লোকটা কে – বরেন গঙ্গোপাধ্যায়
প্রাইভেট ডিটেকটিভ হিসেবে পরাশর সেনের তখন বেশ নামডাক। এই নাম ছড়াবার পেছনে রয়েছে একটা জোড়াখুনের রহস্য উদ্ধার। যেভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরাশর সেই দুর্ধর্ষ খুনিকে আবিষ্কার করেছিল, তাতে তাকে প্রশংসা না করে পারা যায় না। এই নিয়ে খবরের কাগজে খুব লেখালিখিও হয়েছিল একসময়।
অবশ্য এমনিতে পরাশরকে দেখলে মনে হবে ছাপোষা মানুষ। যেন ভাজা মাছটাও উলটে খেতে জানে না। কিন্তু ডিটেকটিভ হিসেবে তদন্তের কাজে ওর বুদ্ধি যেন ক্ষুরধার হয়ে ওঠে। কোন পরিবেশে কোথায় কীভাবে টোপ ফেলে এগোতে হবে, সে ব্যাপারে ওর জুড়ি মেলা ভার।
গড়িয়ার কাছে বড়ো রাস্তার ওপরই পরাশরের অফিস। অফিস মানে ছোট্ট একটা ঘর। বেশ সাজানো—গোছানো। সেখানে হারু নামে একটা ছোকরা সারাদিন ঘর খুলে বসে কাটায়। প্রয়োজনে—অপ্রয়োজনে ফাই—ফরমাস খাটে, চা—ফা এনে দেয়। অফিসে কে এল না এল তা নোট করে রাখে। এ ছাড়া কখনো বা ব্যাঙ্কে যাওয়া, পোস্ট অফিসে যাওয়া, কাউকে কোনো চিঠি দিয়ে আসা ইত্যাদি সব কাজই হারুকে করতে হয়।
পরাশরকে গোয়েন্দাগিরির কাজে সারাক্ষণই ঘোরাঘুরি করতে হয়। যথাবিহিত সেদিনও ছুটোছুটির কাজ সেরে সন্ধ্যা নাগাদ পরাশর অফিস ঘরে এসে ঢুকল।
ঢুকেই দেখল, হারু একটা টুলের ওপর বসে ঝিমুচ্ছে।
কী রে হারু ঘুমুচ্ছিস?
কেমন যেন চমক ভেঙে লাফিয়ে ওঠে হারু, আজ্ঞে না স্যার। আসলে—, বোকার মতো একটু হাসে। আসলে স্যার সারাদিন একা একা বসে ঘুম পেয়ে গিয়েছিল।
তা অবশ্য ঠিক। তোকেও আর দোষ দিয়ে লাভ নেই। সারাদিন ওরকম বসে থাকলে ঘুম পাওয়ারই কথা। ঠিক আছে একটা কাজ কর দেখি। খাতাটা দে, কে কে এসেছিল একবার দেখে নিই।
আজ্ঞে স্যার, আজ কেউ আসেনি, একটা মাছিও না স্যার।
সে কি রে? কেউ না!
হারু আবার বোকার মতো তাকায়, মাথা চুলকোয়।
ঠিক আছে, তাহলে একটু চা—ই নিয়ে আয়। চা—টা খাইয়ে তুই বাড়িও চলে যেতে পারিস। মিছিমিছি বসে থেকে আর কি করবি।
হারু চায়ের কেটলিটা হাতে নিল। তারপর ছুটে গিয়ে চা নিয়ে এসে পরাশরকে একটা কাপে ঢেলে দিল। নিজেও একটু নিল। তারপর চা খাওয়া হয়ে গেলে বোকার মতো একটু হাসল আবার।
কী হল, হাসছিস যে? বললাম তো তুই যেতে পারিস। আমি বরং আর একটু বসেই যাই। চাবিটা এখানে রেখে যা।
হারু তাই করে। চাবিটা রেখে চলে গেল।
পরাশর ঘড়ি দেখল। সবে সাতটা। তার মানে এখনও সন্ধ্যাই বলা যেতে পারে। চেয়ারে হেলান দিয়ে পা দুটো সামনের দিকে টেনে লম্বা করে ছড়িয়ে বসে রইল খানিকক্ষণ। তারপর হঠাৎ কি খেয়াল হওয়ায় নতুন কেস হিস্ট্রির ফাইলটা পাশের র্যাক থেকে টানতে গিয়ে দরজার দিকে চোখ পড়ে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠল। পর্দার ওপাশে কেউ একজন যেন দাঁড়িয়ে।
কে? টান টান হয়ে বসে জিগ্যেস করে পরাশর।
বাইরে থেকে কেমন একটা মিনমিনে গলা, ভেতরে আসতে পারি স্যার?
