1 of 2

শকওয়েভ – ৪৬

ছেচল্লিশ

সময় ছিল না গাড়িতে পৌঁছুনোর কিংবা জঙ্গলে গা ঢাকা দেয়ার। তবে লিভিং রুমের সতরঞ্চির নিচে লুকানো ট্র্যাপডোরটার কল্যাণে আত্মগোপনের সুযোগ পেয়েছে ওরা কেবিনের তলায়। ভিত ঘের দেয়া তক্তাগুলোর কারণে বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই হাইড-আউটটা।

শীতল, সোঁদা গন্ধযুক্ত মাটিতে পিঠ দিয়ে শুয়ে আছে রানা; পাশে গুস্তাফের মসবার্গ। তিন ফুট উপরের ফ্লোরবোর্ডের দিকে তাকিয়ে রয়েছে ও। পোক্ত কাঠ রক্ষা করেছে ওদের স্টান গ্রেনেডের বিস্ফোরণ থেকে। তবে ওর জানা আছে, কেবলই শুরু এটা… তবলা- হাতুড়ির খুটুস- খাটুস। আসল গান এই শুরু হলো বলে!

সাব-মেশিন গানটা আঁকড়ে ধরে কাছেই হামাগুড়ি দিয়ে বসে রয়েছে সেলেনা। অস্থির ভঙ্গিতে ঠোঁটের কোণ কামড়াচ্ছে। ঘাড় বাঁকিয়ে উপরদিকে চেয়ে আছে বিস্ফারিত চোখ জোড়া।

গুস্তাফকে নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই রানার। দরদর করে ঘামছে লোকটা। নার্ভাস ব্রেকডাউনের শিকার হবে হবে অবস্থা। অস্পষ্ট আওয়াজ ছাড়ছে মুখ দিয়ে।

ঠোঁটে আঙুল রেখে সতর্ক করল রানা আবার।

ওদের ঠিক উপরে ভারি পায়ের আওয়াজ উঠল কাঠের মেঝেতে।

পাটাতনের ফাঁক দিয়ে অনুপ্রবেশকারীদের কালচে অবয়ব দেখতে পাচ্ছে রানা। আন্দাজ যদি ভুল না হয়, লিভিং রুমে তিনজন রয়েছে ওরা। চতুর্থ আরেকজন সদর-দরজা দিয়ে বাইরে বেরোল এই মাত্র, রেডিয়োতে রিপোর্ট করার জন্য। এ দেশের নয় লোকটা। আমেরিকান।

তিনজনের কারোরই চোখে পড়েনি, অসমান হয়ে রয়েছে সতরঞ্চির একটা পাশ। লক্ষ করেনি ফ্লোরবোর্ডের মাঝে নিখুঁতভাবে বসানো ছোট্ট ট্র্যাপডোরটা। অবশ্য করবে একটু পরেই, সময়ের ব্যাপার। ডালাটার উপরেই দাঁড়িয়ে একজন। এক্ষুণি যদি নিচের দিকে তাকায়—খেল খতম!

শটগানের উপর দৃঢ় হলো রানার মুঠো। ধীরে, নিঃশব্দে সেফটি অফ করল আলতোভাবে। রিফিল করা হয়েছে ফাইভ-শট টিউব ম্যাগাজিন। ব্রিচে রয়েছে ছয় নম্বর কার্ট্রিজ। সেলেনার দিকে চাইতেই বুঝে গেল, পা থেকে মাথা পর্যন্ত অ্যাড্রেনালিনের স্রোতে ডুবে গেছে মেয়েটা।

হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে রানার। এক সেকেণ্ডের জন্য বন্ধ হলো চোখ দুটো। কল্পনার চোখে দেখে নিচ্ছে টার্গেটগুলো। সেই সঙ্গে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে নিচ্ছে নিজেকে। গভীর দম নিয়ে গুনল মনে মনে: এক… দুই… তিন!

শটগান ব্যারেলের জোরালো আঘাতে ছিটকে খুলে গেল ট্র্যাপডোরের ঢাকনা। উঠে বসল রানা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *