শতবর্ষে নরেন্দ্রনাথ মিত্র
বাংলাদেশের তরুণ বন্ধু, লেখক স্বকৃত নোমান ফরিদপুর গিয়েছিল নরেন্দ্রনাথ মিত্রর গ্রামে শতবর্ষ উদযাপনে ২০১৬-র ৩০শে জানুয়ারি। সেই উদযাপনে নরেন্দ্রনাথের পুত্র অভিজিৎ মিত্র গিয়েছিলেন আমন্ত্রিত হয়ে। স্বকৃত নোমান আমাকে ছবি পাঠিয়েছিল আন্তর্জালে। সমস্ত রাত ধরে অনুষ্ঠান, গল্প পাঠ, কবিতা পাঠ, স্মৃতি চারণ, আলোচনা নিয়ে শতবর্ষ উদযাপন। সারারাত সেই গ্রাম জেগেছিল। সারা দেশ থেকে বহু সাহিত্য অনুরাগী শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন এই মহৎ সাহিত্যিককে। আমাদের এখানে ২০১৬-য় নরেন্দ্রনাথ একশো বছর অতিক্রান্ত হন এক বিস্ময়কর নীরবতার ভিতর দিয়ে।
আমি আমার কৈশোরে, সদ্য যৌবনে এই বড় লেখককে দেখেছি। একই অঞ্চলে আমাদের বসবাস। তাঁর গল্প পড়ে বড় হয়েছি। যদি লিখতে শিখে থাকি, তাঁকে পড়েই অনেকটা। মাঘে জন্ম নরেন্দ্রনাথের। এই সেই মাঘ মাস। আর তখনো ছিল এই মাঘ মাস, তখনো কোনো এক পল্লীর গাছি মোতালেফ রসের কলসি নামিয়ে আনছে খেজুর গাছ ছুলে। ঘরে রূপসী বউ ফুলবানু, তার হাতে রসের জ্বাল ভাল হয় না। পুড়ে যায় গুড়, ধরে যায়। মোতালেফ ভেবেছিল অমন সুন্দর বিবি, তার হাতের জ্বালে খেজুর রসের গুড়ের স্বাদ কত না সুন্দর হবে। মোতালেফ কী করেছিল, যার হাতে হতো গুড়ের অপূর্ব সোয়াদ সেই অতি সাধারণ, কুরূপা মাজুবিবিকে তালাক দিয়েছিল জীবন রসের ভিয়েন সুস্বাদু করতে। তালাক দেওয়ায় মাজুবিবি চলে গিয়েছিল নাদির শেখের বিবি হয়ে। এক রসের লোভে আর এক রসের কুম্ভ বুঝি ভেঙে দিয়েছিল মোতালেফ। বেওয়া মাজুবিবিকে সে শাদি করেছিল রসের সিজিনে রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরির জন্য। মাজুবিবি ছিল এই কাজে শিল্পী। তার হাতের গুড় হয় অমৃত। সেইবার গুড় বেচে প্রচুর টাকা লাভ করে মাজুবিবিকে তালাক দিয়ে সুন্দরী ফুলবানুকে ঘরে নিয়ে আসে মোতালেফ। ফুলবানুর পণের টাকা জোগাড় করার জন্যই না মাজুবিবিকে শাদি করা। টাকা উঠে গেলে আর মাজুবিবিকে রাখবে কেন সে? ফুলবানু রূপসী বটে, কিন্তু রস জ্বাল দেওয়ায় আনাড়ি। পরের সনে মোতালেফের গুড়ের খ্যাতি গেল। আগের সনের গুড় আর এই সনের গুড়ে আকাশ পাতাল পার্থক্য। হাটের লোক ছ্যা ছ্যা করতে লাগল। মোতালেফ নিজেও তো শিল্পী। মরমে মরে গেল। ফুলবানুর সঙ্গে তার পীরিতি গেল। শুধু বাহিরের রূপ আর জেল্লা নিয়ে সে কী করবে? সে মাজুবিবির কাছে রওনা হলো। ভিটেয় ফুলবানু বসে কাঁদে। এ এক অপরূপ প্রেমের গল্প। রস-এর মতো গল্প বিশ্ব সাহিত্যে