোমার মতোই হয়ে আছে কিন্তু সে একেবারে শান্ত স্বরে জানতে চাইল, “কীভাবে প্রফেসর…?”
“আর তোমার বোনের এই মৃত্যু কোনোদিনই মেনে নিতে পারেনি তোমার মা। তাই পশ্চিমে পালিয়ে গেলেও কিছুদিনের ভেতরেই পাগল হয়ে যায় সে। আর তুমি বাধ্য হয়েই সেই ঝড়ের রাতে মায়ের কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে–” ইচ্ছে করেই একটু থামল প্রফেসর। এরপর যা বলবে তাতে বোমার মতোই বিস্ফোরিত হতে পারে ফাত্তাহ। বড় করে দম নিয়ে সে বলেই ফেলল, “তোমার মাকে তুমি নিজেই হত্যা করো, তাই না ফাত্তাহ?”
প্রতিক্রিয়াটা ভয়াবহ হবে, জানত প্রফেসর কিন্তু এতটা ভয়াবহ হবে ভাবতে পারেনি সে। চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে উঠে ঝড়ের মতো এগোল সে প্রফেসরের দিকে। হাতের এক ঝাপটায় প্রফেসরের মুখ থেকে পাইপটা ফেলে দিল। তারপর কলার ধরে শূন্যে তুলে এক ঝাঁকিতে আবার বসিয়ে দিল চেয়ারে। কানের এয়ার পিসের ভেতর থেকে আফসারের চিৎকার ভেসে আসছিল। কোনোমতে নিজেকে সামলে নিয়ে আয়নার দিকে চোখ তুলে সে একটা হাত তুলে চিৎকার করে উঠল, “নো, আফসার কেউ ভেতরে আসবে না। এটা আমার যুদ্ধ, আমিই সামলাব…” বলে প্রথমেই নিজের আলগা হয়ে যাওয়া চশমাটা এক হাতে ঠিক করে ফাত্তাহর শক্তিশালী কবজিটা ধরে ফেলল সে। তারপর দুই ইঞ্চি দূর থেকে ফাত্তাহর রক্তলাল চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে উঠল, “আমি ঠিকই বলেছি তাই না, ফাত্তাহ?”
প্রফেসরের কলার ছেড়ে দিয়ে তাকে এক ধাক্কায় চেয়ারে বসিয়ে দিল ফাত্তাহ। পেছনে দরজাটা নিঃশ্বাসের মতো শব্দ করে খুলে গেল। কিন্তু কেউ ভেতরে এলো না, বরং আবারও শব্দ করে বন্ধ হয়ে গেল। প্রফেসর একবার সেদিকে দেখে নিয়ে আবারও ফিরে তাকাল ফাত্তাহর দিকে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে একটা ধ্বংসস্তূপ বসে আছে চেয়ারে। মাথা নিচের দিকে, দুই কাঁধ ঝুলে পড়েছে। “তোমার বাবা-মা আর বোন, মোট কথা তোমার পরিবারের ধ্বংসের জন্য তুমি সবসময়ই দায়ী মনে করো এই দেশকে। আর তাই—”
পাকিস্তানে যাওয়ার পর মা ঘুমাত না। কখনোই ঘুমাত না,” প্ৰায় অভিযোগের সুরে বলে উঠল ফাত্তাহ। “কখনো কখনো আমাকেও রাতের পর রাত ঘুমাতে দিত না। সবসময় আমার ছোট বোনের নাম ধরে ডাকাডাকি করত। হ্যাঁ, আমার বাপকে আমিই মেরেছিলাম। মা তাকে ধরে ছিল আর আমি… বাবাকে হত্যা করার সময়ে অ্যাকসিডেন্টলি মায়ের হাতেই মারা গিয়েছিল আমার ছোট বোন–” ফাত্তাহর গলার স্বর ঝড়ের পর শান্ত সকালের রোদের মতো স্থির। “শেষ দিকে মা উন্মাদ হয়ে গিয়েছিল বললেও কম বলা হয়। সেদিন ঝড়ের রাতে মায়ের জন্য কিছুই করতে না পেরে এক পর্যায়ে আমি যন্ত্রণায় চিৎকার করতে করতে মাকে—” ফাত্তাহ থেমে গেল। সে কথা বলতে পারছে না।
“সেদিনই আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম কোনোদিন সুযোগ পেলে আমি এর প্রতিশোধ নেবো। না হলে -” আবারও সে থেমে গেছে।
“আর সেজন্যই এত বছর পর সেই সুযোগ পেলে এমন এক সময়ে যখন দেশের মানুষ তাদের দীর্ঘদিনের অগ্রযাত্রার ফল পেতে চলেছে। আর এমনই এক সময় তুমি আঘাত হানার পরিকল্পনা করলে, তাই না?”