আসুন। ওখানে দাঁড়িয়ে কি করছেন?
পর্দা সরিয়ে লোকটা দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। কেমন যেন ইতস্তত ভাব। একটু কথা ছিল স্যার।
লোকটার আপাদমস্তক একবার ভালো করে দেখে নিল পরাশর। বছর পঞ্চাশেক বয়স। পরনে ময়লা ধুতি, গায়ে কলার ছেঁড়া শার্ট, পায়ে ছেঁড়া—ফাটা চপ্পল। কিন্তু এসব যেমন—তেমন, লোকটার কপালের পাশে একটা টিউমার। ছোটোখাটো একটা আপেল যেন ওখানে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আর চোখ দুটোও কেমন যেন মিয়োন।
কি ব্যাপার, বসুন না, দাঁড়িয়ে রইলেন কেন?
বসবার জন্য একটা চেয়ার দেখিয়ে দেয় পরাশর।
লোকটা এগিয়ে এসে চেয়ারে বসে।
কী কথা বলুন এবার?
আগন্তুক ঘরের চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিল। তারপর পরাশরের দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল, একটা খুনের ঘটনা স্যার।
খুনের ঘটনা, মানে! পরাশর কেমন সোজা হয়ে বসে। কোথায় খুন, কে খুন করল?
খুন করে স্যার বডিটাকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
পরাশর কেমন বোকার মতো তাকায়। তারপর নোট করার জন্য ডায়েরি বুকটা টেনে নেয়, একটু খুলে বলুন দেখি। কোথায় খুন, কাকে? কেমন যেন উত্তেজনা বোধ করতে থাকে পরাশর।
অথচ লোকটা নির্বিকার। শীতলভাবেই বলল, আপনি যদি বডিটা দেখতে চান স্যার দেখাতে পারি। তবে খুনি কিন্তু বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাই স্যার এই অসময়ে আপনাকে খবরটা দিতে এলাম।
পরাশর লোকটাকে আবার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল, লোকটার মাথায় কোনো গোলমাল নেই তো! কিন্তু না, তাও তো মনে হয় না। বলল, আচ্ছা দাঁড়ান, চা খাবেন?
না স্যার, আমি চা খাই না। তা ছাড়া স্যার, এদিকে যদি দেরি করেন লোকটা কিন্তু পালিয়ে যাবে। আজ রাতের ট্রেনেই ও বোম্বাই পালাবে বলে ঠিক করেছে। টিকিটও কাটা হয়ে গেছে ওর।
পরাশর বলল, কিন্তু ব্যাপারটা একটু খুলে বলবেন তো। ঘটনাটা কোথায় ঘটেছে, কে সে?
বেশি দূরে নয় স্যার। এই গড়িয়াতেই, খালের ধারে। একটা বহুকালের পুরোনো বাড়িতে।
ঠিকানা বলুন?
ঠিকানা বলল লোকটা। পরাশর চটপট তা লিখে নিল।
বেশ, এবার চলুন, কে খুন হয়েছে আর কেই বা খুন করেছে? কী নাম তার?
যে খুন করেছে স্যার তার নাম সি দাস মানে চণ্ডী দাস। মহা ফেরেববাজ লোক, ডেঞ্জারাস।
বটে। কাকে খুন করেছে?
আজ্ঞে স্যার ওরই এক পার্টনার অম্বিকা রায়কে। টাকাপয়সা নিয়ে দু—জনের মধ্যে অনেক দিন ধরেই ঝগড়া চলছিল। আজই স্যার সকালে নিজের বাড়িতে অম্বিকাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে মওকা বুঝে খুন করে।
আজ সকালে! কীভাবে খুন করল?
বাড়িটা স্যার এমনিতেই খুব নির্জন। চণ্ডী ছাড়া আর কোনো লোক থাকে না ওখানে। দু—জনে ঘরের ভিতর বসে কথা বলছিল। হঠাৎ সুযোগ বুঝে চণ্ডী একটা চপার দিয়ে ওর মাথায় একটা কোপ মারে। আর তাইতেই স্যার।…
বটে, তা আপনি জানলেন কী করে? আপনি কি দেখেছেন?
লোকটা কী যেন একটা উত্তর দিতে যাচ্ছিল, আর ঠিক তখনই কেলেঙ্কারি। টুক করে আলো নিভে গেল। পরাশর জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বুঝল, লোডশেডিং।
লোকটা বলল, আমি তাহলে যাই স্যার। খুনের খবরটা আপনাকে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য ছিল। এবার আপনি যা ভালো বুঝবেন করবেন।
বলতে বলতে লোকটা উঠে দাঁড়িয়েছে টের পেল পরাশর। সে কি মশাই, কোথায় যাচ্ছেন? কথাই তো হল না? তা ছাড়া স্পটটা দেখাবেন তো আমাকে?
সেখানে আমার যাওয়াটা ঠিক হবে না স্যার। আপনি একাই চলে যান। এখনই গেলে চণ্ডীবাবুকে পেয়ে যাবেন। ওকে জিগ্যেস করলেই সব জানতে পারবেন।
টুক করে ঘরের পর্দা সরিয়ে বেরিয়ে গেল আগন্তুক।
পরাশর কেমন বোকার মতো তাকিয়ে রইল। তারপর উঠে দাঁড়াল, ঘরের ভিতর এভাবে এখন বসে থাকারও মানে হয় না। একটু কী ভেবে জানালা বন্ধ করে দিল। তারপর বেরিয়ে এল ঘরের বাইরে। চারপাশে তাকাল, না, লোকটা উধাও।
অদ্ভুত ব্যাপার। পাগল না তো। হঠাৎ করে এসে একটা মার্ডারের কথা শুনিয়ে গেল, অথচ চোখে—মুখে ওর বিন্দুমাত্র উত্তেজনা নেই। নাকি আমাকে খানিকটা হ্যারাস করার জন্যই ব্যাপারটা করে গেল! কে জানে!
আবার ভাবল, নাহ একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। রাত তো এখন সবে সাড়ে সাত। দেখাই যাক না চণ্ডীবাবু নামে কাউকে পাওয়া যায় কি না।
ঘরে তালা লাগিয়ে ডায়েরিটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল পরাশর। আর রাস্তায় পা দিয়ে খানিকটা এগোতেই আবার আলো জ্বলে উঠল চারপাশে। যাক বাবা, বাঁচা গেল। অল্পের ওপর দিয়েই লোডশেডিং কাটল।
তারপর হাঁটতে শুরু করে পরাশর। এ—রাস্তা সে—রাস্তা করে শেষটায় নম্বর মিলিয়ে এসে হাজির হল চণ্ডীবাবুর বাড়ির সামনে। আবার ঘড়ির দিকে তাকাল, আটটা বাজতে মিনিট দশেক বাকি। কিন্তু এরই মধ্যে পাড়াটা কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। নিস্তব্ধ।
বাড়িটার দিকে তাকাল। বহু পুরোনো আমলের বাড়ি। দেয়াল ফুঁড়ে গাছ গজিয়ে আছে। সামনের দিকে বাগান মতো অনেকখানি জায়গা। ঝোপজঙ্গলে ভরে রয়েছে। কেউ যে এরকম একটা ভাঙাচোরা বাড়িতে বাস করে ভাবাই যায় না।
পরাশর দেখল, বাড়ির সব ক—টা দরজা—জানালাই বন্ধ। তবে পাশের দিকে একটা ঘরে যে আলো জ্বলছে সেটাও বোঝা যাচ্ছে।
ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে কলিং বেল টিপল পরাশর।
আর, কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা খুলে গেল। কে?
পরাশর দেখল, মধ্যবয়সি একজন লোক। পরনে প্যান্ট—শার্ট। পায়ে শু। একটু যেন ব্যস্তসমস্ত ভাব।
আমি একটু চণ্ডীবাবুর সঙ্গে কথা বলতে চাই।
বলুন কী দরকার। আমার কিন্তু একদম সময় নেই। ট্রেন ধরতে হবে।
পরাশর বলল, আপনি যে বোম্বে মেল ধরবেন সেটা আমি জানি। ট্রেন ক—টায়?
