লোকশিক্ষায় শ্রীমা
তাঁর জীবনই তাঁর বাণী!
লোকশিক্ষায় শ্রীশ্রীমার অবদানের কথা ভাবতে গেলে প্রথমেই মনে হয় মায়ের আশ্চর্যসুন্দর জীবনখানিই তো একটি সর্বজন-শিক্ষণীয় অনবদ্য পাঠ্যগ্রন্থ। এ গ্রন্থের ভাষা সরল, শব্দবিন্যাস অনাড়ম্বর, প্রকাশভঙ্গি আকর্ষণীয়, আর বিষয়বস্তু গভীর ব্যঞ্জনাময়।
বহু অধ্যায়ে বিভক্ত, সহজের আবরণে আবৃত এই বিস্ময়কর জীবনগ্রন্থখানির ছত্রে ছত্রে বিধৃত রয়েছে সত্যের শিক্ষা, অধ্যাত্মপথের শিক্ষা, মানবিকতার শিক্ষা, ভালবাসবার শিক্ষা, উদারতার শিক্ষা; ধৈর্যের, সহ্যের, ত্যাগের, ক্ষমার, করুণার, মমতার, আত্মপ্রত্যয়ের, সর্বোপরি সল অবস্থায় অবিচল থাকার শিক্ষা। দুঃখে অবিচল, সুখে অবিচল, প্রাপ্তিতে অবিচল, অপ্রাপ্তিতে অবিচল।
শ্রীমা সারদাদেবীর সমগ্র জীবনখানিতেই অবিচলতার এই আশ্চর্য প্রকাশ। যদিও মনে হয় যিনি গুণাতীতা পরমাপ্রকৃতি বলেই গৃহীত, তার চরিত্রগুণের বর্ণনা করতে যাওয়ার চেষ্টা বাহুল্য-চেষ্টা নয় কি? সাধ্যই বা কতটুকু? তবু–সাধ্য না থাকলেও প্রয়োজন আছে। মাতৃনাম আলোচনায় আমরা ধন্য হই, পবিত্র হই। আর তা থেকে যদি এতটুকুও শুভপ্রেরণা আসে–পরম লাভ।
যুগ বদলায়, সেই বদলের সঙ্গে সঙ্গে সমাজের চেহারারও বদল ঘটে, চলতি যুগ বিগত যুগের রীতিনীতি, আচার-আচরণ আঁকড়ে বসে থাকতে পারে না, নতুন ভাবধারার কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে। যার ফলে প্রায়শই পুরনো আদর্শ, পুরনো চিন্তা-চেতনা, চিরসঞ্চিত সংস্কার ও মূল্যবোধগুলি মূল্য হারায়। কিন্তু মানবিকধর্মের যে মৌল গুণগুলি মানবচরিত্রের চিরন্তন আদর্শ হিসাবে স্বীকৃত হয়ে আসছে, তার কোনও পরিবর্তন হয় কি?
তা তো হয় না। ত্যাগ, ক্ষমা, সততা, সত্যনিষ্ঠা, দৃঢ়তা, মমতা, সাম্যবোধ, মানবপ্রেম, এইসব গুণগুলি চিরন্তন মর্যাদার ভূমিকায় স্থির থাকে।
শ্রীমা সারদাদেবীর অনন্য চরিত্রে এই গুণগুলি পূর্ণমাত্রায় প্রকাশিত ছিল, তাই লোকজীবনে শ্রীমার আদর্শ একান্ত প্রয়োজনীয়ের ভূমিকায় চির-অবিচল থাকবে। সে আদর্শ দেশকালের গণ্ডি অতিক্রম করে যুগে যুগে বিভ্রান্ত মানুষকে পথ দেখাবে, হতাশ জীবনে আশ্বাসের বাণী বহন করে আনবে।
পৃথিবীর একটি পরম প্রয়োজনের মুহূর্তে যুগাবতার ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের ও তাঁর লীলাসঙ্গিনী শ্রীশ্রীমা সারদাদেবীর দিব্য আবির্ভাব।
ঠাকুরের ইচ্ছায় মা-সারদা তাঁর দিব্যসত্তাটিকে লোকচক্ষে আবৃত রাখতে যে-জীবনটি গ্রহণ করেছিলেন, আপাতদৃষ্টিতে সেটি যেন সাধারণ এক মানবীমূর্তি। সুখ-দুঃখ, ভাল-মন্দ, আত্মীয় স্বজন, পারিবারিক জীবনের দায়দায়িত্ব, সবকিছু নিয়ে সেই জীবনের প্রকাশ। তার মধ্যে আবার অভাব-অনটনের জ্বালাও প্রবল। মায়ের আমাদের এমনও দিন গেছে, যখন ভাতের উপর লবণ জোটে নি।
