১০
বিশেষ ইন্টোরোগেশন রুমগুলো ডিজাইন করা হয় অনেক কিছু মাথায় রেখে। দেওয়ালের রঙ, রুমের আকৃতি, একমুখী কাচের অবস্থান, রুমের ভেতরে থাকা একেবারেই অল্প আসবাব এগুলোর রঙ আকৃতি ধরন সবই এমনভাবে সাজানো হয়ে থাকে যেন অপরাধীর ওপরে এক ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো রুমের আলোর পরিমাণ এবং আলোর উৎসের অবস্থান, সবকিছুই সাজানো থাকে একটা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে। অপরাধী কিংবা সন্দেহভাজনের মনের ওপরে চাপ সৃষ্টি করা।
যদিও বাইরে থেকে রুমটাকে বেশ ভালোভাবে অবলোকন করেই প্রফেসর ভেতরে ঢুকেছে তবুও ভেতরে ঢুকেই আগে সে একবার চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিল। দুনিয়ার আর দশটা ইন্টারোগেশন রুম থেকে একেবারেই আলাদা কিছু নয়। তবে রুমটার স্ট্যান্ডার্ড বিশ্বের যেকোনো উন্নত দেশের ইন্টারোগেশন রুমের সাথে খাপ খাওয়ানোর মতো। আট বাই দশ ফিট কামরা একেবারে স্কয়ার আকৃতির, দেওয়ালে ফ্যাকাশে সাদা রং করা। উচ্চতাও আর দশটা সাধারণ রুম থেকে আলাদা। রুমের ভেতরে কিছুই নেই বলতে গেলে ঠিক মাঝখানে থাকা মেঝের সাথে ফিক্সড করা একটা স্টিলের টেবিল আর তার দুপাশে দুটো চেয়ার বাদে। টেবিলটার তিন-চার ফিট ওপর থেকে একটা হুড দেওয়া এলইডি বাল্ব থেকে ঘোলাটে আলো ছড়াচ্ছে। আলোটা এমন যে রুমের প্রতিটি কোণা পরিষ্কার বিদ্যমান কিন্তু রুমটাকে খুব আলোকোজ্জ্বল বলা যাবে না কোনোভাবেই।
কামরার সাদা আলোয় টেবিলের ওপাশে বসে থাকা ধূসর রঙের পুলিশ কভারঅল পরা মানুষটাকে পরিষ্কার দেখতে পেল প্রফেসর। পেছনের দরজাটা ঠিক আগের মতোই নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো শব্দ করে বন্ধ হয়ে গেল।
কাঠের বাক্সটা হাতে নিয়ে রুমের মাঝখানে থাকা টেবিলটার কাছে চলে গেল প্রফেসর। স্টিলের চেয়ারটাকে সামান্য টেনে নিয়ে বসে পড়ল ওটাতে। হাতের বাক্সটাকে টেবিলের ওপরে রেখে সরাসরি তাকাল সামনে উপবিষ্ট মানুষটার দিকে।
স্টিলের চেয়ারটাতে মানুষটা এমনভাবে এক পায়ের ওপরে অন্য পা তুলে বসে আছে যেন বিকেলে নিজের বাড়ির লনে বসে চা পান করছে। চওড়া কাঁধ আর পেশিবহুল হাত দুটো অত্যন্ত বলশালী একটা দেহের ইঙ্গিত দেয়। একটা হাত হাঁটুর ওপরে রাখা, সেটা দিয়ে সে ক্রমাগত তবলা বাজাচ্ছে। অন্য হাতটা টেবিলের এক প্রান্তে থাকা একটা লোহার রিঙের সাথে হ্যান্ড-কাফ দিয়ে আটকানো, যে কারণে শরীরের একটা অংশ একটু ঝুঁকে আছে একপাশে। এটাও ইচ্ছে করেই করা হয়ে থাকে যাতে অপরাধী বসলেও শারীরিকভাবে সামান্য ডিজকমফোর্ট জোনে থাকে।