বিরল। গিয়েছে সেই মাঘ মাস, সেই মাসে গোটা দেশ ছিল উৎসবে মত্ত। রসের কারবারি মোতালেফ মিঞার কথা ভুলে গেলাম আমরা? রসের উৎসব, সাহিত্যের উৎসব, লিটারারি মিট, সেখানে চিত্র তারকা থেকে ইংরেজিতে লেখা কুলীন ঔপন্যাসিকের ভীড় ছিল। চিত্র তারকা তাঁর জীবন দর্শন বলছেন। কেউ কেউ কত বই বিক্রি হয় তার হিসেব কষছেন। এরই ভিতর নিঃশব্দে তিনি ১০০। বড় খারাপ লেগেছিল। এমনই নিঃশব্দে শতবর্ষ পার করেছেন জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী ২০১২-এ। নরেন্দ্রনাথের তাঁর মতো বড় ছোটগল্পের লেখক এই উপমহাদেশে জন্মাননি। আমাদের বিস্মরণ সীমাহীন। নরেন্দ্রনাথ মিত্রকে দেখতে দেখতে আমি বড় হয়েছি। ধুতি আর খুব সম্ভবত শাদা আর্দির পাঞ্জাবি পরা নরেন্দ্রনাথকে আমি দেখেছি পাইক পাড়ার দিক থেকে হেঁটে আসছেন বেলগাছিয়ার রাস্তায়, একা একা, নিজ মনে। তাঁর রস, শ্বেতময়ূর, পালঙ্ক, এক পো দুধ, টিকিট, চিলেকোঠা, হেড মাস্টার, চোর, চাঁদ মিঞা, বিলম্বিত লয় – এই সব গল্পের সঙ্গে তখন পরিচয় হচ্ছে ধীরে ধীরে। কত তুচ্ছ ঘটনা, কত তুচ্ছ মুহূর্ত থেকেই না তিনি গল্প বের করতে পারতেন। আর সেই গল্প হত কী অনুভূতিময়। পাঠক আপনি টিকিট গল্পটির কথা স্মরণ করুন। ছেলেটির অভ্যাস প্রতিদিন বাবা বাড়ি ফিরলে টিকিটটি সংগ্রহ করা। ট্রামে টিকিট ফাঁকি দিয়ে বাড়ি ফিরেছিল বাবা। বাড়ি ফিরে শিশু সন্তানের হাতে ধরা পড়ে যায় ট্রামের টিকিটে দুপয়সা বাঁচিয়ে তৃপ্ত বাবা। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের মনের অন্দরমহলে প্রবেশ করতে পারতেন নরেন্দ্রনাথ। ‘চোর’ গল্পটির কথা মনে করি, অমূল্য সামান্য এক দোকান কর্মচারী। ঘরে নতুন বউ রেনু। অমূল্যর হাত সাফাই-এর অভ্যাস। দোকান থেকে স্নো, পাউডার, চিরুনি নিয়ে আসে লুকিয়ে। বউ রেনু তা পছন্দ করে না। অমূল্য বিয়ের পর রেনুকে নিয়ে কলকাতা দেখাতে কিংবা সিনেমায় যেতে ট্রামের ভাড়া দেয় না ফার্স্ট ক্লাসে চেপে। ঘাড় কাত করে কিংবা আবোলতাবোল গল্পের অভিনয় করে ট্রামের টিকিট ফাঁকি দেয়। রেনুর ভয় করে। যদি ধরতে পারে কন্ডাক্টর? কী অপমানই না করবে। অমূল্য হেসেই উড়িয়ে দেয়। তা আবার হয় নাকি! ফার্স্ট ক্লাসে ওঠাই তো ভাড়া ফাঁকি দেওয়ার জন্য। সেই অমুল্যই তাদের ভাড়াটে বাড়ির দোতলা থেকে রেনুকে কাঁসার বাটি সরিয়ে আনতে উপদেশ দেয়। রেনু লজ্জায় ঘেন্নায় মরে যায়। ওপরের মাসিমার কাছে যায় সে। সেই ফ্ল্যাটের বাচ্চাকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে আসে রেনু। সে