তবু কী শান্ত, সংহত, প্রশান্ত! কিছুতেই কিছু এসে যায় না। কারও প্রতি কোনও অভিযোগ নেই, কাউকে জানান না কোনও অসুবিধা। মানবী হয়েও দেবী। যেন জীবনটিই তার এক গভীর তপস্যা। মা সারদাদেবী স্নেহের আধার, করুণার পারাবার, অনুপম এক মাতৃমূর্তি। একটি শান্ত মাতৃত্বের ভাব তাঁর বাল্যকাল থেইে। জয়রামবাটীতে একবার প্রচণ্ড দুর্ভিক্ষ, মানুষ অনাহারে মারা যাচ্ছে। সেই সময়–বিত্তে দরিদ্র কিন্তু চিত্তে পরম ঐশ্বর্যবান সারদা-জনক রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তার সংসারের জন্য রক্ষিত সম্বৎসরের চাল গোলা উজাড় করে ঢেলে দিলেন ক্ষুধার্তের জন্য। দলে দলে লোক আসে, ফুরিয়ে যায় খিচুড়ি, আবার চাপে উনানে, খিদের সময় গরম খিচুড়ি লোকেদের খেতে কষ্ট হচ্ছে দেখে বালিকা সারদা দুহাতে পাখা নিয়ে বাতাস করতে থাকেন তাদের ও আহা, এত গরম খাবে কি করে! জুড়োক।
যে যেখানে তাপদগ্ধ আছে, এসে জুডোেক। তার কাছে আছে মলয় বাতাসের পাখা–যার বাতাসে বাঁশ আর ঘাস ছাড়া সব কাঠ চন্দন হয়ে যায়। আহা, বাঁশ আর ঘাসের তাহলে উদ্ধার হবে না?
তা-ও হবে।
মূর্তিমতী সেবা, মূর্তিমতী করুণা এসে দাঁড়িয়েছেন যে মানুষের ঘরের মধ্যে, দেবেন তাদের চন্দন করে।
প্রদীপের নীচেই অন্ধকার। মায়ের নিকট-আত্মীয়জনেরা তার স্বরূপ চিনতে পারে না। ভক্তদের সঙ্গে তাই আত্মীয়দের সব সময় মতের মিল থাকে না। মনান্তর ঘটে।
জয়রামবাটীতে গিরিশ ঘোষের সঙ্গে কালীমামার তুমুল তর্ক–মা দেবী কি না এই নিয়ে।
কালীমামা চিরদিনই তাকে দিদি বলেই জানেন। দিদির কাছে কত আবদার, কত জাগতিক প্রত্যাশা। হঠাৎ সেই দিদিটি দেবী হয়ে উঠলে তাঁর সহ্য হবে কেন? বলেই বা কি করে? তাই তর্ক তুমুল পর্যায়ে ওঠে।
কিন্তু অবশেষে গিরিশবাবুরই জিত! ভীত সন্ত্রস্ত পরাস্ত কালীমামা শরণ নিতে এলেন মা মহাশক্তির কাছে।
শ্রীমা তাড়াতাড়ি নিরস্ত করে বলেন : ওরে কালী, আমি তোর সেই দিদি। আজ তুই এ কি করছিস?
হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন ভাই। আঃ কী শান্তি!
যে যেভাবে শান্তি পায়। কেউ দেবীভাবে পেয়ে, কেউ দিদি, পিসী, খুড়ী ভাবে পেয়ে। তবু জানে এখানেই পরম শান্তি, পরম স্বস্তি, অগাধ স্নিগ্ধচ্ছায়া।
লোকশিক্ষার্থেই শ্রীমার এই দুইসত্তার ভূমিকায় প্রকাশ। দেবীসত্তা আর মানবীসত্তার এক অনায়াস সমন্বয়। সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী দুটি ধারাকে কি অসীম শক্তিতে এমন শান্ত গতিতে সমান্তরালধারায় প্রবাহিত করা যায়, তা ভাবতে গেলে স্তব্ধ হয়ে বসে থাকতে হয়।
আরও স্তব্ধ হতে হয়, আরও ভয়ঙ্কর বিপরীত দুটি ধারাকে এমনই অবলীলায় বহন করার শক্তি দেখে। সাধক-সন্ন্যাসী-স্বামী স্ত্রীকে মা বলে ত্যাগ করেছেন এ দৃষ্টান্ত বিরল নয়, কিন্তু স্ত্রীকে মা বলে গ্রহণ করেছেন, এমন নজির ইতিহাসে আছে?