কিন্তু মানুষটার শারীরিক ভঙ্গি দেখে প্রফেসর অনুমান করল ইন্টারোগেশন রুমের প্রাথমিক যে ব্যাপারগুলো সন্দেহভাজনের মানসিকতার ওপরে প্রভাব সৃষ্টি করে, এই লোক সেগুলো খুব ভালোভাবেই জানে। যে কারণে এসব ব্যাপারগুলো তার ওপরে কোনো প্রভাবই সৃষ্টি করতে পারেনি। প্রফেসরকে বসতে দেখে সে এক পায়ের ওপর থেকে অন্য পা নামিয়ে সামান্য এগিয়ে এলো প্রফেসরের দিকে। এই প্রথমবারের মতো মানুষটার চেহারা সামনে থেকে পরিষ্কার দেখতে পেল প্রফেসর জাকারিয়া। না চাইতেও সামান্য অস্বস্তিকর একটা ঢোক আপনাতেই গলা দিয়ে নেমে গেল তার।
প্রফেসর আন্দাজ করল মানুষটার বয়স তার চেয়ে খুব বেশি হবে না। একেবারে নিখুঁতভাবে কামানো গোল একটা মাথা, চওড়া ফরসা কপালের একপাশে ছোট দুটো স্টিকি ব্যান্ডেজ লাগানো সম্ভবত সন্ধ্যায় এয়ারপোর্টে ধরা পড়ার সময়ের খণ্ডযুদ্ধের ফল। চওড়া কপালটার নিচেই মানুষটার চেহারার সবচেয়ে বদখত জিনিসগুলোর একটি, তার বাম চোখটা অবস্থিত। নষ্ট হয়ে যাওয়া চোখটার ভেতরে কোনো মণি নেই, সাদা আইবলটা অনেকটা ঠেলে বেরিয়ে আছে, তার ভেতরে লাল লাল শিরা দেখা যায়। হঠাৎ দেখলে মনে হয় লাল আঁকিবুকি আঁকা একটা গলফ বল উড়ে এসে বসে গেছে তার অক্ষিকোটরে। তার পাশেই ডান চোখটা স্বাভাবিক, কিন্তু স্বাভাবিক চোখটার নিচ থেকেই শুরু হয়েছে লম্বা একটা কাটা দাগ, যেটা গিয়ে শেষ হয়েছে একেবারে ডান থুতনির নিচ পর্যন্ত, কাটা দাগটার ভেতরের সাদা অংশ চোখে পড়ে। প্রফেসর অনুমান করল এই ক্ষতটা যখন হয়েছিল তখন সেটাকে সেলাই করার সুযোগ হয়নি যে কারণে ইচ্ছেমতো ক্ষতটা নিজের মতো পরিধি এবং গভীরতা বৃদ্ধি করে তারপর শুকিয়েছে। কাটা দাগটা যেখানে গিয়ে মিলিয়েছে সেখানটা দেখে প্রথমেই মনে হবে মানুষটা গলায় কোনো রুমাল পরে আছে। কিন্তু ভালোভাবে খেয়াল করলে বোঝা যাবে ওটাও আসলে আলাদা একটা ক্ষত। মোটা কোনো দড়ি দিয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখলে এরকম ক্ষত হতে পারে। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে প্রফেসর জানে ফাঁসির আসামিরা কাঠগড়ার মঞ্চে এই ধরনের ক্ষত অর্জন করে থাকে। ব্রিফিঙে মারিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী এই ক্ষতটার কারণেই মনে হয় লোকটা তার নার্ভ সিস্টেমের একটা অংশ চিরতরে হারিয়েছে।
গলার ক্ষতটা থেকে প্রফেসরের দৃষ্টি ফিরে গেল মানুষটার ভালো চোখটাতে, সকালের রোদ লেকের শান্ত পানিতে প্রতিফলিত হলে হঠাৎ ঝলকানিতে যেমন চোখ ধাঁধিয়ে যায়, মানুষটার চোখের দৃষ্টিতে সেরকম চোখ ধাঁধানো চকচকে ভাব খেলা করছে। মানুষটার চোখের দিকে তাকিয়ে খুব অদ্ভুত একটা কথা মনে হলো প্রফেসরের।