ভদ্রলোক কেমন যেন একটু চমকে উঠলেন, তার মানে, কে আপনি? আপনি কী করে জানলেন আমি বোম্বাই যাচ্ছি!
পরাশর মাথা ঠান্ডা রাখে। না দেখুন, বোম্বেতে আপনি ক—দিন থাকবেন? কোথায় উঠবেন? এসবও আমার জানা দরকার।
চণ্ডীবাবুর চোখ—মুখের চেহারাই যেন পালটে গেছে। একপলক ভ্রূ বাঁকা করে পরাশরের দিকে তাকালেন, এসব আপনি জিগ্যেস করার কে? কে আপনি?
এরকম পরিস্থিতিতে কীভাবে কথা বলতে হয় পরাশরের জানা। বলল, দেখুন চণ্ডীবাবু, আপনাকে একবার আমার সঙ্গে থানায় যেতে হবে। সেখানেই জানতে পারবেন আমি কে?
হোয়াট ডু ইউ মিন? থানায় কেন? কী করেছি আমি? যান যান মশাই, থানা দেখাবেন না। আমার এখন সময় নেই। যান।
বলতে বলতে ভদ্রলোক আবার ঘরে ঢুকে পড়লেন।
পরাশর কেমন বোকার মতো তাকিয়ে রইল। সন্দেহটা মাথার মধ্যে বেশ দানা বেঁধে উঠল। কিছুতেই লোকটাকে এখন হাতের বাইরে যেতে দেওয়া ঠিক হবে না। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আবার মনে হল, ও তো একদম খালি হাত—পা। আবার লোকটা তো খুনি আসামী, ও না পারে হেন কাজ নেই।
টুক করে ঘরের আলোটা নিভে গেল। নিভে যেতেই চমকে উঠেছিল পরাশর। চণ্ডীবাবু একটা স্যুটকেস হাতে ঘরের ভিতর থেকে বেরিয়ে এলেন, ও কী, এখনও আপনি দাঁড়িয়ে আছেন। বললাম, জরুরি কাজে আমাকে বাইরে যেতে হচ্ছে। এখনই না বেরোলে ট্রেন ধরতে পারব না।
বলতে বলতেই ভদ্রলোক ঘরে তালা লাগিয়ে স্যুটকেস হাতে সদরের দিকে এগিয়ে গেলেন।
পরাশর কী করবে বুঝতে পারে না। লোকটাকে কি ফলো করা উচিত? আবার মনে হল, ফলো করে কী লাভ, তার চেয়ে থানাতেই যাই, থানাকেই ব্যাপারটা আগে জানানো দরকার।
হঠাৎ পেছন থেকে কার একটা গলার আওয়াজ, স্পটটা একটু দেখে যাবেন না স্যার?
কে? পরাশর চমকে উঠে পিছনে তাকিয়ে দেখে, আরে এ তো সেই লোকটাই। খানিকক্ষণ আগে ওর চেম্বারে গিয়ে খুনের খবরটা ওকে দিয়ে এসেছিল।
আপনি!
হ্যাঁ স্যার আমি। চণ্ডী তো আপনাকে পাত্তাই দিল না দেখলাম। ও তো একটা ট্যাক্সি চেপে সটান হাওড়ার দিকে চলে গেল।
আপনি কোথায় ছিলেন এতক্ষণ?
লোকটার সেই মিয়োন চোখ, আসুন না, জায়গাটা আপনাকে দেখিয়ে দিই। খুন করে কোথায় মাটি চাপা দিয়েছে দেখে যান।
বাড়ির পেছন দিকে এগিয়ে যেতে থাকে লোকটা। পরাশরও ওর পিছু নেয়। এককালে এদিকেও বাগান ছিল বোঝা যায়। এখন বাগানের বদলে জংলা গাছে ঠাসা। বাউন্ডারি ওয়ালটা এদিকে বেশ উঁচু।
এই বাউন্ডারি ওয়ালের ওপাশেই স্যার খাল।
তাই বুঝি!