মা বলে গ্রহণ করলেন, মা কালী বলে ফুল-চন্দনে পূজা করলেন। অথচ চিরকালীন সংস্কারের উপর এই বিপর্যয়, এই আঘাত মা-সারদা অবিচলিত চিত্তে সইলেন, বইলেন।
তারপরও গুণ্ঠনবতী! লোকলোচনের অন্তরালে অবস্থিত সে গুণ্ঠন উন্মোচিত হয়েছে, যখন শতসহস্র ভক্তসন্তান মা মা বলে কাছে এসে দাঁড়িয়েছে।
ঠাকুর তার আরব্ধ কর্মভার দিয়ে গিয়েছিলেন লীলাসঙ্গিনী সারদার হাতে। সেই বিপুল কর্ম কী অসাধারণ মহিমায় সমাধা করে গেলেন মা জীবনের বাকি চৌত্রিশটি বছর ধরে। কত শত বিনষ্ট জীবনকে উদ্ধার করলেন, কত শত হাহাকার-পীড়িত হৃদয়কে মাতৃহৃদয়ের আশ্রয় দিলেন, কত শত মেয়েকে দিলেন নারীজীবনের সত্যআদর্শের শিক্ষা।
আর কত ব্যাকুল দীক্ষার্থীকে দিলেন বৈরাগ্যের দীক্ষা, কত ঈশ্বরপিপাসু মনকে দিলেন ঈশ্বর সান্নিধ্যের অনির্বচনীয় স্বাদ। মায়ের নিজের ভাঁড়ারেই তো সে জিনিস মজুত!
ঠাকুরের আবির্ভাব যদি সর্বধর্মসমন্বয়সাধনে, তো শ্রীমার আবির্ভাব সর্বকর্মের সমন্বয়সাধনে। মায়ের জীবনদর্শনে যেমন মানুষের ছোটবড় ভেদ নেই, তেমনই কাজেরও ছোটবড় ভেদ নেই। সবেতেই তাঁর প্রসন্ন প্রশান্তি। ভক্তের পূজার প্রতিমারূপেও তার যেমন অকুণ্ঠ আত্মস্থতা, সংসারের সেবিকারূপেও তেমনই অকুণ্ঠ আত্মস্থতা। যে মুহূর্তে চরণে ভক্তজন-নিবেদিত পুস্পাঞ্জলি নিচ্ছেন, তার পরমুহূর্তেই ছুটছেন সেই ভক্তদেরই আহার-আয়োজনের তদ্বিরে। তাই কি অর্থের স্বচ্ছলতাই আছে? নেই বলেই পরিশ্রম শতগুণ!
জয়রামবাটীর সেই সংসারটিকে ভাবলে যেন মনের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়। সে সংসারের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত মধ্যমণিটি দশভুজা হয়ে সংসারটিকে সামলাচ্ছেন। কুটনো কুটছেন, রান্না করছেন, পূজার গোছ করছেন। পূজান্তে প্রসাদ ভাগ করছেন, পান সাজছেন, সুপুরি কাটছেন, আটা-ময়দা মাখছেন, রুটি-লুচি তৈরি করছেন, কলসিতে জল আনছেন, ঢেঁকিতে পাড় দিচ্ছেন, বর্ষার দিনে বাড়ির সকলের ভিজে কাপড় শুকোবার চেষ্টা করছেন, সলতে পাকাচ্ছেন, প্রদীপ সাজাচ্ছেন, লণ্ঠনগুলি পরিষ্কার করছেন, ভক্তদের সমস্ত সুখস্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করছেন, এমনকি পাড়ায় পাড়ায় বেতো পায়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছেন–ছেলেদের চায়ের জন্য দুধ যোগাড় করতে।
বাড়িতে যে কাজের লোকের এমনই অভাব ছিল তা নয়, তবুও যে-কোনও কাজই হোক শ্ৰীমা সে-কাজ আর কারও অপেক্ষায় ফেলে রাখতেন না। চোখের সামনের কাজগুলি আর কারও অপেক্ষায় ফেলে না রেখে নিজে করে ফেলা, এই যে শিক্ষাটুকু (শ্রীমার অপার গুণসমুদ্রের এক আঁজলা জল), এইটুকুই যদি আপন অভ্যাসের মধ্যে গ্রহণ করে নিতে পারা যায়, তাহলে সংসারের মানুষ আর মানুষের সংসার ধন্য হয়ে যেতে পারে।
কাজ তুচ্ছই হোক, অথবা বৃহই হোক, তার সম্বন্ধে মূল্যবোধ, আর তাতে নিষ্ঠা, এই তত কর্মশিক্ষার গোড়ার কথা। ঠাকুর শ্রীমাকে বাল্যে প্রদীপের সলতেটি পর্যন্ত কি করে ভালভাবে পাকাতে হয় তা শিখিয়েছিলেন।
শ্রীমার পটভূমিকাটি হচ্ছে শতাধিক বছর আগের বাংলাদেশ। যখন সেখানে জাতপাত আর আর্গের অপ্রতিহত প্রতাপ। এমনকি শহর কলকাতাতেও তার যথেষ্ট দাপট।