যেকোনো ক্রিয়েটিভ মিডিয়ামের কিছু লেয়ার থাকে। যেমন বিমূর্ত চিত্রকলায় যেটা ছবিতে ফুটে থাকে এর ভেতরে থাকে ভিন্ন অর্থ, মিউজিকে থাকে এবাধিক কর্ড, উপন্যাসে গল্পের প্লটের ভেতরে থাকে সাবপ্লট, এমনকি রান্নাতেও একেক লেয়ারের জন্য থাকে একেক ধরনের মসলার প্রলেপ। ঠিক তেমনি এই লোকটার ভালো চোখটার দৃষ্টিতে যেন এরকম অসংখ্য স্তর খেলা করছে। তবে সমস্ত স্তরগুলো ভেদ করে এই মুহূর্তে ওখানে যা ফুটে আছে সেটাকে বলা চলে তাচ্ছিল্য। ঘোলা চশমার আড়াল থেকে প্রফেসরকে অবলোকন করতে দেখে সেই তাচ্ছিল্যের স্তরে যেন প্রলেপ বেড়েই চলেছে। আর সেই প্রলেপে আরও একটা অতিরিক্ত মাত্রা যোগ হয়ে সেটা চোখ থেকে ধীরে ধীরে নেমে এলো নিচের দিকে। মানুষটার পাতলা ঠোঁট দুটোর এক প্রান্ত সেই তাচ্ছিল্যের প্রভাবে ধীরে ধীরে বাঁকা হতে হতে গিয়ে স্পর্শ করল তার মুখের ক্ষতটার নিচের অংশ, এতে করে যে ব্যাপারটা ঘটল সেটাকে স্বাভাবিকভাবে আমরা হাসি বলে থাকি। মৃদু অস্বস্তিকর তাচ্ছিল্যের হাসির পরিধি বৃদ্ধির সাথে সাথে তার মুখ থেকে বেরিয়ে এলো, “হাই,” বিকেলের ডেটিঙে বয়ফ্রেন্ড দেরি করে এলে গার্লফেন্ডকে যেভাবে হ্যালো বলে অনেকটা সেরকম সুর ফাত্তাহর গলায়।
ফাত্তাহর গলার স্বর ফ্যাসফ্যাসে। এটাও সম্ভবত গলার ক্ষতটার কারণে ঘটেছে। কিন্তু এই ব্যাপারে ব্রিফিঙে তেমন কিছু বলা হয়নি।
প্রফেসর হাতের কাঠের বাক্সটাকে টেবিলের ওপরে রেখে স্যুটের বাটন খুলে আরাম করে বসল। তারপর বেশ স্বাভাবিক গলায় মৃদু হাসির সাথে বলে উঠল, “হ্যালো।”
“আপনি কখনো পাত্রী দেখতে গেছেন?” ফাত্তাহর চোখে-মুখে সেই তাচ্ছিল্যের হাসি এখনও বিরাজমান।
যদিও মানুষটার মুখে পরিষ্কার বাংলা শুনে একটু অবাক হয়ে গেছে প্রফেসর কিন্তু সেটাকে আড়াল করে বলে উঠল, “সরি?” সে আসলে প্রশ্নটা ঠিক বুঝতে পারেনি।
“পাত্রী,” বলে সে খানিকটা কৌতুকের ভঙ্গিতে মাথার পাশে দুহাত নিয়ে ঘোমটার মতো করে দেখাল, হাতকড়া পরানো চেনে টান খেয়ে মৃদু ঝনঝন করে উঠল। “ওই যে, বিয়ের আগে লোকজন পাত্রী দেখতে যায় না। ওরকম?” ফাত্তাহর গলা ফ্যাসফ্যাসে কিন্তু বাংলা একদম পরিষ্কার
না চাইতেও সামান্য হেসে উঠল প্রফেসর, “না, ওরকম অভিজ্ঞতা আমার কখনো হয়নি।”
“ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত,” বলে ফাত্তাহ নামক মানুষটা বেশ খানিকটা জোরেই হেসে উঠল। “পাকিস্তানের যেখানে আমি বড় হয়েছি সেখানে এটা খুব প্রচলিত একটা ব্যাপার ছিল,” বলে সে সামান্য হাত নেড়ে যোগ করল। “বিয়ের আগে ছেলের পরিবারের সবাই মিলে পাত্রী দেখতে যায়। ব্যাপারটা সবসময়ই আমার কাছে খুব অদ্ভুত লাগত। যে মেয়েটাকে সবাই মিলে দেখতে যাচ্ছে, যেন সে মানুষ নয় কোনো প্রাণী।”