আর ওই কোণের দিকে দেখুন স্যার। লোকটা আঙুল তুলে দেখায়।
পরাশর দেখে দেওয়ালের এক পাশে ময়লা জঞ্জালের স্তূপ। তারই ওপর একটা ভাঙাচোরা ড্রাম বসানো।
ওই যে স্যার ময়লা ফেলার ড্রামটা দেখা যাচ্ছে, ওটা একটু সরালেই দেখা যাবে, গর্ত খোঁড়া হয়েছিল। বডিটাকে একটা বস্তায় ভরে ওখানে পুঁতে রাখা হয়েছে।
পরাশর এগিয়ে গেল ড্রামটার কাছে। ড্রামটা সরাবার জন্য হাত বাড়াতেই লোকটা হাঁ হাঁ করে উঠল, না স্যার, আপনি হাত দেবেন না। আগে পুলিশকে আসতে দিন। পুলিশের সামনেই বডিটা বার করা ভালো।
পরাশর হাত সরিয়ে নিয়ে পিছিয়ে এল। পুলিশকে তাহলে এখনই খবরটা দিতে হয়।
পুলিশ এখনই এসে পড়বে স্যার। ওই তো জিপের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
হ্যাঁ, একটা গাড়ি আসার শব্দই যেন পাচ্ছে পরাশর। সদর গেটের দিকে এগিয়ে গেল। সত্যিই একটা পুলিশ ভ্যানই এগিয়ে আসছে। আশ্চর্য পুলিশও জেনে গেছে তাহলে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়িটা এসে গেটের সামনে দাঁড়াল। ভ্যান থেকে নেমে এলেন ওসি।
এই যে পরাশরবাবু, কী ব্যাপার, তলব করেছেন কেন?
পরাশর একটু অবাক হয়, তলব করেছি, কই আমি না তো। তবে আপনারা এসে পড়ায় খুব ভালো হয়েছে।
সে কি মশাই, খানিকক্ষণ আগে তাহলে কে ফোন করল আমাদের। খুব জরুরি দরকার, আপনি অপেক্ষা করছেন, ফোর্স নিয়ে এখনি এই ঠিকানায় চলে আসতে বলেছেন আপনি।
কেমন রহস্যময় লাগে পরাশরের। কিন্তু তখন আর ওসব কচকচি বাড়িয়ে লাভ নেই। বলল, এ বাড়িতে ভীষণ একটা গোলমেলে ব্যাপার ঘটে গেছে। বাড়ির পেছন দিকে মাটির নীচে দারুণ এক রহস্য লুকোনো রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
তাই নাকি। কী রহস্য? চলুন তো দেখি।
খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়ে গেল। ড্রামটা সরিয়ে খানিকটা মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে পড়ল বস্তাবন্দি একটা মৃতদেহ।
টেনে উপরে তুলে আনা হল বডিটাকে। তারপর টর্চের আলোর মধ্যে বস্তাটা কেটে সরাতেই চমকে ওঠে পরাশর। আরে এ কি করে সম্ভব! পরনে ধুতি, গায়ে শার্ট। আরও আশ্চর্য লোকটার কপালের পাশে সেই আপেলের মতো টিউমারটাও।
কী হল?
পরাশর চারপাশে তাকায়। কিন্তু এতক্ষণ যে লোকটার সঙ্গে ও কথা বলল, সে কোথায়?
কে কোথায়, কার কথা বলছেন?
পরাশর এবার ভয়ে ভয়ে তাকায়। জানেন ওসি, অবিকল এরকম চেহারারই একটা লোক আমার চেম্বারে খুনের ঘটনার খবরটা দিতে গিয়েছিল। আবার কিছুক্ষণ আগেও লোকটা এখানে এসে আমার সঙ্গে কথা বলে গেছে। অবিকল এই চেহারা। এরকম ধুতি—শার্ট, কপালের টিউমারটাও।
তার মানে আপনি বলছেন—
বিশ্বাস করুন ওসি, আমার মনে হচ্ছে এই লোকটার আত্মাই আমাকে এখানে টেনে এনেছে। থানায় যে ফোনটা গিয়েছিল সেটাও বোধহয় ওরই কীর্তি।
তাই নাকি! পুলিশ অফিসারও কেমন বোকার মতো হাঁ করে তাকিয়ে রইলেন।
তারপর সোজা হাওড়া স্টেশনে। বম্বে মেলেই পাওয়া গেল চণ্ডীকে। তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হল থানায়। পুলিশের কাছে চণ্ডী স্বীকার করল, বন্ধুকে সেই হত্যা করেছে।
আশ্বিন ১৪০১