নিষ্ঠাবান শিক্ষিত হিন্দু ব্যক্তিরাও অনেকেই সাহেবের অফিসে চাকরি করায়, সারাদিন জলস্পর্শ না করে থাকতেন, বাড়ি ফিরে স্নান করে তবে জল খেতেন। বালিকাবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাধ্যসাধনায় মেয়েদের স্কুলে পড়তে দেওয়া হচ্ছে বটে, কিন্তু মেমের ইস্কুলে পড়ার অপরাধে বেচারীদের স্নান করে অথবা গঙ্গাজলে শুদ্ধ হয়ে তবে ঘরে ওঠবার অনুমতি জুটত। অথচ তখন সমাজমানসে ভিতরে ভিতরে উঠেছে এক অস্থির আলোড়ন।
অন্তঃপুরের আড়ালে জাগছে যেন অবরোধমুক্তির পিপাসা, আর বাইরে থেকে চিন্তানায়কদের মধ্যে জাগছে অনড় সমাজের সংস্কারের চিন্তা, তারা ভাবছেন, স্ত্রী-শিক্ষার ও স্ত্রী স্বাধীনতার প্রয়োজন এসেছে, কিন্তু কোনখানে টানা হবে তার সীমারেখা?
ভারতের চিরন্তন ঐতিহ্য তো নষ্ট করা চলে না! সেই চিরন্তন ধারার সঙ্গে পাশ্চাত্য শিক্ষার ভাবধারা যুক্ত করে অন্ধসংস্কারমুক্ত ভবিষ্যৎ সমাজে মেয়েদের যথার্থ রূপটি কি হওয়া উচিত, এই প্রশ্ন সেই যুগকে বিক্ষত করছে। কোনও কোনও অতি আলোকপ্রাপ্ত জন আলোকপ্রাপ্তির পরিচয় দিতে মেয়েদের গাউন পরিয়ে খোলা গাড়িতে হাওয়া খাওয়াতে পাঠাচ্ছেন, আর বাকি আলোকহীনের দল সেই অভাবিত হাস্যকর দৃশ্যে চকিত হয়ে বেশি করে পুরনো খুঁটি আঁকড়াতে চাইছেন। এমন একটি দিশেহারা সময়ে মা-সারদার আবির্ভাব।
মা-সারদা বহুবিধ মতানৈক্যের সমাধানে একটি ঐক্যের রূপ; সকল দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবসানের জন্য একটি দ্বন্দ্বাতীত মাতৃমূর্তি!–যে-মূর্তিটি হচ্ছে ভবিষ্যৎ সমাজের নারীর প্রকৃত রূপের আদর্শ; যে-দ্বন্দ্বাতীত রূপটি দেখে মুগ্ধ হয়ে বিদেশিনী মেয়ে নিবেদিতার মনে হয়েছে, মা-সারদা যেন ভারতীয় নারীর আদর্শ সম্বন্ধে শ্রীরামকৃষ্ণের শেষ বাণী।
আবার এই প্রশ্নটিও তার মনে জেগেছিল, তিনি পুরনো আদর্শের শেষ প্রতিনিধি না নতুন কোন্ আদর্শের অগ্রদূত?
দেখা যায়, শ্রীমা একাধারে এই দুই আদর্শেরই ধারক। তার মধ্যে একদিকে যেমন কর্মে, ধর্মে, আচারে-আচরণে, জীবনদর্শনের ভঙ্গিতে, ভারতীয় নারীর শাশ্বত ভাবধারাটি পরিস্ফুট, অপরদিকে তেমনই সংস্কারমুক্ত চিত্তের উদার আলোকের স্ফুরণ।
এই সংস্কারমুক্ত চেতনার প্রতিবিম্বটি বিশেষ করে স্পষ্ট ধরা পড়েছে নিবেদিতার ক্ষেত্রে। বিদেশিনী মেয়ে নিবেদিতা মায়ের পরমপ্রিয় খুকি। প্রথম দর্শনেই মা তাকে কোলে টেনে নিয়েছেন। কাছে বসিয়ে আদর করেছেন, নিজের বিছানায় বসিয়ে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়েছেন, হাতে করে খাইয়েছেন, এমন কি একসঙ্গে খেয়েছেন।
নিবেদিতার যে কর্মর্জগৎ, মেয়েদের লেখাপড়া শেখানো, সমাজে মেয়েদের অবস্থার উন্নতিসাধন, এগুলিতে যে মায়ের পরম উৎসাহ! তাই নিবেদিতা তার একান্ত আপনজন।
আজকের দিনের কথা ছাড়তে হবে, সেকালের সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে দেখলে বোঝা যায়, কী প্রচণ্ড একটি বিপ্লবী কাজ করেছেন মা নিঃশব্দে, নিরাড়ম্বরে। তাঁর কাছে কেউ বিদেশী নয়, কেউ দূরের নয়, কারণ তিনি মা! সবাইয়ের মা! তিনি পতিতেরও মা।
কখনও কোনও বহিরাগত ভক্তের কোন অসঙ্গত আচরণ দেখে ঠাকুরের অন্তরঙ্গ ভক্তদের কেউ যদি মাকে অনুরোধ করেছেন সেই লোককে কাছে আসতে না দিতে, মা বলে উঠেছেন, অমন কথা আমার মুখ দিয়ে বেরুবে না। আমার ছেলে যদি ধুলোকাদা মাখে, আমাকেই তো ধুলো ঝেড়ে কোলে নিতে হবে!