কি পারে? অমূল্য যখন তাকে আদর করে, রেনুর গা ঘিনঘিন করে। ইস, অমূল্য কেন ভাল হয় না। এর ভিতরেই অমূল্যর চাকরি যায়। দোকানের বুড়ো ক্যাশিয়ার তার বউয়ের জন্য অমুল্যকে সাফাই করতে বলেছিল স্নো পাউডার, অমূল্য তা না করায় মালিকের কাছে সাতকাহন করে লাগিয়ে সে তার চাকরি খেয়েছে। কী হবে? এই গল্পে অভাবী রেনুই শেষ পযর্ন্ত অমূল্যর পথ অনুসরণ করে উপরতলা থেকে একটি ঘড়ি চুরি করে আনে। অমূল্য বলেছিল বটে, কিন্তু শেষ অবধি যে রেনু তাই করবে, তা সে ভাবেনি। প্রেমের মুহূর্তে রেনুর কঙ্কন-ক্কণিত মৃণালভুজ তার কাছে শ্রীহীন কলঙ্কিত হয়ে যায়। মনের বিচিত্র যে রূপ তা নরেন্দ্রনাথের গল্পে বারবার ঘুরে এসেছে। তিনি শুধুমাত্র কাহিনিকথক ছিলেন না, ছিলেন জীবনদর্শী।
শ্বেতময়ূর গল্পে দাদার বন্ধু জার্মান যুবক কদিন অতিথি হয়েছিল তাদের বাড়ি। কিশোরী মেয়েটি জানে না সেই যুবকের মনে প্রেমের সঞ্চার হয়েছে তার প্রতি, যেমন হয়েছিল তারও। যাওয়ার দিন সেই জার্মান যুবক নিজের ভাষায় তার যে আবেগ প্রকাশ করল তা কিশোরী মেয়েটির মন দুমড়ে দিল। প্রেমের ভাষা কেউ চিনতে ভুল করে না। একজন জার্মান, অন্যজন বাংলায় কথা বলে যাচ্ছিল। বাংলা ভাষায় এমন প্রেমের গল্প আমরা খুব কম পড়েছি। আমি বলছি অন্য এক গল্প “রানু যদি না হত”র কথা। নরেন্দ্রনাথ ছিলেন অসামান্য গল্প বলিয়ে। তাঁর মতো গল্প কথক আমাদের সাহিত্যে আর আসেননি। নরেন্দ্রনাথের গল্প পড়তে পড়তে মনে হয় তিনি যেন আকাশ থেকে গল্প নামিয়ে আনতেন। তিনি যেন প্রাচীন কালের গ্রামবৃদ্ধের মতো শোনাতে পারতেন কতকালের পুরোন সব কাহিনি। বৎসরাজ উদয়ন আর বাসবদত্তার কাহিনি। নিরূপায় মানুষ, দুঃখী মানুষ, ভালোবাসায় পরিপূর্ণ মানুষ তাঁর গল্পের মানুষ।
হেডমাস্টার গল্পের কথা মনে করি। দেশভাগের পর হিন্দু ছাত্ররা ওপার থেকে এপারে চলে আসায় পূর্ববঙ্গের সাগরপুর এম.ই. ইস্কুলের হেড মাস্টার মশায়ের ছাত্র কমে গিয়েছিল খুব। দেশভাগের পর তিনি ঠিক করেছিলেন ওপার থেকে আসবেন না, কিন্তু আসতে বাধ্য হন, ইস্কুল চলছিল না। যা ছাত্র ছিল, তাদের সকলের কাছ থেকে বেতন আদায় হয় না। বুড়ো হয়েছেন। কলকাতায় এসে তাঁর দিন চলবে কী করে পরিবার নিয়ে? পঞ্চাশোর্ধ হেড মাস্টার মশায় সওদাগরী অফিসে চাকরি খুঁজতে বেরিয়েছেন। গ্রামের ছাত্রর অফিসে এসে তার কাছেই চাকরি প্রার্থনা করছেন। একটি মেয়ের বিয়ে হয়নি, তিনটি নাবালক পুত্রও আছে। কত বড় সংসার, কী করে চলবে? হেড মাস্টার মশায়কে তার ব্যাঙ্কে ক্লার্কের চাকরি দিয়েছিল