পঁয়তাল্লিশ
কেবিনের কাছাকাছি চলে এসেছে দশজনের অ্যাসল্ট টিমটা। শেষ পথটুকু এগোচ্ছে এখন পায়ে হেঁটে।
গাছপালা ভেদ করে, নিঃশব্দে পা ফেলছে সবার আগে থাকা টিম লিডার। গ্রেনেড লঞ্চার ফিট করা একখানা অ্যাসল্ট অস্ত্র তার কাঁধে।
প্রত্যেকের পরনে কালো ট্যাকটিকাল এন্ট্রি ভেস্ট, মুখে মাস্ক। কানে রেডিয়ো এয়ারপিস। স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের ম্যাগাযিনগুলো গুলি ঠাসা-অ্যাকশনের জন্য প্রস্তুত।
একটাই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে ওরা: নিকেশ করো টার্গেটকে। কোনও সুযোগ দেয়া যাবে না। চলবে না কোনও প্রমাণ রাখাও।
কালো স্কি মাস্কের নিচে কঠোর চেহারার দলনেতার নাম ডোনাল্ড গিবসন। পাতার ফাঁক দিয়ে ল্যাণ্ড রোভার আর পিছনের কেবিনটা দৃষ্টিগোচর হতেই হাত তুলে থামার সঙ্কেত দিল অন্যদের। ধনুকে পরানো ছিলার মত টান টান হয়ে রয়েছে সবার স্নায়ু।
ঝড়ের মত হবে হামলাটা। মনের চোখে দুই পুরুষ আর এক মহিলাকে কেবিনের ভিতরে দেখতে পাচ্ছে গিবসন। দশজনের বিপক্ষে কোনই সুযোগ নেই প্রাক্তন মেজরের ওস্তাদ হতে পারে বটে লোকটা। চিফ যেমনটা মনে করছেন, ততটাই দুর্দান্ত হতে পারে হয়তো। তবু রক্তমাংসে গড়া তো! আর রক্তমাংসের ব্যাপারে কসাইয়ের মতই এক্সপার্ট লোক ওরা। এবার অন্তত জানে বাঁচতে পারবে না মেজর মাসুদ রানা।
গিবসনের পরবর্তী ইশারায় চার সদস্য আলাদা হয়ে গেল দল থেকে। পাতার আড়াল নিয়ে দু’জন এগোল কেবিনের পাশ ঘুরে; ডানে একজন, বাঁয়ে একজন; মিলিত হবে পিছনে গিয়ে। বাকি দু’জন মাথা নিচু করে ছোট ছোট কদম ফেলে রওনা হলো ল্যাণ্ড রোভারটার উদ্দেশে।
বাহনটার কাছে পৌঁছে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল ওরা, অপেক্ষা করছে এয়ারপিসে পরবর্তী নির্দেশ আসার।
গাছের পাতায় মৃদু বাতাসের কানাকানি ছাড়া বনভূমি সম্পূর্ণ নীরব।
এআর-ফিফটিনটা কাঁধ থেকে নামাল গিবসন। বেল্টের হোল্ডার থেকে একখানা গ্রেনেড বের করে নিয়ে ঢুকিয়ে দিল অস্ত্রটার ব্যারেলের নিচে, তিরিশ রাউণ্ডের বাঁকা ম্যাগাজিনের সামনের দিকে জুড়ে দেয়া টিউবের মধ্যে। তার পর এক গাছের দু’ভাগ হয়ে বেড়ে ওঠা কাণ্ডের ফাঁকে আগ্নেয়াস্ত্র রেখে ইলিউমিনেটেড অপটিকাল সাইটের মাঝ দিয়ে নিশানা করল কেবিনের দিকে। রিকয়েল সামলে নেয়ার জন্য পা জোড়া ফাঁক করে মাটিতে গেড়েই ট্রিগার টেনে দিল গ্রেনেড লঞ্চারের।
জোরালো, ফাঁপা শব্দের সঙ্গে টিউব থেকে ছিটকে বেরোল স্টিলের নলাকৃতি প্রজেক্টাইল। বাতাসে অর্ধবৃত্ত রচনা করে ঝনঝন আওয়াজে ভেদ করল কেবিনের সামনের জানালা।
এক পলক পর, চাপা আরেকটা শব্দ হলো গ্রেনেডটা বিস্ফোরিত হতেই। ভিতরের লোকগুলোকে নিস্তেজ করে দেবে স্টান গ্রেনেডের শকওয়েভ। আপাতত খতম করছে না ওদের। পরে হবে ওটা। বিকৃত, পোড়া লাশ চান না চিফ। চান—পরিচ্ছন্ন, শনাক্তযোগ্য হোক খুনটা।
রসিয়ে রসিয়ে কাজটা উপভোগ করার প্রচুর সুযোগ রয়েছে গিবসনের। শেষ বার করেছিল ক্যারেন ল্যানকাউমে নামের মেয়েলোকটাকে খুন করার সময়। এবার ওই বার্নহার্ট শালীর হার্টটা কমপ্লিট বার্ন করবে সে।
‘এগোও,’ নির্দেশ দিল থ্রোট মাইকে।
আগে রওনা হওয়া দল দুটো ঝড়ের বেগে অস্ত্র তাক করে ঢুকে পড়ল সামনে-পিছনের দুই দরজা দিয়ে।
অস্ত্রের গর্জন শোনার অপেক্ষা করছে ওদের নেতা। ….কই, হচ্ছে না তো কিছু!
কয়েক সেকেণ্ড পর এয়ারপিসে বলা হলো কারণটা। নেই কেউ কেবিনে!
‘খুঁজে বের করো!’ দাঁতমুখ খিঁচিয়ে আদেশ করল দলপতি।