লোগোথেরাপি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা
আমার সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনীর পাঠকগণ থেরাপিউটিক মতবাদের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। তাই ফ্রম ডেথ-ক্যাম্প টু এক্সিসটেনশিয়ালিজম গ্রন্থের মূল সংস্করণে লোগোথেরাপি সম্পর্কে আলোচনা যুক্ত করেছিলাম। তবে তা যথেষ্ট ছিল না। বিষয়টি নিয়ে আরও ভালোভাবে আলোচনার জন্য এন্তার অনুরোধ আসতে থাকে। তাই বৰ্তমান সংস্করণে আমি এই অধ্যায়টি নতুন করে লিখেছি। এবং বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। ফলে অনেক কিছুই সংযোজিত হয়েছে।
যদিও কাজটি খুব সহজ ছিল না। এত অল্প জায়গায় পাঠককে বুঝিয়ে বলা অনেকটা কঠিনই বটে। কারণ সম্পূর্ণ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গেলে বিশ খণ্ড বই হয়ে যাবে। এই মুহূর্তে একজন আমেরিকান ডাক্তারের কথা মনে পড়ছে। সে আমার ভিয়েনার চেম্বারের এসেছিল।
তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘আচ্ছা ডাক্তার সাহেব, আপনি কি মনোবিজ্ঞানী?’
আমি সাথে সাথেই তাকে বললাম, ‘আমি ঠিক মনোবিজ্ঞানী নই। তবে আমাকে সাইকোথেরাপিস্ট বলতে পারেন।’
তারপর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাহলে আপনি কোন থিওরি নিয়ে কাজ করেন?’
উত্তর দিলাম, ‘এটা আমার নিজের উদ্ভাবিত থিওরি। একে বলে, লোগোথেরাপি।
‘আচ্ছা, এই লোগোথেরাপি বিষয়টি কী, আমাকে এক কথায় বলতে পারবেন?
‘অবশ্যই।’ আমি বললাম। ‘তবে এর আগে আমাকে এক কথায় বলুন, মনোবিকলন বলতে আপনি কী বোঝেন?”
তখন তিনি বললেন, ‘মনোবিকলনের সময় রোগী বিছানায় শুয়ে আপনাকে এমন কিছু কথা জানাবে, যা সে স্বাভাবিক অবস্থায় বলতে চাইবে না।’
তার কথা শেষ হবার সাথে সাথেই আমি বললাম, ‘লোগোথেরাপিতে রোগী বসেই এমন কিছু শুনবেন, যা স্বাভাবিক অবস্থায় শুনতে চাইবেন না।’
তাকে যে কথা বলেছিলাম, তাতে লোগোথেরাপির মূল বিষয় বলা হয়ে গেছে। যাইহোক, লোগোথেরাপি মনোবিকলন বা মনঃসমীক্ষণের তুলনায় কম অতীতমুখী এবং কম অন্তর্মুখী। লোগোথেরাপি ভবিষ্যৎ নিয়ে কাজ করে। বলা চলে, রোগী ভবিষ্যতে যা করবে, তা নিয়েই লোগোথেরাপি কাজ করে। (লোগোথেরাপি প্রকৃতপক্ষে এক ধরনের অর্থ- কেন্দ্রিক চিকিৎসা।) একই সাথে লোগোথেরাপি মন থেকে সব ধরনের ক্ষতিকর বৃত্ত অপসারণ করে এবং এটি এমন এক প্রক্রিয়া যা স্নায়বিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিজে নিজেই স্নায়বিক ভারসাম্য হারানো থেকে রক্ষা করে।
যদিও উপরের কথাটি অতিসরলীকরণ হয়ে গেল, তারপরেও বলা যায়, রোগী লোগোথেরাপিতে জীবনের মানের কী বুঝতে পারে, শুধু তাই নয়, নতুন করে আবার সেসব কিছু শুরু করে। এবং তার মধ্যে এই স্নায়বিক বৈকল্য দূর শক্তি আছে, এ সম্পর্কে লোগোথেরাপি তাকে সচেতন করে তোলে।
এখন আমাকে বলতে দিন, আমি কেন, আমার আবিষ্কৃত থিওরি বা তত্ত্বের নাম ‘লোগোথেরাপি’ রাখলাম। লোগোস একটি গ্রীক শব্দ। যার অর্থ দাঁড়ায় মানে বা তাৎপর্য। তবে যে যাই বলুক না কেন, লোগোথেরাপি বা দ্য থার্ড ভিয়েনাস স্কুল অব সাইকোথেরাপি মানুষের অস্তিত্বের তাৎপর্য, আরো ভালো করে বলতে গেলে জীবনের তাৎপর্য সন্ধানে গুরুত্ব দিয়েছে। আরও সহজ করে বলতে গেলে বলতে হয় জীবনের তাৎপর্য খোঁজাই লোগোথেরাপির কাজ। লোগোথেরাপির মতে, মানুষের মধ্যেই জীবনের অর্থ খুঁজে বের করার শক্তি আছে। এইজন্য আমি আনন্দের বদলে ইচ্ছাশক্তি নিয়ে কথা বলবো (অথবা এটাকে ইচ্ছের আনন্দও বলা যেতে পারে)। ফ্রয়েডিয় মনঃসমীক্ষণ এটির উপরই কেন্দ্রীভূত। পাশাপাশি ক্ষমতা লাভের ইচ্ছার বিপরীতে অ্যালডেরিয়ান মনোবিজ্ঞান ব্যবহার করেছে ‘শ্রেষ্ঠত্বের জন্য প্রচেষ্টা’ পরিভাষা। এই বিষয়টিও লোগোথেরাপিতে তুলে ধরা হয়।