“আপনি ব্যাপারটাকে এভাবে দেখছেন কেন?” চশমার কাচের আড়াল থেকে প্রফেসর এখনও তাকে লক্ষ করে চলেছে। “সামাজিক রীতি—”
“হা-হা-হা,” ফাত্তাহর অস্বাভাবিক হাসিতে খানিকটা চমকে উঠল প্রফেসর। মানুষের হাসিকে ভালো-মন্দ রূপ দেয় সেই হাসির পেছনের কারণ আর উদ্দেশ্য। কোনো মানুষের উচ্চৈঃস্বরের হাসির পেছনে এতটা ফাঁপা শূন্যতা থাকতে পারে প্রফেসর কোনোদিন ভাবতেও পারেনি। ফাত্তাহ হেসেই চলেছে।
“সামাজিকতা! সামাজিকতা তাহলে মানুষকে মনুষ্যত্ব থেকে প্রাণীর স্তরে নামানোর প্রক্রিয়াকে প্রশ্রয় দেয়!” বলে সে হাসতেই থাকল। “যাই হোক, সরি,” বলে সে নিজের হাসি সামান্য সামলে নিয়ে বলে উঠল, “আমি যে- কারণে পাত্রী দেখার ব্যাপারটা বলেছিলাম; কারণ ছোটবেলায় যখন কাউকে এভাবে দেখানো হতো আমি সবসময়ে ভাবতাম যে মানুষটাকে এভাবে দেখানো হচ্ছে তার অনুভূতি কেমন হতে পারে,” বলে সে কাফ লাগানো হাতের একটা আঙুল তুলে প্রফেসরের দিকে নির্দেশ করে বলে উঠল— “রুমে ঢোকার পর থেকে আপনি যেভাবে আমাকে অবলোকন করছিলেন তাতে মনে হলো সেই অনুভূতি আমি অনুভব করতে পেয়েছি,” বলেই সে আবারও হাসতে লাগল। এবার হাসির স্বর খানিকটা নিচু কিন্তু হাসির ভেতরের সেই ফাঁপা প্রাণহীনতা যেন ঠাসঠাস করে বাড়ি খেতে লাগল রুমের দেওয়ালে-দেওয়ালে।
প্রফেসর বিকারহীন মুখে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে কিন্তু সে অনুভব করল ভেজা এক ফোঁটা ঘামের ধারা নিজের শিরদাঁড়া বেয়ে নিজের দিকে ধেয়ে চলেছে, সেই সাথে ভীষণ রুক্ষ এক শুষ্কতা গলা বেয়ে উঠে আসছে ওপর দিকে। কিন্তু মুখে স্বাভাবিক ভাব ধরে রেখে ফাত্তাহর দিকে তাকিয়ে সেও প্রায় একই স্বরে হেসে উঠল। “আমার মনে হয় আমাদের পরিচিত হওয়া দরকার, বলে সে একটু থেমে যোগ করল। “আমি জাকারিয়া আহমেদ, পেশায় একসময় সাইকোলজির প্রফেসর ছিলাম। এখন স্বেচ্ছায় রিটায়ার্ড বলতে পারেন,” খুব সাবধানে সে লক্ষ করতে লাগল মানুষটার প্রতিক্রিয়া।
প্রায় কোনোরকম পরিবর্তন না হয়েই হাসির মাত্রাটাকে সামান্য কমিয়ে নিজের বুকে হাত রেখে মানুষটা বলে উঠল— “আমি অত্যন্ত দুঃখিত, প্রফেসর। আরও আগেই আমাদের পরিচিত হওয়া উচিত ছিল। আমি এক সময় আবদুল্লাহ আল ফাত্তাহ নামে পরিচিত ছিলাম,” বলে সে মুখটাকে খানিকটা উঁচু করে বলে উঠল— “এখন আমাকে সবাই অ্যালবার্ট ফাত্তাহ নামে চেনে। আরও একটা নাম আমার আছে…” অর্থপূর্ণ ভঙ্গিতে সে নিজের বাক্যটা শেষ করল না।
“মাস্টার ডি,” প্রফেসর চেয়ারে বসা থেকে খানিকটা হেলান দিয়ে বলে উঠল। “ওরফে মাস্টার অব ডেমোলিশন, তাই না?”