ছাত্র নিরুপম। হেড মাস্টার মশায় খুব ভালো ইংরিজি পড়াতেন। তাঁর ছাত্ররা কৃতী। তিনি তাঁর এতকালের অভ্যাস ছাড়তে পারেননি। গল্পটি এত হৃদয় গ্রাহ্য, এত মানবিক যে পড়তে পড়তে স্তম্ভিত হয়ে থাকতে হয়। পার্টিশন আমাদের জীবনকে কত রকম ভাবে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছিল তা নরেন্দ্রনাথের গল্পে ধরা যায়। মানুষের বেঁচে থাকার ভিতরেও যে নির্মমতা তৈরি হয়েছিল, তা তাঁকে না পড়লে ধরা যায় না। নরেন্দ্রনাথের অধিকাংশ গল্প জীবিকার কথা বলেছে। পার্টিশন জীবিকা বদল করে দিয়েছিল। মেয়েদের ঘর থেকে বাইরে এনেছিল জীবিকার খোঁজে(অবতরনিকা, যা সত্যজিৎ রায়ের মহানগর সিনেমা)। কত আধুনিক ছিলেন তিনি।
“রানু যদি না হত” এই শহরের এক সতের বছরের মেয়ে রানুর গল্প। এই শহর মানে এই ২০১৬-র শহর তো নয়। সেই শহর আমার ছোটবেলার। ষাটের দশক হতে পারে। পঞ্চাশের দশকও হতে পারে গত শতাব্দীর। তারপর পৃথিবী অনেকখানি পথ পার হয়েছে। পুরনো ধ্যান ধারনা বদলে গেছে অনেক। নরেন্দ্রনাথ তাঁর চারপাশের মানুষের মুখ আঁকতেন নানা রঙে। আমি বার বার মৃদুভাষী, আত্মমগ্ন এই লেখককে দেখে আপ্লুত হয়েছি। রানুর গল্পটি এক আত্মমগ্ন মেয়ের গল্প। নিতান্ত মধ্যবিত্ত কেরানি বাবার কন্যা রানু। কলেজে পড়ে। মা থাকে প্রায়ই অসুস্থ। রানুকে সব দেখতে হয়। সে তো মা বাবার প্রথম সন্তান। তার পরে আর এক বোন বুলু, দুইটি বালক ভাই। নরেন্দ্রনাথ যে নিম্নবিত্তের সংসার আঁকেন, সেই সংসারেই আমরা বড় হয়েছি। এই বয়সে তাঁর গল্প পড়তে গেলে সেই কলকাতা সেই ছোটবেলাকে দেখা যায়। বিস্মৃতি স্মৃতিতে ফিরে আসে।
রানুর মায়ের অসুখ, জ্বর। বুড়ো ডাক্তার বলেছে বিকেলে এসে মিকশ্চার নিয়ে যেতে। ডিসপেন্সারিতে মিকশ্চারের শিশি রেখে রানু কলেজে গেল, ফিরল সাড়ে চারটে নাগাদ সেই বুড়ো ডাক্তারের ডিসপেনসারিতে। ডাক্তার বিকেলে থাকে না। থাকে যে কম্পাউন্ডার সেও বুড়ো। এই ডিসপেনসারি তাদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূর, এর চেয়ার টেবিল থেকে সমস্ত ফার্নিচার পুরোন। এখানে যে কেন আসে বাবা মা বার বার। বুড়ো ডাকতারের বুড়ো কম্পাউন্ডার নেই। তার টেবিলে রানুর রেখে যাওয়া শিশিটি রয়েছে। রানু বসে আছে। ডিসপেনসারিতে আছে বুড়ি ধাই সারদা। হতাশ বিরক্ত রানু যখন চলে যাবে ভাবে, ধাই বুড়িকে সেই কথা বলতে সে রানুর হাত ধরে ফেলে। আর একটু বস। কম্পাউন্ডার এসে যাবে। বুড়ি বলে, তার হাতেই জন্ম হয়েছিল রানুর। সে-ই খালাশ করেছিল তাকে। জানে রানু তা। বাড়িতেই