জয়রামবাটীতে এত পুঁতে মুসলমান কিছু কলা নিয়ে এসেছে ঠাকুরের জন্য। বলছে, মা… নেবেন কি?
মা হাত পেতে বলেছেন, খুব নেব, বাবা, দাও। ঠাকুরের জন্য এনেছ, নেব বই কি?
কেউ যখন বললেন, ওরা চোর, আমরা জানি। ওর জিনিস ঠাকুরকে দেওয়া কেন? সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয় না মায়ের। মুসলমানটি মুড়ি-মিষ্টি নিয়ে বিদায় নিলে মা গম্ভীরভাবে বলে ওঠেন, কে ভাল, কে মন্দ, আমি জানি। তিনি বলতেন, দোষ তো মানুষের লেগেই আছে। কি করে যে তাকে ভাল করতে হবে, তা জানে কজনে।
কেমন করে মন্দকে ভাল করতে হয়, এই জানাটিই তো আসল জানা। মা কত অপরাধীকে, কত পতিতকে ক্ষমার মন্ত্রে আর বিশ্বাসের মন্ত্রে শুদ্ধ করে তুলেছেন, মায়ের জীবনগ্রন্থে ছত্রে ছত্রে তার দৃষ্টান্ত বিস্তৃত।
মায়ের ডাকাতবাবার কাহিনীটি কার না জানা?
সন্ধ্যার অন্ধকারে একা সারদা মুখোমুখি হলেন সেই ভয়ঙ্কর ডাকাতের সঙ্গে। যে-লোক নাকি অনায়াসে মানুষ খুন করতে পারে।
মা-সারদা ভয়ে সংজ্ঞা হারালেন না, আর্তনাদ করে উঠলেন না, একান্ত বিশ্বাসের নম্রতা নিয়ে তার কাছেই শরণ চাইলেন। বললেন, বাবা, আমার সঙ্গীরা আমাকে ফেলে গেছে, আমি বোধহয় পথ ভুলেছি; তুমি আমাকে সঙ্গে করে যদি তাদের কাছে পৌঁছে দাও! ডাকাতপত্নীর হাত ধরে বললেন, মা, আমি তোমার মেয়ে সারদা, সঙ্গীরা ফেলে যাওয়ায় বিষম বিপদে পড়েছিলুম; ভাগ্যে বাবা ও তুমি এসে পড়লে…।
হঠাৎ ওলট-পালট হয়ে গেল সেই দস্যুদম্পতির হৃদয়। পরবর্তী ঘটনায় এই দেখা যায় যে, আশ্রয়প্রার্থিনীকে তারা যে শুধু আশ্রয়ই দিল, তা নয়, দিল সেবা, যত্ন, শ্রদ্ধা, স্নেহ।
কেমন করে এমন হল? শুধুমাত্র প্রত্যুৎপন্নবুদ্ধির ফলে? তা হয় না। এত সহজ নয়। একান্ত বিশ্বাসের সততাই এমন ঘটনা ঘটাতে পারল। পিতৃ-সম্বোধনের মধ্য দিয়ে মা করাঘাত করলেন তার ঘুমন্ত বিবেকের দরজায়, শরণ চাইলেন তার হৃত মনুষ্যত্বের কাছে।
এ আবেদন ব্যর্থ হল না। দস্যু ফিরে পেল তার হারানো মনুষ্যত্ব, জেগে উঠল তার ঘুমন্ত বিবেক। বিশ্বাসের কাছে পরাজিত হল হিংসা। এই সর্বজন-পরিচিত কাহিনীটির মধ্যে এই শিক্ষাটি রয়েছে–অকপট বিশ্বাসে হিংসাকে জয় করা যায়।
শ্রীমার জীবনের প্রতিটি ঘটনা, প্রতিটি আচরণ, প্রতিটি কথার মধ্যে জগৎ ও জীবন সম্বন্ধে একটি আশ্চর্য সমন্বয়ের শিক্ষা। তা নইলে বলতে পারেন, আমার শরৎ (স্বামী সারদানন্দ) যেমন ছেলে, এই আমজাদও তেমন ছেলে!