“একদম ঠিক,” ফাত্তাহ নিজের শারীরিক ভঙ্গি একটু বদলানোর চেষ্টা করল। প্রফেসর অনুমান করল তার হাতকড়াটা এমনভাবে লাগানো চাইলেও এতে আরাম করে বসা যায় না, কিংবা এক ভঙ্গিতে স্থির থাকা যায় না। “আর আমার পেশা সম্পর্কে আপনি অবগত আছেন আশা করি। কিন্তু প্রফেসর,” সে গলা একটু নামিয়ে জানতে চাইল, “আমার একটা প্রশ্ন আছে,” তার নামানো গলায় সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি খেদ মেশানো।
“আপনি বললেন আপনি একজন প্রফেসর, ওরা,” বলে সে একমুখী কাচের ওপাশে দেখাল। “আমার সাথে কথা বলার জন্য স্রেফ একজন প্রফেসরকে পাঠাল। আমি ব্যাপারটা ঠিক মেনে নিতে পারছি না। কোনো বড় কর্মকর্তা নয়, কোনো টর্চার এক্সপার্ট নয়, নেই কোনো মেশিনপত্র! স্রেফ একজন প্রফেসর! নাহ এতটা ইনসাল্ট মানতে রীতিমতো কষ্ট হচ্ছে আমার, ‘ ফাত্তাহর গলার ভঙ্গিতে কৃত্রিম আবেগ এমনভাবে মেশানো যেন বিয়ের দিনে বাবা তার মেয়েকে বিদায় দেওয়ার ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
প্রফেসর স্রেফ একবার কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলে উঠল, “কী আর করা? আজ রাতটা আপনার জন্য খুব একটা লাকি মনে হচ্ছে না। কোনো ভিআইপির জায়গায় আজ রাতে আমাকেই আপনার সহ্য করতে হবে।”
“প্লিজ প্রফেসর, অন্তত এটা বলুন যে আপনি আমাকে টর্চার করবেন কিংবা, আমাকে সম্মোহিত করার চেষ্টা করবেন, অন্তত আমাকে সাইকোলজিক্যালি দুর্বল করে তথ্য আদায় করার চেষ্টা করবেন, প্লিজ, “ ফাত্তাহর বলার ধরনটা এমন যেকোনো সুস্থ মানুষের মনে হবে কথার মাধ্যমে তার গায়ে নোংরা আবর্জনার প্রলেপ লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
প্রফেসর একেবারে বিকারহীনভাবে তার সামনে রাখা কাঠের বাক্সটা খুলে পাইপে তামাক ভরতে ভরতে বলে উঠল, “আপনাকে হতাশ করার জন্য আমি অত্যন্ত দুঃখিত মি. ফাত্তাহ,” পাইপে তামাক ভরা শেষ করে একবার কাঁধ ঝাঁকিয়ে সে যোগ করল, “আপনি যা যা বললেন এগুলোর কোনোটাই আমি করব না,” তামাকে আগুন দিয়ে একরাশ ধোঁয়া ছেড়ে সে যোগ করল। “আমি শুধু আপনার সাথে কথা বলব, দ্যাটস ইট। “
মুখ দিয়ে চুকচুক শব্দ করতে করতে ফাত্তাহ তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে উঠল, “ছিছি, প্রফেসর,” তার ভালো চোখটার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি প্রফেসরের চশমার ঘোলা কাচের ওপরে স্থির। “নিজের খদ্দেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য বেশ্যারাও তো এরচেয়ে বেশি কিছু করার চেষ্টা করে আর আপনি আপনার অথোরিটিকে সন্তুষ্ট করার জন্য স্রেফ কথা বলবেন প্রফেসর!” বলে সে আবারও মুখ দিয়ে চুকচুক শব্দ করে উঠল।