লিটমাস টেস্ট : যেভাবে বুঝবেন আপনি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত
যেকোনো সমস্যা সমাধানের পূর্বশর্ত হচ্ছে সমস্যাটা স্বীকার করে নেয়া। পর্ন আসক্তির ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তা-ই। প্রথমেই আপনাকে স্বীকার করতে হবে যে আপনি পর্নে আসক্ত, তবেই কেবল ভেতর থেকে আসক্তি দূর করার তাগাদা পাবেন। পর্ন-আসক্ত হবার পরেও আপনি যদি গোঁ ধরে থাকেন যে আপনি পর্ন আসক্ত না, শুধু মাঝেমধ্যে দু-একটী পর্ন ভিডিও দেখেন, তাহলে কারোরই সাধ্য নেই আপনাকে সাহায্য করার। আমরা আপনাকে ৫ টি প্রশ্ন দিচ্ছি
নিজেকে এ প্রশ্নগুলো জিজ্ঞাসা করুন। একটি প্রশ্নের জবাবও যদি “হ্যাঁ” হয়, তাহলে বুঝবেন, বিপদঘণ্টা বেজে গেছে। আপনি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন।
প্রথম প্রশ্ন : দিন দিন আপনার পর্ন ভিডিও দেখার সময় কি বেড়ে যাচ্ছে? একবার পর্ন দেখতে বসলে খেয়াল থাকে না কতটা সময় কেটে গেছে? প্রত্যেকদিন বা প্রত্যেকবার কি আপনি আগের দিনের চেয়ে বেশি সময় ধরে পর্ন ভিডিও দেখছেন? পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত লোকেরা প্রতিদিন তাদের পর্ন ভিডিও দেখার পরিমাণ একটু একটু করে বাড়িয়ে দেয়। ব্যাপারটা মাদক ব্যবহারের মতো। নিয়মিত মাদক ব্যবহার করা শুরু করলে একসময় মানুষ আবিষ্কার করে, আগে যে ডোজে “কাজ” হতো, এখন আর তাতে হয় না। নিয়মিত ব্যবহারকারীরা তাই ক্রমান্বয়ে মাদকের পরিমাণ বাড়াতে থাকে। পর্ন-আসক্তদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম। তারা একটা পর্ন ভিডিও এক-দু বার দেখার পর তাতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। মাদকাসক্তের রুটিনে তিনটি মূল কাজ থাকে। মাদকের জন্য টাকা জোগাড়, মাদক কেনা, নেশা করা। তার দৈনন্দিন জীবন, চিন্তাভাবনা, প্ল্যান-প্রোগ্রাম সব এ তিনটিকে ঘিরে আবর্তিত হয়। পর্ন আসক্তের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম। পার্থক্য হলো ফ্রি ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফির এ যুগে পর্ন-আসক্ত ব্যক্তিকে টাকার চিন্তা করতে হয় না। পর্ন-আসক্ত ব্যক্তির সময় যায় নতুন নতুন পর্ন ভিডিও খুঁজে বের করতে। এ খোঁজাখুঁজির ব্যাপারটা তাদের প্রতিদিনের রুটিনের অনেকটা সময় নিয়ে নেয়। এতে তারা স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি বা কর্মক্ষেত্রে যেতে দেরি করে ফেলে, অলসতা বোধ করে এবং কাজ করে কূল পায় না। আপনার মধ্যে এই লক্ষণগুলো থাকলে বুঝবেন আপনি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন।
দ্বিতীয় প্রশ্ন : আপনি কি সফটকোর পর্ন ভিডিও ছেড়ে হার্ডকোর পর্ন দেখা শুরু করেছেন? পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত লোকেরা প্রথম অবস্থায় সফটকোর পর্ন ভিডিও দেখে। কিছুদিন পর তারা সফটকোর পর্নে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এটা তাদের কাছে আর যথেষ্ট “উত্তেজক” মনে হয় না। তারা নতুন, আর “কড়া” কিছু খুঁজে বেড়ায়। আস্তে আস্তে হার্ডকোর পর্ন ভিডিও দেখতে শুরু করে। এভাবে তারা একসময় এমন একটা অবস্থায় পৌঁছায় যখন অজাচার, সমকামিতা বা শিশুদের ধর্ষণের ভিডিও তাদের উত্তেজিত করে, তাদের কাছে স্বাভাবিক বিষয় বলে মনে হয়। ওরাল সেক্স, অ্যানাল সেক্সের মতো জঘন্য বিষয়গুলোও তাদের কাছে ডালভাত হয়ে যায়। আপনীর এ রকম অবস্থা হলে বুঝবেন বিপদঘণ্টা বেজে গেছে–আপনি মারাত্মকভাবে পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত।