কী অকুতোভয় মহিমান্বিত এই সতেজ উক্তি! কোথায় শরৎ, আর কোথায় দাগী ডাকাত আমজাদ! শরৎ তার একান্ত নির্ভরস্থল, শরৎ তার ভারী। শরৎ সহস্রফণা বাসুকি, যেদিকে জল পড়ে, সেদিকে ছাতি ধরে। শরৎ ছাড়া মায়ের ঝক্কি এমন করে সামলাতে আর কে পারে?
অথচ সাম্যের আদালতে রায় হয়ে গেল, আমার শরৎ যেমন ছেলে, এই আমজাদও তেমন ছেলে। এমন শঙ্কাও মনে এল না, শরৎ একথা শুনলে কি মনে করবে?
না শঙ্কা নেই। যেখানে বিশ্বাস সেখানে শঙ্কার স্থান নেই। আত্মবিশ্বাস থেকেই তো অপরকে বিশ্বাস। তাঁর সন্তানরা কেউ তার উপর বিরক্ত হতে পারে বা রাগ করতে পারে, মা এমন কথা ভাবতেই পারতেন না।
মঠের সেই চোর-ভৃত্যটির কাহিনীই ভাবা যাক।
চুরির অপরাধে স্বামীজী তাকে মঠ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন, সে এসে কেঁদে পড়ল মায়ের কাছে। সহানুভূতি-ভরা মাতৃহৃদয় স্থির থাকতে পারল না। বাবুরাম মহারাজকে ডেকে বললেন, দেখ বাবুরাম, এ লোকটি বড় গরীব। অভাবের তাড়নায় ওরকম করেছে। তাই বলে নরেন ওকে গালমন্দ করে তাড়িয়ে দিলে! সংসারের বড় জ্বালা; তোমরা সন্ন্যাসী, তোমরা তো তার কিছু বোঝ না! একে ফিরিয়ে নিয়ে যাও।
এখানেও মায়ের মনে এল না, নরেন রাগ করবে কিনা, অথবা নরেন আমার কথা রাখবে কিনা?
এমন সহজ নিশ্চিন্ত আসে শুধু ভালবাসার অসীম ক্ষমতা থেকে।
আজকের যুগ ভালবাসার সঞ্চয়ে ক্রমশই যেন দেউলে হয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে ফেলছে ভালবাসবার ক্ষমতা। আজকে যেন কেউ কারও অন্তরঙ্গ নয়, সবাই নিঃসঙ্গ।
এ যুগের বহুবিধ সমস্যার মধ্যে এইটিই বোধহয় সব থেকে বড় সমস্যা, এই ভালবাসাহীনতা! এ সমস্যা যুগকে রুক্ষ শুষ্ক করে ফেলছে। ধ্বংস করে ফেলতে চাইছে মানুষের মধ্যেকার মানবিকতা-বোধ পর্যন্ত। মনে হয়–এখনই বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষণ এসেছে অগাধ ভালবাসার সঞ্চয়ে ভরা শ্ৰীমার জীবন ও বাণীর অনুধ্যানের।
এমন সহজ সাধনা আর কোথায় মিলবে? কোথায় মিলবে এমন আটপৌরে ঈশ্বরী?
ভক্ত আর ভগবানের মধ্যে দূরত্ব ঘোচাবার বড় সহজ কৌশলটি আবিষ্কার করেছিলেন মা সারদা। কোথাও কোন ব্যবধান নেই, জগতে শুধু মা আছেন আর সন্তান আছে। জাগতিক সম্পর্কগুলিও ক্রমশ তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে, সবাই ডাকছে মা! সবাই বলছে মা!
মায়ের কাছে জাতিভেদের বিন্যাস আলাদা। তার কাছে ভক্ত একটি বিশেষ জাত। আর সেটি খুব উঁচু জাত। ভক্তরা আসবে, ভক্তরা খাবে, ভক্তদের কষ্ট হচ্ছে, এ নিয়ে তার ব্যস্ততার শেষ নেই। জাতি-বর্ণ নির্বিশেষে ভক্তদের এঁটো পরিষ্কার করতেও দ্বিধা ছিল না তার। সে যেন ভক্তদের প্রতি ভক্তিরই প্রকাশ। কিন্তু আচার-পরায়ণা নলিনীদি বলতেন, মাগো, ছত্রিশ জাতের এঁটো কুড়াচ্ছে!
