সাতাশ
ক্যারেন,
মেসেজ পেয়েছেন: জুন ২৮, ২2:58
দয়া করে শোনো আমার কথা। যেটা নিয়ে মেতে রয়েছ, খুবই বিপজ্জনক তা তোমার জন্যে। সিরিয়াসলি বলছি, এই মুহূর্তেই ছাড়ো ওসব, না হয় ফিরে আসার পথ থাকবে না। আর, সেদিনের বচসার জন্যে আন্তরিক দুঃখিত আমি।
জি
মেসেজ দিয়েছেন: জুলাই ১, ০৯:০২
হ্যালো,
আগেই বলেছি, নিজেদের মধ্যে এত কিছু শেয়ার করার পর এখন আর পিছিয়ে আসতে পারি না এখান থেকে। তবে তুমি চাইলে দূরে থাকতে পারো।
ক্যারেন
মেসেজ পেয়েছেন: জুলাই ১, ১১:৪৭
ক্যারেন,
ফ্লেচার আর ব্রাউনের কী হয়েছে, মনে করে দেখো। একই ঘটনা ঘটবে আমাদের বেলাতেও, যদি না সতর্ক হই। আবারও অনুনয় করছি, বেরিয়ে এসো ওখান থেকে। আমাদের পরিচয় জানে ওরা। কোথায় পালিয়ে বাঁচবে তুমি?
জি
মেসেজ দিয়েছেন: জুলাই ১, ১২:০৭
প্যারিস চলে এসো তুমি। নিরাপদ কোনও জায়গা খুঁজে বের করব দু’জনে মিলে, যেখানে ওরা খোঁজ পাবে না আমাদের। এর পর একসঙ্গে কাজ করব আবার আগের মত। ওদের পরাস্ত করতে হবে আমাদের। টেনে ছিঁড়ে ফেলতে হবে ওদের মুখোশ। সেজন্যে থেমে থাকা চলবে না।
ক্যারেন
মেসেজ পেয়েছেন: জুলাই ২, ০৫:১৫
আবারও বলছি: কোথাও পালিয়ে বাঁচতে পারবে না তুমি। অনেক ক্ষমতা ওদের। পারবে না ওদের দমন করতে। তবে এখনও চাইলে বেরিয়ে আসতে পারো এসব থেকে। সব ছেড়েছুড়ে ফিরে যাও আগের জীবনে। কাকপক্ষীও যেন জানতে না পেরে, কী আবিষ্কার করেছ তুমি। কথা দাও আমাকে।
জি
মেসেজ দিয়েছেন: জুলাই ২, ০৮:০১
হাই,
প্রথম সাক্ষাতেই বলেছিলাম তোমাকে, কখনোই পিছিয়ে আসতে পারব না আমার কাজ থেকে। সিরিয়াসলিই বলেছিলাম কথাগুলো। অনেক বড় আর গুরুত্বপূর্ণ মিশন এটা। ভেবেছিলাম, এর গুরুত্ব বুঝবে তুমি। সত্যটা জানা দরকার না মানুষের? যদ্দিন না তা জানাতে পারছি, ক্ষান্ত দেব না আমি। তার আগপর্যন্ত এটাই আমার জীবন। এসব ছাড়ার কথা বোলো না আর। সরি, কথা দিতে পারলাম না তোমাকে।
ক্যারেন
মেসেজ দিয়েছেন: জুলাই ৩, ১৯:৩৬
খুব খারাপ লাগল শুনে। আমি যদি পারতাম তোমার মত লেগে থাকতে!
বেস্ট অভ লাক। নিজের খেয়াল রেখো।
আর কথা বলতে পারছি না এখন।
জি
‘জি।’ কমপিউটারের স্ক্রিনের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে
রয়েছে সেলেনা। ঘুম-টুম কোথায় পালিয়ে গেছে চোখের সীমানা থেকে! কনভার্সেশনটা পড়তে পড়তে সিধে হয়ে গেছে শিরদাঁড়া। ‘আমি যা ভাবছি, তুমিও কি তা-ই ভাবছ, রানা?’
‘হ্যাঁ। এই জি হচ্ছে গুস্তাফ… সুইডেনের ঠিকানায় যাকে চিঠি লিখেছিল ক্যারেন। মেইলগুলো পড়ে মনে হলো, ভালোভাবেই কোনও কিছুতে জড়িয়ে গিয়েছিল দু’জনে।’
সোজা হলো ও তড়াক করে। লেদার জ্যাকেটটা যেখানে খুলে রেখেছিল, ওখানটায় গিয়ে একটা কাগজ বের করল জ্যাকেটের পকেট থেকে। আগের রাতে টুকিটাকি নোট নিয়েছিল ওটাতে।
দুমড়ে গেছে কাগজটা, ময়লা হয়ে গেছে; তার পরও গুস্তাফ ভিকান্দার ও তার জাকউইকের ঠিকানাটা পড়া যাচ্ছে পরিষ্কার।
‘এখন আমাদের কাজ হলো, লোকটার সঙ্গে যোগাযোগ করা,’ বলল সেলেনা। ‘তার কাছেই জানা যাবে, কীসের সঙ্গে জড়িয়েছিল ওরা।’
‘কীভাবে যোগাযোগ করতে চাও?’
‘লোকটার ই-মেইল অ্যাড্রেস তো জানি আমরা…’
নেতিবাচকভাবে মাথা নাড়ল রানা। ‘পড়ো আবার মেসেজগুলো। হয় ভিতুর ডিম লোকটা, নয় তো সত্যি সত্যিই বিপদে ছিল ক্যারেনের মত। দ্বিতীয়টার সম্ভাবনাই বেশি।’
‘আচ্ছা, ক্যারেনের মত পটল তোলেনি তো ব্যাটা?’ আশঙ্কা করল সেলেনা।
‘সেটাও বিবেচ্য বিষয়। তবে বহাল তবিয়তে থাকলেও, মনে হয় না, জবাব দেবে মেইলের। বরঞ্চ আমাদের মেসেজ পাওয়া মাত্রই হাওয়া হয়ে যাবে ভিতু খরগোসের মত। ফের ওর সন্ধান পাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে তখন।’
‘কী করবে তা হলে?’
সময় দেখল রানা। ঘণ্টা দুই পরেই সূর্য উঠছে।
‘ঘুমানোর চেষ্টা দেখি আগে।’ অপরিসীম ক্লান্তিতে চক্কর দিচ্ছে ওর মাথাটা। ‘এর পর চাই গরমাগরম খানা আর কফি। শরীরে বল-টল এলে পরে রওনা হওয়া যাবে সুইডেনের পথে। যদি বেঁচে থাকে তো, ছুঁড়ে বের করে ফেলব মিস্টার জি-কে। আর যদি না-ও থাকে, ওর কবরটা জিয়ারত করে ফিরব।’
মিষ্টি করে হাসল সেলেনা। ‘তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, পানির মত সহজেই হয়ে যাবে সব।’
‘সহজ-সাধারণ মানুষ আমি।’ হাসিটা ফিরিয়ে দিল রানা। ‘সহজভাবেই দেখি সব কিছু।’