তৃতীয় প্রশ্ন : আপনার মাথায় কি সারাদিন পর্ন ভিডিওতে দেখা দৃশ্যগুলো ঘুরতে থাকে? পর্ন ভিডিও দেখার পর একজন পর্ন-আসক্ত ব্যক্তির মাথায় অনেকক্ষণ এটার রেশ থেকে যায়। ভিডিওতে দেখা দৃশ্যগুলো তার মাথায় ক্রমাগত ঘুরপাক খায়। পড়াশোনা করার সময়, অফিসে কাজ করার সময়, রাতে ঘুমানোর আগে, অলস বসে থাকার সময়, এমনকি নামাজ পড়ার সময়ও তার মস্তিষ্ক অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবেই শেষ দেখা পর্ন ভিডিওর দৃশ্যগুলো নিয়ে ভাবতে থাকে। পর্ন ভিডিওর নায়িকাদের শরীরের সাথে সে তার আশেপাশের মহিলাদের শরীর তুলনী করে, তার স্ত্রীর শরীর (মেয়েরা স্বামীর শরীর এবং বিছানায় তার স্বামীর পারফরম্যান্স) এবং বিছানার পারফরম্যান্স নিয়ে অসন্তুষ্টিতে ভোগে। পর্ন ভিডিওতে দেখানো পদ্ধতিতে তার সঙ্গীর সাথে সে যৌনমিলন করতে চায়। পার্টনার রাজি না। হল সে রেগে যায় এবং মনঃক্ষুণ্ণ হয়। সম্পর্কে সৃষ্টি হয় জটিলতা।
এই বিষয়গুলোর একটিও আপনার মধ্যে থাকলে আপনি বুঝবেন, আপনি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত।
চতুর্থ প্রশ্ন : পর্ন ভিডিও দেখার পর আপনি কি বিষণ্ণবোধ করেন? দিন দিন হতাশী কি আপনাকে গ্রাস করে ফেলছে? আপনি কি অস্থিরতায় ভুগছেন? নিজের আচরণের জন্য লজ্জিত? সব সময় নিজের মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে? ভালো কাজ মানুষের অন্তরে প্রশান্তি সৃষ্টি করে, প্রচণ্ড ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি করে। অন্যদিকে মন্দ কাজ অন্তরকে অশান্ত করে তোলে, মানুষকে অপরাধবোধে ভোগীয়। পর্ন ভিডিও দেখার পর বিষণ্ণবোধ করলে, অস্থিরতায় ভুগলে বুঝবেন এটা আপনার জন্য অশনিসংকেত।
পঞ্চম প্রশ্ন : আপনি কি নিজের কাছে বা অন্য কারও কাছে ওয়াদা করেছেন– আমি আর কখনোই পর্ন ভিডিও দেখব না, কিন্তু সেই ওয়াদা রাখতে পারেননি? এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত ব্যক্তিরা নিজের কাছে বা অন্য কারও কাছে প্রতিজ্ঞা করে যে, আমি আর কখনোই পর্ন ভিডিও দেখব না, কিন্তু কিছু সময় বা কয়েকদিন পরে তারা সেই প্রতিজ্ঞা বেমালুম ভুলে যায়, আবারও পর্ন দেখায় ফিরে যায়। অনেকে আবার আরেক কাঠি সরেস। প্রতিবার পর্ন ভিডিও দেখার আগে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়–এটাই শেষ বার, আমি আর জীবনে কখনোই পর্ন দেখা তো দূরের কথা, এর ধারেকাছেও ঘেঁষব না। কিন্তু কিছু সময় বা কয়েকদিন পরে তারা আবারও পর্ন দেখে এবং এবারও বলে এটাই আমার শেষ বার, এবারের পর আর কখনোই পর্ন দেখব না।
আর একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো পর্ন-আসক্তদের অনেকেই বলে, “আরে ধুর! আমি পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হতে যাব কেন? আমি চাইলেই যেকোনো সময় এটা দেখা ছেড়ে দিতে পারি।” কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা চাইলেই পর্ন ভিডিও দেখা ছাড়তে পারে না।