মায়ের অনায়াস উত্তর, সব যে আমার, ছত্রিশ কোথা?
হ্যাঁ সবই তার। ভক্ত তো বটেই, অবোধ-অজ্ঞানও।
মাঝে মাঝে মা খবরের কাগজ পাঠ শুনতেন। তখন স্বাধীনতা-আন্দোলনের কাল। রাজনৈতিক নির্যাতন, বিশেষ করে মেয়েদের ওপর অত্যাচার শুনলে ঠাকুরের ছবির কাছে গিয়ে ক্ষুব্ধভাবে বলতেন, এসব কি হচ্ছে!
অথচ কেউ ইংরেজের সম্পর্কে ঘৃণা প্রকাশ করলে বলতেন? তারাও তো আমার ছেলে।
তাঁর বাণীই তাঁর জীবন।
মালাছেঁড়া মুক্তোর মত অজস্র অমূল্য বাণী ছড়ানো রয়েছে শ্রীমার নিত্যদিনের প্রতিটি সহজ কথার মধ্যে–যে-বাণীর অন্তর্নিহিত তত্ত্ব তার আপন জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে, প্রতিটি নিঃশ্বাসে-প্রশ্বাসে মূর্ত হয়ে প্রকাশিত।
নারী-পুরুষ, গৃহস্থ সন্ন্যাসী, সকলের জন্যই ছিল তাঁর পথনির্দেশের শিক্ষাবাণী। সহজ সাধারণ ঘরোয়া কথার মধ্যে জীবননীতির কী অসাধারণ মন্ত্রগুলিই রেখে দিয়েছেন তিনি! গ্রহণেচ্ছু মন নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখলে অনেক কিছুই পাওয়া যায়।
মায়ের হিসাবে, জ্ঞানী সন্ন্যাসী যেন হাতীর দাঁত সোনা দিয়ে বাঁধানো। কিন্তু সন্ন্যাসীর রাগ অভিমান? সে যেন বেতের রেক চামড়া দিয়ে বাঁধা।
অনেক সন্ন্যাসী-সন্তানের রাগ-অভিমানের ধাক্কা মাকে সইতে হয়েছে সন্দেহ নেই। সেদিক থেকে তুলনাটি তাৎপর্যপূর্ণ। তবে মা সেই রাগ-অভিমানের সম্মানও রাখতেন বইকি! মা সকলেরই সম্মান রাখতেন, রাখতে শেখাতেন।
কেউ উঠোন পরিষ্কার করে ঝাঁটাটা ছুঁড়ে ফেলে রাখছে দেখে বলে উঠলেন : ও কি গো… যার যা মান্যি, তাকে সেটি দিতে হয়। বঁটাটিকেও মান্যি করে রাখতে হয়…।
বলতেন, সময়ে ছাগলের পায়েও ফুল দিতে হয়।
বলতেন, স্ত্রীলোকের লজ্জাই হল ভূষণ। যার আছে ভয়, তারই হয় জয়। যে সয় সেই রয়।
আমাদের জীবনে আর কর্মে এই ছোট্ট ছোট্ট উপদেশগুলি যদি গ্রহণ করতে পারা যেত অনেক সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যেত।
পৃথিবীর মত সহ্যশীলা মা-সারদা, পৃথিবীর মানুষকেও উপদেশ দিয়ে রেখেছেন, পৃথিবীর মতো সহ্যগুণ চাই। পৃথিবীর ওপর কত রকমের অত্যাচার হচ্ছে, অবাধে সব সইছে।১৫ সন্তোষের সমান ধন নেই। আর সহ্যের সমান গুণ নেই।
মানুষ শান্তি শান্তি করে পাগল হয়, কিন্তু নিজেই অশান্তি সৃষ্টি করে। মা এই অবস্থা থেকে উদ্ধার হবার একটি সহজ পথ বাতলে দিয়েছেন, যদি শান্তি চাও, মা, কারও দোষ দেখো না। দোষ দেখবে নিজের।১৭
সকলের ওপর সমান ভালবাসা হয় কি করে জানো? যাকে ভালবাসবে তার কাছে প্রতিদান কিছু চাইবে না। তবেই সকলের ওপর সমান ভালবাসা হয়।
অধিকারী-অনধিকারী নির্বিশেষে সব ভক্তদের সর্বদা একই আক্ষেপ, ভগবান পেলাম না, ভগবান পেলাম না। তার উত্তরে মা বলেছেন, ভগবানলাভ হলে কি আর হয়? দুটো কি শিং বেরোয়? না, মন শুদ্ধ হয়? শুদ্ধ মনে জ্ঞানচৈতন্যলাভ হয়।
