ছত্রিশ
গালিফিনাকিসেরও তর সইছে না বলার জন্য। ছোট ছোট ত্বরিত পদক্ষেপে পুরুষদের টয়লেটে ঢুকে সেঁধিয়ে গেল একটা কিউবিকলের মধ্যে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা করছে পাকস্থলী।
ইঞ্জিনিয়ার মহাশয় যখন ত্যাগের সুখে বিভোর, সোনালি চুলের এক প্রকাণ্ডদেহী আলগোছে ঢুকে পড়ল টয়লেটে। সম্পূর্ণ ফাঁকা অভিব্যক্তি লম্বাটে চেহারায়। খেয়াল করলে বিচলিত হয়ে পড়ত অন্য টয়লেট ইউজাররা।
ছোট এক চামড়ার ডকুমেন্ট কেস ঝুলছে কাঁধ থেকে। হালকা স্পোর্টস জ্যাকেটটা আঁটো হয়েছে ব্যায়াম করা শরীরে।
অন্য তিন লোকের সঙ্গে যোগ দিল ইউরিনালে।
ছোট কাজ শেষে এক এক করে বেরিয়ে গেল লোক তিনজন।
সিঙ্কে গিয়ে হাত ধুল এবার ব্যায়ামবীর। আয়নায় দেখতে পাচ্ছে, খোলা রয়েছে একটা বাদে বাকি সব কিউবিকলের দরজা। জানে, বন্ধটার মধ্যেই ঘাপটি মেরে বসে আছে ওর শিকার।
ড্রাইয়ারের গরম বাতাসে হাত দুটো শুকিয়ে এলে এক জোড়া সিনথেটিক সার্জিকাল গ্লাভ বের করল কেস থেকে। হাতে গলিয়ে নিয়ে বের করে আনল এবার ছোট একখানা রাবারের গোঁজ আর আউট অভ অর্ডার লেখা সাইন।
খুনের পেশায় আঠারো বছরের অভিজ্ঞতা ডোনাল্ড গিবসনের। দারুণ গর্ব তার নিজের নৈপুণ্য নিয়ে।
দরজা খুলল টয়লেটের। এপাশ-ওপাশ দেখে নিয়ে সাইনটা ঝুলিয়ে দিল বাইরের নবে। এর পর দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে পা দিয়ে ঠেলে গোঁজ আটকে দিল তলার ফাঁকে কিউবিকলের কাছে ফিরে গিয়ে পিস্তল বের করল এবার চামড়ার কেস থেকে।
আদতে, ডার্ট ছোঁড়ার জন্য বানানো হয়েছে কমপ্যাক্ট হ্যাণ্ডগানটা। ছোট্ট এক ক্যানিস্টার রয়েছে ডার্টের ধরার দিকটায়। নিজ অক্ষের উপর ঘুরতে সক্ষম ড্রাম ম্যাগাজিনে লোড করা হয়েছে তিনটি শলাকা। বিশেষভাবে তৈরি মারাত্মক বিষ ভরা হয়েছে কার্বন ডাইঅক্সাইডের খালি ক্যানিস্টারগুলোতে। টার্গেটের শরীরে ঢোকার পর ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে ডার্ট। বিষ মিশে যাবে রক্তে।
দ্রুত রূপ বদলাতে সক্ষম বিষটার কোনও নমুনাই পাওয়া যাবে না অটোপসিতে। অফিশিয়ালিও অস্তিত্বহীন ওটা। সূক্ষ্ম একটা লাল বিন্দু শুধু রয়ে যাবে চামড়ায়।
যুগ পাল্টেছে। রেইসিন আমব্রেলা গানের চল আর নেই। টার্গেটের কিউবিকলের ডান পাশেরটায় গিয়ে ঢুকল গিবসন। টয়লেট সিটের উপর উঠে পার্টিশনের উপর দিয়ে তাকাল নিচে।
কমোডের উপর নিশ্চিত্ত ভঙ্গিতে চোখ বুজে যেন তপস্যায় মগ্ন জাক গালিফিনাকিস। ট্রাউযারটা হাঁটুর কাছে নামানো।
খশমশ আওয়াজ পেয়ে থতমত খেয়ে উপরে তাকাল। পরক্ষণে তীব্র ভর্ৎসনা ফুটল তার চোখে। পাকা টমেটোর মত টকটকে লাল হয়ে উঠেছে চেহারা।
মাত্র তিনটে গালিতেই গিবসনের চোদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করে দিল গালিফিনাকিস। পরক্ষণে চুপসে গেল ডার্টগানটা ওর দিকে তাক হতে দেখে। আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে উপরদিকে উঠে গেল হাত জোড়া। কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছে চোখ দুটো। অস্বস্তিতে শরীর মোচড়াচ্ছে ইঞ্জিনিয়ার। হঠাৎ করেই অসম্ভব দুর্বল লাগছে নিজেকে।
পাথরের মত স্থির নিষ্কম্প হাতে গুলি করল গিবসন। ডুডে এজেন্টের কানের ঠিক নিচ দিয়ে ঢুকল বিষাক্ত শলাকা।
মৃদু একটু ককিয়ে উঠল গালিফিনাকিস। তড়পাল খানিকটা।
বাকিটা দেখার প্রয়োজন বোধ করল না সোনালি-চুল। টয়লেট সিট থেকে নেমে ডকুমেন্ট কেসের মধ্যে ঢুকিয়ে ফেলল হ্যাণ্ডগানটা। এর পর কিউবিকল থেকে বেরিয়ে এসে শান্ত পদক্ষেপে এগিয়ে গেল টয়লেটের দরজার দিকে। গোঁজটা সরিয়ে ফেলে খুলে ফেলল দস্তানা জোড়া।
অকুস্থল থেকে নিঃশব্দে বেরিয়ে যাওয়ার কয়েক সেকেণ্ড পরই রেস্টুরেন্ট ত্যাগ করে রাতের অন্ধকারে হারিয়ে গেল ডোনাল্ড গিবসন।