ফাত্তাহ এখনও মাথা তোলেনি। সে মাথা নিচু করেই সম্মতিসূচক মাথা নাড়ল।
প্রফেসর টেনে নিজের সুটটা ঠিক করে চেয়ারটা একটু টেনে সামনের দিকে নিয়ে গেল। তার আগে একবার দেখে নিল আয়নার দিকে। “এই দেশের প্রতিটি মানুষ, প্রতিটি অগ্রগতি তোমার জন্য এক ধরনের ইনসাল্ট। কিন্তু ভেবে দেখো কী হবে স্রেফ নিজের ইগোকে সন্তুষ্ট করার জন্য লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষকে হত্যা করে? স্রেফ নিজের মনের আগুন নেভানোর জন্য হাজারো পরিবারে আগুন জ্বালিয়ে কী লাভ হবে তোমার? ইতিহাস সব ভুলে গেছে ফাত্তাহ। তুমি এখনও এমন এক লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছ যে লড়াই শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। যে দুই দেশের লড়াইয়ের আগুন তুমি বুকে পুষে রেখেছ সে লড়াই শেষ হয়ে গেছে বহু আগে। যে দুই দেশ ভাগের কথা ভেবে তুমি লড়ছ ওরা বন্ধু হয়ে গেছে কত আগে,” প্রফেসরের গলায় উত্তেজনার পারদ চড়েই যাচ্ছে চড়েই যাচ্ছে।
“তুমি ভুল আবেগের সাথে লড়াই করছ। ইতিহাস তার ক্ষত যদি সারিয়ে তুলতে চায় তবে তুমি-আমি কেউই নই সাধারণ মানুষের যন্ত্রণাকে অস্ত্র বানিয়ে সেই ক্ষতকে জাগিয়ে তোলার। ফাত্তাহ, আমার কথা শোন, “ফাত্তাহ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টেবিলের দিকে। চোখে পলকও পড়ছে না।
“কোনো লাভ হবে না তোমার এই হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়ে। তুমি যা হারিয়েছ হাজারো পরিবারের মাঝে সেই জিনিসটা তুমি ফিরিয়ে দিতে না পারলেও অন্তত তাদের কাছ থেকে সেটা কেড়ে নিও না প্লিজ প্লিজ,” বলে প্রফেসর বড় করে দম নিয়ে বলল, “ফাত্তাহ, এখনও সময় আছে বলে দাও বোমা দুটো কোথায় রেখেছ,” প্রফেসর এই প্রথমবারের মতো সেই আরাধ্য প্রশ্নটা উচ্চারণ করল যেটার জবাব পাওয়ার জন্য এতটা কষ্টকর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সে রাতের শুরু থেকে।
“প্লিজ ফাত্তাহ, নিজেকে এত মানুষের সব হারানোর কারণ বানিয়ো না। বলে দাও বোমা দুটো কোথায় প্লিজ,” উত্তেজনার চোটে প্রফেসর দাঁড়িয়ে গেছে। “বলো ফাত্তাহ বোমা দুটো কোথায় আছে?”
ফাত্তাহ তার ভেজা চোখ তুলে তাকাল প্রফেসরের দিকে। মুখ খুলেও কিছু না বলে তার মুখটা ঝুলে গেল নিচের দিকে। তারপর বিড়বিড় করে প্রায় শোনাই যায় না এমন সুরে কথা বলতে লাগল সে। ফিসফিসে সুরে সে বিস্তারিত বলে গেল বোমা দুটোর বিস্তারিত অবস্থান সেইসাথে ও দুটোকে ডিঅ্যাকটিভেট করার কোড।
ফাত্তাহর বক্তব্য শেষ হতেই কাঁচের ওপাশে থাকা আফসারের দিকে হাতের ইশারা করল সে। কয়েক সেকেন্ডের ভেতরে রুমে প্রবেশ করল আফসার। ফাত্তাহর বলা বোমা দুটোর ব্যাপারে বিস্তারিত আফসারকে বলেই স্থাণুর মতো চেয়ারে বসে পড়ল প্রফেসর। কয়েক সেকেন্ডে কী হচ্ছে বুঝতেই পারল না। স্রেফ রুমাল বের করে মুখ মুছল সে দুবার। চোখে ঝাপসা দেখছে। একজন কমান্ডো এক হাতে ধরে তাকে রুমের বাইরে নিয়ে এলো।
সেখানে পুরো টিমের সবাই অপেক্ষা করছে। প্রফেসরকে বেরিয়ে আসতে দেখে একে একে উঠে দাঁড়াল সবাই, হাততালিতে ফেটে পড়ল পুরো রুম। অবশেষে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছে সে। বের করতে পেরেছে বোমা দুটো কোথায় আছে।