শুনেছে সে কথা। কিন্তু এর পর বুড়ি যা বলে তার জন্য রানু প্রস্তুত ছিল না। বুড়ি বলছে, রানু তো জন্মাত না, শুধু মেয়েমানুষের জান বলে আসতে পেরেছে। সে আবার কেমন কথা? রানু কৌতুহলী হয়। বুড়ি কথাটা ভাঙতে শুরু করে ধীরে ধীরে। সেই সতের বছর আগে এক দুপুরে এই ডাক্তারখানায় রানুর ঠাকুরদা এল হাঁপাতে হাঁপাতে। কী হয়েছে, না তার তিন মাসের পোয়াতি বউমা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তার বোধহয় সব্বোনাশ হয়ে গেল। ডাক্তার আর ধাই ছুটল সেই বাড়ি। দেখল সত্যি। ধাই তো সব বোঝে। ডাক্তার চিকিৎসা করে বাঁচাল বউকে আর তার পেটেরটাকে। কিন্তু হল কেন অমন? ডাক্তারের জেরায় রানুর বাবা গোপনে কাঁপতে কাঁপতে বলেছিল, তার চাকরি নেই, বউকে সে পড়াবেও ভেবেছে, এখন সন্তান হলে খুব অসুবিধে হয়ে যাবে ভেবেছিল, সন্তানটিকে নষ্ট করতে চেয়েছিল সে।
রানু জানল, সে না আসতেও পারত। তাকে মা বাবা চায়নি সে আসুক, তবু সে এসে গেছে। রানু কেমন শূন্য হয়ে গেল। এ পৃথিবীতে তার না আসবার, না থাকবার কথাই তো সবচেয়ে বেশি ছিল। এই যে সন্ধেবেলায় এমন আলোয় ভরা লোকজনভরা শহরের পথ দিয়ে সে হেঁটে চলেছে এই চলবার কোনো কথা ছিল না।
প্রতিদিনের অভ্যাসে বাড়ি ফেরা রানু আজ বিরক্ত বাড়ির উপর। মায়ের কাছে গেল না অভিমান আর রাগে। তাকে চায়নি মা বাবা। এই গল্প ক্রমশ নিম্ন মধ্যবিত্ত সংসারের দীনতার ভিতরে ঢুকে পড়ে। বাবা হেমাঙ্গ বাড়ি ফিরে রানুর কাছে খোঁজ নেয় তার কী হয়েছে যে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছে? তারপর হেমাঙ্গ বেরোয় টাকা ধারের জন্য হাতিবাগানের দিকে। মাসের শেষ যে। রানুর দুই ভাই, বাড়ির দুই বালক খাওয়া নিয়ে বায়না করে। শুধু ডাল ভাত খেতে চায় না। রানুর পরের বোন বুলু জেরবার। রানুর মা, অভাবী সংসারের অসুস্থ গৃহিনী অপারগ স্বামীর প্রতি অভিযোগ জানায় নিজের মনে, খেতে দিতে না পারলে জন্ম দেওয়া কেন? মায়ের আক্ষেপ, ভাই দুটির না মেটা ক্ষুধার বাস্তবতা রানুকে ধীরে ধীরে নিজের সত্তার কাছে ফেরায়। সে ঘরের অন্ধকার থেকে বেরোয়। তাদের শোয়ার ঘর আর রান্না ঘরের মাঝখানে একফালি উঠন। তার উপরে তারায় তারায় ভরা আকাশ। রানু অনুভব করে, সে না এলে এই বিরাট আকাশ আর বিপুলা পৃথিবীর হয়তো কিছুই এসে যেত না। কিন্তু সে যখন কোন না কোন ভাবে একবার এসে পড়েছে, তখন এর চেয়ে বড় কথা আর কী হতে পারে। এই গল্প ফিরে ফিরে পড়ি। নরেন্দ্রনাথ মিত্র নীরবতার ভিতরে ১০০- পার হয়ে গেছেন। তিনি হৃদয়ে জড়িয়ে থাকুন।