নির্বাসনা মা বলেছেন, বাসনাই সকল দুঃখের মূল। ঠাকুরের কাছে যদি কিছু চাইতেই হয়, তো-নির্বাসনা চেয়ে নেবে।
অথচ নিজেই রাধুর অসুখে দেবতার উদ্দেশে পয়সা তুলে রাখছেন। দেখে কোন ভক্ত-মহিলা বলছেন, মা, আপনি কেন এরূপ করছেন? মায়ের তৎক্ষণাৎ মীমাংসা, অসুখ হলে ঠাকুরদের মানত করলে বিপদ কেটে যায়, আর যার যা প্রাপ্য তাকে তা দিতে হয়।
গৃহদেবতা, কুলদেবতা, গ্রামদেবতা সকলেরই যে কিছু প্রাপ্য থাকে, এইটিই উল্লেখ করে বোঝালেন।
সকল সমস্যা আর সকল সংশয়ের মীমাংসা তাঁর কাছে।
যেখানে যেমন সেখানে তেমন, যখন যেমন তখন তেমন।
জলে ইচ্ছে করেই পড় আর কেউ ঠেলেই ফেলে দিক-কাপড় ভিজবেই। জোর করে জপের অভ্যাস করলেও, জপমন্ত্রের কাজটি হবেই কিছু।
এমন কত কথাই অহরহ বলে গেছেন মা উঠতে, বসতে, চলতে, ফিরতে।
জগতে মহৎ আদর্শের অভাব নেই, নেই মহৎ বাণীর অভাব। অভাব শুধু গ্রহণেচ্ছু চিত্তের!
অনিচ্ছুক শিশুকে মা যেমন তার পুষ্টির জন্য লেগে পড়ে থেকে, ভুলিয়ে-ভালিয়ে, ধরে বেঁধে দুধটুকু না খাইয়ে ছাড়েন না, শ্রীমাও তেমনই তার সন্তানদের মুক্তির জন্য লেগে পড়ে থেকে, ভুলিয়ে-ভালিয়ে, ধরে-বেঁধে, আনন্দলোকের অমৃতস্বাদটি পাইয়ে তবে ছেড়েছেন।
যুগে যুগে, কালে কালে লোক-উদ্ধার করতে ঈশ্বরের অবতরণ ঘটে। সমাজ যখন আত্মবিস্মৃত হয়ে বিভ্রান্তির পথে ছোটে, কল্যাণ-অকল্যাণ, শ্রেয়-অশ্রেয়ের পার্থক্য হারায়, মানুষ শব্দটার অর্থ ভোলে, তখনই ঈশ্বরকে নেমে আসতে হয় আলোর মশাল ধরে অন্ধকার যুগকে পথ দেখাতে।
সময়সীমা পার হলেই লোকলোচন থেকে অন্তর্হিত হতে হয় তাকে, কিন্তু লোকমানসে যে শুভশক্তির বীজ বপন করে যান, তা সমকাল এবং দূরবর্তীকাল পর্যন্ত অন্ন যোগায়।
এমনই এক যুগসন্ধিকালে ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ ও শ্রীশ্রীমা সারদাদেবীর পুণ্য-আবির্ভাব অন্ধকারে পথ দেখাতে। দীপশিখা জ্বলতে থাকে গৃহকোণে বা দেহলীতে, তার আলোকরেখা বহুদুর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তাই বাংলাদেশের ক্ষুদ্র গ্রাম কামারপুকুর-জয়রামবাটী থেকে বিচ্ছুরিত আলোকধারা পৃথিবী প্লাবিত করে।
আশ্চর্য এক সমন্বয়মন্ত্র দিলেন তারা যুগকে, কালকে, পৃথিবীকে। আর দিলেন ভালবাসা।
অগাধ অফুরন্ত ভালবাসা।
জ্ঞানী-পণ্ডিত, ত্যাগী-বৈরাগী, ভক্ত-শরণাগত, আবার মূর্খ-অজ্ঞানী, পাপী-তাপী, সকলের জন্যই রয়েছে তাঁর ভালবাসার ভাঁড়ার–দুহাট করে খোলা। ভালবাসাই তাঁর শিক্ষামন্ত্র।
সেই অফুরন্ত ভালবাসার সুনিবিড় স্নিগ্ধচ্ছায়ায় এসে বসতে পারলে, শান্তি আসে, সান্ত্বনা আসে, আর ভরসা আসে–আমরা গৃহহীন নই। আমাদের একটি আশ্রয় আছে।